#আমার_ফুলবাবু❀
#পর্ব_১১ & ১২
#ফিহা_আহমেদ(লেখনীতে)
(❌কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ❌)
#১১.
‘আমাকে এতো তাড়াহুড়ো করে ডাকলি কেন ইভা?'(ইভান)
— মন চাইলো তাই।
ইভার কথায় ইভানের রাগ উঠে গেল।কিন্তু ইভার সামনে রাগকে কন্ট্রোল করে রাখছে ইভান।
— এসব কেমন ধরনের মজা ইভা।তুই এই ফাজলামো না করলে ও পারতি।
— দেখ তোর রাগ-ক্ষোভে আমার কিছু যায় আসে না।আমি আসতে বলেছি মানে আসবি।
বলে ইভা ইভানের হাত ধরে সামনে এগোতে শুরু করলো। ইভান হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে ফেললো।
— আমায় টাচ না করে যা ইচ্ছে কর।(ইভান গম্ভীর কণ্ঠে বললো)
ইভা মুচকি হেসে বললো ,,,,,
— ওকে সুইটহার্ট।
— সুইটহার্ট ,,,,, ইডিয়ট মেয়ে একটা।
ইভা ইভানকে রেস্টুরেন্টের ছাঁদে নিয়ে আসলো।
— পুরো ছাঁদ অন্ধকার কেন ইভা?
ইভা ইভানকে কিছু না নিজে নিজে বলতে শুরু করলো ,,,,,
— ওয়ান, টু, থ্রি ,,,,,,
বলার সাথে সাথে আলো জ্বলে উঠলো।আলো জ্বলতেই ইভান অবাক হলো।পুরো ছাঁদটা ফুল দিয়ে সজ্জিত। ছাঁদের মাঝখানে একটা ছোট্ট টেবিল রাখা।টেবিলে একটা রেড ভেলভেট কেক রাখা। কেকটার চারপাশে গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।এসব দেখে ইভানের ব্রু কুঁচকে এলো।
— এসব কি ইভা?
ইভার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ইভান সামনে তাকালো।সামনে তাকাতেই ইভান থমকে গেল।ইভা হাঁটু গেড়ে ইভানের সামনে একটি লাল গোলাপ ধরে রইলো।
ইভান কিছু বলার আগেই ইভা বলে উঠলো ,,,,,
‘আই লাভ ইউ ইভান!’
‘সরি, আই এম ম্যারিড।’
— মজা করছি না তোর সাথে আমি।আমার উওরটা চাই।
— কিসের মজা করলাম তোর সাথে। আর উওর তো তোকে দিলাম আমি।আর তুই ভালো করেই জানিস আমি মিথ্যা বলি না।
ইভানের কথা শেষ হতেই ইভার হাত থেকে গোলাপটি পড়ে গেল।
— কয়েকবছর আগে যে বলেছিলি তোর একটা পিচ্চি পরী আছে সেই পিচ্চি পরী ই কি ,,,,,,
ইভা কিছু বলার আগেই ইভান বললো ,,,,,
— হুম। ঠিক ধরেছিস। সেই পিচ্চি পরীটাই আমার বউ।
ইভা আর কিছু না বলে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না করা শুরু করলো।ইভান কিছু না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেখান থেকে চলে গেল।
_______
— এই পিচ্চি আর কতো ঘুমাইবি উঠ কইতাছি।
— ইভান ভাই আর একটুখানি ঘুমাই তারহরে উঠমু নি।
— উঠবি নাকি পানি ঢালতাম তোর ওপর।
ইভানের কথা শুনে ঝুমা তড়িঘড়ি শোয়া থেকে উঠে বসলো।হাত দিয়ে চোখ দু’টো কচলাতে কচলাতে বললো ,,,,,
— উঠলাম তো রাগ কইরেন না ইভান ভাই।
— থাপ্পড় চিনিস?
— কিয়ের লাইগা?
— আমি তোর ভাই লাগি নাকি জামাই লাগি?
ইভানের কথায় ঝুমার চোখ থেকে ঘুম চলে গিয়ে লজ্জা চলে আসলো।ঝুমা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বললো ,,,,,,
— জামাই লাগেন ভাই।
— ধুরররর আবার ভাইইই।তোরে দিয়া কোনোকিছু ই হইব না।যা গিয়া হাত-মুখ ধুইয়া আয়। পড়তে বসবি।যা।
ঝুমা ভালো মেয়ের মতো হাত-মুখ ধুয়ে এসে বই নিয়ে পড়তে বসে গেল।
ইভান প্লেটে করে খাবার নিয়ে আসলো।ভাত তরকারির সাথে মেখে ঝুমার মুখের সামনে ধরলো।ঝুমা পড়া বন্ধ করে ইভানের দিকে তাকালো।
— এইভাবে না তাকাই হা কর খাইয়ে দিতাছি তোরে।
— আন্নে শুধু শুধু এতো কষ্ট কইরেন না। আই নিজেই খাইতাছি। দেন।
— এ্যাহ। আইছে নিজে নিজে খাইতে।তুই তো পিচ্চি তুই নিজে নিজে কি আর খাবি। হা কর কইতাছি খাইয়ে দিচ্ছি আমি।
ঝুমা আর কিছু না বলে মুচকি হেসে হা করলো।
_______
ড্রয়িংরুমে ফাহাদের পরিবার বসে আছে।ধ্রুব তাদের সামনে মুখভার করে বসে আছে।
— ফাহাদ এত তাড়াতাড়ি বিয়ের ডেট না দিলে হয় না।আমাদের ও তো কিছুদিন সময় দেওয়া উচিত তোর।(ধ্রুব গম্ভীর কণ্ঠে বললো)
— এত তাড়াতাড়ি আর কই ধ্রুব। তা ও তো তিনদিন সময়।আমার কাছে তিনদিন তিন যুগের সমান।(ফাহাদ মন খারাপ করে বললো)
ফাহাদের কথা শুনে উপস্থিত সবাই মুখ টিপে হাসছে ফিহা আর ধ্রুব ছাড়া।ফাহাদের এমন লাগামছাড়া কথায় ফিহার কাশি ওঠে গেল।ফিহাকে কাশতে দেখে ফাহাদ দ্রুত ফিহার সামনে পানির গ্লাস ধরলো।ফিহা পানি খেয়ে শান্ত হলো।
— ঠিক আছে। তোর যেহেতু দেরি সহ্য হচ্ছে না আমার আর কি করার। তবে তাই হোক।মঙ্গলবার তাহলে বিয়ের ডেট ফাইনাল।(ধ্রুব)
বলে ধ্রুব ওঠে চলে গেল।বোনকে এত তাড়াতাড়ি বিদায় দিতে হবে তাই ধ্রুবর মনটা বিষন্ন হয়ে আছে।
— আন্টি তাহলে আজ আসি।(ফাহাদ)
— খেয়ে যাও তোমরা।(তাহিরা)
— না আন্টি আজ খাব না।এখন থেকে সব খাবার জমিয়ে রাখলাম।একবারে বিয়ের দিন খাব।(ফাহাদ)
ফাহাদের কথায় তাহিরা হেসে দিল।ফিহা রেগে তাকালো ফাহাদের দিকে। ফাহাদ ফিহার কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো ,,,,,,
”Made from miss to become Mrs.’ – [তৈরি তো মিস থেকে মিসেস হওয়ার জন্য] – (ফাহাদ)
ফাহাদের কথায় ফিহা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।
_______
ধ্রুব কলেজ থেকে চার দিনের ছুটি নিয়ে নিল।সাথে স্কুল থেকে জুঁইয়ের ও ছুটি নিয়ে নিল।বোনের বিয়ের সবকাজ নিজ হাতে সামলাচ্ছে ধ্রুব।জুঁই ও টুকটাক সাহায্য করছে ধ্রুবকে। তাহিরা গ্রামে গিয়েছে লতা বানুকে নিয়ে আসতে।জুঁই বেশ কিছুক্ষণ ধরে ধ্রুবর পিছনে পিছনে হাঁটছে।ধ্রুব বুঝলো জুঁই কিছু বলতে চাইছে।
— কিছু বলবে?
— হুম।আসলে ,,,,,,
— এত ভাবাভাবি না করে সোজা বলে পেল কি বলবে?
জুঁই চুপ করে ধ্রুবর ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
— এভাবে চিন্তা করে চুল না পাকিয়ে বলো কি বলবে?
— ঝুমারে নিয়া আইলে কেমন অয়?
— ইভান বাদ পড়লো কেন?
— ঝুমায় আইলে ইভান ভাই তো এমনি ই ওর লগে চইলা আইব তাই আর ইভান ভাইয়ের কথা কইলাম না।
জুঁই এর কথায় ধ্রুব হালকা হাসলো।
— কিছুক্ষণ আগেই ইভানকে বললাম চলে আসতে ঝুমাকে নিয়ে।
— তাইলে আইব তারা?
— ইভান বললো বিয়ের দিন আসবে।
জুঁইয়ের মন খারাপ হয়ে গেল এই কথা শুনে।
— তাইলে আইব না।(মন খারাপ করে বললো জুঁই)
— মন খারাপ করো না জুঁইফুল। আমি আবার ফোন করে বলবো ইভানকে। ঝুমাকে নিয়ে চলে আসতে।
ধ্রুবর কথা শুনে জুঁই বলে ,,,,,
— এতোক্ষণ মনডা খারাপ আছিলো ফুলবাবু। এহন নাই।
— কেন নেই আমায় কি বলা যাবে মিসেস ধ্রুব দেওয়ান?
জুঁই লজ্জা ভাব নিয়ে বললো ,,,,,
— আন্নে যহন আমায় জুঁইফুল কইয়া ডাকেন তহন আমার মনডা এমনি ই ভালা অই যায় ফুলবাবু।
বলে জুঁই দৌঁড়ে সেখান থেকে চলে যায়।আর ধ্রুব জুঁইয়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।
— পাগলী মেয়ে।বড় হও আগে তারপর তোমার ফুলবাবুর দায়িত্ব নিতে হবে তোমাকে।সামলাতে পারবে তো তখন তুমি তোমার ফুলবাবুকে।
®ফিহা আহমেদ
_____
#১২.
‘কিরে ইভা আজ এত চুপচাপ আছিস যে?’
তৌহিদের কথা কানে আসতেই ইভা সামনে তাকালো।
— কথা বল।তোকে চুপচাপ দেখলে ভালো লাগে না।
তৌহিদের কথায় মলিন হাসলো ইভা।তারপর ছোট্ট করে বললো ,,,,,
— এমনি।কিছু হয় নি।
— ইভান আসে নি এখনো?
ইভানের নাম শুনতেই ইভা ডুকরে কেঁদে উঠলো।ইভাকে কাঁদতে দেখে তৌহিদ বিচলিত হয়ে বললো ,,,,,
— এই ইভু কি হয়েছে তোর কান্না করছিস কেন?
ইভা কিছু না বলে কান্না করতে থাকে।তৌহিদ ইভার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো ,,,,,
— এই ইভান তোকে রিজেক্ট করে দিয়েছে তাই তুই কষ্ট পাচ্ছিস তাই না রে ইভু।
তৌহিদের কথায় ইভা তৌহিদের কাছাকাছি এসে তৌহিদের বুকে মাথা রেখে কান্না করা শুরু করলো। তৌহিদ যা অনুমান করেছে তাই সত্যি হলো।ইভা যে ইভানকে পছন্দ করে তৌহিদ জানে।আর এটা ও জানে ইভান ইভাকে পছন্দ করে না।তৌহিদ ইভার বেস্টফ্রেন্ড।ইভা তৌহিদের কাছে সব কিছু শেয়ার করে।
— তৌহিদ জানিস তুই ইভান না বিয়ে করে ফেলেছে।আ ,,,, আমায় একবার ও বলেনি বিয়ে করার কথা।কাল যখন ওকে আমার ভালোবাসার কথা বললাম তখন ও বললো ও বিবাহিত।
বলে ইভা কান্না করতে থাকে।তৌহিদ কি বলবে বুঝতে পারছে না।তৌহিদ কিছু না বলে ইভার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
_______
ঝুমাকে স্কুলে দিয়ে ইভান ভার্সিটি চলে গেল।ঝুমা গেটের ভিতরে প্রবেশ করতে ই হঠাৎ করে কেউ এসে তার সামনে দাঁড়ালো।হঠাৎ এমন হওয়াতে ঝুমা ভয় পেয়ে গেল। ভয় পেয়ে দু’পা পিছিয়ে গেল ঝুমা।সামনে তাকাতে ই ঝুমা মনে মনে বললো ,,,,,
— আরে এডা তো কাইলকার পোলাডা।আর সামনে এমন কইরা দাঁড়াই আছে ক্যা?
ঝুমা কিছু না বলে পাশ কেটে চলে যেতে নিবে মিরাজ আবার ও ঝুমার সামনে এসে দাঁড়ালো।এবার ঝুমার রাগ উঠে গেল।ঝুমা রেগে বলে উঠলো ,,,,,
— এই ব্যাটা সামনের থাইকা হর কইতাছি।
ঝুমার কথা শুনে মিরাজ চমকালো।
— কি বললে?
— তোর মাথা কইছি আই।হর কইতাছি সামনের থাইকা।
ঝুমার ধমকে মিরাজ হালকা কেঁপে উঠল।তখনি মিরাজের পিছন থেকে মিরা বলে উঠলো ,,,,,
— কিরে মিরাজ তুই ঝুমাকে রাগাচ্ছিস কেন?
মিরার গলার আওয়াজ পেয়ে ঝুমা দৌঁড়ে মিরার কাছে চলে আসলো।আর মিরাজের এতো দিকে খেয়াল নেই মিরাজ তো ঝুমাকে দেখতে ই ব্যস্ত।
— মেয়েটা এত কিউট কেন।ইচ্ছে করে সারাদিন তাকিয়ে থাকতে।কিন্তু কথাগুলো কেমন অদ্ভুত।মনে হয় গ্রামের মেয়ে।ব্যাপার না চলবে।(মিরাজ মনে মনে বললো)
— কিরে মিরাজ তুই ঝুমাকে এভাবে কেন দেখছিস?
— আমার ইচ্ছে দেখছি তোর কোনো সমস্যা?
— না আমার আবার সমস্যা হবে কেন।
মিরা মন খারাপ করে কথাটি বলে ঝুমার হাত ধরে ক্লাসে চলে আসল।
মিরা ঝুমার জন্য ক্লাসে আগে থেকেই নিজের পাশে জায়গা রেখেছিল।ঝুমাকে নিজের পাশে বসিয়ে দিল মিরা।মিরা গালে হাত দিয়ে মন খারাপ করে ঝুমার দিকে তাকিয়ে আছে।
— মেয়েটা সত্যি অনেক কিউট। এইজন্যই তো মিরাজ ওর প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। আচ্ছা আমি দেখতে কি এতই খারাপ যে মিরাজের আমায় চোখে পড়ে না।(মিরা মনে মনে বললো)
এসব বলে মিরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
(মিরাজ ক্লাস টেনে পড়ে।মিরা মিরাজের সমবয়সী।মিরা একটা এক্সিডেন্টে প্রায় দু’বছর বেডে ছিল।হাত-পা, মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিল মিরা। ডাক্তার বলেছে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত স্কুল যাওয়া বন্ধ রাখতে। সুস্থ হতে হতে তার দু’বছর সময় লেগেছিল।এখন মিরা সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ।মাঝখানে দু’বছর লস হলো মিরার।)
— মিরা তুই এমনে চাই আছত যে আর দিকে।
ঝুমার কথায় মিরা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসল।
— তোমার মতো কিউট একটা মেয়ের দিকে যে কেউ এভাবে ই তাকিয়ে থাকবে।
বলে মিরা ঝুমার গাল দু’টো হালকা করে টেনে দিয়ে মলিন হাসল।
ক্লাসে মেম আসতেই সবাই দাঁড়িয়ে সালাম দিল মেম কে।মেম সালামের জবাব দিয়ে ক্লাস করা শুরু করলেন।ক্লাস করতে করতে মেমের ঝুমার দিকে চোখ পড়লো।সবাইকে পড়া দিয়ে মেম ঝুমার কাছে এসে ঝুমাকে উদ্দেশ্য করে বললো ,,,,,
— দাঁড়াও।
ঝুমা ভয় পেয়ে মিরার দিকে তাকালো। মিরা ঝুমার হাত ধরে ধরে বললো ,,,,,
— ভয় পেয়ো না দাঁড়াও।মেম কিছু করবে না।
ঝুমা ভয়ে ভয়ে দাঁড়ালো।
— তুমি কি নতুন ভর্তি হয়েছ।আগে তো তোমায় কখনো ক্লাসে দেখিনি।
ঝুমা কথা না বলে মাথা নাড়লো।
— আচ্ছা বুঝলাম।তোমার নাম কি?
— ঝুমা।
— আচ্ছা বসো।
বলে মেম আবার ও পড়ানো শুরু করলেন।পড়ানো অবস্থায় সারার(ক্লাসের মেম) চোখ গেল বাহিরে।সাথে সাথে সারার ব্রু কুঁচকে গেল।সারা বইটা টেবিলে রেখে ক্লাসের বাহিরে চলে আসল।
— এখানে কি হচ্ছে? কাকে উঁকি মেরে দেখা হচ্ছে।
হঠাৎ পিছন থেকে কারোর কথার আওয়াজ শুনে মিরাজ ভয় পেয়ে গেল।
— সারা মেম আপনি?(মিরাজ শুকনো ঢোক গিলে বললো)
— ক্লাস বাদ দিয়ে এখানে লুকিয়ে আছো কেন?
— মেম আসলে ,,,,
— যাও ক্লাসে যাও।
সারার ধমক খেয়ে মিরাজ দৌঁড়ে ক্লাসে চলে গেল। ক্লাসে এসে মিরাজ বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে বললো ,,,,
— যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়।মেম যদি বুঝে যেত আমি লুকিয়ে ঝুমাকে দেখছি তাহলে আমার চৌদ্দটা বাজিয়ে দিত মেম।বাড়িতে নালিশ দিয়ে দিত।আল্লাহ শুকরিয়া তোমার দরবারে আমাকে বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য।
— কিরে মিরাজ বিরবির করে কি বলছিস?
— কিছু না সিয়াম।(মিরাজ মুচকি হেসে বললো)
_______
ক্লাস শেষে মিরা-ঝুমা দাঁড়িয়ে আছে গেটের বাহিরে।
— ওই যে একটা ছেলে আসে সে তোমার কি হয়?
— ভাই।(ঝুমা লাজুক ভাব নিয়ে বললো)
— তোমার ভাইটা কিন্তু হেব্বি কিউট।(মিরা মজা করে কথাটি বললো)
মিরার কথায় ঝুমার রাগ হলো খুব।
— তুই আর ভাইরে সুন্দর কইলি ক্যা?(ঝুমা কিছুটা রেগে বললো)
ঝুমাকে রাগতে দেখে মিরা আশ্চর্য হয়ে বলে ,,,,
— এতে রাগার কি আছে ঝুমা।আমি তো ,,,,,
— ওই ব্যাডা আর ভাই জামাই।(ঝুমা অন্য তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে বললো)
— ভাই জামাই এটা আবার কেমন ভাই?
তখন পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো ,,,,,
— ও বলবার চাইছে আমি ওর জামাই লাগি।
মিরা চমকে পিছনে তাকালো।ইভান পকেটে দু’হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে।
— আপনি ওর বর শিউর তো?
— হ্যাঁ।এই ঝুমা চল।
ইভানকে দেখে ঝুমা খুশি খুশি ইভানের হাত ধরে সামনে এগোলো।আর মিরা স্থির হয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
পিছন থেকে মিরাজ মিরার মাথায় হালকা করে চড় মেরে বলে ,,,,
— কিরে রাক্ষসী এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস যে তোর সাথের জন কোথায়?
— বরের সাথে চলে গেছে। (মিরা বিরবির করে বললো)
মিরাজ কথাটি শুনতে না পেয়ে বললো ,,,,,
— আচ্ছা আমি গেলাম। তুই এখানে সং সেজে দাঁড়িয়ে থেকে বিরবির করে যা।
বলে মিরাজ সামনে হাঁটা শুরু করলো।মিরাজকে এগোতে দেখে মিরা হালকা হাসলো। ঝুমার বিয়ে হয়ে গেছে কথাটি জানার পর থেকে মিরার কেন জানি ভীষণ ভালো লাগছে।মনে ভীষণ শান্তি লাগছে।
_______
ধ্রুব ড্রয়িংরুম ঘুরে ঘুরে দেখছে সব ঠিক আছে কিনা। ঠিক তখন কলিং বেল বেজে উঠলো।ফিহা এসে দরজা খুলে দিল।
— মা চলে এসেছ আর সাথে ,,,,
— জুঁইয়ের মা।
— আসসালামু আলাইকুম।
লতা বানু হাসিমুখে সালামের জবাব দিলেন।তাহিরা লতা বানুকে সোফায় বসিয়ে দিলেন।লতা বানু হা করে বাড়ির ভিতরের চারপাশ দেখছে।হাতে থাকা ব্যাগটার কথা মাথায় আসতেই লতা বানু ব্যাগ থেকে জিনিসগুলো বের করতে লাগলেন।ধ্রুব তার শাশুড়ী মাকে দেখে কাছে আসতেই ভয় পেয়ে গেল।লতা বানু ব্যাগ থেকে বড় একটা বটি বের করলো।ধ্রুব বটির দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিললো।
— মোর শাশু মা দেহি সোজা বটি নিয়া আসছে।দেখে তো মনে হচ্ছে আজ কারোর শরীর থেকে মাথা আলাদা করবেন উনি।জুঁইকে বকাঝকার জন্য কি উনি আমায়…..না না এসব কি ভাবছি আমি।জুঁই ও জুৃঁই মোরে বাঁচাও তুমি তোমার মা বটি নিয়া আসছে।
ধ্রুবর গলায় যেন কথাগুলো আঁটকে গেল।এদিকে জুঁই মাকে দেখে দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।
#চলবে…..
#ফিহা_আহমেদ(লেখনীতে)
(বানানে ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
[❌কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ❌]/[গল্পের কোনো অংশ ই কপি করা যাবে না]