মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি #দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ #তাহিরাহ্_ইরাজ #অন্তিম_পর্ব [ দ্বিতীয়াংশ ] ( প্রাপ্তমনস্কদের জন্য )

0
531

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#অন্তিম_পর্ব [ দ্বিতীয়াংশ ] ( প্রাপ্তমনস্কদের জন্য )

তমসাচ্ছন্ন সে কুঠরি। মেঝেতে পাতলা কাঁথার ওপর শুয়ে কারাবন্দী জহির। নিজ বোনের হ•ত্যাকারী সে। এছাড়াও বহু অপকর্মে জড়িত। আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। বাকি জীবনটা কাটবে এ কুঠরিতেই। বাহ্যিক জগৎ, চাকচিক্য হবে না আর দেখা। উপভোগ করা। সিলিংয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে লোকটা। নিজ কর্মে এমন ভবিষ্যৎ জুটিয়েছে সে। নিজের ভাগ্য নিজেই করেছে বরবাদ। এই পাংশুল হাতেই করেছে বোনকে ছু-রিকাঘাত। এমনই হতভাগা, পাপী’ষ্ঠ সে। লুকিয়ে লুকিয়ে চুপিসারে সেদিন গিয়েছিল ছুটে। ছোট বোনের ঘা’তক হয়েও তার জানাজায় অংশ নিতে চেয়েছিল। মুখ লুকিয়ে ছদ্মবেশে গিয়েছিল সে। কিন্তু সফল হতে পারেনি। কড়া নিরাপত্তায় মোড়ানো ছিল সেদিনের ‘আনন্দাঙ্গন’। অজ্ঞাত কারোর প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শত চেষ্টা করেও সে অন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি। ভাগ্যে জোটেনি একমাত্র বোনের জানাজায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ। কিংবা কবরে একমুঠো মাটি ছুঁয়ে দেয়া। এরপরের দিনগুলো ছিল ফেরারী আসামির মতো। এদিক ওদিক পালিয়ে বেড়াচ্ছিল সে। ভবঘুরে মতো যার নেই কোনো স্থায়ী ঠিকানা। ভাগ্নে ইরহাম এছাড়াও পুলিশ অধীর হয়ে তাড়া করে ফিরছে তাকে। শেষমেষ মুন্সীগঞ্জে গিয়ে আশ্রয় নিলেন। চুপিসারে অবস্থান করলেন এক গোপন ঠিকানায়। তবে রাতের ঘুম, মানসিক শান্তি পালালো অজানায়। প্রতিনিয়ত অনুশোচনায় দ’গ্ধ হচ্ছিলেন উনি। বারকয়েক আ-ত্মহনন করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। ওই সাহসী সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা তার পক্ষে সহজ ছিল না। বড় জটিল ছিল। তবুও উনি নিজ সিদ্ধান্তে অটল রইলেন। ছদ্ম পরিচয়ে যোগাযোগ করলেন স্বীয় ভাগ্নের সঙ্গে। বাক্য মায়ায় আবিষ্ট করে ওকে আসতে বাধ্য করলেন। লুকোচুরি খেলার ছলে ভাগ্নের হাতে তুলে দিলেন অসংখ্য গোপন প্রমাণ। উনি নিজেও অপরাধ জগতের এক কালো অংশ। বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ উদ্দেশ্যে সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রমাণ রেখে দিয়েছিলেন। যে প্রমাণগুলোর ঠাঁই হলো এক ক্ষুদ্রাকৃতির পেনড্রাইভে। সে-ই পেনড্রাইভ, কারাকুরি রিপল আউট পাজল বক্সের মাধ্যমে ভাগ্নের হাতে তুলে দিলেন।

যথাপযুক্ত প্রমাণ পেয়ে বেশ লাভবান হলো ইরহাম চৌধুরী। নিজ গুণে সে ইতোমধ্যে বেশকিছু দুর্দান্ত প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। এখন অজ্ঞাত পরিচয় হতে প্রাপ্ত প্রমাণাদি। দুইয়ে দুইয়ে মিলে হলো চার। গ্ৰেফতার হলো শীর্ষস্থানীয় বেশকিছু অপরাধী। যার ফলস্বরূপ একসময় বিচারকার্য শেষে মৃ•ত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো খন্দকার আজগর মল্লিকের। জহির আহসান নামক পাপী’ষ্ঠ আ”ত্মা আজ আর বাঁচতে চায় না। মৃ-ত্যুর জন্য দিন গোনে। জানে না পরকালে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে। শুধু সে ম-রতে চায়। এই অনুতপ্ত, পাপে ভরা জীবনে শ্বাস প্রশ্বাস নেয়াটাও যেন দিনকে দিন বি-ষাক্ত হয়ে উঠছে। লেখনীতে তাহিরাহ্ ইরাজ। জহির আহসান স্বেচ্ছায় পুলিশে ধরা দিয়েছেন। তবে ওনার অগাধ বিশ্বাস যে ওনাকে কোনো না কোনো ধূর্ত পন্থায় আইনের কবলে ছুঁড়ে ফেলেছে আপন ভাগ্নে ইরহাম। সে ছাড়েনি ওনায়। কখনো ক্ষমাও করবে না। পারলো না শুধু নিজের হাতে প্রাণ নিতে। আইন নিজের হাতে তুলে নিতে অপারগ সে। তাই তো আইনের আওতায় ওনায় শাস্তি পাইয়ে দিলো। এবার আমৃ-ত্যু থাকো কারাবন্দি। সুবুদ্ধি হয়ে থাকলে করো অনুতাপ। তবুও মিলবে না ছাড়। পাপের শাস্তি পেতেই হবে। প্রতিটি মূহুর্তে ধুঁকে ধুঁকে ম-রবে সে। আত্মগ্লানিতে যাবে ডুবে। এরচেয়ে করুণ পরিণতি আর কি হতে পারে? সকল অপরাধের যোগ্য শাস্তি মৃ•ত্যুদন্ড নয়। কখনো কখনো অনুশোচনার আগুনে পু’ড়েও একজনকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়া যায়। এটাই তো সর্বোত্তম শাস্তি। এক জীবন্ত লা শ হয়ে বাকি জীবন কাটানোর নৃ•শংস পন্থা।

সময় ও স্রোত বয়ে চলে অবিরাম। কখনো নেয় না একবিন্দু বিশ্রাম। পেরিয়েছে বেশ কয়েকমাস। রিহাম চৌধুরী ও মাহিকা চৌধুরী এখন দেড় বছর বয়সের দু’টো আদুরে প্রাণ। বাবা মায়ের আহ্লাদে কলিজা তারা। তাদের আগমনে ‘আনন্দাঙ্গন’ এ ফিরেছে আনন্দের স্রোত। বাড়ির অন্দরে সদা বয়ে চলেছে উচ্ছ্বসিত কলতান। সকলে ব্যস্ত এই দুই বিচ্চুর পিছু পিছু। বিশেষত রিহাম। বড় ছোট সকলের ঘাম ছুটিয়ে ছাড়ে এই ক্ষুদ্র পটাকা। আর তার বনু? ভাইয়ের সঙ্গ দেয় মাত্র। চুপটি করে শব্দহীন হাসে। দুই ভাই-বোন এই মুহূর্তে নতুন আরামদায়ক পোশাক পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে চাচু ও ফুপির কোলে। সবাই প্রায় তৈরি। বাড়ির বাহিরে গাড়ি দাঁড়িয়ে। হৃদি ও রাজেদা খানম নেমে এলেই রওনা হবে তারা। গন্তব্য এবার দূরের পথ। রাহিদের কোলে রিহাম। ইনায়া ব্যস্ত কোথাও মাহিকা’কে নিয়ে। বাচ্চা দু’টো এখন ভালোই নাদুসনুদুস শরীরের অধিকারী। বিশেষ করে রিহাম। আস্ত একটা গুলুমুলু আণ্ডাবাচ্চা, রাহিদের ভাষ্যমতে। সে-ই তুলনায় মাহিকা কিছুটা দুর্বল। এখনো পুরোপুরি সবল নয়। মাঝেমধ্যে দুর্বলতার শিকার হয়। রাহিদ তার কোলে থাকা রিহামের সঙ্গে দুষ্টুমি করে কথা বলছে। রিহামও তার আধো আধো ভাষায় কথা বলছে,

” পুপাআআ। পুপায়া। পুউ। উ। ”

ত্বরিত মুখে আঁধার ঘনিয়ে এলো। রাহিদ দুঃখ ভারাক্রান্ত স্বরে বললো ,

” ওরে আমার হাতির বাচ্চা। আমি তোর কোন জন্মের ফুপা লাগি রে? খালি পুপা পুপা করিস। আমি তোর চাচু লাগি রে। চাচু। বল চাচু। চাআআ চুউউ। বল। ”

ফোকলা দাঁতে হাসলো বাচ্চাটা। মজা পাচ্ছে বুঝি। মুখে আঙ্গুল চালান করে ডেকে উঠলো,

” পুপাআ। ”

রাহিদ দাঁতে দাঁত পিষে আশেপাশে তাকিয়ে বললো,

” ইনুর বাচ্চা। আমার ভাইপোটার মগজ সার্ফ এক্সেল দিয়ে ভালোমতোই ধুয়ে দিয়েছে। এখন বাচ্চা হাতিটা চাচু ডাকতেই চায় না। খালি পুপা পুপা করতে থাকে। আব্বে কে তোর পুপা? নির্ভেজাল খাঁটি চাচু হই আমি। ”

রিহামের পানে তাকিয়ে আদুরে স্বরে,

” ওই বাচ্চা হাতি। আমি তোর চাচু লাগি। বল চাচু। ফুপা আগে না চাচু আগে? চাচু আগে তো। আবার সবচেয়ে আপনও। বুঝেছিস? ডাক না। চাচু। ওই। ডাক না। চা চুউউ। ”

মুখ থেকে লালাসিক্ত আঙ্গুল বের করে রাহিদের গালে বুলিয়ে দিলো পিচ্চিটা। আদুরে স্বরে ডেকে উঠলো,

” পুউউ পা। ”

ব’জ্রকণ্ঠে হু’ঙ্কার দিয়ে উঠলো রাহিদ,

” ইনুর বাচ্চা! ”

কাঁপলো আকাশ। ভাঙলো বাতাস। ঠোঁট উল্টিয়ে কেঁদে দিলো রিহাম। ব্যাস হয়ে গেল। কোথা হতে তড়িঘড়ি করে ছুটে এলেন এজাজ সাহেব। আদরের নাতিকে কোলে নিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন। নাতির কান্নায় ওনার বুকটা ফালাফালা হয়ে যাচ্ছে। দাদুভাই এমন করে কাঁদছে কেন? কি হয়েছে ওর? এই অপদার্থটা বকেছে? নাকি মে-রেছে? অসন্তুষ্ট হয়ে এজাজ সাহেব রাহি’কে দিলেন এক ধমক। আর নাতির কান্না থামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। এদিকে ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁদো কাঁদো চাহনিতে তাকিয়ে রাহিদ। ‘চাচু’ বলতে বলায় এতমোটা দণ্ডনীয় শাস্তি! বড় নিষ্ঠুর-নির্মম এ দুনিয়া। থাকবে না সে। এখুনি হিমালয় যাবে। টিকেট এই কাটলো বলে। হুঁ।

.

ফুরফুরে এক চঞ্চল সকাল। মিঠি রৌদ্র খেলা করছে গাত্রে। ‘আনন্দাঙ্গন’ প্রাঙ্গনে ক্রমান্বয়ে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকটি গাড়ি। এজাজ সাহেবের কোলে রিহাম ও পল্লবীর কোলে মাহিকা। রাহিদ ও দু’জন দেহরক্ষী দু’টো গাড়ির ডিকিতে লাগেজ তুলতে ব্যস্ত। রায়না ও ইনায়া পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। শেখ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত সেথায়। এসেছে হৃদিদের বিদায় জানাতে। ইরহাম সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে। কানে ঠেকে মোবাইল। কোনো গুরুগম্ভীর আলাপণে ব্যস্ত মনে হচ্ছে। পাশে দাঁড়িয়ে সিকিউরিটি হেড রুস্তম।

” আচ্ছা মা। তাহলে সাবধানে যাবি। ঠিক আছে? ওখানে হৈ হুল্লোড় করতে গিয়ে নানুভাইদের আবার অবহেলা করিস না যেন। ওদের মনে করে সময়মতো খাইয়ে দিবি। বেশি গভীর পানির কাছে যাবি না। ঠাণ্ডা লেগে যাবে। আর শীত শীত লাগলে রাতে কাঁথা জড়িয়ে ঘুমাবি। ”

মায়ের উপদেশবাণী শুনে নিঃশব্দে হাসলো হৃদি। মায়ের বাহু আলিঙ্গন করে কোমল স্বরে বললো,

” বুঝেছি আম্মু। তুমি অহেতুক চিন্তা করো না। যা হবে ইনশাআল্লাহ্ ভালোই হবে। আর তোমার আদরের নানুদের আমি অবহেলা করতে পারি? ওদের দাদাজান তো তাহলে আমাকে ত্যাজ্য পুত্রবধূ করবেন। ”

মেয়ের কথায় না হেসে পারলেন না ফারহানা। আসলেই এজাজ সাহেব ইদানিংকালে নাতি-নাতনিকে নিয়ে বেশ পজেসিভ হয়ে পড়েছেন। ওরাই যে ওনার শেষ বয়সের সুখের ফোয়ারা। ফারহানা বললেন,

” আচ্ছা ঠিক আছে। অবহেলা করতে হবে না। নিজের খেয়াল নিস। অন্যদের খেয়াল রাখতে গিয়ে নিজেকে ভুলে যাস না যেন। ”

ফোনালাপে লিপ্ত মানুষটি। পড়নে শ্বেতশুভ্র পাঞ্জাবি পাজামা। মসৃণ চুলগুলো হালকা হাওয়ায় ক্রীড়ারত। বাঁ হাত মাঝেমধ্যে কথার তালে নড়ে চলেছে। নড়ছে নে-শালো অধরোষ্ঠ। সুদর্শন একান্ত পুরুষের পানে অলপক নেত্রে তাকিয়ে হৃদি। আনমনে লহু স্বরে বলে উঠলো,

” আমার খেয়াল রাখার জন্য সে রয়েছে তো। ”

মা ঠিক খেয়াল করলেন না। তাই শুধোলেন,

” কি? ”

চকিতে হুঁশ ফিরলো। জিভ কেটে মায়ের বাহু ছেড়ে দিলো হৃদি। সোজা হয়ে দাঁড়ালো। চমৎকার রূপে মিথ্যা বলে ফেললো,

” ও কিছু না। বলছি তোমরাও নিজেদের খেয়াল রেখো। সাবধানে থেকো। ”

” হুম। তোরাও সাবধানে থাকিস।‌ ”

মেয়ের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলেন ফারহানা। হৃদি মুচকি হেসে নিজ পরিবারের সদস্যদের থেকে বিদায় নিলো। আলতো আলিঙ্গন করলো বোনেদের। বাদ গেল না বড় বোন রাঈশাও। রাঈশা মৃদু হেসে ওর গালে হাত বুলিয়ে দিলো। বিপরীতে প্রসন্ন চিত্তে হাসলো হৃদি। রাঈশা কন্যা ফারিজা তখন পল্লবীর পাশে দাঁড়িয়ে। হাত উঁচিয়ে মাহিকার হাত ধরে দুষ্টুমি করছে। হাসছে দু’জনেই। ফারিজা এখন আর সেই বাচ্চা নেই। বড় হয়েছে কিছুটা। টুকটাক ভালোই কথা বলে। পাকনা বুড়ি একটা।

সেভেন সিটার এসইউভি’তে বসেছে পরিবারের সদস্যরা। ইরহাম স্ত্রীর পার্শ্ববর্তী গাড়ির দ্বার বন্ধ করে দিলো। নিজে বসলো চালকের পাশের সিটে। দ্বিতীয় সারির সিটে বসে হৃদি, ইনায়া ও দুই পুঁচকে। শেষের সিটে বসে রায়না ও পল্লবী। পরের গাড়িতে এজাজ সাহেব, রাহিদ ও রাজেদা খানম। এছাড়াও সঙ্গে রয়েছে দেহরক্ষীদের গাড়ি। পরপর চারটে গাড়ি প্রস্থান করলো ‘ আনন্দাঙ্গন ‘ প্রাঙ্গন হতে। সামনে ও পেছনে দেহরক্ষীদের গাড়ি। মধ্যখানে চৌধুরী পরিবার। গাড়ি ছুটে চলেছে গন্তব্যে। ইতিমধ্যে বিদায় নিয়েছে শেখ পরিবার।

কক্সবাজার, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় সদর দপ্তরের একটি শহর, মাছ ধরার বন্দর, পর্যটন কেন্দ্র । আইকনিক কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ। বিশ্বের দীর্ঘতম নিরবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত। এটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৫০ কিমি (৯৩ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত। কক্সবাজার ‘Panowa’ নামেও পরিচিত, যার আক্ষরিক অর্থ “হলুদ ফুল”। আরেকটি পুরানো নাম ছিল “পালংকি”। বহুদিন বাদে পারিবারিক ছুটি কাটাতে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ কক্সবাজারে আগমন, চৌধুরী পরিবারের। তারা সকলে চেক ইন করেছে ‘ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্প্যা কক্সবাজার’ এ। সমুদ্র তীরবর্তী অবস্থিত এ রিসোর্ট। অন্দরে প্রবেশ করলো তারা। অজানায় রয়ে গেল কিছু সুতীক্ষ্ণ চাহনি।

.

নিকষকৃষ্ণ রজনী। কক্সবাজার আগমনের পর আজ প্রথম রাত। বিছানায় শুয়ে ইরহাম। পাতলা ফিনফিনে শুভ্র শার্ট পড়ে শুয়ে সে। মানুষটির বক্ষলগ্না হয়ে শুয়ে হৃদি। ওদের আত্মজ-আত্মজা পাশেই নরম পাশবালিশের ঘেরাটোপে নিদ্রায় বিভোর। উন্মুক্ত জানালা। চঞ্চল রূপে ঘরে প্রবেশ করছে ফুরফুরে হাওয়া। নৃত্যরত পর্দার আবরণ। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে কৃষ্ণবর্ণ দীঘল চুল। আবৃত করে দিচ্ছে মুখ। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের নিকটবর্তী অবস্থান করছে তারা। বিছানার মধ্যখানে মোহাচ্ছন্ন-নরম-কোমল মায়ায় লুটোপুটি খাচ্ছে চন্দ্রিমা। হালকা শীতলতম আবহাওয়া। শিরশিরানি ছড়িয়ে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। একান্ত মানবটির সান্নিধ্যে আদিম বন্যতা জেগে তনুমনে। বহুদিন ধরে হয় না কাছাকাছি আসা। হয়না মধুরতম অধর মিলাপ। একে অপরেতে সর্বশেষ কবে মত্ত হয়েছে তা যেন এক সুদূর অতীতের আল্পনা। আজ এ নৈঃশব্দ্য রজনীতে হৃদি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উদ্দাম স্রোতে ভেসে বেড়াতে মরিয়া। ওর ঘন শ্বাস আছড়ে পড়ছিল স্বামীর বক্ষপাশে। পেলব আঙ্গুল গুলো একটু একটু করে আঁকিবুঁকি করে চলেছে বুকের বাঁ পাশে। হৃৎপিণ্ড বরাবর। আঙ্গুলের কোমলতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিল শার্টের পাতলা আবরণ ভেদ করে করে। ধীরে ধীরে হালকা হচ্ছে মানুষটির তন্দ্রাভাব। বুঝে ওঠার চেষ্টা করছে এই প্রলুব্ধকর স্পর্শের মূল হেতু। চকিতে শিরদাঁড়া বরাবর তড়িৎ প্রবাহিত হলো। অধরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরশ অঙ্কিত হচ্ছে উদোম বক্ষপটে। কতখানি সরে শার্ট। ঘন শ্বাস পড়ছে। নিয়ন্ত্রণ হারানোর উপক্রম মানুষটির। মুঠোবন্দী হয়ে আসছে হাত। কোনোরূপ স্ত্রীকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো সে। বিপরীতে শুনলো নে”শাতুর স্বরে নিজ নাম,

” ইরহাম! ”

অস্ফুট সে স্বর। মা”দকতায় আচ্ছন্ন। স্ত্রীর ঘাড়ে চুলের ভাঁজে পাঁচ আঙ্গুল ডুবিয়ে দিলো মানুষটি। সম্মোহিত স্ত্রীর মুখখানি নিয়ে এলো সন্নিকটে। অধর ছুঁয়ে থুতনি। ফিসফিসিয়ে পরাভূত স্বরে জানায় সে,

” তুমি ক্লান্ত। আজ না সোনা। ”

” নাহ্! ”

থামলো না হৃদি। নিজের সনে প্রমত্ত স্রোতস্বিনীতে ভাসিয়ে নিলো তারে। আবেগের সংযমী বাঁধ ভাঙলো কিছু মুহূর্ত বাদেই। নিজ অর্ধাঙ্গীর এলোমেলো প্রগাঢ় ছোঁয়া ও আকাঙ্ক্ষিত সান্নিধ্যে স্নায়ু দুর্বল হলো। অনিয়ন্ত্রিত সত্তা। আর নিজেকে সামলাতে পারলো না ইরহাম। দুর্বল হাতে সরিয়ে দিলো স্ত্রীকে। বালিশে ঠেকে গেল মাথা। বিছানা ছেড়ে নেমে গেল স্বামী মানুষটি। আকুল নয়নে তাকিয়ে হৃদি। মানুষটি এমন করে ওকে ফিরিয়ে দিতে পারলো? দু চোখে অশ্রুধারা নামলো। অস্থির শ্বাস প্রশ্বাসের গতিবেগ। ক্ষণিকের মধ্যেই ভাঙলো ভুল। আদরের পুত্রকে কোলে তুলে নিয়েছে ইরহাম। ব্যস্ত পায়ে বিছানার ডান পার্শ্ববর্তী আরামদায়ক দোলনায় শুইয়ে দিলো। একইভাবে শুয়ে দিলো আদরের কন্যাকে। অতঃপর স্ত্রীর পানে ঘুরে তাকালো ইরহাম। সে চাহনির প্রগাঢ়তায় শিরশির করে উঠলো তনুমন। আগত মুহুর্ত অনুভব করেও আজ নত হলো না মেয়েটির আঁখিপল্লব। বরং আগত একান্ত মুহূর্তের জন্য গুছিয়ে নিলো নিজেকে। আবেদনময়ী রূপে প্রণয়-কামনার অ’গ্নি জ্বেলে একান্ত প্রিয় মানুষটিকে আহ্বান জানালো আপন উষ্ণতার শয্যা গ্ৰহণ করতে। বড্ড সাহসী আজ হৃদি নামক রমণী। এ কি হলো তার? স্বভাববিরুদ্ধ এমন সিংহী আচরণ কি করে করছে সে! ধীরপায়ে বিছানায় অগ্রসর হচ্ছে ছোট্ট সিংহীর আজ্ঞাবহ ইরহাম নামক ক্ষমতাধর, শক্তপোক্ত পুরুষটি। প্রেমাসক্ত নেত্রে তাকিয়ে সঙ্গিনীর পানে। বুকের ওপর রাখা হাতটি ধীরলয়ে নিম্নগামী হচ্ছে। একে একে উন্মুক্ত হচ্ছে পাতলা শার্টের বোতাম। একটু একটু করে দৃশ্যমান হচ্ছে পুরুষালি পেটানো দেহের সম্মুখভাগের খাঁজ কাটা একেকটা ভাঁজ। সেথায় দৃষ্টি নিবদ্ধ হতেই শুকনো ঢোক গিললো নে-শায় আসক্তা মেয়েটি। খোলা শার্টের দু ধার দু দিকে হাওয়ায় দোদুল্যমান। শার্টটি তখনো দেহে জড়িয়ে। আস্তে ধীরে সঙ্গিনীর উষ্ণতামাখা শয্যা গ্রহণ করলো মানুষটি। অতি সন্নিকটে তারা। মধ্যকার দূরত্ব প্রায় শূন্যের কোঠায়। ছুঁই ছুঁই নাক। ডান হাতের পাঁচ আঙুলে শক্ত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো সঙ্গিনীর মাথার পেছনের এক গোছা চুল। ঊর্ধ্বমুখী হলো মেয়েটির মায়াবী সুশ্রী আনন। কিঞ্চিৎ ব্যথা অনুভূত হলেও কিছু না বলে অনড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে একান্ত মানুষটির প্রণয়াসক্ত নভোনীল দু চোখের গভীরে। সন্নিকটে অবস্থিত আদুরে মুখটিতে উষ্ণ শ্বাস-প্রশ্বাস ছড়িয়ে দিতে দিতে, অতি লহু স্বরে নে’শা মেখে বলে উঠলো ইরহাম,

” ক্লান্তিকর রাতটা ছাড় দিতে চেয়েছিলাম। পছন্দ হলো না।এখন সামলে নাও এই উ;ন্মাদ আমিটাকে। ”

বিপরীতে কিচ্ছুটি বললো না হৃদি। করলো না কোনো দ্বিরুক্তি। বরং পরম প্রশ্রয়ে নিজের সনে আরো আগলে নিলো একান্ত মানবকে। পেলব হাত দুটি ব্যস্ত তখন আধখোলা শার্টটা পুরোপুরি দেহমুক্ত করতে। একে অপরের আঁখিতে হারিয়ে অতিবাহিত হলো কিয়ৎপল। আচমকা ইরহামের গলা জড়িয়ে ধরলো হৃদি। বিনিময়ে সে-ও তৎক্ষণাৎ পেশিবহুল দু হাতে গ্ৰহণ করে নিলো শয্যাসঙ্গিনীকে। চঞ্চল পুরুষালি পুরু অধরযুগল তখন ভ্রমরের ন্যায় ভ্রমণ করে গেল রমণীর গালে, কর্ণ পাতায়, কাঁধে, গলদেশ ও ঘাড়ে। অতঃপর সে রাত কাটলো তাদের বিনিদ্র। বাংলার দক্ষিণাঞ্চলীয় সে ঘরে ছড়িয়ে পড়লো প্রেমাকাঙ্ক্ষার তীব্রতা। হলো অধরে অধরে মিলাপ। একান্ত জনের চেনা সান্নিধ্যে নতুন করে মত্ত হলো তারা। অনুভব করতে লাগলো প্রতিটি পরশের প্রখরা। একান্ত লগ্নের অতলতায় পৌঁছে একসময় সে বদ্ধ অন্ধকার কামরায় শোনা গেল তাদের টুকরো ফিসফিসানি ধ্বনি,

” ভী-ষণ ভালোবাসি আমার হৃদরাণী। ”

” আমিও খুব ভালোবাসি আমার এমপি সাহেব। ”
.

অর্ধাঙ্গিনীর নরম-উষ্ণ ওমে ঘুমিয়ে ইরহাম। মুখ লুকিয়ে গলদেশে। ঘুম নেই শুধু সে রমণীর দু চোখে। ঘুমন্ত স্বামীর চুলের ভাঁজে গলিয়ে বাঁ হাতের আঙ্গুল। আলতো করে আঙ্গুল বুলিয়ে চলেছে সে। চিরচেনা, তার একান্ত পুরুষের পানে তাকিয়ে হৃদি। এক ভীষণ মায়া আর মুগ্ধতায় ছেয়ে চাহনি। ঘুমন্ত মানুষটির মুখশ্রীতে কে যেন অপার মায়া ও স্নিগ্ধতার রংতুলি ছুঁয়ে গেছে। তাইতো পরম সুখনিদ্রায় মগ্ন একান্ত মানুষটির প্রতি ভীষণভাবে মায়া-আদর-ভালোবাসা কাজ করছে মেয়েটির হৃদগহীনে। ক্ষণে ক্ষণে নরম ওষ্ঠাধর আলতো ছুঁয়ে যাচ্ছে স্বামীর চওড়া ললাট। হাতের তেলোয় কখনো কখনো আদর করে বুলিয়ে দিচ্ছে চাপদাড়িযুক্ত ডান গালটা। কখনো নিদ্রায় বুজে থাকা দীর্ঘ পল্লববিশিষ্ট চোখ দুটো। তো কখনো সফেদ চাদরে ঢেকে থাকা উঁচু-নিচু পেশিযুক্ত কাঁধ, পিঠের একাংশ। থেকে থেকে মেয়েটা শুধু আদরের বর্ষন করেই চলেছে ঘুমন্ত ইরহামের প্রতি। অথচ মানব ঘুণাক্ষরেও টের পেলো না, জানতেও পারলো না। পারলে নিশ্চিত তাকেও পাল্টা আদরটা হিসাব কষে দ্বিতীয় দফায় বুঝিয়ে দিত। ভেবেই স্বচ্ছ হাসলো হৃদি। পরক্ষণেই লজ্জালু আভা ছড়িয়ে পড়লো মুখশ্রীতে। আজ যে মানুষটার ছোঁয়ায় উ”ন্মাদনার আধিপত্য প্রবল ছিল। বিবাহিত জীবনের প্রায় আড়াই বছর পার করে আজ প্রথমবারের মতো মানুষটাকে এতটা বেসামাল হতে দেখলো হৃদি। তবুও কোনো রকম বাধা প্রদান করেনি সে। বরঞ্চ প্রশ্রয় দিয়ে কাছে টেনে নিয়েছিল আরো। এখন যে ভাবতেই লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে সে।

এই সুন্দর চরিত্রের মানুষটি তার অর্ধাঙ্গ। এই বুদ্ধিদীপ্ত নভোনীল চক্ষুদ্বয়ে সদা সর্বদা দেখা যায় তার জন্য মুগ্ধতা-আকাঙ্ক্ষা-ভালোবাসা। এক নারীতে সন্তুষ্ট এ মানুষটি। কখনো কোনোরূপ স্ক্যান্ডাল কিংবা কুকর্মে জড়িয়ে যায়নি সে। নিজ আখলাক নিষ্কলঙ্ক রাখতে সক্ষম হয়েছে। এই মানুষটিই তার চিরসাথী। ইহকাল ও পরকালে শুধু এরই হয়ে থাকতে চায় মন। প্রতিটি দোয়ায় সদা অটুট থাকে তার নাম। ইরহাম। সে পরম সৌভাগ্যবতী ইরহাম পত্নী হতে পেরে। তার সন্তানদের মা হতে পেরে। ভেবেই বাঁ পাশে তাকালো। বাঁ হাতে নাড়াতে লাগলো দোলনা। নিদ্রায় বিভোর দু সন্তান আরেকটু আরাম পেয়ে ঘুমিয়ে। এ জীবনে মহান আল্লাহ্ তাকে ভাবনাতীত সুখ-শান্তি দিয়েছেন। বিনিময়ে কেড়ে নিয়েছে এক মহামূল্যবান আপনজন। যার কথা স্মরণে এলে আজও ডুকরে কেঁদে ওঠে মন। পাঁজর ভেঙ্গে পায় যাতনায়। জ্বা’লা করে অন্দরে। অশান্ত হয় স্নায়ু। ‘সে’ তাদের মালিহা মা। মাতৃহারা হয়ে কেটে গেল কতকাল। দেখতে দেখতে এক বসন্ত পেরিয়ে গেল। এভাবেই যাবে দিন। কাটবে মাস। বছর। অতঃপর যুগ-যুগ। হায়! কিন্তু ফিরে আসবে না সে। স্নেহময়ী স্বরে ডেকে উঠবে না ‘ হৃদি মা! ‘

‘ মা গো। কেন এভাবে একা করে চলে গেলে? তোমার ছেলেটা যে বড্ড একা হয়ে পড়েছে। তুমি তো জানো তোমার আদরের ছেলেটা কেমন। ভেতরে ভেতরে গুমরে ম•রে যাবে তবুও টু শব্দটি করবে না সে। আমি এমনই হতভাগী স্ত্রী, স্বামীর দুর্দিনে পাশে থাকতে পারিনি। পারিনি তাকে সান্ত্বনার দু’টো বাণী শোনাতে। বুকে টেনে নিয়ে তার দুঃখ নিবারণ করতে। ব্যর্থ আমি। নিজেই যে অর্ধমৃ-ত হয়ে পড়ে ছিলাম। তাকে কিভাবে সামলাতাম? আমায় ক্ষমা করে দিও মা। আমি পারিনি তোমাকে বাঁচাতে। আমার জন্য তুমি চিরতরে হারিয়ে গেলে। চলে গেলে। ‘

ভেতরে এক চাপা কষ্ট অনুভূত হচ্ছিল। ক্রন্দনের উত্তাল তরঙ্গ বয়ে যাচ্ছিল বুকে। স্বামীর চুলে আলতো করে ওষ্ঠচাপ বসালো হৃদি। মনের অরণ্য হতে প্রভুর তরে আকুলতার সহিত প্রার্থনা করে উঠলো নিভৃতে-নিঃশব্দে,

‘ ইয়া রব্বুল আ’লামিন! আমার ভাগ্যের সুখটুকু কেড়ে আমার মানুষটির নামে করে দিয়েন। কখনো কোনো দুঃখকষ্ট তাকে ছুঁতে না পাক। আমাদের এই ছোট পরিবারে আপনার রহমত ও বরকত বর্ষণ হতে থাকুক আম’রণ, ইয়া আল্লাহ্। আমরা যেন এভাবেই আপনার পথে, ইসলামের পথে থাকতে পারি। একসাথে বৃদ্ধ বয়সে হাতে হাত রেখে একে অপরের অবলম্বন হতে পারি। কখনো বিন্দুমাত্র বিচ্ছেদের স্বাদ গ্রহণ করতে না হোক। আমাদের দয়া করে এভাবেই একসাথে রাখিয়েন। আমিন! ”

দু সন্তানের পানে দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো। তাদের জন্যও দোয়া করলো মেয়েটা। বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিলো। কোথায় যেন লুকিয়ে আতঙ্ক। ভয়ের হাতছানি। কিছুক্ষণ বাদেই ফজরের ওয়াক্ত আরম্ভ হবে। নিদ্রায় আর মগ্ন হলো না মেয়েটা। নানাবিধ চিন্তায় সময় অতিবাহিত করতে লাগলো। অবচেতন মনে নিজের সঙ্গে আরো আগলে নিলো তার মানুষটিকে।

কক্সবাজার সফরের আজ দ্বিতীয় দিন। চঞ্চল সমুদ্রের স্রোতধারা। উদ্দাম হাওয়ায় উড়ু উড়ু ওড়না। এলোমেলো হয়ে মুখে আছড়ে পড়ছে কেশরাশি। আদুরে রূপে আছড়ে আছড়ে পড়ছে ঢেউ। ভিজিয়ে দিচ্ছে পদযুগল। বালুকাময় তীরে এখন জলের আধিপত্য। রাহিদ ও ইনায়া পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। পুরুষালি হাতের মুঠোয় বন্দী পেলব হাত। উড়ে যেতে চাইছে ওড়নার কোণ। তারা নৈঃশব্দ্যে উপভোগ করে চলেছে সমুদ্রের গর্জন। শ্রবণপথে পৌঁছাচ্ছে ঢেউয়ের অনবরত প্রহার। সে এক হৃদয়ছোঁয়া ধ্বনি! পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কপোত-কপোতী। প্রেমময় শান্ত এ মুহুর্তে জাগতিক হুঁশ হারিয়ে তারা। ধ্যান জ্ঞান সবেতে সুবিশাল জলধারা।

বছরের এ সময়টিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে জনসমাগম কম। তাই তো এই সময়টি বেছে নিয়েছে ইরহাম। পরিবারের সঙ্গে এসেছে কক্সবাজার। রা’নায়া দম্পতির বিবাহিত পরবর্তী এটাই দূরের সফর। ইতিপূর্বে তারা কাছেপিঠে গিয়েছে। দূরে যাওয়ার মতো সময় ও সুযোগ কোনোটিই হয়নি। এ প্রথমবার। তাই তো ওদেরকে নিভৃতে ছেড়ে অন্যত্র পরিবারের বাকি সদস্যরা। ওরা নিজেদের মতো করে একটু সময় কাটাক। এনজয় দ্য বিউটিফুল, পিচফুল টুগেদারনেস। তবে তাদের অগোচরেই রয়ে গেল কোনো বিপদের আগমনী বার্তা। ওই তো দূরে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কারা অনুসরণ করে যাচ্ছে! ঢাকা টু কক্সবাজার। এমনি এমনিই কি এতটা পথ পিছু নিলো তারা! কোনো কারণ তো নিশ্চয়ই রয়েছে। সেটা কি? কি এদের প্রকৃত পরিচয়?

চলবে।

[ আসছে অন্তিম পর্বের শেষাংশ 🖤 সুন্দর অনুভূতিময় মন্তব্য করতে ভুলবেন না যেন। রোমান্টিক হৃ’হাম! কেমন লাগলো? শরম 🫣 ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here