বৈধ_দৃষ্টি #পর্বঃ১৭ #ফাতেমা জান্নাত

0
303

#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ১৭
#ফাতেমা জান্নাত

বিয়ে বাড়ির চার দিকে রমরমা অবস্থা।খুশির আমেজ যেন প্রতি টা কোণায় কোণায়।ছাদের উপর মেয়ে মহল এর সকলে।শুধু রাফিয়া রুমে বসে আছে।সাফওয়ান রাফিয়ার অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য আট ঘাট বেধে নেমে পড়েছে।আজ রাফিয়ার অভিমান সে ভাঙবে -ই ভাঙ্গবে। কিন্তু সমস্যা একটা- ই রাফিয়ার রা’গ অভিমান ভা’ঙা তে গেলে সে উলটো আরো রাফিয়া কে রাগিয়ে দেয়।এই জন্য নিজে -ই নিজে কে “শ’ খানেক বকা ঝকা করে দিয়েছে।

রাফিয়া বেলকনির ফ্লোরে বসে আছে।সাফওয়ান গিয়ে রাফিয়ার পাশে বসে পড়ে।রাফিয়া সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে উঠতে নিবে তার আগে -ই সাফওয়ান রাফিয়ার এক হাত টান দিয়ে রাফিয়া কে নিজ এর কোলে বসিয়ে নেয়।রাফিয়া চোখ ছোট ছোট করে সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে।এর আগে -ই সাফওয়ান রাফিয়ার ঠোঁট এর উপর আঙ্গুল রেখে চুপ করতে বলে।রাফিয়া ও চুপ করে যায়।সাফওয়ান রাফিয়া কে আরেকটু আবেশে জড়িয়ে নিয়ে বলে,

—রা’গ করেছেন রাফিয়া?

রাফিয়া কাট কাট গলায় উত্তর দেয়,

—নাহ।রা’গ করবো কেন আমি?

—অভিমান হয়েছে আমার উপর?

সাফওয়ান এর কথায় রাফিয়া কিয়তক্ষণ চুপ থাকে।মৌনতা কাটিয়ে রাফিয়া সাফওয়ান কে স্বগতোক্তি করে বলে,

—নাহ।আমার কারো উপর অভিমান হয় নি।

সাফওয়ান রাফিয়ার কথা শুনে হেসে দেয়। রাফিয়ার কথায় স্পষ্ট অভিমান এর আভাস পাচ্ছে সে।রাফিয়ার চুলে মুখ গুঁজে দেয়।চুল এর মধ্যে থাকা নেশালো ঘ্রাণ টা নাসারন্ধ্র দিয়ে নিতে থাকে।চুল এর মাঝে মুখ গুঁজে রেখে- ই রাফিয়া কে বলে,

—জানেন মানুষ অভিমান করে কার উপর?

—কার উপর?

—যাকে মানুষ বেশি ভালোবাসে। তার উপর- ই মানুষ এর অভিমান জমে বেশি।

সাফওয়ান থামে। রাফিয়া চুপ করে থাকে বিনিময়ে। দুই জন এর মাঝে নিরবতা চলছে।কারো ওষ্ঠদ্বয় পর্যন্ত নড়ছে না।নিরবতা কে বিদায় সাফওয়ান রাফিয়া কে আবার বলে উঠে,

—আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন রাফিয়া?

রাফিয়া চুপ করে থাকে।সাফওয়ান উত্তর এর আশায় রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু রাফিয়া তো কোনো কথায় বলছে না।”হ্যাঁ” অথবা “না” কিছু- ই রাফিয়ার মুখোচ্চরিত হচ্ছে না।সাফওয়ান স্মিত হেসে রাফিয়া কে বলে,

—নিরবতা কে তো সম্মতির লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।
তবে কি ধরে নিবো আপনি আমাকে ভালোবাসেন রাফিয়া?

সাফওয়ান এর কথার পৃষ্ঠে রাফিয়া কিছু বলার জন্য মুখ খুল ছিলো ঠিক সেই মুহূর্তে বাহির থেকে দরজায় নক করে চম্পা রাফিয়া কে ডেকে উঠে বলে,

—ভাবি,ও ভাবি,ভাবি..আপনারে খালাম্মা ডাকতাছে।

রাফিয়া সাফওয়ান এর কোল এর উপর বসে থেকে- ই মৃদু চেঁচিয়ে বলে উঠে,

—আসছি চম্পা। তুই যা।

চম্পা আগের ন্যায় বাইরে থেকে কণ্ঠ আগের থেকে উঁচু করে বলে উঠে,

—খালাম্মা বলছে আমার সাথে আপনারে নিয়ে যাইতো। তাড়াতাড়ি আসেন।

রাফিয়া সাফওয়ান এর কোল থেকে উঠতে নিলে সাফওয়ান রাফিয়ার কোমড় আগের থেকে ও জোরালো ভাবে আঁকড়ে ধরে।রাফিয়া করুণ চেহারা নিয়ে সাফওয়ান এর দিকে তাকায়। রাফিয়া পড়েছে দোটানায়।বাইরে থেকে চম্পা রাফিয়া কে ডেকে চলছে।আর এই দিকে সাফওয়ান তাকে কোলে বসিয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছে। সাফওয়ান এর কথা রাফিয়া কে এখন যেতে দিবে না।আগে তাদের কথা বলা শেষ হোক।তার পর যেতে দেওয়া হবে।বাইরে থেকে চম্পা আরেক বার গলা উঁচু করে ডাকতেই সাফওয়ান রাফিয়া কে ছেড়ে দেয়।
রাফিয়া ও ছাড়া পেয়ে চট করে উঠে দাঁড়ায়। বেলকনি থেকে রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভালো করে গায়ে মাথায় উড়না টেনে নেয়।এই সময় পুরুষ দের উপরে আসা নিষেধ। তাই আর হিজাব পরে নি।উড়না দিয়েই ভালো করে পেঁচিয়ে নিয়েছে নিজে কে।

সাফওয়ান গিয়ে দরজা খুলে দিতে- ই চম্পা সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হেসে দেয়।মুহূর্তে -ই সাফওয়ান এর মেজাজ গরম হয়ে যায়।এমনিতে -ই তাদের একটু প্রাইভেট কথার মাঝে এই মেয়ে এসে ভাগড়া দিয়েছে।এখন আবার তার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে?ইচ্ছে তো করছে দিই কয়েক টা।

সাফওয়ান চম্পার দিকে তাকিয়ে রুঢ় কণ্ঠে ধমকে উঠে বলে,

—হাসি বন্ধ কর।বত্রিশ টা দাঁত আমার ও আছে।প্রতি দিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখি।তাই একে বারে তোর এই দাঁত দেখার কোনো ইচ্ছে নেই।তুই এটা বল তোর সাথে আমার কিসের শত্রু তা?তুই সব সময় প্রয়োজনীয় সময়ে এসে ডাক কেন দিস?ইচ্ছে তো করছে তোকে একটা চটকনা লাগিয়ে দেই।

সাফওয়ান এর হু”মকি ধা”মকি কথা শুনে চম্পার মুখের হাসি উবে গেলো।সাফওয়ান চম্পা কে আর কিছু বলার জন্য উদ্যত হয়েছে।রাফিয়া এসে বাধা দেয়।চম্পার দিকে তাকিয়ে দেখে চম্পা রাফিয়ার দিকে অসহায় চাহনি দিয়ে তাকিয়ে আছে।রাফিয়া চম্পা কে চোখ এর ইশারায় আশ্বস্ত করে যেতে বলে।চম্পা ও বিনা বাক্যে স্থান ত্যাগ করে।রাফিয়া সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—আপনার সাথে আমার কথা আছে।

সাফওয়ান রাফিয়ার কথার প্রতি উত্তরে হেসে দিয়ে বলে,

—জি বলুন।

—নাহ, এখন না।মা এর কথা শুনে আসি।তার পরে বলছি।

—আচ্ছা।

সাফওয়ান এর সাথে কথা বলে- ই রাফিয়া চলে যায় সাবিনার কাছে সাবিনার কথা শুনতে।সাফওয়ান ও বের হয়ে যায় বাইর এর দিকে।ডেকোরেশন এর কাজ গুলো দেখতে। সবাই সেখানে আছে।সে পুরুষ মানুষ একা ঘরের ভিতরে বসে থাকার কোনো মানেই হয় না।তাই নিচে চলে যায়।

🌸🌸

সাবিনার সাথে কথা বলে রাফিয়া মাত্র এসে ঘরে ঢুকেছে।রাফিয়ার পর পর সাফওয়ান ও এসে ঘরে প্রবেশ করে।ডেকোরেশন এর ওখানে আ’গুন এর পাশে দাঁড়ানোর ফলে গা এর টি শার্ট ঘামে ভিজে ছুপ ছুপে হয়ে।সাফওয়ান রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।

রাফিয়া বেলকনি তে চলে যায়।ঘড়ির কাটা তে এখন রাত পনে বারো টা।বিয়ে বাড়ি বিধায় এখনো শোরগোল আছে।সবার চেঁচামেচি এখনো শুনা যাচ্ছে।

সাফওয়ান এসে পিছন থেকে রাফিয়া কে জড়িয়ে ধরে বলে,

—বলুন অর্ধাঙ্গিনী। আপনার অর্ধপূর্ণ কথা আপনার অর্ধাঙ্গ এর কাছে পেশ করে কথার পূর্ণতা দিন।

রাফিয়া সাফওয়ান এর কথার পরি পেক্ষিতে হাসি উপহার দিয়ে বলে,

—আপনি সেই সময় চম্পার উপর রে’গে কেন গিয়ে ছিলেন?

—ও সব সময় আমাদের প্রাইভেসির মাঝে এসে ভাগড়া দেয়।আমার তো মনে হয় ও নজর রাখে আপনি কখন রুমে ঢুকেন?

—এসব মোটে ও না।অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আমাদের কথা বলার সময় ও চলে আসে।আর আজ কে তো ওকে মা পাঠিয়েছে। এতে তো ওর কোনো দোষ নেই।আপনার মেজাজ এতো গরম থাকে কেন?ঠান্ডা মাথায় কথা বলবেন এবার থেকে সবার সাথে।আপনি জানেন হাদিস শরীফে বলা আছে যে,

“অশ্লীল ভাষা ব্যাবহারকারী
ও উগ্র মেজাজী মানুষ জান্নাতে যাবে না”
( আবূ দাউদ- ৪১৬৮)আল্লাহুম্মাগফিরলী।

তাই আপনার কাছে আমার অনুরোধ এবার থেকে মাথা ঠান্ডা রেখে সবার সাথে কথা বলবেন। এরকম উগ্র মেজাজ এর পরিবর্তন করবেন।কি বলেছি বুঝেছেন?

সাফওয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

—জি আচ্ছা বউ এর কথা মনে থাকবে।

—আমি সিরিয়াস।

—আমি ও সম্পূর্ণ সিরিয়াস আমার বউ এর কথায়।

—আপনার সাথে কথা বলা টাই বেকার।

বলে রাফিয়া গিয়ে বেলকনির অন্য পাশে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।মিট মিট করে তারা রা জ্বলছে।চাঁদ নেই আজ আকাশে। রাফিয়া যখন মুগ্ধ দৃষ্টি তে আকাশ এর দিকে তাকিয়ে আছে ঠিক তখন সাফওয়ান এসে রাফিয়া কে পিছন থেকে কোমড় জড়িয়ে ধরে রাফিয়ার পিঠ ঠেকায় নিজ এর বক্ষে।রাফিয়া মৃদু কেঁপে উঠতেই সাফওয়ান অত্যন্ত মৃদু স্বরে মোহনীয় কণ্ঠে রাফিয়ার কানের কাছে মুখ এনে বলে উঠে,

🍁‘‘ঝিকিমিকি তারা রা জ্ব’লছে জ্বল জ্বল করে,
আপনা তে আমি মুগ্ধ হই রা’গ,অভিমান,
ভালোবাসার প্রতি টা প্রহরে।
অল্পতে -ই আপনি হয়ে যান বড্ড অভিমানিনী,
ভালো লাগে দেখতে আপনার অভিমান.
করেছি আপনা কে আমার মন কুঠির এর রাণী।
ভালোবাসি হয়নি বলা তাই বলে কি বুঝেন না ইশারা?
অপেক্ষায় লগ্ন কবে শেষ হবে?
দিবেন আপনি আমার ভালোবাসায় সাড়া।.?’’🍀
©️ফাতেমা জান্নাত

সাফওয়ান এর কথায় রাফিয়া র মন কুঠির এর ঘরে কম্পন শুরু হয়।সাফওয়ান এর জন্য তৈরি সুপ্ত অনুভূতি কম্পিত হতে থাকে।উত্তাল ঢেউ এর মতো রাফিয়ার অনুভূতি ভাসছে।সাফওয়ান মুখোচ্চরিত প্রতিটা কথা তার কানে যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। মনে হচ্ছে এগুলো যেন সাফওয়ান এর মন কুঠির এ রাফিয়ার জন্য সাজানো অনুভূতি গুলোর এক টুকরা ভালোবাসা প্রকাশ।

চলবে ইনশাল্লাহ।

ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।শুধরে নিবো ইনশাল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here