অর্ধাঙ্গিত_পূর্নিমা পার্ট:২

0
302

#অর্ধাঙ্গিত_পূর্নিমা
পার্ট:২
Written ByAyat Mushtarih Ayan
[ লেখকের সম্পুর্ণ নাম ব্যতিত গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ]
.
বাচ্চার শরীর থেকে কালো জাতীয় পদার্থ বের হচ্ছে। আর বাচ্চার শরীরের রঙ কালো থেকে সাদা হচ্ছে।এমন দৃশ্য কতোটা ভয়াবহ তা যে সামনে থেকে দেখে সেই জানে।আবার পাশে থেকে কেউ জোড়ে জোড়ে চেচাচ্ছে।আকাশ কালো চারিদিকে।ভয়ানক একটা ব্যপার।
আয়েশা কি করবে তা ভেবে পাচ্ছে না।সে বাচ্চাকে রেখেও যেতে পারছে না আবার থাকতেও পারছে না।হাজার হলেও নিজের বাচ্চা। ১০মাস পেটে ধরেছে।কিভাবে ফেলে চলে যায়?আবার মিমের চেচানোটা যেনো একটু বেশিই ভয়ের সৃষ্টি করে দিচ্ছে।আয়েশা আর কিছু ভাবতে পারছে না।সে অজ্ঞান হয়ে যায়।এদিকে বাড়ির মানুষ মিমের চেচানু শুনে রুমে আসে।এসে সবার আগে আপুর শ্বশুড় একটা ধমক দেয় মিমকে।মিম হেসে হেসে চুপ করে যায়।এদিকে সবাই বাচ্চার থেকে রঙ ঝড়াটা নিজের চোখে দেখছে।প্রথমে সবাই ভয় পেয়ে যায়।আয়েশার ননদ আয়েশাকে ধরে গিয়ে।আর এদিকে বাচ্চার কি কান্না।শেষ এ আয়েশার শ্বাশুড়ি আরাভকে গিয়ে ধরে।তার শরীর থেকে এমন ভাবে রঙ ঝড়ছে যেমন মনে হচ্ছে কেউ তাকে রঙ করে দিয়েছিলো মায়ের পেটেই।দেখতে দেখতে চোখের সামনে কালো একটা ছেলে ফরসা ধবধবে হয়ে গেলো।কিন্তু সবচেয়ে অবাক করছে মিম।সে এসে আস্তে করে বাচার শরীর থেকে ঝড়া কালো পদার্থ বা রঙ যাই বলি না কেনো তা নিতে ব্যস্ত।
.
সবাই ভাবছিলো মিম কালো রঙ পরিষ্কার করছে।কিন্তু সে যে কি করছিলো তা সেই জানে।আয়েশার জ্ঞান ফিরে।সে বাচ্চা দেখে পুরাই অবাক।এতো যেনো রাজপুত্র। যেখানে তার সন্তান কালো হয়েছিলো ভেবে কষ্ট লাগছিলো এখন খুশিতেই সে কেদে দিলো।আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো বাচ্চা এখন আর দিনে কাদছে না।ফারহান (মানে আয়েশার হাজবেন্ড)বাসায় এসে বাচ্চা দেখে চিনতেই পারছে না।মনে হচ্ছে তার সামনে পৃথিবীর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক জিনিশ রাখা হয়েছে।এই ঘটনা যুক্তি দিয়ে কেউ কিভাবে মিলাবে?
.
.
মিম এর কাজ শেষ। সে বাসা ছেড়ে দিয়েছে।বাসার কেউ আর মিমকে পায় নি।মিম এর গন্তব্য আজ রাত এ সেই কবরস্থানে যাওয়া।সে তার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে আজ থেকে।
.
আয়েশার বাসায় জানানো হয়।আয়ান তার মা সহ রউনা দেয় আপুর বাসায়।তাদের কিছু বলা হয় নি।গিয়ে যানবে কি হয়েছে।জরুরি তলব দিয়েছে আয়েশা।
.
আয়ান আর তার মা বাসায় যেতে বড় ধরনের শক খায় বাচ্চা দেখে যেমনটা সবাই খায়।ঘটনা বলতে বললে আয়েশা সব বলে,কিন্তু মাঝে হঠাৎ থামিয়ে দিয়ে আয়েশার মা প্রশ্ন করে,
-মিম চেচাচ্ছিল মানে?মিমকে কোথায় পেলি তুই?আর কোন মিম?(আম্মু)
-আরে আমাদের বাসায় কাজ করতো না।সেই মিম।সে বললো তোমাদের থেকে নাকি শুনেছিলো আমার বাচ্চা হইছে।তাই নাকি আসছে।দেখতে।(আয়েশা)
-কি? মিম কে সেই কবে থেকে দেখি না।কিরে আয়ান তুই জানিশ কিছু?
-নাতো আম্মু।আমি ও তো মিমকে দেখি নি।(আয়ান)
বোঝা হয়ে গেলো বড় কিছু ঘটছে।কিন্তু সবার মনে এই সন্দেহ বেশিক্ষণ থাকে নি আয়ান বাদে।কারণ সবাই অনেক খুশি।সবার ধারণা বাচ্চার হয়তো কোন রোগ ছিলো।তা নিরাময় হয়ে গেছে।নাহলে বাবা সুন্দর মা সুন্দর বাচ্চা কেনো কালো হবে?কিন্তু আয়ান এর মনে খটকা লেগেই রইলো।সে তার বন্ধু সাব্বিরকে কল দেয়,
.
-দোস্ত একটা মেয়ের খোজ নিতে হয়।(আয়ান)
-কার খোজ লাগবে বল।(সাব্বির)
-আমাদের বাসায় আগে কাজ করতো না?মিম নামে একটা মেয়ে। তুই এসে যে দেখছিলি।
-হে ও কি করলো?
– তুই খোজ নিয়ে জানা আমি বাকিটা পরে বলতেছি।
.
.
রাত ১২টা ৩৮ বাজে ঘড়িতে,মিম কবরস্থানের দিকে হাটছে।তার এতোদিনের অপেক্ষা শেষ হতে যাচ্ছে আজ।তার হাতে পলিথিনের মাঝে এক ধরনের তরল পদার্থ রয়েছে।এ যে সে পদার্থ নয়।এ পদার্থ মেখে যেকোন মৃত বাচ্চার মাঝে শয়তানের আবির্ভাব ঘটানো যাবে।কিন্ত তাকে আজ রাত এ অনেক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখিন হতে হবে।
.
.
-দোস্ত খবর পেয়ে গেছে।(সাব্বির)
-কি খবর পাইলি দোস্ত?(আয়ান)
-আরে সে তো আগে তান্ত্রিক ছিলো।তোদের বাসায় এলো কেমনে?
-কি বলিস?আমাদের বাসায় এতোদিন এক তান্ত্রিক কাজ করছে?কিভাবে সম্ভব?ওকে দেখে তো বুঝা উপায় ই ছিলো না যে ও তান্ত্রিক।
-আরে দোস্ত আমার সোর্স ১০০℅ সিউর খবর দেয়।জানো না আমি জ্বিন পালি।
-আরে আবার তোর ফাফর শুরু হইছে।যা মানলাম ও তান্ত্রিক।এখন ও কই?
-দোস্ত জানি না কিন্তু একটা জিনিশ জানি ও অনেক বড় কিছু করতে যাচ্ছে।ওকে আটকাতে হবে।
-কি বলিস?
-হে রে দোস্ত..
.
.
দুইদিন আগে ইয়ামিন মারা গেছে।তার মায়ের চোখের জল হয়তো এখনো শুকায়নি।জন্মের দুইদিনের মাঝে যদি কোন শিশু মারা যায় তার মায়ের যে কি পরিমানে কষ্ট হয় তা শুধু তার মা ই জানে।বাবার ও কষ্ট হয় কিন্তু মায়ের মতো না।এখানে ইয়ামিনের লাশ শোয়ানো।এই লাশটাই লাগবে মিমের।সে জানে এই লাশটা তুলতে গেলে তার অনেক সমস্যা হবে।তাও তাকে তুলতে হবে।
কবরে প্রথম কোপ শুরু করলো সে।প্রথম কোপের সাথে সাথে সাথে যেনো চারিদিকে তুফান শুরু হয়ে গেলো।বাতাস,অনেক বেশি বাতাস।এতোটা বেশি যে কোন মানুষকে উড়িয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু মিম জানে এই বাতাস মিমের শরীরে লাগবে না।সে তার কাজ চালিয়ে গেলো।কবর যখন অর্ধেক খোড়া শেষ তখন চারিদিক থেকে কেউ থাকে চেচিয়ে বলছে করিস না। এই কাজ করিস না।মরবি তুই মরবি।প্রথমে একক আওয়াজ ছিলো।এখন ঝাকে ঝাকে মানুষ তাকে বলে চলেছে,করিশ না।এমন কাজ করিশ না।মরে যাবি।
.
মিম সব তোয়াক্কা করে কবর খুড়ে যাচ্ছে।অনেকক্ষন পরিশ্রম এর পরে কাজ শেষ হয়।বাশ সরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে যাবে এমন সময় মিমের জামায় হ্যাচকা টান অনুভব করে।সেই টানে অনেকটুকু জামা ছিড়ে গেছে।মিম সেদিকে না ভেবে পলিথিন নিয়ে মুখে টর্চ ধরে সোজা কবরে নামে।পাশে পলিথিন রেখে ইয়ামিনের কাফনের কাপড় সরাতে থেকে মিম।কিন্তু কাফনের কাপড় এই যে টানে কাপড় যেনো শেষ হচ্ছে না আর।সে বাধ্য হয়ে ছুড়ি দিয়ে কাপড় কাটা শুরু করে।এবার কাজ হয়েছে।ধবধবে একটা শিশুর চেহারা ভেসে উঠলো তার কাছে।মাথায় ছুড়ি দিয়ে চাদের মতো চিহ্ন আকতে গেলো মিম।ঠিক তখনি মিমকে অবাক করে একটা হাত ধরে ফেলে মিমকে।মিম চমকে যায়, এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না।সে তাকিয়ে দেখে মারা যাওয়া ইয়ামিন তার হাত ধরে আছে।
.
সে ভয়ে ঘাবড়ে যায়।কি করবে ভেবে উঠার আগেই ঠাস করে মিম এর গালে চড় মারে ইয়ামিন।
আর চেচিয়ে বলতে থাকে,
-কি ভেবেছিলি?আমি মারা গেছি?না রে।আমি মরিনি।বেচে আছি আমি।বেচে আছি।
..
.
#চলবে
.
.
কি মনে হয়?মিমকি তার উদ্দ্যেশ্যে সফল হতে পেরেছে?সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে পরের পর্বে।সাপোর্ট পেলে জলদি নেক্সট পোস্ট হবে ইনশাল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here