#বেনেবউ
#পর্ব_১৭
#তানজিলা_খাতুন_তানু
বর্তমান টেকনোলজি উন্নত। তার উপরে যদি সোর্স ও টাকার গরম থাকে তাহলে তো ৫মিনিটের কাজ ২মিনিটেই হয়ে যাবে। তেমনি ইপ্সিতাকে খোঁজার জন্য জন্যই নিভ্রকে বেশি কষ্ট করতে হয়নি। কোম্পানির মালিকের সাহায্যে ইপ্সিতা ঠিক কোথায় আছে সেটা জানতে পেরে যায়। কিন্তু ইপ্সিতার কোনো প্রকার ক্ষ’তি হবার আগে কি ওকে উদ্ধার করে পারবে?
ইপ্সিতার জ্ঞান ফিরতে নিজেকে অন্য একটা জায়গায় অন্য একটা পরিবেশে আবিস্কার করে। চারদিক থেকে উ’দ্ভট একটা তীব্র গন্ধ নাকে আসছে, মাথা কিরকম একটা করে উঠছে। ইপ্সিতা নিজের মধ্যে কোনরকমের শক্তি পাচ্ছে না, কিরকম একটা মা’তাল মাতাল লাগছে। নিজে কোথায় আছে সেটাও বুঝতে পারছে না।
কয়েকজন লোক নিজেদের মধ্যে কথা বলছে, ইপ্সিতা কান খাড়া করে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করতে লাগল,
– ‘স্যার বলেছে ফোন আসলেই মেয়েটাকে ছেড়ে দিতে।’
– ‘কিন্তু বস মেয়েটা যা জোস্ আমার তো দেখেই খেতে ইচ্ছা করছে। উফ্ কি ফিগার।’
লোভে চোখ মুখ চকচক করছে। লোকটির কন্ঠে স্পষ্ট লা’লসা, ইপ্সিতা কেঁপে উঠল। অতীতের পুনরাবৃত্তি কি তবে আবারো ঘটতে চলেছে? ইপ্সিতা কি তাহলে আবারো ধ’র্ষি’তা হবে, কিছু বুঝতে পারল না কিছু না।
বস লোকটি ধমক দিয়ে বলল,
– ‘স্যার বলেই দিয়েছে মেয়েটার গায়ে না কোনো টার্চ হয়, বড়ো ঘা’পলা হয়ে যাবে।’
– ‘যদি বলি কিছু হবে না।’ (মহিলা কন্ঠস্বর)
ইপ্সিতা আবছা আলোয় মেয়েটিকে দেখতে পারছে না। চারিদিকের নানান শব্দেও কন্ঠটা ঠিক বুঝতে পারছে না। কানটাকে আরো একটা সজাগ করার চেষ্টা করল।
– ‘আরে রুহি ম্যাম আপনি আবার এসেছেন।’
রুহি! তারমানে এই সবকিছুর সাথে রুহি জড়িত? ইপ্সিতা কিছু ভাবতে পারল না, রুহি ওকে অপছন্দ করলেও এতটা নীচে নামতে পারবে সেটা কল্পনাও করেনি। হি*সা, রাগ, প্রতিশো’ধ, প্রতিহি*সা মানুষকে অ’ন্ধ করে দেয় ঠিক ভুল বিচারের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে যেটা রুহির ক্ষেত্রেও হচ্ছে।
– ‘হ্যাঁ এসেছি। মেয়েটাকে তোমাদের ইচ্ছা করবে তাই করো।’
– ‘কিন্তু স্যার?’
– ‘আমি স্যারকে সামলে নেব। মেয়েটার এমন অবস্থা করবে যাতে উঠে দাঁড়াতে না পারে, সু’ই’সা’ইড করতে বাধ্য হয়।’ (কন্ঠে স্পষ্ট হি*স্রতা)
ইপ্সিতার মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কি করবে, কিভাবেই বা ওদের সাথে লড়াই করবে বুঝতে পারছে না। বারবার অজানা ভয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠছে। তখনি মনে পড়ল, ‘বি*পদের সময়ে যতটা সময় মাথা ঠান্ডা রাখা প্রয়োজন। ঠান্ডা মাথাতেই সমস্ত কিছুর সাথে মোকাবিলা করা যায়।’
রুহি আরো কিছু কথা বলে চলে গেল। মোট তিনজন লোক ছিল, তারা নেশায় টলতে টলতে ইপ্সিতাকে রাখা ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। ইপ্সিতা হাঁটু মুড়ে বসে আছে, একজন লোক বলল,
– ‘দেখি মামনি উঠে পড়েছে, আমাদের আর কষ্ট করতে হলো না।’
ইপ্সিতা মাথা তুলছে না। অপর লোকটি বলল,
– ‘মামনি মনে হয় লজ্জা পাচ্ছে। আমিই লজ্জাটা আগে ভাঙি।’
– ‘এই দাঁড়া আমি দলের বস আমি আগে যাবো।’
বস লোকটি টলতে টলতে এগিয়ে গিয়ে ইপ্সিতার সামনে হাটুগেড়ে বসে স্পর্শ করতে যাবে তখনি ইপ্সিতা চোখ তুলে তাকায়। চোখটা ভয়*ঙ্ক’র লাল হয়ে আছে, লোকটি কি বলা বা করার আগে লোকটির নাকে একটা পাঞ্চ মেরে দেয়, লোকটি আহ্ করে চিৎকার করে উঠে। বাকি দুজন এগিয়ে আসতে গেলে ইপ্সিতা একই ভাবে তাদেরকে আটকায়। মাঝের কয়েকটি দিনে নিজেকে অনেক
শক্ত করে তৈরি করেছিল আজকে সেইটা প্রমানের পালা।
ইপ্সিতা হাঁপাচ্ছে। তিনজন মেঝেতে শুয়ে কাতরে চলেছে, হয়তো ওরা নিজেদের সেন্সে ছিল না বলে এতটা সহজে হার মানাতে পেরেছে। ইপ্সিতার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠেছে, তখনি অনেকগুলো পায়ের শব্দ শোনা গেল।
ইপ্সিতা এলোমেলো পায়ে এগিয়ে আসলো। ওদেরকে আঘাত করতে গিয়ে নিজেও আঘাত পেয়েছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে ইপ্সিতা সমস্ত শক্তি ফিরে পেল, দৌড়ে গিয়ে আঁকড়ে ধরল নিভ্রকে। ইপ্সিতা হু হু করে কেঁদে উঠল, নিভ্র আগলে নেই তার প্রিয়তমাকে।
– ‘ কেঁদো না, আমি চলে এসেছি তো।’
ইপ্সিতার কান্নার বেগ বেড়ে গেল, অতিরিক্ত প্রেশার নিতে না পেরে ইপ্সিতা অজ্ঞান হয়ে যায়। নিভ্র ইপ্সিতাকে নিয়ে হসপিটালে যায়। হঠাৎ সেন্সলেস হয়ে যাওয়াটা নিভ্রের টেনশান বাড়িয়ে দিচ্ছে।
– ‘ডক্টর ইপ্সিতার কি হয়েছে।’
– ‘মাথাতে অতিরিক্ত চাপ পড়াতে সেন্সলেস হয়ে গেছে। আর উনি কোথায় ছিলেন, শরীরের বেশ কয়েক জায়গায় চো’ট দেখতে পেয়েছি।’
– ‘আসলে….
নিভ্র কে ইতস্তত করতে দেখে ডাক্তার বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন। ইপ্সিতার জ্ঞান ফেরার পর নিভ্র ওকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
**
– ‘হ্যালো নিভ্র।’
– ‘হ্যাঁ স্যার বলুন।’
– ‘তোমার ওয়াইফ কেমন আছে।’
– ‘হ্যাঁ স্যার এখন ঠিক আছে।’
– ‘ভালো থাকলেই ভালো।
– ‘হ্যাঁ স্যার সবটা আপনার জন্যই হয়েছে। আপনি না থাকলে ইপ্সিতাকে আমি কিভাবে খুঁজে পেতাম কে জানে।’
– ‘এইসব বাদ দাও। তা তোমার ওয়াইফের তো বিশাল সাহস।’
– ‘মানে?’
– ‘মানে তোমার ওয়াইফ একাই তো তিনজনকে মে’রে কাত করে দিয়েছে। অফিসার বললেন, লোক তিনটের অবস্থা খুবই খারাপ। ডক্টর দেখাতে হয়েছে।’
– ‘কি!’
– ‘হুমম মানতেই হবে মেয়েটা খুব সাহসী। একদিন আমার সাথে দেখা করিয়ে দিও তো।’
– ‘আচ্ছা স্যার।’
– ‘কয়েকদিন নিজের স্ত্রীর দিকে খেয়াল রাখো, তোমাকে কয়েকদিন ছুটি দিলাম ’
– ‘থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।’
নিভ্রের রাইভাল কোম্পানি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারবে না। তাই সবকিছু ভাড়া করা লোকদের দিয়ে করিয়েছে, আসল দো’ষীকে সামনে আনার জন্য পুলিশ তদন্ত করে চলেছে। যেহেতু লোকগুলো সেন্সে নেই তাই তাদের থেকে কিছু তথ্য পাওয়া যায় নি।
**
ইপ্সিতা ঘুমের মধ্যে ছটফট করে চলেছে। একটা ভয়’ঙ্কর স্বপ্ন দেখে ভয়ে কেঁপে উঠছে, নিভ্র ইপ্সিতাকে তুলে জড়িয়ে ধরল। ইপ্সিতা পাগলের মতো বিলাপ করতে করতে আবারো ঘুমিয়ে পড়ে। ইপ্সিতা এখনো স্বাভাবিক হতে পারছে না।
ইপ্সিতা ঘুম থেকে জেগে উঠতেই সামনে দুটো পাখির খাঁচা দেখে চমকে উঠল। ধরফর করে উঠে বসল, নিভ্র মুখ টিপে হাসছে।
– ‘এই এইগুলো কি?’
– ‘একটা বেনেবউ পাখি আর একটা টিয়া পাখি।’
– ‘হ্যাঁ সেটা তো বুঝেছি কিন্তু এইগুলো কেন?’
– ‘এইগুলো আজ থেকে আমার বারান্দায় থাকবে।’
– ‘কেন?’
– ‘আমার ইচ্ছা।’
ইপ্সিতা ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলল। নিভ্রের পাগলামী গুলো দিনকে দিন বেড়েই চলেছে, ইপ্সিতার পক্ষেও নিজেকে সামলে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
ইপ্সিতা আর নিভ্র বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের মধ্যে নিরবতা চলছে।
– ‘কি ব্যাপার এত চুপচাপ কেন?’
– ‘একটা কথা বলবো।’
– ‘বলো।’
– ‘আচ্ছা আমি যদি আপনার কাছ একটা আবদার করি রাখবেন।’
– ‘কি আবদার?’
#চলবে…
কেমন হয়েছে সকলে বলবেন। ইপ্সিতার রূপটা কেমন লাগল আপনাদের?
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আসসালামু আলাইকুম।