আমার_ফুলবাবু❀ #পর্ব_১৩

0
439

#আমার_ফুলবাবু❀
#পর্ব_১৩
#ফিহা_আহমেদ(লেখনীতে)

(❌কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ❌)

#১৩.
‘মামা গোলাপ ফুলের দাম কত?’

— পঁচিশ টেহা।

মিরাজ ফুলের ঝুড়ি থেকে একটা গোলাপ ফুল হাতে নিল।ফুলওয়ালাকে ফুলের দাম দিয়ে স্কুলে চলে আসলো।আজ মিরাজের ভিতরে বড্ড বেশি অস্থিরতা কাজ করছে।মাঠের এক কোনে পায়চারি করে যাচ্ছে মিরাজ।পায়চারি করছে আর বারবার স্কুলের গেটের দিকে তাকাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর কাঙ্খিত ব্যক্তিটিকে দেখে মিরাজের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠলো।

এইদিকে ক্লাসের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে মিরা মিরাজকে দেখে যাচ্ছে।মিরাজের হাতে গোলাপ ফুল দেখে মিরার শরীর যেন অবশ হয়ে যাচ্ছে।মিরার বুঝতে বাকি নাই মিরাজ কেন এত অস্থির হয়ে আছে।পাশে কিছু রাখার শব্দে মিরা ওইদিকে তাকালো।ঝুমাকে দেখে মিরা মলিন হাসল।

— মনডা কি খারাপ তোর?

ঝুমা মিরার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো। মিরা ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে না বললো।

— তাইলে মুখখানা এমন হইয়া রইছে ক্যা?

— কিছু হয়নি ঝুমা।

কথার ফাঁকে ঝুমার চোখ গেল বাহিরে।স্কুলের বাম পাশে সারি সারি গাছের দিকে।গাছগুলোর ফাঁকে ফাঁকে শিউলি ফুলের গাছ রয়েছে।শিউলি ফুলের গাছ দেখে ঝুমার চোখ খুশিতে চকচক করে উঠলো।

ঝুমা মিরার হাত ধরে মিনতির সরে বলে উঠলো ,,,,,

— মিরা শিউলি ফুলের গাছের ধারে যাই। চল না।

মিরা মলিন হেসে মাথা নাড়ালো।দু’জন শিউলি ফুলের গাছের সামনে এসে দাঁড়ালো।ঝুমা মিরার হাত ছেড়ে দিয়ে গাছের নিচে থেকে খুশি খুশি শিউলি ফুল কুড়াতে লাগলো।ঝুমাকে ফুল কুড়াতে দেখে মিরা হালকা হাসলো।

— মেয়েটা এখনো বাচ্চা ই রয়ে গেল।(মিরা মনে মনে বললো)

— তুই ফুল কুড়াইবি মিরা?

— তুই ফুল নে আমি একটু আসছি।

— আইচ্ছা।

বলে ঝুমা ফুল কুড়াতে মনোযোগ দিল।আর মিরা মিরাজের কাছে আসলো।

— কিরে মিরাজ এতো অস্থির লাগছে কেন তোকে?

— আর বলিস না মিরা।আমি তো এক্সিডেন্ট করে ফেলেছি।

মিরাজের কথায় মিরার ব্রু কুঁচকে এলো।

— এক্সিডেন্ট?

— হু। প্রেমের এক্সিডেন্ট।মিরা আমি না ঝুমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।আর ওয়েট করতে পারছি না রে। ভাবছি আজ ই ঝুমাকে আমার ভালোবাসার কথা বলব।

মিরাজের কথায় মিরা থমকে গেল।আগে ই কিছুটা ইঙ্গিত করতে পেরেছিল মিরা।এখন সেটা ই সত্যি হলো।মিরার প্রচুর কান্না পাচ্ছে কিন্তু নিজেকে অনেক কষ্টে সামলিয়ে মিরাজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

— ফুলটা বুঝি ঝুমার জন্য? (মিরা অস্পষ্টস্বরে বললো)

— হুম।

মিরা আরো কিছু বলার আগে মিরাজ সামনে হাঁটা শুরু করলো। মিরা মিরাজকে চলে যেতে দেখে পিছন থেকে হালকা চিৎকার করে বললো ,,,,,

— ঝুমা বিবাহিত মিরাজ।

মিরার কথা কানে আসতেই মিরাজ দাঁড়িয়ে পড়লো। ধীর গতিতে পিছনে ফিরলো। তারপর মিরার সামনে এসে কয়েক সেকেন্ড মিরার দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।মিরা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিরাজের দিকে।

— তুই কি পাগল হয়ে গেলি মিরা।কি সব উল্টাপাল্টা বকছিস।

— আমি কেনো উল্টাপাল্টা কথা বলছিনা। যে ছেলেটাকে আমরা ঝুমার ভাই ভেবেছিলাম আসলে সে হলো ঝুমার বর। ভাই নয়। তোর আমার কথা বিশ্বাস না হলে ঝুমাকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর।

ঝুমার বিয়ের হয়ে গেছে শুনে মিরাজের কলিজা ধক করে উঠলো।মিরাজ দ্রুত পায়ে ঝুমার সামনে এসে দাঁড়ালো।হঠাৎ কাউকে সামনে দেখে ঝুমা কিছুটা ভয় পেয়ে গেল।

— তোমার সাথে যে একটা ছেলে আসে সে তোমার কি হয়?

হঠাৎ এমন প্রশ্নে ঝুমা ঘাবড়ে গেল।ঝুমা চুপ করে আছে। মিরা ঝুমার কাছে এসে ঝুমার হাত ধরে বলে ,,,,,

— বল ঝুমা ছেলেটা কে?

মিরাকে দেখে ঝুমা কিছুটা সাহস পেল।

— তোমার বর হয়?(মিরাজ)

ঝুমা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।মিরাজ স্তব্ধ হয়ে গেল। মিরাজের হাত থেকে গোলাপটি পড়ে গেল।মিরাজ দৌঁড়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে গেল।ঝুমা কিছু ই বুঝলো না মিরাজ কেন এমন করলো।মিরা মিরাজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

_______
❀.আজ ফিহার বিয়ের দিন।মেহমান গিজগিজ করছে পুরো বাড়িতে।তাহিরা আর ধ্রুব একা হাতে সবদিক সামলাচ্ছে।জুঁই যতটুকু পারছে তাদের দু’জনকে সাহায্য করছে।ফিহা রুমে মন খারাপ করে বসে আছে।পিকু, নিশা আর নুহা ফিহাকে বিয়ের সাজে সজ্জিত করছে।

জুঁই মন খারাপ করে রুমে পায়চারি করছে।আজ বিয়ে অথচ ঝুমা এখনো আসেনি তার জন্য জুঁইয়ের মন খারাপ হয়ে আছে।ধ্রুব রুমে এসে হাত থেকে ঘড়ি খুলতে খুলতে আলমারির সামনে এসে দাঁড়ালো।আলমারি খুলতে খুলতে জুঁইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো ,,,,,

— দুই মিনিট পর শালিকাসাহেবা তার বর নিয়ে উপস্থিত হবে।

কথাটি জুঁইয়ের কানে আসতেই জুঁই ধ্রুবর পিছনে এসে দাঁড়িয়ে বললো ,,,,,

— সত্যি কইতাছেন ফুলবাবু?

ধ্রুব হোয়াইট কালারের সেরোয়ানিটা খাটের ওপর রেখে বললো ,,,,

— বিশ্বাস হচ্ছে না।ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখ হয়তো চলে ও এসেছে।

ধ্রুবর কথায় জুঁই দৌঁড়ে ছুটলো ড্রয়িংরুমের দিকে।এসে দেখে ঝুমা তার মাকে জড়িয়ে ধরে আছে।জুঁই ও এসে তাদের দু’জনকে জড়িয়ে ধরলো।

— আপা ভালা আছত?

জুঁই তাদের দু’জনকে ছেড়ে দিল। অন্য দিকে মাথা ফিরিয়ে মুখ ফুলিয়ে বললো ,,,,,

— হ। ভালাই আছি।

— আপা রাগিস না। ইভান ভাইয়ের পরীক্ষা আছিলো তার লাইগা আইতে পারি নাই তাড়াতাড়ি।

ঝুমার কথা শুনে জুঁই রাগ উধাও হয়ে গেল।জুঁই ঝুমাকে আবারো জড়িয়ে ধরলো।

_______
বর এসেছে বর এসেছে বলে বাহিরে হৈ-হুল্লোড় শুরু হয়েছে।ধ্রুব সেরোয়ানিটা কোনোরকমে পড়ে বাহিরে চলে গেল বরের কাছে।

তাহিরা ফিহার রুমে এসে দেখলো ফিহা তৈরি হয়ে বসে আছে।ফিহাকে বিয়ের সাজে দেখে তাহিরার কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে।চোখ টলমল করছে তাহিরার।

— মেয়েটার বিদায়ের সময় তাহলে এসে ই গেল।

তাহিরা মনে মনে কথাটি বলে নিজেকে কোনোরকমে সামলিয়ে ফিহার কাছে এসে বসলো। ফিহা তার মায়ের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।চোখে পানি স্পষ্ট।

তাহিরা মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন ,,,,,,

— মা-শা-আল্লাহ!আমার মেয়েটাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।

ফিহা মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।তাহিরা ও আর নিজেকে আঁটকে রাখতে পারলো না।মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।ওদের দু’জনের কান্না দেখে উপস্থিত সবাই কান্না করে দিল।

অবশেষে সব নিয়ম-নীতি মেনে ফিহা-ফাহাদের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।এখন ফিহার বিদায়ের পালা।ধ্রুব বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তার কান্না আড়াল করার চেষ্টা করছে।ফিহা বুঝতে পেরে ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে কান্না করা করে দিল।ধ্রুব নিরবে চোখের পানি ফেলছে।ধ্রুবকে ছেড়ে জুঁইয়ের কাছে আসলো ফিহা।জুঁই অশ্রুসিক্ত নয়নে ফিহার দিকে তাকিয়ে আছে।ফিহা জুঁইয়ের হাত ধরে বললো ,,,,,,

— তুমি আমার ভাইয়ার জীবনে আসার পর থেকে আমার রাগী, গম্ভীর ভাইটা আগের মতো হচ্ছে।আমার ভাইটাকে দেখে রেখো জুঁই।তোমার ভালোবাসায় যেন আমার ভাইয়া ঠিক আগের ধ্রুব হতে পারে।

জুঁই মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।ফিহার কথায় ধ্রুব মনে মনে বললো ,,,,,

— আমি আর সেই রাগী, গম্ভীর ধ্রুব নেই বোন।যেদিন থেকে আমার জীবনে জুঁইফুলের আগমন হয়েছে সেদিন থেকে নিজেকে একটু একটু করে বদলে ফেলেছি। কেন বদলে গেলাম নিজে ও জানি না।মেয়েটাই এমন যে কাউকে নিমিষেই বদলে দিতে পারে।আর রইলো ভালোবাসা।আমি তো অনেক আগেই আমার জুঁইফুলের প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছি।

জুঁইয়ের কাছ থেকে সরে মাকে এসে জড়িয়ে ধরলো ফিহা।অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করার পর ফিহাকে বিদায় দিল সবাই।একে একে সব মেহমান চলে গেল।ঝুমা,ইভান আর লতা বানু ও চলে গেল।তাদের থাকার জন্য অনেক জোর করলো কিন্তু তারা থাকলো না চলে গেল।

_______
জুঁই ফিহার কথা ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো।হঠাৎ কেউ জুৃঁইকে পিছন থেকে ধাক্কা মারলো।জুঁই পড়ে যেতে নেওয়ার আগেই ধ্রুব কোথা থেকে দৌঁড়ে এসে জুঁইকে ধরে ফেললো।জুঁই ভয় পেয়ে ধ্রুবর বুকে মাথা রাখলো।রাগে ধ্রুবর মাথা ফেটে যাবে এমন অবস্থা।

— মা ….. মা।

ধ্রুব চিৎকার করে তাহিরাকে ডাকলো।ধ্রুবর চিৎকারে জুঁই ভয় পেয়ে গেল।তাহিরা তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে আসল।

— কিরে ধ্রুব এভাবে চিৎকার করছিস কেন?

— আয়রাকে ডাক।(ধ্রুব রেগে বললো)

— কেন কি হলো। আয়রা তো মনে হচ্ছে ফিহার রুমে।

তাহিরা আয়রাকে নিয়ে আসলো।আয়রা ভীতু চোখে তাকিয়ে আছে ধ্রুবর দিকে।ধ্রুব আয়রার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

— মা এই বেয়াদব মেয়েকে তো আজকে আমি মেরে ই ফেলবো।

বলে ধ্রুব আয়রার দিকে আসতেই তাহিরা পথ আঁটকে দাঁড়ালো।

— কি হয়েছে বাবা আয়রার ওপর এত রেগে আছিস কেন?

— মা তুমি জানো এই বেয়াদব মেয়েটা জুঁইকে সিঁড়ি থেকে ধাক্কা মেরেছে। ভাগ্যিস আমি দেখেছিলাম। না হয় আজ খারাপ একটা কিছু হতো।

(আয়রা জুঁইকে একা পেয়ে দুষ্ট বুদ্ধি মাথায় চেপে বসলো।সেদিন ফিহা জুঁইয়ের জন্য তাকে অনেক অপমান করেছে।তার জন্যই আয়রা জুঁইকে একা পাওয়া মাএ ই পিছন থেকে ধাক্কা মারলো।ধ্রুব তখন রুমের দিকেই আসছিলো আয়রা জুঁইকে ধাক্কা দিচ্ছিলো তা দেখে দৌঁড়ে এসে জুঁইকে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচালো)

ধ্রুবর কথা শুনে তাহিরা ও রেগে গেল।আয়রার গালে ঠাস করে একটা চড় মারলো তাহিরা।আয়রা গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

— বন্ধুত্বের খাতিরে তোমায় দাওয়াত দেওয়া হয়েছে ফিহার বিয়েতে।আর তুমি সেই সুযোগে আমার জুঁই মায়ের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে।আর যেন তোমার এই অলক্ষুণে মুখ না দেখি আমি।আমার জুৃঁই মায়ের আশেপাশে ও যেন তোমায় আসতে না দেখি।আর কক্ষনো এ বাড়িতে যেন তোমায় না দেখি।এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও।

বলে তাহিরা চলে গেল।ধ্রুব জুঁইকে নিয়ে রুমে চলে গেল।আয়রা মাথা নিচু করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।

#চলবে…..
#ফিহা_আহমেদ(লেখনীতে)

(বানানে ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
[❌কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ❌]/[গল্পের কোনো অংশ ই কপি করা যাবে না]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here