#সংসারের_সাতকাহন
পর্ব ৫
সোনিয়া শর্ত দেয় সে ওদের সামনে যাবে ঠিকই কিন্তু যেমন ঘরোয়া ভাবে তাঁতের থ্রিপিস পরে আছে সেভাবেই যাবে। একা রাজি হয়ে যায় শর্তে, তখন সোনিয়া রাজি হয় ওদের সামনে যাওয়ার জন্য। একা বাইরে বের হয়ে আলেয়া বেগমকে জানান সোনিয়া রাজি, নাস্তার আয়োজন করতে।
আছর নামাজ পরে একা আবারও নিচে আসে। সোনিয়ার সাথে এটা সেটা কথা বলার এক পর্যায়ে বলে, “সোনিয়া সাদিকরা খবর দিয়ে আসতেছে, ফর্মালি, তার মানে ওরা তোমাকে ফর্মালি দেখতে চায়। তোমার কি জামা কাপর নাই যে ফকিন্নির মতো ওদের সামনে যাবা? এক কাজ কর, আমার আলমারিতে তোমার যে শাড়ি, গয়না পছন্দ হয় সেটাই পরে ওদের সামনে যাও। সেদিন ওরা না জানিয়ে এসেছিল তখন তোমার ঘরোয়া রূপ দেখে গেছে। কিন্তু আজ খবর দিয়ে আসতেছে, তুমি একটু গুছিয়ে ওদের সামনে যাও। সাদিক এতো সুন্দর ছেলে, তুমি ওর সামনে এভাবে গেলে পরে নিজেই আফসোস করবা গো 😛 ।”
বরাবরের মতো এবারেও একার কথার যুক্তি খন্ডন করার মতো কিছু পেলোনা সোনিয়া তাই শাড়ি পরতে রাজি হওয়া ছাড়া উপায় নাই। কিন্তু ও যেহেতু অনেক গুলা মাইগ্রেনের মেডিসিন খেয়েচেহ সেহেতু একটু হলেও ঝিমুনি লাগতেছে। কিন্তু সেটা কাউকে বলার সাহস পেলনা। মাগরিবের পরে সোনিয়াকে উপরে যেতে বলে একা উপরে চলে যায়।
সোনিয়ার বাবা বাইরে গিয়ে কিছু ফল মিষ্টি নিয়ে আসেন আর একা ওর বাসায় কিছু স্ন্যাক্স তৈরি করে সোনিয়ার মা কে জানিয়ে দেয় উপরে একার ড্রইংরুমেই মেয়ে দেখার ব্যবস্থা করছে ও। সোনিয়ার বাবা একার সব কার্যকলাপ দেখছিলেন আর কন্যাসম এই নারীর প্রতি কৃতজ্ঞতায় মুগ্ধ হচ্ছিলেন। এক ফাঁকে উপর দিকে চেয়ে রবের কাছে চেয়ে নেন যাতে এই মেয়েটার কষ্ট বিফলে না যায়।
মাগরিবের পরে সোনিয়া উপরে গিয়ে দেখে একা ওর জন্য এক মগ কড়া কফি আর নুডলস বানিয়ে নাবাকে কেবলই পাঠাচ্ছে সোনিয়াকে ডাকার জন্য। সোনিয়া মনে মনে প্রচন্ডভাবে কফি বা চা চাচ্ছিল কিন্তু মায়ের কাছে বলার সাহস পায়নি। এখানে কফি দেখে ওর চোখে পানি চলে আসে। মনে মনে ভাবে – একান্টি আমাকে এতো কেয়ার করে, আমার জন্য এতো ভাবে উনার কথার অবাধ্য কখনই হবনা ইনশাআল্লাহ্।
একা সোনিয়াকে বলে কফি নিয়ে একার বেডরুমে যেতে। সোনিয়া গিয়ে দেখে একা ওর চারপাল্লার আলমারি আর ড্রেসিং টেবিলের সমস্ত দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে, বিছানার উপরে থরে থরে সাজানো একার গহনা। সোনিয়াকে দেখেই একা বলে – সব তোমার জন্য খোলা। যেটা পরতে চাও জাস্ট বল আমি বের করে দিচ্ছি।
সোনিয়া একটা লাল শাড়িতে হাত দেয় যেটা ঈদ উপলক্ষে একা কিনেচেহ কিন্তু পরা হয়নি এখনও। একা সেটা বের করে দিয়ে তার সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ পেটিকোট বের করে দিয়ে বলে যাও পরে আসো। সোনিয়া শাড়ি পরে এসে দেখে একা একটা ডায়মন্ডের নেকলেস সেট হাতে নিয়ে বসে আছে। সোনিয়া এতো দামী গয়না পরতে অস্বীকার করলে একা ওকে বলে তোমার আমার বন্ধুত্ব এর চেয়েও দামী মেয়ে, পরত। সোনিয়ার সাজ শেষ হতেই কলিং বেল বেজে উঠে।
একা যায় দরজা খুলতে। দরজা খুলে দেখে সাদিক, রাদিক, মালা, জুঁই আর সাইফ দাঁড়িয়ে আছে। ওদের স্বাগত জানিয়ে ঘরে এনে বসায়। ভিতরে যায় সোনিয়াকে জানাতে। কিছুক্ষন পরে সোনিয়া হাসিমুখে এসে বসে ওদের সামনে। যেহেতু সে আগে থেকেই রাদিক আর মালাকে চিনত সেহেতু অন্যদের সম্পুর্ণ উপেক্ষা করে ওদের সাথে কথা বলতে থাকে।
এটা দেখে মনে মনে খুব খুশি হয় সাদিক, কারন ওর বিয়ে করতে না চাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে এটাও একটা যে যদি ওর পরিবারের সাথে এডজাস্ট না হয়? কিছুক্ষন পরে সাইফ একাকে বলে আপনার বাসাটা সুন্দর ঘুরে দেখতে চাই। একা বুঝতে পারে যে সাইফ ওদের কথা বলার সুযোগ দিতে চাচ্ছে। সে ওদের নিয়ে ভিতরে চলে যায়। ড্রইংরুমে শুধু সাদিক আর সোনিয়া।
সোনিয়া এখনও সাদিকের দিকে তাকায়নি। হঠাৎ গলা খাকারির শব্দে মুখ তুলে দেখে সাদিক ঢকঢক করে পানি খাচ্ছে। একসাথে ৩ গ্লাস পানি খেয়ে সোনিয়াকে জিজ্ঞেস করে “আমাকে তুমি দেখেছ আগে কখনও?”
প্রথম কথাতেই তুমি বলে শুরু করায় বিরক্ত হয় সোনিয়া। বিরক্তি চেপে রেখে উত্তর দেয় “হ্যাঁ, আপনি অনেক শুকনা ছিলেন। বাইরে যাবার আগে।” উত্তর শুনে আর কোন কথা খুঁজে পায়না সাদিক, এমনিতেই সে কম কথা বলে। কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আবার জিজ্ঞেস করে “আমাকে তোমার পছন্দ হয়েছে?”
সোনিয়া তখন সরাসরি সাদিকের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে “সেই সিদ্ধান্ত আমার আম্মু আব্বু নিবে। আমার পছন্দে কিছু যায় আসেনা।” সাদিক ভড়কে গিয়ে আবারও পানি খায়। তখনই সবাই চলে আসে ড্রইংরুমে। একা ওদের বসিয়ে দিয়ে নাস্তা আনতে যায়। মালা সোনিয়ার পাশে বসে গল্প করতে থাকে।
একা নাস্তা পরিবেশন করেই প্রথমে সাদিককে জিজ্ঞেস করে “তুমি কতদিন পরে বউ নিয়ে যেতে পারবা? সারাজীবন এখানে বউ ফেলে রাখার ইচ্ছে থাকলে ওরা মেয়ে দিবেনা। ওর অন্যান্য বোনেরাও হাসবেন্ডের সাথে দেশের বাইরে থাকে।” উত্তরে সাদিক জানায় মিনিমাম দুই বছর লাগবে সব কিছু ঠিক করে নিয়ে যেতে। এটাও জানায় ওর নিজেরও ইচ্ছে নাই বিয়ে করলে বউ দেশে ফেলে রাখার।
কথা বার্তা ও নাস্তা খাওয়া শেষ হলে সাদিকরা যাওয়ার জন্য নিচে নামে। তখন সোনিয়ার মা বাবাকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দেয় সাদিকের সাথে। আলেয়া বেগম অনেক আগে সাদিককে দেখলেও ইয়াকুব সাহেব দেখেননি। যাবার আগে রাদিক ওর এককালের শিক্ষকের হাত ধরে বলে “স্যার আমরা আবারও আসব ইনশাআল্লাহ্ খুব জলদিই।”
সাদিকেরা চলে যাবার পরে সোনিয়ার অবস্থা দেখে একা ওকে সেই রাতে নিজের কাছে রাখতে চায়। এমনিতেই সোনিয়া কফির রেশ কেটে যাওয়ায় ঘুম ঘুম অনুভব করছিল। একা মনে মনে ভাবে মেয়েতাকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে আরেকটু বুঝাইতে হবে। সোনিয়াকে নিয়ে একা উপরে যেতেই ফোন ধরে দেখে সাদিকের মা কল করেছে। উনার গলা শুনেই বুঝে যায় একা অনেক কিছু। উনি একাকে বলেনঃ আমাদের বাসায় সবাই বিয়ের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে। সাদিক তো সোনিয়াকে দেখে এসে খুবই খুশি। এই সপ্তাহেই বিয়ের আয়োজন করতে বলতেছে। আপনাদের ওদিকে কি অবস্থা?
একা জানায়ঃ সোনিয়ার বাবা মা সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার সম্পুর্ণ সোনিয়ার উপর ছেড়ে দিয়েছে। সে এখনও কিছু জানায়নি। আপনি সাদিককে বলেন সোনিয়াকে ফোন দিয়ে কথা বলুক। সাদিকের সাথে কিছু ব্যাপার ক্লিয়ার হয়ে নিয়ে সোনিয়া তার মত জানাবে।
একা ফোন রাখার ১০ মিনিটের মাথায় সোনিয়ার মোবাইলে অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসে। সোনিয়া রিসিভ করে জিজ্ঞেস করে কে?
উত্তর আসে চিনতে পারছেন না? একা “না” বলেই কল কেটে দেয়। আবারও কল আসে একই নম্বর থেকে। রিসিভ করার সাথে সাথেই বলে উঠে – আমি সাদিক।
সোনিয়া তখন সালাম দিয়ে কথা বলে…
#সংসারের_সাতকাহন
পর্ব ৫
©সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ