প্রিয়_তুমি #পর্ব_৫ #লেখিকা_N_K_Orni

0
359

#প্রিয়_তুমি
#পর্ব_৫
#লেখিকা_N_K_Orni

একটা সময় আশহাব নাতাশার সাথে আলাদা কিছু কথা বলতে চাইলো। সে নাতাশার কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠল,

— আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। তবে এখানে নয়, কোনো ফাঁকা জায়গায়।

— আচ্ছা।

বলে নাতাশা কিছুক্ষণ ভাবল। তারপর সে আশহাবকে ছাদে নিয়ে গেল। সে জানে যে এই সময় কেউ এখানে আসবে না। কারণ এখন সবাই খুবই ব্যস্ত। ওখানে আসতেই সে আশহাবের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে লাগল,

— এ আবার আমাকে কি বলতে চায়? তাও আবার এমন ফাঁকা জায়গায়।

— কি বলবেন দ্রুত বলুন? বেশিক্ষণ এখানে থাকলে সবাই আমাদের খোঁজ করবে।

কথাটা শুনে আশহাব এবার গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,

— আমি এই বিয়েতে একদমই রাজি নই। আমি শুধুমাত্র বাবার কথা রাখতে আজকে এখানে এসেছি। আমি এই এঙ্গেজমেন্টটা মানি না। আমি এখনো লামিয়াকে ভালোবাসি। তাই ভালো এটাই হবে যে তুমি আমাকে নিয়ে কোনো আশা না রাখো। আর তুমি যেভাবেই হোক এই বিয়েটা ভাঙার চেষ্টা করো। নাহলে তারপর যেটা হবে সেটা তোমার জন্য ভালো হবে না। তোমাকে আগে থেকেই জানিয়ে দিচ্ছি যাতে পরে কোনো সমস্যা না করতে পারো। আর আমার কথা ভালো করে ভেবে দেখবে।

বলেই সে দ্রুত পায়ে ওখান থেকে বেরিয়ে গেল। আর নাতাশা তার যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে রইল। আশহাবের এতোক্ষণ যে কথাগুলো বলছিল সব তার মাথার উপর দিয়ে গেছে। সে কিছু বলার আগেই আশহাব নিয়ে মতো কথা বলে চলে গেছে। সে তার থেকে কিছু শোনার প্রয়োজনও বোধ করল না। নাতাশা এবার রেগে মনে মনে বলে উঠল,

— একে তো এতোদিন শুধু খারুশ ভাবতাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এ সেই থাকে অনেক খারাপও। একজনকে কীভাবে সম্মান দিতে তা মধ্যে একটুও নেই। আর তোকে বিয়ে করার জন্য আমি মনে হচ্ছে ম*রে যাচ্ছি। নিজেকে এতোটাও গুরুত্ব দেওয়া ঠিক না। আমি তো একে কখনোই বিয়ে করব না। যেভাবেই হোক আমি এই বিয়েটা ভা*ঙার চেষ্টা করব।

বলেই সে বড়ো বড়ো পা ফেলে ওখান থেকে বেরিয়ে গেল। বাসায় এসে সে প্রথমেই রুমে চলে গেল। একটু আগের কথা মনে করে সে আবারও আশহাবকে মনে মনে বকতে শুরু করল। তখন ওখানে তুবা এলো। তাকে দেখে সে চুপ করে বসে রইল। তুবা ওর পাশে বসতে বসতে বলে উঠল,

— তুই এখানে বসে আছিস কেন? রুমের বাইরে চল। ওখানে সবাই আছে। এখানে একা একা বসে কি করবি?

কথাটা শুনে নাতাশা কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,

— তোর কি মনে হচ্ছে এখন এসব করার সময়? আমি এখন বাইরে গিয়ে সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলব? ওতোটাও ভালো দিন যাচ্ছে না আমার।

— আমি বুঝতে পারছি তুই এসবে খুশি না। তারপরও…

— তারপরও কিছুই না। ওদেরও বোঝা উচিত জোর করে কখনো কিছু হয় না। আর না তো আমি আমার সাথে জোর করে কিছু হতে দিব।

— আচ্ছা। তোর ইচ্ছা এটা। এখানে না করা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাহলে তুই বিশ্রাম নে। একটা কাজ কর ড্রেস বদলে নে। যেহেতু অনুষ্ঠান শেষ তাই এসব পরে থাকার আর কোনো দরকার নেই। আমি গিয়ে ঘুরে আসি। কিছু দরকার হলে আমাকে বলিস।

বলেই সে বেরিয়ে গেল। সে যাওয়ার পর নাতাশা একবার তার কথাগুলো ভাবল। সে ভাবল তুবা ঠিকই বলেছে। তাই সে দ্রুত গিয়ে জামাকাপড় বদলে নিল। তারপর বিছানায় এসে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল,

— এঙ্গেজমেন্ট হয়েছে তো তাতে কি হয়েছে? বিয়ে হতে এখনো অনেক সময় আছে। এর মধ্যে আমাকেই কিছু একটা করতে হবে। ওই আশহাব শুধু মুখেই বলবে যে সে আমাকে বিয়ে করতে চায় না। কিন্তু পরে তার বাবার কথায় ঠিকই বিয়ে করতে চলে আসবি। কেন বাবাকে কি বলা যায় না যে সে বিয়ে করতে চায় না? আবার বলে সে নাকি লামিয়া আপুকে ভালোবাসে। কিন্তু আপুর তো বয়ফ্রেন্ড আছে। তাই সে একে কখনোই বিয়ে করবে না। ভালো হয়েছে আপু বেঁচে গেছে। কিন্তু মাঝখান থেকে আমি ফেসে গেছি। তাই যেভাবেই হোক এই বি*পদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে।

বলেই সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। এদিকে নাতাশাকে দেখতে না পেয়ে তার বাবা তার কথা জিজ্ঞাসা করতে লাগল। তখন তুবা বলল যে নাতাশার শরীর ভালো লাগছে না। তাই সে রুমে বিশ্রাম নিচ্ছে। নিহাদ সাহেব চেয়েও কিছু বলতে পারলেন না। ওনার মনে হচ্ছিল কেউ ওনাকে ভেতর থেকে বাধা দিচ্ছে নাতাশার উপর আর কিছু চাপানোর জন্য।

পরদিন সকালে নাতাশা আর তুবা প্রতিদিনের মতো কলেজে গেল। দিয়া আসতেই নাতাশাকে দেখে বলে উঠল,

— অভিনন্দন।

নাতাশা বিরক্ত হয়ে বলল,

— হঠাৎ অভিনন্দন কেন?

— কালকে তোর এঙ্গেজমেন্ট ছিল। তাহলে অভিনন্দন দিব না তো কি দিব? এসব ক্ষেত্রে তো মানুষ এসবই বলে।

— তুই সবটা জানিস। তারপরও এমন কথা কীভাবে বলিস? আমি এই বিয়েতে একদমই রাজি নই। তাই তোর আমাকে অভিনন্দন না দিয়ে আমার জন্য দুঃখ পাওয়া উচিত। আমাকে সান্ত্বনা দেওয়া উচিত।

— আচ্ছা আচ্ছা সরি। আমি তো এসব এমনিই বলছিলাম। তুই বরং ভুলে যা। মনে কর আমি একটু আগে কিছুই বলিনি, আমি মাত্রই এখানে এসেছি।

কথাটা শুনে নাতাশা কিছু না বলে তার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আর তুবা নিঃশব্দে হাসতে লাগল। নাতাশা যখনই পাশে তাকালো তুবা সাথে সাথে তার হাসি বন্ধ করে বসে রইল।

— আমি তো এই দুই দিন আসিনি। এই দুইদিনে কি কি হলো? নতুন কোনো স্যার এসেছেন দিয়া?

— না।

— কিন্তু কেন? মায়ান স্যারের ট্রান্সফার হয়ে গেছে বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল। এখনো নতুন কেউ আসেনি? তাহলে ওনার ক্লাস কে নিবে?

— আমি কীভাবে জানব? আসার তো কথা। তবে কেউ না এলে মনে হয় রায়ান স্যারকে ওই জায়গায় দিবে।

কথাটা শুনে তুবা ভ্রু কুচকে বলে উঠল,

— কিইইই! রায়ান স্যার ক্লাস নিবেন?

— হ্যাঁ। কেন তুই খুশি না? তোর তো খুশি হওয়ার কথা। আমি তো জানতাম রায়ান স্যার তোর ক্রা*শ।

— সেজন্যই তো বলছি। উনি ক্লাস নিলে পড়ার থেকে বেশি ওনার দিকে তাকিয়ে থাকা হবে। দেখা যাবে ওনাকে এতো কাছ থেকে দেখে আমি অ*জ্ঞানই হয়ে গেলাম।

ওর এসব কথা শুনে ওরা দুজন হেসে উঠল। নাতাশা এবার হাসি থামিয়ে বলে উঠল,

— তোদের এসব কথা শুনে আমার মনটা একটু ভালো হয়ে গেল। কালকে থেকে ওইসব বিষয় নিয়ে আমি খুবই মন খারাপ করে ছিলাম।

— এখন আর চিন্তা নেই। তুবা থাকতে তুই ফ্রিতে বিনোদন পাবি।

কথাটা শুনে ওরা আবার হেসে উঠল। রাতে নাতাশা তার রুমে ছিল। তখন তার মা তাকে খাওয়ার জন্য ডাকল। সে সেখানে গিয়ে দেখল তার বাবা এখনো আসেননি। একটু পরে তিনি আসতেই মিসেস রাহা বলে উঠলেন,

— আজকে এতো দেরি করে এলে যে?

— কারো সাথে কথা বলছিলাম। খাওয়া শেষে রুমে এসো। তোমার সাথে কিছু কথা আছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে।

— আচ্ছা। কিন্তু কার সাথে এতোক্ষণ কথা বলছিলে?

— পরে কথা বলছি এই বিষয়ে।

— আচ্ছা।

নাতাশা কিছু না বলে চুপচাপ ওনাদের কথা শুনছিল। খাওয়া শেষ করে সে রুমে চলে এলো। তারপর মিসেস রাহা ওনার রুমে গেলেন।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here