অর্ধাঙ্গিত_পূর্নিমা পার্ট:১২ Written By Ayat Mushtarih Ayan .

0
183

#অর্ধাঙ্গিত_পূর্নিমা
পার্ট:১২
Written By Ayat Mushtarih Ayan
.
নিজের ভালোবাসার মানুষের গায়ে আঘাত করতে যে কতোটা কষ্ট লাগে তা যে করে সেই শুধু জানে।জীবনের কতো রাস্তায় আমাদের নামতে হয় তাই না?যেখানে এই মানুষটার সামান্য কিছু হলে রুহি থাকতে পারতো না আজ তাকেই এভাবে আঘাত করলো।প্রাণ পাখি বেড়িয়ে যাওয়ার কথা শুনেছেন?হয়তো রুহির সাথে তাই হয়েছে।সে আয়ানকে আঘাত করার সাথে সাথে পিছনে চলে যায়।পরক্ষনেই আয়ানের সামনে বসে তাকে নিজের কোলে শুয়িয়ে ডাকতে থাকে,
-আয়ান,এই আয়ান উঠো না।আমি সত্যি তোমাকে মারতে চাই নি। আমার ভুল হয়ে গেছে।এই আয়ান উঠো না প্লিজ?
-এটা আপনি কি করলেন?আমাকে মারছিলো মেরে ফেলতো।আপনি ভাইকে কেনো মারতে গেলেন।আমি মরে যেতাম।আমার মতো একজন অনাথের জন্য কিভাবে আপনি তাকে আঘাত করলেন?
রুহি কেদে যাচ্ছে।হঠাৎ ইউসুফের মনে হয় আয়ানের কাছে তো একটা অস্ত্র থাকার কথা যা দ্বারা সে কোন একটা মুহুর্তকে পূনরায় ফিরিয়ে আনা যায়।
-আপু আপনি একটু কষ্ট করে আয়ান ভাইয়ের পকেটে দেখেন কোন অস্ত্র আছে কি না।
-কিসের অস্ত্র।
-আরে আগে আপনি দেখুন আছে কি না।
রুহি আয়ানের পকেটে হাত দেয়।হে কিছু একটা আছে।সেটা বের করতেই ইউসুফ বলে উঠে,
-আমাকে দিন এটা।এই সেই অস্ত্র যা দ্বারা সব ঠিক করা সম্ভব।
-কি ঠিক করবে তুমি?
-ধরেন আপু আপনি যদি এইখানে না আসতেন তাহলে তো আয়ান ভাইয়া আর আমরাও এখানে আসতাম না।
-হে ঠিক।
-আর আমরা এখানে না এলে এতো কিছু হতো ও না।
-হুম।
-তাহলে আমাদের যেভাবেই হোক এখান থেকে বেড়িয়ে যেতে হবে।আর আপনাকে সেই যায়গায় নিয়ে যেতে হবে যেখান থেকে এই জগতে এসেছেন আপনি।
-কিন্তু এতো পাহাড়ার মাঝে কিভাবে?
-আপনি ভুলে যাচ্ছেন আমি জ্বিন।
-কি করতে চাচ্ছো তুমি?
-আমি আয়ান ভাইয়ের রুপ নেই।আর আপনাকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যাই।এরপর যা হবে সব আগের মতো হয়ে যাবে।
-তুমি পারবে এটা করতে?
-আরে দেখেন না আমি কি করি।
.
.
ইউসুফ আয়ানের শরীরে ছুয়ে আয়ানের রুপ নেয়।তাকে জেল এর একটা সাইডে রেখে দেয়।
-আপু একটু খারাপ ব্যবহার করতে হবে আপনার সাথে।
-তোমার যা মনে হয় করো।কিন্তু যেভাবে পারো সব ঠিক করো।
.
রাফইয়াদ সবাইকে বলে গেছে আয়ান যা করতে চায় করতে দিতে।ওকে যাতে কিছু না বলা হয়।কারণ রাফইয়াদ জানতো যে তার অস্ত্র কতোটা শক্তিশালী।আর তা ভেস্তে যাবে না।কিন্তু সবার অহংকার ই তার পতনের মূল হয়ে দাঁড়ায়।
.
ইউসুফ রুহির ঘাড়ে ধরে তাকে নিয়ে যাচ্ছে,
-আজ তোকে মেরেই ফেলবো আমি।
-আয়ান প্লিজ তুমি আমার সাথে এমন করতে পারো না।আমি ভালোবাসি তোমায়।
-তুই কোন কথা বলবি না।তোকে আমি তোর পরিবার এর সামনে নিয়ে মারবো।তুই শুধু অপেক্ষা কর।তোকে মারবো তোর পরিবারকে মারবো।আমার বাবার বিরুদ্ধে যেই যাবে তাকেই মারবো।
-প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেও আয়ান।
.
রুহি আর ইউসুফ এর নাটক সবাই দেখছিলো।সবাই সত্যিই ভাবছিলো যে।আয়ান আর রুহির মাঝে যা হচ্ছে তা বাস্তব।কিন্তু এটা যে ইউসুফ আর রুহির নাটক তা সত্যিই কেউ ধরতে পারলো না।
.
এই এদিকে আয়।(আয়ান রুপি ইউসুফ)
-জ্বি মনিব।
-একে বেধে ফেল আর পৃথিবীর গেট এর দিকে নিয়ে যা।(রুহির দিকে দেখিয়ে)
আয়ান এর কথা কেউ অমান্য করতে পারছে না।তাই সে রুহির হাত বেধে তাকে গেট এর দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
.
.
রাফইয়াদ এখন তার আসিয়ুস রুপ এ ফিরে গেছে।সে আগের মতো সব কিছুতে রাজত্ব করছে।হঠাৎ একদিন তার রাজ্যে এক মেলার আয়োজন হয়।সে সেখানে যাবে।তার মেয়েলি নেশা আগের মতোই জেগে উঠেছে।এটা কল্পনা হলেও রাফইয়াদ তো আসলই।মেলায় গেলে যদি নতুন সুন্দরী মেয়ে পাওয়া যায়।সেই আশায় সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা তার প্রবল।
মেলায় যাওয়ার পর সবাই তাকে দেখে সম্মান করছিলো।হাজার হলেও রাজা।মেলার একদিকে রাফইয়াদ দেখে হুজুর টাইপের কেউ সবাইকে একত্রে ডেকে কি যেনো বলছে।তাকে দেখে এখানের মনে হচ্ছে না।মানুষ মানুষ মনে হচ্ছে।সে কাছে যায়।হে এটা মানুষ।
-আমার রাজ্যে মানুষের আবির্ভাব কিভাবে?(আসিয়ুস/রাফইয়াদ)
-মাফ করবেন হুজুর।আসলে আমি আর আমার মেয়ে এই জগত নিয়ে কিছু গবেষণা করছিলাম।এর মাঝে কিভাবে এখানে এসে গেলাম আমরা জানি না।
-মানে কি এগুলার?কোথায় তোমার মেয়ে?
-তখন সেই হুজুর ব্যক্তি তার মেয়েকে ডাক দেয়।রাফইয়াদ এর প্রথম দেখাতেই মেয়েটাকে এতো ভালো লেগে যা বলার বাহিরে।সে তার সৈন্যদের আদেশ দেয় মেয়েটাকে তুলে নিতে।তার সৈন্যরা তার কথাই মেনে নেয়।সেই হুজুর বার বার চেচাচ্ছিলো কিন্তু কোন কাজ হচ্ছিলো না।রাফইয়াদ শুনবে না।এতো সুন্দর মেয়ে সে আগে দেখেনি।মেয়েটাকে রাজ প্রাসাদে নিয়ে রুমে বন্দি রাখা হয়।এদিকে রাফইয়াদ সেই হুজুর ব্যক্তিকে কিছু না করেই চলে আসে।তার ধারণা ছিলো এই হুজুর আমার কি ই বা করবে।সে রুমে আসে।মেয়েটা প্রাণপণ দিয়ে রাফইয়াদ এর থেকে বাচতে চেষ্টা করে কিন্তু তার শক্তির কাছে হার মানতেই হবে মেয়েটাকে।রাফইয়াদ বরাবরের মতোই কাজ শেষ এ মেয়েটাকে মেরে ফেলতে যাবে।এমন সময় বাহির থেকে চেচামেচির আওয়াজ আসছে।সে বাহিরে এসে দেখে তার প্রাসাদের অবস্থা খারাপ।আলোকিত একটা লোক হাওয়ায় ভেসে রাফইয়াদ এর কাছে আসছে।সে চেচিয়ে চেচিয়ে কি যেনো পড়ছে।রাফইয়াদ এর কাছে এসে সে বলতে থাকে,
-আজ থেকে তুই দুই ভাগ হয়ে যাবি।তোর মেয়ের নেশা ওয়ালী শরীর এক দিকে।আর তুই আরেকদিকে।
.
এসব শুনেই রাফইয়াদ এর মনে পড়ে যায় এটা তার কল্পনা।কারণ এই ঘটনায় সে আগেও পড়েছে।সে দৌড়ে তার কাপড়ের কাছে যায়।তার অস্ত্র সন্ধান করতে হবে।কিন্তু একি,নেই।কাল যে কাপড়ে তার অস্ত্র ছিলো সেখানে আজ নেই।রাফইয়াদ জানে এটা তার কল্পনা। তাই এই হুজুরের শক্তিতে তার কিছুই হবে না।সে হুজুরকে তার শক্তি দিয়ে উড়িয়ে ফেলে দেয়।আর অস্ত্র এবং নিফাদকে খুজতে থাকে।
.
.
আয়েশা জ্বীন এবং মানুষের বাচ্চা।বাবা জ্বীন মা মানুষ।এই খবরটা অনেক আগে থেকেই জানতো।কিন্তু সে এটা আয়ানকে বলে নি।তার মা কেও জানতে দেয় নি যে সে জানে সব।কিন্তু শক্তি পাওয়ার পর থেকেই তার নাটক করতে অনেক ভালো লাগে।তার আশেপাশে কি হচ্ছে সবই সে বুঝতো কিন্তু ভয় পাওয়ার নাটক করতে তার খুব ভালো লাগতো।আয়েশার শক্তির ব্যাপারে পৃথিবীতে থাকা শয়তানী শক্তিও বেশি জানতো না।কারণ সে যে রাজা রাফইয়াদদের সন্তান এটা তো জানার উপায় নেই।সব শয়তানরা জানতো রাজা আসিয়ুস কাউকে ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করে ফেলে।কিন্তু জ্বীনদের সেই রাজ্যে রাজা আসিয়ুসের সাথে কি হয়েছিলো তা কেউ জানে না।কারণ আয়েশার নানা ভাই নিজের জীবন উৎসর্গঃ করে দেয় নিজের মেয়ের সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে।সে এতো শক্তি উৎপন্ন করে যে আশে পাশের সকল জ্বীন শয়তান সবাই মারা যায়।তাই কেউ জানতেই পারে না রাজা আসিয়ুসই রাফইয়াদ আর নিফাদ।সবাই শুধু তাদের রাজ্যের ব্যাপারেই জানতো।
.
.
রাজা আসিয়ুস তার শক্তি ব্যবহার করে সেই চোরকে ধরতে পেরেছে।কিন্তু নিফাদ আসে পাশে নেই।সে ভুলেই গেছিলো এটা শুধু তার কল্পনা।নিফাদ যে আলাদা কল্পনা করতে পারে এটা তার মাথায় ছিলো না।এখন তার আগে একবার নিজের রাজ্যে যাওয়া উচিত।আর নিফাদকে ফিরিয়ে আনা উচিত।নাহয় সব ভেস্তে যাবে।আবার যদি এর উলটা হয়?যদি আবার এই কল্পনায় এসে সে বাস্তবতায় না ফিরে যেতে পারে? এখানে যদি তার পড়ে থাকতে হয় তখন কি হবে?এক বড় দ্বিধা দন্দে পড়ে যায় রাজা আসিয়ুস।হঠাৎ তার চারপাশ কাপতে থাকে।তার মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা শুরু হয়।সে বুঝতেছিলো না কি হচ্ছে।এসব ভাবার মাঝেই তার মাথায় পিছন থেকে ঠাস করে এসে কেউ আঘাত করে।
.
.
#চলবে
.
.
দিনে দুই পর্ব দৈনিক ই পাবেন ইনশাল্লাহ।সারপ্রাইজ পর্বে তেমন রেসপন্স না পেয়েও এই পর্ব রাতেই দিলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here