বেনেবউ #পর্ব_২০ #তানজিলা_খাতুন_তানু

0
360

#বেনেবউ
#পর্ব_২০
#তানজিলা_খাতুন_তানু

সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠে। রিয়া বর্তমানে জেলে বন্দি আছে, একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। মায়ের মৃ’ত্যু তার সাথে নিভ্রের বলা কথাগুলো মনে দারুন দাগ কেটেছে, অনুশোচনায় দ’গ্ধ হয়ে উঠছে বারবার।

ইপ্সিতা নিভ্রকে কিছু একটা বলার জন্য ক্রমাগত উশখুশ করে চলেছে কিন্তু বলে উঠতে পারছে না। নিভ্র সেটা বুঝতে পেরে ল্যাপটপ ছেড়ে উঠে ইপ্সিতাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে ঘাড়ে নাক ঘষতে লাগল, ইপ্সিতা কেঁপে উঠছে নিভ্রের দুষ্টুমিতে।

– ‘কি করছেন ছাড়ুন।’
– ‘উহু না। কি বলবে বলছিলে বলো।’ (ঘাড়ে আলতো করে চুমু দিয়ে)
– ‘আমি আবার কি বলব!’
– ‘দাড়িয়ে ছিলে কিছু একটি বলবে বলে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছি। তো সেটা বলেই ফেল।’
– ‘আসলে…
– ‘কি?’
– ‘আমি ভাবছিলাম রিয়াদির উপর থেকে কেসটা তুলে নিলে হয় না।’

নিভ্র ইপ্সিতার ঘাড় থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ইপ্সিতার চোখে অন্যরকমের কিছু একটা দেখতে পারছে তাহলে কি এইসব কিছুর জন্য নিজেকে দায়ী করছে!

– ‘ইপ্সিতা এতকিছুর পরেও তুমি এইকথা বলছো কিভাবে?’
– ‘দেখুন আমি মানছি রিয়া’দি অন্যায় করেছে কিন্তু তাই বলে তাকে এইভাবে শা’স্তি দেবার অধিকার আমাদের নেই। এমনিতেই মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে, প্লিজ কেসটা তুলে নিন।’

নিভ্র কোনো উত্তর না দিয়েই চলে গেল। ইপ্সিতা হতাশ হলো, সেইদিন নিভ্র যখন রিয়াকে কথাগুলো বলল তখন ওহ ভালো করেই রিয়াকে পর্যবেক্ষণ করেছিল মেয়েটার মুখে অনুশোচনা দেখেছে। আর যে মানুষটা মন থেকে অনুশোচনা করে তাকে ক্ষমা করে দেওয়াটাই ভালো নয়তো তার রাগটা আবারো মাথা ছাড়া দিয়ে উঠবে। কিন্তু বিষয়টা নিভ্রকে বোঝাবে কিভাবে? সে তো মনে হয় বিশাল‌ রেগে আছে।

নিভ্র বাড়ি ফিরে দেখল ইপ্সিতা মন খারাপ করে বসে আছে।

– ‘কি ব্যাপার এইভাবে বসে আছো কেন?’
– ‘কিছু না। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন খেতে দিচ্ছি।’
– ‘সে যাচ্ছি। কিন্তু কালকে তোমাকে একবার আমার সাথে একটা জায়গায় যেতে হবে।’
– ‘কোথায়?’
– ‘রিয়ার জা’মিনের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। কালকে ছেড়ে দেবে ওকে।’

ইপ্সিতা খুশি হয়ে নিভ্রকে জড়িয়ে ধরে। নিভ্র ইপ্সিতার মাথায় আলতো হাতে স্পর্শ করে বলল,
– ‘তোমার মুখের হাসির জন্য আমি সবকিছু করতে পারি বেনেবউ।’

**

পরেরদিন রিয়ার জামিন হয়ে যায়। বিষয়টা রিয়ার জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল এতকিছুর পর ইপ্সিতা ওর নামে কে’স তুলে নেবে সেটা আশা করেনি। রিয়া জেল থেকে বের হবার পরে ইপ্সিতাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল। ইপ্সিতা হতবাক! এই প্রথম রিয়া স্বইচ্ছায় ওকে জড়িয়ে ধরেছে, খুশিতে ইপ্সিতার চোখেও পানি এসে ধরা দিলো।

– ‘আমার মতো পাপীকে কেন ছাড়িয়ে আনলি?’
– ‘পুরানো সব কথা ভুলে যাও। চলো আমরা আবারো নতুন করে সবকিছু শুরু করি।’
– ‘আজ বুঝলাম কেন নিভ্র তোকে ভালোবেসেছে। সত্যি তোর তুলনা হয় না। আমার ছোট বোনটা সবদিক থেকে বেস্ট।’

রিয়া আর ইপ্সিতা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরল আবারো। নিভ্র ওদের কান্ড দেখে মুচকি হেসে বলল,
– ‘আমাকে কেউ জড়িয়ে ধরে না।’

রিয়া শয়তানি করে বলল,
– ‘আমি ধরতেই পারি কিন্তু তোমার বউ কি সেটা মেনে নেবে।’

ইপ্সিতা রাগী লুক নিয়ে নিভ্রের দিকে তাকাতেই নিভ্র এদিক ওদিক তাকানোর নাম করে চলে যায় ওরা দুইবোন আবারো হেসে উঠে।

এইবার বাড়ি ফেরার পালা। গাড়িতে বসে ঠিক হলো রিয়া এখন থেকে ইপ্সিতাদের বাড়ি মানে বাপের বাড়িতেই থাকবে। রিয়া প্রথমে আপত্তি করলেও ইপ্সিতার জেদের কাছে হার মানতে হয়েছে।
– ‘রিয়ালি চিন্তা করো না। সবাইকে আমি ঠিক ম্যানেজ করে দেব।’

ইপ্সিতার মা দরজা খুলে নিভ্র আর ইপ্সিতার সাথে রিয়াকে দেখে চমকে উঠলেন।

– ‘রিয়া এইখানে?’
– ‘মা আগে তো ভেতরে যেতে দাও তারপর জিজ্ঞেস করবে।’
– ‘আয় ভেতরে আয়।’

সকলে অর্থাৎ ইপ্সিতার বাবা মা, ইপ্সিতা নিভ্র, নিভ্রের মা আর রিয়া। সকলের মাঝে নিরবতা বিরাজ করছে, কেউ কথা বলছে না। ইপ্সিতা নিরবতা ভেঙে বলল,
– ‘প্লিজ রিয়াদিকে একটা চান্স দাও তোমরা।’

ইপ্সিতার বাবা কিছু একটা বললেন,
– ‘ঠিক আছে আমি তোর কথাতে রিয়াকে লাস্ট চান্স দিলাম। কিন্তু এটাই চান্স এইবার কিছু করলে আমি কিন্তু ওকে ছেড়ে দেব না।’
– ‘কথা দিচ্ছি মামা সজ্ঞা’নে আর কোনো ভূল করব না।’ (আশ্বাস দিয়ে)

***

নিভ্রের স্যার ও তার স্ত্রী হঠাৎ করেই নিভ্রের বাড়িতে ঘুরতে চলে এসেছেন। ইপ্সিতা তো বেজায় খুশি, জমিয়ে রান্না শুরু করে দিয়েছে সাথে হেল্প করছে রিয়া। নিভ্র বাজারে গেছে আর বাড়ির বড়োরা মানে ইপ্সিতার মা বাবা আর শাশুড়ি বাইরে বসে ওনাদের সাথে কথা বলছে‌।

নিভ্রের স্যার বললেন,

– ‘আমার একটা প্রস্তাব আছে।’
– ‘কি প্রস্তাব?’ (ইপ্সিতার বাবা)
– ‘নিভ্র আর ইপ্সিতার বিয়েটা আবারো দিতে চাই।’

সকলে অবাক হলেন। ইপ্সিতার বাবা বললেন,
– ‘এইটা আমিও ভাবছিলাম। ওদের কোনো আপত্তি না থাকলে আমাদের ওহ কোনো আপত্তি নেই।’
– ‘সেইসব চিন্তা ছেড়ে দিন ওদেরকে রাজি আমরি ঠিক করিয়ে নেব।’ (সুমা)
– ‘আর একটা কথা আছে আমার।’ (স্যার)
– ‘বিয়ের সম্পূর্ণ খরচ আমি বহন করতে চাই।’

ওর তিনজন অবাক হয়ে একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগল।

– ‘এইসব আপনি কি বলছেন। আপনি কেন!’
– ‘নিভ্র আর ইপ্সিতাকে আমরা নিজেদের সন্তানের মতো দেখি। তাই ওদের জন্য এইটুকু করতে পারলে আমাদের খুব ভালো লাগবে প্লিজ আপনারা না করবেন না।’

স্যারের আকুতি ভরা কন্ঠ উপেক্ষা করতে পারল না। বাধ্য হয়েই ওনারা রাজি হয়ে যায়। দুই পরিবারের খুশির আমেজ, আগের বার ছোট করে হলেও এইবার বড়ো করে আয়োজন করা হচ্ছে। স্যার সমস্ত দায়িত্ব পালন করছেন, আর খরচার বিষয়েও কোনোরকমের কৃপনতা রাখছেন না। বিষয়টিতে নিভ্র আর ইপ্সিতার আপত্তি থাকলেও ওনাদের দুজনের রিকুয়েস্টে রাজি হতে হয়েছে।

নিভ্র ইপ্সিতাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– ‘কি ম্যাডাম তাহলে আমাদের আবার বিয়ে হচ্ছে বলো।’
– ‘জ্বি।’
– ‘আগেরবার তো বিয়েটাই আনন্দ করতে পারিনি এইবার খুব করব।’
– ‘ভালো‌, ছাড়ুন কাপড় গোছাতে হবে।’
– ‘কেন?’
– ‘বাপের বাড়ি যাবো।’
– ‘কী! কেন?’
– ‘বিয়ের আগে আমি আর এইখানে থাকব না। একেবারে বিয়ের পর আসব কেমন।’
– ‘এই বউ না এইরকম করো না। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।’
– ‘কয়েকদিনের ব্যাপার তো।’
– ‘না প্লিজ।’
– ‘মায়ের থেকে পারমিশন নিয়ে নিয়েছি। আমি যাচ্ছি ফাইনাল, বাই।’

ইপ্সিতা হাসতে হাসতে চলে যায়। নিভ্র বিরক্ত হয়ে বলল,
– ‘এই বিয়ের চক্ররে বউ কাছ ছাড়া হয়ে গেল। দূর এর একটা বিচার করতে হবে মা ও মা….

#চলবে…

নিভ্র আর ইপ্সিতার বিয়ে লাগছে সকলের নেমন্তন্ন রইল। আপনাদের গল্পটা কেমন লাগছে জানাতে ভুলবেন না।

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here