বৈধ_দৃষ্টি #পর্বঃ১৫

0
326

#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ১৫
#ফাতেমা_জান্নাত

নিশুতি রাত।আকাশে তারার মেলা।তাদের মাঝে যেন বসে আছে চাঁদের বুড়ি।ঝি ঝি পোকার ডাক এসে কানে লাগছে।বয়ে চলছে মৃদু মন্দ বাতাস।
সাফওয়ান বেলকনি তে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ এর দিকে তাকিয়ে আছে।রাফিয়া এখনো তার উপর অভিমান করে আছে।যদি ও রাফিয়া সেটা প্রকাশ করছে না।তবু ও সাফওয়ান সেটা বেশ বুঝতে পারছে।যে স্ত্রীর অভিমান বুঝতে পারেনা।সে আবার কিসের পুরুষ।
সাফওয়ান এসব ভেবে তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে ঘরে চলে আসে।এসে দেখে রাফিয়া ওয়াশরুমে ঢুকছে ফ্রেশ হওয়ার জন্য।সাফওয়ান কিছু না বলে ল্যাপটপ নিয়ে বসে অফিস এর কিছু কাজ বাকি আছে এখনো। আবার রাফিয়ার মামাতো বোন এর বিয়ে উপলক্ষে ছয় সাত দিন এর ছুটি নিতে হবে।তাই অফিস এর কাজ গুলো সম্পূর্ণ করতে হবে এই এক দিন এর মাঝে।নয়তো বস ছুটি মঞ্জুর করবে না।

রাফিয়া বের হতে- ই সাফওয়ান রাফিয়া কে নিজ এর কাছে ডাকে।রাফিয়া কাছে আসতে- ই রাফিয়ার হাত টেনে ধরে আরো কাছে এনে হাত টা নিজ এর মাথার চুলে রেখে রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

—মাথাটা ব্য’থা করছে রাফিয়া। একটু চুল গুলো টেনে দিন।

বলেই রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে আবার ল্যাপটপ এর মাঝে নিজ এর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।রাফিয়া ও আর কিছু না বলে সাফওয়ান এর চুলে হাত গলিয়ে দেয়।সাফওয়ান এর চুল গুলো আস্তে আস্তে টেনে দিতে থাকে।সাফওয়ান তো নিজ এর কাজ- ই করে যাচ্ছে।

ঘড়ির কাঁটা রাত বারো টার ঘরে।সাফওয়ান এখনো কাজ করে যাচ্ছে।এই দিকে রাফিয়া তো সাফওয়ান এর পাশে বসে সাফওয়ান চুল টানছে আর ঘুমে ঢুলছে। সাফওয়ান হঠাৎ পাশে তাকাতে- ই রাফিয়া কে ঘুমে ঝিমাইতে দেখে মুচকি হেসে রাফিয়ার মাথাটা নিজের কাঁধ এর উপর হেলে দেয়।মাথা রাখার মতো কিছু পেয়ে যেন রাফিয়ার আরাম পেলো।তাই আরেকটু নড়ে চড়ে বসে সাফওয়ান এর এক হাত জড়িয়ে ধরে কাঁধে আরেকটু আরাম করে রেখে গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়ে।

সাফওয়ান রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসে।রাফিয়ার মুখের উপর এক গাছি চুল এসে পড়েছে।সাফওয়ান তার ল্যাপটপ টা কে সামনে এনে ক্যামেরা চালু করে।টি টেবিল এর উপরে ল্যাপটপ টা রেখে ক্যামেরা তে পাচঁ সেকেন্ড এর টাইমার দিয়ে রাখে।ক্যামেরা চালু হতে- ই রাফিয়ার দিকে সে মুচকি হেসে তাকিয়ে থাকে।এই দিকে টাইমার শেষ হয়ে ক্যামেরায় ক্লিক হয়।আর সাফওয়ান আর রাফিয়ার ছবি টা ক্যামেরা বন্দি হয়ে যায়।ঠিক সেই ভাবেই সাফওয়ান রাফিয়ার কপালে নিজ এর অধর ছুঁয়ে দেওয়া আরেক টা মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দি করে।

রাফিয়ার মাথা টা কাঁধের মাঝে রেখে- ই ল্যাপটপ ঘেটে সব গুলো কাজ শেষ।কাজ শেষ করতে করতে রাত দেড় টা বেজে যায়।ল্যাপটপ টা বন্ধ করে টি টেবিল এর উপরেই রেখে দেয় সাফওয়ান। এতক্ষণ কাজ করায় ঘাড় আর কোমড় ব্য’থা করছে এখন।আর রাফিয়ার মাথা টা কাঁধে থাকায় কাধঁ ব্য’থা করছে।তবু ও যেন এতে সুখ সুখ অনুভূত হচ্ছে।রাফিয়ার একটা বিশেষ গুণ এই অভিমানের মাঝে সাফওয়ান খুঁজে পেয়েছে।রাফিয়া সাফওয়ান এর উপর যত- ই অভিমান বা রে’গে থাকুক না কেন?সাফওয়ান এর প্রতিটা কথা যথাযথ ভাবে রাখে।মুখ গোমড়া করে রেখে কথা বলা বন্ধ করে না।কিংবা খারাপ ব্যবহার ও করে না।কিন্তু কথা তে ঠিক- ই অভিমান ফুটে উঠে।

সাফওয়ান অতি সন্তর্পণে রাফিয়া কে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।লাইট অফ করে ড্রিম লাইট দিয়ে নিজে ও শুয়ে পড়ে
রাফিয়া কে জড়িয়ে ধরে।

🌸🌸

🎵বউ তুমি কথা কও,
কও না কথা..!
তোমায় নিয়ে আমি বেধেছি ঘর
ভুলেছি ব্য’থা।
বউ তুমি কথা কও,
কও না কথা..!
তোমায় নিয়ে আমি বেধেছি ঘর,
ভুলেছি ব্য’থা।
তোমারি জন্যে আমি হাজারো স্বপ্ন বুনি,
তুমি তো আমার…!
সারাটা জীবন এর প্রতিটা আশায়,
বাচবো সারাজীবন একি সাথে..!
থাকবো কাছাকাছি দুঃখে সুখে।
দিও একটা ঘর প্রভু জান্নাতে,
বাসবো ভালো সেথায় দুই জন মিলে।
তোমায় যত ভালোবাসি প্রভু ঢেলে দেন কত রহমত,
থাকবো দুইজন মিলে মিশে সুখে দুঃখে…🎶

এত টুকু গান গাই তেই রাফিয়া ওয়াশরুম এর থেকে ড্রেস চেঞ্জ করে রুমে আসে।ওয়াশরুমে থেকে সে সাফওয়ান এর গান গাওয়া টা ঠিক- ই শুনেছে।সাফওয়ান ড্রেসিং টেবিল এর সামনে দাঁড়িয়ে আয়না দেখছে আর চুল আছড়াচ্ছে।রাফিয়া বোরকা, নিকাব পরছে আর সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে আছে। রাফিয়া কে তার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাফওয়ান বলে উঠে,

—কি হয়েছে রাফিয়া আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কে?

রাফিয়া আগের ন্যায় সাফওয়ান এর উপর নিজ এর দৃষ্টি স্থির রেখে বলে,

—না ইচ্ছে করলো আর কি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতে।

—আমি কি আগের থেকে ও কালো হয়ে গেছি রাফিয়া? এই সব আপনার দোষ।

সাফওয়ান এর কথায় রাফিয়া অবাক হয়ে যায়।এই লোক কালো হয়ে গেছে কে বলেছে?আর তার কালো হয়ে যাওয়ার পিছনে রাফিয়ার কি দোষ সেটা- ই রাফিয়া বুঝতে পারছে না।

রাফিয়া সাফওয়ান এর দিকে অবাক চাহনি নিয়ে তাকিয়ে বলে,

—আপনার কালো হয়ে যাওয়ার পিছনে আমার কি দোষ?আর কে বলেছে আপনি কালো হয়ে গেছেন?

—এই যে আপনি যে এখন প্রায় আমার দিকে সন্দেহী চোখে তাকিয়ে থাকেন। তাই আমি কালো হয়ে যাচ্ছি।

—তাকানো টা- ই কি স্বাভাবিক না?যেই ব্যক্তির মুখে আগে গুণগুণ আওয়াজ টা পর্যন্ত শুনতাম না।আর সেই ব্যক্তি ইদানীং গান গাইছে শুনিয়ে শুনিয়ে।তাও আবার বউ নিয়ে। আপনার মতলব টা কি সত্যি করে বলুন তো?

রাফিয়ার কথা সাফওয়ান কত টুকু বুঝেছে কে জানি।কিছু একটা আনমনে ভেবে- ই রাফিয়া কে বলে ফেলে,

—পুরুষ এর জন্য চার বিয়ে হালাল তো।

কথা টা বলে- ই জিহ্বা কিছু টা সামনে এনে দাঁত দিয়ে কাটে।মনে মনে বলে উঠে,

—“ইশশ্ রে কি বলতে কি বলে ফেললাম।”

সাফওয়ান এর মুখে “চার বিয়ে হালাল” কথা শুনে রাফিয়া সাফওয়ান এর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।সাফওয়ান মুখে এই কথা শুনে যেন তার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে।রাফিয়া সাফওয়ান এর উদ্দেশ্যে স্বগতোক্তি করে বলে,

—“চার বিয়ে হালাল” তাই না?সেই জন্য- ই তো আজ কাল বউ নিয়ে গান ফুটেছে মুখে।আরেক বিয়ে করার সিদ্ধান্ত চলছে মনে মনে?এই ছিলো আপনার মনে?

—আরে না রাফিয়া ওটা তো এমনি আমি মজা করে বলেছি।সরি আর বলবো না।আমি সত্যি বলছি আমি আর কোনো বিয়ে করবো না।এক বউ সামলাতে পারি না।আবার আরেক বউ কেন আনতে যাবো।না না দরকার নেই। আপনি- ই থাকুন। আর কারো দরকার নেই।রা…

সাফওয়ান আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাফিয়া ঘর থেকে বের হয়ে যায়।সাফওয়ান সেই দিকে তাকিয়ে মুখ টা মলিন করে নিশ্বাস ফেলে।নিজে কে নিজে বকতে বকতে বলে,

—“শাব্বাস সাফওয়ান শাব্বাস। এই না হলে তুই পদার্থ বিহীন অপদার্থ স্বামী। বউ এর অভিমান ভাঙ্গানোর বদলে চার বিয়ে হালাল এর কথা বলে আরো এক ধাপ অভিমান করার জন্য প্রলেপ দিলি? তোকে তো তেলাপোকা দিয়ে বানানো মেডেল দেওয়া দরকার।”

কথা গুলো বলে -ই আবার রেডি হতে থাকে।
আর মনে মনে পণ করেছে কাল কের মধ্যে ইনশাল্লাহ রাফিয়ার অভিমান সরিয়ে দিবে মন থেকে।আর যদি না পারে তাহলে শাস্তি স্বরূপ অফিস কাজ সব বাদ দিয়ে চব্বিশ ঘণ্টা রাফিয়ার কাছে কাছে থাকবে।কিন্তু এটা কি শাস্তির মধ্যে পড়ে।

রাফিয়া ঘর থেকে বের হয়ে হাসতে থাকে।দিন দিন সাফওয়ান এর কথা গুলো তে তার বড্ড হাসি পায়।তবু ও সাফওয়ান এর সামনে বহু কষ্টে হাসি চেপে রাখে।সাফওয়ান ভাবছে সে সাফওয়ান এর উপরে অভিমান করে আছে।কিন্তু আসলে তো অভিমান করে নেয়।সাফওয়ান এর সামনে অভিমান করে থাকার অভিনয় করছে।সে দেখতে চায় কি ভাবে সাফওয়ান তার অভিমান ভাঙায়।

এই দিকে রাফিয়া কে হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হতে দেখে চম্পা এগিয়ে আসে।রাফিয়া চম্পা কে নিজ এর সামনে দেখে বলে,

—কিছু বলবি চম্পা?

চম্পা হাসি দিয়ে বলে,

—ভাবি ভাইজান আপনাকে খুব সোহাগ করে তাই না?

চম্পার মুখে এমন কথা শুনে রাফিয়া কিছু বলার আগেই পিছন থেকে সাফওয়ান কেশে উঠে।চম্পার কথা সাফওয়ান থতমত খেয়ে দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নিচে চলে যায়।চম্পা এখনো হাসছে দাঁত কেলিয়ে। রাফিয়া চম্পা কে কড়া গলায় কিছু বলতে নিবে এর আগে- ই সাবিনা নিচ থেকে ডেকে উঠে তাড়াতাড়ি আসার জন্য।রাফিয়া ও আর কিছু না বলে চম্প কে নিয়ে নিচে চলে যায়।

আজকে সবাই রাফিয়ার মামা দের বাসায় যাবে।তাই তো সকাল থেকে- ই রেডি হওয়া শুরু করে ছিলো। মাঝ খানে সাফওয়ান রাফিয়ার মান অভিমানের খেলায় কিছুক্ষণ দেরি হয়ে গেছে।রাফিয়া আর চম্পা নিচে আসতে- ই সবাই মিলে বেরিয়ে পড়ে গন্তব্যে। সাফওয়ান রাফিয়ার দিকে তাকাচ্ছে না ঠিক মতো।রাফিয়া ও লজ্জায় সাফওয়ান এর দিকে ঠিক মতো তাকাচ্ছে না।দুই জন দুই জনের দিকে আড়চোখে একবার নজর দিয়ে আবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়।আর তাদের এই লুকোচুরি চাহনির কারণ হলো চম্পার কথাটা।”ভাবি ভাইজান আপনাকে খুব সোহাগ করে তাই না?” কথা মনে পড়তেই রাফিয়া সাফওয়ান দুই জনেই লজ্জায় দুই জনের দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়।

চলবে ইনশাল্লাহ

গতকাল গল্প দিতে পারিনি তার জন্য সরি।ব্যস্ততা ঘিরে রেখেছিলো লেখার সময় করে উঠতে পারিনি।তাই দিতে ও পারিনি।গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন। ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। শুধরে নিবো ইনশাল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here