#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৮খ]
______________________
৯৪.
” এই মাছটা নিব?”
” না অনেক হয়েছে এবার বাড়ি চলো।”
” কিন্তু আমার তো পছন্দ হয়েছে আপনি মাছটার সাইজ দেখুন।”
” পছন্দ হলেই কি নিতে হবে?বাজারটা উঠে তো দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে না।এবার চলো বাড়ি যাই তুমি সিএনজিটা ভরিয়ে দিয়েছো এত বাজার কতদিনে শেষ হবে?”
মুজাহিদ হাসান শেষোক্ত বাক্যটি বলেই ঈশানের হাত টেনে ধরলেন।ঈশান মনমরা হয়ে তাকিয়ে রইলো বোয়াল মাছের দিকে এই মাছটা আগে কেন তার চোখে পড়েনি?এত বড় মাছ দেখতেও কি সুন্দর রূপার মতো ঝকমক করছে।ঈশানের মনের বাসনা অপূর্ণ রেখে চললো বাড়ির উদ্দেশ্যে।
.
ঘুম ভাঙতে আড়মোড়া কাটিয়ে উঠে বসে ঈশা।হাত হাতড়ে ঈশানকে না চেপে পিলে চমকে উঠে সে।বিছানায় ঈশান নেই!ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে ওয়াশরুমে চেক করলো ঈশা তবে ফলাফল শূন্য।বিছানার পাশে ছোট্ট টেবিলটায় ঈশানের ফোন,ঘড়ি কিছুই নেই তবে কি চলে গেল ছেলেটা?তাকে না বলে চলে গেল কেন?ঈশা দ্রুত ওড়না নিয়ে কক্ষের বাইরে যায় সুলতানা তখন রান্না ঘরে ছিল তিনি রুটি সেঁকে ঝুড়িতে রাখছেন।অনু আরেক পাশের চুলায় ডিম ভাজতে ব্যস্ত।এত সকালে অনুকে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হলো ঈশা।
” মা ঈশান কোথায়?”
” তোমার মহারাজ বর কি করেছে জানো?”
“ঈশান আবার কি করলো।”
“সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে তোমার বাবাকে ফোন করেছে সে নাকি বাজারে যাবে।তোমার বাবা জানতে চাইলো বাজারে কি দরকার?মহারাজ জানালেন তিনি আজ বাজার করবেন এবং শ্বশুর বাড়ির সবাইকে নিয়ে একটা ঘরোয়া আয়োজন করা হবে।তোমার বাবা বললো ফ্রিজে তো জায়গা নেই নতুন মেয়ে জামাইয়ের জন্য সব রকমের বাজার করা শেষ।কিন্তু কে শুনে কার কথা?অনুকেও নাকি সাতটায় ফোন করে জানিয়েছে সে যেন আসে এবং তার পুরো পরিবাকে আসতে হবে।”
“কই সে তো আমাকে কিছু জানালো না।ছয়টায় বের হলে এখন তো নয়টা বাজে এতক্ষণ বাজারে কি করছে।”
” গিয়ে দেখো বাজারটা তুলে আনছে।”
সুলতানা ঠোঁট বাঁকালেন।জামাই হিসেবে ঈশানকে তার একটুও মনে ধরছে না অথচ প্রথম প্রথম ঈশান বলতে পা গ ল ছিল এই মানুষটা।ঈশা নিজ কক্ষে ফিরে চুপচাপ বসে রয়। সারারাত ঈশান তাকে ঘুমাতে দেয়নি,এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছে ঈশানের উপর জ্বীনের আছর আছে।মাঝ রাতে ঈশাকে গান গাইতে বাধ্য করেছে,কখনো বলছে একটা ছড়া বলো, না থাক কবিতা বলো।শেষ রাতে তো ঈশান গান চালিয়ে কাপল ডান্স করতে বাধ্য করেছে।ঈশা ঘুমালো ভোর পাঁচটায় তার মানে ঈশান আর ঘুমায়নি সে ছয়টায় উঠে বাজারে চলে গেছে।আনমনে মিহি হাসলো ঈশা।
৯৫.
এতদিনের আনন্দ চাপা পড়েছে কালো মেঘের আস্তরণে সর্বদা ভয়ে তটস্থ থাকেন মাহমুদা।এই বুঝি ঈশান বাড়ি এলো আর এই বুঝি বাপ ছেলের মাঝে সৃষ্টি হলো হাঙ্গামা।ডাইনিং এ বসে গোগ্রাসে খাবার গিলছে লিপি তার দিকে তাকিয়ে মনটা বিষিয়ে উঠে মাহমুদার।এই একজন মহিলার কারণে তার ছেলের জীবনটা রসাতলে গেল।লিজার জন্মের চার বছর পর তার বাবা মারা যায়।ফলে লিজাকে নিয়ে একাই সংসার গড়েন লিপি সবার সহানুভূতি নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে পাড়ি জমালেন ভীনদেশে এতে অবশ্য বিদ্বেষ নেই মাহমুদার তবে লিপির অপরিণামদর্শিতা মোটেও পছন্দ না মাহমুদার।বিয়ের পর থেকে লিপির একেরপর এক অযথা যুক্তিহীন ঝামেলার শিকার মাহমুদা যদিও জল কখনোই বেশি দূর গড়ায়নি কেননা আবিদ শাহরিয়ার ছিলেন স্ত্রীর অন্ধ ভক্ত।যেহেতু লিজার বাবা নেই সেহেতু লিজাকে কখনো চোখের আড়াল করেন না আবিদ।সেদিনের পর তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঈশান যেহেতু এমন নোংরা অন্যায় করেছে সেই হিসেবে তার স্ত্রী হবে লিজা।
” তুমি এখানে!তোমার ছেলেকে ফোন করতে বলেছিলাম তা কি ভুলে গেছো?”
আবিদের রুক্ষ স্বরে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলেন মাহমুদা।ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে নিজের অপ্রস্তুত ভাবটা কাটালেন তরান্বিত ।
” ঈশানের সময় হলে সে ফোন করবে।”
” তুমি আমার অবাধ্য হচ্ছো দিন দিন।”
” তুমি আমার ছেলের সংসার ভাঙতে উঠে পড়ে কেন লেগেছো?আমার ছেলেকে মুক্তি দাও।”
” তুমি ভালো ভাবে জানো আমি আমার কথার খেলাপ করি না।”
” তোমার ছেলে তোমার মতো হয়েছে এই বাবা ছেলের লড়াইয়ে আমি নেই।”
আবিদ শাহরিয়ার মুচকি হাসলেন।মাহমুদার অভিমানী মুখখানি দেখে হাত টেনে কাছে আনলেন।
” খুব তো বলেছিলে ছেলের কাছে ভালো থাকবে তাহলে এতটা শুকিয়ে গেলে কেন?চামড়া তো হাড্ডিতে মিশে গেছে।”
” আমি আগের মতোই আছি।”
মাহমুদা উঠে দাঁড়ালেন গটগট পায়ে চলে গেলেন নিজের কক্ষে।প্রাণ প্রিয় স্বামীর প্রতি তার জমেছে গাঢ় রাগ ছেলেটার জীবন ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছে এই মানুষটা।
.
এত এত বাজার দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন সুলতানা।এসব তিনি কতদিনে শেষ করবেন?বাজারের সব মাছ মুরগি ঈশান কি একাই নিয়ে এসেছে?ঈশা চোখ পাকিয়ে তাকালো ঈশানের দিকে ঈশান এক গাল হেসে আড়ালে ঠোঁট ইশারায় চুমু দিলো ঈশাকে।ঈশার ফুফু আতিয়া চুপচাপ তাকালেন মুজাহিদ হাসানের দিকে।হাসিনদের আজ আসার কোন কথাই ছিল না কিন্তু ঈশান তাদের আসতে বাঁধ্য করেছে।আজকের আয়োজনে উপস্থিত থাকবে ঈশার ফুফুরা এবং অনুর পরিবার।
” ভাইজান আপনার মেয়ে জামাই তো এলাহি এলাহি কাণ্ড করে বসেছে।এত মাছ রাখার জায়গা ফ্রিজে নেই।”
” আমি জানি না আতিয়া, যে এনেছে তাকে বলো এর সমাধান কি।আসার সময় বোয়াল মাছে চোখ পড়েছে আমি তো ভয়ে শেষ কখন না আবার কিনে বসে তাই টেনে হিচড়ে যেভাবে পেরেছি নিয়ে এসেছি।”
ঈশান সবার আলোচনার মধ্যমণি হয়ে বসলো চেয়ারে।সবার দিকে যেন হুমুক জারি করবে ছেলেটা।হাসিন নিগূঢ় নিশ্চুপ তার কাণ্ড দেখছিলো।এই ছেলে কি টাকার গরম দেখাতে এত এত বাজার এনেছে?
” এত চিন্তা করছেন কেন আপনারা?ভাগবাঁটোয়ারা করলে দেখবেন আর কিছুই রইবে না।যাই হোক আজ আমাদের খাদ্য তালিকায় কোন রোস্ট পোলাও থাকবে না।আজকের আয়োজন হবে সাদা ভাত, বেশ কয়েক পদের ভর্তা,ভাজি,ডাল,মাছের কয়েকটি পদ ব্যস এইটুকুই।ফাদার ইন ল বাকিটা আপনি বলুন।”
শেষোক্ত বাক্যটি বলে ঈশান তাকালো মুজাহিদ হাসানের দিকে।এই এভাবে সবার সামনে ডাকা কি খুব দরকার ছিল?গলা ঝেরে ঈশানের দিকে তাকালেন তিনি।
” আমার কিছু বলার নাই।জামাই যা বলেছে তাই হোক।”
ঈশান আর বাক্যব্যয় না করে রুমে চলে গেলো।তার পিছু পিছু গেলো ঈশা।
কোমড়ে হাত রেখে ঈশানের দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে আছে ঈশা।তার ভেজা চুল দেখে ঠোঁট কুচকায় ঈশান।
” গোসল কেন করেছো?আমি কি কিছু করেছিলাম?”
” বাজে কথা রাখুন এত বাজার কেন এনেছেন?”
” তুমি আমাকে ধমকাও!ও মাই গট।দেখি কাছে আসো।”
ঈশান ঈশার হাত টেনে কাছে আনলো।মেয়েটার উদরে মাথা রাখতে ঈশা আদুরে হাতে চুলে বিলি কাটলো।ঈশান মিহি হাসলো সব ক্লান্তি যেন এখানে থেমে গেছে।তবুও মনটা বড্ড আকুপাকু করছে মেয়েটাকে জ্বালাতে।
” আমি খুব ক্লান্ত ঈশা।সারারাত যে ঘুমাতে দাওনি এখন মাথা ঝিমঝিম করছে।”
” এই কিসব বলছেন আমি আপনাকে ঘুমাতে দেইনি?”
” হ্যাঁ তুমি তো দাওনি।কিসব গান বলেছো কবিতা বলেছো শেষ রাত্তিরে নেচে গেয়ে কি একটা অবস্থা।”
” ঈশান আপনার অভিনয় দেখে আমি অবাক হচ্ছি আপনি সারাটা রাত আমাকে বাদর নাচ নাচালেন এখন বলছেন আমি ঘুমাতে দি নাই।ছাড়ুন আমায় এক্ষুনি ছাড়ুন।”
” রাগ করে না, রাগ করে না….তারপর লাইন কি হবে?এই ঈশা আমি কোথায় যেন ছড়াটা পড়েছি।”
“ভুলভাল কথা বলে আমার মন ভুলাবেন না কি বলি আগে তা শুনুন।মা আর রাসেল ভাইয়াকে আজ আসতে বলুন সবাই আছে মা খুব খুশি হবেন।”
মুহূর্তে ঈশানের মুখে আঁধার নামলো।আলগা হয়েছে তার হাতের বাঁধন।ঈশানের বিভ্রান্তিতে অবাক হলো ঈশা।
” কি হয়েছে ঈশান?”
” বাবা এসেছে মা এখন আসতে পারবে না।”
” কবে এলো আমায় বললেন না তো।”
” গতকাল।বলবো বলবো করে আর বলা হয়নি।তিনি এখানে এমনি এমনি তো আসেননি এখানে এসেছেন কোন উদ্দ্যেশ্যে নিয়ে নিশ্চিয়ই আমাদের আলাদা করার উছিলায়।যখন জানলাম ফুফু এসেছে আর লিজাও আমার দিন দুনিয়া সব আঁধার হয়ে গেছে এরা আসা মানেই ঝামেলার সৃষ্টি।”
” চিন্তা করবেন না আর কী ঝামেলা করবে?যা হবার হয়ে গেছে।”
” আমি আমায় নিয়ে চিন্তিত নয় আমি চিন্তিত তোমার মুড নিয়ে তোমার চিন্তা ভাবনা নিয়ে।”
ঈশার ভ্রু কুচকে গেলো।ঈশানের দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে সন্দিহান গলায় বলে,
” মানে?”
” আমার ফুফুকে চেনো না।তিনি তোমার ব্রেন ওয়াশ করে ছাড়বে। এমন ভাবে করবে যে আমায় তোমার সহ্য হবে না।তুমি উনার কথায় উঠবে বসবে তাছাড়া লিজা তো আছেই এই মেয়েকে দিয়ে তোমায় আমার বিরুদ্ধে প্ররোচিত করবে।আর তুমি তো আমায় সহজে ভুল বুঝবে আমাদের নব সংসারে শুরু হবে ঝামেলা।”
” এই আমায় ভরসা করেন?”
” আগের বার যে ভুল বুঝে চলে গেছিলে তা কিন্তু আমি ভুলিনি এবার যে যাবে না সে নিশ্চয়তা কী?”
” এবার তো আপনি আমার স্বামী সেটা আশা করি ভুলে জাননি।”
” যখন যে যা বলবে আমায় বলবে মনে রাখবে লড়াইটা একা আমার নয় তোমারো।মা বলেছে তোমায় নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে কয়েকটা দিন পর বাড়ি ফিরতে আমি চাইলেই যেতে পারি কিন্তু যাব না।আমি কার কাছ থেকে পালাবো?আমি কি অন্যয় করেছি?তাছাড়া ওই বাড়িটা আমার আমার বাড়িতে আমি ফিরবো কার কি।”
৯৬.
সবাইকে নিয়ে আজ একটি সুন্দর দিন কাটালো ঈশান।শ্বশুর বাড়ির প্রতিটা মানুষের সাথে তার বনিবনা হলেও শ্বাশুড়ির সাথে খুব একটা বেশি ভাব জমাতে পারছে না।তিনি সুযোগ পেলেই ঈশানকে এটা ওটা বলে খোঁচাতে থাকে ঈশানো কম যায় না শ্বাশুড়ির এসব মুখ বুঝে সহ্য না করে হাসি মুখে পালটা জবাব ছুড়ে।মুজাহিদ হাসান চুপচাপ সহ্য করেন সবটা এদের খুনশুটি দেখে মনে হয় না শ্বাশুড়ি জামাই মনে হয় যেন জনম জনমের শত্রু।ব্যগপত্র গুছিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো ঈশা ঈশান।সুলতানা আজ আবার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সেই সাথে ঈশাও।রাত বাড়ছে বিধায় ঈশান বড্ড তাড়া দেখালো দ্রুত বাড়ি ফিরতে হবে যে।
ভয়ে ঈশার বুকের ভেতরটায় টিপটিপ করছে।বাড়িতে তো এসে গেলো এখন কী হবে?শ্বশুর তার কেমন না কেমন ভাবনার মাঝে ঈশান তার হাত টেনে ধরলো।বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো দুজনে একসাথে।লিপি তখন টিভি দেখছিলেন দরজায় ঈশানকে দেখে দ্রুত টিভি অফ করে দাঁড়িয়ে পড়লেন।মাহমুদা রান্নাঘর থেকে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন ঈশাকে।
” ভালো আছো ঈশামা?বেয়াই বেয়ান কেমন আছে?”
” আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে মা।”
” ক্লান্ত লাগছে তাই না?ঈশান ঈশাকে নিয়ে রুমে যা আমি শরবত পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
ঈশান পুনরায় ঈশার হাত টেনে ধরলো।ঈশা আড় চোখে একবার তাকালো ঈশানের ফুফু লিপির দিকে।তবে তার নজর কাড়লো লিপির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি।পরনে লম্বা টি-শার্ট,মাথার উপর সাদাসাদা পাখির বাসার ন্যায় এক দলা চুল ক্লিপের সাহায্যে বাঁধা।গলায় ঝুলছে হেডফোন।
ঈশা নজর সরিয়ে তাকালো ঈশানের দিকে ছেলেটার ভাজ পড়া কপাল বলে দেয় সে কতটা বিরক্ত অনুভব করছে।
” ঈশান আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছো?”
অভিমানি সুরে বললেন লিপি।ঈশার দিকে আপাদমস্তক তাকিয়ে মিহি হাসলেন।ততক্ষণে বসার ঘরে উপস্থিত হন আবিদ শাহরিয়ার।
” যখন দেখলেন এড়িয়ে গেলাম তখন সামনে এসে দাড়াচ্ছেন কেন?”
লিপির কথায় পালটা জবাব দিয়ে এগিয়ে গেলো ঈশান।তবে তার পথ রুদ্ধ করলেন আবিদ শাহরিয়ার হাত ইশারায় থামতে বললো তাকে।ছেলের পাশে থাকা ছিমছাম গড়নের মেয়েটিকে পরখ করলেন বেশ কিছুক্ষণ।নিসন্দেহে বলতে হয় তার ছেলের পাশে মেয়েটিকে মোটেও খারাপ লাগছে না বরং মানানসই।ঈশা কি করবে না করবে ভেবে ঈশানের বাবাকে সালাম জানালো তবে সেই সালামের প্রত্যুত্তর পাওয়া গেল না।
” শ্বশুর বাড়ি ছিলে বেশ ভালো তবে বাবা যে এসেছি সে কথা কি জানো না?নাকি আমরা আসায় খুশি হওনি।”
” আমি খুশি কি খুশি নই সেটা কি আমার ভাব ভঙ্গিমায় বুঝতে পারছেন না?”
” বুঝতে চাই না আমি।এই মেয়েটা সে তাই না যে তোমার ঘিলু খেয়ে নিয়েছে।”
ঈশার ভেতরটা হঠাৎ ভয়ে নাড়া দিলো।কিছুটা চেপে দাঁড়ালো ঈশানের পাশে ঈশান বুঝতে পারলো ঈশার পরিস্থিতি সে ঈশার হাতটা আরো দৃঢ়ভাবে ধরে যেন বুঝিয়ে দিল,”ভয় নেই আমি আছি তো।”
” আমরা ক্লান্ত এখন অযথা প্যাঁচ মোটাও ভালো লাগছে না।আসছি আমরা।”
ঈশান হাত টেনে নিয়ে গেলো ঈশাকে।দুজনের এত ঘনিষ্ঠতা দেখে লিপির প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছে।অপরদিকে লিজা উৎসাহ চোখে তাকিয়ে রইলো তাদের দিকে।মনে মনে বললো, “মেইড ফর ইচ আদার।”
ঈশা দম ছাড়লো কক্ষে ফিরে বিছানায় বসে তাকালো ঈশানের দিকে ছেলেটা কেমন ছটফট ছটফট করছে।
” এই রুমের বাইরে যাবে না ঈশা।ঠিক আছে?”
“তুমি যা বলবে।”
” আমি গোসল করবো রুমের দরজা লাগিয়ে দাও।”
ঈশান জামা কাপড় হাতে নিয়ে ছুটলো ওয়াশরুমে।মনের বেখেয়ালে ঈশার দরজা লাগানো হলো না।শরীরটা বিছানায় এলিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো কিছুক্ষণ।
” এই মেয়ে তোমার নাম কী?”
অপরিচিত কণ্ঠে অতি সত্বর উঠে বসে ঈশা।সামনে লিজাকে দেখে ভীষণ ঘাবড়ে যায় সে ঈশান দেখলে এবার কী হবে?”
” নওশীন ঈশা।”
” আমাকে চেনো?”
ঈশা না জানার ভান করে বলে,
” আপনি তো আমার পূর্ব পরিচিত কেউ নন যে চিনবো।”
” আমি লিজা ঈশানের কাজিন।উডবি ওয়াইফ ছিলাম বলা চলে।তা তোমাদের লাভ ম্যারেজ তাই তো?”
” না ফোর্স ম্যারেজ।”
” মানে?”
” না বুঝলে কিছু বলার নেই।”
লিজা ঠোঁট বাঁকালো পুরো রুমটা পরখ করে বসলো ঈশার পাশে।
” ঈশানকে ভালোবাসো নাকি টাকার লোভে বিয়ে করেছো?”
” সত্যিটা বলবো?আমি ঈশান শাহরিয়ারকে বিয়ে করেছি তাবিজ করে।”
” হোয়াট?তাবিজ!”
” হ্যাঁ তাবিজ।তাবিজের সাহায্যে উনাকে পা গ ল করেছি।
লিজা ভ্রু যুগল কুচকে গেলো।তাবিজ সম্পর্কে এই মেয়েটার ততটাও ধারণা নেই তবে ঈশার মুখে এই কথা শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।ঈশা মুখের ভাব ভঙ্গিমা সিরিয়াস রেখে লিজাকে বলে,
” আপনি চাইলে ট্রাই করতে পারেন।”
” তুমি কি আমাকে তোমার সতিন বানাতে চাও নাকি?শুনেছি বাঙালি মেয়েরা তার স্বামীকে হায়নার মুখে ছুড়ে দেবে তবুও অন্য মেয়ের কাছে ছাড়বে না।”
” আমি আলাদা আপু।”
” এক টেস্ট সবসময় ভালো লাগে না তাই তো?তুমি তো দেখছি আমার মতো।”
ঈশা ঠোঁট চেপে হাসলো।ঈশান এসব জানলে তাকে আস্ত রাখবে না।লিজা বেশ আগ্রহ হলো ঈশার প্রতি।ঈশার চোখে চোখ রেখে সে বলে,
” ঈশানকে ছাড়ছো কবে?”
” সাহস, এতটা সাহস এখনো ফাদার ইন ল এর একমাত্র মেয়ের হয়নি।”
ঈশানের জবাবে চমকে তাকালো দুজনে।লিজা দাঁড়িয়ে পড়লো দ্রুত ঈশান কটমট চাহনিতে তাকালো ঈশার দিকে।মেয়েটার হাত ধরে হেঁচকা টেনে বিছানা থেকে নামালো এবং চোখ রাঙিয়ে গমগম স্বরে বলে,
” তোমার আশেপাশে যে নোংরা দেখতে পাচ্ছো না?আসো গোসল করতে আসো।”
” ই..ঈশান কিসের নোংরা?কি বলছেন।”
” এসব নোংরা খালি চোখে দেখা যায় না।চলো গোসল করবে।”
” না না আমি করেছি সকালে আর করতে হবে না।”
ঈশান নাছোড়বান্দা স্বভাবের তার মাথায় যেটা ঢুকেছে সে সেটাই করবে।ঈশাকে টেনে নিয়ে গেলো ওয়াশরুমের সামনে,
” দ্রুত ওয়াশরুমে যাও আমার অনেক কাজ সারা রুমটা নোংরা হয়ে গেছে খালাকে বলে সবটা মুছতে হবে।”
” ঈশান আমি গোসল করবো না।”
” তুমি করবে না? ”
” না। ”
” আমার কথা শুনবে না?”
” না।”
” আমি কিন্তু তোমায় আদর করবো না।”
“আমি বেঁচে যাবো।”
ঈশান ঈশাকে টেনে নিয়ে গেল ওয়াশরুমে।অপরদিকে লিজা আহাম্মক বনে তাকিয়ে আছে।ঈশান কিসের নোংরা নোংরা করছে তার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না।
#চলবে_