#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৩১ ( প্রথমাংশ )
বিভাবরীর কৃষ্ণাবরণে আচ্ছাদিত ধরিত্রী। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সুঠামদেহী মানব। যন্ত্রণায় কাতর মস্তক। দপদপ করে চলেছে কপালের রগ। র’ক্তিম আভা ছড়িয়ে চোখের সফেদ অংশে। রাতের সতেজতা, ঝিরিঝিরি পবন তাকে স্বস্তি দিতে ব্যর্থ। শরীরে পিছলে যাচ্ছে বেলকনির কৃত্রিম স্বল্প আলোকছটা। পড়নে ঘরোয়া রাত পোশাক। যন্ত্রণায় যখন নুয়ে আসছে মস্তক ঠিক সে মুহূর্তে আগমন হলো প্রশান্তির আরেক নাম। তার হৃদরাণী! স্বামীর পানে চায়ের কাপ বাড়িয়ে মেয়েটি। চোখের ভাষায় কাপটি নিতে বললো। কৃতজ্ঞতাসূচক চাহনিতে তাকিয়ে মানুষটি চায়ের কাপ হাতে নিলো।
” মাথা ব্যথা করছে। বললেই হতো। চুপচাপ যন্ত্রণা সহ্য করার কোনো মানে হয়? নিন এবার ফটাফট চা খেয়ে নিন। সমস্ত যন্ত্রণা পেছনের দরজা দিয়ে পালাবে। ”
ইরহাম তখন বেতের সিঙ্গেল সোফায় বসে। গরম চায়ের কাপে বসাচ্ছে ছোট ছোট চুমুক। চা পান করছে। অর্ধাঙ্গীর কথায় মুচকি হাসলো সে। হৃদি বেলকনির কোমর সমান উঁচু রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। চক্ষু নিবদ্ধ একান্ত জনে। অবলোকন করছে তার চা পান করার ভঙ্গিমা। চায়ের কাপে যখন ওষ্ঠ চাপ বসাচ্ছে মানুষটি, অজান্তেই শিউরে উঠছে কায়া। লালিমা লেপে যাচ্ছে কপোলের মসৃণ ত্বকে। ঘোর লেগে যাচ্ছে চক্ষে। অন্তরে বেজে উঠছে প্রেমের কলতান! গরম গরম চায়ে চুমুক দিয়ে মাথা ব্যথা অনেকখানি লাঘব হয়েছে। স্বস্তি বোধ হচ্ছে মানুষটির। সাংসদ হিসেবে নতুন পথচলা। দিনরাত মিলিয়ে কম তো ব্যস্ততা নয়। স্বাভাবিক ভাবেই শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। প্রয়োজনের সময় সহধর্মিণীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যত্নও হৃদয়ে গেঁথে যায়। যেমন করে গেঁথে গেল এই সাধারণ ক্ষুদ্র মুহূর্তটি। তৃপ্তিময় হেসে হৃদির পানে তাকালো ইরহাম। দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো ঘোর লাগা এক জোড়া মায়াবী নয়নে। প্রিয়তমার অক্ষিদ্বয়ের সুগভীর অতলে তলিয়ে গেল প্রেমিক সত্ত্বা। নয়নে নয়নে হলো অব্যক্ত কতশত আলাপণ। অতিবাহিত হলো কিছু হৃদয়ছোঁয়া মুহূর্ত। মানুষটি পলক ঝাপটালো যেই আচানক চেতনা ফিরলো রমণীর। হকচকিয়ে গেল সে। ত্বরিত দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। নিজেকে নিজেই বকলো এমন নির্লজ্জতার জন্যে। লজ্জা কি লজ্জা! স্ত্রীর এমন লজ্জালু আভা মুগ্ধ নয়নে অবলোকন করলো ইরহাম। বাঁকা রেখা ফুটে উঠলো অধরে। তাকালো চায়ের কাপে। অর্ধ পরিমাণ চা অবশিষ্ট। মস্তিষ্কে কড়া নাড়লো দুষ্টুমি। কিছুটা গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,
” আল্লাহ্’র রহমতে ডায়বেটিকসের রোগী নই। তবে চায়ে চিনি কই? ”
হৃদি তখন প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে। প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে নিজেকে ধাতস্থ করার। আকস্মিক স্বামীর কণ্ঠস্বর শুনে থমকালো! দাঁড়ালো পিছু ঘুরে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে। বুঝে উঠতে পারছে না উনি কিসের কথা বলছেন।
” চিনি! কোথায়? ”
এবার বিষয়টা বোধগম্য হলো। কুঞ্চিত হলো ভ্রু যুগল।
” চিনি! দিয়েছি তো। ”
” স্বাদ গ্রন্থি এখনো ঠিকঠাক। তাহলে চিনির স্বাদ পাচ্ছি না কেন? ” ডান ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে ইরহাম।
হৃদি যথেষ্ট অবাক হলো! নিজের পক্ষে বললো,
” রাতদুপুরে কিসব বলছেন? আমি নিজের হাতে চায়ে চিনি মিক্স করেছি। ”
” তাহলে গেল কোথায়? ” সরল প্রশ্ন মানুষটির।
হৃদি যথেষ্ট বিরক্ত হয়ে বলল,
” ফাও কথা বলবেন না তো। আমি চিনি দিয়েছি। দেখি চিনি গেল কই? ”
অধৈর্য হয়ে কিছু বলবার সুযোগ না দিয়ে স্বামীর হাত থেকে চায়ের কাপ একপ্রকার ছিনিয়ে নিলো মেয়েটি। চুমুক দিলো স্বল্প ঠাণ্ডা চায়ে। ক্ষণিকের মধ্যেই মিলিয়ে গেল কপালের ভাঁজ। স্বামীর পানে তাকিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলো হৃদি,
” মিয়া আপনার মুখে সমস্যা। চায়ে চিনি থাকা সত্ত্বেও টের পাচ্ছেন না! ”
বক্র হেসে শুভ্র কাপটি ফেরত নিলো ইরহাম। হৃদির পানে মা-দকতাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে। ঘুরিয়ে ধরলো কাপ। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে পুরু ওষ্ঠ বসালো কাপের সে স্থানে যেখানে কিয়ৎক্ষণ পূর্বে বসেছে অর্ধাঙ্গীর কোমল ওষ্ঠ চাপ। পুরো বিষয়টি স্বচক্ষে অবলোকন করলো মেয়েটি। উপলব্ধি করলো দুষ্টুমির অন্তরালে লুকায়িত মধুরতম ষ ড় য ন্ত্র। বিস্ময় প্রকাশ পেল মুখশ্রীতে। লালাভ রঙ মেখে কপোলদ্বয়ে। বর্ধিত হলো বক্ষপিঞ্জরের আড়ালে লুকায়িত যন্ত্রটির গতিবেগ। ওর পানে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ইরহাম। নয়নে নয়ন স্থির রেখে ব্যক্ত করলো নিজস্ব অনুভূতি,
” ইটস্ সো সুইট! ”
পুরুষালি সম্মোহনী স্বরে লাজুকলতা দৃষ্টি সরিয়ে নিতে বাধ্য হলো। নচেৎ লাজে নিশ্চিত ম র ণ তার! কিছুটা সময় পেরিয়ে গেল। বাহিরে দৃষ্টি আবদ্ধ মেয়েটির। হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই পিছু ঘুরে স্বামীর পানে তাকালো।
” আপনাকে কিছু বলার আছে ইরহাম। ”
ক্ষুদ্র গোলাকার টেবিলের কাঁচের আস্তরণে শুভ্র কাপ রাখলো ইরহাম। স্ত্রীর কণ্ঠে গাম্ভীর্য উপলব্ধি করে অনুমতি প্রদান করলো,
” হুম। বলো। ”
•
সময়ের পরিক্রমায় পেরিয়ে গেছে দিন কয়েক। নিশুতি রাত। নৈশভোজ সেরে লিভিংরুমে উপস্থিত পরিবারের সদস্যরা। অনুপস্থিত ইরহাম। ফোন করেছিল সে। ফিরবে ঘন্টা দুয়েক এর মধ্যে। এজাজ সাহেব সোফায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। মালিহা পান সাজিয়ে দিচ্ছেন শাশুড়ি মা’কে। হৃদি একে একে মা ও পাপার দিকে তাকালো। বেজার মুখে বললো,
” মা! দিস ইজ নট ফেয়্যার। ”
মালিহা শাশুড়ির হাতে সাজানো পান তুলে দিয়ে তাকালেন পুত্রবধূর পানে। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধোলেন,
” কি হয়েছে রে মা? ”
” হয়নি এখনো। তবে হবে। ” মুখ ফুলিয়ে মেয়েটি।
এজাজ সাহেব মেকি বিরক্তিকর অভিব্যক্তি করে বসে। যদিওবা সজাগ ওনার শ্রবণেন্দ্রিয়। পুত্রবধূ কি বলতে চাইছে শুনতে ইচ্ছুক উনি। রাজেদা খানম পান চিবোতে চিবোতে অস্ফুট স্বরে প্রশ্ন করলেন,
” কি হইবো খোলাশা কইরা ক বুইন। বুঝতেছি না তো। ”
” আমিও বুঝতে পারছি না এতবড় সংবাদ আমি কি করে মিস্ করে গেলাম। ”
হৃদির কথায় অধৈর্য হয়ে এজাজ সাহেব বলে উঠলেন,
” ভনিতা না করে সোজাসুজি বললে ভালো হয়। কথা প্যাঁচানো ভালো লক্ষণ নয়। ”
হৃদি ওনার দিকে ঘুরে বসলো। দুঃখময় চোখে তাকিয়ে। অভিমানী স্বরে বললো,
” পাঁচদিন বাদে তোমাদের অ্যানিভার্সারি। আমাকে একটুও বললে না? শেষমেষ ইনুর কাছ থেকে শুনতে হচ্ছে? আমি কি এতটাই পর! ”
কণ্ঠে কিছু তো একটা ছিল। এজাজ সাহেবের মতো দা”ম্ভিক লোকও ঈষৎ টলে উঠলো। মালিহা কন্যাসম পুত্রবধূকে মানাতে আদুরে গলায় বললেন,
” তুই তো আমার সোনা মেয়ে। পর হতে যাবি কেন? ”
হৃদি গুটিগুটি পায়ে বিপরীত সোফায় এগিয়ে গেল। বসলো মায়ের বাম পাশে। ওনার কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো। জড়িয়ে ধরলো বাঁ হাত। দুঃখী বদনে বললো,
” আমি বোধহয় এখনো আপন হতে পারিনি। তাই তো এমন লুকোচুরি। ”
এজাজ সাহেবের বলতে ইচ্ছে হলো, এসব মিথ্যা। তুমি আপন হয়ে উঠছো। পর নও। বলা আর হলো না। ওনার অভ্যন্তরীণ সত্ত্বা ওনাকে বলতে বাঁধা প্রদান করলো। অবরোধ হয়ে কণ্ঠনালী। ইনায়া বসে বসে মজা নিচ্ছে। উপভোগ করছে ভাবীর দুর্দান্ত অভিনয়। ইশ্! ভাবীর অভিনয় জগতে আসা উচিত ছিল। নেহাত ওসব গু’নাহ। নয়তো ভাবী দেশ-বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার লাভ করতো। কি অভিনয় রে ভাই! মালিহা পুত্রবধূর মাথায় হাত বুলিয়ে এটাসেটা বুঝিয়ে চলেছেন। আদর করছেন। শেষমেষ জায়গামতো তী”র ছুঁড়লো হৃদি।
” ঠিক আছে। আমি যে কে তোমাদের তার প্রমাণ চাই। ”
অবাক সকলে! রাজেদা খানম প্রশ্ন করে বসলেন,
” ক্যামনে? ”
সবার অলক্ষ্যে বাঁকা রেখা ফুটে উঠলো মেয়েটির অধরে। দিস ইজ দ্য মোস্ট পারফেক্ট টাইম!
•
তপ্ত রৌদ্রময় এক দিন। রবি’র উত্তপ্ত কিরণে ঝলসে যাবার উপক্রম ত্বক। তবুও থেমে নেই জনজীবন। রাজু ভাস্কর্য সংলগ্ন পথে তখন অগণিত মানুষের উপস্থিতি। নিজ নিজ কর্মে ব্যস্ত তারা। টুংটাং শব্দে চলছে রিকশা। হেঁটে যাচ্ছে কিছু পথচারী। কেউবা রাজু ভাস্কর্যের আশপাশে দাঁড়িয়ে ফোনালাপে লিপ্ত।
স!ন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত একটি ভাস্কর্য । এটি শ্যামল চৌধুরী দ্বারা নির্মিত এবং বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ভাস্কর্য হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের কর্মী মঈন হোসেন রাজু নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের স্মৃতিতে উৎসর্গ করা হয়েছে, যিনি
স!ন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নি”হত হন। এটি ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে নির্মিত হয়েছিল।
ভাস্কর্য পার্শ্ববর্তী এক ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকান ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বাইক। বাইকে হেলান দিয়ে বসে রাহিদ। সাথে আরো দু’টো বাইক। তাতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে চার বন্ধু। ঢাবি মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এরা। নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় লিপ্ত। কথোপকথনের ফাঁকে ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে রাহিদ। অধরে লেপ্টে হাসির রেখা। রৌদ্রের তাপে লালাভ রঙ ছড়িয়ে মুখে। সে এক মোহনীয় সৌন্দর্য! কিছুটা দূরে সতর্ক অবস্থানে দাঁড়িয়ে এ সৌন্দর্য উপভোগ করে চলেছে এক কিশোরী মেয়ে। নাম তার ইনায়া। এজাজ চৌধুরী তনয়া সে। দশ দিনের বিরহ সইতে না পেরে আজ একবুক সাহস সঞ্চয় করে, ঝুঁকি নিয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছে সে। বাড়ির কেউ জানে না ইনায়া এ মুহূর্তে এখানে উপস্থিত। সকলে জানে সে কোচিং সেন্টারে। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বেশ ঝুঁকি নিয়ে এখানে এসেছে মেয়েটি। একটুখানি মনের মানুষরে দেখার জন্য। চক্ষু তৃষ্ণা মেটানোর জন্য। দশ দিনের দূরত্ব যে তার হৃদয়ের একূল ওকূল তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। যখন তখন বর্ষণ আরম্ভ হয় অক্ষিদ্বয়ে। কিশোরী মেয়েটি আর সইতে পারলো না এ-ই বিরহ বেদনা। তাই তো এমন দুঃসাহসিকতা! আব্বু কিংবা ভাইয়া জানলে কি করবে জানা নেই তার। সে শুধু জানে চক্ষু তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম হয়েছে সে। স্বচক্ষে দেখেছে তার রাহি ভাইয়াকে। অবশেষে শান্ত হয়েছে তার উতলা হৃদয়! এ-ই তো তার ক্ষুদ্র চাওয়া!
স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল ইনায়া। এবার তার ফেরার পালা। সাহসী মেয়ের মতো একাকী বাড়ি ফিরতে হবে তাকে। বন্ধুবান্ধব সাথে আনার মতো ঝুঁকি নিতে পারেনি। তাই তো ভয় বেশি। একাকী কিছু হয়ে না যায়। সে যে গাড়ি বিহীন একাকী চলাচলে অতটাও অভ্যস্ত নয়। শেষমেষ রাহি ভাইয়ার অমোঘ আকর্ষণে কোথা থেকে কোথায় চলে এলো সে! বড় ভয়ঙ্ক”র এই টান! এটা যদি ঘুণাক্ষরেও বাড়ির কেউ জানতে পারে.. সর্বনাশ হয়ে যাবে। উফ্! কাঁধের ব্যাগ হতে মোবাইল বের করলো ইনায়া। গুগল ম্যাপে আরো একবার বুঝে নিলো তার ফিরে যাওয়ার রুট। ওষ্ঠাধর গোলাকার করে তপ্ত শ্বাস ফেললো।
‘ কাম ডাউন ইনু! ইনশাআল্লাহ্ পৌঁছে যাবি। ‘
নিজেকে শান্ত করলো মেয়েটি। সাবধানে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো মোবাইল। এদিক ওদিক তাকালো। প্রস্তুত হলো রাস্তা পাড় হবার জন্য।
চায়ের কাপ ফিরিয়ে দিয়ে সবার বিল পরিশোধ করলো রাহিদ। হাস্যমুখে ঘুরে তাকালো। বন্ধুদের কাছে পৌঁছানোর পূর্বে স্তব্ধ হলো অন্তর! দৃষ্টি নিবদ্ধ সম্মুখে। সর্বোচ্চ গতিতে স্পন্দিত হতে লাগলো হৃৎযন্ত্রটি। ঘাম ছুটে গেল। আর এক মুহূর্তও বিলম্ব নয়। ক্ষি প্র গতিতে সম্মুখভাগে ছুটলো রাহিদ। বন্ধুরা এহেন কাণ্ডে হতবাক! এটা কি হলো!
পিপীলিকার গতিতে রাস্তা পাড় হচ্ছে মেয়েটি। সতর্ক দৃষ্টি ডানে। এদিকে বামে যে আগ্রাসী ভাবে ধেয়ে আসছে মৃ*ত্যুদূত, আছে কি সে খেয়াল! নেই তো। যেই না বাম দিক হতে দ্রুতগতিতে ছুটে আসা একটি বাস তাকে প্রায় আঘাত হানবে ঠিক সে মুহূর্তে..! শক্তপোক্ত এক হাত ত্বরিত টান দিয়ে সরিয়ে নিলো। বলিষ্ঠ বক্ষপটে আবদ্ধ হয়ে দু’জনে ছিটকে সরে গেল রাস্তার একপাশে। একটুর জন্য ভারসাম্য হারিয়ে পড়তে গিয়েও পড়লো না তারা। মানবটি ঠিক আগলে নিলো। আকস্মিক কাণ্ডে চরম উত্তেজিত হৃৎপিণ্ড। স্বেদজল গড়িয়ে পড়ছে ললাট কার্নিশ বেয়ে। ভীতসন্ত্রস্ত কিশোরী কোনোরূপ বিবেচনা বিহীন আঁকড়ে ধরলো সাহায্যকারীকে। কোমল দু হাত খামচে ধরলো মানবের পিঠ। ভিজে গেল অক্ষিকোল। এখনো লম্ফ দিচ্ছে বুকের ভেতর। হঠাৎ এক ঝটকায় ছিটকে বাহুবন্ধন হতে মুক্ত হলো ইনায়া। ভীতগ্ৰস্থ মুখখানি আতঙ্কে র’ক্তিম হলো অপ্রত্যাশিত মানব অবয়ব দেখে। রাহি ভাইয়া!
” এখানে কি করছিস? ”
আতঙ্কিত নেত্রে তাকিয়ে মেয়েটি। বাকরুদ্ধ কণ্ঠনালী। ভুলে গেল কোনোরূপ জবাব দিতে। অক্ষি গড়িয়ে পড়ছে নোনাজল। শক্ত হাতে খামচে ধরেছে পোশাকের একাংশ। জবাব না পেয়ে হিং স্র রূপে রূপান্তরিত হলো রাহিদ। সারা মুখ লাল বর্ণে রঙিন। ক্রো ধ কে দমাতে ব্যর্থ হলো সে। ভুলে গেল জাগতিক হুঁশ। লোকসম্মুখে কিশোরী মেয়েটির কপোলের কোমল আবরণে শক্তপোক্ত পাঁচটি আঙ্গুল ছাপাঙ্কিত হলো। আঘাতপ্রাপ্ত কপোলে হাত ঠেকিয়ে অবিশ্বাস্য নয়নে তাকিয়ে ইনায়া! রাহি ভাইয়া তাকে চ ড় মা”রলো! কপোলের যন্ত্রণা ছাপিয়ে অসহ্য যন্ত্রণা এখন বক্ষ মাঝারে। কারে কইবে এ বেদনার কথা!
চলবে.
[ ভিন্ন ভিন্ন সময়কাল অতিবাহিত করছে দু জুটি। কি হতে চলেছে হৃ’হাম এবং রা’নায়া এর ভবিষ্যতে? ]
📌 আসসালামু আলাইকুম পাঠক বন্ধুরা….
লেখিকার লেখা গল্প-উপন্যাস সম্পর্কিত ছোট-বড় অনুভূতি ব্যক্তকরণ, গল্প নিয়ে আলোচনা, ভুলত্রুটি শুধরে দেয়া, রিভিউ প্রদান এবং গল্পের চরিত্র-দৃশ্য নিয়ে মতামত পেশ করতে জয়েন করুন আমাদের গল্প সংক্রান্ত গ্রুপে…
গ্রুপ লিংক 🍁
https://www.facebook.com/groups/499389245208190/?ref=share