#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৬ক]
____________________
লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেললেন ঈশার বাবা।মেয়ের এমন বেয়াদবিতে তিনি সত্যি লজ্জিত আজ তো এমন করার কথা ছিল না তবে কি সুলতানা কিছু করেছে?চোখ রাঙিয়ে সুলতানার দিকে তাকালেন মুজাহিদ হাসান।স্বামীর এমন চাহনিতে বড্ড ঘাবড়ে গেলেন তিনি।স্বামীর কাছে এগিয়ে এসে বলে,
” আ..আমি কিছু জানি না।সত্যি বলছি আমি কিচ্ছু জানি না।”
” ঈশা পালিয়ে কেন যাবে?সব ঠিক ঠাক ছিল তুমি কি বলেছিলে ওঁকে?”
” আমি কিছু বলিনি।অনুকে একবার ফোন করো না।”
” দিয়েছিলাম ধরছে না।”
আত্নীয় স্বজনদের মাঝে পড়ে গেল শোরগোল।অবশ্য ঈশানের পরিবারে তেমন কেউ ছিল না কাছের পরিবার বলতে নাজিমের পরিবার এবং রুমার পরিবার।ঈশাদের পরিবারেও ছিল কাছের সেই আত্মীয় সজন।হাসিন পড়লো দুশ্চিন্তায় বাবুর্চিদের দিকটা তাকে সামতে হচ্ছে বিধায় এই মুহূর্তে ঈশাকে খুঁজতে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।ঈশান আর রাসেল তো গেছে বাকিটা তারা সামলাবে মেয়ে পক্ষ বিয়ে দিতে এত উতলা হয়নি যতটা ছেলে পক্ষ হয়েছে এবার তাদের বউ তারা খুঁজে নিক।মনে মনে কথাটি বলে পৈশাচিক হাসলো হাসিন।
.
প্রচন্ড গতিতে গাড়ি ড্রাইভ করছে ঈশান এক্সিডেন্টের ভয়ে রাসেল বার বার তাকে বারণ করছে গাড়ি আস্তে চালাতে।ঈশানের সেদিকে ধ্যান জ্ঞান নেই মনে মনে ঈশাকে হাজার রকম বকা ঝকা করতে ব্যস্ত।তারা দশ মিনিটে পৌছে গেছে উক্ত পার্লারে।অনু বলছিলো তারা এই পার্লারেই সাজতে এসেছে।যেহেতু এটা লেডিস পার্লার সেহেতু ঈশানকে হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করতে দেখে পার্লারে থাকা কর্মচারীরা বাঁধা প্রদান করলো।কিন্তু এই ছেলে তো জন্মের ঘাড় ত্যাড়া সবাইকে চোখ রাঙিয়ে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতে পেলো ঈশাকে।ঈশানকে দেখে ভয়ে আড়াল হলো অনু।সে তো মজা করে কথাটা বলেছে আর ঈশান সত্যি সত্যি ভেবে নিলো ঈশা পালিয়েছে!হায় আল্লাহ আজ যে অনুর কি হবে।
ঈশার সাজ শেষ এখন সে শুধু একবার দেখে নেবে সবটা।এতক্ষণ তাদের দেরি হওয়ার মূল কারণ ফুল।
খোঁপায় ফুল দিতে কাঁচা ফুল আনতে বেমালুম ভুলে গেছে ঈশা এবং অনু দুজনে।ফুল ছাড়া সাজটা অপরিপূর্ণ লাগছে ঈশার কাছে তাই তো মুখটা ভার হয়ে গেল তার।মেয়েটার মন খারাপ বুঝতে পেরে ফুল আনবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় অনু।ঈশার বিয়ে উপলক্ষ্যে সে নিজেও শাড়ি পরেছে।কিন্তু শাড়ি পরে হাটতে বেচারির হিমশিম খাওয়ার অবস্থা।তার মাঝে মার্কেটে গিয়ে ফুল দোকান খুঁজে ফুল এনেছে সে।সব মিলিয়ে বড্ড হিমশিমে পড়েছিল অনু বেচারি।অনেকবার উষ্টা খেয়ে পড়তে পড়তেও নিজেকে সামলে নিয়েছে।তার মাঝে ঈশান যখন তাকে রাগ দেখালো নিজের মুখটা আর সংযত করতে পারেনি অনু।ঈশানকে উলটো চিন্তায় ফেলে নিজে শান্তিতে পার্লারে ফিরলো।
” ঈশা!”
ঈশান যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।দ্রুত এগিয়ে এলো ঈশার কাছে।মেয়েটার হাত টেনে নিজের বুকে ঠেকিয়ে ক্লান্ত স্বরে বলে,
” দেখো তুমি।অনুভব করছো?আমি কতটা চিন্তায় ছিলাম।”
” আ..আমি..ক..”
” এই কথা বের হচ্ছে না কেন মুখে?”
” ঈশান আপনি এখানে কেন?এমন অস্থির কেন আপনি?”
” তুমি পালিয়েছো কেন সেটা বলো।”
” আমি পালাইনি।আমি পালালে এখানে কি করতাম?”
হ্যাঁ তাই তো!ঈশানের সৎবিৎ ফিরলো আশেপাশে পরখ করে দেখলো মেয়েরা তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো সে।রাসেল এগিয়ে এসে ঈশানের হাত টেনে বলে,
” ঈশান অনু মজা করেছে দেখিলি তো?বিশ্বাস করিসনি আমার কথা।এবার হলো তো বিশ্বাস?”
” অনু বলেছে আমি পালিয়েছি?”
ঈশা চমকে গেলো আশেপাশে তাকিয়ে মেয়েটা দেখতে পেলো পর্দার আড়ালে।ঈশা গলা তুলে বলে,
” এই অনু এদিকে আয়।”
অবশেষে ধরা পড়লো অনু।পর্দার সাথে লেপ্টে নেতিবাচক মাথা নেড়ে বলে।
” না আসবো না।”
ঈশান এগিয়ে গেলো তবে অনুর মুখোমুখি দাঁড়ানোর আগে অনুকে আড়াল করে দাঁড়ালো রাসেল।
” দোস্ত ওরে কিচ্ছু বলিসনা।মজা করছিল কিন্তু তুই সিরিয়াস হয়ে গন্ডোগোল.. ”
” চুপ কর।সর তুই সামনে থেকে আমার জানতে হবে এত বড় মিথ্যা কথা বলার সাহস তাকে কে দিয়েছে।ঈশান শাহরিয়ারের সাথে ফাজলামো!”
” আপনি আমার দুলাভাই হন আর আমি আপনার শালি।ধরে নিন শালির পক্ষ থেকে এটা একটু প্রাঙ্ক ছিল।”
” এটা একটু?এই তোমার কাছে এটা একটু লাগে?”
ঈশা এগিয়ে এলো হাত টেনে সরিয়ে আনলো ঈশানকে।
” আপনি চলে যান আমরা আসছি।”
“তোমায় না নিয়ে আমি যাব না।”
” লোকে কি বলবে?প্লিজ ঈশান নিজেকে হাসির পাত্র বানাবেন না চলে যান আপনি।”
” ঠিক আছে আমি নিচে অপেক্ষা করছি।তোমাদের গাড়িতে তুলে দিয়ে তবে আমি যাব।”
ঈশান গটগট পায়ে বেরিয়ে গেল।রাসেল যাওয়ার আগে অনুকে চোখ রাঙিয়ে ইশারা করে বলে,
” তোমায় দেখছি পরে।”
” ঠিক আছে দেখিও এত সেজেছি তো তোমার জন্যেই।তুমি দেখবে আর আমার রূপের আগুনে ঝলসে যাবে।”
” তুমি একটা ফাজিল মেয়ে।”
ঈশানে পিছু পিছু রাসেল বেরিয়ে গেল।কপট রাগের মাঝেও তার ঠোঁটে লেগে ছিল হাসি।এই মেয়ে এমন কেন?
৮৮.
বাড়ি ফিরে সবার বকার মুখে পড়লো অনু।বেচারি স্বপ্নেও ভাবেনি এমন কিছু হবে।সে শুধু মজা করেছে আর ঈশান সেটা ঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানিয়েছে তাহলে দোষ কার?তার?মোটেও না দোষ ঈশানের হ্যাঁ হ্যাঁ ঈশানের।মনে মনে হাজার খানেক গালি দিল ঈশানকে।আজ ঈশার মামার বাড়ির কেউ এলো না বিয়েতে তাদের নিয়ে যেন কারো মাথা ব্যথাও নেই।শ্রেয়া রান্না ঘরে সবার জন্য শরবত মিষ্টি প্লেটে সাজাচ্ছিলো।বিয়ে পড়ানো শেষে সবাই তো মিষ্টি মুখ করবে।রান্না ঘরে একা শ্রেয়াকে পেয়ে সুযোগটা কাজে লাগালো অনু।
” শ্রেয়াপু মনটা ভীষণ খারাপ।”
” কেন?সবার বকা খেয়ে? ”
” মোটেও না।ঈশার বিয়ের গেট ধরতে পারিনি বলে।কত স্বপ্ন দেখেছি এই দিনের আহারে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।”
” ঈশার বিয়ের গেট ধরা হলো না বলে মন খারাপ করে লাভ নেই পরবর্তীতে তো জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠান হবে তখন সুযোগটা মিস হবে না।”
” কিন্তু আজ?আজ বাদ যাবে কেন?”
” তুমি কি বলতে চাইছো?”
” ঈশান ভাইয়ার জন্য একটা স্পেশাল শরবত বানাও।স্পেশাল মানে বুঝতে পেরেছো?”
শ্রেয়া চোখে হাসলো।সে বেশ ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছে অনু কি চাইছে।
.
ঈশান নাজিম রাসেল রেদোয়ান তারা চারজন একটি কক্ষে ছিল।তাদের সাথে ছিল হাসিন।ছেলেটা একবার এদিকটা সামলে নিচ্ছে তো আবার ওদিকটা সামলাচ্ছে।একটু পর বিয়ে পড়ানো শুরু হবে।শ্রেয়া শরবতের ট্রেই নিয়ে প্রবেশ করলো কক্ষে।সবার হাতে শরবত দেওয়া শেষে বাকি রইলো মাত্র একটি গ্লাস।সেই গ্লাস বাড়িয়ে দেওয়া হলো ঈশানের হাতে।ঈশান গ্লাসটা হাতে নিতে অনুর দিকে একবার তাকালো।মেয়েটা কেমন চাতক পাখির মতো ছটফট ছটফট করছে।কিন্তু কেন?ঈশানের মনে সন্দেহের দানা বাঁধলো এই শরবতে কি ঘাপলা আছে।
” আমি শরবত খাব না।এটা বরং নিয়ে যান শ্রেয়া ভাবি।”
” এই খাবেন না মানে কি দুলাভাই?সবাই খেল আপনি কেন খাবেন না?”
অনুর কথায় ঠোঁট বাঁকালো ঈশান।অনিহা দেখিয়ে বলে,
” সরি শালি এটা নিয়ে যাও।”
” না নিব না।এনেছি যখন খেতে আপনাকে হবে।কি গো শ্রেয়া আপু বলো না।”
অনুর কথায় তাল মেলালো শ্রেয়া।রেদোয়ান নাজিম সবাই জোরাজোরি করলো ঈশানলে শরবতটা খেতে কিন্তু ঈশান এই শরবত মুখেও তুললো না।অনু এবার কিছুটা রেগে গেল।ঈশানের দিকে তাকিয়ে ঝাঝালো কণ্ঠে বলে,
” এই আপনি এমন কেন?আমরা মেয়ে দিব না।যদি ভালোয় ভালোয় বউ নিয়ে যেতে চান এক্ষুনি শরবতটা খাবেন।”
” হুমকি দিচ্ছো?বউ তোমরা দিবে কি আমি নিজেই নিয়ে যাব বউয়ের সাথে শালি তো ফ্রি আছেই তারপর দুজনকে নিয়ে নিরুদ্দেশ হবো।এত করে যখন বলছো শরবতটা তবে খাওয়াই যায়।”
অনু খুশিতে গদগদ হয়ে গেল।ঈশানকে শায়েস্তা করার সুযোগ পেয়েছে সে।কিন্তু তার ভাবনাকে মিথ্যে করে দিল ঈশান।শরবতের গ্লাসটা রাসেলের দিকে এগিয়ে বলে,
“ধর এটা শেষ কর।শরবত টরবত তো আমি খাই না তুই জানিস।আমার হয়ে তুই খা।”
অনু বারণ করার আগে রাসেল শরবতটা মুখে তুললো।গ্লাসটা অর্ধেক শেষ হতে থমকে গেল সে।কেমন আঁশটে গন্ধ!অনু দ্রুত রাসেলের হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে বলে,
” তুমি ঠিক আছো?এক্ষুনি গিয়ে বুমি করো।ছি ছি ছি শরবতটা কাঁচা মাছ ধোয়া পানি দিয়ে তৈরি।”
রেদোয়ান আর নাজিম অবাক হয়ে গেল।ঈশান হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ালো এবং অনুর দিকে চোখে পাকিয়ে বলে,
” আমার সাথে চালাকি করতে এসো না শালিকা।দেখলে তো কেমন দিলাম।”
রাসেল তাজ্জব বনে দাঁড়িয়ে আছে।তার গলার ভেতর কেমন কেমন করছে।জিহ্বায় কড়া মিষ্টির স্বাদ অথচ নাকে আসছে আঁশটে গন্ধ।সব মিলিয়ে বড্ড নাজেহাল অবস্থায় পড়লো সে।অনুর দিকে তাকিয়ে বলে,
” ফ্লেভার খারাপ না।গন্ধটা বাজে।”
.
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে তার আপন গতিতে।আর দেরি করা ঠিক হবে না।বসার ঘরে নিয়ে আসা হলো ঈশাকে।মেয়েটার পরনে লাল বেনারসি শাড়ি।হাত ভরতি লাল চুড়ি।খোপায় গুজে দেওয়া হয়েছে লাল গোলাপ।কপালে সাদৃশ্যমান টিকলিটা তার সৌন্দর্য দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।লাল দোপাট্টা দিয়ে রুমা ঢেকে দিয়েছে ঈশার মুখ।ঈশার মুখোমুখি বসেছে ঈশান তাদের মাঝে ফুলের একটি পর্দা।এসব আয়োজন রুমা নিজের হাতে করেছে তার পাশাপাশি সাহায্য করেছে শ্রেয়া।বিয়ে পড়ানো শুরু হলো এবং চোখের পলকে শেষও হয়ে গেল।ঈশা কবুল বলতে এক মিনিটো দেরি করলো না তার এই কান্ডে অনু মনে মনে গালি দিলো।ঈশাকে দেওয়া হলো নিলর্জ্জের উপাধি।
” গা ধি কোথাকার এত তাড়াতাড়ি কেউ কবুল বলে?শিখিয়ে দিলাম কি আর তুই করলি কি।বলেছিলাম দশ মিনিটেও কবুল বলবি না।তোর দেরিতে ঈশান ভাইয়ের কি রিয়েকশন হয় দেখতে চাই।ওমা এ তো দেখি বিয়ে পা গ ল।দুই সেকেন্ডে কবুল বলে দিল!”
বিয়ের শেষে রুমা বললো দোপাট্টা সরিয়ে ঈশার মুখ দেখতে।আশেপাশে তাকিয়ে ঘাবড়ে গেল ঈশান সবাই কেমন ড্যাবড্যাব করে তাদের দেখছে।আশেপাশে মুরব্বিদের অভাব নেই।ঈশান ফুলের পর্দা সরিয়ে ঈশার ঘোমটা তুললো এবং ঠোঁট ছোঁয়ালো ঈশার কপালে।আশেপাশে শ্রেয়া রুমা অনু সহ ঈশার অনন্য কাজিনরা ঈশানের কান্ডে হৈ চৈ শুরু করলো।ঈশানকে লজ্জায় ফেলতে অনু জোরে জোরে বলে,
” ঘোমটা তুলে মুখ দেখতে বলেছে চুমু খেতে তো বলেনি।”
আশেপাশে সবার হাসির রোল পড়লো।চোখে নোনা জল অথচ ফিক করে ঈশা নিজেও হেসে ফেললো।ঈশান পড়লো ভারী লজ্জায় ছেলেটাকে অপদস্ত করতে পেরে অনু ভীষণ খুশি।
বিয়ে শেষে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন শেষ হতে প্রায় সাড়ে বারোটা বাজলো।এখন মেয়ে বিদায়ের পালা ঈশান অপেক্ষায় ছিলো কখন তার প্রিয় মানু্ষকে নিজের ঘরে তুলবে।আজ কোন বাঁধা নেই নিজের অধিকারের দলিল তৈরি করেছে সে।মনে মনে যখন আনন্দের ঢোল বাজলো ঈশানের মনে তখন রেদোয়ানের একটি বাক্য উলটে পালটে দিল তার সব ভাবনা।
” শালা মিয়া চলো চলো আর দেরি করা ঠিক হবে না।বিয়ে তো শেষ এবার তুমি তোমার রাস্তায় আর বউ বউয়ের রাস্তায়।”
” বউ বউয়ের রাস্তায় মানে কি?ঈশা যাবে না?”
” না আজ তো ঈশা যাবে না।”
” মজা করছো আমার সঙ্গে?”
” মজা করবো কেন আমি?তুমি জানি না আজ বিয়েটা হবে কিন্তু ঈশাকে ওই বাড়িতে নেওয়া হবে না।ঈশাকে নেওয়া হবে অনুষ্ঠান করার পর।”
” এই কথা কে বলেছে তোমায়?”
” যখন বিয়ের ফাইনাল কথা হয়েছিল তখন এটাই সিদ্ধান্ত হয়।আমি তো ছিলাম সেদিন।”
মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো ঈশানের।এই নিয়ম সে কিছুতেই মানবে না।বিয়ে করেছে বউ নিয়ে যাবে ব্যস এর মাঝে আবার কিসব শর্ত জুড়েছে এরা।বউ না নিয়ে তো ঈশান এই বাড়ি ছাড়বে না কোন দিন না।ঈশাকে আজ নেওয়া হবে না এই কথা সবাই জানতো কিন্তু ঈশান আর রাসেল তারা কেউ জানতো না অবশ্য তাদের জানানো হয়নি।এর কারণ মাহমুদা আগে থেকেই বারণ করেছিল সবাইকে।ঈশা সত্যিটা জেনেও ঈশানের কাছ থেকে আড়াল করেছে।তার ভাবনা ছিল ঈশান বিয়ে করে ক্ষান্ত হবে এরপর সত্যিটা জানলেও আপত্তি করবে না।কিন্তু তাদের পরিকল্পনা সফল হলো না মাহমুদাকে আড়ালে নিয়ে কিছুক্ষণ রাগ ঝারলো ঈশান।রাগে সব তছনছ করতে ইচ্ছে করছে।মাহমুদাকে দিলো তার দুটি শর্ত, প্রথমত ঈশাকে আজ ও বাড়িতে না নিলে সে নিজেও যাবে না।এখানেই থাকবে।দ্বিতীয়ত বউ যদি তারা না নেয় সে একাই নেবে।এত বড় সত্যি আড়াল করে কি ভেবেছিলো পার পাবে তারা?
ঈশানের মা পড়লেন মুশকিলে ছেলে রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে আছে।কখন আবার ভাঙাচুরা শুরু করে কে জানে।মুজাহিদ হাসান ঈশানকে বুঝাতে চাইলো কিন্তু সে কারো কথা পরোয়া করলো না।রাসেল তো এটা ভেবে অবাক হচ্ছে এত কাহিনি ঘটার পরেও এরা এই বিষয়টা আড়াল করলো কোন সাহসে।ঈশার আত্নীয় সজনরা সম্মতি ছিল ঈশাকে বিদায় দেওয়ায়।ঈশার ফুফু এক কথার মানুষ তিনি মুজাহিদ হাসানকে বলেন, তাদের বউ নেওয়ার অধিকার আছে তোমরা এবার মেয়ে বিদায় দাও।একে একে সবাই সম্মতি জানালো একমাত্র ঈশার মা জানালেন না।তিনি জেদ ধরে বসে আছেন মেয়ে আজ বিদায় দেবেন না।হঠাৎ যাওয়ার কথায় ঈশা নিজেও ঘাবড়ে গেল মা মেয়ের কান্না যেন থামছে না।সকল নিয়ম কানুন শেষে কনে বিদায়ের পর্ব এলো।এতক্ষণ হাসি আনন্দের মাঝে চোখের পলকে কেঁদে ফেললো অনু।ঈশার গলা জড়িয়ে শব্দ করে কাঁদছে মেয়েটা।আজকের পর তারা আলাদা হয়ে গেল আর অপেক্ষা হবে না আগের মতো কখন ভার্সিটি যাবে।রাত জেগে একসাথে থাকা হবে না।হুট হাট ঈশার কাছে যেয়ে আবদার করা হবে না তোর সাথে আজ ঘুমাবো।
হাসিন এক কোনে দাঁড়িয়ে রইলো মনটা তার ভীষণ খারাপ।একমাত্র ঈশাকে নিজের বোনের স্থানে রেখেছে।তার কাছে ঈশার স্থান বরাবরি স্পেশাল।হাসিনকে বুকে মাথা রেখে দেদারসে কাঁদলো ঈশা। হাসিন এক হাতে নিজের চোখ মুছে অন্য হাতে ঈশার চোখ মুছলো।
” পাগলি কাঁদে না।আবার আসবি তো।”
” ভাইয়া..”
” আবার কাঁদে পঁচা মেয়ে।”
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঈশা মুজাহিদ হাসানের সম্মুখে আসতে মুজাহিদ হাসান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।তার চোখ ভাসছে কিন্তু কাউকে বুঝতে দিতে চাইছেন না।বুকটা কেমন ভার হয়ে আছে।
” বাবা আমার তাড়িয়ে দিও না।”
” তোমার জন্য এই বাড়ির দরজা সর্বদা খোলা থাকবে মা।যখনি মন খারাপ হবে চলে এসো।”
” বাবা আমি পর হয়ে গেলাম।”
না চাইতেও মুজাহিদ হাসান এবার কেঁদে ফেললেন।তার কান্না দেখে ঈশার কান্নার গতি বাড়লো।আশেপাশে সবাই বাবা মেয়েকে সান্ত্বনা দিচ্ছে কিন্তু কারো কথাই তাদের কানে যাচ্ছে না।ঈশা তার বাবাকে ছাড়লো না জড়িয়ে রাখলো হাতের দৃঢ় বন্ধনে।মুজাহিদ হাসান ঈশানের হাত টেনে নিলেন সেই হাতে জড়িয়ে দিলেন ঈশার হাত।শেষ বেলায় মেয়ের দায়িত্ব তার স্বামীর হাতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি।কান্নায় এলোমেলো হয়ে আসছে তার গলার স্বর, তবুও দৃঢ়টা রাখলেন তার কথায়।
” আমার সুখ,হাসি,কান্না,আহ্লাদ,তৃপ্তি,গর্ব সবটা তোমার হাতে তুলে দিলাম।যেদিন আমার সুখ সুখে থাকবে না সেদিন ফুরিয়ে যাবে আমার সব ভালো থাকার কারণ।”
বিদায়ের ঘণ্টা বেজেই গেলো।ঈশানদের গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে নিজের কক্ষের বারান্দা থেকে মেয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে মূর্ছা গেলেন সুলতানা।কয়েক সেকেন্ডের মাঝে ঢলে পড়লেন হাসিনের মা আতিয়ার কোলে।
#চলবে__