#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 31
🍁🍁🍁
চৌধুরী বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সিমথি আর আদি। বাড়ির ভেতরে আদিবারা হাস্যজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তিন্নি অনেকক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর আদির মা এসে সিমথিদের বরণ করে ঘরে তুলে। সিমথি-আদিকে সোফায় বসিয়ে সবাই এদের চারপাশে ঘিরে আড্ডা শুরু করে। সিমথি চুপচাপ নীরবতা পালন করছে। মনটা এখনো খারাপ। আসার সময় সায়ন&ইফাজ কারোর সাথে দেখা হয়নি সিমথির। প্রায় মিনিট বিশেক পর আদির চাচী-কাকিরা এসে সবাই কে জোর করে ফ্রেশ হতে পাঠায়। আয়াশরা চেঞ্জ করে এসে আবারো সোফায় বসে পড়ে।
আদির বাবা : অনেক ধকল গেছে আজ সারাদিন। এবার সবাই ঘুমাতে যা। আবার কাল আড্ডা দিস।
রিক : তোমরা গিয়ে ঘুমাও আঙ্কেল। আমরা এদের রুমে দিয়ে আসি।
রিকের কথায় বড়রা সায় দিয়ে যে যার রুমে চলে যায়। এখন আর ছোটদের মাঝে থেকে লাভ নেই। মেহের সিমথিকে নিয়ে আগে আগে আদির রুমে চলে যায়। আদি উঠে একটা হাম্মি তুলে। আয়াশ দুষ্টু হেসে বলে উঠে,,,,
আয়াশ : কি ভাই তোকে দেখে অনেক টায়ার্ড লাগছে। তাহলে আজ আর বাসর করে লাভ নেই তুই বরং আমাদের সাথে ঘুমিয়ে পড়।
আয়াশের কথায় সবাই মুখ টিপে হেসে আদির দিকে তাকায়। আদি ভ্রু কুঁচকে আয়াশের দিকে তাকায়।
আদি : বিয়ে করেছি কি বউ রেখে তোদের সাথে ঘুমাতে। আমাকে কি তোদের ‘গে ‘ মনে হয়।
আদির কথায় আয়াশরা অট্টহাসি তে ফেটে পড়ে।
রিক : না না। তুই গে হলে কি আর আমাদের এতো মিষ্টি বোনটাকে তোর হাতে তুলে দিতাম।
আয়াশ : আমাদের বোনের কথা ভেবেই বলছি আজ আর তোর রুমে গিয়ে কাজ নেই।
আদি : আমি এখন রুমে না গেলে তোদের বোন ভিটামিন আদরের অভাবে শুকিয়ে যাবে। আমি হলাম আবার মহান ব্যক্তি। বিয়ে করা বউকে শুকানোর হাত থেকে বাঁচানো স্বামী ধর্ম।
আয়াশ : তোর কপাল ভালো সিমথি আপাতত কনে সেজে নীরব হয়ে গেছে নয়তো তোর এই লাজ লজ্জাহীন কথা শুনলে তোর খবর করে ছাড়তো।
আদি : আসলেই আমার বাঘিনী হুট করেই কেমন বিড়াল হয়ে গেলো না। বেচারী কষ্ট পাচ্ছে। ওর কষ্ট কমাতে হলেও আমাকে রুমে যেতেই হবে নাহলে তোর বোনটা কেঁদে কেঁদে জ্ঞান হারাবে।
রিক : আমাদের বোনের দোষ না দিয়ে নিজের কথা বল।
ইশান : আসল কথা বল তোর দেরী সহ্য হচ্ছে না।
আদি : তোর বড় হয় আমি হারামি।
শাওন : আরে আদি ভাই আমার তোকে অনেকক্ষণ ধরেই সাপের মতো মোচড়াতে দেখছি আমি। একটু সবুর করো।
শাওনের কথায় সবাই আবারো হেসে উঠে। আদি বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে নেই।
আদি শাওনের রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু রুমে সামনে আসতেই চোখ ছানাবড়া। সবগুলো দরজা আটকে ওর দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলাচ্ছে।
আদি : কি ভাই কোনো এড হচ্ছে নাকি ক্লোজআপের দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো। ছবি তুলে কি সোস্যাল মিডিয়ায় ছাড়বি।
আদির কথায় সবগুলোর মুখ ভোঁতা করে আদির দিকে তাকায়।
তুহা : তোর মুখে জীবনে ভালো কথা নেই।
আদি : মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে বউ কে হাত করবো তোদের সাথে এতো মিষ্টি কথা বললে তো ডায়াবেটিস হবে।
আদিবা : ধ্যাতত ভালো লাগে না।
আদি : ভালো না লাগলপ সরে দাঁড়া। এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো। ভেতরে যাবো আমি।
শাওন : মেহের বেবী চলো আমরা রুমে যায়। আমার ঘুম পাচ্ছে
মেহের : আহ মরণ আমার। ঘুম পাচ্ছে তো যাও না।
শাওন : তুমি না গেলে আমি কিভাবে যাবো।
মেহের : এমনভাবে বলছো যেনো আমায় ছাড়া তোমার ঘুম আসে না।
শাওন : হক কথা। ওইয়ে একটা গান আছে না, তোমায় ছাড়া ঘুম আসে না মা। ঠিক তেমনই তোমায় ছাড়া ঘুম আসে না বউ। শাওনের কথায় আদিরা সবাই হেসে উঠে।
মেহের কটমট দৃষ্টিতে শাওনের দিকে তাকায়।
শাওন : আহা সোনা বউ ছোট দের মাঝে আমাদের কি কাজ। তার থেকে চলো আমরা গিয়ে আমাদের কাজ করি চলো চলো।
মেহেরকে কিছু বলার না দিয়েই শাওন মেহের কে টেনে নিয়ে চলে যায়। বাকিরা হাসতে হাসতে দরজা ছেড়ে ওদের যাওয়ার দিকে তাকায়। আদি এই ফাঁকে আদিবাকে টান দরজার পাশ থেকে টান দিয়ে সরিয়ে রুমের ভেতর ঢুকে দরজা আটকে দেয়। পুরো কাহিনী বুঝতে পেরে বাইরে সবাই চেঁচিয়ে উঠে।
আয়াশ : শা’লা দরজা খোল। হা’রা’ মি দরজা খোল বলছি।
রিক : তুই এতো বড় প্রতারণা করলি। একবার হাতের কাছে পাই তোর একদিন কি আমাদের যতদিন লাগে।
আদি : যাহ বাবা আমার কি দোষ। তোরা জায়গা দিলি আমি চলে আসলাম।
আয়াশ : বাসর করার আগেই কারেন্ট যাইবো গা দেইখা নিস। তুই যতবার সিমথির দিকে এগিয়ে যাবে ততবার তের ইয়ে পাইবো। বজ্জাত পোলা
আয়াশের কথা শুনে আদি দরজা ওপাশে হাসতে শুরু করে।
আদিবা : এ্যাহহহহ ভাইয়া। পাকিস্তানের মতো পেছন থেকে মারলি। তোদের আর বের হতেই দেবো না। থাক আটকে।
ইশান : ছ্যা ছ্যা ছ্যা ভাই তোর বাসর করার এতো তাড়া আগে কইবি তো।
আয়াশ আর রিক রাগে কিড়মিড় করে দরজার দুইটা লাথি লাগায়। অতঃপর সবাই মিলে আদিকে বকতে বকতে চলে যায়। আদি হাসতে হাসতে পেছনে তাকিয়ে চমকে যায়।
আদি : মাগো।
আদির চেঁচানোতে সিমথির কুঁচকানো ভ্রু আরো কুঁচকে যায়। বোকা বোকা গলায় শুধায়,,
সিমথি : কি হলো
আদি : এভাবে ভূতের মতো তাকিয়ে আছো কেনো। ভয় পেয়েছি তো।
সিমথি : বাহ বাহ এখন আমাকে ভূত ও লাগে। কথা নাই আর৷
আদি : কি আজব।
সিমথি : কি আশ্চর্য
আদি : সিয়াজান।
সিমথি : সিয়াজান।
আদি : রাগ তুলবা না।
সিমথি : রাগ তুলবা না।
আদি : মজা করছো আমার সাথে।
সিমথি : মজা করছো আমার সাথে।
আদি থেমে যায়। ঠোঁট কামড়ে সিমথির দিকে তাকায়। আদির দেখাদেখি সিমথিও ঠোঁট কামড়ে আদির দিকে তাকায়। আদি ভ্রু কুঁচকে সিমথির দিকে তাকায় ঠোঁট ছেড়ে। সিমথিও সেইম কাজ করে। আদি এবার ঘাড় বাকিয়ে বাঁকা হাসে।
আদি : আমাকে জ্বালানো হচ্ছে। জ্বালানো কাহাকে বলে ইহা কত প্রকার ও কি কি এখন আপনি বুঝিতে পারিবেন ( মনে মনে)
আদি গিয়ে বেডে বসে পা ঝুলাতে শুরু করে। আদির দেখাদেখি সিমথিও সেইম কাজ করে। আদি মুখ টিপে হাসি আটকে মাথার চুলগুলো নিয়ে খেলতে শুরু করে। সিমথিও নিজের চুল নিয়ে সেইম কাজ করে। এবার আদি উঠে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবির বোতম খুলতে শুরু করে। অতঃপর একটানে পাঞ্জাবি খুলে ফেলে। আদির দেখাদেখি সিমথি শাড়ীর আঁচলে হাত দিতেই চমকে যায়। ফট করে আদির দিকে তাকায়। আদি ঠোঁট কামড়ে হাসছে। সিমথি নিজের ভুল বুঝতে পেরে মনে মনে নিজেকে বকতে শুরু করে। জিভে কামড় লাগিয়ে আড়চোখে আদির দিকে তাকায়।
আদি : কি হলো এবার শাড়ী খুলো।
আদির কথায় সিমথি লজ্জায় মুখ উল্টো দিকে ঘুরিয়ে নেয়। আদি এবার শব্দ করে হেসে দেয়। সিমথি চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়। সিমথির রিয়াকশন দেখে আদি হাসতে হাসতে বেডে শুইয়ে পড়ে। সিমথি রেগে পাশ থেকে কুশন নিয়ে আদিকে মা’র’তে শুরু করে।
সিমথি : অসভ্য একটা।
আদি : আরে আরে কি করছো। ( হাসতে হাসতে)
সিমথি : তাহলে হাসি থামান।
সিমথির গাল ফুলানো দেখে আদির হাসি আরো বেড়ে যায়।
সিমথি : আদিইইই ( হালকা চেঁচিয়ে)
আদি : আচ্ছা আচ্ছা সরি। এবার তো থামো। ফ্রেশ হবো
সিমথি থেমে যায়। আদি শোয়া থেকে উঠে কাবার্ড থেকে জামা-কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সিমথি আগে থেকেই ফ্রেশ হয়ে গিয়েছিলো তাই এখন আর ফ্রেশ হতে হয়নি। সিমথি আদির রুমের চারপাশ কুটকুট করে দেখতে থাকে। একপর্যায়ে কাবার্ডের দিকে চোখ যেতেই দেখে কাবার্ড খোলা। সিমথি ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে কাবার্ডের দরজা লাগাতে গিয়ে কি মনে করে খুলে ভেতর টা দেখতে থাকে। কি দেখছে সিমথি নিজেও জানে কাবার্ডে তো জামা-কাপড়ই থাকবে। হঠাৎ একটা ডায়েরির দিকে চোখ যায়। সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। এটা কার ডায়েরি। আদির নয়তো। কি মনে করে ডায়েরি টা হাতে নেই। অতঃপর পৃষ্ঠা উল্টায়। পৃষ্ঠা উল্টাতেই চোখের সামনে নিজের হাস্যজ্জ্বল মুখ দেখে থমকায়। নিচে কিছু লেখা আছে দেখে সেটা পড়তে শুরু করে। একে একে প্রতিটা পেজ পড়ে। সিমথির মুখটা থমথমে হয়ে যায়। ডায়েরি আবারও আগের জায়গায় রেখে চুপচাপ বেডে গিয়ে বসে। এতোগুলো বছর শুধু শুধু এতো রাগে-অভিমান পুষে রাখার জন্য কতগুলো দিন চলে গেলো। ভাবতেই সিমথির কান্না পাচ্ছে। আদি এসে সিমথিকে এভাবে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ভেজা চুলগুলো ঝেড়ে সিমথির পাশে এসে বসে।
আদি : কি হলো সিয়াজান। নামাজ পড়বে তো।
আদির কথায় সিমথি মায়াবী চোখে তাকায়।
সিমথি : হুমম।
অতঃপর দুজনে নামাজ আদায় করে নেয়। সিমথি গিয়ে পুনরায় বেডে বসে পড়ে মুখভার করে। আদি এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে সিমথির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
আদি : সিয়াজান কি হয়েছে তোর। মুখ ভার কেনো। বাড়ির কথা মনে পড়ছে। কথা বলবে ওদের সাথে।
সিমথি : নাহ রাত হয়েছে। চলুন ঘুমায়
আদি : আগে বলো কি হয়েছে।
আচমকা সিমথি আদির কোমড় জড়িয়ে ধরে। আদি চমকে যায়।
সিমথি : সরি।
আদি : কেনো।
সিমথি : ফর এভ্রিথিং।
আদি : হঠাৎ আজ সরি কেনো৷
সিমথি : এভাবেই।
আদি : বুঝলাম চলো ঘুমায় এখন।
সিমথি : এখন ঘুমাবো।
আদি : তো কি করবো।
সিমথি : ক কিছু না। ঘ ঘুমাবোই তো ঘুমাবো।
সিমথি হামি তুলে শুয়ে পড়ে। আদি হেসে লাইট বন্ধ করে অন্যপাশে শুয়ে পড়ে। সিমথি পাশ ফিরে আদির দিকে তাকায়। আদির দৃষ্টি সিমথির দিকেই। আবছা আলোয় দুজন বেশ অনুভব করছে এদের দৃষ্টি একে অপরের মাঝে নিবদ্ধ। নিস্তব্ধতায় ঘেরা রুমে কেবল দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দই ভেসে আসছে। দুজনই চোখ বুঁজে নেয়। বেশকিছু ক্ষণ পর সিমথি উঠে বসে। আদি চোখ খুলে তাকায়।
আদি : কি হলো উঠলে কেনো।
সিমথি : আপনি এমন কেনো আদি।
আদি : কেমন
সিমথি : আমি আপনাদের বাড়িতে আজ নতুন আমার ঘুম আসবে না এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি আমাকে রেখেই ঘুমাচ্ছেন কেনো।
আদি ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। সিমথির হাত ধরে হেঁচকা টানে নিজের বুকের উপর ফেলে। সিমথি চমকে আদির দিকে তাকায়। আদি সিমথির কপালে চুলগুলো কানে উল্টোপিঠে গুঁজে সিমথির মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে।
আদি : এবার ঘুমাও।
সিমথি মুচকি হেসে দুহাতে আদিকে জড়িয়ে ধরে।
________________
সকাল সকাল প্রতিবেশীদের সামনে সিমথি মাথা নিচু করে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগে নিচে নামতেই সিমথির চাচী এনে ওদের সামনে বসিয়ে দেয়। প্রতিবেশী তিনজন মহিলা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকিয়ে আছে। সিমথি অস্বস্তি নিয়ে আড়চোখে আদিবাদের দিকে তাকাচ্ছে। আদি এখনো ঘুমাচ্ছে। সিমথি ভেবে পায়না কাল সারারাত ঘুমিয়ে ও কিভাবে এতোক্ষণ ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ ওদের মধ্যে একজন মহিলা বলে উঠে,,,,
_ তা মেয়ের গায়ের রঙ টা আরেকটু ফর্সা হওয়া দরকার ছিলো। নাকটা ও কেমন বোঁচা যেনো।
প্রথম জনের কথার সাথে বাকি দুজনও সহমত হয়। দুজনের মধ্যে একজন বলে উঠে,,,
_ তা মেয়ে কি রান্নাবান্না জানে। নাকি সারাদিন শুধু গুলাগুলিই করবে।
_ দেখে তো মনে হয়না রান্নাবান্নার কাজ বা ঘরের কাজ জানে।
_ চুলগুলোও ছোটই।
_ আর হাইটও আদির থেকে শর্ট।
_ তা আদির মা মেয়ের চরিত্র কেমন জেনে নিয়েছো তো।
_ মনে তো হয় না ছেলের বউয়ের হাতে রান্না খেতে পারবে বলে
চলবে,,,,,,
( পরবর্তী পর্বে পাল্টা জবাব পাবে সবাই । কেমন হয়েছে জানাবেন। ধন্যবাদ)