#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৪
” আমি আগেই কইছিলাম ওই মাইয়া আমার দাদুভাইয়ের লেইগা সঠিক না। মিললো তো? ”
এজাজ সাহেব দৃষ্টি অবনত করে বসে। উনি ভাবতেও পারছেন না দুদিনের ওই মেয়েটি কি করে তাকে অপমান করতে পারে! শেষমেষ উনি কিনা পুঁচকে এক মেয়ের কাছে কথা শুনছেন! এ-ও হওয়ার ছিল! ভাগ্যিস উনি বিবাহ সম্পর্কিত বিষয়ে কথা বলার জন্য মিস্টার হক’কে কিয়ৎক্ষণ পূর্বে কল করেছিলেন। তাই তো ফোনের অপর প্রান্ত হতে উগ্র মেয়েটির আসল রূপ জানতে পারলেন। নইলে তো অতল গহ্বরে ডুবে থাকতেন সর্বদা। নিজ হাতে ধ্বং-স করে দিতেন একমাত্র পুত্রের বিবাহিত জীবন। শায়নার বফ রয়েছে। সে বফ ব্যতিত অন্য কাউকে চায় না। বিয়ে তো বহু দূরের কথা। তাই তো ফোনের অপর প্রান্তে এজাজ সাহেবের উপস্থিতি অনুধাবন করে বাবার কাছ থেকে ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যা নয় তাই বলে অপমান করলো। প্রকাশ করলো স্বরূপ। তাতেই স্তব্ধ এজাজ সাহেব! শায়না মেয়েটির সুন্দর মুখশ্রীর আড়ালে এমনতর বি শ্রী রূপ লুকিয়ে আছে। ছিঃ! রাজেদা খানম পুনরায় বলে উঠলেন,
” ওই শানু মনুর কথা এহন ভুইল্লা যা। বৌমা, ইনু দিদিভাইয়ের নাকি হৃদিরে খুউব পছন্দ হইছে। লাগলে তুইও খোঁজখবর নে। ভালো মনে হইলে ওইডাই নির্বাচন কর। হুনছোছ কি কইলাম? ”
এজাজ সাহেব ভালোমন্দ কিচ্ছুটি বললেন না। নিঃশব্দে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। প্রস্থান করলেন সেথা হতে। মালিহা চিন্তিত বদনে স্বামীর গমন পথে তাকিয়ে। কিছু একটি ভেবে উনিও সোফা ত্যাগ করে উঠে দাঁড়ালেন। পিছু নিলেন স্বামীর।
•
আঁধার রাত্রি। বাতায়ন গলিয়ে কক্ষে প্রবেশ করছে হিমেল হাওয়া। বিছানায় শুয়ে মোবাইল স্ক্রল করছিল হৃদি। সহসা কোলে অনুভব করলো আদুরে শরীর। ছোট দু’টো হাত তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। বড় আদরমাখা কণ্ঠে ডেকে উঠলো,
” লিদু! ”
উচ্ছ্বাস পরিলক্ষিত হলো মেয়েটির মুখ জুড়ে। মোবাইলটি পড়ে রইলো বিছানার নরম আবরণে। কোমল দু হাতে ছোট দেহটিকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো হৃদি।
” ফারিজা বুড়ি! ”
চার বছর বয়সী বাচ্চা মেয়েটি উৎফুল্ল হয়ে ছোটো ছোটো দু হাতে খালামনির গলা জড়িয়ে ধরলো। আরো একবার আদর মিশ্রিত কণ্ঠে ডেকে উঠলো,
” লিদু! ”
হৃদি চটাপট ওর ফুলো ফুলো কপোলে গাঢ় চুম্বন এঁকে দিলো। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলে উঠলো,
” আমার বুড়ি মা! কখন আসছো? ”
” মাত্তো। ”
” মাত্র? তাই? ”
হাঁ সূচক মাথা নাড়ল বাচ্চাটি। হৃদি হাসিমুখে ওকে কোলে তুলে বিছানা ছেড়ে নেমে এলো। হাঁটতে হাঁটতে ড্রেসিং টেবিলের কাছে পৌঁছে গেল। ড্রয়ার উন্মুক্ত করে বের করলো কিটক্যাট। সেটি আদরের ভাগ্নির হাতে দিলো। খুশিতে গদগদ হয়ে হৃদির গালে চুমু দিলো বাচ্চা মেয়েটি। হেসে উঠলো দু’জনে। হৃদি ওর কিটক্যাট মোড়কমুক্ত করে মুখের সামনে ধরলো। আনন্দিত বদনে কিটক্যাট খেতে লাগলো ফারিজা। ঠিক সে মুহূর্তে উচ্ছ্বসিত বদনে একপ্রকার ছুটে কক্ষে প্রবেশ করলো দুই বোন। নীতি এবং নিদিশা। হৃদি এবং ফারিজা এহেন আচরণে যারপরানাই অবাক!
” ও য়ে! আস্তে। ব্রেক মা”র। এমন দৌড়াদৌড়ি করছিস কেন? পা*গলা ষাঁড়ে ধাওয়া করছে নাকি? ”
নীতি কোনোরূপ বাক্য ব্যয় বিহীন ছুটে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। হৃদি অবাক চাহনিতে তাকিয়ে! বুঝতে পারছে না ঠিক কি হচ্ছে। এরা হঠাৎ করে এত খুশি কেন? নীতি এতটাই খুশি যে আনন্দে আটখানা হয়ে বলতেই পারছে না। তখন নিদিশা মুখ খুললো।
” হৃদিপু। ও আপু। তোমার বিয়ে! ইয়ে! ”
আনন্দের বহিঃপ্রকাশ করতে লাফ দিয়ে উঠলো নিদিশা। বিস্মিত হৃদির মুখনিঃসৃত হলো,
” বিয়ে! ”
হাঁ বিয়ে। পরিবারের সদস্যরা আজ একত্রিত হয়েছে। কিয়ৎক্ষণ পূর্বে চৌধুরী বাড়ির সঙ্গে ফোনালাপে লম্বা কথোপকথন হলো। নির্বাচন করা হলো ইরহাম চৌধুরী এবং হৃদি শেখের বিবাহের তারিখ। সামনের মাসের ১২ তারিখ পবিত্র এক বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছে দুজনা। হাতে মাত্র দেড় মাসের মতো সময়। বাগদান শীঘ্রই সম্পন্ন হতে চলেছে। অতঃপর অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে বিবাহ।
নীতি এবং নিদিশা খুশিতে আত্মহারা হয়ে বোনকে জড়িয়ে ধরলো। ফারিজা কিটক্যাট খেতে খেতে তাকিয়ে। খালামনিদের এত খুশির কারণ তার ছোট্ট মস্তিষ্কে বোধগম্য হলো না। সে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে কিটক্যাট খেতে লাগলো। বিবাহের মতো এমন অনুভূতিময়, আবেশিত বিষয়ে প্রকৃত রূপে লাজে রাঙা হতে পারলো না হৃদি। বোনেদের আচরণে লাজুক অভিব্যক্তি প্রকাশ করলো বটে। তবে তাতে ছিল মিথ্যার মাত্রা বেশি। কেমন মিথ্যে লাজুকতা! সে যে বরাবরই বিবাহ নিয়ে আগ্রহী। পড়ালেখা ভালো লাগে না। বিয়েশাদী করে বরের সাথে চমৎকার জীবন কাটাবে। যেখানে শুধু সুখ আর সুখ। কম বয়সী অন্যান্য অনেক মেয়ের মতো হৃদিও কল্পনাপ্রবণ। বাস্তবতার চেয়ে কল্পনায় বিশ্বাসী। তাই তো উচ্চ মাধ্যমিক হতে বিয়ে নামক ফ্যান্টাসি নিয়ে জীবন অতিবাহিত করে এসেছে। অপেক্ষা করেছে সেই কল্প পুরুষের জন্যি। অবশেষে তার বিয়ে নামক ফ্যান্টাসি পূরণ হতে চলেছে। তবে বিয়ে মানে কি সত্যিই শুধু সুখ আর সুখ? বাস্তবতা যে ভিন্ন কিছু। সেখানে সে তো একজন দেশপ্রেমিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত্বের জীবনে জড়াতে চলেছে। খুব সহজ হবে কি সে পথচলা?
•
তমসায় আচ্ছাদিত ধরনী। স্টাডি রুমে নিজস্ব কর্মে লিপ্ত ইরহাম। পাশেই চেয়ারে বসে তাঈফ। অবলোকন করে চলেছে বন্ধুর প্রতিটি কর্ম। সহসা নীরবতা ভেদ করে তাঈফ বলে উঠলো,
” তোর মতো স্বা’র্থপর, বে’ঈমান বন্ধু আমি আজ পর্যন্ত একটাও দেখিনি। ”
হাতে থাকা কাগজে দৃষ্টি স্থির হলো। একপলক তাঈফের পানে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো মানুষটি। তাতে তাঈফ আরো অসন্তুষ্ট হলো।
” শা*লা! দু’দিন পর এনগেজমেন্ট। আর আজকে আমি খবর পাই? তুই কেমন বন্ধু রে? পাঁচটা না দশটা না একমাত্র বন্ধু হই। তার ওপর এমন অন্যায় অবিচার? তোর ওপর শাপ লাগবে রে শাপ। ”
ইরহাম গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,
” ওভার অ্যাক্টিং করার মতো কিছুই হয়নি। ”
তেঁতে উঠলো তাঈফ।
” কি! আমি আমি ওভার অ্যাক্টিং করতাছি? শা* তুই একপিস বটে। এনগেজমেন্ট, বিয়া, হানিমুন সব সাইরা তারপর পোলামাইয়া নিয়া হাজির হইতি। দাঁত ক্যালাইয়া বলতি মিট ইয়্যুর ভাতিজা। তোরে বুঝি আমি চিনি না? হুহ্। ”
” নামমাত্র বিয়ে নিয়ে অত মাতামাতি করার কি আছে?”
” নামমাত্র বিয়ে! তুই কি রে হাঁ? আন্টির কাছে শুনলাম সুন্দরী, কচি মাইয়া বিয়ে করতাছোছ। এরপরও মিয়া ভাব নিয়া থাকবা? চুকচুক করবা না? ”
সুন্দরী কচি মাইয়া! কথাটা কর্ণ কুহরে বড় বি*ষাক্ত ঠেকলো। লহমায় ট’গবগ করে উঠলো শিরা উপশিরা। নভোনীল চক্ষু জোড়ায় অবর্ণনীয় ক্রো ধ ফুটে উঠলো বুঝি! রিমলেস চশমার অন্তরালে লুকায়িত আঁখি যুগল নিবদ্ধ হলো বন্ধুর পানে। অতি গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,
” মাইন্ড ইয়্যুর ল্যাঙ্গুয়েজ। একটা মেয়েকে নিয়ে কথা বলছিস। ভুলে যাস না। ”
দুর্বোধ্য হাসলো তাঈফ। ইতিবাচক মাথা নেড়ে বললো,
” ওকে। ওকে। এবার বল এনগেজমেন্টে কি পড়বি? কি নিয়েছিস? ”
কোনোরূপ জবাব না দিয়ে কর্ম ব্যস্ত ইরহাম। মাথা চাপড়ে শোক প্রকাশ করলো বন্ধু তাঈফ।
” হায় রে পো’ড়া কপাল! তুই আমার বন্ধু হইলি ক্যামনে? হাঁ? ”
•
‘ সুখনীড় ‘ অ্যাপার্টমেন্টের পার্টি হলরুমে আজ জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন! প্যাস্টেল রঙের বিভিন্ন শেড একত্রিত করে নির্মল কমনীয়তা তৈরি হয়েছে। শুভ্র রঙা আকর্ষণীয় বড় সোফাটির পেছনে ব্যাকড্রপ। সেথায় প্যাস্টেল শেড, সাথে হালকা কিছু রঙের স্পর্শ এবং কিছু গাঢ় সবুজ পাতার সংস্পর্শে মনোমুগ্ধকর আয়োজন! লম্বা মোমবাতি এবং বাতি বাগদান মঞ্চে সোফার দু পার্শ্বে সৌন্দর্য বর্ধন করে চলেছে। বেশকিছু বৃত্তাকার ঝুলন্ত লণ্ঠন সোফার উপরাংশে শোভা পাচ্ছে। সে এক নজরকাড়া আয়োজন!
পার্টি হলের একাংশে দাঁড়িয়ে ইরহাম। সাথে বন্ধু তাঈফ এবং হবু ভায়রা ভাই ফাহিম। তারা কথোপকথনে লিপ্ত। ইরহাম শুধু হুঁ হাঁ করে তাল মেলাচ্ছে। বড় গম্ভীর মানুষ কিনা! ফাহিম হাসিমুখে ছোট ভায়রাকে বললো,
” ইরহাম ভাই! মাশাআল্লাহ্ তোমাকে সে-ই হ্যান্ডসাম লাগছে! আশপাশে দেখো। অসংখ্য নারীমন তোমাতেই নিবদ্ধ। ”
তাঈফ হেসে উঠলো। বললো,
” যা বলেছেন ভাই। বরাবরই এ ব্যাটা মেয়েদের ক্রাশ ম্যাটারিয়াল। তবে কখনো কাউকে পাত্তা দেয়নি। তাই তো আজ এই দুরবস্থা। বুড়ো বয়সে বিয়ে করতে আসছে। ”
ইরহাম তীক্ষ্ণ চাহনি নিক্ষেপ করতেই থতমত খেল তাঈফ। তড়িঘড়ি করে কথা ঘুরিয়ে ফেললো। তখনই কল এলো ইরহামের। সে ওখান হতে সরে গিয়ে দাঁড়ালো এক ফাঁকা স্থানে। রিসিভ করলো কল। গুরুগম্ভীর কথোপকথনে লিপ্ত হয়ে গেল। সহসা সকলের ফুসুরফুসুর এ ব্যাঘাত ঘটলো। বিরক্তিকর অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তাকালো পিছু ঘুরে। তাতেই অঘটন ঘটে গেল। নভোনীল চক্ষু জোড়া নিবদ্ধ হলো এক অপরূপায়।
হালকা পিচ রঙা এমব্রয়ডারিকৃত সিল্কের লেহেঙ্গা যার আবরণে স্টোন ওয়ার্ক অতি সুন্দর রূপে ফুটে উঠেছে। দীঘল কালো কেশ মুক্ত হয়ে পৃষ্ঠদেশে ছড়িয়ে। আকর্ষণীয় দোপাট্টাটি শালীনতার সহিত দেহের উপরিভাগ আবৃত করে রেখেছে। গৌর বর্ণের মুখশ্রীতে কৃত্রিম প্রসাধনীর মানানসই প্রলেপ। বাঁ হাতে এক জোড়া বালা। ডান হাতে সরু ব্রেসলেট। কান ও গলদেশে মানানসই গহনার উপস্থিতি। অসাধারণ লাগছে! ডানে রাঈশা এবং বাঁয়ে ইনায়া। দুজনের মধ্যমণি হয়ে এগিয়ে আসছে হৃদি। যার প্রতিটি পদচারণায় আলোড়ন সৃষ্টি হচ্ছে এক কাঠিন্যতায় মোড়ানো হৃদয়ে। বর্ধিত হচ্ছে বক্ষপিঞ্জরের অন্তরালে লুকায়িত হৃদযন্ত্রটির স্পন্দন। নভোনীল চক্ষু জোড়ায় অসীম মুগ্ধতা বিরাজমান! প্রাকৃতিক নিয়মেই লাজুকতা ঘিরে ফেললো মেয়েটিকে। সকলের চক্ষু বাঁচিয়ে তার অবাধ্য নয়ন জোড়া খুঁজতে লাগলো ক্রাশ রূপী কল্প পুরুষটিকে। কেমন রূপে আজ হাজির হয়েছে সে? বড়ই সুদর্শন বুঝি! বেশি অপেক্ষা করতে হলো না। ভিড় এড়িয়ে বাগদান মঞ্চের কাছাকাছি পৌঁছে গেল বিমোহিত মানব। সহসা তার পানে অবাধ্য মায়াবী এক জোড়া আঁখি নিবদ্ধ হলো। ধক করে উঠলো বক্ষ মাঝারে। ফ্লোরাল প্যাটার্নড্ ক্রিম কালার কুর্তা জ্যাকেট সেট জড়ানো পেশিবহুল পেটানো গাত্রে। মসৃণ কেশ জেল দিয়ে সেট করা। বাঁ হাতে রিস্ট ওয়াচ। রিমলেস চশমার আড়ালে বিমুগ্ধ নভোনীল চক্ষু জোড়া। নয়নে নয়ন মিলিত হতেই আকস্মিক লাজুকতার ন্যায় মিইয়ে গেল মেয়েটি। অবনত হয়ে এলো মস্তক।
তাতেই মোহাচ্ছন্ন ভাব ভঙ্গ হলো। নিজ কর্মে নিজেই চমকালো ইরহাম! তপ্ত শ্বাস ফেলে নিজেকে ধাতস্থ করবার প্রয়াস চালালো। হাতে থাকা মুঠোফোনে দৃষ্টি নিবদ্ধ হতেই লক্ষ্য করলো সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে কিয়ৎক্ষণ পূর্বে। নিজের ওপর বিরক্ত হয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো মানুষটি। আড়চোখে তা লক্ষ্য করে কিছুটা চমকালো হৃদি! অবচেতন মনে কালো মেঘে ছেয়ে গেল অন্তঃপুর। আস্তে করে সে-ও দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। ইনায়া হবু ভাবির পাশে দাঁড়িয়ে। উৎফুল্ল কণ্ঠে বলে উঠলো,
” মাশাআল্লাহ্ ভাবী! তোমাকে যা লাগছে না! আমার সন্ন্যাসী ভাইয়া অবধি আজ ক্লিন বোল্ড। হি হি হি। ”
হৃদি নিজ রূপে ফিরে এলো। হবু ননদের কর্ণ কুহরে ফিসফিসিয়ে দুষ্টু স্বরে বললো,
” তোমাকেও খুব সুন্দর লাগছে ইনু। আশপাশে কম লোকে ফ্লাট হয়নি কিন্তু। ”
লাজে রাঙা হয়ে ইনায়া প্রতিবাদ জানালো,
” যাহ্! সবাই তোমায় দেখছে। কনেকে ছেড়ে কনের ননদকে দেখতে যাবে কেন? ”
” কারণ সে দেখতে খুব মিষ্টি। সুন্দর একটি মেয়ে। ”
” ভাবিজি! ননদ পটানোর বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই। আমি এমনিতেই শান্তশিষ্ট লেজ বিহীন এক ললনা। ও-ই রায় বাঘিনী ননদিনী নই। সো ফিকার নট। ”
নিঃশব্দে হাসলো হৃদি। তা লক্ষ্য করে এগিয়ে এলেন মালিহা। পরিচয় করিয়ে দিলেন ডান পাশে থাকা শাশুড়ি মায়ের সাথে। প্রথমবারের মতো মুখোমুখি দু’জনে। শুভ্র কালোর মিশেলে এক শাড়ি জড়িয়ে সত্তরোর্ধ নারীর দেহে। চোখেমুখে অভিজাত, বিচক্ষণতার ছাপ স্পষ্ট। পাওয়ারী চশমা বিচক্ষণ চক্ষু জোড়া আড়াল করবার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। চামড়ায় বার্ধক্যের ছাপ। তবুও মনপ্রাণ হতে জোয়ান সে নারী। হৃদি জড়তা, মুগ্ধতা ভুলে হাসিমুখে সালাম দিলো।
” স্লালামালাইকুম দাদি। ”
রাজেদা খানম ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। গম্ভীর স্বরে বললেন,
” ঠিকমতো সালাম শিইখা হ্যারপর দিয়ো। ভুলভাল কইয়া পাপের বোঝা বাড়াইয়ো না। ”
মলিন হলো বদন। দৃষ্টি নত করে মেয়েটি মৃদু স্বরে বললো,
” সরি দাদি। ”
রাজেদা খানম মৃদু কোমল স্বরে বললেন,
” সালামের সঠিক উচ্চারণ হইলো আসসালামু আলাইকুম। এইবার সালাম দাও দেহি। ”
হৃদি একপলক তাকিয়ে পুনরায় সালাম দিলো,
” আসসালামু আলাইকুম। ”
” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। এইবার ঠিক আছে। ভুলভাল উচ্চারণে অর্থ বিকৃত হয়, বুঝছো? ”
হাঁ সূচক মাথা নাড়ল হৃদি। দাদি ওকে আপাদমস্তক দেখে বললেন,
” ভালাই তো সাজছো। ”
হৃদি বুঝতে ব্যর্থ হলো এটি প্রশংসা সূচক মন্তব্য ছিল নাকি সুক্ষ্ণ খোঁ চা! তবুও চুপটি করে রইলো। দাদি পুত্রবধূর পানে তাকিয়ে বললেন,
” তোমার জামাই কই বৌ? কোনহানে ঘাপটি মা’ইরা আছে? ”
না চাইতেও হাসি পেল হৃদির। বহু কষ্টে হাসিটা গিলে নিলো। প্রকাশ করার মতো ভুল করলো না। অন্যথায় বয়স্ক মানবীর কাছে পুনরায় সম্মানহানি হবে। মালিহা এদিক ওদিক তাকিয়ে লক্ষ্য করলেন এজাজ সাহেব তার শ্যালক জহির সাহেবের সঙ্গে কথোপকথনে লিপ্ত। মেয়েপক্ষের সঙ্গে আলাপণ করতে মোটেও আগ্রহী নন। তা অনুধাবন করে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মালিহা। কি যে করবেন উনি!
চলবে.
[ ইরহাম এবং হৃদির বাগদানে সকলে আমন্ত্রিত! যথাসময়ে চলে আসবেন কিন্তু। ]