#প্রিয়_তুমি
#পর্ব_৪
#লেখিকা_N_K_Orni
— এতে মন খারাপ করার কি আছে? সে তো অনেক সুন্দর দেখতে।
কথাটা শুনে তুবা হাসতে হাসতে বলে উঠল,
— এমনভাবে বলছিস যেন এটা কোনো মেয়ে।
— কেন? ছেলেদের কি সুন্দর দেখতে কথাটা বলা যায় না?
— হ্যাঁ বলা যায়। তবুও খুব একটা ভালো শোনায় না।
নাতাশা এতোক্ষণ চুপ করে ওদের কথা শুনছিল। কিন্তু এবার আর ও চুপ করে থাকতে পারল না। সে বিরক্ত হয়ে বলে উঠল,
— তোরা চুপ করবি? আমি যে এইভাবে মন খারাপ করে বসে আছি। তোরা তো আমাকে কোনো গুরুত্বই দিচ্ছিস না। অন্য কাউকে নিয়ে কথা বলে যাচ্ছিস।
কথাটা শুনে দিয়া অবাক হয়ে বলে উঠল,
— তুই কেন মন খারাপ করে আছিস? আশহাব ভাইয়া ওতোটাও খারাপ না। সে তো সব দিক থেকেই ভালো।
— কিন্তু ও আমার মতো না। আমার ওকে পছন্দ না। কেমন যেন খারুশের মতো।
কথাটা শুনে ওরা দুজন হেসে দিল। ওদের হাসতে দেখে নাতাশা রেগে বলে উঠল,
— হাসবি না তোরা। আমি এই বিষয় নিয়ে খুবই সিরিয়াস।
— আচ্ছা বুঝেছি। যেহেতু তোর আশহাব ভাইয়াকে পছন্দ না, তাহলে তোর কেমন ছেলে পছন্দ?
— কেমন ছেলে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না? গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভালোলাগা বা ভালোবাসা। আমার তো তাকে ভালোই লাগে না আর ভালোবাসা তো অনেক দূরের বিষয়। আর ভালোবাসা না থাকলে বিয়ে করে কি লাভ?
— তাহলে তুই কি চাস?
— আমি তো চাই মুভি বা গল্পের মতো হুট করে কেউ আমার জীবনে আমার জীবনটা রঙিন করে দিয়ে যাক।
কথাটা শুনে ওরা দুজন আবার হেসে দিল। তুবা হাসতে হাসতে বলে উঠল,
— তাহলে তোর এই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। এগুলো কখনো বাস্তবে হয় না। কারণ এটা গল্প বা মুভি না। তোর এই স্বপ্ন দেখতে দেখতেই দেখবি তোর বিয়ে হয়ে গেছে।
দিয়া তখন কিছু বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই তার ফোন বেজে উঠল। সে ফোন হাতে নিয়ে দেখল তার বয়ফ্রেন্ড কল দিয়েছে। তাই সে ফোনের দিকে তাকিয়ে ওদের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
— তোরা কথা বল। আমি একটু আসছি।
বলেই সে বেরিয়ে গেল। সে বেরিয়ে যেতেই নাতাশা তুবার দিকে তাকালো। তুবা নাতাশাকে তার দিকে অন্য রকম ভাবে তাকাতে দেখে বলে উঠল,
— কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
— এভাবে তাকাবো না তো কি করব? সব দোষ তোর। তোর জন্য কালকে এসব হয়েছে।
কথাটা শুনে তুবা অবাক হয়ে বলে উঠল,
— কিন্তু আমি আবার কি করলাম? বিয়ের কথা বলল তোর বাবা আর দোষ দিচ্ছিস আমাকে?
— তারপরও দোষ তোর। তুইই কালকে বিকালে আমার কাছে এসে উল্টাপাল্টা কথা বলেছিস। আর ঠিক তারপরই এমন কিছু ঘটল। তুইও এমন কথা বললি আর তারপর সবকিছু অন্য রকম হয়ে গেল। ওই পর্যন্ত তো সব ঠিকই ছিল। তাই এখানে তোর দোষ।
— কিন্তু আমি কি করেছি? আমি তো শুধু তোর জন্য চিন্তা করছিলাম। তাই তোকে এসব কথা বলেছি। এর সাথে তোর বিয়ের কথা ঠিক হওয়ার কি সম্পর্ক? আর আমি কি জানতাম নাকি যে এমন কিছু একটা হয়ে যাবে? আমি তো এতোদিন ভাবতাম তুই ওনাকে পছন্দ করিস। তাই তোর জন্য আমার চিন্তা হচ্ছিল। এখন জানতে পেরেছি তুই তাকে পছন্দ করিস না। কিন্তু এখন আবার তোর তার সাথেই বিয়ে ঠিক হচ্ছে। এখানে তো সবথেকে বেশি কনফিউসড আমি। আমি বুঝতেই পারছি না কি করব?
একবারে কথাগুলো বলে তুবা জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল।
— তুই চুপ করে থাক। তোর এসব কথা শুনে আমার এখন মাথা ঘুরছে। এবার তো আমিই কনফিউসড হয়ে যাচ্ছি।
— আচ্ছা।
বলেই তুবা চুপ করে বসে রইল। কলেজ শেষে ওরা দুজন বাসায় ফিরে এলো। নাতাশার এখনো মন ভালো হয়নি। সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। পরদিন বিকালে আশহাবের পরিবারের লোক এলো নাতাশার বাসায়। তারা এসেছে এঙ্গেজমেন্টের তারিখ ঠিক করতে। সবাই এলেও আশহাব আসেনি। ওনারা আসার আগের নাতাশা বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। তার মা চেয়েও তাকে আটকাতে পারেনি। কারণ একদিক দিয়ে তিনিও চাননি নাতাশা এই সময়ে এখানে থাকুক। এতে তার আরও মন খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই তিনি তাকে খুব একটা জোর দিয়ে থাকতে বললেননি।
সন্ধ্যার পরে নাতাশা বাসায় ফিরে এলো। সে ইচ্ছা করে একটু দেরি করেই এসেছে। কারণ সে চায়নি ওনাদের সাথে দেখা করতে। তার কাছে এসব খুবই অসহ্য লাগছে। কিন্তু সে এসব কিছু এড়াতেও পারছে না যা তাকে খুবই কষ্ট দিচ্ছে। নাতাশা তার রুমে এসে বসতেই তার মা তার রুমে এলো। সে তার মাকে দেখে বলে উঠল,
— আমি যে ছিলাম না এতে কি বাবা কিছু বলেছেন বা রাগ করেছেন?
— না তেমন কিছু করেনি। শুধু তোর কথা জিজ্ঞাসা করছিল। চিন্তা করিস না আমি এইদিকটা সামলে নিয়েছি।
কথাটা শুনে নাতাশা শুধু মুচকি হাসল। কিন্তু মুখে সে কিছু বলল না। সেটা দেখতে পেয়ে মিসেস রাহা তার কাছে এগিয়ে গেলেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন,
— এই মাস যেহেতু শেষের পথে তাই ওনারা সামনের মাসের সাত তারিখে এঙ্গেজমেন্ট ঠিক করেছেন।
— মানে? সাত তারিখে? এতো তাড়াতাড়ি কেন? সাত তারিখ আসতে তো বেশি দিন নেই। তাহলে এতো তাড়াতাড়ি এঙ্গেজমেন্ট করার মানে কি? তুমি বাবাকে কিছু বলোনি?
— বলে কি হবে? বললেও কিছুই হতো না। তার থেকে ওইদিন এঙ্গেজমেন্টটা করে নে। তারপর বিয়ে হতে অনেক সময় বাকি। হতে পারে ততদিনে অন্য কিছুও ঘটতে পারে। আমি কালকে তোর বাবার কাছ থেকে তোদের কথার বিষয়ে শুনেছি।
— সেটাই তো আমার কথা। ততদিনে যদি আমি অন্য কাউকে পছন্দ করে ফেলি।
— তাহলে আমি নিজে তোর বিয়ে তার সাথে দিব। তোর বাবার কথাও শুনব না। তুই শুধু আমার উপর বিশ্বাস রাখ। আর যদি কাউকে পছন্দ না হয় তাহলে মনে করবি তোর ভাগ্যে আশহাবই লেখা ছিল।
— কিন্তু আমার তাকে পছন্দ না। কেমন যেন? খারুশের মতো থাকে সবসময়। একটু হাসেও না। আমাকে তার সাথে একদমই মানায় না।
— আমি জানি। কিন্তু আমার এর থেকে বেশি এখন আর কিছুই করার নেই। তোর বাবা সবার সামনে এই কথাটা বলে ফেলেছে।
বলেই তিনি বেরিয়ে গেলেন। নাতাশা মন খারাপ করে ওভাবেই বসে রইল।
— আমার সাথেই কেন এগুলো হচ্ছে?
দেখতে দেখতে সময় চলে গেল। আজকে নাতাশার এঙ্গেজমেন্ট। কিন্তু তার মধ্যে এই নিয়ে কোনো অনুভূতিই দেখা যাচ্ছে। সে যে এঙ্গেজমেন্টে খুশি নয় সেটা সবাই জানে এমনকি তার বাবাও। কিন্তু কেউই কিছু করছে না। তুবা নাতাশার কাছে এসে বলল,
— ওইদিন লামিয়া আপুর এঙ্গেজমেন্ট ছিল আর আজকে তোর। কি থেকে কি হয়ে গেল? তুই বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় কষ্ট পাচ্ছিলি। এবার নে তোরই বিয়ে হতে চলেছে।
কথাটা শুনে নাতাশা বিরক্ত হয়ে বলে উঠল,
— তুই কি ভালো কিছু বলতে পারিস না?
— যখন ভালো কিছু হচ্ছেই না তখন ভালো কিছু কীভাবে বলল?
— আচ্ছা তাহলে তোর কোনো কথাই বলা লাগবে না। তুই বরং চুপ করে থাক।
এরপর নাতাশা আর আশহাবের এঙ্গেজমেন্টটা হয়েই গেল। কিন্তু নাতাশা কিছুই করতে পারল না। একটা সময় আশহাব নাতাশার সাথে আলাদা কিছু কথা বলতে চাইলো।
— আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। তবে এখানে নয়, কোনো ফাঁকা জায়গায়।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )