#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ১৮]
___________________
৩৪.
” এত করে বোঝানোর পরেও সে মানলো না?”
” না।”
” তবে এবার কি হবে?”
অনু প্রশ্নটা করে ঈশার পাশে বসে পড়লো।তার হাতে মুঠোফোন যা এক নাগাড়ে বেজে চলেছে।স্কিনে ভেসে উঠছে “পাষাণ” লেখাটি।অর্থাৎ পাষাণ নামে সেভ করা নাম্বার থেকে একের পর এক কল আসছে।সেদিন ঈশানকে এত করে বোঝানোর পরেও সে মানে নি।গতরাতে দুই ঘন্টা যাবৎ ঈশানকে ঈশা বুঝিয়ে চলেছে এ সম্পর্কের কোন ভিত্তি নেই।কিন্তু নাছোড়বান্দা ঈশান নিজের ইচ্ছায় অটল রইলো বরং সে ঈশাকে পয়েন্টে পয়েন্টে বুঝিয়ে দিচ্ছে তাদের সম্পর্কের পজেটিভ সাইট।ঈশানের এসব ভিত্তিহীন কথা ঈশার বড্ড বিরক্ত লাগলো।যার ফলে ফোন বন্ধ করে রাতে ঘুমিয়ে পড়লো।
সকাল প্রায় সাড়ে নয়টা বাজতে চলেছে অনু ঘুমে ছিল।
সকালে ঈশা ফোন অন করে যাওয়ায় ঈশানের নাম্বার থেকে একের পর এক ফোন আসতে থাকে।ঘুম চোখে ঈশার ফোনে ” পাষাণ ” নামটা দেখে এক ঝটকায় ঘুম ভেঙ্গে যায় তার।মস্তিষ্ক জুড়ে হানা দেয় কিছু প্রশ্ন এ আবার কেমন নাম?পরে যখন জানতে পারে পাষাণ মানে ঈশান হেসে কুটিকুটি হয়ে যায় অনু।
ঈশার দুই পাউন্ডের একটা কেক তৈরি করছিলো অনুর আগমনে মনোযোগ ভঙ্গ হলো তার ফলে কেকটা টেবিলের এক কোনে রেখে বসে পড়ে অনুর পাশে।
” ঈশান শাহরিয়ার প্রতিশোধের খেলায় মেতে উঠেছেন।তিনি কি ভেবেছেন ভালোবাসার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আমাকে ডুবে মা র বে ন? নওশীন ঈশা ততটাও বোকা না।”
” প্রতিশোধ নিবে কেন?আমরা তার উপকার করেছিলাম।”
” তাকে কম অপমান করিনি আমি।পাব্লিক প্লেসে একটু বেশি অপমান করেছি। তার আবার এসবের প্রতিশোধ নিতে হবে না।”
” সত্যিও তো ভালোবাসতে পারে?সিনেমায় দেখিস না হিরো ঝগড়ার মাঝে ফিদা হয়ে যায়।তুই একটু বেশি বেশি ভাবছিস।”
” মোটেও না।”
মুখ বাঁকালো ঈশা।ঈশাকে কাজ ফেলে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে এলেন ঈশার খালামনি “সুমাইয়া।”
“ঈশা তুমি বসে আছো?দ্রুত হাতের কাজটা শেষ করো।কেক ডেকোরেশন করা হলে গাজরের হালুয়া বানাতে হবে।”
” এই তো আমি শেষ করছি আন্টি।শ্রেয়া আপু কি করছে?”
” সে ফেইস প্যাক লাগিয়ে বসে আছে।হাতের কাজ শেষ করে তোমরাও তৈরি হয়ে নিও মেহমান আসবে বারোটায়।অনু বরং শ্রেয়ার কাছে যাও।”
অনু মাথা দুলালো উঠে গেলো ঈশার পাশ থেকে।
৩৫.
ঈশানের বন্ধু নাজিম চাকরির সুবাধে দেশের বাইরে থাকেন।ঈশান বাংলাদেশে আসার পর পড়াশোনার সূত্রে তার সাথে পরিচয় হয়েছিলো।একটা সময় পর নাজিম দেশের বাইরে চলে গেলেও তাদের বন্ধুত্ব হারায়নি বরং অটুট ছিলো।নাজিমের মা আলেয়া নিজের ছেলের চোখে দেখেন ঈশান এবং রাসেলকে নাজিম দেশের বাইরে থাকলেও আলেয়ার সাথে তাদের মুলাকাত সর্বদা ছিলো।
বেশ কয়েকমাস আগে থেকে আলেয়ার পছন্দের পাত্রীর সাথে নাজিমের বিয়ের আলাপ আলোচনা চলছিল।অপেক্ষা ছিল কখন নাজিম দেশে ফিরবে।অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটলো নাজিম দেশে ফিরে মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে সম্মতি জানায়।সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজকের দিনটি এঙ্গেজমেন্ট হিসেবে ধার্য করা হয়।ছেলে পক্ষরা বেশ কয়েক ঘন্টা আগে পৌঁঁছে গেছে মেয়ে পক্ষের বাড়িতে।দুপুরের খাওয়ার শেষ করে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সবাই বসার ঘরে অপেক্ষা করছিলো।ঈশান, নাজিম,রাসেল সবাই এক পাশে সিঙ্গেল সোফায় বসে টুকটাক কথা বলছিলো।বাড়ির বড় সদস্যরা নিজেদের মাঝে কথায় ব্যস্ত।
.
ঈশা অনু শ্রেয়াকে নিয়ে পার্লার থেকে মাত্র ফিরেছে।পেটে ক্ষুধায় ঈশার জান যায় যায় অবস্থা।আগে পরে না ভেবে দ্রুত রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায় মেয়েটা।
” আম্মু খাওয়ার দাও আমার খিদে পেয়েছে।”
” আগে তোর আলেয়া আন্টির সাথে দেখা করে আয়।আসার পর থেকে তোকে অনেকবার খুঁজেছে।”
” এক্ষুনি যেতে হব?”
” তোর কাপ কেক এখনো ফ্রিজে রয়ে গেছে তাদের দেওয়া হয়নি কেক নিয়ে দেখা করে আয়।তারপর।এসে খেতে বসবি।যা যা এক্ষুনি যা।”
খাওয়া দাওয়া শেষ করে ডেজার্ট আইটেম না হলেই নয়।ঈশা তার বানানো কাপ কেক গুলো একটি ট্রেতে নিয়ে এগিয়ে যায় বসার ঘরে।আলেয়ার সাথে তার ভীষণ ভাব জমেছে আর ভাব জমানোর মূল কারণ এই কেক।আলেয়া ভীষণ পছন্দ করেন ঈশার হাতে বানানো কেক।
বসার ঘরে অনেক মানুষের ভীড়।মুরব্বিদের দেখে দ্রুত মাথায় কাপড় টানলো ঈশা।হাতে কেক নিয়ে এগিয়ে গিয়ে একটু জোরে সালাম জানালো যেন সবাই শুনতে পায়।ঈশাকে দেখতে পেয়ে মুহূর্তে স্থানটি নীরবতায় ঢেকে যায়।সবাই উৎসুক চোখে তাকালো সামনে থাকা মেয়েটার দিকে।ঈশার কণ্ঠ কানে ঝংকার তুললো ঈশানের।কলিজার ভেতরটায় মুচড়ে উঠলো সহসা মনে মনে বার বার চাইলো এই মেয়েটি যেন ঈশা না হয়।ঈশান মাথা তুলে তাকালো সামনের দিকে, মেয়েটিকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে আলেয়া।আলেয়াকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি বড্ড খুশি।ঈশা কাপ কেক সেন্টার টেবিলে রাখলো সবাই যার যার ভাগের কেক হাতে তুলে নিলো।আলেয়া এক চামচ কেক মুখে তুলতে ঈশা বলে,
” রূপবান শাশুড়ী কেমন হয়েছে কেক?তোমার জন্য কিন্তু স্পেশাল ভাবে বানানো।”
” আমার বউমার কেক কখনো খারাপ হয়েছে?”
ঈশা আর আলেয়ার খুনশুটি দেখে নিশ্চল হয়ে রইলো ঈশান।নাজিমকে তখন ডেকে নিয়ে গেলেন আলেয়া ঈশার সাথে আলাপ করানো হচ্ছে তার।রাসেল ঈশানের চোখে চোখ রাখলো,ঈশান ঘামছে তার চোয়াল শক্ত হয়ে এসেছে।দ্রুত ঈশানের হাত ধরলো রাসেল এবং স্বগোতক্তি স্বরে বলে,
” প্লিজ ঈশান সিনক্রিয়েট করিস না প্লিজ আমার এই অনুরোধ রাখ।”
ঈশান নিশ্চুপ চোখে তাকিয়ে রইলো ঈশার দিকে তবে ঈশা এখনো দেখেনি তাকে।
” ঈশা তোকে বলেছিলো তার এঙ্গেজমেন্ট হয়েছে তাহলে কী নাজিমের সাথে?”
” জানি না।”
ঈশান দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো তার পিছু পিছু গেলো রাসেল।ঘর থেকে বের হলে সিড়ি, সেই আর সিড়ির সাহায্যে ছাদে যাওয়া হয়।ঈশান গটগটিয়ে ছাদে উঠলো তার পিছু গেলো রাসেল।
ঈশান দেয়াল ঠেসে দাঁড়ালো তার শরীর কাঁপছে।
” এটা হতে পারে না।নাজিমের সাথে ঈশাকে আমি কখনো মেনে নিতে পারবো না।”
” আমি বুঝি না এত মিল কেমনে?রুদবার জন্মদিনে গেলাম সেখানে ঈশা আবার নাজিমের এঙ্গেজমেন্টে এলাম সেখানেও ঈশা।এই ঈশা কি গোটা শহর বিচরণ করে?”
” তুই এক্ষুনি নিচে যাবি ঈশাকে যেভাবে হোক ছাদে পাঠাবি।”
” আরে ও পাত্রী তোর সাথে এখানে দেখলে কে কি ভাববে?”
” আমার এসব ভাবার সময় নেই।”
রাসেল দ্রুত পায়ে বের হলো ঈশা এখন কি করছে দেখা দরকার।তবে তার আগে অনুর সাথে কথা বলা জরুরি।রাসেল অনুকে বেশ কয়েকবার ফোন করে তবে অনু ফোন ধরছে না।ঈশান যে এবার কি করবে ভাবতে গলা শুকিয়ে এলো রাসেলের।দ্রুত ঘরে প্রবেশ করতে অনুর মুখোমুখি হয় রাসেল।
” তুমি এখানে?”
রাসেলের প্রশ্নে হকচকিয়ে উঠলো অনু।রাসেলকে এখানে দেখতে পাবে স্বপ্নেও ভাবেনি সে।
” আপনি এখানে কি করছেন?আপনাকে দাওয়াত করলো কে?”
” হাওয়ায় উড়ে এসেছি।তুমি আমার কাছে এত বড় কথা কি করে আড়াল করলে?”
” কোন কথা?”
” তার আগে বলো ঈশা কই?”
” সে খেতে বসেছে কেন তাকে কি দরকার।”
অনুর হাত টেনে তাকে আড়ালে নিয়ে গেলো রাসেল।স্বগোতক্তি স্বরে বলতে থাকে,
” তুমি জানো না ঈশান ঈশাকে পছন্দ করে?”
” হ্যাঁ জানি।”
” ঈশান যদি ঈশাকে না পায় তবে তোমার আমার মিল কখনো হবে না।এটা অসম্ভব হয়ে যাবে।”
” কিন্তু ঈশা ঈশানকে মোটেও পছন্দ করে না।আমার তো সন্দেহ লাগছে ঈশান ভাই কি আসলে ঈশাকে ভালোবাসে?”
” তুমি আমার বন্ধুর ভালোবাসায় সন্দেহ করছো?”
রাসেল চোখ পাকিয়ে তাকালো।অনু থতমত খেয়ে চুপসে যায়।
” অনু ঈশাকে এক্ষুনি ছাদে পাঠাবে।”
” কিন্তু কেন?”
” ঈশান ওঁর সাথে কথা বলবে।”
” বাড়ির কেউ দেখলে রক্ষে থাকবে না।আমায় মাফ করো আমি এটা করতে পারবো না।”
” কেউ দেখবে না প্লিজ একবার ওদের দেখা করার সুযোগ করে দাও।ঈশাকে মিথ্যা বলে ছাদে পাঠাও।”
” পারবো না।ঈশা জানলে আমায় কুচি কুচি করে ফেলবে আপনার দরদ থাকলে আপনি যা করার করুন।”
অনু মুখে ভেংচে চলে গেলো।রাসেল মাথায় হাত রেখে পাইচারি করতে থাকে। কী করবে সে এই মুহূর্তে?
#চলবে__
” সারাদিন ভালো ভাবে কারেন্ট ছিলো না।ফোনে চার্জ ছিলো অল্প।ফোন চার্জে বসাই আবার কারেন্ট যায় এই নাটকের মাঝে পর্বটা লিখছি।ভ্যাপসা গরমে জীবন যেখানে অতিষ্ঠ সেখানে আমার একটা লাইনো মাথায় আসে না, কি লিখবো কিভাবে লিখবো।পর্বটা খাপছাড়া লাগলে দুঃখিত।গতকালকেও গল্প দিতে পারিনি মাঝে সাঝে না দিলে কেউ বকিয়েন না গরমে কিচ্ছু ভাল্লাগেনা🥹
আমি লিখি অথচ আপনারা মন্তব্য করতে কৃপণতা করেন।ব্যপারটা দুঃখজনক।🥀