মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি #দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ #তাহিরাহ্_ইরাজ #অন্তিম_পর্ব ( তৃতীয়াংশ ) [ প্রাপ্তমনস্কদের জন্য ]

0
436

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#অন্তিম_পর্ব ( তৃতীয়াংশ ) [ প্রাপ্তমনস্কদের জন্য ]

আজগর সাহেব তখন কারাবন্দী। কারাগারের বদ্ধ কুঠরিতে কাটছে বন্দিদশা। দিনরাত সব যেন একই। পীড়াদায়ক। যন্ত্রণার। ওদিকে ভারতনিবাসী একমাত্র পুত্র রুদ্রনীল! তার অবস্থাও বিশেষ ভালো নয়। দলীয় বিভীষণের জন্য পদে পদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ডিল হাতছাড়া হয়েছে। আইপিএস অফিসার দ্বারা বাজেয়াপ্ত হয়েছে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের অনৈতিক ব্যবসা। তার দলে যে বিভীষণ লুকিয়ে ছিল সে ইন্ডিয়ান পুলিশের এক ধূর্ত গুপ্তচর। ইতিপূর্বে বেশ কয়েকটি বড় বড় অপারেশনে সে গুপ্তচর দুর্দান্ত কারিশমা দেখিয়েছে। ভূমিকা রেখেছে অপরাধীদের ধরিয়ে দিতে। তবে এবার ভাগ্য তার সহায় ছিল না। গোপনে সে রুদ্রনীলের দলের একজন সেজে ছিল। সুযোগ পেতেই রুদ্র সম্পর্কিত মূল্যবান গোপনীয় তথ্যাদি ফাঁ”স করতো পুলিশের কাছে। এভাবে বেশ সফলতাও আসছিল। তবে একদিন ভণ্ডুল হলো সব। বাজেভাবে ফেঁ সে গেল সে। অত্যন্ত নি-ষ্ঠুর পন্থায় সে বিশ্বাসঘা”তকের প্রাণ কেড়ে নিলো রুদ্রনীল স্বয়ং। সেই সৎ গুপ্তচরের লা শে র কয়েক টুকরো করা হলো। টুকরো টুকরো খণ্ডিত দেহখানি ভাসিয়ে দেয়া হলো সুগভীর সমুদ্রের অতলতায়। অত্যন্ত বিশ্বস্ত-চতুর এক গুপ্তচরকে হারিয়ে তখন ক্ষে’পে গেল ভারতীয় পুলিশ। তারা রুদ্রনীলকে যেকোনো মূল্যে পাকড়াও করতে বদ্ধপরিকর। দিন গুনছিল ভারতীয় পুলিশ। অপেক্ষায় মোক্ষম সুযোগের। অবশেষে সে সুযোগ এলো একদিন।
_

রাত প্রায় এগারোটার ঘরে। নিস্তব্ধতায় মুড়িয়ে গোটা স্থানটি। চারদিকে ঘোর অমানিশা। নিশাচর বিহঙ্গ মাঝেমধ্যেই করুণ স্বরে ডেকে উঠছে। হালকা পবনে ক্রীড়ারত বৃক্ষপল্লব। দা’নবাকার গাছপালার ভীড়ে অবস্থিত এই গুপ্ত ডেরা। মহারাষ্ট্রের সে গুপ্ত আস্তানায় একটি মাঝারি আকারের ঘর। বসার ঘরের মতো আয়োজন। মৃদু লালাভ হলদে আলোয় আলোকিত ঘরটি। বিপরীতমুখী দু’টো সোফা। একটিতে দাপুটে ভঙ্গিতে বাঁ হাঁটুর ওপর ডান পা তুলে বসে রুদ্রনীল। হাতে রঙিন পানীয়ের গ্লাস। খানিক পরপর গলা ভিজিয়ে নিচ্ছে সে। উল্টোদিকের ডাবল সোফায় বসে দু’জন ভিনদেশী। বিজাতীয় এই দু’জন ক্লায়েন্টের সঙ্গে গোপন আলাপচারিতায় মগ্ন রুদ্রনীল। কতদিন বাদে এক চমৎকার ডিল হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কোনোমতেই এটি হাতছাড়া করা যাবে। পনেরো কোটি তো আর গাছে ধরে না! জয় করে নিতে হয়। ভিনদেশী একজন ক্লায়েন্ট বলে চলেছে। তাদের তরফ হতে শর্তাবলী পেশ করছে। মনোযোগী শ্রোতার ন্যায় শুনছে রুদ্রনীল। অকস্মাৎ এক চরম বিপর্যয়! বাহির হতে ধেয়ে আসছে গোলাগু;লির শব্দ। পালাক্রমে গোলাগু”লি হচ্ছে। ভড়কে গেল বিদেশি ক্লায়েন্টদ্বয়। চমকিত রুদ্র নিজেও! কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই গোটা বিষয়টি মস্তিষ্ক ধারণ করতে সক্ষম হলো। ফট করে উঠে দাঁড়ালো রুদ্র। ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে গেল ঘরের ডান পাশের এক ক্লোজেট সংলগ্ন। উন্মুক্ত হলো ক্লোজেট। বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করে আত্মরক্ষার সরঞ্জাম নিজ আয়ত্ত্বে নিলো রুদ্র। প্রস্তুত সে বিপক্ষ দলের মোকাবেলা করতে। চক্ষুতারায় চিকচিক করছে অত্যন্ত পশ্বাচার। কঠিন মুখভঙ্গি।

তখনই নিজ দলের দু’জন চ্যা লা হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে ভেতরে এলো। বাহিরের বিরূপ অবস্থার জানান দিলো। আকস্মিক ও অবিশ্বাস্যভাবে উপস্থিত ভারতীয় পুলিশ। ক্রূর পন্থায় পাকড়াও করে চলেছে তাদের। একজন চ্যা’লা আকুল স্বরে রুদ্রকে সতর্কবাণী পেশ করলো। পেছনের দরজা পেরিয়ে পলায়ন করার অনুরোধ জানালো। তবে পিছু হটলো না রুদ্রনীল। আত্মগরিমা বজায় রেখে ভ-য়ানক-হৃদয়বিদীর্ণ করা এক হু’ঙ্কার ছাড়লো। কেঁপে উঠলো উপস্থিত ক’জন। পিছিয়ে গেল চ্যালাদ্বয়। শক্ত হলো দা”নবটির গ্ৰিপ। পেছনের দরজা দিয়ে অশ্বগতিতে বেরিয়ে গেল রুদ্র। হাতে Volquartsen Black Mamba.

নিস্তব্ধ রজনী। ঘন গাছপালায় ঘেরা স্থানটি। তমসাবৃত রয়াল এনফিল্ডে বসে রুদ্র। ডান হাতে ক্ষি’প্র গতিতে নিয়ন্ত্রণ করছে স্টিয়ারিং। বাঁ হাতে ভলকুয়ার্টসেন ব্ল্যাক মাম্বা পি;স্তলটি। পুলিশের উদ্দেশ্যে ধাই ধাই শব্দে ছুঁড়ে চলেছে একেকটা প্রাণনাশক বু”লেট। প্রাণে মে রে দিচ্ছে তাদের। একটুও দয়ামায়া দেখাতে নারাজ সে। বর্বরোচিত রূপে প্রাণহরণ করে চলেছে। তীব্র ধ্বনিতে গর্জে উঠলো আইপিএস অফিসার্স। তারাও পাল্টা আঘাত হানলো। অতঃপর খেল শুরু ফোর হুইলার ভার্সেস ফোর হুইলার। ঘটনাস্থল হতে বেরিয়ে গেল তারা। পৌঁছে গেল জনশূন্য সড়কে। চলন্ত গাড়িতে বসে লড়াই চলছে। রাস্তার এপাশে রুদ্রর রয়েল এনফিল্ড। ওপাশে পুলিশের সরকারি গাড়ি। একে অপরকে আঘাত করার উদ্দাম অভিলাষ। অনেকখানি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হলো। বর্তমানে তারা এক ব্রিজের ওপর অবস্থান করছে। নিচে বহমান গভীর জলধারা। লড়াই এখনো চলমান। অকস্মাৎ পরপর তিনটে বু:লেট বি দ্ধ হলো রুদ্রর রয়েল এনফিল্ডের ডানপাশের সামনের চাকায়। হুড়মুড়িয়ে অনিয়ন্ত্রিত হলো জিপটি। রুদ্র ব্যস্ত হয়ে পড়লো ফোর হুইলারের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে। না। পারছে না সে। জিপ তখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এরমধ্যেই আরেকটি বু;লেট ধেয়ে এলো বিপরীত পক্ষ হতে। অনিয়ন্ত্রিত রয়েল এনফিল্ডের দোদুল্যমান অবস্থার জন্য বি’দ্ধ হলো ইঞ্জিন বরাবর। আর সম্ভব হলো না। আগত ভ-য়ানক বিপদ উপলব্ধি করে রুদ্রনীল সর্বোচ্চ চেষ্টা করলো জিপটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে। তবে শেষরক্ষা আর হলো না। ব্রিজের রেলিং ভেঙ্গে শক্তিশালী রয়েল এনফিল্ড গড়িয়ে পড়লো নদীর বুকে। ঝুপ করে পানিতে ভারী কিছু পড়ে যাওয়ার মতন আওয়াজ শোনা গেল। কিছুক্ষণ পিনপতন নীরবতা। তার মাঝেও পুলিশ অফিসারদের পরিহিত রিস্ট ওয়াচের সেকেন্ডের কাঁটাটা টিকটিক শব্দ তুলে ঘুর্ণায়মান। গুনে গুনে ত্রিশ সেকেন্ড অতিক্রান্ত। আকস্মিক এক প্রকট বি•স্ফোরণ। কয়েক ফুট উচ্চতা পর্যন্ত লম্ফ দিয়ে উঠলো নদীর জল। ভয়ে আতঙ্কে কিচিরমিচির শব্দে পলায়ন করলো নিশাচর পাখির দল। রাতের আঁধারে তমসায় আচ্ছাদিত জলধারা। গ্রাস করে নিলো জলজ্যান্ত এক মানবদেহ এবং জিপ গাড়িটি। র-ক্তক্ষয়ী সে লড়াইয়ের এ-ই অন্ত ছিল না কিন্তু।

ভাগ্যক্রমে হোক বা দুর্ভাগ্যক্রমে সে রাতের প্রাণঘা’তী লড়াই শেষে জানে বেঁচে গিয়েছিল রুদ্রনীল। দলের অত্যন্ত বিশ্বস্ত অনুচর তার আহত দীর্ঘকায় দেহটি উদ্ধার করলো। চারমাস যাবত কোমায় ছিল রুদ্রনীল। কেরালার এক হাসপাতালে নামপরিচয় পাল্টে সম্পূর্ণ নতুন পরিচয়ে চিকিৎসাধীন ছিল সে। দুনিয়ার নজরে মৃ-ত। তবে আইনের চোখে? জানা নেই তা। রুদ্রর মুখের ডানপাশ বাজেভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। প্লাস্টিক সার্জারির শরণাপন্ন হতে হলো। তবে আজও বি-ভৎস এক ছাপ লেপ্টে ক্ষতিগ্ৰস্থ গালে। শরীরের কিছু কিছু স্থান আগুনের উত্তাপ ঝ;লসে দিয়ে গেল। ভেঙ্গে গেল ডান হাত। দীর্ঘ নয় মাসের চিকিৎসা শেষে চিকিৎসক তাকে সুস্থ-সবল ঘোষণা করলেন। চিকিৎসালয় হতে অবশেষে মিললো মুক্তি। সে-ই থেকে প্রতিশো’ধের অনলে পু’ড়ছে রুদ্র। চৌধুরী। ওই ইরহাম চৌধুরী- একটা নামই তার জীবনে ভ’য়াল এক দাগ বসিয়ে দিলো। চূর্ণ-বিচূর্ণ করলো তাকে। তার কোমায় থাকাকালীন সময়ে পিতার ফাঁ সি হলো। কিচ্ছুটি করতে পারলো না সে। ব্যর্থ হলো। আজ ভীষণ নড়বড়ে তার প্রভাবশালী সাম্রাজ্যের শক্তিশালী ভিত। চোরের মতো রাতের আঁধারে সীমান্ত পার হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করতে হলো। কিছুতেই ছাড়বে না ওই হা** চৌধুরীকে। একটু একটু করে নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো সে। প্রতিশো’ধ শীঘ্রই পূরণ হতে চলেছে।
_

অমানিশায় ছেয়ে ঘরটি। বদ্ধ সকল জানালা। কেমন দম বন্ধ করা পরিবেশ। মাথার ওপরে ঘূর্ণায়ণমান সিলিং ফ্যান। রকিং চেয়ারে বসে সে মনুষ্যরূপী দা’নব। পড়নে কুচকুচে কালো কুর্তা ও পাটিয়ালা প্যান্ট। মাথায় ছোট করে ছাঁটা চুল। কোথায় হারিয়ে সেই লম্বা চুল! মুখের ডান পাশে কেমন বিদঘুটে দাগ। খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করলে গা ঘিনঘিন করে ওঠার মতো অবস্থা। চক্ষু বুজে অন্যমনস্ক সে। কিয়ৎক্ষণ বাদে সেথায় প্রবেশ করলো এক অধীনস্থ চ্যা লা। ডাকবে কি ডাকবে না। বিরক্ত হবে কি? শুকনো ঢোক গিলে ডেকে উঠলো সে চ্যা’লা,

” ভাইয়াজি! ”

চক্ষু মেলে তাকালো না সে ব্যক্তি। বরং গমগমে হৃৎপিণ্ড কাঁপানো স্বরে বললো,

” আপডেট বল। ”

সে চ্যা’লা আলতো করে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো। মনে মনে গুছিয়ে নিলো শব্দগুচ্ছ। অতঃপর জানালো কিছু মুহূর্ত পূর্বে প্রাপ্ত সকল তথ্য। শুনতে শুনতে চক্ষু মুদে রাখা মানুষটির অধরকোণে ফুটে উঠলো হিং:স্রতা। মস্তিষ্কে চড়ে বসেছে র-ক্ত পিপাসা। বাঁ হাতে চেপে ধরলো রকিং চেয়ারের হাতল। আস্তে ধীরে দুলতে লাগলো দীর্ঘকায় দেহটি। পুরোদস্তুর প্রস্তুত আগামীর আ-সুরিক নকশা। অপেক্ষা শুধু পরবর্তী দিনের।

‘ ব্যাং ব্যাং ‘

উ-দ্ভ্রান্তের মতো অবস্থা চৌধুরীর। আকুল দু নয়ন ঘুরে বেড়াচ্ছে সমুদ্রের তীরবর্তী একূল ওকূল। কোথাও নেই তারা। কোন অতলতায় গেল হারিয়ে? এই তো সকালবেলা। সমুদ্র বিলাসের আবদার করলো বউপাখিটা। সে আবদারে যোগ দিলো ছোট বোন ইনায়া। কিছু এক ভেবে রাজি হলো সে। দুপুর নাগাদ রিসোর্ট হতে বের হলো তারা। বাচ্চারা আসেনি। তারা রিসোর্টে গুরুজনের কাছে। ইরহাম, হৃদি, রাহিদ ও ইনায়া বেরিয়ে এলো দমবন্ধকর পরিবেশ হতে। সমুদ্রের কোলে এসেছে তারা। লবণাক্ত জলে পদজোড়া না ভিজিয়ে ফিরে যাবে বুঝি? কখনোই না। তাই তো চলে এলো। দুই দম্পতি একটু একাকী সময় কাটাতে ইচ্ছুক। তাদেরকে স্বস্তি উপহার দিতে দূরে অবস্থান করছে দেহরক্ষীরা। ইরহাম এক ফোনকলে ব্যস্ত। সবার থেকে একটুখানি দূরে। বাকিরা কাছেপিঠেই। ফোনালাপ শেষে পিছু ঘুরতেই চমকালো ইরহাম! কোথায় ওরা? হৃদি, ইনায়া, রাহিদ। এরমধ্যে গেল কোথায় হারিয়ে? লহমায় মস্তিষ্কে হানা দিলো কোনো এক ভাবনা। শূলে বি’দ্ধ হলো আত্মা। সমুদ্রের পাড়ে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াতে লাগলো সে। সময় তখন দুপুর তিনটে বেজে পঁচিশ মিনিট। অকস্মাৎ এক জিপ এসে থামলো ইরহামের সন্নিকটে। চমকিত নেত্রে তাকালো সে! জিপ হতে বেরিয়ে এলো এক স্বাস্থ্যবান কুস্তিগীরের মতো দেখতে পুরুষ। কৃষ্ণকায় বদন। মুখোমুখি হলো দু’জনে। কোনোরূপ আলাপণ ব্যতীত সে ব্যক্তি নিজ মোবাইল ধরলো ইরহামের চোখের সামনে। যান্ত্রিক পর্দায় প্রদর্শিত হচ্ছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য! স্তব্ধ নয়নে তাকিয়ে চৌধুরী! সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি আদেশের স্বরে অনম্র গলায় বললো শুধু,

” কাম উইথ মি। ”

.

চারিদিকে শুনশান নীরবতা। পবনের আলতো পরশে নৃত্যরত বৃক্ষপল্লব। প্রকাণ্ড একেকটি বৃক্ষ দাঁড়িয়ে রক্ষীর ন্যায়। কাছেপিঠেই শোনা যাচ্ছে পাহাড়ি কান্না। সাঙ্গু নদী তীরবর্তী কালো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান, সে কুমারী ঝর্নার। প্রায় ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ ফিট ওপর হতে গড়িয়ে পড়ছে পাহাড়ের ক্রন্দনধারা। সাঙ্গু নদী ও কুমারী ঝর্নার মধ্যস্থলে জমিনের বুকে অবস্থিত ছোট বড় অসংখ্য পাথর। কালচে বর্ণের শক্তিশালী সে পাথর। নদী তীরবর্তী পাথরের ধারে এক চেয়ারে রাজকীয় ভঙ্গিতে পায়ের ওপর পা তুলে বসে সে। খন্দকার রুদ্রনীল মল্লিক। পড়নে এক লালচে কুর্তা ও কালো পাটিয়ালা প্যান্ট। চোখে রে ব্যান এভিয়েটর। মাথায় ছাঁটা ছোট ছোট চুলের ওপর খেলা করছে শেষ দুপুরের রৌদ্র। দু পাশে দাঁড়িয়ে পাঁচজন অধীনস্থ গুণ্ডাপাণ্ডা। কিছুটা দূরে মাটিতে দু হাঁটু গেড়ে বসে চৌধুরী। ইরহাম চৌধুরী। স্বল্প আনত বদন। দু গালে আঘাতের চিহ্ন। ধূলোবালি লেপ্টে শুভ্র পোশাকে। পিঠের ধারে বাঁধা দু হাত। ঠোঁটের কোণ গড়িয়ে পড়ছে লাল তরল। আয়েশি ভঙ্গিতে বসে হাসছে রুদ্রনীল। তাচ্ছিল্য মিশ্রিত সে হাসিতে,

” চৌধুরী! ইশ্! এতটা কামজোর তুই? কাহা গায়া তেরা হিম্মাত? বউ, বোন তুলে নিলাম। অমনি ভয়ে সুরসুর করে চলে এলি? সো স্যাড! সাচ অ্যা ব্লা*ডি কাউয়ার্ড। ”

শেষোক্ত কথাটি দাঁতে দাঁত পিষে বললো রুদ্র। এতক্ষণে কৃপা করে মুখ তুলে তাকালো ইরহাম। কয়েক সেকেন্ড পূর্বেও যে চেহারায় মিশে ছিল আতঙ্ক-ভয়। সেথায় এখন ভিন্ন খেলা। বিজয়ের পরিতৃপ্তি। অধরকোণে অবিশ্বাস্যভাবে জ্বলজ্বল করছে বাঁকা হাসির রেখা। কিঞ্চিৎ ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতেই বোধহয় র:ক্তমাখা থুথু ছুঁড়ে ফেললো বামে। রুদ্র দেখছে। ঈষৎ বিস্ময় খেলা করছে মুখভঙ্গিতে। এর হঠাৎ হলোটা কি? ভূতে ভর করলো নাকি! ইরহাম প্রখর চোখে তাকিয়ে। রুদ্রর চোখে স্থির নভোনীল দু’টো চোখ। প্রতিটি শব্দে মিশে তেজস্বী ভাব,

” খন্দকার রুদ্রনীল মল্লিক। যেকোনো লড়াইয়ে নামার আগে অপনেন্ট’কে ভালোভাবে রিড করে নেয়া উচিত। নাহলে সামান্য এক ভুল আর পুরো খেলাটা ঘুরে যাবে। চেকমেট। ইয়্যু নো রাইট? তুই বোধহয় আমাকে পুরোপুরি রিড করিসনি। ইরহাম চৌধুরী আমার নাম। আজ অবধি কখনো কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করিনি। না করবো মৃ•ত্যুর আগে। তুই কি ভেবেছিস? আমি ভয়ে আতঙ্কে এত সহজে মিউ মিউ করে চলে এসেছি? ইয়্যু আর অ্যাবসোলেটলি রং রুদ্রনীল মল্লিক। তুই আমাকে তুলে আনিসনি। বরং আমি তোকে সুযোগ করে দিয়েছি আমাকে তুলে আনার। ”

ভ্রু যুগল ক্রমশ কুঞ্চিত হচ্ছে রুদ্রর। এসব কি বলছে এই চৌধুরী?

” জানিস তো কখনো কখনো বনের পশুকে তার ডেরার বাইরে আনার জন্য মাংসের লোভ দেখাতে হয়। সেভাবে তোকেও তোর গুপ্ত ডেরা থেকে বের করে এনেছি। শিকার সেজেছি আমি ও আমার পরিবার। ”

অপমানে লালাভ রঙ ছড়িয়ে পড়ছিল মুখে। মুষ্ঠিমেয় হচ্ছে শক্তপোক্ত হাত। ইরহাম বিদ্রুপের হাসি উপহার দিয়ে বলল,

” তোর কি মনে হয়? আমার স্ত্রী, বোন এখনো তোর কব্জায়? একটা কল করে কনফার্ম হয়ে নে তো। অবশ্য তোর লোকেরা ফোন তোলার মতো অবস্থায় থাকলে তবেই না ধরবে। এতক্ষণে হয়তো জমিনে লটকে পড়েছে। আমার সহচররা আচ্ছা খাসা খাতিরযত্ন করেছে কিনা! ”

দাঁতে দাঁত চিপে রুষ্ট স্বরে নাম উচ্চারণ করলো রুদ্র,

” চৌ ধু রী ”

উন্নতশির বলে উঠলো ইরহাম,

” হ্যাঁ চৌধুরী। গোটা দুনিয়াকে তুই ধোঁকা দিতে পারিস। নিজেকে মৃ-ত ঘোষণা করতে পারিস। তবে আমাকে নয়। আমি জানতাম তোর মতো দেশদ্রো;হী নর্দমার কীট এত সহজে ম-রবে না। ফিরে আসবেই। সেই তো ফিরে এলি। এবার রেডি হয়ে যা। খেল শীঘ্রই খতম হতে চলেছে। টিকটিক টিকটিক। ”

মুখজুড়ে নেমে এলো ঘনান্ধকার। শক্ত চোয়াল। অমোঘ স্বরে বললো সাংসদ চৌধুরী,

” যেদিন যে মুহূর্তে তোর কথামতো আমার মমতাময়ী মা এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। সেদিন সে মুহূর্ত হতেই তোর বিনা’শের কাউন্টডাউন আরম্ভ হয়েছে। টিক টিক টিক টিক। সময় এবার শেষ। ”

বলতে না বলতেই অকস্মাৎ উঠে দাঁড়ালো চৌধুরী। বাঁধন মুক্ত ডান পা দিয়ে জোরালো এক লা থ বসালো বাম পাশে দণ্ডায়মান শত্রুর পাঁজরে। সে শত্রু ছিটকে পড়লো পাথরের বুকে। অপ্রত্যাশিত প্রতিরোধে চমকালো উপস্থিত সকলে! রুদ্রর চক্ষু ইশারা পাওয়া মাত্রই ধেয়ে গেল বিশজন। অগ্নিতেজা চোখে তাকিয়ে চৌধুরী। একটু একটু করে হাতে লেপ্টে থাকা আলগা বাঁধন গড়িয়ে পড়লো জমিনে। দু’জন শত্রু একইসঙ্গে ছুটে এলো। আ’ক্রমণ করতে উদ্যত হতেই একজনের পেটে মুষ্ঠিমেয় আঘাত। আরেকজনের পেটে লা-থ। একা হাতে ত্তস্তাদি প্রদর্শন করতে ব্যস্ত চৌধুরী। চারদিক হতে ধেয়ে আসছে শত্রু। রুদ্রনীল দাঁড়িয়ে। ক্ষোভে-তোপে ফুলেফেঁপে উঠছে বক্ষস্থল। মুষ্টিবদ্ধ দু হাত। শক্ত চোয়াল। ছিটকে এক কোণে পড়েছে রে ব্যান এভিয়েটর। লড়াই পুরো জমে উঠেছে। একাকী শ’ত্রুদের নিষ্পিষ্ট করে যাচ্ছে ইরহাম। আরো শ’ত্রুদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেল। হঠাৎই ব’জ্রাঘাত সেথায়। ঘন গাছপালার বুক চিরে কিংবা পাথরের আড়াল হতে বেরিয়ে এলো কিছু শক্তিশালী মানব। পেশিবহুল দেহে জড়িয়ে শুভ্র রঙা আঁটসাঁট গেঞ্জি। নিম্নে মাল্টি কালার কার্গো প্যান্ট। হাতে তাদের ৭.৬২ এম.এম ক্যালিবার এর অ্যাসল্ট রা’ইফেল। মাথায় ছোট করে কাটা চুল। চোখেমুখে বিক্রমশালী অভিব্যক্তি। শত্রুর বুকে নৃ;শংসভাবে হানা দিচ্ছে তাদের রা’ইফেল নিঃসৃত একেকটি কার্তুজ। রুদ্রনীল তখন ইরহাম’কে প্রতিহত করতে ব্যস্ত। নি’র্মম আঘাত হেনে যাচ্ছে একে অপরকে। নয়া আগত মানববৃন্দ পরাভূত করে যাচ্ছে দেশের শত্রুগুলোকে। জমিনে গেড়ে দিচ্ছে একেকটি দেশদ্রো;হীকে। অনেকটা সময় জুড়ে লড়াই চলমান। লাল র ক্ত মিশে যাচ্ছে ঝর্নার জলে। ছোট-বড় পাথরের দেহে লেপ্টে লাল রঙা পাপ-পূণ্যের তরল।

রুদ্রর শরীরের যত্রতত্র আঘাতের চিহ্ন। ভারসাম্য হারিয়ে লুটিয়ে পড়তে চাইছে দীর্ঘকায় দেহ। তার দলের পঞ্চাশ জন প্রহৃত হয়ে এখানে ওখানে পড়ে। নিহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। আহত কয়েক শত্রু এখনো আ’ক্রমণ করতে ব্যস্ত। ইরহাম তাদের মতো দু’টো বে*হায়া’কে ধোলাইমোলাই করে যাচ্ছে। হঠাৎ ইন্দ্রিয় জানান দিলো পেছনে রয়েছে কেউ। ধেয়ে আসছে কোনো আঘাত। চকিতে পিছু ঘুরে ইরহাম হলো স্তব্ধ!
ওর ডান হাত ও কোমরের ফাঁক গলিয়ে নিশানা ভণ্ডুল হলো এক ধারালো ছু-রির। ইরহাম কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার পূর্বেই মস্তিষ্ক জানান দিলো পিছে রয়েছে কেউ। কোনো বিপদ নয়‌ বরং এক রক্ষাকবচ। যার দরুণ আগত শত্রুর পুরো দেহ কম্পমান অবস্থায়। যন্ত্রণায় বিকৃত মুখশ্রী। কব্জাকৃত হাত ছাড়াতে মস্ত মরিয়া। আস্তে ধীরে চোখখানি নিম্নে ধাবিত করলো ইরহাম। অবলোকন করলো এক শক্তপোক্ত লৌহকঠিন হাত। যে হাত ইরহামকে রক্ষা করতে চেপে ধরেছে শত্রুর কব্জি। চুরমা’র করে দিচ্ছে হাড্ডি। সে এক ভ’য়াল প্রতিরোধ। ইরহাম শ্লথ গতিতে ডানে ঘুরে দাঁড়ালো। তখুনি পেছনে দণ্ডায়মান আগন্তুক এগিয়ে এলো সম্মুখে। শত্রুর ভাঙ্গা হাতটি ছিটকে পড়লো কোমরের ধারে। মট করে এক হিমশীতল শব্দ। শত্রুর ঘাড় নৃ;শংসভাবে ভেঙ্গে দিলো সে রক্ষাকারী ব্যক্তি। লুটিয়ে পড়লো সে শত্রু জমিনে। বেঁকে গিয়েছে ঘাড়। প্রাণপাখি উড়াল দিয়েছে দূরাকাশে। অবাক নেত্রে তাকিয়ে ইরহাম! ঘুরে দাঁড়ালো সে বিপদের বন্ধু। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো চৌধুরী। তামাটে বর্ণের তার থেকেও দ্বিগুণ দশাসই চেহারার এক পুরুষ। মাথাভর্তি ক্ষুদ্র করে ছাঁটা চুল। ক্ষুরধার দৃষ্টি। দু চোখে অ’গ্নিদীপ্ত আভা। এক বুদ্ধিদীপ্ত স্ফু’লিঙ্গ। তীক্ষ্ণ নাসিকা। শক্ত খরসান চোয়াল। আরো লক্ষ্য করার পূর্বেই বাঁধা। বাঁ হাতে শত্রুকে পরাস্ত করতে ব্যস্ত সে ব্যক্তি। ডান হাতে ইরহাম। দু’টো শত্রুকে কুপোকাত করে তারা তাকালো একে অপরের পানে।

ইরহাম লক্ষ্য করলো সে মানবও তাকিয়ে ওর পানে। এতদিন ‘চৌধুরী’ নাম শুনে এসেছে। আজ দেখছে স্বচক্ষে। সে ব্যক্তি উচ্চতায় ইরহাম সমতুল্য। তবে তার দা’নবাকার শরীরের দশা ভিন্নতর। কাঁধ ও হাতের ফুলেফেঁপে ওঠা পেশি জানান দিচ্ছিল, দৈনন্দিন কঠোর শারীরিক কসরতের ফলাফল এ। প্রশস্ত বক্ষপট পাথরের ন্যায় কঠিন। বুকে বিদ্যমান খাঁজ আড়াল হয়েছে আঁটসাঁট শুভ্র রঙা গেঞ্জির অন্তরালে। পরিধেয় বস্ত্রের ওপর দিয়েই ফুলো ফুলো পেশি লক্ষ্যনীয়। দু হাতের চামড়া ভেদ করে যেন বেরিয়ে আসবে উদ্ধত অহংকারী শিরা উপশিরা। সিংহল সে হাতের শক্ত পাঞ্জা। যা শত্রু নিপাতে এক লহমায় পারদর্শী। আর দেখাদেখি হলো না। শত্রু নিধনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো দু’জনে।

পেরিয়েছে বহু সময়। এক প্রকাণ্ড গাছের সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষতবিক্ষত রুদ্রনীল। দেহের যত্রতত্র হতে গলিয়ে পড়ছে লাল তরল। অস্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস। লুটে পড়তে চাইছে দীর্ঘকায় দেহ। তার থেকে বেশ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সে দা’নবাকার আগন্তুক। দুইশো মিটার দূরত্বে দাঁড়িয়ে। হাতে ৭.৬২ এম.এম ক্যালিবারের অ্যাসল্ট রা’ইফেল। নিশানা নিবদ্ধ পশুবৎ রুদ্র পানে। রুদ্র দুর্বল হাত নেড়ে আকুতি জানাচ্ছে। বাঁচার আকুতি। ছাড় দেয়ার আকুতি। তবে মিললো না ছাড়। আজ অবধি বহু প্রাণ কেড়ে নিয়েছে সে। দয়ামায়া দেখাতে ছিল নারাজ। মাং-সাশী প্রাণীর ন্যায় ক্ষ’তবিক্ষত করেছে মানবদেহ। তবে আজ কেন বাঁচার আকাঙ্ক্ষা? আকুতিমিনতি? সমস্ত আকুতিমিনতি জলে ভেসে গেল। হারালো নিরালায়। সন্ধ্যা পূর্ববর্তী মুহুর্ত তখন। বাড়ি ফিরছে মুক্ত বিহঙ্গের দল। হঠাৎই প্রবল এক আলোড়ন! ভয়ে আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে উড়ে যাচ্ছে পাখপাখালি। একের পর এক হৃদয় হিম করা ধ্বনি। ম্যাগাজিনে ভরপুর প্রতিটি কার্তুজ ক্রো-ধান্মত্ত পন্থায় বেরিয়ে চলেছে। একাধারে আঘাত হানছে মাং-সাশী হা’য়েনা সমতুল্য রুদ্রর দেহে। অবিরাম ঝাঁ’ঝরা হয়ে যাচ্ছে বুক। ফিনকি দিয়ে বেড়োচ্ছে লাল রঙা নির্দয় তরল। ঝাঁকুনি দিয়ে উঠছে দীর্ঘকায় দেহ। ঠাস করে পিছিয়ে গেল রুদ্র। পিঠ ধাক্কা খেল গাছের কাণ্ডে। তখনো চলছে কার্তুজের লীলাখেলা। অবশেষে খালি হলো ম্যাগাজিন। নিস্তব্ধ চারিধার। অকথ্য চাহনিতে তাকিয়ে রুদ্র। এক দুই তিন। মাত্র কয়েক সেকেন্ড। ধপাস করে লম্বা চওড়া দেহটি লুটিয়ে পড়লো জমিনে। মুখ থুবড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হলো। দু হাত খামচে ধরে মাটি। র:ক্তে র’ঞ্জিত সে স্থান। বুকের দু পাশ, নিচ হতে অবিরাম বেরিয়ে আসছে র-ক্তলাল ঝর্না। হালকা করে এক প্রশ্বাস ছাড়লো রুদ্র। মুখ নিকটবর্তী মৃত্তিকা গেল উড়ে। অতঃপর মৃদু ঝাঁকুনি। চিরতরে বন্ধ হলো শ্বাস প্রশ্বাস। পৃথিবীর বুক হতে বিদায় নিলো এক প*শুধর্মা আ’ত্মা। এক রা;ক্ষসরাজ। নরাধ;ম রুদ্রনীল।

শক্তিশালী দেহের অধিকারী সে রুদ্র ঘা’তকের ছোট্ট এক ইশারা। স্বল্প সময়ের মধ্যেই পরিষ্কার ফকফকা হয়ে যাচ্ছে ঘটনাস্থল। কিয়ৎক্ষণ পূর্বের পা”শবিকতা এখন বিলুপ্তির পথে। ইরহাম দেখলো স্বচক্ষে। সাক্ষী হলো মাতৃহ;ত্যার নির্দেশক রুদ্রের নি-ষ্ঠুর প্রয়াণের। রুদ্র হতে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো ইরহাম। তাকালো সে লম্বা চওড়া ঘা’তকের পানে। কি সুদক্ষ পন্থায় এক কুখ্যাত-পাষণ্ড অপরাধীকে পৃথিবীর বুক হতে হটিয়ে দিলো। না থাকবে অপরাধী, না সংঘটিত হবে অপরাধ! হাহ্!

সে দীর্ঘকায় বলিষ্ঠদেহী পুরুষটি বীরদর্পে সেথা হতে প্রস্থান করছে। দু পাশে দাঁড়িয়ে সে-ই সঙ্গী মানুষগুলো। পড়নে শুভ্র রঙা গেঞ্জি। নিম্নে মাল্টি কালার কার্গো প্যান্ট। উন্নতশির ডান হাত উঁচিয়ে স্যালুট জানাচ্ছে সে ঘা’তককে। ইরহাম দেখলো। অনুধাবন করতে পারলো স্বাভাবিক কোনো বান্দা নয় এ। এত সম্মান, বীরত্ব, সাহসিকতা কোনো তো বিশেষত্ব রয়েছে। যা উপলব্ধি করতে তার একটুও অসুবিধে হলো না। পা-শবিক ঘটনাস্থল প্রস্থান করছিল সে বীরপুরুষটি। হঠাৎ থমকে গেল পদযুগল। কিছু স্মরণে এলো বুঝি! তন্মধ্যে পিছু ডেকে উঠলো ইরহাম। কৌতূহলী স্বরে শুধালো সে,

” ভাইজান। নামটা… ”

ঘুরে দাঁড়ালো তামাটে বর্ণ সে বীরপুরুষ। গাম্ভীর্যপূর্ণ স্বরে মৃদু হেসে জানালো,

” দুর্জয়। ”

অতঃপর সম্মান প্রদর্শনার্থে এক গৌরবান্বিত স্যালুট ইরহাম চৌধুরীর তরে। একদম আনুষ্ঠানিক পন্থায় জানালো সে স্যালুট। তামাটে বর্ণ পুরুষটিকে অনুসরণ করে বাকি সকলেও জানালো স্যালুট। ইরহাম চমকিত! গর্বিত। অপ্রত্যাশিত এ সম্মান ছুঁয়ে গেল হৃদয়ের রঙিন প্রকোষ্ঠ।

মহারাষ্ট্রের সে ভ’য়াল রাতে ম;রেনি রুদ্রনীল। ভারতীয় পুলিশ অনেক খুঁজেও তার লা শ পায়নি জলের গভীরে। পাবে কি করে? রুদ্রর দলবল যে অতি দ্রুততার সহিত সুনিপুণ কৌশলে উদ্ধার করে নিয়েছে তাদের আহত ভাইয়াজি’কে। পুলিশ বুঝলো সবটাই। তবুও ইচ্ছাকৃতভাবে দেশবাসীর চোখে রুদ্রনীলকে মৃ-ত ঘোষণা করলো‌‌। তাদের গুপ্ত চাল ছিল এটি। রুদ্রকে সাময়িক সময়ের জন্য বোকা বানানো। তবে গোপনে তদন্ত তখনো চলমান। বাংলাদেশ ও ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী একযোগে কর্মরত। খুঁজে বেড়াচ্ছে রুদ্রকে। তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো ইরহাম। তার গোপন কৌশল মোতাবেক খোঁজ মিললো মৃ-ত আজগর মল্লিকের বিশ্বস্ত সহচর এক ব্যক্তির। মুখে যার মেছতার দাগ। বহুবছর যাবত সে আজগরের সহযোগী। বর্তমানে রুদ্রর দেখভাল করছে। এ ব্যক্তিই ছিল মালিহা মায়ের প্রধান হ;ত্যাকারী। নিজ হাতে মালিহাকে আটবার ছু-রিকাঘাত করেছে। তাকে কি করে ছেড়ে দেবে চৌধুরী! গোপন এক অপারেশন সম্পাদিত হলো। গ্ৰেফতার হলো মেছতা ওয়ালা সে ব্যক্তি। টানা এক সপ্তাহ যন্ত্রণাপ্রদ রিমাণ্ডে ছিল সে। সেনাবাহিনীর দু”র্ধর্ষ পিটুনি ও অ-ত্যাচারে মুখ খুলতে বাধ্য হলো। অর্ধমৃ;ত অবস্থায় জানান দিলো, রুদ্র বর্তমানে সুস্থ। অবস্থান করছে খাগড়াছড়ি। সেখান থেকে কয়েকদিনের মধ্যেই স্থানান্তরিত হবে বান্দরবান। ইরহাম জানলো সবই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক গোপন পরিকল্পনা কষে নিলো। বাজি রাখলো নিজের ও পরিবারের প্রাণ।

চলবে।

[ অন্তিম পর্বের শেষাংশ ৬৬০০+ শব্দের। ফেসবুকে আঁটলো না। পোস্ট করতে সমস্যা হচ্ছিল। তাই অর্ধেকটা দিলাম। বাকি অর্ধেক ইনশাআল্লাহ্ আগামীকাল যথাসময়ে আসবে 😌 ]

♣️ সুহৃদ পাঠক বন্ধুরা….

তাহিরাহ্ ইরাজ এর লেখা গল্প-উপন্যাস সম্পর্কিত ছোট-বড় অনুভূতি ব্যক্তকরণ, গল্প নিয়ে আলোচনা, ভুলত্রুটি শুধরে দেয়া, রিভিউ প্রদান এবং গল্পের চরিত্র-দৃশ্য নিয়ে পোস্ট করতে জয়েন করুন আমাদের গল্প সংক্রান্ত গ্রুপে।

গ্রুপ লিংক 🍁

https://www.facebook.com/groups/499389245208190/?ref=share

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here