” ঘরে জামাই থাকতে রাইতের আন্ধারে না’গরের হাত ধইরা পলাই গেছে! ছিঃ ছিঃ ছিঃ! এইরম চরিত্রহীন মাইয়া কিনা চৌধুরী বাড়ির বউ! ”
বৃদ্ধা জমিলা বানুর ধিক্কার শুনে ডুকরে কেঁদে উঠলেন সোফায় বসে থাকা মালিহা। নোনাজল গড়িয়ে পড়তে লাগলো কপোল ছুঁয়ে। এ অবলোকন করে তেঁতে উঠলেন বৃদ্ধা। সহ্য হলো না ঢঙ। ধমকে বললেন,
” চুপ করো। একদম কানবা না। বাড়ির বউ পলাইছে। আপদ বিদায় হইছে। তুমি কেন কান্তাছো? মাইয়া কি জা”দুটোনা কইরা গেছে? ”
এমন বিশ্রী বক্তব্য আর সহ্য করা গেল না। নীরবতা ভঙ্গ করে মুখ খুললেন রাজেদা খানম। বিপরীত দিকের সোফায় বসে থাকা ননদকে উদ্দেশ্য করে রাশভারী কণ্ঠে বললেন,
” তুমি এহন থামো জমিলা। বহুত আও ফাও কইছো। আমগো বাড়ির বউ কেমন আছিল হেইডা আমগো চে ভালো আর কে জানে? ”
জমিলা বানু মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
” এতই যহন জানো তাইলে ওই মাইয়ার চরিত্র ক্যামন জানতা না ভাবী? ”
রাজেদা খানমের কণ্ঠে বিশ্বাসের ছাপ,
” হৃদি বুইনরে আমরা বেশ ভালো কইরাই চিনি। আমার অভিজ্ঞ চোখ মানুষ চিনতে ভুল করে না। ”
মাথার ঘোমটা ঠিক করে জমিলা বানু বলে উঠলেন,
” তাই নাকি? তাইলে ওই মাইয়া পলাইলো ক্যামনে? হুঁ? হ্যার না’গর আছে তোমরা জানতা না? ”
মুখ তুলে তাকালেন আবেগপ্রবণ মালিহা। মৃদু স্বরে আপত্তি সূচক ভঙ্গিতে বললেন,
” এমন করে বলবেন না ফুফু। হৃদি অমন মেয়ে না। ও। ও পালিয়ে যায়নি। ”
জমিলা বানু বিদ্রুপ করে হাসলেন। শুধোলেন,
” তাই নাকি? তাইলে গেছে কই? জামাইয়ের লগে মধুচন্দ্রিমা? ”
মালিহার অক্ষিকোল ভিজে উঠলো পুনরায়। নত হলো মস্তক। কি বলবেন কি করবেন জানা নেই ওনার। বাকরুদ্ধ অবস্থা ওনার। জানা আছে শুধু নীরবে অশ্রু বিসর্জনের ভাষা। জমিলা বানু বিনামূল্যে উপদেশ প্রদান করলেন,
” হোনো বউ। বিশ্বাস করা ভালা। কিন্তু অন্ধ বিশ্বাস করা উচিত না। ওই মাইয়া হাচাই পলাইছে। জানো তো? যাহা রটে তার কিছু তো ঘটে। ”
রাজেদা খানম অসন্তুষ্ট হয়ে নেতিবাচক জবাবে বললেন,
” অ্যামন কিছুই হয় নাই। তুমি দেইখা লইয়ো। আমগো হৃদি সসম্মানে ফিরবো ইনশাআল্লাহ্। অর কিচ্ছু হইবো না। আমার নাতি ঠিক ফিরাইয়া লইয়া আইবো। ”
সাজানো পান দু আঙ্গুলে ধরে মুখে পুরে নিলেন জমিলা বানু। এসব আজগুবি কথায় ওনার মন নেই। চরিত্রহীন বউকে নিয়ে এত কিসের আদিখ্যেতা! হুহ্!
.
অন্ধকারাচ্ছন্ন এক ঘর। অমানিশায় তলিয়ে ঘরটি। চারিপাশে কি রয়েছে দেখা মুশকিল। শুধু ভুতূড়ে আঁধার আর আঁধার। দৃশ্যমান শুধু ঘরের একাংশে অবস্থিত এক চেয়ার। সে কাঠের চেয়ারে বসে এক সুঠামদেহী মানব। ডান হাতের কনুই ঠেকে চেয়ারের হাতলে। তিন আঙ্গুল ঘষে চলেছে ললাটের ত্বকে। যন্ত্রণা হচ্ছে মাথায়। ছিঁড়ে খানখান অন্দর। আঁধার মাঝে নিজেকে বিলীন করে দিয়েছে সে। আপন করে নিয়েছে আঁধারিয়া চাদর। তার ভেতরকার অবস্থা নিরূপণ করা দুষ্কর। শব্দহীন পরিবেশে একাকী চেয়ারে বসে সে। কিয়ৎক্ষণ বাদে ঘরে প্রবেশ করলো তিনজন আগন্তুক। তারা চমকালো ঘরের অবস্থা দেখে! অনুধাবন করতে পারলো চেয়ারে বসা মানুষটির অবস্থা। কিন্তু তারা যে নিরূপায়! কি থেকে কি করবে সব যেন গোলক ধাঁধা। ঘুরেফিরে এক কেন্দ্রে এসে মিশে যাচ্ছে। চারিদিক হতে ঘিরে ফেলেছে প্রহেলিকা। এক অভেদ্য মায়াজাল। কি করে উদ্ধার করবে ‘ তাকে ‘!
মধ্যখানে দাঁড়ানো আগন্তুক কিয়ৎক্ষণ দোনামোনা করে শেষমেষ ক্ষীণ স্বরে ডেকে উঠলো,
” ভাই? ”
ললাটে ঘর্ষণকৃত আঙ্গুল থেমে গেল। সজাগ কর্ণদ্বয়। তবে মুখ তুলে তাকালো না মানুষটি। তরুণ আগন্তুক কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া না পেয়ে হতাশাজনক কণ্ঠে থেমে থেমে বললো,
” ক্ষমা করে দেন ভাই। ভাবীর এখনো কোনো খোঁজ পেলাম না। কোথায় যে.. ”
আর বলা হলো না। লহমায় স্তব্ধ হলো তিন আগন্তুক! আস্তে ধীরে মুখ তুলে তাকালো চেয়ারে বসে থাকা তাদের ‘ ভাই ‘। ইরহাম। এমপি ইরহাম চৌধুরী! এ কি হাল হয়েছে মানুষটির! পরিহিত শুভ্র পাঞ্জাবির অবিন্যস্ত দশা। সদা পরিপাটি মসৃণ চুল আজ এলোমেলো। মুখখানা সীমাহীন যন্ত্রণা সয়ে লালাভ রঙে রঙিন। চোখের সফেদ অংশে শান্ত অথচ আ-ক্রমণাত্মক গভীরতা। ভড়কে গেল ওরা। ভাইয়ের এমন ভ-য়ঙ্কর রূপ যে কভু দেখা মেলেনি ওদের। নভোনীল চক্ষুদ্বয়ে আজ যে আ-ক্রমণাত্মক গভীরতা! সে গভীরতায় ডুবে ম র বে অগুণতি শত্রুর দল। ভুলে যাবে শত্রু শত্রু খেলা। শান্ত অথচ দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী চৌধুরী’কে আজ সুবিধার ঠেকছে না। তার অভিব্যক্তি ভিন্নতর। আকর্ষণীয় কিন্তু ভিন্ন রঙা চক্ষু জোড়া বাজপাখির চেয়েও শি’কারি রূপে খুঁজে চলেছে
‘ তাকে ‘। অন্তরে বাসা বাঁধছে প্রতিশো’ধস্পৃহা! শিরায় উপশিরায় ছড়িয়ে অদম্য এক চেতনা। যে করেই হোক খুঁজে বের করবে তাকে। ইনশাআল্লাহ্!
ভাইয়ের বেহাল দশা অবলোকন করে ঘাম ছুটে গেল তিন আগন্তুকের। মধ্যখানে দণ্ডায়মান সাহিল ভীতসন্ত্রস্ত মৃদু কণ্ঠে বললো,
” ভাই! আপনি ঠিক আছেন তো? চিন্তা করবেন না। ছেলেরা পুরোদমে কাজে লেগে পড়েছে। ভাবী ঠিক.. ”
অসমাপ্ত রইলো বাক্য। তর্জনী ও মধ্যমার দ্বৈত স্পর্শে ইশারা করলো ইরহাম। মাথা নুয়ে বসে সে। শব্দহীন ইশারাটুকু বুঝতে অসুবিধা হলো না ওদের তিনজনের। ইতিবাচক মাথা নেড়ে ধীরপায়ে নিঃশব্দে ঘর হতে প্রস্থান করলো ওরা। আঁধারে নিমজ্জিত ঘরে একাকী রয়ে গেল ইরহাম। ক্লান্ত অবসন্ন দেহ এলিয়ে দিলো চেয়ারে। বদ্ধ হলো আঁখি পল্লব। চেহারার আঁকেবাঁকে যন্ত্রণা আর বিষাদ! মেঘমেদুর মুখখানা লালিমায় ছেয়ে। ফুলে উঠছে কপালের রগ। অসীম তৃষ্ণায় কাতর গণ্ডস্থল। হাহাকার মনের ঘরে। একজনার অনুপস্থিতি কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তারে। মনের ঘরে বসত করে যে জনা আজ সে দৃষ্টি সীমার বাহিরে। কোথা আছে কেমন আছে নেই জানা। ভাবতেই বিষাদময় অন্তরে জ্ব’লে উঠলো লেলিহান শিখা। ব্যর্থতার অসহনীয় ভার সইতে না পেরে বদ্ধ আঁখি গড়িয়ে পড়লো একফোঁটা রহস্য। বড় আকুলতা প্রকাশ করে ডেকে উঠলো সে,
” হৃদরাণী! ”
আহা! হৃদয়ের একচ্ছত্র অধিকারিণী তার হৃদয়ের রাণীকে এমন আকুল হয়ে ডেকে উঠলো মানুষটি। কোথা আছে সে হৃদরাণী! এমন আকুলতা শুনতে পেয়ে ছুটে কি আসতো না!
.
দুঃখ ভারাক্রান্ত ‘আনন্দাঙ্গন’ এর প্রতিটি স্তম্ভ। বিষাদে ভরে বাড়ির অভ্যন্তর। দুঃখময় এমন পরিস্থিতিতে আকস্মিক ঝড় উঠলো।
” মিস্টার ইরহাম চৌধুরী! কোথায় আপনি? বেরিয়ে আসুন বলছি। ইরহাম চৌধুরী? ”
অনমনীয়-দৃষ্টিকটু স্বরে একাধারে ডেকে চলেছে এক নারী কণ্ঠ। যে কণ্ঠে অনুপস্থিত কোমলতা। ক্ষো ভ প্রকাশ পাচ্ছে প্রতি ধ্বনিতে। বেয়াড়া স্বরে হতবিহ্বল হয়ে বাড়িতে উপস্থিত সদস্যবৃন্দ লিভিং রুমে উপস্থিত হলো। চমকালো আগন্তুককে দেখে!
” রাঈশা! ”
মালিহা বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে। আবেগী রাঈশা ছুটে এলো ওনার কাছে। শক্ত অথচ ভদ্র স্বরে শুধালো,
” আপনার ছেলে কোথায় আন্টি? ডাকুন ওনাকে। ”
জমিলা বানু যারপরানাই অবাক! কে এই মেয়ে! এসেই বেয়াদবের মতো আচরণ করছে।
” অ্যাই মাইয়া! কেডা তুমি? কি চাই এইহানে? ”
” জবাবদিহিতা। ” নির্বিকার অভিব্যক্তি রাঈশার।
” কি! ”
চমকালেন জমিলা বানু! পরক্ষণে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলেন,
” কেডা তুমি? কিয়ের জবাব চাও? হ্যা? ”
” হৃদির বড় বোন আমি। রাঈশা। ”
কপালের ভাঁজ মিলিয়ে গেল। জমিলা বানু তাচ্ছিল্য করে হাসলেন।
” ওহ্! ওই চরিত্রহীন মাইয়ার বুইন লাগো? ”
তীব্র প্রতিবাদ জানালো রাঈশা,
” আমার বোন চরিত্রহীন নয়। সব মিথ্যা। ওকে জেনেবুঝে অসম্মানিত করা হচ্ছে। সবটা হয়েছে আপনাদের বাড়ির ছেলের জন্য। ইরহাম চৌধুরীর জন্য আজ আমার বোনের এই দুর্দশা। নিখোঁজ ও। সবটা হয়েছে ওনার জন্য। ”
আবেগ সামলানোর সর্বোচ্চ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে রাঈশা। কাঁদবে না সে। এদের সামনে কাঁদা মানে নিখোঁজ বোনকে অসম্মান করা। কিছুতেই কাঁদবে না সে। জমিলা বানু তেঁতে উঠলেন যেন,
” এই মাইয়া! মুখ সামলাই কথা কও। আমার নাতি কি করছে? হ্যা? তোমার বুইনেরই তো চরিত্র ভালা না। পেমিকের লগে পলাই গেছে। এতে আমার নাতির কি দোষ? হে কি বউরে পলানোর পরামর্শ দিছে? নাকি পলানোর সুযোগ কইরা দিছে? হুঁ? ”
দৃঢ় স্বরে রাঈশা প্রত্যুত্তর করলো,
” আমার বোন পালিয়ে যায়নি। ওকে কি ড ন্যা প করা হয়েছে। তা-ও আপনার নাতির শত্রুদের মধ্যে কেউ করেছে। আমার বোনটা নির্ভেজাল মেয়ে। ওর কোনো শত্রু নেই। কিন্তু আপনার নাতি? তার তো শত্রুর অভাব নেই। সেই শত্রুদের কেউ একজন ই এসব করেছে। আমি যে করেই হোক আমার বোনকে ফেরত চাই। কোথায় ইরহাম চৌধুরী? ডাকুন তাকে। আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই। কোথায় আমার বোন। ”
মালিহা এগিয়ে এলেন। রাঈশার মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে ভেজা কণ্ঠে বললেন,
” আমার ছেলেটা ভালো নেই রে মা। দয়া করে ওকে দোষারোপ করো না। হৃদি’কে খোঁজার জন্য ও সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ”
আস্তে করে মাথা হতে হাত সরিয়ে দিলো রাঈশা। নম্র অথচ একরোখা স্বরে তাকে বললো,
” ক্ষমা করবেন আন্টি। আমাদের সাথে আপনাদের ব্যাপক অমিল। সে স্ট্যাটাস হোক কিংবা মতাদর্শ। আমাদের আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উচিত হয়নি। আব্বু ভুল করে ফেলেছে মিস্টার চৌধুরীর হাতে আমার বোনকে তুলে দিয়ে। যার খেসারত আজ এইভাবে দিতে হচ্ছে। ”
চমকালো উপস্থিত সকলে! জমিলা বানু ক্ষি প্ত ভঙ্গিমায় বলে উঠলেন,
” অ্যাই মাইয়া! আস্তে। কি কইতাছো তুমি? যত দোষ নন্দ ঘোষ? তোমার বুইন বুঝি এক্কারে নিষ্পাপ? হ্যায় না’গরের হাত ধইরা পলাই যায় নাই? ”
রাঈশা কিছু বলার পূর্বে রাজেদা খানম অসন্তুষ্ট কণ্ঠে বলে উঠলেন,
” জমিলা তুমি থামবা? অতিরিক্ত করতাছো কিন্তু। একটু পরপর না’গর না’গর! এইসব কি ধরনের শব্দ? ছিঃ! ”
রাঈশা ঘৃণিত অভিব্যক্তি প্রকাশ করে জমিলা বানু’কে বললো,
” হৃদু পালিয়ে যায়নি। ও নির্দোষ। ”
জমিলা বানু ত্যা’ছড়া স্বরে বললেন,
” হ। কত নির্দোষ আইলো আর গ্যালো! তোমার বুইন তো কোন ছাড়। ”
বোনের নামে বিরূপ মন্তব্য শুনতে নারাজ রাঈশা। সে প্রতিবাদী স্বরে কিছু বলতে উদ্যত হলো তখনই কর্ণপাত হলো,
” বন্ধ করো এসব। ”
পুরুষালি গমগমে স্বরে হকচকিয়ে গেল সকলে। ত্বরিত তাকালো পিছু ঘুরে। সিঁড়ির ধারে দাঁড়িয়ে এজাজ সাহেব। পড়নে বাহিরে যাওয়ার পোশাক। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন সিঁড়ির ধারে। সবটা শুনলেন। দেখলেন। এমনিতেই মারাত্মক দ্বিধায় ভুগছেন উনি। কে সঠিক, কে বেঠিক। জানা নেই। অসহনীয় মনোবেদনায় ভুগছেন উনি। তন্মধ্যে শুরু হয়েছে ঘরোয়া নাটক। অসহ্যকর! ধীরপায়ে মায়ের পাশে এসে দাঁড়ালেন উনি। রাশভারী কণ্ঠে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
” মনমেজাজ এমনিতেই ভালো নেই। আর একটাও বাজে কথা শুনতে চাই না। যদি আর একটা বাজে কথা শুনি তো, আমার খারাপ রূপটা দেখাতে বাধ্য হবো। যেটা আমি এই মূহুর্তে চাইছি না। ”
বিহ্বল সকলে নীরব হয়ে গেল। তীক্ষ্ণ চাহনিতে সকলকে অবলোকন করে ‘ আনন্দাঙ্গন ‘ হতে বেরিয়ে গেলেন এজাজ সাহেব। একবার পুলিশ কমিশনারের কাছে যেতে হবে। এসব ফালতু নাটকে যোগ দেয়ার মতো সময় নেই। লিভিংরুমে উপস্থিত সবাই সেথা হতে আস্তে ধীরে বিচ্ছিন্ন হলো। চলে গেল রাঈশা। তখনকার মতো অশান্তি সমাপ্ত।
.
শীতাংশু’র মোহনীয় দ্যুতি ছড়িয়ে ধরনীর বুকে। তমসায় আবৃত এক ঘর। ঘরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে কিছু ভগ্ন আসবাব। কাঠের চেয়ার, টেবিল, টুল প্রমুখ। সবই ভগ্ন। জানালা বদ্ধ সে ঘরে শীতাংশু’র দ্যুতি প্রবেশ করতে ব্যর্থ। ভূতুড়ে হিমশীতল সে পরিবেশ। দমবন্ধকর অবস্থা। ভ্যাপসা গরমে পরাণ ওষ্ঠাগত। ঘরের যত্রতত্র ভঙ্গুর আসবাব ঘেঁষে পড়ে রয়েছে কিছু নারী দেহ। বড় অবিন্যস্ত, বেহাল দশা তাদের। শারীরিকভাবে দুর্বল দেহ। চোখেমুখে দৃশ্যমান ষদন্ধকার। এলোমেলো পোশাক এবং চুল। দেখতেই কেঁদে উঠছে হৃদয়। তন্মধ্যে ঘরের ঠিক মাঝ বরাবর অচেতন হয়ে পড়ে এক নারীদেহ। এলোকেশে ছেয়ে মুখের অর্ধ ভাগ। মাথায় বাঁধা হিজাব এলোমেলো রূপে উন্মুক্ত প্রায়। ফলস্বরূপ বেরিয়ে চুলের একাংশ। দেহে জড়ানো ওড়না কোথায় যেন হারিয়ে। জানা নেই। ঘরে অচেতন প্রায় দশজনার মধ্যে অনন্য সে। কারোর আকুলিবিকুল হৃদয়ের হৃদরাণী সে! একচ্ছত্র অধিকারিণী এক কঠিন হৃদয়ের!
কোথা থেকে এ কি হয়ে গেল। এ কোন সর্বনা’শ ঘনিয়ে এলো তাদের জীবনে! সবটুকু অনুধাবন করতে হলে ফিরে যেতে হবে অতীতের পাতায়। মাস খানেক পূর্বে…
__________
মাস খানেক পূর্বের কথা। মধ্যাহ্ন প্রহর তখন। দেশজুড়ে চলছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। লাখো পরীক্ষার্থীর ভীড়ে একজন ইনায়া। আজ এইচএসসি পরীক্ষার শেষদিন। পরীক্ষা আলহামদুলিল্লাহ্ বেশ ভালো হয়েছে। প্রসন্ন চিত্তে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে পরীক্ষা কেন্দ্র হতে বেরিয়ে আসছে মেয়েটি। হাঁটছে ঘাসে ঢাকা মাঠের বুকে। এই তো সমাপ্ত কলেজ জীবনের। উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়ে তারা ভর্তি যু দ্ধে অংশগ্রহণ করবে। কয়েকদফা লড়াই শেষে উঠবে ভার্সিটিতে। হবে এক নয়া সূচনা। পুরনো বন্ধু কেউ থাকবে কেউবা যাবে হারিয়ে। প্রাপ্তবয়স্ক তারা এক নতুন জীবনে পদার্পণ করবে। ভাবতেই পুলকিত হচ্ছে মন। বন্ধুদের সঙ্গে আলাপচারিতা করতে করতে পরীক্ষা কেন্দ্র হতে বেরিয়ে এলো ইনায়া। এদিক ওদিক তাকিয়ে গাড়ি খুঁজতে লাগলো। অপেক্ষা করতে হলো না বেশি। আকস্মিক চক্ষুতারায় ভেসে উঠলো অপ্রত্যাশিত একজন। চমকিত নেত্রে তাকিয়ে ইনায়া!
” তুমি এখানে! ”
#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#সূচনা_পর্ব
[ আসসালামু আলাইকুম পাঠকবৃন্দ। দিন কয়েকের বিরতি শেষে ফিরে এলাম উপন্যাসের দ্বিতীয় অর্থাৎ সর্বশেষ পরিচ্ছেদ নিয়ে। ভালোবাসাময় রঙিন পর্ব শেষে এখন আমরা পদার্পণ করতে চলেছি রহস্যময় বিপত্তির পথে। ঝাঁকে ঝাঁকে থাকবে রহস্য। মিলবে পুরনো প্রশ্নের উত্তর। আশা করি জমজমাট এই পরিচ্ছেদটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। ধন্যবাদ সবাইকে পাশে থাকার জন্য। কেমন লাগলো সূচনা পর্বটি? ]
📌 পাঠক বন্ধুরা….
লেখিকার লেখা গল্প-উপন্যাস সম্পর্কিত ছোট-বড় অনুভূতি ব্যক্তকরণ, গল্প নিয়ে আলোচনা, ভুলত্রুটি শুধরে দেয়া, রিভিউ প্রদান এবং গল্পের চরিত্র-দৃশ্য নিয়ে মতামত পেশ করতে জয়েন করুন আমাদের গল্প সংক্রান্ত গ্রুপে…
গ্রুপ লিংক 🍁
https://www.facebook.com/groups/499389245208190/?ref=share