#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৮
মাত্র ঘুম থেকে উঠে বারান্দা ধরে ধীর পায়ে চোখ দুটো কচলাতে কচলাতে যাচ্ছিল স্বচ্ছ। আজ সকাল সকাল উঠতে চেয়েছিল সে। বেশ কয়েকদিন হচ্ছে বাহিরে শরীর চর্চা বা জগিংয়ের জন্য যাওয়া হয় না। বড় হাই তুলে ফারাহর ঘরটা পাশ কাটিয়ে যেতেই হঠাৎ বোনের ডাক শুনে চকিতে তাকাল স্বচ্ছ।
“হেই ইউ! একরোখা আহিয়ান স্বচ্ছ, কাম হেয়ার।”
পুরো দরজা ঠেলে বড়ো শ্বাস নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে স্বচ্ছ। আর বলে,
“আমি এখনো ফ্রেশও হইনি ফারাহ।”
ফারাহ প্রতিত্তোরে কিছু না বলে তার হাতে থাকা একটা গোল্ডেন শেরওয়ানি নিয়ে এসে স্বচ্ছের কাছে ধরে। ভ্রু কুঁচকে তাকায় স্বচ্ছ। বিরক্তি নিয়ে শুধায়,
“তোমার ডিজাইন করা বিচ্ছিরি শেরওয়ানি আমায় দিয়ে ট্রাই করছ কেন?”
তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল ফারাহ। শেরওয়ানি সরিয়ে নিয়ে কাঠকাঠ গলায় বলল,
“হিংসে হয়? আমার মতো হতে চাও? না, আমি তোমায় ম/দ খেতে বলব না। কারণ তুমি কোনোভাবেই আমার মতো মূল্যবান ডিজাইনার হতে পারবে না। তাছাড়াও তোমাকে আমার ডিজাইন করা সবচেয়ে প্রিসিয়াস শেরওয়ানি তো দিতেই চাইনি। কিন্তু কী করব? আমি নিরুপায়! তুমি কী করে জানবে ডিজাইন মার্কেটে আমার কদর কত! কত নামি-দামি কোম্পানি আমার পেছনে পড়ে আছে। শুধুমাত্র ফারাহ সাহেরের ডিজাইন করা কাপড় পরতে তারা অনুরোধও করে। দেশ তো ছাড়ো রিসেন্টলি বিদেশেও আমার নাম উঠছে। আর…”
“রিল্যাক্স সিস্টার! আমি তো মজা করি তোমার সাথে। তোমাকে জ্বালানোর জন্যই এসব বলি আর তুমি প্রতিবারের মতো ঠিকই জ্বলে ওঠো।”
শব্দ করে হাসি দিলো স্বচ্ছ। ফারাহ চোখ ছোটো করে একহাতে স্বচ্ছের গালে হাত দিয়ে জোরে অন্যদিকে ঠেলে দিয়ে বলল,
“চুপ করো! এই জ্বালানোর চক্করেই বোধহয় তোমার পছন্দ করা মেয়ে তোমায় পছন্দ করে না।”
ফারাহর শেষ কথাটা স্বচ্ছের কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই তার হাসিটি বিলীন হয়ে দেখা যায় সীমাহীন বিভ্রান্তী। চরম হতবাক হয়ে সে প্রশ্ন করে,
“কী? আমার পছন্দ করা মেয়ে? আশ্চর্য! আমি কখন, কাকে পছন্দ করলাম?”
ফারাহ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
“অনেক মিথ্যে নাটক করেছ আর করবে না। ফারাহ সব জেনে গেছে।”
“কী জানার কথা হচ্ছে? আমি বুঝতে পারছি না।”
“ঠিক বুঝতে পারবে বিয়ের সময়। যামিনী আন্টি তো মাকে পুরো পটিয়ে মেয়েদের বাড়ি চলে গিয়েছে। আর যেখানে যামিনী আন্টি উপস্থিত আছে সেখানে উনি বিয়ের ডেট ফিক্সড করেই ফিরবে।”
বলেই একগাল হাসি দিলো ফারাহ। প্রচণ্ড উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল,
“যাক অন্তত তোমার দৌলতে আমার পেছন ছেড়েছে। নয়ত আমার বিয়ে নিয়েও কাণ্ড করত।”
স্বচ্ছের মাঝে উচাটন সৃষ্টি হলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফারাহর সব কথা বোঝার চেষ্টা করেও যখন বুঝল না তখন উদ্ভ্রান্তের মতো বলল,
“আরে কিন্তু কার বাড়ি গিয়েছে? আমি তো কাউকেই পছন্দ করি না! এই আন্টি কার সাথে আমায় ফাঁ/সাতে চাইছে? আর পছন্দ করার কথা উঠল কোথা থেকে?”
“আমি তো জানি না। আন্টি শুধু বলে গেলেন তোমার বিয়ের জন্য এখন থেকেই যেন ড্রেস ডিজাইন করা শুরু করে দিই। আর তুমি তো জানো আমি পরিবারের বাধ্য মেয়ে।”
স্বচ্ছ আর বিলম্ব করল না। তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে এলো ফারাহর ঘর থেকে।
সকাল দশটার কাঁটায় ছুঁইছুঁই। সরোয়ার সাহেব আয়েশ করে খবরের কাগজ দেখে চলেছেন। একটু পরই বাহিরে বের হবেন কাজে। পাশেই সবসময়ের মতো তার কাজে সহযোগী কামাল স্থির দাঁড়িয়ে। তার কাজই হলো সরোয়ার সাহেবের প্রয়োজন-অপ্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখা।
“তো ওই মেয়েটার কী খবর পাওয়া গেল যে আমার ছেলেকে চ/ড় মে;রেছিল?”
সরোয়ার সাহেবের আচমকা করা প্রশ্নে কামাল কিছুটা থতমত খেয়ে বলল,
“জী, স্যার। খোঁজ তো নেওয়া হয়েছে। মেয়েটার নাম মোহ আনবীর। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। শহরে নিজেদের বাড়িও নেই। ভাড়া থাকে। আর ওর বাবা…”
“আমি মেয়েটার সাথে আমার ছেলের বিয়ে দেব না যে মেয়ের সমস্ত কোয়ালিফিকেশন লাগবে। ব্যস…ওই মেয়েটাকে ওর পুরো পরিবার সহ আমার সামনে হাজির করো। আমিও তো দেখি কত দুঃসাহস মেয়েটার!”
“জি স্যার কালকের মধ্যে হাজির হয়ে যাবে।”
সরোয়ার সাহেব আবার মনোযোগ দিলেন খবরের কাগজের পাতায়। পরক্ষণেই কিছু একটা মনে হতেই আবার জিজ্ঞাসা করলেন,
“আর ওই কেক বানানোর ফ্যাক্টরির কী হাল? পুরো ফ্যাক্টরি ফাঁকা হয়েছে নাকি হয়নি?”
কামাল যান্ত্রিক স্বরে বলল,
“লোকজন পাঠিয়েছি সেখানে। ফাঁকা করে দেওয়ার কথা এতক্ষণে।”
“আর ফ্যাক্টরির মালিক কি জেনেছে ওর সাথে পাঁচ লাখের এগ্রিমেন্ট করেছিলাম?”
“জি, স্যার। ওটাও দেখানো হয়েছে।”
সরোয়ার সাহেব মৃদু হাসলেন। তাচ্ছিল্যের সহিত বললেন,
“বেচারা! সে তো জানেও না বাকি পনেরো লাখ আমার কাছে!”
কামাল সরোয়ার সাহেবের সাথে তালে তাল মিলিয়ে হাসল। কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ। সরোয়ার সাহেব কাগজ রেখে উঠে দাঁড়ালেন। বাহিরে যাওয়ার সময় হয়েছে। পাঞ্জাবির কলার ঠিক করতে করতে শুনতে পেলেন বাহির থেকে চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে। কপালে ভাঁজ পড়ল উনার।
“কামাল, যাও তো।দেখে এসো বাহিরে কী হচ্ছে।”
কামাল মাথা দুলিয়ে বাহিরে বিষয়টি দেখার জন্য ছোটে। কিছুটা সময় পর হন্তদন্ত হয়ে ফিরে এসে বলে,
“স্যার, বাহিরে ফ্যাক্টরির লোকজন রীতিমতো গ্যাঞ্জাম পাকিয়ে ফেলছে। একদম আন্দোলন করা শুরু করছে।”
সরোয়ার সাহেবের মুখের রঙ যেন পাল্টে গেল। কিছুক্ষণ থম মে/রে দাঁড়িয়ে রইলেন উনি। কামাল আবার বলতে শুরু করল,
“গার্ড মিলেও তাদের থামানো যাচ্ছে না, স্যার।”
সরোয়ার সাহেব চশমা হাতে নিয়ে বললেন,
“কোনো ব্যাপার না। আমি যাচ্ছি ওদের সাথে কথা বলতে।”
“তবে স্যার….”
সরোয়ার সাহেব কামালের কথায় কর্ণপাত করলেন না আর। সদর দরজা পেরিয়ে বাহিরে আসতেই শোরগোল প্রগাঢ় শোনা গেল। হৈচৈ বাঁধিয়ে দিয়েছে সকলে।
ঝামেলা থেকে খানিকটা দূরেই সাইফুল সাহেব নিজের ভাগ্নীকে দূরে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। উনার ইচ্ছে ছিল না মোহকে নিয়ে আসার। তবে তিনি মোহকে খুব ভালো করে জানেন। মোহ এখানে আসতে চেয়েছো যেহেতু সেহেতু এখানে আসবেই।
“ওইযে মন্ত্রী সাহেব আসছেন। মনে হয় আমার সাথেই কোনো কথা বলবেন। যা বলার আমি বলব। তুই শুধু শুনবি। কথা বলবি না। মনে থাকবে?”
মোহ স্পষ্ট বলল,
“চেষ্টা করব।”
“চেষ্টা হয় মোহ। বড়োদের ব্যাপার। তুই এর মাঝে ঢুকলে কিন্তু আমি রাগ করব।”
মোহ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালে সরোয়ার সাহেব কামালের সাথে এসে সাইফুলের মুখোমুখি দাঁড়ালেন। সাইফুল উন্মুখিয়ে চেয়ে রইলেন। সরোয়ার সাহেবকে দেখে বিক্ষোভ বাড়ল সকলের। প্রতিবাদ দৃঢ় হলো। সরোয়ার সাহেব জোরে বলে উঠলেন,
“সবাই থামুন। আমায় কথা বলতে দিন। নাহলে সমস্যার সমাধান হবে কী করে?”
নিজের ঘরে বসে বারংবার মায়ের ফোনে কল করে যাচ্ছে স্বচ্ছ। কিন্তু মায়ের কোনো খবর নেই। বিরক্তি নিয়ে যখন ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ল তখন তার মনে হলো বেশ কিছু সময় ধরে বাহিরে জটলার আওয়াজ আসছে। জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে কৌতূহলী দৃষ্টিতে বাহিরে এত লোক দেখে উদ্বেগ বাড়ল তার। নিজের বাবাকে নিচে দেখে সেও তৎক্ষনাৎ নিজের ঘর প্রস্থান করে।
সাইফুল সাহেব আকুতি করে বললেন,
“আপনি মন্ত্রী মানুষ। অনেক সম্মানীয় ব্যক্তি! আপনি তো জনসাধারণের ভালোমন্দ দেখবেন। আমার মনে হয় আমার যে ফ্যাক্টরি আছে তার যেই চুক্তি হয়েছিল সেখানে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।”
সাইফুলের সম্পূর্ণ কথা গুরুত্ব না দিয়ে সরোয়ার সাহেব বলেন,
“আপনার নাম?”
“সাইফুল হোসেন। ফ্যাক্টরির মালিক।”
“তো কী ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল আপনার সামান্য ফ্যাক্টরি নিয়ে?”
“আমার সাথে বিশ লাখ টাকার চুক্তি করা হয়েছিল। কিন্তু এখন অন্য কাগজ দেখিয়ে পাঁচ লাখ আমার হাতে ধরিয়ে ফ্যাক্টরি থেকে আমাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। আপনি কিছু করুন স্যার প্লিজ! আমি এভাবে পথে বসে যাব। এখানে যারা সবাই আছে তারাও দিশাহারা হয়ে যাবে।”
বেশ আকুতি নিয়ে কথাগুলো অনবরত বলে থামলেন সাইফুল। সরোয়ার সাহেব কামালের উদ্দেশ্যে বললেন,
“কামাল! উনার ফ্যাক্টরির চুক্তির পেপারগুলো দেখি?”
কামাল চুক্তির কাগজপত্র সরোয়ার সাহেবের হাতে ধরিয়ে দিলেন। সরোয়ার সাহেব সেসব দেখার ভান করে সাইফুলের সামনে ধরে বললেন,
“এটা মেইন পেপার। এখানে তো পাঁচ লাখের কথায় উল্লেখ আছে। আপনার যদি চুক্তি পছন্দ না হয় তবে সাইন করেছিলেন কেন?”
“বিশ্বাস করুন! আমি ভালো করে সব চেক করে বিশ লাখ টাকার কথা পেপারে দেখে তারপরেই সাইন করেছি পেপারে। আমার সাথে ছলনা করা হচ্ছে।”
সরোয়ার সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“আপনার নিজের সাইন তো এটা? ঠিক বলছি তো? আপনারই হয়ত কোথাও ভুল হয়েছে। আপনার এসব সাইন করার আগে ভাবা উচিত ছিল। তখন আমার কাছে এলে আমি কোনো সমাধান বের করে দিতে পারতাম। হয়ত আপনার জন্য উপরমহলে খবর পাঠাতে পারতাম। কিন্তু আপনি সই করেছেন মানে আপনি চুক্তিতে রাজি। এতে আমার আর কিছু করার নেই।”
“আমার সাথে বেইমানি করা হয়েছে স্যার। আপনি এমনটা করবেন না। অন্তত আপনি সাহায্য করুন।”
সরোয়ার সাহেব চলেই যাচ্ছিলেন। সাইফুলের কথায় ঘুরে তাকিয়ে গাম্ভীর্যের সাথে বলেন,
“হয়ত আরো কোনো সমাধান দিতে পারতাম। কিন্তু এটা ভদ্রলোকের বাড়ি। আপনি আমার বাড়ির সামনে ঝামেলা বাঁধিয়ে আমাকে বদনাম করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাই সমাধান নিয়ে আপনার সাথে আর কথা বলতে চাই না।”
“ভদ্র বাড়ির মানুষজনকেও তো ভদ্র হওয়া উচিত। যাতে লোকজন আঙ্গুল তুলতে না পারে। তাই নয় কী?”
মেয়েলি কণ্ঠ পেয়ে সরোয়ার সাহেব ফের সন্দিহান চেহারায় পিছু ফিরে তাকান। কিছুটা দূরে চুপচাপ সাদা ওড়না মাথায় পেঁচিয়ে গলার সুর নামিয়ে রাখা মোহের চিরচেনা রূপ বেরিয়ে এলো। কালো মেঘ থেকে বেরিয়ে সূর্যের মতো ঝলমলিয়ে উঠে নিজের কথা দ্বারা অন্যকে পু ড়িয়ে দেওয়ার মতো নিজেকে আড়াল থেকে বের করল সে। সরোয়ার সাহেব যেন জহুরি চোখে দেখে নিলেন মোহকে। চিনতে বিন্দুমাত্র ভুল করলেন না তিনি। এতক্ষণ নিজের ক্রোধ আঁটকে রাখতে পারলেও এখন দাবানলের মতো জ্বলে উঠতে চাইছে। তবুও তিনি গলা নামিয়ে বললেন,
“তার মানে তুমি কী বোঝাতে চাইছ? আমরা অভদ্র লোকজন?”
“সেটা তো আমি বলার কেউ না। আমরা এসেছিলাম আপনার কাছ থেকে সমস্যার সমাধান নিতে। আপনি আমাদের এড়িয়ে যাচ্ছেন। আর এমনভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন যেন এই ঠকানো কাজটা আপনার। আর আপনাকে বদনাম করে এসব সাধারণ মানুষজন কত করে টাকা পাবে বলুন তো? একজন মন্ত্রী হিসেবে আপনার তো জনসাধারণের বিক্ষোভ সম্পর্কে খুব ভালো করে জানা উচিত।”
মোহের সাথে আর এসব কথা বলে তর্কে জড়াতে চাইলেন না সরোয়ার সাহেব। এতে তাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা খবর তৈরি হতে পারে। তিনি মৃদু হেসে বললেন,
“তুমি যেই সাহসী মেয়ে না যে আমার ছেলেকে রাস্তার থা/প্পড় দিয়েছিলে?”
মোহের দৃষ্টি সরু হয়ে এলো। সরোয়ার সাহেব একটু থেমে অদ্ভুত মৃদু হেসে বললেন,
“তোমার দুঃসাহস আমার ভালো লেগেছে।”
মোহ সবিনয়ের বলে ওঠে,
“আমরা যদি প্রধান বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলি তাহলে ভালো লাগবে স্যার। আমরা সবাই জানতে চাই কেন বিশ লাখের চুক্তি করে মাত্র পাঁচ লাখ দেওয়া হলো?”
“এর উত্তর আমি আগেই দিয়ে দিয়েছি। তুমি হয়ত শোনো নি।”
“আমি সব শুনেছি। তবে উত্তর ছিল না সেটা। ওটাকে বলে এড়িয়ে যাওয়া। ছোটো মুখে বড়ো কথা হবে তবে প্রশ্ন করতেই হচ্ছে যে, একজন মানুষ কোনো বিষয় থেকে কখন পালিয়ে বা এড়িয়ে যায় জানেন?”
সরোয়ার সাহেব চশমা ঠিকঠাক করে মোহের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। মেয়েটার স্পর্ধা উনাকে হতবাক করেই যাচ্ছে। তিনি কঠোর সুরে বললেন,
“তোমার মতো সাধারণ মানুষদের আমি ভালো করে চিনি বুঝলে মেয়ে? তোমরা বিপরীত পক্ষ থেকে টাকা খেয়ে দালালি করতে আসো তাদের হয়ে আর আমাদের বদনাম ছড়াও। কত টাকা দিয়েছে তোমাদের ওরা?”
সাইফুল সাহেব মোহের হাতখানা চেপে ধরলেন। ফিসফিস করে অনুরোধ করলেন যেন মোহ চুপ থাকে। কিন্তু মোহ উল্টে বলল,
“না মামা! আমি চুপ থাকতাম যদি জোর গলায় আপনি নিজের দাবী চাইতে পারতেন। কিন্তু আপনার এই নিচু কণ্ঠস্বর আপনার দুর্বলতা ভাবছেন উনি। আর সেটা হতে দেওয়া যাবে না।”
মোহ কথার মাঝে একটু থেমে ফের কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ ফেলে সরোয়ার সাহেবকে বলল,
“স্যার, আমরা আমাদের দাবী নিয়ে এসেছি। কারোর দালালি করার গুন হয়ত আপনাদের মাঝে থাকতেই পারে। কিন্তু আমাদের সাধারণের মাঝে নেই। এখন আপনি যদি সমস্যার সমাধান না করে দেন তবে আমরা…”
“তবে তোমরা কী?”
“তবে আমরা বাধ্য হবো উপরমহলে যেতে।”
সরোয়ার সাহেব বিস্তর হাসেন। যেন মোহ কোনো মজার কথা বলে ফেলেছে।
“তোমাদের যেখানে যাওয়ার আছে যেতে পারো। স্বাগত জানাব আমি তোমাদের সেখানে। এখন আসতে পারো।”
স্বচ্ছের আগমন ঘটল তখনি। তাড়াহুড়ো করে এসে পড়ল মোহের বরাবর। দিনের আলোয় কুঁচকানো মোহের ঘর্মাক্ত মুখশ্রীর রঙ বদলায়। দেখা মিলে বিস্ময়ের। কিছুটা স্তব্ধ থেকে পরিলক্ষিত করে ঘোলাটে রঙের লোচনের মাঝে কী চমৎকার অস্থিরতা। বুঝতে পারে, এই সেই মন্ত্রীর ছেলে।
“তুমি এখানে কী করছ? কেন এসেছ?”
স্বচ্ছের বিভ্রান্ত হয়ে করা প্রশ্নে মোহের তেজী জবাব ছিল,
“সচক্ষে দেখতে এলাম বাবা ছেলের কত মিল! আপনার বাবা অন্যায় করছেন আমাদের সাথে। আমাদের পাওনা মিটিয়ে দিতে নারাজ তিনি।”
স্বচ্ছ দেরি না করেই তীরের ন্যায় নিজের গমগমে সুরে কথা ছুঁড়ল।
“খবরদার মেয়ে! তুমি আমায় অপমান করেছ আমি সহ্য করেছি। কিন্তু বাবার বিরুদ্ধে একটা কথাও সহ্য করব না। এর জন্য কিন্তু তোমাকে ভুগতে হবে। এক চুলও ছাড় পাবে না।”
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এমন অনিয়ম আর হবেনা আশা করি গুরুতর সমস্যা না থাকলে। কিছু সমস্যাতেই আটকা পড়েছিলাম এবং এখনো আটকা পড়ে আছি। ক্ষমাপ্রার্থী! গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]