আমার_ফুলবাবু❀ #পর্ব_০৯ & ১০

0
438

#আমার_ফুলবাবু❀
#পর্ব_০৯ & ১০
#ফিহা_আহমেদ(লেখনীতে)

(❌কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ❌)

#৯.
রফিক চেয়ারম্যানের আদেশে রশীদ তার ছেলেরে গ্রামের বাহিরে পাঠিয়ে দিল।ইভান বাবার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো ,,,,,

— আব্বা আমি ঝুমারে বিয়া করবার চাই।

ছেলের কথায় চমকালেন রফিক।সাথে লতা বানু আর ঝুমা ও চমকে উঠলো ইভানের কথায়।রফিক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো ,,,,,

— আর কোনো সমস্যা নাই আব্বাজান। তুই লতারে কইয়া দেখ লতা রাজি অইবো কিনা।

ইভান এবার লতা বানুর সামনে আসলো।

— কাকি আম্মা ঝুমারে আমার হাতে তুইলা দেন।খায়েররে বিশ্বাস নাই। আবার কোনদিক দিয়া ঝুমার ক্ষতি কইরা বসে ঠিক নাই। তাই আমি ভাবতাছি ঝুমারে বিয়া কইরা আমার সাথে কইরা শহরে নিয়া যামু।

ইভানের কথায় লতা বানু মুখে কাপড়ের আঁচল চেপে কান্না করা শুরু করলো।

— কাকি আম্মা আন্নে আমার কথায় কষ্ট পাইলেন।

— না রে বাপ কষ্ট পাই নাই। আই তো সুখে কানতাম আছি।তুই আমাগোরে তোর ঘরে থাকতে দিলি।এহন তুই আর মাইডারে খায়েরের থাইকা বাঁচাইবার লাই বিয়া করবাব চাস।আর কোনো সমস্যা নাই বাপ তোর হাতে আর ঝুমা মারে তুইলা দিতে।

— ঝুমা আমারে বিয়া করব কিনা বইলা দেহেন কাকি আম্মা।

ইভানের কথায় লতা বানু ঝুমার কাছে এসে ইভানকে বিয়ে করার কথা জিজ্ঞেস করলে ঝুমা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।লতা বানু বুঝলেন তার মেয়ে বিয়েতে রাজি।লতা বানু ইভানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললো ,,,,,,

— আর মাইয়া মনে অয় তোরে বিয়া করবার চায়।

— তইলে আর কি খায়ের যে কাজি লইয়া আইছে তারে দিয়া ই বিয়া পড়াই।

সবার সম্মতি নিয়ে ইভান ঝুমারে বিয়ে করলো।

বিয়ে শেষে চেয়ারম্যান সাব পল্টু আর মিন্টুরে সাথে নিয়ে নিল।
_______
— কাকি আম্মা ঝুমারে তাড়াতাড়ি কন তৈরি হই নিতে।আগামীকাইল আমার পরীক্ষা।

— ঝুমা আইতাছে বাপ। তুই একটু বস।

ঝুমা শহরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়ে আসলো ইভানের কাছে।

— তই অইছে তোর।

ঝুমা লাজুক হেসে মাথা নাড়ালো।যাওয়ার আগে লতা বানু ঝুমারে ধরে অনেক কান্নাকাটি করলো।
সবাইকে বিদায় দিয়ে দু’জন চলে গেল।
______
— পল্টু – মিন্টু এদিকে আয়।(চেয়ারম্যান সাব)

রফিকের ডাকে দু’জন আসলো।

— এহন থাইকা আর গরু তোরা দুইজনে সামলাবি।আর দুইজন গরু ঘরেই থাকবি।বুঝলি।

দুই জন অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো রফিকের দিকে।দুইজন রফিকের পায়ে ধরে বললো ,,,,,

— সাব আমাগোরে মাপ কইরা দেন।আর বাজে কাম করমু না কহন ও।

— পা ছাড় কইতাছি। না অয় আরো বড় শাস্তি দিমু তোগরে।পা ছাড়।

তারা দুইজন ভয়ে রফিকের পা ছেড়ে দিল।

— হুন।যা গিয়া গরু ঘরখানা ছাপ কইরা আয়।আই যাই যেন সব ঠিক দেহি।

বলে রফিক চলে গেল নিজের ঘরে।

এইদিকে লতা বানু এইসব কান্ড দেখে নিরবে হাসলেন। লতা বানু তাদের দুইজনের সামনে এসে দাঁড়ালেন।

— তোরা এহন ও বইসা রইলি যে। তোগোরে না কইলো গরুঘর ছাপ কইত্তো।

দুইজন বসা থেকে হুড়মুড় করে ওঠে গরুঘরের দিক দিল দৌঁড়।
______
— ফুলবাবু এত মোটা মোটা বই কেমনে পড়মু আমি।আমার ডর লাগতাছে।

— আমি পড়াব তোমায় ভয় চলে যাবে।

— আন্নে পড়াইলে তো আমার মোটেই পড়া অইব না।

জুঁইয়ের কথায় ধ্রুব ব্রু কুঁচকে জুঁইয়ের দিকে তাকালো।জুঁই ধ্রুবকে এভাবে তাকাতে দেখে মুখে দু’হাত ডেকে লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বললো ,,,,,

— এমনে তাকাইয়েন না আমার দিকে।আমার শরম করতাছে।

জুঁই কথায় ধ্রুব বোকা বনে গেল।

— এই মেয়ে পাগল হয়ে গেছ তুমি। এইসব কি বলছ তুমি। সব ফাঁকিবাজি। এসব করে পড়া ফাঁকি দেওয়ার ধান্দা। আমি বুঝিনা এসব।চুপচাপ বই নেও পড়াব।আর একটা উল্টাপাল্টা কথা বললে জানালা দিয়ে ফেলে দিব তুমি।

ধ্রুবর কথায় জুঁই শুকনো ঢোক গিলে বই নিয়ে পড়তে বসে গেল।জুঁইকে ভয় পেতে দেখে ধ্রুব মুচকি হাসলো।

— শুনো মেয়ে ক্লাসে বেশি কথা বলবে না।আর কেউ কিছু বললে আমায় এসে বলবে। ভুলে ও ঝগড়া করবে না।বুঝেছ?

জুঁই ধ্রুবর তাকিয়ে মিষ্টি হেসে মাথা নাড়ালো।

— গুড। এবার পড়ায় মনোযোগ দেও।
______
অনেক পথ জার্নি করে অবশেষে দু’জন ঢাকায় আসলো।ইভান একরুম ভাড়া নিয়ে থাকত।সাথে কিচেনরুম ও আছে।পড়াশোনার পাশাপাশি ইভান একটা রেস্টুরেন্টে পার্ট টাইম জব করে।পড়াশোনা আর থাকা-খাওয়ার খরচ কোনোরকমে চলে ইভানের।শহরে পড়াশোনা করতে আসার পর থেকে ইভান বাবার থেকে টাকা নেয় না।নিজের খরচ নিজে ই বহন করে।

— ভয় করছে তোর।

— নতুন জায়গা দেইখা একটু ডর লাগতাছে ইভান ভাই।

— আমি আছি না ভয় পাইস না।যা বাথরুমে গিয়া হাত-মুখ ধুইয়া আয়।আমি দোকান থাইকা খাবার নিয়া আইতাছি তোর জন্য।

ঝুমা মাথা নাড়িয়ে বাথরুমে চলে গেল।ইভান দরজায় তালা মেরে দোকানে গেল হালকা কিছু খাবার কিনতে।
______
— ধ্রুব-জুঁই, ফিহা নিচে আয়। (তাহিরা)

মায়ের ডাকে তিনজন নিচে আসলো।

— মা কিছু হয়েছে এভাবে ডাকলে যে।(ধ্রুব)

ইভান-ঝুমার বিয়ের কথা বললো তাহিরা তাদের।জুঁইয়ের মন খারাপ হয়ে গেল এই কথা শুনে।

— আমাগোরে না জানাই বিয়া কইরা ফেললো তারা।(জুঁই মন খারাপ করে বললো)

— আরে পাগলী মেয়ে সবটা শুন আগে।(তাহিরা জুঁইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো)

লতা বানু ফোন করে তাহিরাকে সব বললো।তাহিরা তাদের বিয়ের সব ঘটনা খুলে বললো।কিভাবে তাদের বিয়ে হলো।সবটা শুনে জুঁই এবার বুঝলো।

— একদম ভালা অইছে।এই খায়েরের জ্বালায় আমরা শান্তিতে গ্রামে থাকতে পারতাম না।বড় একখান ভালা কাম করছে চেয়ারম্যান সাব।ঝুমা কি তইলে ঢাকায় আছে এহন?

— হ্যাঁ।লতা তো বললো ইভান ঝুমারে নিয়ে ঢাকায় চলে আসছে।(তাহিরা)

— তইলে আমরা সবাই গিয়া দেইখা আসি ঝুমারে।

— না এখন না জুঁই মা। তারা এখন নতুন বিয়ে করেছে।সবকিছু গুছিয়ে নিক তারপর আমরা গিয়ে একদিন দেখে আসব কেমন।(তাহিরা)

— কিন্তু আমার বোনরে দেখতে মন চাইতাছে। (জুঁই মন খারাপ করে বললো)

— মন খারাপ করো না জুঁই মা।ঠিক আছে ধ্রুব তোমায় দেখা করিয়ে আনবে।এবার খুশি তো।

জুঁই তাহিরাকে জড়িয়ে ধরে বললো ,,,,,

— অনননননেক খুশি আম্মাজান।
_______
— আরে ইভান যে কখন এলে?

— কিছুক্ষণ হলো এলাম।মামা চারটে পরোটা আর সাথে ভাজি দেন তাড়াতাড়ি। (ইভান)

— একি ইভান তুমি তো আগে দু’টো নিতে।এখন চারটে হয়ে গেল কেন।বিয়া সাদি করলা নাকি?

দোকানদারের কথায় ইভান লজ্জা পেল।

— ওই আর কি।(ইভান মাথা চুলকিয়ে কথাটি বললো)

দোকানদার হেসে দিল ইভানের কথায়।দোকানদার ইভানের হাতে খাবারের প্যাকেট দিয়ে দিল।ইভান প্যাকেট নিয়ে চলে গেল দোকান থেকে।
______
ইভান খাবার নিয়ে এসে ঝুমাকে খেতে বলে পড়তে বসে গেল।আগামীকাল ইভানের পরীক্ষা।ইভান পড়া শুরু করলো। পাশে কিছু রাখার শব্দে সেদিকে তাকালো ইভান।

— কিরে ঝুমা তুই খাবি না।বইসা রইলি যে।

— আন্নে ও তো কিছু খান নাই ইভান ভাই। আন্নে খাইলে আই খামু।

ঝুমা ইভানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে পরোটার ছিঁড়ে সাথে ভাজি নিয়ে ইভানের মুখের সামনে ধরলো।ইভান মুচকি হেসে খাবার মুখে নিল।ইভানকে হাসতে দেখে ঝুমা লজ্জা পেল।ইভান ঝুমার হাত ধরে তার পাশে বসিয়ে দিল।ইভান ও ঝুমার মুখের সামনে খাবার ধরলো।

— এমন কইরা কি দেহছ।হা কর আমি তোরে খাওয়াই দেই।

ঝুমা হা করতেই ইভান ঝুমার মুখে খাবার দিয়ে দিল।
®ফিহা আহমেদ
_____

#১০.

‘ঝুমা তোর হইছে?'(ইভান)

— হই গেছে। চলেন এহন।(ঝুমা)

ইভান ঝুমাকে ভর্তি করাতে নিয়ে যাচ্ছে।
______
— চুপচাপ থাকবে।বেশি কথা বলবে না ঠিক আছে জুঁই।(ধ্রুব)

— পাক্কা ঠিক আছে ফুলবাবু।(জুঁই)

— পাগলী মেয়ে একটা। চল এবার।(ধ্রুব একগাল হেসে বললো)
______
ধ্রুব যেই কলেজের শিক্ষক। সেখানে স্কুল ও আছে। কলেজ-স্কুল একসাথে।কলেজের গেটে নামার সময় সিএনজি আর অটো ধাক্কা খেল। আর একটুর জন্য এক্সিডেন্ট থেকে বেঁচে গেল ধ্রুব-জুঁই।ধ্রুব ভয় পেয়ে গেল। জুঁইকে একহাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

— জুঁই তুমি ঠিক আছো?(ধ্রুব বিচলিত হয়ে বললো)

— আমি পাক্কা ঠিক আছি ফুলবাবু আন্নে ভয় পাইয়েন না।(জুঁই)

ধ্রুব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

ধ্রুব দ্রুত সিএনজি থেকে নেমে অটোওয়ালার সামনে এসে দাঁড়ালো।

— দেখে শুনে অটো সাইড করতে পারতেন আর একটু হলে বড়সড় একটা এক্সিডেন্ট হতে পারতো।(ধ্রুব ধমক দিয়ে বললো)

— আসলে স্যার আমি বুঝতে পারিনি।আমায় মাপ করে দেন। এরপর থেকে দেখেশুনে গাড়ি চালাব।(অটোওয়ালা)

দু’জনের কথার মাঝে ধ্রুবর সামনে চোখ যেতেই ধ্রুব চমকালো।

— আরে ধ্রুব ভাই তুমি।

— ইভান তুই এখানে।

— আসলে ,,,,,

— লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আমরা সব জানি।তা শালিকাসাহেবা কোথায়?

— ওকে নিয়ে ই এসেছি ধ্রুব ভাই।ওকে ভর্তি করিয়ে পরীক্ষা দিতে যাব।

— তা এখানে ভর্তি করাবা ভালো।আজ তো অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা শুরু।

বলে ধ্রুব হাত ঘড়ির দিকে তাকালো।

— পরীক্ষার তো আর এক ঘন্টা বাকি আছে।

— দেরি হয়ে গেছে এখন কি করার?

ঝুমা অটো থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়ে ধ্রুবকে সালাম দিল।ধ্রুব ও মিষ্টি হেসে সালামের উত্তর দিল।

— জুঁই সিএনজি তে বসে থাকবে নাকি আজকে।বাহিরে বের হয়ে দেখ কে এসেছে?

ধ্রুবর কথায় জুঁই তড়িঘড়ি সিএনজি থেকে নামলো।

— আরে ধীরে ধীরে নাম।এতো তাড়াহুড়োর কি আছে।

জুঁই সামনে তাকাতেই আশ্চর্য হয়ে গেল।জুঁই দৌঁড়ে এসে ঝুমাকে জড়িয়ে ধরলো।

— আপা।

— তুই ভালা আছচ ঝুমা?

জুঁই কান্না করে দিল ঝুমাকে জড়িয়ে ধরে। অনেকদিন পর বোনের সাথে দেখা তাই নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলো না জুঁই।বোনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।

— আপা তুই কান্দিস না। আই ভালা আছি আর মা ও ভালা আছে।জানছ আপা চেয়ারম্যান সাব মানে আর শশুর আব্বা ওই খাটাশইয়া খায়েররে গ্রাম থাইকা বার কইরা দিছে।

জুঁই বোনের দিকে টলমল চোখ তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।

— আমার দেরি হচ্ছে ধ্রুব ভাই। ভর্তির কাজটা সেরে ফেলতে হবে।(ইভান)

— তুই নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিতে যা আমি ভর্তি করিয়ে দিচ্ছি।

— তোমাকে ঝামেলায় ফেললাম।

— ঝামেলার কিছু ই হয়নি।তুই যা তোর পরীক্ষার আর বেশি সময় নেই।

ইভান ঝুমার দিকে একপলক তাকিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো ,,,,

— পরীক্ষা দিয়া আইসা তোরে নিয়া যামু। ভয় পাইছ না।

— ঠিক আছে ইভান ভাই।

ইভান পুনরায় ধ্রুবকে সালাম দিয়ে চলে গেল।

(ধ্রুবর নানার বাড়ি ফুলকড়ি গ্রামে।মূলত এই কারনেই ধ্রুব-ইভান দু’জন দু’জনকে চিনে।)

ধ্রুব ঝুমাকে ভর্তি করিয়ে দিয়ে ঝুমাকে ক্লাসে দিয়ে এসে জুঁইয়ের হাত ধরে জুঁইয়ের ক্লাসের দিকে চললো।জুঁই ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে হাঁটছে।জুঁইকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ধ্রুব বলে উঠলো ,,,,

— এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?

— আন্নে এতো সুন্দর কেন ফুলবাবু?

জুঁইয়ের কথায় ধ্রুবর কাশি ওঠে গেল। জুঁই দ্রুত ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে ধ্রুবর সামনে ধরলো।

— এই নেন পানি খান।

— তোমার পানি তুমি খাও। বদমাশ মেয়ে একটা।ক্লাসে ভদ্র মেয়ের মতো থাকবে। একদম পাকনামি করবে না।

বলে ধ্রুব জুঁইকে ক্লাসে রেখে নিজের কেবিনের দিকে যেতে লাগলো।

— আরে ধ্রুব স্যার যে, কেমন আছেন?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো । আপনি কেমন আছেন মিতা মেম?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তা ওই মেয়ে দু’টো কে ছিল?

— একজন আমার বউ আরেকজন আমার শালিকা ছিল।

ধ্রুব সোজাসাপটা উত্তর দিল।

— আমাদের জানালেন ও না দাওয়াত ও দিলেন না স্যার। আমাদের খাওয়ানোর ভয়ে লুকিয়ে-চুকিয়ে বিয়ে করে ফেললেন।

মিতার কথায় ধ্রুব হালকা লজ্জা পেল।

— আসলে মেম হঠাৎ করে বিয়েটা হয়েছে। তাই কাউকে বলতে পারিনি।

— ইট’স ওকে স্যার বিচলিত হওয়ার কিছু নেই আমি তো মজা করে বললাম।

— একটু পর ক্লাস শুরু হবে তাহলে এখন আসি মেম।

— হুম অবশ্যই।

ধ্রুব যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।ধ্রুব কেবিনে এসে বসলো।

— আরো কিছুক্ষণ থাকলে না জানি কত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো আমায়।(ধ্রুব জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বললো)
______
ঝুমা ক্লাসের শেষ বেঞ্চের এক কোনায় বসে আছে।এখানে তার সবকিছু অপরিচিত।তাই ঝুমা কিছুটা ভয় পেয়ে আছে।ঝুমাকে একা বসতে দেখে একটা মেয়ে এসে ঝুমার পাশে বসলো।

মেয়েটা নিজে থেকেই ঝুমাকে বলে উঠলো ,,,,

— আমি মিরা। তোমার নামটা কি জানতে পারি?

ঝুমা ভয়ে ভয়ে বললো ,,,,,

— আ ,,,, আই ঝুমা।

ঝুমার কথায় মিরা চমকে উঠলো। মিরা শিউর হওয়ার জন্য আবার জিজ্ঞেস করলো ,,,,,

— তুমি কি আজ ভর্তি হয়েছ।আগে তো তোমায় দেখিনি তাই জিজ্ঞেস করলাম।

ঝুমা এবার মুখ দিয়ে কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।হঠাৎ মেয়েটি ঝুমার হাত ধরে বললো ,,,,

— ক্লাসের তো আরো পনেরো মিনিট বাকি। চল আমরা দু’জন বাহির থেকে একটু ঘুরাঘুরি করে আসি।

ঝুমা মিরার থেকে হাত সরিয়ে ফেলে বললো ,,,,

— আই যাইতাম না।

মিরা এবার বুঝলো ব্যাপারটা।

— মেয়েটার মুখের ভাষা’ই বলে দিচ্ছে মেয়েটি গ্রাম থেকে এসেছে।এখানে সবাই একরকম আর মেয়েটি সবার থেকে আলাদা। মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক সরলা সোজা।তাহলে বন্ধুত্ব করাই যায়।(মিরা মনে মনে বললো)

— ভয় পেয়ো না। আমায় তোমার বন্ধু ভাবতে পারো।চল ঘুরে আসি বাহির থেকে। (মিরা)

ঝুমা কিছুক্ষণ ধরে মিরাকে পর্যবেক্ষণ করে বুঝলো মেয়েটি ভালো। ঝুমা বলে উঠলো ,,,,,

— আইচ্ছা চলেন।

— তুই করে বলতে পারো।বন্ধুত্বের মাঝে কোনো আপনি নয়।

ঝুমা মিরার কথায় মিষ্টি হেসে বললো ,,,,,

— আইচ্ছা।

মিরা ঝুমার গাল দু’টো টেনে দিয়ে বললো ,,,,,

— কি সুন্দর করে হাসো তুমি!এককথায় অসাধারণ লাগলো তোমার মুখের মিষ্টি হাসিখানা।

মিরা ঝুমাকে নিয়ে ক্লাসের দরজার সামনে আসতেই তাদের সামনে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে তাদের পথ আটকালো।

— কিরে মিরা এ কে?

— আমার নতুন বান্ধবী ঝুমা।এখন সামনে থেকে সর তো।

— আহা রেগে যাচ্ছিস কেন রাক্ষসী। ভালো করে কথা বলতে কি তোর টাকা-পয়সা বেশি খরচ হয়ে যাবে।

— সামনে থেকে সরবি মিরাজ নাকি তোরে পিঠে তাল ফেলবো।

মিরার কথায় মিরাজ খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।

— সিরিয়াসলি। তুই আমার পিঠে তাল ফেলবি।ওয়েট ,,,,,

বলে মিরাজ মিরার পিঠে জোরে একটা চড় মেরে দিল দৌঁড়।মিরা ব্যথা পেয়ে পিঠ বাঁকিয়ে ফেললো।

— আমার পিঠটা গেল রে।তবে রে মিরাইজ্জা আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।

বলে মিরা রেগে মিরাজের পিছনে দৌঁড়ানো শুরু করলো। ঝুমা ও তাদের দু’জনের পিছনে পিছনে গেল।মিরা মিরাজকে ধরে মিরাজের পিঠে আচ্ছা মতো চড় দেওয়া শুরু করলো।দু’জনের খুনসুটি দেখে ঝুমা জোরে হেসে দিল।ঝুমাকে হাসতে দেখে দু’জন মারামারি থামিয়ে ঝুমার দিকে তাকালো।মিরাজ হা করে ঝুমার হাসির দিকে তাকিয়ে আছে। মিরাজের মুখ থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে আসলো ,,,,,

— মা-শা-আল্লাহ!

মিরা মিরাজের পিঠে জোরেসোরে এক কিল বসিয়ে দিয়ে ঝুমার হাত ধরে ক্লাসের দিকে দৌঁড় দিল।দু’জন ক্লাসে এসে বসলো।স্যার এসেই ক্লাস করানো শুরু করলো।
_______
ক্লাস শেষে মিরাজ দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে।পিছন থেকে মিরা এসে পিঠে চড় দিয়ে বললো ,,,,,

— কিরে কার জন্য দাঁড়িয়ে আছিস বাড়ি যাবি না?

— না মানে ,,,,,

— সোজাসাপটা বল কি বলবি?

— আসলে তোর সাথের ওই মেয়েটাকে খুঁজছি।

মিরা অবাক হয়ে বললো ,,,,,

— কেন?

— আসলে মেয়েটাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।মেয়েটার নামটা যেন কি ভুলে গেছি?

— ঝুমা। কেন রে?

— এতো কিছু জেনে তুই কি করবি।মেয়েটা কোথায় সেটা বল?

— অনেকক্ষণ আগে দেখলাম একটা ছেলে এসে মেয়েটাকে নিয়ে গেল।মনে হয় মেয়েটার ভাই হবে।আমি শিউর নই।আচ্ছা আমি গেলাম তুই ও বাড়ি চলে যা।আল্লাহ হাফেজ।

মিরা চলে গেল।মিরাজ মন খারাপ করে মিরার পিছন পিছন হাঁটা শুরু করলো।
______
— ঠিকমতো ক্লাস করলি?

— হ করছি ইভান ভাই।

ইভান বিরক্ত হয়ে ঝুমার দিকে তাকালো।

— আমি তোর ভাই লাগি?

— হ ভাই ই তো লাগেন।

— সামনে থেকে সর যা।

— আই কি করছি ইভান ভাই। রাগেন ক্যা?

ইভান স্থির দৃষ্টিতে তাকালো ঝুমার দিকে।

— কিছু না।খাই ঘুমাই পড় যা।

ঝুমা বুঝলো না ইভান কেন রাগ করলো।ঝুমা ভালো মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে চলে গেল।ঝুমা চলে যেতেই ইভানের মোবাইল বেজে উঠলো।

ফোন রিসিভ করতেই ওইপাশ থেকে বলে উঠলো ,,,,,

— ইভান তোর সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে দ্রুত রেস্টুরেন্টে চলে আয়।

ইভান প্রচন্ড বিরক্ত হলো মেয়েটির কথায়।

— আমি এখন আসতে পারব না কারন ,,,,,

ইভান আর কিছু বলার আগেই মেয়েটা বলে উঠলো ,,,,,

— কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাই না আমি। এক্ষুনি তুই রেস্টুরেন্টে আসবি।

বলে মেয়েটি ফোন কেটে দিল।ইভানের রাগ উঠে গেল।

— ইডিয়ট মেয়ে একটা।নিজের বাপের রেস্টুরেন্টে চাকরি করে বলে যা ইচ্ছে তাই করবে।মোটামুটি ভালো বেতন দেখে ছাড়তে ও পারছি না।এখন ঝুমা ও যোগ হয়েছে।খরচ অনেকটাই বেড়ে গেছে।যতদিন না একটা ভালো চাকরি না পাচ্ছি ততদিন পর্যন্ত ধৈর্য ধরে মেয়েটাকে সহ্য করতে হবে।ন্যাকা মেয়ে একটা।অসহ্য।

#চলবে…..
#ফিহা_আহমেদ(লেখনীতে)

(বানানে ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
[❌কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ❌]/[গল্পের কোনো অংশ ই কপি করা যাবে না]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here