গল্পের নাম: অর্ধাঙ্গিত_পূর্নিমা পার্ট:১ Written By Ayat Mushtarih Ayan

0
889

আমার বড় বোনের বাচ্চার জন্ম হয় আজকে।কিন্তু বাচ্চাটা অস্বাভাবিক রকমের কালো।এই জিনিশটা অবাক করার মতোন কিছু না।কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো,৪ মাস আগে আমাদের বাসার কাজের মেয়েটা বলেছিলো,
-ভাবির জন্মের আগে এতো খুশি যে হচ্ছেন,কালা বাচ্চা কি পছন্দ হইবো আপনাগোর?
.
মিমের(মানে কাজের মেয়েটা) শুনে সবাই হাসতে হাসতে শেষ।দুলাভাই সুন্দর আপু ও দেখতে সুন্দর। তাহলে বাচ্চা কেনো কালো হবে?
আম্মু তখন একটু ধমক দিয়েই বলেছিলো
-এই অলক্ষণে কথা মুখে আনবি না বলে দিচ্ছি। আমার মেয়ের সন্তান চাদের মতো হবে।
সেও দাতে দাত চেপে হাসতে হাসতে বলে,
-হ আম্মাজান জানি তো।সে চাদের মতোই হইবো।কিন্তু কালা চাঁদ।এই বলে ফিক করে হাসি দিয়ে চলে যায়।
.
.
আজ প্রায় চার মাস পর যখন সত্যি সত্যি কালো বাচ্চার জন্ম হলো আমরা সকলেই অবাক না হয়ে পারছি না।
তাহলে কি এই সন্তানের বাবা অন্য কেউ?ভাইয়া না?
কথাটা মাথায় আসতেই নিজেকেই ধিক্কার জানাচ্ছি যে আরে নিজের বোনের নামে এসব কি ভাবছি?
.
আমার ভাবনার রেশ না কাটতেই আম্মু ডেকে উঠে,
-এই আয়ান,কি হলো?ভাগ্নে কালো হইছে তাই বলে কি আদর করবি না?
আমি ও সব ভাবনা বাদ দিয়ে তার কাছে যাই।
.
পরিবারে কারো কালো বাচ্চা হওয়ায় কোন সমস্যা নেই।আমাদের পরিবার কিংবা দুলাভাই এর পরিবার কারোই মন মানসিকতা এতোটা খারাপ না।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অন্য যায়গায়।যা শুরু হয় কিছু দিন পর থেকে,
.
আপুর বাচ্চার নাম রাখা হয় আরাভ,আপুর নাম যেহেতু আয়েশা তো আপুর নামের সাথে মিল রেখেই তা রাখে।আরাভ দিনের বেলা চেচিয়ে কাদতো।কোন মতেই তাকে থামানো যেতো না।মনে হতো কাদতে কাদতে বুঝি তার প্রাণ পাখিটা বেরিয়ে গেলো এই।
কিন্তু রাত হলেই সে কি খুশি।হাসতো শুধু।আপু যখনই তাকে ঘুম পাড়াতে যেতো রাত এ সে ঘুমিয়ে যেতো।এমন কান্ড দেখে সবাই অবাক।আবার রাত এ যদি আপু বা ভাইয়া কারো ঘুম ভাংতো তাহলে সে দেখতো আরাভ তাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। আপু ও ভাইয়া একই রাতে এই ঘটনা দেখেছে।কিন্তু কেউ কাউকে বলে নি। নিজের মতো বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে তারাও শুয়ে পড়ছে।
.ভয়ানক ঘটনা ঘটে দুইদিন পর।,সারাদিন কান্না শেষ এ যখন আপু ও ভাইয়ার এক সাথে ঘুম ভাংগে।আপুর মনে হচ্ছে আরাভ আপুর দিকে তাকিয়ে হাসছে,আর ভাইয়ার মনে হচ্ছে আরাভ তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।তারা দুজন ই যখন বুকে হাত রাখে তখন তারা বুঝে তারা দুইজন ই সজাগ। এখন তারা আরাভ এর কথা একে অপর কে বললে দুইজন ই থতমত খেয়ে যায়।
.
এক কবিরাজ ডাকা হয় বাসায়।কারণ এতোক্ষনে সবার বুঝা হয়ে গেছে হয়তো খারাপ কিছু ওর উপর ভর করেছে।কিন্তু কবিরাজ বাড়িতে প্রবেশ করতেই দৌড়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।যাওয়ার আগে বলে যায়,এই বাচ্চা সাদা হওয়ার আগে ওকে মেরে ফেলুন।
.
.
কবিরাজ এর কথা শুনে আপুর শ্বশুড়বাড়ির সবাই রাগ করে।কারণ কালো বাচ্চা কিভাবে সাদা হবে।আর বাচ্চাকে হত্যা করতে বলছে।কি এমন ব্যাপার।
.
.
আরাভ এর জন্মের পর থেকে মিম কে কোথাও দেখা যাচ্ছিলো না।তো হঠাৎ একদিন মিম এসে হাসির আপুর শ্বশুড়বাড়ি।আপুর ননদ তাকে যখন জিজ্ঞেস করে কে আপনি,তখন সে উত্তরে বলে আপুর সাথে দেখা করতে আসছে।
.
আপুর ননদ আপুকে ডেকে দেয়।আপু মিমকে দেখেই জিজ্ঞেস করে,
-কি রে এতোদিন পর তুই?আর এই বাসায় কেনো?
-আফা শুনলাম যে আপনার নাকি বাচ্চা হইছে। তাই দেখতে আইলাম।
-অহ আচ্ছা।আয় দেখে যা।
এর পর মিম আরাভ কে দেখে।আরাভ তখন ও কাদছিলো।কিন্তু অবাক করে দিয়ে প্রথম বারের মতো আরাভের দিনের কান্না বন্ধ হয়।সবাই অবাক।মিম আপুর উদ্দেশ্যে তখন বলে,আফা আমি কি আজ থাকতে পারি?
যেহেতু মিম আসায় আরাভ চুপ হইছে তাই মিম কে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।দুপুরের দিকে আকাশ কালো করে আসে চারিদিকে।আপু আরাভের গা মুছে দিচ্ছিলো নেকড়া ভিজিয়ে। কিন্তু অবাক করে দিয়ে,যতোই মুছছে আরাভ এর শরীর সাদা হচ্ছে।কালো রঙ ধুয়ে নিচে পড়ছে।আপু ভয়ে আতকে উঠে।
তখন ই পাশ থেকে মিম চেচিয়ে হেসে উঠে।
এসে গেছে,সে এসে গেছে।এখন রাজত্ব আমাদের হবে।এসে গেছে সে।
.
.
#চলবে
গল্পের নাম: অর্ধাঙ্গিত_পূর্নিমা
পার্ট:১
Written By Ayat Mushtarih Ayan
.
.
গল্পে সাড়া পেলে নেক্সট জলদি দিবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here