বেনেবউ #পর্ব_২১ #তানজিলা_খাতুন_তানু

0
353

#বেনেবউ
#পর্ব_২১
#তানজিলা_খাতুন_তানু

বাড়িতে বিয়ের আমেজ, সকলেই খুব ব্যস্ত। গোটা বাড়ি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে, ইপ্সিতা নীচের তলাতেই থাকছে আর দুইবোনে দারুন মজা করছে।

– ‘এই ইপ্সিতা নিভ্রের সাথে দেখা করিস নি একবারো?’
– ‘না।’ (ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
– ‘কেন!’ (অবাক হয়ে)
– ‘আরে রিয়াদি ভুলে গেছ সবুরে মেওয়া ফলে। ওনাকে ওইটাই বোঝাচ্ছি।’
– ‘তুই কিন্তু এইবার আমার হাতে মা’র খাবি। ছেলেটা খালি আনচান করছে তোকে দেখার জন্য আর তুই শয়তান মেয়ে একবাড়িতে থেকেও ওর সাথে দেখা করছিস না!’
– ‘কোথায় এক বাড়ি আমি আমার বাপের বাড়িতে আছি আর উনি ওনার বাড়িতে।’
– ‘কিন্তু বাড়ি তো একটাই তলাটা আলাদা।’
– ‘হু।’

কথার মাঝেই ইপ্সিতার ফোনে মেসেজের শব্দ হলো, রিয়া উঁকি দিয়ে দেখে বলল,
– ‘আপনার কর্তার মেসেজ। দ্যাখ কি বলেছে।’
– ‘কি আর বলবেন উনি।’

তবুও ইপ্সিতা মেসেজটা চেক করার জন্য ফোনটা হাতে তুলে নিল। শয়তানি করে দেখা করেনি ঠিকই কিন্তু লুকিয়ে চুরিয়ে ঠিকই নিভ্রকে দেখছে কিন্তু বেচারা নিভ্র বউয়ের দেখা না পেয়ে হাঁসফাঁস করছে।

নিভ্রের মেসেজটা এইরকম ছিল,
– ‘যদি সন্ধ্যার পর ছাদে না আসো, তাহলে আমি নীচে তলায় গিয়ে সবার সামনে থেকে তোমাকে তুলে নিয়ে আসব প্রমিস।’

মেসেজটা দেখে ইপ্সিতা মুচকি মুচকি হাসছে তা দেখে রিয়া বলল,
– ‘এই শয়তানের নানি মুচকি হাসছিস কেন?’
– ‘আমাকে থ্রেট দিচ্ছে, সন্ধ্যায় ছাদে না গেলে তুলে নিয়ে যাবে।’
– ‘যা না বোইন ছেলেটাকে আর কত কষ্ট দিবি।’
– ‘নো আমি কিছুতেই যাব না। আর এই বিষয়ে তুমি আর একটাও কথা বলবে না। এখন আমি ঘুমাবো বাই।’
– ‘এই বিকাল বেলা তুই ঘুমাবি!’
– ‘হু।’

ইপ্সিতা বিছানায় শুয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে লাগল, হঠাৎ করেই অনেকটা বাচ্চা হয়ে গেছে। নিভ্রের সাথে এই লুকোচুরি খেলা খেলতে বড্ড ভালো লাগছে, সত্যি মানুষ ঠিকই বলে প্রেমে পড়লে মানুষ পাগল হয়ে যায় ঠিক যেমনটা নিভ্র আর ইপ্সিতার ক্ষেত্রেও হয়েছে।

ইপ্সিতার ঘুম ভাঙে সন্ধ্যার অনেক পরে, চোখ খুলতেই সামনে নিভ্রকে দেখে চমকে উঠল। স্বপ্ন ভেবে প্রথমে ভুল করলেও পরে বূঝল কোনো স্বপ্ন নয় নিভ্র সত্যিই ওর সামনে বসে আছে। ইপ্সিতা একটা শুকনো ঢোক গিলল।

– ‘আপনি!’
– ‘হ্যা। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হও।’
– ‘কেন?’
– ‘তুমি তো কথা শুনলে না। তাই আমিই তোমাকে নিতে আসলাম।’
– ‘আমি কোথাও যাবো না।’
– ‘যদি সকলের সামনে লজ্জায় না পড়তে চাও তাহলে চুপচাপ রেডি হয়ে নাও।’
– ‘কোথাও যাবো না।’

নিভ্র ইপ্সিতার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে হাতটা শক্ত করে ধরে সামনের দিকে এগিয়ে চলল, ইপ্সিতা না চললেও চলতে হচ্ছে কিছুই করার নেই। বসার ঘরে সকলে বসে কথা বলছে, তার মাঝে নিভ্র বলল
– ‘আমি একটু ইপ্সিতাকে নিয়ে বের‌ হচ্ছি, ফিরতে রাত হবে।’

ইপ্সিতা চোখ দিয়ে ইশারা করছে যাতে না বলে কিন্তু কেউই ওকে পাত্তা দিল না। আর পাত্তা দেবেই বা কি করে নিভ্র কারোর উত্তরের আশা না করেই ইপ্সিতাকে নিয়ে বেড়িয়ে গেল।

**

ইপ্সিতা খাটে বসে পা দোলাচ্ছে আর নিভ্র সোফাতে বসে মাথায় আঙুল সাইড করছে। রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে, এই মেয়েটা ঠান্ডা মেজাজের ছেলেটাকে রাগী দিয়েছে এখন রাগ কমলে হয়! নিভ্র নিজেকে সামলে নিয়ে ইপ্সিতার কাছে গিয়ে বলল,

– ‘দ্যাখো ইপ্সিতা আমার রাগ আর বাড়িয়ে দিও না। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।’
– ‘আমি যাবো না মানে‌ যাবো…

আর বলতে পারল না। নিভ্র ইপ্সিতার দুটি অধর আঁকড়ে ধরল। এই কয়েকদিন জমানো রাগ, অভিমান, ভালোবাসা সবটা উজার করে দিতে লাগল। আসতে আসতে স্পর্শ আরো গভীর হয়ে উঠছে, নিভ্রের স্পর্শগুলো ইপ্সিতাকে পাগল করে দিচ্ছে আর কিছুক্ষন এইভাবে থাকলে দুইজনেই নিজেদের উপর থেকে কন্ট্রোল হারাবে। ইপ্সিতাকে কোনোরকমে নিভ্রকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
– ‘আমি যাবো।’

নিভ্রের ঠোঁটে ফুটে উঠেছে শয়তানি হাসি।

– ‘এই তো গুড গার্ল।‌ এইবার কাবার্ডে রাখা প্যাকেটের ড্রেসটা পড়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও দেখি। সময় মাত্র ১০মিনিট।’

নিভ্র চলে যায়। ইপ্সিতা ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল, এত ভাব দেখিয়েও কোনো লাভ হলো না ওই ছেলের কাছে হার মানতেই হলো দূর।

১০মিনিট পর,

নিভ্র এসে দেখল ইপ্সিতার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে খোঁপা করছে। কাঁচা হলুদ শাড়ি সাথে হাত উঠিয়ে খোঁপা করার ফলে পেটের কিছু অংশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, নিভ্র একটা শুকনো ঢোক গিলল এই মেয়ে ওকে পাগল করেই ছাড়বে।

নিভ্র ধীর পায়ে এগিয়ে এসে ইপ্সিতাকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ঘষে‌ বলল,

– ‘চুলটা খোলা থাকুক।’
– ‘গরম পড়েছে খুব।’
– ‘কিছু হবে না, চুলটা খুলে দাও।’

নিভ্রের নেশাভরা কন্ঠের আবদার ইপ্সিতা উপেক্ষা করতে পারল‌ না। চুলটা ছেড়ে দিল, নিভ্রের গোটা মুখ ঢেকে যায় ইপ্সিতার রেশমী চুলে ঘ্রান নিতে থাকে।

– ‘এই কখন যাবেন।’
– ‘হূম চলো।’

দুজন বেড়িয়ে পড়ল। নিভ্র বাইক চালাচ্ছে আর ইপ্সিতা ওকে আঁকড়ে ধরে আছে, খোলা চুল নিভ্রের মুখে এসে লাগছে।

– ‘আমরা কোথায় যাচ্ছি?’
– ‘সারপ্রাইজ।’
– ‘এইরকম সময় মানুষ নাকি ঘুরতে বের হয়।’
– ‘আরে বউ রাতের বেলা ঘুরতে বের হবার মজাটাই আলাদা সেটা তুমি বুঝবে না।’
– ‘আমি তো কিছুই বুঝি না।’
– ‘নাহ বোঝেন না। বুঝলে আমার মতো নিস্পাপ ছেলেটাকে কষ্ট‌ দিতে পারতেন না।’
– ‘আমি কিছুই করিনি।’
– ‘হ্যাঁ সব তো আমি করেছি না।’
– ‘হুমম।’
– ‘দাড়াও আগে বিয়েটা হতে দাও তারপর সব শোধ তুলব।’
– ‘আপনি কিছুই করবেন না আমি জানি।’
– ‘হু।’

অনেকটা যাওয়ার পর ওরা একটা রিসোর্টে আসে।

– ‘এইখানে কেন?’
– ‘উফ্ এত কথা বলছো কেন বলো তো।’
– ‘তো কি করবো হঠাৎ করেই এইখানে নিয়ে আসলেন কেন?’
– ‘বউয়ের সাথে প্রেম করার জন্য।’
– ‘আপনি না দিনকে দিন…
– ‘কি বলো।’
– ‘থাক শুনতে নেই।’

রিসোর্টের একদিকে বিশাল রেস্টুরেন্ট। তখন ঘড়িতে বাজে ৯:৩০ মিনিট। নিভ্র আর ইপ্সিতা ওইখানে খাওয়া দাওয়া করল। তারপর..

– ‘এইবার বাড়ি চলুন।’
– ‘না।’
– ‘উফ এত রাতে এইখানে কি করবেন।’
– ‘আমার ইচ্ছা। চুপচাপ থাকো নাহলে এইখানে রেখে চলে যাবো।’
– ‘পারবেন রেখে যেতে?’

নিভ্র কথাটা ঘুরিয়ে দিয়ে বলল,
– ‘চলো ওইদিকে একটা সুইমিংপুল আছে।’
– ‘হ্যাঁ তো কি করবো?’
– ‘চলো না।’

নিভ্র ইপ্সিতাকে জোর করে সুইমিং পুলে নিয়ে গেল। এদিক ওদিক ঘুরিয়ে চলেছে, ইপ্সিতা বাড়ি ফেরার কথা বললেও পাত্তা দিচ্ছে না।

– ‘এই আপনি বাড়ি যাবেন।’
– ‘ওকে চলো।’

ইপ্সিতা দুই পা এগিয়ে গিয়ে নিজের পাশে ও পেছনে কাউকেই দেখতে পেল না। ওহ একটু ভয় পেয়ে যায় নিভ্র কোথায় গেল? কয়েকবার নিভ্র নিভ্র ডাকার পরেও সাড়া দিল না। ইপ্সিতার ভয় করছে তখনি কেউ পেছন থেকে ওর চোখ বেঁধে দেয়। ইপ্সিতা ভয়ে কেঁপে উঠে।

নিভ্র কোথায় গেল? আর ইপ্সিতার চোখটাই বা কে বাঁধল!

#চলবে…

সকলের রেসপন্স চাই। কেমন হয়েছে সকলে বলবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here