মিশেছো_আলো_ছায়াতে #Writer_Sintiha_Eva #part : 32

0
278

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 32

🍁🍁🍁

_ মেয়ের মা-বাবা কি শিক্ষা দিয়েছে। শুনেছি ছোটবেলায় নাকি মারা গেছে। তা মা-বাবা ছাড়া মেয়ের চরিত্র আর কতই ভালো হতে পারে।

ড্রয়িংরুম জুড়ে পিনপন নীরবতা। আদির মা- চাচীরা হতভম্ব দৃষ্টিতে সিমথি আর মহিলাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সিমথির পাশে মেহেরসহ আয়াশরা সবাই দাঁড়িয়ে আছে। সবার মনে রাগ থাকলেও চোখে ভয়। সিমথির দৃষ্টি এখনো মেঝেতে। হাবভাব দেখের বোঝার উপায় নেই সিমথির মনে কি চলছে। আদি কেবলই সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো। কিন্তু প্রতিবেশী মহিলাদের কথায় সিঁড়ির কাছেই ওর পা থেমে যায়। রাগান্বিত দৃষ্টিতে মহিলাদের দিকে তাকায়। আদি কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে নিতেই সিমথি আলতো হেসে মহিলাদের দিকে মাথা উঁচু করে তাকায়। সিমথির মুখের ভাবভঙ্গি দেখে সবাই কেঁপে ওঠে। ঠোঁটের কোণায় হাসি থাকলে ও ফর্সা মুখ টা ইতোমধ্যে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। চোখ দুটো দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন ঝড়ছে। ফর্সা মুখে কপালের নীল শিরা ভেসে ওঠেছে। সিমথি উঠে দাঁড়ায়। জোরে একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করে। অতঃপর শীতল কণ্ঠে শুধায় ,,,

সিমথি : নতুন বউয়ের হাতে রান্না খেতে চান বললেই তো হয়। অনুগ্রহ করে দেড় ঘন্টা বসুন ব্রেকফাস্ট করুন। নতুন বউয়ের রান্না খেয়েই বাড়ি ফিরবেন কেমন।

সিমথির এমন ঠান্ডা গলার উত্তরে সবাই হতভম্ব হতবাক হতবুদ্ধি। এতোটা শান্ত স্বভাব এ যেনো ঝড় আসার পূর্বাভাস দিচ্ছে। আদি হাসে। আয়াশ দের পাশে এসে দাঁড়ায়।

সিমথি : মেহের ভাবী উনাদের চা মিষ্টি দাও। আর আমার সাথে একটু রান্না ঘরে আসো। কোথায় কি আছে এটা তো আর আমি জানি না।

সিমথির কাজে সবাই চরম অবাক হচ্ছে। আদির মা আমতা আমতা করে বলে,,,

আদির মা : সিমথি মা তোমার রান্নাঘরে যেতে হবে না। আপা চলো আমরা,,

সিমথি : মা

সিমথি কন্ঠে মা ডাকে আদির মা কেঁপে ওঠে। ডাকটায় কিছু তো একটা ছিলো। মায়াভরা দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়।

সিমথি : আজ আমিই রান্না করবো।

সিমথি রান্নাঘরের দিকে যায়। সিমথির পেছন পেছন মেহেরসহ আদির চাচীরা ও যায়। মেয়েটা রান্না পারে কিনা আদোও কেউই জানে না। আদির বাবারা হেসে নিজেদের রুমে যায়। আদি, আয়াশরা একে অপরের দিকে তাকায় অতঃপর হেসে উঠে। আজ বাড়িতে কিছু একটা হতে চলেছে এটা সবাই বুঝতে পারছে। আয়াশরা তিনজন প্রতিবেশী মহিলার দিকে তাকিয়ে আফসোস করতে করতে অন্যদিকটায় চলে যায়।

ঘড়ির সময় ধরে দেড় ঘন্টা পর সিমথি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে। আয়াশরা সিমথির দিকে তাকায়। আদির মা- চাচীরা সোফা থেকে উঠে সিমথির কাছে যায়। রান্নাঘরে কাউকেই থাকতে দেয়নি সিমথি। রান্নার সবকিছু বের করে দেওয়ার পরপরই ওদের বের করে দেয়। আদির মা এসে নিজের শাড়ীর আঁচল দিয়ে সিমথি মুখের ঘামটুকু মুছে দেয়। সিমথি আবেশে চোখ বুঁজে নেয়। আজ কতকাল পর মা মা গন্ধ টা পাচ্ছে। হঠাৎ সব ক্লান্তি যেনো নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো কর্পূরের ন্যায়।

মেহের : এই নাও পানি খাও।

সিমথি : রান্নাঘরে প্রচুর গরম আপু ( গাল ফুলিয়ে)

সিমথির কথায় মেহের হেসে মাথায় হাত বুলায়। মেহেরের কোনো বোন নেই। তাই সবসময় চাইতো জা থাকুক। তাকে নিজের বোনের মতোই আদর করবে। আজ বিয়ের এতোবছর পর বোধহয় মেহেরের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। কথাটা মনে মনে ভেবে সিমথির মুখের দিকে আবারো তাকায়। দেড় ঘন্টার ব্যবধানে মুখটা পুরো লাল হয়ে আছে। আদিরা এসে সিমথির পাশে দাঁড়ায়।

আদি : বেশি গরম লাগলে রুমে যাও। গোসল করে আসো।

সিমথি : নাহ। আগে এনাদের নতুন বউয়ের রান্না খাওয়ায়।

কথাটা বলে সিমথি তিনজনের দিকে তাকায়। অতঃপর আবারো আলতো হেসে দেয়।

সিমথি : চাচী কাকি আন্টি যায় হোন খেতে আসুন। আমি সার্ভ দুঃখিত খাবার বাড়ছি।

খাবার টেবিলে বসে আছে তিনজন। খাবারের রঙ দেখে তো ভালোই মনে হচ্ছে। দেড় ঘন্টায় ভালোই খাবার রেঁধেছে। সাদা ভাত, মুরগীর মাংস, মাছের তরকারী, বেগুন ভাজা। সিমথি তিনজনকে খাবার দিয়ে আদির পাশে এসে দাঁড়ায়। ততক্ষণে আদির বাবারা ও চলে আসে।

ইশান : উহুমমম কিয়া খুশবুউউউ।

ইশানের কথায় সিমথি হালকা হাসে।

সিমথি : কি হলো খাওয়া শুরু করুন। ভয় নেয় খাবারে জামাল গোটা মিশায়নি। আফটার অল আমি একজন ডাক্তার হয়ে এমন দুর্নীতি করতে পারিনা।

সিমথির কথায় উপস্থিত সবাই মুখ চেপে হাসে। সিমথি একটা চেয়ার টেনে ওদের পাশে বসে দাঁত কেলিয়ে হাসে। অতঃপর চোখের ইশারায় খেতে বলে। অগত্যা তিনজনই খেতে শুরু করে। বেগুন ভাজা দিয়ে ভালোভাবে খেলেও ঝামেলা হয় মাংসের তরকারী দিয়ে এক নলা মুখ দিতেই তিনজনের জিভ পুড়ে যাওয়ার অবস্থা। তিনজনই কোনোমতে খাবারটা গিলে পানি খাওয়ার জন্য গ্লাসে হাত দিতে নিলে সিমথি গ্লাসগুলো সরিয়ে দেয়।

সিমথি : খাওয়ার মাঝে যদি শুধু পানিই খান তাহলে এগুলো কিভাবে খাবেন আন্টিইইই। তাই নো ওয়াটার অনলি ইটিং।

সিমথির কথায় তিনজনই অসহায় দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। তা দেখে সিমথি হাসে। অতঃপর আবারো খাবারের দিকে ইশারা করে। আদির ফুফি ( তোহার মা) আদির মায়ের কানে ফিসফিসিয়ে বলে,,,

আদির ফুফি : ভালোই জব্দ করছে ভাবী। এদের এমনই শিক্ষা পাওয়া দরকার।

শাওন : আমি কেইস টা বুঝিনি।

মেহের : দেখতে থাকো তাহলেই বুঝবে। সিমথি যখন নীরব ছিলো তখনই বুঝেছিলাম ঝড় আসার পূর্বাভাস দিচ্ছে ও।

মেহেরের কথায় সবাই হেসে আবারো ওদের দিকে মনযোগ দেয়। তিনজনই খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে। সিমথি তা দেখে খানিকটা রাগী স্বরে বলে উঠে,,,

সিমথি : খাবার সামনে রেখে বসে আছেন কেনো। খাবার নষ্ট করার ধান্দায় থাকলে সে চিন্তা বাদ দেন। খাবার নষ্ট আমার একদম অপছন্দের। এই খাবারে যদি স্বয়ং আরশোলা এসেও পড়ে তবুও এগুলো আপনাদেরই খেতে হবে। সো তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করুন।

সিমথির কথায় তিনজনই করুন দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে খেয়ে নেয়। সিমথির ভাবসাব দেখে আয়াশদের পেটে হাসি চাপিয়ে রাখা দায় হয়ে গেছে। তিনজন মহিলা অগত্যা আবার খেতে আরম্ভ করে। কিন্তু মাংসের ভাব অল্প খেয়ে আবারো সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় খেতে বলে। তখন ওদের মধ্যে একজন বলে উঠে,,,

_ খাবারে প্রচন্ড ঝাল। আর খেতে পারবো না।

মিহলার কথায় আদিরা এতোক্ষণে কেসটা ধরতে পারে। খাবার না খাওয়ার কারণ তাহলে ঝাল। সিমথি হেসে উঠে দাঁড়ায়। শাড়ির আঁচল ঠিকঠাক দেখে তিনজনের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।

সিমথি : যাদের কথায় এতো ঝাঁঝ তারা ঝাল খেতে জানেনা এটা আমি কিভাবে জানবো বলুন। জানলে ঝাল কমিয়েই দিতাম। কি আর করবেন এই প্রথম সিমথি জাহান সিয়া কোনো আউট পার্সনের জন্য রেঁধেছে। খেতে তো আপনাদের হবেই। নিন নিন তাড়াতাড়ি শেষ করুন। ঘুম পাচ্ছে আমার আপনাদের খাবারের নমুনা দেখে। কতটা সময় ওয়েস্ট করছেন আমার আপনাদের কোনো আইডিয়া আছে। দশমিনিটে খাবার কমপ্লিট করুন। গো ফাস্ট।

শেষের কথাটা একটু জুড়ে ধমকে বলায় সবাই খানিকটা কেঁপে ওঠে। তিনজন মহিলা ভয়ে এবার খেতে শুরু করে। ওরা তো ভেবেছিলো বিয়ে হওয়ায় হয়তো এই মেয়ে নরম মাটি হয়ে গেছে। তাইতো এতো গুলো কথা শুনিয়ে দিয়েছিলো। সিমথি জাহান সিয়া ভয়ানক এটা জানতো কিন্তু খু:না’খু’নি ছাড়াও কথায় আর কাজেও কেউ এতোটা ভয়ানক হতে পারে এটা বোধহয় ওদের জানা ছিলো না। সিমথি আবারো চেয়ারে বসে পড়ে। একটা চামচ নিয়ে হাতে ঘুরাতে শুরু করে।

সিমথি : আপনাদের প্রথম প্রশ্ন আমার গয়ের রঙ আরেকটু ফর্সা হবা উচিত ছিলো তাই না।

সিমথির কথায় ওদের গলায় খাবার আটকে যায়। আয়াশরা একবার মহিলাদের দিকে তো একবার সিমথির দিকে তাকায়।

সিমথি : আমার জানামতে বাঙালি মেয়েদের তুলনায় আমার গায়ের রঙ যথেষ্ট ফর্সা। আর ফর্সা দিয়ে কি করবেন। আমা র চেহারায় তো আর ওরা আয়নার মতো নিজেদের দেখবে না এম আই রাইট।

সিমথির কথায় তিনজনই চুপ হয়ে যায়।

সিমথি : আপনাদের দ্বিতীয় প্রশ্ন আমার নাক বোঁচা। কিন্তু আমার দাদু বলতো আমার নাক একদম খাঁড়া। তা আমার নাক আরো খাড়া দিয়ে উনারা বা আপনারা কি করবেন। আমার নাকে কি জামা-কাপড় মেলবেন নাকি।

সিমথির কথায় আয়াশরা এবার শব্দ করে হেসে উঠে। বেচারী মহিলাদের অবস্থা এখন ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাঁচি। সিমথি আয়াশদের দিকে তাকায়। এদের হাসি দেখে সিমথির ও হাসি উঠছে।

সিমথি : তৃতীয় প্রশ্ন রান্নাবান্না এটা আপনারা নিজেরাই চেক করছেন। তা কেমন হলো জানাবেন। আর হুমম আমি রান্না জানি। প্রায় সাত বছরের কাছাকাছি আমি বিদেশে ছিলাম। তখন নিজের রান্না নিজেই করতাম। বাইরে খাবার কিংবা বাড়িতে বুয়া রেখে তার হাতে রান্না করা খাবার আমার একদম অপছন্দের। আপনাদের চতুর্থ প্রশ্ন চুলগুলো ছোট। আর লম্বা চুল দিয়ে কি করবে উনারা। অবশ্যই আমার চুল দিয়ে রুম ঝাড়ু দেবে না। তাই না মা

কথাটা বলে আদির মায়ের দিকে তাকায়। আদির মা সিমথির কথায় সায় দেয়।

সিমথি : আপনাদের পরবর্তী প্রশ্ন আমি আদির থেকে শর্ট। আমি আদির বুক বরাবর পড়ি। আর আদির হাইট ছয় ফিট৷ আমার হাইট যথেষ্ট। আমাকে আর লম্বা দিয়ে কি করবে। অবশ্যই বাড়ির সিলিং পরিষ্কার করবো না আমি।

এবার আয়াশসহ বড় ছোট সবাই শব্দ করে হেসে উঠে। আদি হাসতে হাসতে সোফায় বসে পড়ে। আদিবারা একেকজন একেক জায়গায় বসে পড়ে।

সিমথি : আপনাদের পরবর্তী প্রশ্ন মেয়ের চরিত্র কেমন। আমার চরিত্র নিয়ে আপনাদের কাছে আমি সার্টিফিকেট চাইনি। আপনারা ভালো এটার সার্টিফিকেট আমাকে দেখান। আমার শ্বাশুড়ি আমার হাতের রান্না খেতে পারবে। এতোটা অকর্মা আমি না।

সিমথির মুখের ভাবভঙ্গি এখন গাম্ভীর্য হয়ে গেছে। শান্ত চোখ আচমকায় লাল বর্ণ ধারণ করে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

সিমথি : হাউ ডেয়ার ইউ। আপনাদের সাহস হয় কি করে আমার মা-বাবার শিক্ষা নিয়ে কথা বলার। আপনার কি আমার আট-দশ টা মেয়ের মতো সরল সোজা মনে হয়। নতুন বউ বলে ভেবেছেন যা খুশি তাই বলে যাবেন আর আমি চুপচাপ শুনবো। তাহলে শুনে রাখুন আমার মা-বাবার অপমান যেই ব্যক্তি করে তাকে আমি ছেড়ে কথা বলিনা। আপনাদের আমি আবারো মনে করিয়ে দেয় আমি মেহের ভাবী নই। মেহের ভাবীকে যা তা বলেছিলেন বলে আমাকেও বলবেন। আমি সিমথি জাহান সিয়া। খান বংশের মেয়ে আমি। আমার রক্তে হিংস্রতা। গট ইট। এবার খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিদায় হোন তো। রাগ মাথায় চড়ে গেছে।

শেষ কথাটা দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে ওখান থেকে সরে এসে আদিবার পাশে দাঁড়ায় । বেচারী মহিলারা অপমানিত হয়ে খাওয়া ছেড়ে উঠতে চাইলে সিমথি আবারো চোখ গরম করে তাকায়। তাই বসে গপাগপ খেতে শুরু করে। তিনজনের চোখ দিয়েই ইতোমধ্যে পানি পড়তে শুরু করেছে। ওদের খাওয়া দেখে সিমথি ঠোঁট কামড়ে হেসে সবার দিকে তাকায়। আদির বাবা এসে সিমথির পাশে দাঁড়ায়।

আদির বাবা : ভালো জব্দ করেছিস মা। এই যা তোমায় তুই বলে ফেললাম। সবাই কে বলে অভ্যাস হয়ে গেছে তো। কিছু মনে করো না।

আদির বাবার কথায় সিমথি গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে,,,

সিমথি : কিন্তু আমি তো রাগ করেছি।

আদির বাবা : ইচ্ছে করে বলিনি ভুল হয়ে গেছে।

সিমথি : তোমাকে তো শাস্তি পেতে হবে। আমার ডিরকশেনারিতে সরির জায়গা নেই।

সিমথির কথায় আদির বাবার মুখ টা ছোট হয়ে যায়। ভুল করে তুই বলে ফেলেছিলো। আয়াশরা হতবাক হতবুদ্ধি হয়ে সিমথির দিকে তাকিয়ে আছে।

সিমথি : তোমার শাস্তি হলো আমাকে এখন থেকে তুই করেই ডাকবে। ডাকটা আমার ভালো লেগেছে।

সিমথির সিরিয়াস মুডে ফাজলামো দেখে সবাই বোকা বনে যায়। আদি ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। সবাই কি ভাবলো আর কি হলো। সবার রিয়াকশন দেখে সিমথি শব্দ করে হেসে উঠে।

সিমথি : আরে বাবা আমি তো এভাবেই বলেছিলাম। সবার বেলায় তুই ডেকে আপন করে নেবে আর আমার বেলায় কেনো তুমি ডাকবে আমি কি দুদিনের জন্য এসেছি নাকি। হুহহ।

সিমথির কথায় সবাই হেঁসে দেয়। আদি ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে।

এরই মাঝে তিনজন খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। ঝালে অবস্থা কাহিল। সিমথি ওদের অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসে। ইশান আগুনে ঘি ঢেলে দেয়।

ইশান : তা আন্টিগণস রান্না ভালো হয়েছে।

ইশানের কথায় মহিলারা একে অপরের দিকে তাকায়। রান্না ভালো হলেও ঝাল অতিরিক্ত ছিলো। কেউ কিছু না বলে দ্রুত বাড়ি ত্যাগ করে। এদের পালানো দেখে আয়াশরা এবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। ইশান হাসতে হাসতে বলে উঠে,,,

ইশান : আমার মমতাজের ওই গান টা মনে পড়ছে। পোলা তো নয় একখান আগুনেরই গোলা

ইশানের কথায় রিক হাসতে হাসতে বলে,,,

রিক : এটার মেইল ভার্সন করলে কি হয় বলতো

আয়াশ : মেয়ে তো একখান আগুনেরই গোলা।

সিমথি ঠোঁট কামড়ে কেবল হাসে।

_________________

সময় গড়ালো নিজের মতো। সিমথি আদির বিয়ের দুই মাস ও হতে চললো। এরই মাঝে সায়ন মিমের কোল আলো করে একজন ছেলে জন্ম নেয়। নাম আদ্র। বয়স একমাস। সিনহা ও তিনমাসের প্রেগন্যান্ট। সিমথি এখন এগারোটায় হসপিটালে যায় আবার আটটায় চলে আসে। লাইফস্টাইলে অনেকটায় পরিবর্তন এসেছে। সিমথির প্রতিটা পদক্ষেপে আদির মায়ের আপসোস হয়। না জেনে বুঝে মেয়েটাকে এতোটা নিচ করার জন্য। সিমথি কেবলই হসপিটাল থেকে ফিরেছে। ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। সিমথি আর আদি এসে ওদের দিকে তাকায়।

সিমথি : তোমাদের হাসির শব্দ রাস্তায় চলে যাচ্ছে।

ইশান : আরেহ ভাবীজি আসেন আসেন।

সিমথি : কি ব্যাপার দেবরজি। বলুন শুনি।

বলেই সোফায় ধপাস করে বসে পড়ে। তা দেখে আদির মা এসে রাগী চোখে সিমথি আর আদির দিকে তাকায়।

সিমথি : কি ব্যাপার মা বাবা কি আজ নতুন আরেকটা বিয়ে করে সতীন এনেছে। এমন রণচণ্ডী কেনো তুমি৷

সিমথির কথায় মেহেররা ঠোঁট টিপে হাসে। এসব হাসি মসকরা এখন নিত্যদিনের সঙ্গী।

আদির বাবা : তুই বললে তোর জন্য আরেকটা মা নিয়ে আসি।

সিমথি : আমাকে কেনো বলছো। বললেই হয় তোমার বিয়ের শখ হচ্ছে। আমার কাছে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসে। লাগলে বলো এনে দেবো আমার স্টেপ মা কে।

আদির মা এসে সিমথি কান মলে ধরে।

আদির মা : পা*জি হয়ে যাচ্ছিস তুই দিন দিন। আমি না তোর মা হয়।

সিমথি : থুরীই না বললাম তুমি আমার কাকি হও।

আদির মা : মা’র খাবি। যা ফ্রেশ হয়ে আয়। তারপর আড্ডা দে। আদি তুই ও যা।

সিমথি : যাচ্ছি তো। কান ছাড়ো লাগতাছে।

আদির মা সিমথির কান ছাড়ে। সিমথি হাসতে হাসতে সিড়ির দিকে পা বাড়ায়। পেছন পেছন আদিও আসে। আচমকা সিমথি থেমে পেছনে তাকিয়ে হালকা কাশি দেয়। শাওনরা সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি দুষ্টু হেসে আদির বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

সিমথি : বাবা তুমি আরেক টা বিয়ে করে নাও। আমার নতুন মা চাই। নতুন দেবর বা ননদ চাই।

আদি মা তেড়ে যেতেই সিমথি দৌড়ে উপরে চলে যায়। পেছন পেছন আদিও হাসতে হাসতে যায়। শাওন অট্টহাসিতে মেতে উঠে।

_____________

সিমথি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সায়নের সাথে কথা বলছিলো তখনই পেছন থেকে আদি এসে সিমথিকে জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ গুঁজে দেয়। সিমথি চমকে তাকায়। কান থেকে ফোন সরিয়ে আদির দিকে ফিরে তাকায়,,,

সিমথি : কি করছেন কথা বলছি তো। ( ফিসফিস করে)

আদি : তো বলোনা। আমি কি তোমাকে ডিস্টার্ব করছি নাকি।

সিমথি ভোতা মুখে আবারো কথা বলায় মনযোগী হয়। কিন্তু আদির জ্বালায় বেচারী কথা বলতে পারছে না। কখনো চুল ধরে টানছে তো কখনো চুমু খাচ্ছে আবার চিমটি দিচ্ছে।

সিমথি : আচ্ছা ভাইয়া আজ রাখছি। কাল আসবো আমি। গুড নাইট।

ওপাশ থেকে সায়নের কথা না শুনেই সিমথি ফোন কেটে আদির দিকে তাকায়।

সিমথি : কি হয়েছে টা কি আপনার।

আদি : হয়েছে তো অনেক কিছুই। কিন্তু বলতে বা করতে কই দিচ্ছিস।

সিমথি : আপনি আমাকে আবার তুই বললেন

আদি : তুই আমাকে যতবার আপনি বলবি আমিও ততবার তুই ডাকবো।

সিমথি : আমি আপনার বউ হয়।

আদি : আমিও তোর বর হই।

সিমথি মুখ ফুলিয়ে আদির দিকে তাকায়। আদি হেসে সিমথি পিঠ নিজের বুকে ঠেকিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। বাতাসে এখন শীতের গন্ধ। আর কিছুদিন পরই হয়তো শীতের আগমন ঘটবে। আদি মাথাটা একটু নিচু করে সিমথির দিকে তাকায়। এই মেয়েটা জীবনে আসার পর রঙিন জীবনটা যেনো আরো রঙিন হয়ে গেছে। সারাক্ষণ হাসি-হাসি কাটে ওর। এই হাসির কারণ কে কোনো উপায়েই আদি হারাতে চাই না। কথাগুলো মনে মনে আওড়িয়ে আরেকটু নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে সিমথিকে। সিমথির ঠোঁটের কোণার হাসি আরো চওড়া হয়।

চলবে,,,,,

( আজকের পার্ট অনেক বড়। যায়হোক কেমন হয়েছে জানাবেন। ধন্যবাদ। হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here