যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া #আনিশা_সাবিহা পর্ব ৯

0
771

#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৯

বাড়ি ফিরে এসে কাঁধের ব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সোফা গা এলিয়ে মোহের ক্লান্তিতে পরিপূর্ণ চোখজোড়া বুঁজল। মায়ের আগমন বুঝতে পেরে ইথান দৌড়ে মায়ের নিকটে চলে আসে। তার ধুপধাপ ছোটার শব্দে মোহ চোখ মেলে তাকায় ইথানের সরল চেহারাটির দিকে। ইথানের জোড়া ভদ্রু দেখে একজনের কথা খুব মনে পড়ে মোহের। সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়। ইথান মায়ের গলা জড়িয়ে আহ্লাদী সুরে বলে,
“আই মিস ইউ মাম্মা!”

“আই মিস ইউ টু ইথান সোনা!”

“এইযে! সারাদিন কিছু খেয়েছিস? মিস পরে করিস। এখন কিছু মুখে দে ধর।”

এক বাটি মিষ্টি নিয়ে হাজির হলেন মিসেস. সুফিয়া। মায়ের খুশি খুশি মুখটি দেখে সন্দিহান হয়ে তাকিয়ে রইল মোহ। মিসেস. সুফিয়া মোহের পাশে বসে তার মুখশ্রীর দিকে নজর পড়তেই বিচলিত হলেন তিনি।
“চোখমুখের এ কী হাল? এমন লাল লাল হয়ে গেছিস কেন?”

“রোদে ছিলাম তাই। তোমার কী ব্যাপার বলো তো? হঠাৎ অসময়ে মিষ্টি? তুমি জানো আমি মিষ্টি পছন্দ করিনা।”

“মাঝে মাঝে শুভ কাজের জন্য মিষ্টি খেতে হয়। হা কর।”

মোহকে জোর করে হা করিয়ে পুরো মিষ্টি ঢুকিয়ে দিলেন মিসেস. সুফিয়া। মোহ হিমশিম খেল মুখের ভেতরের পুরো মিষ্টি শেষ করতে। তার অবস্থা দেখে ফিক করে হাসল ইথান। মোহ উদগ্রীব হয়ে শুধাল,
“শুভ কাজ? কী এমন শুভ কাজ সম্পন্ন হলো বাড়িতে যেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম না?”

মিসেস. সুফিয়া নড়েচড়ে বসলেন। গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলেন,
“আগে বল শোনার পর চিল্লাচিল্লি অথবা রাগ করবি না!”

“রাগ করার মতো বিষয় হলে রাগ দমাব কী করে?”

মিসেস. সুফিয়া মুখ ফিরিয়ে বললেন,
“তাহলে বলব না।”

“আচ্ছা, ঠিক আছে। রাগ না করার চেষ্টা করব। এবার বলো!”

মিসেস. সুফিয়া আশ্বাস পেলেন। সাহস নিয়ে বলতে লাগলেন,
“আজ দুজন মহিলা এসেছিলেন। পাত্রপক্ষ আর কী! তোকে পছন্দ হয়েছে উনাদের। তাই বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে আসলেন।”

মোহের দৃষ্টি তৎক্ষনাৎ সরু হয়ে এলো। ক্ষীণ হয়ে এলো কন্ঠস্বর।
“হুমম! তো?”

“উনারা এমনভাবে আমায় বললেন যেন আমি মানা করতে পারিনি। ছেলে তোকে আগে থেকে পছন্দ করে। তাই আমি আরো বারণ করতে পারিনি।”

মোহ উঠে দাঁড়াল। মায়ের প্রতি তীব্র আক্রোশ ঢেলে এবং চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,
“মানে? তুমি সম্বন্ধে রাজি হয়ে গেলে? আমার অনুমতি না নিয়ে কী করে তুমি রাজি হতে পারলে? বাবাকে জানিয়ে করেছ এসব?”

মোহের তীব্র উত্তজেনায় ঘাবড়ে গেলেন মিসেস. সুফিয়া। তাকে পুনরায় সোফায় বসিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলেন,
“আরে বাবা শান্ত হ। আমি সম্বন্ধে রাজি হওয়ার কথা বলছিনা। আমি বলেছি ছেলে আর মেয়ে দুজন কথা বলে দেখুক তারপর বাকিটা দেখা যাবে। তুই শুধু কথা বলবি পাত্রের সাথে গিয়ে। তাছাড়া ছেলেটা কীভাবে যে প্রেমে পড়েছে ছেলেটা তুই না শুনলে বিশ্বাস করবি না। এসব প্রেম মিথ্যে হয়না!”

“মানে? কীভাবে প্রেমে পড়েছে? আর ছেলে কী করে? ছেলে জানে আমার ইথান সম্পর্কে?”

“তোকে পরে বলব এসব। সে সম্ভ্রান্ত ঘরের ছেলে। আমি তো তোর মা! তোর জন্য খারাপ চাইতে পারি বল?”

মোহ তেতে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। ইথানের হাত ধরে বলল,
“তোমার ওই এক কথা! মা সন্তানের খারাপ চাইতে পারেনা আমিও জানি। তুমি ইথানের কথা জানিয়েছ নাকি সেটা বলো।”

মিসেস. সুফিয়া এবার সংকোটে পড়ে গেলেন। হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে মিনমিন করে বলে ওঠেন,
“এখনো তো বলিনি। কিন্তু…”

“তাহলে আমাকে পাত্রের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হলে আগে আমি ইথানের কথায় জানাব। তারপর দেখব প্রেম কোথায় থাকে। এই বাচ্চাওয়ালা মেয়ের জন্য প্রেম হৃদয়ে থাকে নাকি ধরণী ছেড়েই পালায় সেটাই দেখব।”

মোহ নিজের স্পষ্ট কথা বলে ইথানকে নিয়ে ঘরে চলে গেল। মিসেস. সুফিশা হতাশ হলেন। এ জীবনে কি মেয়ের বিয়ে হবে না?

নিজের ঘরের কাউচে মাথার চুলগুলো রূঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে বসে আছে স্বচ্ছ। কপালের রগ দপদপ করছে তার। সৌমিত্রও এই মুহূর্তে চুপ রয়েছে। হঠাৎ সে বলে উঠল,
“এত কিছু হয়ে গেল কিন্তু আমি জানতেও পারলাম না?”

স্বচ্ছ মাথা সোজা করে নিভে যাওয়া গলায় উত্তর দিল,
“জানবি কী করে? সারাদিন গার্লফ্রেন্ডস্, পার্ট, ক্লাব নিয়ে পড়ে থাকলে ঘরের কথা মাথায় থাকে না।”

সৌমিত্র স্বচ্ছের পিঠে হাত বুলিয়ে নিবৃত হয়ে বলল,
“আহ ভাই! রাগ করো না এত। রাগী মানুষ বেশিদিন বাঁচে না জানো তো! কুল, ব্রাদার! কুল!”

স্বচ্ছ তো শান্ত হলোই না। বরং আরো তেজী গলায় বলল,
“শান্ত? তুই কীভাবে শান্ত থাকতে পারছিস আমি তো সেটাই বুঝতে পারছি না। আজ ওই মেয়েটা আমাকে নয় আমার বাবাকে অপমান করেছে। যেটা আমার সহ্যের সীমার বাহিরে।”

“আমি জানি ওই মেয়েটা এটা ঠিক করেনি। করিম আমার মনে হয় মেয়েটা ওর পরিস্থিতি থেকে এমন করেছে। ওদের কথাও তো ভাবো। হঠাৎ করেই তারা জানতে পারল তাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিশ লাখ নয় মাত্র পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। সেই রাগ থেকে ও এমনটা হয়ত বলে ফেলেছে। সিরিয়াসলি কেন নিচ্ছো?”

“স্বচ্ছ মোটেও ওভার রিয়েক্ট করছে না সৌমিত্র। হি ইজ রাইট। ওর যেমন প্রতিক্রিয়া করার কথা তেমনই করছে।”

কথাগুলো স্বচ্ছের নয়। বরং ভরাট কণ্ঠের অধিকারী সারোয়ার সাহেবের ছিল। ধীর পায়ে স্বচ্ছের ঘরে প্রবেশ করেন তিনি। কাউচের সামনে বিছানায় বসলেন। সৌমিত্রের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,
“তোমাকে তো কেউ ইনসাল্ট করলেও তুমি হেসে তাকে ছেড়ে দাও।”

সৌমিত্র যেন এই কথাটাও মোটেই আমলে নিলো না। হেসে দিয়ে বলল,
“বাবা, জীবন তো একাই। তাই সেটাকে উপভোগ করা উচিত বলে আমি মনে করি। তুমি তো সারাজীবন রাজনীতির পেছনে ঘুরতে ঘুরতে চুল পাকিয়ে ফেলেছ। আমি এসবে মোটেও নেই। তাছাড়া এখন আমার আনন্দ করার বয়স। আমার মাথায় এসব সিরিয়াসনেস ঢুকিয়ে দিও না প্লিজ।”

সারোয়ার সাহেব সৌমিত্রকে ধমকালেন এবার।
“চুপ করো। আমি জানি তুমি কোনো কাজের না। সারাদিন শুধু মাথায় উল্টাপাল্টা চিন্তা ঘোরে তোমার। এজন্য আমি ঠিক করেছি রাজনীতির সব দায়িত্ব স্বচ্ছ পাবে আমার পর।”

স্বচ্ছ গোল গোল চোখে তাকাল। সৌমিত্র দায়সারা ভাব নিয়ে বলল,
“এমনিতেও এসব আমার দ্বারা হবে না। স্বচ্ছ ভাই তোমারই কার্বন কপি বাবা। তাকেই দায়িত্ব দাও। শুধু ভাই একটা বিষয়ের খেয়াল রেখো প্লিজ! মন্ত্রীর আসন পাওয়ার পর ঘোষণা দিয়ে দিও সৌমিত্রের এট লিস্ট দশটা বউ লাগবে।”

ছেলের আজগুবি আলাপ শুনে এবার চোখ গরম করলেন সারোয়ার সাহেব। সৌমিত্র শুঁকনো ঢক গিলে আস্তে করে ভাইয়ের ঘর থেকে চলে যায়। স্বচ্ছ নিস্তেজ গলায় বাবাকে জিজ্ঞেস করে,
“এখনো কি বিষয়টা নিয়ে তুমি আপসেট বাবা?”

সারোয়ার সাহেব চাপা হাসলেন।
“ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে তোমার বাবা আপসেট হয় না। আমি এসব ঠিক সামলে নেব। কিন্তু এবার তোমাকে আমার পাশে দাঁড়াতে হবে। আমারও তো বয়স হয়েছে। আমি সৌমিত্রকে দায়িত্ব দিতে চাইছি না কারণ ওর মন মানসিকতা এখনো বাচ্চাদের মতো।”

কিন্তু বাবা এসব রাজনীতি সম্পর্কে আমি আহামরি খুব একটা তো জানি না। তাছাড়া এসবে আমি কখনো কৌতূহলী ছিলামও না।”

“তাহলে আমার রাজনীতি আমি তো এভাবে ধ্বংস হতে দেব না স্বচ্ছ। তুমি আমার ছেলে। তাই তোমাকেই কৌতূহল দেখাতে হবে। শুধু তোমার রাগটা তুমি যেখানে সেখানে দেখিয়ে ফেলো। সেটা চলবে না। রাগ সেখানেই দেখাবে যেখানে প্রয়োজন পড়ে। ততক্ষণ রাগ দমিয়ে রাখবে যতক্ষণ সেই রাগ তোমার কোনো কাজে না আসে।”

স্বচ্ছ জবাবে হ্যাঁ বা না কিছুই বলল না। তার বাবা আবার বলেন,
“আমি চাই তুমি এই নির্বাচনেই আমার জায়গা নাও।”

স্বচ্ছ বিষয়টিতে অস্বস্তিবোধ করে। সামনেই নির্বাচন। এত দ্রুত কীভাবে সে কী করবে বুঝে উঠতে না পেরে আমতা আমতা করে বলল,
“বাবা আমি…”

“আর কোনো কথা নয়। যা বলছি সেটাই। বয়স কম হয়নি তোমার। এখন আর দায়িত্ব এড়িয়ে যেও না।”

কথাগুলো বলে থামলেন না সারোয়ার সাহেব। স্বচ্ছের জবাবের অপেক্ষা না করেই বাহিরের দিকে পা বাড়ালেন তিনি।

রাতের খাওয়া শেষ করে মোহকে নিজের কাছে ডাকলেন আজহার সাহেব। মোহ বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে তিনি গাম্ভীর্যের সাথে বলতে শুরু করেন,
“তোমার মামার সাথে কথা হয়েছে আমার। তুমি আজকে মন্ত্রী সারোয়ার সাহের এর বাড়িতে গিয়েছিলে? উনার সাথে মুখে মুখে কথা বলেছ?”

মোহ বিলম্ব না করেই স্পষ্ট জবাবে বলে দিলো,
“হ্যাঁ বাবা বলেছি। আজকে আমার কাজের প্রথম দিন ছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি লোকজনের হাহাকার পড়ে গেছে। আর ওই লোক কন্টিনিউয়াসলি মিথ্যে বলে যাচ্ছিলেন। আর বাবা তুমি জানো আমি এসব সহ্য করতে পারিনা। আমি কি কোনো ভুল করেছি? যদি তাই হয় আমি কাল আবার উনার বাড়িতে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে আসব।”

আজহার সাহেব তৎক্ষনাৎ বলেন,
“না, মোহ। আমি সেটা বলিনি। একজন বাবা হিসেবে আমি বলব তুমি একদম ঠিক কাজ করেছ। তোমাকে আমি ছোটো থেকে প্রতিবাদ করতেই শিখিয়েছি। কিন্তু তুমি কি নিশ্চিত যে ওই লোকটাই মিথ্যা কথা বলছে? ভুল বোঝাবুঝিও তো হতে পারে!”

“বাবা আমি শতভাগ নিশ্চিত। সমস্যাটা উনিই সৃষ্টি করেছেন। মামার কাছে চুক্তিপত্রের কপি ছিল সেসব আমি দেখেছি।”

“তাহলে এটা তো চিন্তার বিষয়। তোমার মামা এই মুহূর্তে অনেক ভেঙে পড়েছে। তোমার মাকে এখনো আমি কিছু বলিনি। শুনলে হয়ত সেও খুবই চিন্তিত হবে। এমনিতেই তার নিম্ন র/ক্তচাপ!”

“ঠিকই করেছ না বলে। আমি তো বুঝতেই পারছি না উনার মতো একজন মানুষ এসব করেন কী করে! রক্ষক যদি ভ;ক্ষক হয় তবে আমরা কার কাছে যাব? সবচেয়ে বড়ো কথা কী জানো? আমি যেই ছেলেকে ভুল করে থা/প্পড় মে/রেছিলাম সেই ছেলেটারই বাবা উনি। ওই লোকটাও আবার আমাকে হু/মকি দিয়েছে।”

আজহার সাহেব মোহের মাথায় হাত রাখলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে নরম সুরে সাহস জোগান দিলেন,
“সাহস হারাবে না। সাহস হারানো মানে সব হারানো। বুঝতে পেরেছ? আমিও তোমার পাশে আছি।”

বাবার কথায় সাহসটা বৃদ্ধি লাভ করে মোহের। পরক্ষণেই মোহের মায়ের কণ্ঠ শুনে হকচকিয়ে ওঠে বাবা, মেয়ে দুজনেই।
“কী কথা হচ্ছে এখানে?”।

মোহ জিহ্বা কে/টে মজা করে বলে,
“বাবা-মেয়ের সব কথা শুনতে নেই মা!”

“যা তোদের কথা আমার শোনারও আগ্রহ নেই। আমি তো আমার কথা বলতে এলাম।”

আজহার সাহেব বেশ আগ্রহী হয়ে শুধালেন,
“হ্যাঁ, বলো কী কথা?”

“তোমার মেয়ের জন্য আজ আবার সম্বন্ধ এসেছিল। আজ আমি মানা করতে পারিনি। ছেলে ভালো পরিবারের। কাল ছেলের সাথে মোহ দেখা করবে।”

আজহার সাহেব চকিতে মোহের দিকে তাকান। বি/স্ফোরিত কণ্ঠে বলেন,
“কী? আমায় এসব জানাও নি কেন? তুমি একা একা সব ঠিক করে ফেললে?”

“মা তো আমাকেই পরে জানিয়েছে। আমাকে তাড়ানোর জন্য উঠেপড়ে লেগে গিয়েছে। বুঝলে বাবা?”

মিসেস. সুফিয়া দেরি করলেন না মোহের পিঠে চা/পড় লাগাতে।
“শয়/তান মেয়ে! সারাজীবন এভাবে একা কাটিয়ে দিবি? ছেলে তোকে পছন্দ করেছে বলেই কথা বাড়িয়েছি। এইযে ছেলের নম্বর! এটা ছেলের আন্টি দিয়ে গিয়েছে। যেকোনো সময় ছেলে কল করতে পারে।”

মিসেস. সুফিয়া মোহের হাতে কাগজ গুঁজে দিলেন। মোহ মুখটা গোমড়া করে সেটা নিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

ড্রয়িংরুমে সোফায় সকলের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে বসে আছে স্বচ্ছ। তাকে ঘিরে বসে রয়েছেন তার মা মিসেস. জেবা এবং মিসেস. যামিনী। দাঁড়িয়ে উৎসুক হয়ে চেয়ে আছে সৌমিত্র। মিসেস. জেবা এবার নিজের জবান খুললেন,
“তুই একটা মেয়েকে পছন্দ করিস সেটা আমাকে কেন বলিসনি?”

স্বচ্ছের ভ্রু দুটো আপনাআপনি কুঁচকে যায় এ কথা শুনে। রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে খানিকটা উচ্চস্বরে বলে,
“আরে আমি কখন কাকে পছন্দ করলাম? তোমরা কী বলছ? আন্টি তুমি সকালে ফারাহকে কী বলে গিয়েছ? আমার বিয়ের জন্য ড্রেস ডিজাইন করতে? কী শুরু করেছ তোমরা?”

মিসেস. যামিনী স্বচ্ছকে সাহস দেওয়ার ভঙ্গিতে বললেন,
“স্বচ্ছ মিথ্যা বলছিস কেন? আমরা আমরাই তো! আমাদের নিজের পছন্দের কথা না বললে কাদের বলবি? তুই লজ্জা পাচ্ছিস কেন এভাবে?”

“আমি লজ্জা কেন পাব? তোমাদের মাথায় এসব কথা কে ঢুকিয়েছে বলো তো?”

সৌমিত্রের গলা শুকিয়ে এলো যেন। হালকা কেশে অন্যদিকে তাকাল সে। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে গলা খাঁকারি দিতেই স্বচ্ছ সৌমিত্রের ঘাড় ধরে বলল,
“ও বলেছে?”

“আরে ভাই! সবসময় আমাকে কেন সন্দেহ করো? আন্টি আমাকে বাঁচাও! নয়ত তোমার হিরার টুকরো ছেলে আমায় মে/রেই ফেলবে।”

স্বচ্ছ ছেড়ে দেয় সৌমিত্রকে। নিজের টিশার্টের কলার ঠিক করতে করতে নিজের মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় সে। মিসেস. যামিনী স্বচ্ছের উদ্দেশ্যে বলেন,
“এমন করছিস কেন? তোর পছন্দ তো অনেক সুন্দর! এই দেখ আমরা মেয়ের বাড়ি থেকে মেয়ের নম্বরও নিয়ে এসেছি। আমি চাই তুই এখনি কথা বলে নে ওর সাথে। আমরা মেয়ের মাকে বলেছি তুই কাল মেয়ের সাথে দেখা করবি।”

স্বচ্ছের বিস্ময়বিষ্ট হয়ে তার ধূসর চোখজোড়া বেরিয়ে আসার উপক্রম। সৌমিত্র মুখে হাত চেপে শব্দ করে হাসছে। তবে তারও জানা ছিল না তার সামান্য মজা করে বলা মিথ্যা এতদূর নিয়ে চলে যেতে পারেন যামিনী আন্টি। মিসেস. যামিনীর জোরাজুরিতে স্বচ্ছকে বাধ্য হয়ে মেয়েটিকে কল করতেই হলো। তারও জানারও আগ্রহ হলো কে সেই মেয়ে?

ফোনের রিংটা বেজে উঠতেই চমকে উঠল মোহ। ইথান প্রায় ঘুমে নিমগ্ন। রিংটোনের আওয়াজে ইথানের ঘুম হালকা হয়ে আসছে দেখে দ্রুত ফোনটা হাতে নিয়েই কিছু না দেখে কল রিসিভ করে ফেলল মোহ। ওপাশ থেকে স্বচ্ছ এবং এপাশ থেকে মোহ দুজন একসাথে বলল,
“হ্যালো!”

চলবে….

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here