#বেনেবউ
#পর্ব_১০
#তানজিলা_খাতুন_তানু
ইপ্সিতার বাবা মাও রিতেশের সাথে বিয়েতে রাজি। যেহেতু রিতেশ নিজের ইচ্ছায় কিছু করেনি, আর ঘটনাও ঘটে গেছে। এখন ইপ্সিতার অন্য কোথাও বিয়ে দিতেও পারবে না, সবকিছু ভেবে ওনারা রাজি হয়ে যান। কিন্তু ইপ্সিতা রাজি নয়।
– ‘এটা কখনোই সম্ভব না, প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করো।’
– ‘তুই বোঝ একটু ছেলেটা তো নিজের ইচ্ছাতে কিছু করেনি আর তোকে ভালোও বাসে।’ (ইপ্সিতার মা)
– ‘অন্যায়টা কিন্তু ওই করেছে, আমি কখনোই ওকে নিজের স্বামীই হিসাবে মেনে নিতে পারব না।’
– ‘ইপ্সিতা বোঝ একটু, তোর সত্যি জানার পর কেউই তোকে বিয়ে করতে চাইছে না। তুই কি সারাজীবন একা থাকবি নাকি?’
– ‘দরকার পড়লে সেটাই করব। তবুও রিতেশকে আমি কিছুতেই বিয়ে করব না।’
ইপ্সিতা রাগ দেখিয়ে চলে যায়। ইপ্সিতার বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে।
– ‘ইপ্সিতার বাবা।’
– ‘বলো।’
– ‘ইপ্সিতা তো কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না।’
– ‘আচ্ছা আমি দেখছি।’
ইপ্সিতা নিজের ঘরে গিয়ে রাগে ফুঁসছে। রিতেশ নাই বা নিজের ইচ্ছাতে কাজটা করেনি কিন্তু অন্যায়টা তো করেছে। ইপ্সিতা কখনোই ওকে মানতে পারবে না।
ইপ্সিতার বাবা মেয়ের ঘরে আসলেন।
– ‘বাবা তুমি।’
– ‘তোর সাথে কথা আছে।’
– ‘বিয়ের বিষয়ে কিছু বলবে না।’
– ‘কথাটা শোন একটু।’
– ‘রিতেশকে বিয়ে করতে বলবে তাই তো।’
– ‘হুমম।’
– ‘বাবা তোমরা শুধুমাত্র নিজেদের দিকটাই ভেবে চলেছে একবারও আমার কথাটা ভাবছো না। রিতেশ আমার সাথে এতবড়ো একটা অন্যায় করল সেটা হোক না নেশার ঘোরে তবুও তো করেছে। ওকে দেখলেই আমার সেই রাতের কথা মনে পড়ে যায়, কষ্ট হয় আমার।’
ইপ্সিতা হু হু করে কেঁদে উঠল। ওহ বুঝে উঠতে পারছে না, বাবা মা কিভাবে রাজি হয়ে গেল বিয়ের জন্য।
– ‘শান্ত হ মা।’
মেয়ের কান্না দেখে ইপ্সিতার বাবা আর কিছুই বলতে পারলেন না।
রাত,
ইপ্সিতা বিছানায় আধশোয়া হয়ে নিজের জীবনের ঘটনাগুলোকে মনে করে চলেছে। মেসেজের শব্দে ধ্যান ভাঙল। নয়ন মেসেজ করেছে।
– ‘কি করছো?’
– ‘এই তো ভাবছেন।’
– ‘কি ভাবছো!’
– ‘নিজের জীবনের কথাগুলো। আর কত কি যে দেখতে হবে কে জানে।’
– ‘কেন আবার কি হলো।’
– ‘রিতেশ বাড়িতে এসেছিল ওর মাকে নিয়ে।’
– ‘কেন?’
– ‘আমাকে বিয়ে করতে চাই।’
সিন হলো কিন্তু রিপ্লাই আসলো না। বেশকিছুক্ষন পর নয়ন মেসেজ দিলো,
– ‘আর আপনি কি চান?’
– ‘কখনোই না, রিতেশ আমার কাছে অপরা’ধী আমি কখনোই ওকে মেনে নিতে পারব না।’
– ‘তাহলে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিন।’
– ‘কখনোই না। আমি নিজের জীবনের সাথে কাউকে জড়াতে চাই না।’
– ‘কেউ যদি আপনার সবটা জেনে আপনাকে নিজের করে চাই তো তখন?’
– ‘তখনও না।’
– ‘অদ্ভুত মেয়ে তো আপনি।’
– ‘আমি অদ্ভুতই তা আপনি কবে বিয়ে করছেন।’
– ‘খুব শীঘ্রই।’
– ‘ওহ কনগ্রাচুলেশন।’
– ‘থ্যাঙ্কস।’
২দিন পর,
ইপ্সিতা কোনোভাবেই বিয়েতে রাজি হচ্ছে না। অহনা আহমেদ ইপ্সিতার সাথে দেখা করতে চেয়েছেন।ইপ্সিতা প্রথমে রাজি হয়নি, ওনার অনেক বলার পর রাজি হয়েছে তবে একটা শর্তে। রিতেশ সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবে না।
– ‘কি বলবেন বলুন।’ (ইপ্সিতা)
– ‘বসো তোমার সাথে কথা আছে।’ (অহনা আহমেদ)
– ‘তাড়াতাড়ি বলুন।’
– ‘ইপ্সিতা আমার ছেলেটা তো তোমাকে ভালোবাসে, তাহলে কেন ওকে ফিরিয়ে দিচ্ছি।’
ইপ্সিতা ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
– ‘ঠিক আছে ফিরিয়ে দেব না, তার আগে আমাকে আমার সবটা ফিরিয়ে দিতে বলুন।’
অহনা আহমেদের মুখটা কালো হয়ে যায়। ইপ্সিতার চাওয়াটা উনি কখনোই মেটাতে পারবেন না। তবুও নিরস মুখে বললেন,
– ‘আমার ছেলে তো তোমাকে বিয়ে করতে চাইছে। ওকে একটাবার মাফ করে দাও, ওহ ওর প্রায়শ্চিত করুক।’
ইপ্সিতা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
– ‘সব দোষের প্রায়শ্চিত করা যায় না। আর সব দোষের মাফও হয় না। রিতেল আমার সাথে যেটা করেছে সেটা আমি কখনোই ভুলতে পারব না তাই ওর সাথে সংসার বাঁধার কোনো কথাই আসে না। আর ম্যাম আপনি না একজন সমাজসেবী, আচ্ছা ম্যাম আজকে যদি রিতেশের জায়গায় অন্য কেউ থাকত আর আমাকে বিয়ে করতে চাইত তখনও কি আপনি এইভাবে তাকে সার্পোট করতেন?’
অহনা আহমেদ কি বলবেন বুঝতে পারলেন না। সত্যিই তো অন্য কেউ হলে তাকে কি এইভাবে সার্পোট করত?
– ‘কি হলো চুপ করে গেলেন কেন?’
– ‘একবার ভেবে দেখতে পারো।’
– ‘ভাবাভাবি শেষ। আমি রিতেশকে বিয়ে করব না। রিতেশ এখন নেশা করে না ঠিকই কিন্তু আবার পরে নেশাতে ডুবে যাবে না তার কি গ্যারেন্টি আছে।’
– ‘আমার ছেলে আর এইরকম করবে না। বিশ্বাস করতে পারো।’
– ‘দুইবছর আগেও মানুষটাকে বিশ্বাস করতে পারিনি আর এইবারেও পারব না। আর আপনারা যা শুরু করেছেন তাতে রিতেশ যদি আমাকে খু’ন করেও ফেলে তাতেও আপনারা সজ্ঞানে করেনি বলে চালিয়ে দেবেন।’
– ‘এইসব তুমি কি বলছো?’
– ‘আমার যেটা বলার বলে দিয়েছি, আশা করছি আপনি বুঝবেন। আর জোর করে কখনোই কোনো সম্পর্ক হয় না, তাই চেষ্টাটা না করলেই ভালো হবে।’
ইপ্সিতা কথাটা বলে বেড়িয়ে পড়ল। সবাই এক কথা বলতে বলতে মাথা খারাপ করে ছেড়ে দিচ্ছে। অসহ্য।
বাড়িতে ফিরতেই দেখল গোটা বাড়ি সাজানো হচ্ছে। বাড়ির ভেতরে কয়েকজন লোকজন আছে।
– ‘মা মা।’
– ‘কি হলো ডাকছিস কেন?’
– ‘এইসব কি? বাড়ি সাজানো হচ্ছে কেন?’
– ‘সব জানতে পারবি। এখন ঘরে গিয়ে রেস্ট নে।’
– ‘আগে বলো।’
– ‘জেদ করিস না। যা চুপচাপ।’
ইপ্সিতা নিজের ঘরে চলে গেল। বিষয়টা ভালো ঠেকল না, কি করতে চলেছে সবাই! মেয়েকে যেতে দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ইপ্সিতার মা।
ইপ্সিতা ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়, সারাদিনের ধকলে চোখটা লেগে যায়। তারপর গভির ঘুমে। ঘুম ভাঙলো মায়ের ডাকে।
– ‘এই ইপ্সিতা উঠ তাড়াতাড়ি।’
– ‘কি হয়েছে, তুলছো কেন?’
ইপ্সিতার মা ইপ্সিতার হাতে একটা বিয়ের শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলল,
– ‘তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।’
– ‘কেন?’
– ‘আজকে তোর বিয়ে।’
– ‘কি?’
– ‘হ্যাঁ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।’
– ‘মা পাগল হয়ে গেছ,আমি বিয়ে করবো।
– ‘হ্যাঁ করবি।’
– ‘কার সাথে বিয়ে?’
– ‘তোর চেনা মানুষের সাথে।’
– ‘কে?’
– ‘সেটা পরে জানবি।’
– ‘মা প্লিজ ফাজলামি করো না। আমার কিন্তু ভালো লাগছে না।’
– ‘ছেলেটাকে তোকে ভালোবাসে, তোর সবটা জেনেই তোকে বিয়ে করতে চাইছে।’
ইপ্সিতা ভাবতে লাগল ছেলেটা কে, নিজের মস্তিষ্ক বলছে এটা নিভ্র ছাড়া আর কেউ নয়।
– ‘মা ছেলেটা কি নিভ্র।’
– ‘হুম।’
ইপ্সিতা আর কিছু না শুনেই বেড়িয়ে গেল। ইপ্সিতার মা বারাবার ডাকলেন কিন্তু ইপ্সিতা কোনো কথাই শুনলো না।
#চলবে…
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সকলে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।
আসসালামু আলাইকুম