প্রিয়_তুমি #পর্ব_৬ #লেখিকা_N_K_Orni

0
440

#প্রিয়_তুমি
#পর্ব_৬
#লেখিকা_N_K_Orni

খাওয়া শেষ করে নাতাশা রুমে চলে এলো। তারপর মিসেস রাহা ওনার রুমে গেলেন। নাতাশা রুমে এসেই শুয়ে পড়ল। তারপর সে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল,

— ইশশ! যদি এমন কিছু হতো যাতে আমার এই বিয়েটা ভেঙে যেত। ওই আশহাব যদি নিজেই বিয়েটা ভেঙে দিত তাহলে তো এখন আমাকে এতো কিছু ভাবতে হতো না। সে নিজে বিয়ে করতে চায় না আবার কাউকে বলতেও চায় না। আবার সে আমাকে হু*মকিও দেয়। কতো ফালতু একটা লোক! বাবাকে এখন কিছু বলেই লাভ হবে না। তাই যা করার আমাকেই করতে হবে।

এসব কথা ভাবতে ভাবতে সে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ল। পরদিন সকালে নাতাশা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে গেল। সে তার মাকে খুঁজতে খুঁজতে রান্নাঘরে চলে গেল।

— আম্মু আজকে কি কিছু আছে? না মানে এতো…

— ওহহ। আজকে তোর ফুফির ছেলে আসবে। কালকে রাতে তোর ফুফি তোর বাবাকে কল দিয়েছিল। তখন বলেছেন যে ওনার ছেলে এখানে এসেছে বেশ কয়েকদিন হয়ে গেছে। আমরা কেউ জানতামই না। কালকে তোর ফুফি ফোন করে তার কথা বলেছেন। তখন তোর বাবা তাকে আজকে এখানে আসতে বলেছেন।

— ফুফি ওনার ছেলের এখানে আসার কথা বড় আব্বুকে না বলে শুধু বাবাকে কেন বলেছেন? উনিও তো ওনার ভাই।

মিসেস রাহা এবার ফিসফিস করে বলে উঠলেন,

— তোর ফুফির সাথে ভাইয়ার খুব একটা ভালো সম্পর্ক নেই। তোর ফুফি রিলেশন করে বিয়ে করেছিল। তাই তারপর ওনার সাথে আর কোনো কথা বললেনি। এজন্যই তো তোর ফুফি কখনো এই বাসাতে আসেননি। এখানে আসলে ভাইয়ার সাথে দেখা হবে এজন্য। তবে তোর বাবার সাথে ফোনে যোগাযোগ ছিল। তুই ছোট থাকতে কয়েকবার ফুফির বাসায় গেছিস। তুই বড়ো হওয়ার পরে আর যাওয়া হয়নি। এখন ওনার ছেলে এখানে এসেছে তাই তোর বাবা তাকে এখানে ডেকেছে।

— ওহহ। তুমি তাকে কখনো দেখোনি?

— সে অনেক ছোট থাকতে দেখেছি। তারপর সে অন্য দেশে পড়তে চলে গেছিল। তাই আর দেখা হয়নি। আমার তো তার নামটাও মনে নেই। কালকে রাতে তোর বাবা একবার নামটা বলেছিল। কিন্তু আমার এখন আর মনে নেই।

— ওহহ। আচ্ছা আমি রুমে যাই। আমাকে তৈরি হতে হবে। আমার কলেজ আছে।

বলেই সে ওখান থেকে বেরিয়ে গেল। যেতে যেতে সে বিরবির করে বলতে লাগল,

— এই পরিবারের যে কতো প্যাচ, উফফ! এই সব প্যাচ একসাথে জুড়ে দিলে মনে হয় জিলাপি হয়ে যেত। কিন্তু আমি এগুলো জুড়তে চাই না কারণ আমার জিলাপি পছন্দ না।

বলতে বলতে সে রুমে চলে এলো। তুবা আর নাতাশা কলেজের ভেতরে আসতেই দিয়া দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। ওদের দেখে দিয়া ওদের কাছে এসে দাঁড়ালো। ওকে দেখে তুবা বলে উঠল,

— কিরে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

— তোদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আমার সাথে একটু চল। আমি আদিবের সাথে দেখা করতে যাব।

— তো যা। তুই যাবি তোর বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে। সেখানে আমাদের নিয়ে যাওয়ার কি দরকার? আমরা ওখানে গিয়ে কি করব?

— চল না তুবা প্লিজ।

তুবা এবার না পেরে বলে উঠল,

— আচ্ছা।

তখন নাতাশা পাশ থেকে বলে উঠল,

— তোরা যা। আমি যাব না ওখানে। তোরা গিয়ে কথা বলে আয় আর দেখা করে আয়। আমি বরং এখানে দাঁড়িয়ে তোদের জন্য অপেক্ষা করছি। তোরা ফিরা আসা পর্যন্ত আমি এখানেই অপেক্ষা করছি।

— আচ্ছা।

— তাড়াতাড়ি আসবি কিন্তু তোরা। নাহলে আমি একাই ক্লাসে চলে যাব।

— আচ্ছা।

বলেই ওরা দুজন চলে গেল। আর নাতাশা ওখানেই দাঁড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর ওখানে তুবা একা ফিরে এলো। তার সাথে দিয়া আসেনি। নাতাশা তাকে একা দেখে বলে উঠল,

— কিরে তুই একা এলি যে? দিয়া কোথায়?

— ও আমাকে একা ফিরে আসতে বলেছে। আর নিজে বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে চলে গেছে। ও আজকে আর ক্লাস করবে না।

— কিই! ও বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে চলে গেছে? তাহলে আমার নোটসের কি হবে? ওকে আজকে আমি নিয়ে আসতে বলেছিলাম। আর ও আমাকে না দিয়েই চলে গেল।

— চিন্তা করিস না। ও সব ক্লাস শেষ হওয়ার আগে আবার আসবে। তখন ওর থেকে নিলেই হবে যাবে।

— কিন্তু ও যদি না আসে?

— আচ্ছা তাহলে ওকে একটা কল দিয়ে দেখ।

— কিন্তু ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে।

— আচ্ছা তাহলে যেতে যেতে কল দে।

— হুম।

বলেই সে ফোনটা বের করে দিয়াকে কল দিল। তারপর ওরা দুজন হাঁটতে শুরু করল। দিয়া সাথে কথা শেষ করে ওরা ক্লাসে গেল। কলেজের বাইরে নাতাশা একা দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে স্পষ্ট বিরক্তির ছাপ ফুটে আছে। সে বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।

— এই দিয়া এতো দেরি করছে কেন? বলল যে তাড়াতাড়ি চলে আসবে। এই তুবাটাও আমার সাথে অপেক্ষা করল না। এতো বললাম কিন্তু তাও শুনল না। ওকে বড়ো আব্বু নাকি আজকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাসায় যেতে বলেছেন। ধুর! আর কতোক্ষণ অপেক্ষা করব। বাসায় যাব? না থাক, এতোক্ষণ যখন অপেক্ষা করেছি। তাহলে আরও কিছুক্ষণ থাকি।

বলেই সে ওখানে দাঁড়িয়েই দিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর দিয়া তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ওখানে এলো। ওকে দেখে নাতাশা রেগে বলে উঠল,

— তুই তো বলেছিলি তাড়াতাড়ি আসবি। তাহলে এতো দেরি করলি কেন? কতক্ষণ ধরে তোর জন্য অপেক্ষা করছি জানিস? আরেকটু দেরি হলে আমি তোকে খেয়েই ফেলতাম।

কথাটা শুনে দিয়ার বয়ফ্রেন্ড হেসে দিল।

— আচ্ছা আচ্ছা সরি।

তারপর নাতাশা দিয়ার কাছ থেকে নোটগুলো নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। নাতাশার বাসার সামনে রিক্সা থামতেই সে নেমে গেল। তাড়াতাড়ি করে আসায় সে নোটগুলো আর ব্যাগের ভেতরে রাখেনি। বাসায় ভেতরে ঢুকতেই কোনো কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে তার হাত থেকে নোটগুলো পড়ে গেল। সে ওগুলো উঠিয়ে দাঁড়াতে গেলে আবার ধাক্কা খেল। কিন্তু এবার আর কোনো বস্তুর সাথে নয় বরং একজন মানুষের সাথে ধাক্কা খেলো। আবার ধাক্কা খাওয়া কারণে তার নোটগুলো আবার পড়ে গেল। এবার সে ওঠানোর আগেই যে ব্যক্তির সাথে ধাক্কা খেয়েছে সেই তাকে উঠিয়ে দিল। ওগুলো নেওয়ার নাতাশা তার দিকে তাকালো। তাকে নোটগুলো দিয়ে লোকটা চলে গেল। নাতাশা তার যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে রইল। আর মনে মনে বলতে লাগল,

— এতো সুন্দর ছেলে এই বাসায় জানতামই তো না। এর আগে তো কখনো একে দেখিনি। নতুন এসেছে মনে হয়। জিজ্ঞাসা করব কোন তলায় থাকে? না থাক।

হঠাৎ তার মনে হলো সে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। তখনই সে দৌড়ে লিফটের সামনে চলে গেল। ওখানে যেতেই দেখল লোকটা লিফটে না উঠে সিড়ি দিয়ে যাচ্ছে। তখন সে বুঝল লোকটা নিশ্চয়ই ফাস্ট ফ্লোরে থাকে। সে আর কিছু না ভেবে লিফটে উঠে গেল। বাসায় যেতেই সে রুমে যেতে নিল। সে কিছুটা গিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে তার মাকে জিজ্ঞাসা করল,

— তোমাদের গেস্ট এখনো আসেনি?

— না।

নাতাশা আর কোনো কথা না বলে রুমে চলে গেল। সে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় বদলে নিল। বেশ কিছুক্ষণ পর তার মা তার রুমে এসে বললেন,

— নাতাশা বাইরে আয়। তোর বাবা তোকে ডেকেছেন।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here