অবাধ্য_বাঁধনে #পলি_আনান [পর্ব সংখ্যা ১২]

0
631

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ১২]
____________________
এই অসময়ে যানজটে আটকে গেল তিয়াশ।মায়ের টেনশনে এই জ্যামটাকে বড্ড বিরক্ত লাগছে তার কাছে।পাশে বসে ড্রাইভার সাহেব ঘামছেন।টাকার জোরে মিথ্যা তিনি বলেছেন কিন্তু এবার বাড়ি ফিরে কি হবে?

” ড্রাইভার সাহেব আপনাকে ফোন করেছে কে?”

” ফুলি ফোন করছে।”

” মা বড্ড জেদি মানুষ এতবার বলেছি শরীর খারাপ লাগলে আমায় বলবে কিন্তু মা ভাববে সারাদিন কাজ করে আমি ক্লান্ত তাই তো সবসময় অসুস্থতার কথা লুকিয়ে যান।অথচ আমি জানি পান থেকে চুন খসলেই মা অসুস্থ হয়ে পড়েন।”

তিয়াশ মাথাটা ছেড়ে দিল সিটে।চিন্তায় তার মাথাটা ছিড়ে যাচ্ছে একেরপর এক ফোন করে যাচ্ছেন কিন্তু মা কিছুতেই ফোন তুলছেন না।তিয়াশের ঘাবড়ানো মুখখানা দেখে মনে মনে অপরাধবোধ হলো ড্রাইভারের।তাই জ্যামে গাড়ি রেখে, গাড়ি থেকে বেরিয়ে ফোন করেন কাজের মেয়ে ফুলিকে।

” ফুলি, ম্যাডাম কোথায়?”

” ম্যাডাম ঘুমায় ম্যাডামের শরীর আজ আবার খারাপ হইছে ওষুধ দিলাম কিছুক্ষণ আগে এখন ঘুমায়।”

” ওহ ফোন রাখ।”

ড্রাইভার সাহেব গাড়িতে ফিরলেন।কিছুক্ষণ আগে তার চেহারায় যে মেঘের আভাস ছিল তা কাটিয়ে যেন রোদের দেখা মিলেছে।তিয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে,

” স্যার ম্যাডাম ঘুমাইতেছে।এখন তিনি আগের থেকেও সুস্থ।আরেকটা কথা আপনারে যে আমরা খবর দিসি এই কথা ম্যাডামরে বইলেন না আমাদের তাহলে খুব বকবেন।”

ড্রাইভারের কথায় হেসে ফেললো তিয়াশ।মায়ের সুস্থতার কথা শুনে তার বুকের পাথরটা সরে গেছে।

” ঠিক আছে আমি বলবো না।”

তিয়াশের প্রত্যুত্তরে ড্রাইভার সাহেব খুশি হলেন।মনে মনে ভাবলেন টাকার কারণে মাঝে মাঝে বেইমানি করা খারাপ কিছু নয়।
.
ঈশানকে বিরক্ত করতে রাসেলের বড্ড ভালো লাগে।যে ঈশা তার ছিল চোখের শূল সেই ঈশার সাথে এখন কথা বলতে দুইবার ভাবে।ভাববে না কেন?বন্ধুর বউ বলে কথা যতই হোক ভাবীকে সম্মানের চোখে দেখতে হবে।ঈশানের সাথে কথা বলতে বলতে গাছ থেকে গোলাপ ছিড়লো রাসেল।

” এই ফুল কেন নিয়েছিস?”

ঈশানের প্রশ্নে মিষ্টি হাসে রাসেল।গোলাপটা নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ টেনে বলে,

” তোর ভাবীর জন্য।কালো চুলে এই গোলাপটা সুন্দর লাগবে না?”

” অসহ্যকর।”

শেষ কথাটা দাঁতে দাঁত চেপে বললো ঈশান।তবে তা রাসেলের কানে গেলো না।রাসেল ঈশার কাছে গিয়ে বলে,

” ঈশা চুল বেধে গোলাপ গুজে দাও তবে তোমাকে মারাত্নক লাগবে।”

ঈশা অপ্রস্তুত ভঙ্গিমায় হেসে উঠে।অনু পাশে বসে ভ্রু কুঁচকে আছে।অনুকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করলো রাসেল।ঈশা দ্বিধাদ্বন্দে হাত বাড়িয়ে ফুলটা নিয়ে নিলো।

” চুল বেঁধে নাও ঈশা সুন্দর লাগবে।”

কথার মাঝে অনুকে ঈশারা করলো রাসেল।রাসেলের ঈশারা বুঝতে পেরে অনু বলে,

” হ্যাঁ চুল বেঁধে ফেল ঈশা সুন্দর লাগবে।ফুলটা দেখ কত সুন্দর!”

ঈশা দ্রুত হাতে খোপা করে নেয় খোপার পাশে গুজে দেয় গোলাপ।রাসেল অনুর পাশে বসে কথা বলতে শুরু করে।তিন জনের আড্ডা টেবিল জমে উঠেছে বেশ।ঈশান দূর থেকে ঈশাকে দেখছিলো।মেয়েটার বাঁধা চুল দেখে বিদ্রুপের হাসি হেসে ঠোঁট বাঁকায়।

” চুল বাঁধায় নাকি সুন্দর লাগছে এটা হাস্যকর।”

ঈশান বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ সুযোগ খুঁজছিলো কি করা যায়।একদল বাচ্চা ঈশাদের টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো তারা একে অপরের সাথে কথা বলছিল।সেই সুযোগটা কাজে লাগায় ঈশান।কানে ফোন নিয়ে এগিয়ে এলো সে, ঈশার পাশ দিয়ে হাঁটার সময় দ্রুত হাতে গোলাপটা টেনে পকেটে পুরে নিলো।গোলাপ সরে যেতে পিঠে ছড়িয়ে পড়লো ঈশার চুল।আকস্মিক চুলে টান পড়ায় পেছনে ঘুরে তাকালো ঈশা, মাথায় হাত দিয়ে দেখলো গোলাপটা নেই।পাশে থাকা বাচ্চারা হাসতে হাসতে দৌঁড়ে পালালো। ঈশা তখন ভেবে নিলো হয়তো তারাই ফুলটা নিয়েছে।

২৪.
ঈশান বাড়ি ফিরেছে মধ্য রাতে।সারাদিনের ক্লান্তিকে বিদায় জানাতে এই মুহুর্তে একটা গভীর ঘুমের দরকার।কিন্তু সেই ঘুম আসছে না। মন মস্তিষ্কে শুধু ঈশাকে নিয়ে শত শত প্রশ্ন ঘুরছে।হাতে এক মগ কফি নিয়ে ঈশানের রুমে আসে রাসেল ছেলেটার চোখ মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে।

” ঈশান কফিটা নে ভালো লাগবে।”

” এই কফি খেলে তো আর ঘুম আসবে না।”

” তোর ঘুম এমনিতেও আসবে না সেটা আমি জানি।নে ধর।”

ঈশান হাত বাড়িয়ে কফি মগটা টেনে নিলো।রাসেল সিঙ্গেল সোফাটায় বসে টিভি অন করতে ঈশান তার কাছে খানিকটা এগিয়ে আসে এবং স্বগোতক্তি স্বরে বলে,

” রাসেল আমার শরীরটা ইদানীং ভালো লাগছে না।”

” কেন তোর কী হয়েছে?আগে তো বললি না।”

” অস্থির হচ্ছিস কেন?তেমন কিছু না।”

” তেমন কিছুনা মানে?কি হয়েছে? ”

” রাসেল প্রেমে পড়লে কেমন ফিল হয়রে?”

ঈশানের বেহুদা প্রশ্নে ঠোঁট উল্টায় রাসেল।ঈশানের কাছে এমন প্রশ্ন আশা করেনি সে।

” কেমন হবে আবার।অস্থির লাগবে তাকে সামনাসামনি দেখলে ভালো লাগবে তবে সে যদি অন্য কাউকে বেশি গুরুত্ব দেয় বড্ড জেলাস ফিল হবে।সারাদিন তার কথা মাথায় ঘুরবে।প্রেমে পড়ার অসুখটা বড্ড মারাত্মক’রে একবার হলে সহজে ছাড়ে না।”

ঈশান মাথা দুলালো।সিরিয়াস মুহুর্তে রাসেল টিপ্পনী কেটে বলে,

” দেখিস না আমি কেমন অস্থির থাকি।ঈশার ভাবনায় সারাটা দিন পাগল পাগল লাগে।”

” তুই মন থেকে ঈশাকে ভালোবাসিস?সত্যি করে বলবি কিন্তু। ”

রাসেল নড়ে চড়ে বসলো।ঈশানের সাথে মিথ্যা কী করে বলবে?সে ঈশাকে ভালোবাসে না আর বাসবেও না।সে তো শুধু ঈশানের থাবা থেকে ঈশাকে বাঁচাতে এসব নাটক করছে।রাসেলের মৌন থাকাটা দ্বিধার দুয়ারে ঠেলে দিল ঈশানকে।নিশ্চিত হতে পুণরায় বলে,

” রাসেল তুই ঈশাকে সত্যি ভালোবাসিস?”

” ইয়ে….হ….হ্যা মিথ্যা মনে হচ্ছে তোর?আসলে তোর বড্ড বিরক্ত লাগছে তাই না?ঈশাকে যদি আমার ওয়াইফ হিসেবে না চাইতাম তাহলে নিশ্চয়ই এতদিনে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে ছাড়তি।ঈশাকে শায়েস্তা করতি।এসব বাদ দে ঈশান তুই বরং ঘুমা আমি যাই।”

ঈশানের অনুভূতি জোয়ার আসার আগেই যেন থেমে গেল।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো ঈশাকে নিয়ে তার ভাবা উচিত হবে না।অন্তত রাসেলের সাথে কখনোই সে বেইমানি কর‍তে পারবে না।

এই রাতটা যেমন তেমন কেঁটে গেলো ঈশানের জীবন থেকে।ভোরের হালকা আলোতে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে।বারান্দায় কিছুক্ষণ পাইচারি করে সিদ্ধান্ত নিলো হাঁটতে বের হবে।অনেকদিন হয়েছে সকালের ব্যায়াম করা হচ্ছে না।দ্রুত জামা পালটে রাসেলের রুমের দিকে এগিয়ে গেল।দেখা যাক রাসেল যদি উঠে তাহলে তার সাথে বের হবে।

রাসেলের রুমের দরজা ভিড়ানো ছিল ঈশান দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো বিছানার কাছে।রাসেলের গায়ে আলতো হাত দিয়ে বেশ কয়েকবার ধাক্কা দেওয়ার নড়েচড়ে উঠে সে।

” এই রাসেল হাঁটতে যাবি?”

” না তুই যা আমি মাত্র ঘুমিয়েছি।”

ঘুমের ঘোরে এলোমেলো হয়ে এলো রাসেলের কণ্ঠ ঈশানের সন্দেহ লাগলো বাকিটা রাত সে কি করেছে।

” মাত্র ঘুমিয়েছিস কেন?বাকি রাত কী করেছিস?”

” অনু পাগলীটার সাথে কথা বলেছি দিনে তো সময় হয় না।”

” অনু!”

মিহিয়ে এলো ঈশানের কণ্ঠ।রাসেল ঘুমের ঘোরে কি বলেছে হয়তো সে নিজেও জানে না।নিজের প্রবল সন্দেহকে মনে বেঁধে রাখতে চায় না ঈশান।ঈশার সাথে যদি রাসেলের সম্পর্ক গড়ে উঠে তাহলে অনুর সাথে রাত জেগে কথা বলার মানে কী?মনে মনে ফন্দি আঁটলো ঈশান রাসেলের হাত টেনে বলে,

” এই রাসেল তোর ফোনের লকটা খুলে দে।আমার ফোনে চার্জ নেই জরুরি ফোন করার আছে।”

” এত সকালে কিসের ফোন ভাই?”

” আরে দে না।দ্রুত দে।”

রাসেল ফোনের লক খুলে ঈশানকে দিলো।ঈশান দ্রুত হাতে ফোন নিয়ে বেরিয়ে পড়লো রুম ছেড়ে।রাসেলের পার্সনাল বিষয় নিয়ে কখনো নাক গলায়নি ঈশান।ছেলেটা অনলাইনে কি করছে কার সাথে মিশছে তবে আজ সন্দেহ দূর করতেই হবে তাকে।

রাসেলের ফোন ঘেটে থ বনে গেলো বেচারা ঈশান।অনুর সাথে তিন ঘন্টার অডিও কলে কথা হয়েছে।রাসেলের প্রতিটা মেসেজে বুঝিয়ে দেয় অনু তার জীবনে স্পেশাল কেউ।ঈশান পুরোনো মেসেজে আর গেলো না সাম্প্রতিক মেসেজগুলো পড়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে সে।মেসেঞ্জার ওপেন করতে অনুর আইডি সবার উপরে।অথচ কোথাও ঈশার নাম নেই।রাসেলের ফোনের গ্যালারি জুড়ে অনুর ছবি অথচ কোথাও ঈশার ছবি নেই।যদি ঈশা তার প্রায়োরিটি লিস্টের বাইরে থাকে তাহলে ঈশানের সামনে যে ঈশা ঈশা বলে যে আতিশয্য তাহলে তা কী?এসব কী শুধুই ছলনা?মাহমুদাকে খুশি করার বাহানা?
#চলবে___
❌কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ ❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here