#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২১খ]
___________________
বইয়ের পাতা উলটে পালটে বিছানায় বই ছুড়ে ফেললো ঈশা।টেবিলে থাকা চায়ের কাপটা তুলে চুমুক বসালো তৃপ্তি নিয়ে।সন্ধ্যার পর থেকে অনু প্রায় সাতবার কল এবং বেশ কয়েকটা মেসেজ করেছে মেয়েটার কল ধরার প্রয়োজন বোধ করেনি সে।করবেই বা কেন?যাকে নিজের বোনের চোখে দেখেছে সে অনু তাদের সম্পর্কে বিশাল ফাঁক রেখেছে।এই কথা মানতে নারাজ ঈশা শোকে দুঃখে কখনো ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না আসে আবার কখনো তীব্র রাগে সয়ে যায় সবটা।মৃদ্যু বাতাসে জানলার পর্দা উড়ছে ঈশা গিয়ে জানলার পাশে দাঁড়ালো।রাগের মাথায় ঈশান জানলা ভেঙেছিল এরপর পুরো জানলাটায় নতুন করে গ্লাস লাগানো হয়েছে।জানলার কাছে আসতে ঈশানের কথা মাথায় আসে তার।ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠে কিঞ্চিৎ হাসি রেখা।অনু তখন কক্ষের দরজা ঠেলে ভেতরে এসে চেচিয়ে বলে,
” তোর কি হয়েছে?আমার ফোন ধরলি না কেন?”
আকস্মিক ডাকে ঈশা চকিতে তাকালো অনু অভিমানি মুখ নিয়ে বসলো ঈশার বিছানায়।
” কি রে ফোন ধরলি না মেসেজের উত্তর দিলি না এর কারন কী?”
” প্রয়োজন বোধ করিনি।”
” মানে কি বলিস তুই?”
” বাংলায় বলেছি।”
গম্ভীরতা এঁটে জবাব দিলো ঈশা।
অনু সন্দিহান চোখে এগিয়ে এলো ঈশার কাছে জড়িয়ে ধরলো তাকে পেছন থেকে।
” আমার ঈশু কি রাগ করেছে?”
” ছাড় আমায় এসব নাটক বন্ধ কর এবার।”
” তুই এভাবে কথা বলছিস কেন?”
” কিভাবে বলবো?আমি তোকে আমার জীবনের বিশেষ স্থানে রেখেছি তুই আমার বন্ধু,বোন আর সেই তুই এভাবে আমাকে পর করে দিলি।”
” আমি কি করেছি কি বলছিস।এই ঈশা তোর কি হয়েছে।”
” রাসেল আর তোর সম্পর্ক ভালোবাসার তাই না?”
অনু ছেড়ে দিলো ঈশার হাত।চোরা চোখে চাইলো তার দিকে বেশ কয়েকবার।
” ঈশা আমি তোকে বলতে চেয়েছি…”
” অথচ তুই আমার পেটের পিঠের সব কথাই জানতি।আর তুই এত বড় কথা আমাকে বলিসনি।আমাকে শুনতে হয়েছে বাইরের মানুষের কাছ থেকে।এটা তো প্রমান হয়েই গেলো আমি আপন ভাবলেও আমায় আপন কেউ ভাবে না।”
অপরাধবোধে মাথা নোয়ালো অনু।তার দুই চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে।
” ঈশান আর তোর ঝামেলা তাই আমি রাসেলের কথা বলিনি।”
” আমার নাম করে রাসেলের সাথে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলি আবার আমি এতবার ফোন করা স্বত্তেও ফোন তুলিসনি।রাসেল এখন তোর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমি নই সেই ছোট বেলার বন্ধুত্বে এভাবে ফাটল ধরালি।”
” ঈশা প্লিজ তুই রেগে…”
” তোর সাথে আমার এখন কথা বলতে রুচিতে লাগছে।এখান থেকে যা আর তোর রাসেল প্রেমিককে বলে দিস ঈশা তোর জীবন থেকে সরে গেছে এবার জমিয়ে প্রেম করা যাবে।”
অনু শব্দ করে কেঁদে ফেললো জড়িয়ে ধরলো ঈশাকে।
” আমার ভুল হয়ে গেছে ঈশা।প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিস না।এবার থেকে আর এমন ভুল হবে না।”
” আমি মাথায় তুলতেও পারি আবার আছাড় মে রে ফেলতেও পারি।তুই আমার বিশ্বাসে দাগ লাগালি এ আঘাত আমি কোন দিন ভুলবো না।এখান থেকে যা তুই।”
অনু ঈশাকে মানানোর চেষ্টা চালালো তবে ঈশা তার জেদেই অটল রইলো।চোখের পলকে বিশ্বস্ত এক জোড়া বন্ধুত্বের ফাটল ধরলো।
৪৩.
প্রতিদিনের ন্যায় যথা সময়ে ভার্সিটি গেলো ঈশা তবে পাশে ছিল না অনু।ক্লাসেও একাই বসেছে সে।অনু বসতে চেয়েছিলো তবে তাকে দেখে উঠে চলে যায় ঈশা।মাত্র একটা ক্লাস করেই বেরিয়ে যায় ঈশা সবকিছুতে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
দিহান দুজনের দুরত্ব দেখে বেশ অবাক হয় ঈশার পিছু পিছু সে নিজেও মাঠের দিকে চলে যায়।
” কি রে ঈশা তোদের কি হয়েছে?এমন সিন তো আর জীবনে দেখিনি।”
” কিছু হয়নি কি হবে?”
” অনুর সাথে রেগে আছিস কেন?”
” সত্যি করে বল দিহান অনু যে রাসেলের সাথে রিলেশনে আছে এটা কি তুই জানতি?”
” কি!”
চমকে গেলো দিহান।অনুর রিলেশনশীপে অথচ সে জানে না।
” আমি এসব কিছু জানি না।”
” আমিও জানতাম না।আমাদের ঠকিয়েছে সে।বন্ধুত্বের বিশ্বাস ভেঙেছে।”
” এর পেছনেও নিশ্চিয়ই কারণ আছে তুই….”
” ঈশানের সাথে আমার ঝগড়া ব্যস এইটুকুই।ঈশানের সাথে আমার আলাপ সাক্ষাৎ সবটাই তোরা জানিস। আর সে এতটা দিন কি করে লুকিয়ে রাখলো রাসেলের সাথে সম্পর্কের কথা।অনুকে এত আপন ভেবেছি আর অনু…”
গলা ধরে এলো ঈশার।অনুর সাথে এর আগে কখনো এত সিরিয়াস ভাবে ঝগড়া হয়নি।কান্না আড়াল করার বাহানায় ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যায় ঈশা এখানে আর এক মুহূর্ত নয়।
৪৩.
” ঈশামনি কেমন আছো তুমি?আমাকে তুমি ভুলে গেছো।আমার কথা কি একটুও মনে পড়ে না।জানো আমি তোমায় ভীষণ মিস করি তুমি আসবে না আমাদের বাড়ি?”
এক নাগাড়ে কথা বলে থামলো রুদবা।ঈশা নিশ্চুপ শুনছিলো বাচ্চাটার আগ্রহের সাথে বলা পুরোটা বাক্য।কত মিষ্টি এই কণ্ঠ যে কণ্ঠ শুনে নিমিষে মনটা ভালো হয়ে গেলো ঈশার।আকস্মিক ঈশার ঠোঁটে হাসি দেখে সন্দিহান চোখে তাকালো ঈশার স্টুডেন্ট।ঈশা এখন টিউশনিতে আছে তাই মন খুলে কথা বলতে পারছেনা কেননা পড়ানোর সময় টিচারের হাতে ফোন দেখলে গার্জিয়ানদের বিষয়টা দৃষ্টিকটু লাগে।ঈশা গলার স্বরটা চেপে বলে,
” রুদবা মনি আমি তোমার সাথে পরে কথা বলি এখন তোমার মতো একটা মিষ্টি মেয়েকে পড়াচ্ছি।”
” না না ফোন কাটবে না তুমি।আম্মুর সাথে কথা বলো জরুরি কথা।”
রুদবা ফোন নিয়ে দিলো রুমাকে।দুজনের কুশল বিনিময় শেষে মূল কথায় ফিরলো রুমা।
” আজকে আমি আর রুদবা ঘুরতে বের হবো একটু টুকটাক শপিং করবো।আমাদের সাথে যাবে?তোমার সাথে দেখা হয়নি অনেকদিন হতে চললো।”
” পরে দেখা করলে হয় না আপু?তোমরা যেহেতু শপিং করবে নিশ্চয়ই বিজি থাকবে।”
” না থাকবো না তোমাকে আসতে হবে এটা তোমার বোনের আদেশ বুঝলে?”
ঈশা বাধ্য হয়ে সম্মতি জানালো রুমার কথা সে ফেলতে পারে না।টিউশনি শেষে যাওয়াই যায় মন্দ নয়।
বের হওয়ার উদ্দেশ্যে স্টুডেন্টকে আজ তাড়াতাড়ি ছুটি দিলো ঈশা।দুপুরের কড়া রোদটা পড়ে গেছে বিকেলের শান্ত পরিবেশটা বেশ উপভোগ করার মতো।সরু রাস্তা মাড়িয়ে বড় বড় পা ফেলে হাটছে ঈশা।হঠাৎ মনে পড়ে গেলো ঈশানে কথা সেদিন কুকুরের দৌড়ের কথা ভাবতে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।আনমতে হেসে আশেপাশে সর্তক দৃষ্টিতে চোখ বুলিয়ে নিজেকে নিজে পা গ ল উপাধি দিতে ভুললো না।অনেকটা রাস্তা হাটার পর তার সামনে এসে থামলো সাদা চকচকে একটি গাড়ি।এই গাড়ি সে চিনে না তাই সরে দাঁড়াতে জানলার কাঁচ নামিয়ে রুমা বলে,
” ঈশা পেছনে উঠে পড়ো।”
ড্রাইভিং সিট থেকে রুমার হাজবেন্ড রেদোয়ান হাত ইশারায় ঈশাকে হাই জানালো ঈশাও হাত নাড়লো।দরজা খুলে পেছনের সিটে বসে পাশে তাকাতে আকস্মিক চিৎকার করে উঠে ঈশা।ঈশার চিৎকারে গাড়িতে থাকা সকলে চমকে যায়।হুড়মুড়িয়ে সবাই তাকালো ঈশার দিকে।ঈশার পাশে বসে ছিল ঈশান ছেলেটার কানে হেডফোন হাতে মোবাইল দেখা যাচ্ছে গেমস খেলছে সে।ঈশার চিৎকারে ঈশান কান থেকে হেডফোন খুলে রুক্ষ স্বরে বলে,
” আসতে আসতে ষাড়ের মতো চেচাও কেন?গান শুনছিলাম তোমার চিৎকারে গানটাও অফ হয়ে গেছে।”
” আপনি এখানে কী করছেন?”
” তুমি এখানে কি করছো?”
দুজনের তর্কের মাঝে রুমা মুচকি হাসে।রেদোয়ান তাদের পাত্তা না দিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করে। রুমা ঈশা ঈশানের সম্পর্কটা নিয়ে টুকটাক জানে আর তাই তো ঈশার আর ঈশানকে এক করার জন্য তাদের সাথে নিয়ে যায়।ঈশানের মা মাহমুদার ইচ্ছে ঈশাকে ঘরের বউ করার।কথা ছিলো রাসেলের সাথে ঈশার বিয়ের কিন্তু রাসেল যখন চাইছে না তখন ঈশানের সাথে ঈশার বিয়ে হলে মন্দ কী?সেই তো বাড়ির বউ।যদিও রুমা মাহমুদাকে এখনো কিছু প্রকাশ করেনি তবে খুব শীঘ্রই জানিয়ে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সারাটা রাস্তায় ঈশান একটুও কথা বলেনি ঈশার সাথে।ছেলেটা গেমস খেলায় মগ্ন ছিলো তার হাবভাব এমন যেন ঈশা নামের মেয়েটার প্রতি তার কোন আগ্রহ নেই অথচ কে বলবে এই ছেলে কাল দুপুরেও ঈশার হাত তার হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘুরেছে।
গাড়ি থেমেছে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে।গাড়ির বাইরে থেকে রেস্টুরেন্টের দিকে এক পলক তাকালো ঈশা।বাইরে থেকে বেশ লতা গাছ সহ ফুল গাছ দিয়ে ডেকোরেশন করা।বাইরে অনেকে ছবি তুলছে কেউ কেউ রেস্টুরেন্টের বিল্ডিংটায় প্রবেশ করছে কেউ বের হচ্ছে।রুমা রুদবাকে নিয়ে বেরিয়ে যায় এবং ঈশাকে নামতে বলে।রেদোয়ান নেমে রুদবাকে সঙ্গে নিয়ে ভেতরের দিকে যায়।ঈশা নামতে নিলে খপ করে ঈশান তার হাত ধরে নেয়।ঈশানের কান্ডে গরম চোখ করে তাকালো ঈশা ঈশানকে এখানে পাওয়াটাই ছিল তার জন্য অপ্রত্যাশিত।যদি জানতো ঈশান আসবে তবে কোনদিন আসতো না।
” শরীর গরম কেন?”
ঈশান বিচলিত কণ্ঠে কথাটা বললো।ঈশা ছাড়িয়ে নিলো তার হাত।তবে ঈশান নাছোড়বান্দা সে ছাড়লো না বরং ছুঁইয়ে দিলো মেয়েটার গাল কপাল।
” জ্বর আসছে তোমার।”
” আদিখ্যেতা করবেন না আমি ঠিক আছি।”
” তুমি ঠিক নেই।অনুর সাথে কথা না বলে তুমিও ভালো নেই।এত জটিলতার কি দরকার অনু কি বলতে চায় তাকে বলার সু্যোগ দাও।মানুষ মাত্র ভুল সে ভুল করেছে।সবটা ভুলে যাও ঈশা।”
” আপনি একদম আমাদের মাঝে আসবেন না।আমাদের মাঝে কথা বলার অধিকার আপনাকে দেইনি।”
” অধিকারের প্রশ্ন তুলছো?তোমার পরিবারের বাইরে যদি তোমার উপর কারো অধিকার থাকে তবে সেটা একমাত্র আমার।”
” হাসালেন অন্য কাউকে আমার জীবনে আসার সুযোগ দেবো,আমায় নিয়ে ভাবার অধিকার দেবো তবে কোনদিন আপনাকে সেই অধিকার দেবো না।”
” তোমার জীবনে কেউ অধিকার নিয়ে আসার সু্যোগ পাবে?কি ভাবো আমায়?মাঠে যখন নেমেছি গোল দিয়ে মাঠ ছাড়বো এর আগে নয়।”
#চলবে___