অবাধ্য_বাঁধনে #পলি_আনান [পর্ব সংখ্যা ২৫ ক]

0
560

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৫ ক]
______________________
৫৩.
পুনরায় যে যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।ব্যস্ত জীবনের কাছে বিয়ের আনন্দটা এখন শুধু স্মৃতির পাতায় মিশে আছে।গত সাপ্তাহে এই সময়টাতে হলুদের আয়োজন চলছিলো ঈশা,অনু,অনি,শ্রেয়া সবাই মিলে কত আনন্দ করেছে আর কবে যে সবার এক হওয়া হবে জানা নেই ঈশার।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সরু রাস্তাটায় চোখ বুলায় ঈশা।টিউশনি শেষ বাড়ি ফিরছে সে চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ।বিয়ের পর ঈশানের সাথে তার আর দেখা হয়নি এর অবশ্য কারণ আছে ঈশান কাজের চাপে দেখা করা সুযোগ সময় কোনটাই পায়নি।অসময়ে স্কিনে ভেসে উঠলো ঈশানের নাম্বার হ্যা ঈশান ফোন করেছে।সরু ঠোঁটের কোণে মুহূর্তে ভেসে উঠলো এক চিলতে হাসি।

” ঈশান।”

” কোথায় আছো তুমি?টিউশনিতে গেছিলে?”

” হুম বাড়ি ফিরছি আমি।”

” ঠিক আছে তুমি ওখানে থাকো আমি আসছি।”

ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে গেলো ঈশা।কতদিন পর ঈশানের সাথে দেখা হবে ভাবতেই আনন্দ লাগছে মনে।দুই হাত বুলিয়ে চুল ঠিক করে নিজেকে কিছুটা পরিপাটি করে নিলো।ঈশানের গাড়ি দেখা গেলো এই তো আসছে।চোখের পলকে গাড়ি থামলো ঈশার সম্মুখে জানলা দিয়ে মাথা বের করে ঈশান বলে,

” উঠে এসো।”

ঈশা গাড়িতে গিয়ে বসলো।ঈশানের দিকে তাকিয়ে সন্দিহান চোখে বলে,

” আপনি অফিস থেকে আসেননি?

” না আজ দুপুর থেকে ফ্রি আছি আপাতত কয়েক দিন কাজের চাপ কম।”

“ওহ।”

” দেখি তাকাও তো আমার দিকে।”

ঈশা তাকালো পূর্ণ দৃষ্টিতে।এতদিনের তৃষ্ণা অবশেষে মিটলো ঈশানের।এই মেয়েটাকে দেখেনি এক সাপ্তাহ এর মধ্যে রাত দুইটা কি তিনটা মাঝে মাঝে ঈশার বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হতো সে কিন্তু রাসেল কিছুতেই বের হতে দিতো না।যেহেতু বাড়িতে মাহমুদা আছে সেই ভয়ে রাসেলের সাথে পালটা তর্ক করার সাহস তার হতো না।সে তো তেমন কিছু চায়নি সে চেয়ে ল্যাম্পপোস্টের কিনারায় দাঁড়িয়ে শুধু দেখতে চেয়েছে প্রেয়সীর আবছা মুখখানী।এতটা দূর থেকে রাতে ঈশার স্পষ্ট মুখ কোন ভাবে দেখা সম্ভব নয় তবুও ঈশানের ইচ্ছে জাগে।

” এভাবে কি দেখছেন ঈশান?”

” আমার শান্তি,আমার স্বস্তি,আমার সুখ।”

ঈশানের এই উত্তর আশা করেনি সে।লজ্জায় মুখ ঘুরালো দ্রুত জানলার বাইরে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে মৃদু হাসলো সে।ঈশান হঠাৎ তার হাত ধরলো এগিয়ে নিলো বুকের কাছে।ঈশা কিছুটা অবাক হলো তার চাহনি দেখে ঈশান হেসে বলে,

” এই যে এখানটায় কয়েকটা দিন বেশ জ্বলছে মনে শান্তি নেই।মানসিক ভাবে স্বস্তি নেই।তুমি কোনদিন জানতে চেয়েছো আমার মন কেমন আছে?”

” আপনার কি হয়েছে ঈশান?”

” জানি না।”

কথা এড়িয়ে গেলো ঈশান।তবে তার মাঝে অস্থিরতার কারণ অয়ন।সেদিনের পর ঈশানের চিন্তা বেড়েছে বহুগুন। একদিকে অয়ন ঈশাকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে অন্যদিকে ঈশানের গায়ে হাত দেওয়ায় তার ইগোতে লেগেছে।ঈশান এমন একজন মানুষ যে সর্বদা নিজ স্বার্থে সচেষ্ট।নিজের ইগোতে লাগলে কোন কিছুতে সে তোয়াক্কা করে না যেখানে অয়ন তার গায়ে হাত দিয়েছে।এই দুঃসাহসের বদলা যতদিন না ঈশান নিচ্ছে মনে যে শান্তি নেই তার।

” ঈশান আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছেন?”

” না কি লুকাবো?”

ঈশান কথাটি বলে গাড়ির সামনে থাকা রুমালে বাধা পুঁটলিটা হাতে নেয়।তার গিট খুলতে খুলতে ঈশাকে বলে,

“কোলে হাত রাখো ঈশা।”

” কেন?”

” এত কথা নয় যা বলছি করো।”

ঈশা কোলে হাত রাখলো ঈশান পুঁটলিটা খুলে মাধবীলতা ফুলগুলো তার কোলে ছড়িয়ে দেয়।হাতের মুঠোয় এত ফুল দেখে আনন্দে হেসে ফেললো ঈশা।কোলে থাকা ফুল গুলো ছুঁয়ে ঈশানকে বলে,

” কোথায় পেলেন?”

” আমাদের বাগানের।সেদিন দেখলাম ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে তুমি লাফিয়ে ঝাপিয়ে ফুল নেওয়ার চেষ্টা করেছিলে তাই আজ মনে হয় তোমার জন্য আমি নিয়ে যাই।”

নিশব্দে হাসলো ঈশা।এতদিনের প্রেমে ঈশান কখনো তাকে একটা ফুল এনে দেয়নি।তাদের আসা যাওয়া রাস্তার ধারে কত যে ফুল দোকানের সম্মুখে পড়েছে কিন্তু ঈশান কোনদিন একটা ফুল নেয়নি ঈশার জন্য বরং দোকান গুলো দেখলেও সে এড়িয়ে গেছে।ওই তো সেদিনের কথা, দুজনের মাঝে কথা-কাটাকাটি এক পর্যায়ে ঈশান বলে, ” আমার মাঝে বাকিদের ধরণ চরণ খোঁজা বোকামি তোমার জন্য ঈশা।আমি এসব প্রেম ভালোবাসার রাস্তায় কোনদিন হাটিনি ইচ্ছে জাগেনি মনে।আমার জীবনটা ছিল পড়াশোনা আর কি করে নিজেকে আরো আরো অনেকটা উন্নতি করা যায় সে ভাবনায়। এখানে সেখানে ইনভেস্ট করলে কত টাকা লাভ হবে আমি সর্বদা এসব নিয়ে চলেছি এখন প্রেমিক পুরুষ হয়ে বাকিদের মতো হবো কি করে।”

ঈশা সেদিন ঈশানের কথার প্রত্যুত্তর করেনি শুধু মনে মনে হেসেছিলো।সত্যিত এই মানুষটা সর্বদা নিজেকে নিয়ে ভাবে।সে কি করে অন্যসব প্যাঁচানো বিষয় তার মাথায় ঢুকবে।

” আন্টি কেমন আছে ঈশান?”

” বেশ ভালো।বাড়িতে একা থেকে বিরক্ত হন প্রায় সময় আমাকে বকাঝকা করে তাই বিকেল হলে দিয়ে আসি রুমার বাসায় থাকুক সেখানে সময় কাটাক।”

” আপনি সময় দেন না আন্টিকে?কত বছর পর এসেছে।”

” রাত ছাড়া আমার হাতে সময় নেই।চলো কিছু খাওয়া যাক।”

” আজ নয় ঈশান আযান দিয়েছে আমাকে বাসায় ফিরতে হবে।”

” ঠিক আছে।”

গাড়ি চালানোর সময় পুরোটা রাস্তায় ঈশার হাতের ভাজে নিজের হাত বন্দি করেছে ঈশান।মাঝে মাঝে ঈশার হাতে নিজের শুষ্ক ঠোঁট ছুঁইয়ে মেয়েটাকে লজ্জায় ফেলেছে।
ঈশাকে বাসায় নামিয়ে ফিরে এলো ঈশান।

এখন তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটা করা হবে যে কাজের অপেক্ষায় ছিলো রাত দিন গোটা সাতটা দিন।ঈশানের নির্দেশে অয়নকে তুলে আনা হয়েছে আর এই কাজটা করেছে ঈশানের নতুন পাটনার হৃদয়।ছেলেটার বয়স কম একটু রক্ত গরম স্বভাবের যতটা চুপচাপ থাকার ভান ধরে তার থেকেও বেশি অস্থির সে।তার হাত চলে সবার আগে বুঝে শুনে কদম ফেলার আগেই ট্রিগারে আঙুল চেপে সম্মুখে থাকা মানুষটার বুক ঝাঝরা করে দিতে দু’বার ভাবে না।ঈশানের এই ছেলেটাকে নিয়ে ভয় হয় এই বেসামাল ছেলেটা কোন দিন না জানি কোন গন্ডোগোল পাকিয়ে দেয় আর ফেঁসে যায় ঈশান।হৃদয়ের কথা মতো একটি পরিত্যাক্ত গোডাউনে এসে থামলো ঈশান।আশেপাশে নির্জন বাশের ঝুলে থাকা তারে জ্বলছে সোডিয়ামের আলো।ঈশান বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো গোডাউনের পেছন থেকে বেরিয়ে এলো হৃদয় ঈশানকে দেখে গম্ভীর সুরে বলে,

” সালাম স্যার।আপনার লোক ভেতরে আছে।”

” তাহলে যাওয়া যাক।”

ঈশান এগিয়ে গেলো অন্ধকার কক্ষে বাইরে থেকে এক চিলতে আলো এসে হালকা আলোর সন্ধান দিয়েছে।অয়নের মুখ সম্পূর্ণ বাঁধা কালো কাপড়ে চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে তাকে।ঈশান বেরিয়ে এলো সেই কক্ষ ছেড়ে হৃদয় এলো তার পিছু পিছু।

” ছেলেটাকে দিনে এক পিস পাউরুটি আর এক গ্লাস পানি দেবে।এছাড়া আর কোন খাবার, পানি না।তার রুমে কোন ফ্যান লাইট কিচ্ছু চলবে না।”

” কতদিন রাখবো স্যার?”

” কম হলেও তিনদিন।”

” এত ঝামেলার কি দরকার স্যার? হাটুতে একটা গুলি মে রে দিলেই তো ভয়ে ডরে লাইনে চলে আসবে।”

” এসব করার প্রয়োজন নেই।আমি চাই সে ধুকে ধুকে দূর্বল হোক অন্তত এই ট্রামা থেকে বের হতে তার অনেকদিন লাগবে।”

” এই ছেলের অপরাধ কী স্যার?”

” প্রথম অপরাধ আমার গায়ে হাত দেওয়ার দুঃসাহস করেছে।দ্বিতীয় অপরাধ আমার স্ত্রীর দিকে হাত বাড়িয়েছে।তৃতীয় অপরাধ সে একটি মেয়েকে ভালোবার ছলনায় বিয়ে করে মেয়েটাকে ধুকে ধুকে মে রে ছে।”

” শু য়ো রটাকে অন্তত ছয়দিন তো রাখাই দরকার অনেক অপরাধ করছে।”

” যেটা বলেছি সেটা করো।”

ঈশান বেরিয়ে গেলো তার মনে এখন ভীষণ শান্তি লাগছে।রাসেল গাড়িতে বসে ছিলো হাতে তার স্প্রাইটের ক্যান।ঈশানকে ড্রাইভিং সিটে বসতে দেখে শুধালো সে,

” ঈশান তুই আর কোনদিন ভালো হবি না।ভেবেছিলাম বড় হলে ঠিক হবি এখন দেখছি উলটো।এসব ঘাত-প্রতিঘাত করে কি লাভ?”

” জানি না আমি শুধু জানি প্রতিশোধ নিতে আমি আনন্দ পাই,পালটা জবাব দিতে মজা পাই।”

” ঈশা যদি জানে অয়নের সাথে এমনটা করছিস তবে কী হবে?”

” অয়ন নিখোঁজ এটা শুনে ঈশা আগে আমায় জেরা করবে।”

” এসব করে তুই ঈশার মন থেকে উঠে যাবি ঈশান।”

” তোর কি মনে হয় ওর মন থেকে আমি উঠে গেলেও তার নিস্তার আছে?”

” তুই অদৃশ্য ফাঁদ ঈশান যে একবার ফসকে যায় সে সারাজীবনের জন্য ফেঁসে যায়।”

হো হো করে হেসে উঠলো ঈশান।রাসেলের হাত থেকে স্প্রাইটের ক্যানটা নিয়ে চুমুক বসালো সে।

” তোর কি এখন আফসোস হচ্ছে আমার সাথে বন্ধুত্ব করার?একটা সময় আমি তোর ইচ্ছে অনিচ্ছায় আঘাত দিয়েছি মানছি।তবে এখন
আমি কী তোর স্বাধীনতায় আঘাত দিচ্ছি?”

” তুই ছাড়া আমার জীবন শূণ্য ঈশান।তোর পরিবারের বাইরে প্রথম ব্যক্তি আমি যার উপর তুই অধিকার খাটিয়েছিস সর্বদা নিজের কাছে কাছে রেখেছিস আর এখন ঈশা।”

“তুই আমার ভাই রাসেল আমার পরিবার তুই।ঈশাও হবে আর কিছুটা সময়ের অপেক্ষা।একটা সময়ে যেমন বন্ধু লাগে আরেটা সময় বউ লাগে দুইটাই গুরুত্বপূর্ণ।”

ঈশানের কথায় হাসলো রাসেল।গাড়ি ছুটছে আপন গতিতে এক্ষুনি তাকে বাড়ি ফিরতে হবে বাড়ি ফেরার আগে অবশ্য মাছের বাজারটা ঘুরে ঘুরে দেখতে হবে নতুন কোন দেশী মাছ এসেছে কী না।ঈশার বাবার পরামর্শে ঈশান এখন বেশ ভালো মাছ কেনে। প্রথম যেদিন ঈশান বাজার থেকে মাছ কিনে ফিরেছিলো সেদিন রাসেল হাসতে হাসতে শেষ প্রতিটা কথায় ঈশানকে ক্ষেপালো, ‘তোকে নির্ঘাত পচা মাছ দিয়েছে তাই না?’ পরবর্তীতে মাছ দেখে সন্তুষ্ট সবাই ঈশান তবে মাছ কেনা শিখেছে।এর অবদান অবশ্য তার শশুড়ের, মাঝে মাঝে কথাটা বলে রাসেলের সাথে হাসে ঈশান।

৫৪.
পরের দিন ভার্সিটির উদ্দেশ্যে ঈশা অনু বের হলেও ভার্সিটি যাবে না অনু।আজ সকালে রাসেল অবসর আছে তাই সুযোগটা কাজে লাগালো সে।অনেক দিন হয়ে গেলো দেখা হয়নি তার সাথে।ঈশা ক্লাসে চলে গেলো অথচ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনু রাসেল এখনো আসলো না।ছেলেটাকে ফোন করলেই বলে।, “পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করো অনুরূপী আমি আসছি।” অথচ এই পাঁচ মিনিট গিয়ে এক ঘন্টায় গড়ালো।রাগে দুঃখে কান্না এলো অনুর হঠাৎ সম্মুখে এসে দাড়ালো একটি গাড়ি তার বুঝতে আর বাকি নেই রাসেল এসেছে।অনু চপল পায়ে এগিয়ে গেলো গাড়ির কাছে দ্রুত গাড়িতে বসে রাসেলকে নির্দেশ দিলো,

“মুখ থেকে একটা কথাও বের করবে না দ্রুত চলো।”

রাসেল বেশ ভালো ভাবে বুঝলো মেয়েটা রেগে আছে তাই কথা না বাড়িয়ে চললো তাদের গন্তব্য স্থলে।একটি স্কুলের সামনে ঝালমুড়ি ওয়ালাকে দেখে গাড়ি থামালো রাসেল।গাড়ি থেকে নেমে অনুর জন্য ঝালমুড়ির অর্ডার করলো।অনু গাড়ি থেকে নেমে আশেপাশে চোখ বুলালো।এই জায়গাটা ভীষণ সুন্দর নির্মল বাতাস বইছে চারিদিকে।ঠোঙা ভরতি ঝালমুড়ি নিয়ে রাসেল ফিরলো তার কাছে।অনু দুই হাত ভাজ করে বক্ষে জড়িয়ে ভাব নিয়ে বলে,

” খাব না আমি।”

” খাবেনা!কিন্তু কেন?”

” তোমার প্রতি আমি বিরক্ত রাসেল।”

” আমি আবার কি করলাম?”

“তুমি আজ এক ঘন্টা দেরি করেছো এই এক ঘন্টা কতটা মূল্যবান আমাদের জীবনে তুমি জানো?তুমি কি আবার ফিরিয়ে দিতে পারবে আমার সেই সময়?”

রাসেল অবাক হলো ঠোঁট বাকিয়ে হেসে ঠোঙা ধরিয়ে দিলো অনুর হাতে।

” এই সামান্য কারণে এত রেগে আছো।”

” তোমার কাছে এটা সামান্য কারণ!তুমি জানো আমি গতকাল রাত থেকে কত এক্সাইটেড ছিলাম আমি কত আনন্দে ছিলাম অথচ তুমি আমায় মিথ্যা বলেছো।তুমি বাসায় ছিলে ঘুমাচ্ছিলে অথচ প্রতিবার ফোনে আমায় বলেছো যানজটে আটকে আছো ছিহ রাসেল আমাদের সম্পর্কে আজকাল মিথ্যারা প্রশ্রয় পায়।”

অনুর দুচোখ ছলছল করছে কথার মাঝে গলাটা ধরে এলো বারংবার।অনুকে ছুঁতে গেলে ছিটকে সরে যায় সে।

” কাছে আসবে না।”

” আমি ঘুমিয়ে ছিলাম এটা তোমায় কে বললো?”

” ঈশান ভাই বলেছে তিনি ভিডিও কলে আমায় দেখিয়েছেন।”

জিহ্বায় কামড় পড়লো রাসেলের এই ঈশানটা তাকে বেফাঁস ফাঁসিয়ে যাচ্ছে।কয়েকদিন আগে তাদের সম্পর্কের কথা ঈশার কাছে বলে সে কি ঝগড়া বাঁধালো এখন আবার।

” আমি সরি অনু তুমি রাগ করবে ভেবে বলতে পারিনি আসলে কাজের এত প্রেসার শরীরটাও দূর্বল ছিলো।এবার বলো কি করলে তোমার রাগ কমবে অনুরূপী?”

” কান ধরে উঠ বস কর বিশ বার।”

“কি!”

” যা বলছি তা কর।”

” আশেপাশে মানুষ তুমি দেখছো না?”

” দেখছি বলে এই শাস্তি দিলাম মানুষ দেখুক তুমিও লজ্জা পাও অন্তত এই দিনের কথা ভেবে আর কোনদিন আমায় মিথ্যে বলবে না।”

অনুকে অনেকবার মানানোর চেষ্টা চালালো কিন্তু মেয়েটা অনড় তাই অনুর কথায় রাসেল বাধ্য হলো। আশেপাশে তাকালো চোরা চোখে।কানে হাত দিয়ে স্কুলের সামনে কানে ধরে উঠ বস করলো বিশ বার।বেচারার অবস্থা দেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো অনু অপরদিকে আশেপাশের মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে।

” তুমি বড্ড বেশি জ্বালাও অনুরূপী।”

.
দুপুরের পর আকাশটা কালো মেঘে ঢেকে গেছে বাতাসের শনশন শব্দ ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে।দুর দুরান্তের গাছগুলো একে একে যেন নৃত্য করছে।জানলার ফাঁক দিয়ে মুক্ত আকাশটার পানে তাকিয়ে কলিজা মুষড়ে উঠলো ঈশার।মুজাহিদ হাসান বেরিয়েছেন এই ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তার সাথে ছিলো ঈশার মামা ‘রমিজ’।এই দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পাত্তা না দিয়ে তাদের বের হওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ আছে আর তা হলো অয়ন।ছেলেটা গতকাল সকালে অফিসে যায় এরপর আর বাসায় ফেরেনি।সারাটা রাত তার বন্ধু বান্ধব আত্নীয় সজনের কাছে খোঁজ নিয়েছে কিন্তু ছেলেটা কোথাও নেই।ভেবেছিলো সকালে ফিরবে কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো ঘরের ছেলে ঘরে ফিরলো না।অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায় গতকাল অফিস টাইম শেষে বেরিয়ে পড়ে অয়ন কিন্তু আজ সকালে সে অফিসে আসেনি।ছেলে নিখোঁজে কান্নার রোল পড়ে যায় ছেলেকে কোথায় খুঁজবে কি করবে ভেবে কুল পেলেন না অয়নের বাবা রমিজ।তাই বাধ্য হয়ে মুজাহিদ হাসানের সাথে যোগাযোগ করেন তিনি।মুজাহিদ হাসান পুলিশকে জানানোর কথা বললে বারণ করেন রমিজ।পুলিশ কেস মামলা মোকদ্দমা এসব অপছন্দ করেন তিনি। অবশ্য কেস মামলা মোকদ্দমা পুলিশ, মধ্যবিত্তের কাছে এগুলো বড্ড আতঙ্কের নাম।

সবার আহাজারি,ব্যাকুলতা দেখছিলো ঈশা কিছু বলতে গিয়েও সে পারছে না অয়নের নিখোঁজের পেছনে ঈশানের হাত আছে তাতে ঈশা শতভাগ নিশ্চিত সে।তাই দেরি না করে ফোন করলো ঈশানকে।অসময়ে ঈশার ফোন পেয়ে কিঞ্চিৎ হাসলো ঈশান সে জানে ঈশা এখন কেন তাকে স্মরণ করেছে।

” আমার জানটা কেমন আছে?”

” রসিয়ে রসিয়ে কথা বলা বন্ধ করুন ঈশান।”

” ভালো কথা বললেও মানুষের আজকাল ভালো লাগে না কেন বুঝি না।”

” অয়ন কোথায় ঈশান?”

” আমি জানবো কি করে?”

” অয়ন ভাই গত রাত থেকে নিখোঁজ।”

” ও।”

” ও!শুধুই ও?আর কিছু বলবেন না?”

” ওই ছেলের ব্যপারে কোন কথা বলার আগ্রহ আমার নেই ঈশা।”

” অয়ন ভাইয়ের সাথে আপনি কিছু করেছেন তাইনা?”

” তোমার যা ইচ্ছা হয় ভাবো।”

” ঈশান দয়া করুন।”

বাইরে প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়েছে সেই সাথে যেনো ঈশার মনেও ঝড় চলছে।অথচ ঈশান নিরব নিশ্চিন্ত।স্বচ্ছ কাঁচের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে বাইরের তান্ডবলীলা।সেই তান্ডবে ঈশানের মনেও যেন আকস্মিক তান্ডব শুরু হয়েছে।

” আমাকেও একটু দয়া করো ঈশা বাইরে ঝড় হচ্ছে এই মুহূর্তে তোমার এসব শুনতে ভালো লাগছে না।এখন সময় প্রেমের আমাদের প্রেমময় মুহূর্তের।”

” অয়ন ভাইকে ছাড়ুন ঈশান এমন করে আপনার লাভ কি হচ্ছে?”

” তোমায় এখন কাছে পেলে জাপটে জড়িয়ে ধরতাম।তোমার কোমল গালে আমার অবাধ্য ঠোঁটের ছোয়া দিতাম।”

” আমি আপনায় কি বলছি শুনতে পাচ্ছেন না?”

” আমি কি বলছি তুমি বুঝতে পারছো না?আমার এখন প্রেম পেয়েছে।”

” ঈশান এসব বন্ধ করুন এবার।”

” কেন তোমার কি প্রেম প্রেম পাচ্ছে?অনুভূতি পালটে যাচ্ছে তাই না?”

” আমি অনুভূতি শূণ্য ঈশান।”

” আর আমি তোমায় ছাড়া শূণ্য।”
#চলবে___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here