#বেনেবউ
#পর্ব_৮
#তানজিলা_খাতুন_তানু
পরেরদিন দিনগুলো স্বাভাবিক গতিতে আগিয়ে যেতে লাগল, ইপ্সিতা আর নিভ্রের দেখা হয় মাঝেমধ্যে কথাও তবে সবটা সকলের চোখের আড়ালে।
– ‘ইপ্সিতা, একটু ছাদে আসবে?’ (নিভ্র)
– ‘কেন?’
– ‘একটা কথা বলার ছিল।’
– ‘কি?’
– ‘ছাদে আসো বলবো।’
ইপ্সিতা ছাদে এসে দেখল নিভ্র রেলিং এর ধারে দাঁড়িয়ে আছে।
– ‘কি হলো ডাকলেন যে?’
– ‘তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।’
– ‘কি বলুন।’
– ‘ভালোবাসি তোমাকে।’
নিভ্রের সহজ স্বীকারোক্তি শুনে ইপ্সিতা একটু চমকে উঠল।
– ‘এইসব কি বলছেন আপনি? আপনি কি জানেন না আমি কে?’
– ‘তুমি কে সেই সম্পর্কে আমার কিছুই জানার ইচ্ছা নেই, আমি তোমাকে ভালবাসি আর তোমাকে চাই।’
– ‘সেটা কখনোই সম্ভব নয়, ভুলে যান আমাকে।’
ইপ্সিতা চলে যায়, কিন্তু নিভ্র আটকায় না। ওহ জানে ওর ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তাহলে ইপ্সিতা ঠিকই ওর কাছে আসবে।
ইপ্সিতার মনে অনেক দ্বিধা দ্বন্দ রয়েছে, ওহ কখনোই নিজের অভিশ’প্ত জীবনের সাথে কাউকে জুড়তে চাই না। তাই কখনোই নিভ্রের প্রস্তাবে রাজি হবে না।
পরেরদিন,
ইপ্সিতা অহনা আহমেদের বাড়িতে কলিং বেল বাজাতেই এক মেড দরজা খুলে দিলো।
– ‘ম্যাম বাড়িতে নেই?’
– ‘না উনি একটু বের হয়েছেন তবে এখুনি চলে আসবে। আপনাকে বসতে বলেছেন।’
– ‘আচ্ছা।’
বেশকিছুক্ষন পরে,
আবারো কলিং বেলের শব্দ হলো। মেয়েটি আবারো দ্যজা খুলে দিলো। ইপ্সিতা ফোনে একটা কাজ করছিল তখনি পুরুষের কষ্ঠে নিজের নাম শুনে সামনে তাকিয়ে চমকে উঠল।
– ‘ইপ্সিতা!’
ইপ্সিতার গোটা শরীর রাগে কাঁপছে, নিজেকে কিভাবে শান্ত করবে বুঝে উঠতে পারছে না। এগিয়ে এসে ঠাস ঠাস করে ছেলেটার গালে থাপ্পর বসিয়ে দিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠল।
– ‘এই তুমি কাঁদছো কেন? কি হয়েছে বলো।’
অদ্ভুত ছেলে তাই না? একটা মেয়ে তাকে থাপ্পর মারছে অথছ সে সেইদিকে নজর না দিয়ে মেয়েটা কেন কাঁদছে সেইদিকে নজর দিচ্ছে?
অহনা আহমেদ এগিয়ে এসে ইপ্সিতাকে জিজ্ঞেস করলেন,
– ‘কি হলো মা তুমি কাঁদছো কেন?’
– ‘ম্যাম এই সে মেয়ে যে আমার…. (আর কিছু বলতে পারল না আবারো কান্নায় ভেংগে পড়ল।)
অহনা আহমেদ ও রিতেশ দুজনেই শক খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিতেশের সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
– ‘ইপ্সিতা তুমি এত কাঁদছো কেন? প্লিজ চুপ করো, তুমি জানো না, তোমার কান্না আমার সহ্য হয় না।’
অহনা আহমেদ একটার পর একটা শক খেয়ে চলেছেন। ইপ্সিতার দো’ষারোপ, রিতেশের কথা সবমিলিয়ে খিচুড়ি পাকিয়ে যাচ্ছে।
– ‘ইপ্সিতা মা তুমি শান্ত হও। তারপরে আমরা বাকি কথা বলছি। আর রিতেশ তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।’
ওনারা ফ্রেশ হয়ে আসার পর দেখলেন ইপ্সিতা মুখ হাত ঢেকে বসে আছে।
– ‘ইপ্সিতা মা।’
ইপ্সিতা মুখ তুলে তাকালো, চোখদুটো ও ফর্সা মুখশ্রীটা র’ক্তবর্ণ হয়ে উঠেছে।
– ‘বলো আমাকে সবটা।’
– ‘ম্যাম এই সেই রিতেশ যার কথা আমি আপনাকে বলেছিলাম।’
– ‘এইসব তুমি কি বলছো?’
– ‘বিশ্বাস করুন এই সেই ছেলে।’ (নিজের কান্না আটকে রেখে)
– ‘রিতেশ রিতেশ।’
অহনা আহমেদের ডাক শুনে রিতেশ বসার ঘরে আসলো।
– ‘কি হয়েছে মা ডাকছো কেন?’
ইপ্সিতা আরেকদফা চমকে উঠল, রিতেশ অহনা আহমেদের ছেলে!
– ‘তুই কি ইপ্সিতাকে চিনিস।’
– ‘হ্যাঁ মা। অনেকদিন থেকে চিনি, আর আমি ওকে ভালোবাসি।’
ইপ্সিতা রিতেশের মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনে নিজেকে সামলাতে পারল না, উঠে গিয়ে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিয়ে বলল
– ‘এতই যখন ভালোবাসেন তাহলে কিভাবে ভালোবাসার মানুষটির এতবড়ো ক্ষ’তি করলেন?’
রিতেশ কিছূই বুঝল না, অবাক হয়ে বলল,
– ‘কি বলছো তুমি, আমি তোমার কি ক্ষ’তি করলাম?’
– ‘বাহ এর মাঝেই ভূলে গেলেন, ওইদিন আপনি আমাকে তুলে নিয়ে গেলে রেপ করেননি?’
– ‘ইপ্সিতা এইসব তুমি কি বলছো? আমি তোমাকে ভালবাসি, আমি কখনোই তোমার সাথে এইটা করতূ পারিনা।’
– ‘খবরদার আপনার এই নোংরা মুখে আমাকে ভালোবাসার কথা বলবেন না। আপনাকে আমি ঘৃ’না করি, আই হে’ট ইউ।’
ইপ্সিতা কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে যায়। রিতেশ শক খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
– ‘মা ইপ্সিতা কি বলে গেলো?’
– ‘তোর কি সত্যি কিছু মনে নেই?’
– ‘মা কিসের কথা বলছো।’
অহনা আহমেদ রিতেশকে ইপ্সিতার কথাগুলো খুলে বলল, সব শুনে রিতেশের মাথাতে আকাশ ভেঙে পড়ার জোগাড়। মায়ের সাথে একটা কথাও না বলে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
ইপ্সিতা কাঁদছে খুব করে কাঁদছে। একটা ফাঁকা জায়গায় বসে কেঁদে চলেছে, এতদিন নিজেকে সামলে রাখলেও রিতেশকে সামনে থেকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারছে না। সেই ভ’য়ংকর রাতের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে বারবার।
ইপ্সিতা এলোমেলো হয়ে বাড়ি ফিরল। চুল জামাকাপড় সব এলোমেলো হয়ে আছে, চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে। মেয়েকে এই অবস্থায় দেখে ইপ্সিতার মায়ের বুক কেঁপে উঠল, মেয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– ‘ইপ্সিতা কি হয়েছে মা, তোকে এইরকম লাগছে কেন?’
ইপ্সিতা কোনো কিছু না বলে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। ইপ্সিতার মা মেয়ের কান্না দেখে হকচকিয়ে যায়, কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।
– ‘কি হয়েছে বল আমাকে।’
– ‘মা রিতেশ…
– ‘কি হয়েছে বল।’
– ‘মা আজকে রিতেশের সঙ্গে দেখা হয়েছিল এই অমানুষটা নাকি আমাকে ভালোবাসে।’
ইপ্সিতা আবারো কান্নাতে ভেঙে পড়ল। ইপ্সিতার মা অনেক কষ্টে মেয়েকে সামলে রাখেন।
অন্যদিকে,
রিতেশের পাগলের মতো অবস্থা, অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই সেই রাতের কথা মনে করতে পারছে না। কিছুতেই পারছে না।
ইপ্সিতাকে পাগলের মতো ভালোবাসে আর এখনো বেসে চলেছে। রিহ্যা’বে থাকাকালীন সময়েও প্রতিটা ক্ষন ইপ্সিতাকে দেখার জন্য আকুল হয়ে ছিল, আশায় দিন গুনছিল কবে ইপ্সিতাকে দেখতে পাবে। প্রথমদিনেই ইপ্সিতার দেখা পেল, কিন্তু এইটা কি শুনলো?
– ‘না এইটা কখনোই হতে পারে না, আমি কখনোই ইপ্সিতার এইরকম ক্ষ’তি করতে পারি না। কিন্তু ইপ্সিতা তো মিথ্যা কথা বলবে না! কি হয়েছিল সেইরাতে কি?’
রিতেশ ঠান্ডা মাথায় নিজের অতীতের দিনগুলোকে ভাবতে লাগল।
একদিন ইপ্সিতার দিকে চোখ পড়ে রিতেশের। প্রথম দিনেই মেয়েটাকে ওর বড্ড ভালো লেগে যায়, যাকে বলা চলে লাভ এট ফার্স্ট সাইট। ইপ্সিতাকে একপলক দেখার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকত, নিজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অপেক্ষা করত। একদিন অনিইচ্ছাকৃত ভাবেই ইপ্সিতার সাথে রিতেশের ধাক্কা লাগে। ইপ্সিতা সরি বলে চলে যায়, কিন্তু রিতেশের মনে ঝড় উঠে যায় আবারো ইপ্সিতার প্রেমে পড়ে।
এক ফ্রেন্ডের হাত দিয়ে ইপ্সিতাকে লাভ লেটার পাঠায়। নিজের মনের কথাগুলো জানায়, কিন্তু সেইদিন ইপ্সিতা সরাসরি না বলে দেই। এর পর থেকে রিতেশের পাগলামী বাড়তে থাকে, ইপ্সিতাকে সরাসরি ভালোবাসি কথাটা জানায় তখনও ওহ না বলে দেয়।
কথাতেই আছে না, সৎ সঙ্গে স্ব’র্গ বাস আর অ’সৎ সঙ্গে ন’রক বাস। রিতেশের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে, ইপ্সিতার কাছ থেকে বারবার রিজেক্ট হবার পর বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে নেশা করতে শুরু করে। প্রথমে সিগারেট তারপর ম’দ এবং শেষপর্যন্ত ড্রা’গসও নিতে থাকে। দিনে দিনে রিতেশ পাগলের মতো হয়ে যায়, ড্রা’গসের নে’শাতে কি করতো নিজেই জানে না। তাহলে কি নে’শায় ব’র্শবতী হয়ে এই ভুলটা করে ফেলেছে?
– ‘আমাকে যে করেই হোক, দুইবছর আগের সমস্ত ঘটনা জানতেই হবে।’ (রিতেশ)
#চলবে…
আপনারা কাকে ইপ্সিতার পার্টনার হিসাবে চান, রিতেশ না নিভ্র?
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আসসালামু আলাইকুম।