#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১০
নিশীথিনীর তমসাচ্ছন্ন চাদরে আবৃত বসূধা। প্রিমিয়াম ভিলার বাহিরে তখন মৃদু শীতল পবনের আধিপত্য। ভেতরে উষ্ণতা এবং শীতলতার চিত্তাকর্ষক মেলবন্ধন! রাহিদের সঙ্গে ফোনালাপে লিপ্ত ইরহাম। ডান কানে ঠেকে ক্ষুদ্র যন্ত্রটি। কথা বলতে বলতে অগ্রসর হচ্ছে নির্ধারিত বেডরুমের পানে। ভাইকে শুভকামনা জানিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো,
” উইশ ইয়্যু অল দ্য বেস্ট। ইনশাআল্লাহ্ সফলকাম হবি।”
ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টায় দিবারাত্রি ব্যস্ত রাহিদ। আল্লাহ্ চাইলে শীঘ্রই পাঁচটা না দশটা না একমাত্র ছোট বউটা’কে নিজের কাছে নিয়ে যাবে। সে কথাই ফোনের মাধ্যমে জানাচ্ছিল ভাইকে। বিপরীতে শুভকামনা জানালো ইরহাম। সে পুরোদস্তুর আশাবাদী যে সফল হবে রাহিদ। একমাত্র আদরের-স্নেহের ছোট বোনের জন্য সে ভুল কাউকে নির্বাচন করেনি। দ্বিধাহীন চিত্তে বলা যায়, রাহি ও ইনু একে অপরের জন্যি। আরো টুকটাক কিছু কথাবার্তা এবং উপদেশ প্রদান শেষে মানুষটি পৌঁছে গেল ঘরে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে হাতের মুঠোয় বন্দী করলো মোবাইল। তাকালো এদিক ওদিক। হৃদয়ের রাণী লুকিয়ে কোথায়? বেশি অপেক্ষা করতে হলো না। দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো ঘরের আধখোলা জানালা বরাবর। সেথায় দাঁড়িয়ে তার হৃদরাণী। শীতাংশু’র জ্যোতি তার মনোরম আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে নিয়েছে মেয়েটিকে! কপালের দু পাশে থাকা খুচরো চুলগুলো খেলা করে বেড়াচ্ছে দু গালের কোমল ত্বকে। মোবাইলে কথা বলছে সে। বন্ধুদের সঙ্গে বোধহয়।
” হাঁ রে ভাই। অনেকগুলো ছবি তুলেছি। জাস্ট ফাটাফাটি উঠেছে। কালকে ঘুরতে গিয়ে আরো তুলবো। ইয়্যু নো না আমি কত ভালো ফটোগ্রাফার? এমন সুন্দর করে তুলবো না.. গাজীপুরের সিনারি (scenery) দেখে সুইস ফিল পাবি। ”
নাদিরা হেসে উঠলো ফোনের ওপাশে। ইচ্ছাকৃতভাবে দুষ্টুমি করে অবুঝের মতো শুধালো,
” সুইস? কোন সুইচ গো? লাইট ফ্যান অন করার? ”
প্রশংসার বদলে উপহাস! মেজাজ বিগড়ে গেল মেয়েটির। হৃদি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
” তোর মতো গাঁ”ধীরে ভার্সিটিতে অ্যাডমিশন দিছিল কে? হুঁ? এত বড় ছা”গলী। আজও জানিস না সুইজারল্যান্ডকে সংক্ষেপে সুইস বলে? ”
নাদিরা এবার মুখ টিপে হাসলো। বুঝদারের মতো ন্যাকা স্বরে বলে উঠলো,
” ওপস্! ভুল গায়ি থি। ”
মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিমায় হাত নাড়ালো হৃদি। অনমনীয় স্বরে বললো,
” জানা আছে। ইচ্ছা করে মক (mock) করছিস তাই তো? তুই শুধু দেখিস। এমন ছবি তুলবো না কনফিউজড হয়ে যাবি ইগ্লা সুইস নাকি গাজী? ”
সশব্দে হেসে উঠলো নাদিরা। সে হাসিতে সংক্রমিত হয়ে হৃদি নিজেও হেসে উঠলো। আস্তে ধীরে হাস্যরসময় আভা মুছে গেল মুখ হতে। নাদিরা হঠাৎই দুষ্টুমি করে বান্ধবীকে বলে উঠলো,
” হ্যাঁ রে হৃদু সোনা! বিয়ের এতদিন বাদে মধুচন্দ্রিমা গেলি। মধুর ঠিকঠাক স্বাদ পাচ্ছিস তো? নাকি রষকষহীন অবস্থা? হুঁ? আমার অবশ্য জিজুর ওপর শতভাগ বিশ্বাস আছে। এই সফর উনি কিছুতেই করলা’র মতো তেঁতো কাটাবেন না। কি তাই তো? ”
দুষ্টুমির মাত্রা এখন ভিন্ন পথে ধাবিত হয়েছে। উপলব্ধি হতেই তপ্ত হলো কর্ণদ্বয়। স্বয়ংক্রিয় ভাবে মেয়েটির দু কপোল লালচে হলো। মেকি বিরক্তি প্রকাশ করলো হৃদি,
” উফ্ তুইও না? বড় বেশরম তো! সিঙ্গেল মানুষের এত জেনে কি লাভ? হা? আগে নিজে বিয়েশাদী কর। তারপর বলবো নে। ”
নাদিরা নাকমুখ কুঁচকে বলল,
” এতটুকু জানার জন্য বিয়ে করতে হবে? বয়েই গেছে। বিয়ে ছাড়াই বহুত জানি। আর লাগতো না। ”
শব্দ করে হেসে উঠলো হৃদি। হাসতে হাসতে বাঁ হাতে জানালার পাল্লা বন্ধ করে ফেলল। সরে গেল সেথা হতে। বেডের পানে অগ্রসর হবার তালে বান্ধবীকে দুষ্টুমিপূর্ণ স্বরে বলল,
” বিয়েশাদী লাগবে ক্যা? তুমি তো লিভ ইন করবা? তাই না চাঁদু? ”
ফোনের ওপাশে আঁতকে উঠলো নাদিরা,
” আসতাগফিরুল্লাহ্! নাউজুবিল্লাহ্! ছিঃ ছিঃ ছিঃ। এই মাইয়া তুই কিন্তু এবার আমার নিষ্পাপ চরিত্র নিয়া টানাটানি করতাছোছ! ”
বিছানায় বসে উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো হৃদি। বাঁ হাতের তেলোয় লুকিয়ে গেল ওষ্ঠাধর। ওর হাসিতে তেঁতে উঠলো নাদিরা,
” অস”ভ্য মাইয়া। জামাই এত বেশি ভালুপাশা দিছে যে তুই পা-গল হইয়া গেছোছ। ফোন রাখ কইতাছি। ”
কটমট করে ক’টা গালমন্দ উপহার দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো নাদিরা। ওর হাস্যরসাত্মক কাণ্ডে এখনো হেসে চলেছে মেয়েটি। মোবাইল রাখলো পাশে। হঠাৎ হাসি মুছে স্বল্প স্বাভাবিক হলো বদন। ওয়াশরুম হতে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে ইরহাম। স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল হৃদি। ভাগ্যিস উনি কিছু শোনেননি। নাহলে কি ভাবতেন? বউ তার এত লুচি? ছিঃ! তবে মেয়েটির সে আশায় গুড়ে বালি। ভেজা মুখ তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে গম্ভীর স্বরে শুধালো একান্ত জন,
” বন্ধুকে আফটার ম্যারেজ টিপস্ দেয়া হচ্ছিল? ”
থমকে গেল হৃদি! বড় হলো চক্ষু। উনি না ওয়াশরুম ছিলেন! এসব শুনলেন কখন? এনার হাত-পা, মস্তিষ্ক, কান সব তো আবার একটু বেশিই সক্রিয়। চলে বেশি। ভুলেই গিয়েছিল। হুহ্!
” হাঁ। তাই করছিলাম। আফটার অল সিঙ্গেল বান্ধবী আমার। ঠিকঠাক টিপস্ না দিলে জানবে বুঝবে কি করে? ”
একটু ভাব নিয়ে বললো মেয়েটা। বিবাহিতা হিসেবে তার আলাদাই এক ভাব রয়েছে। বাকিদের মতো সে সিঙ্গেল নয়। এমপি জামাই আছে তার। অকস্মাৎ মেকি ভাব পলায়ন করে ঘটলো সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত এক কাণ্ড! ডান কাঁধ বরাবর এক শক্তপোক্ত হাতের লহু ধাক্কা। কোমল দেহটি হিল্লোলের(ঢেউয়ের) ন্যায় আছড়ে পড়লো বিছানার তুলতুলে আবরণে। বিহ্বল মেয়েটি এখন বিছানায় পড়ে। কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার পূর্বেই আরেক চমক! পুরুষালি হাতে আবদ্ধ হলো ঘাড়। তার অতি সন্নিকটে ঝুঁকে এসেছে স্বামী নামক মানুষটি। মেয়েটির মাথা উঠে গিয়েছে বিছানা হতে কিঞ্চিৎ উঁচুতে। ভারসাম্য বজায় রাখতে দু হাতে আঁকড়ে ধরে শুভ্র রঙা বেডশিট। দু’জনার মধ্যকার দূরত্ব অতীব ক্ষীণ। ছুঁই ছুঁই তাদের নাক। শিহরণ জাগানো উষ্ণ হাওয়া আছড়ে পড়ছে চোখেমুখে। মুদিত হয়ে আসছে নেত্র জোড়া। লহমায় মোহগ্ৰস্থ মানুষটি ঘুচিয়ে ফেললো মধ্যকার দূরত্ব। ক্ষণিকের জন্য প্রগাঢ় এক অধর সন্ধি। স্তব্ধ হৃদি! আবেশে সিক্ত হবার পূর্বেই সন্ধি বিচ্ছেদ হলো। এলোমেলো শ্বাস প্রশ্বাসের গতিবেগ। চক্ষু বুঁজে অনিয়ন্ত্রিত অনুভূতির দলকে সামাল দিতে ব্যস্ত মেয়েটি। বিমোহিত মেয়েটির অধর কোণে ক্ষুদ্র ছোঁয়া অঙ্কন করে আরো নৈকট্যে এলো ইরহাম। ফিসফিসিয়ে বললো,
” চমক থাকছে কাল। এরপর নাহয় অজানাকে জেনো। বুঝিয়ো। গেট রেডি মাই গার্ল! ”
নজরকাড়া হাসি উপহার দিয়ে সঙ্গিনীর ডান পাশে ধপ করে শুয়ে পড়লো মানুষটি। তখনও বিস্ময়ে অভিভূত হৃদি! চমক! কেমনতর চমক থাকছে কাল? এমন রহস্য করে বললেন কেন! কোন অজানাকে জানতে চলেছে সে? কি হবে আগামীকাল? গভীর ভাবনায় মশগুল হয়ে গেল মেয়েটি। ওর হাবভাব লক্ষ্য করে নিম্ন অধর কা’মড়ে নিঃশব্দে হাসলো ইরহাম। দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো উপরিভাগে রঙিন সিলিংয়ে। নিঃসন্দেহে আগামীকাল এক বড়সড় চমক আসছে! কাটাবে দু’জনে এক স্মরণীয়-মধুরতম রজনী!
.
দুই বন্ধুর সঙ্গে একটি ফ্লাটে বিগত চার বছর ধরে থাকছে রাহিদ। তিন বন্ধু ভাগাভাগি করে ভাড়া পরিশোধ করে থাকতো। ফ্লাটের গুণমান মোটামুটি ভালো। এখন বিচ্ছেদের ঘন্টা বেজেছে। বছর চারেকের পুরনো ঘরকে করতে হবে ত্যাগ। এখন আর একাকী নয় সে। বিবাহিতা স্ত্রী রয়েছে। বন্ধু ও স্ত্রী দুই মিলিয়ে তো একত্রে বাস করা যায় না। একজনকে ত্যাগ করা আবশ্যক। তাই তো চার বছরের অংশীদারি ত্যাগ করে বেশ কিছুদিন ধরে নতুন বাসার খোঁজ করছিল রাহিদ। অনেক খোঁজাখুঁজি করে অবশেষে সাধ্য অনুযায়ী একটি ফ্লাটের খোঁজ মিলেছে। ছোট্ট ফ্লাট। নব দম্পতিদের জন্য একদম মানানসই। দু’টো বেডরুম, ডাইনিং-ড্রয়িংরুম একত্রে। রয়েছে একটি অ্যাটাচড্ ওয়াশরুম এবং কিচেন। একটি মাঝারি আকৃতির বেলকনি সংযুক্ত মূল বেডরুমের সঙ্গে। আজকে ফ্লাটটি কনফার্ম করে এসেছে রাহিদ। বেশকিছু ফটোও তুলেছে ফ্লাটের। বউকে দেখাতে হবে না?
এ মুহূর্তে রাহিদ বসে পুরনো সে-ই ফ্লাটে। ঘরের দুই পাশে দু’টো সিঙ্গেল খাট। রয়েছে একটি পোশাক রাখার লম্বা স্টিলের আলনা। সে আলনায় যত্রতত্র জড়িয়ে এলোমেলো শার্ট, গেঞ্জির স্তূপ। রয়েছে একটি স্টিলের আলমারি। উন্মুক্ত আলমারির এক পাল্লা। কি হোল এ অবহেলায় ঝুঁলে চাবি। দেয়াল সংলগ্ন ছোটোখাটো ওয়্যারড্রব। হা হয়ে খোলা দু’টো ড্রয়ার। সেথা হতে উঁকিঝুঁকি দিয়ে চলেছে জিন্স প্যান্ট এমনকি শার্টের হাতা। আরো একটি ঘর রয়েছে এই ফ্লাটে। সেটি মূলত তাদের স্টাডি রুম। এক কোণে একটি ফ্লোর বেড পাতা। সেথায় ঘুমায় তাদের আরেক সঙ্গী। বন্ধু। ওই ঘরটি বলতে গেলে নিরিবিলি। স্টাডি ম্যাটারিয়াল ব্যতীত তেমন কিছু নেই। তা-ও অবিন্যস্ত রূপে। টেবিলের ওপর বইয়ের ছন্নছাড়া দশা। নারীছোঁয়া বিহীন ঘর তো এমন বিরানভূমিতে পরিণত হবেই! পুরো ফ্লাটটি এমনই। কেউ প্রবেশ করলেই বুঝতে পারবে এটি ব্যাচেলরদের ঘর। ঘরের এলোমেলো, অবিন্যস্ত, অগোছালো রূপ তারই প্রমাণস্বরূপ।
নিজের সিঙ্গেল খাটে হেলান দিয়ে বসে রাহিদ। হাতে মোবাইল। নয়া বাসস্থানের ফটোগুলো তার বিবাহিতা স্ত্রী ইনায়াকে হোয়াটস্অ্যাপে পাঠিয়ে দিলো। দীর্ঘশ্বাস ফেললো উপরে থাকা মেসেজগুলো দেখে। সে একাই বিগত দিনগুলোতে কত মেসেজ পাঠিয়েছে। কোনোটির রিপ্লাই মেলেনি। এত অভিমান! আর মাত্র দিন কয়েকের অপেক্ষা। আদরে-সোহাগে ভুলিয়ে দেবে সঙ্গিনীর অভিমানের প্রতি বর্ণমালা। সে ভেবেই উজ্জ্বল হলো চেহারা। পাশের সিঙ্গেল খাটে শুয়ে বন্ধু লক্ষ্য করলো এ উজ্জ্বলতা। তাই তো রসিকতার স্বরে শুধালো,
” কি মিয়া? জেগে জেগে বউয়ের স্বপ্ন দেখতাছো নাকি?”
ভাবনায় ছেদ পড়লো। রাহিদ তাকালো বন্ধুর পানে। হাসিমুখে বললো,
” আর মাত্র কয়েকটা দিন। এরপর আর স্বপ্ন নয়। দিবারাত্রি চোখের সামনে থাকবে। ”
” খেলা হবে খেলা। তা বললা না মিয়া? ”
রাহিদ মেকি রাগ প্রকাশ করে বন্ধুর দিকে বালিশ ছুঁড়ে দিলো। সশব্দে হেসে উঠলো বন্ধু। রাহিদ নিজেও হাসছে। আশায় বাঁধছে বুক। কবে এ বুকে মাথা রেখে শান্ত করবে সে অশান্ত মন!
•
দিনমণির মিষ্টি কিরণ ক্রীড়ারত ধরনীর বুকে। হালকা পবনের ছোঁয়ায় নৃত্যে মশগুল বৃক্ষপত্র। বিছানা সংলগ্ন দাঁড়িয়ে দুষ্টুমির সম্রাজ্ঞী হৃদি। দৃষ্টি বুলিয়ে চলেছে বিছানায় রাখা চারটি শাড়ির ওপর। ঘুরতে এসে সব ই বলতে গেলে শাড়ি এনেছে এবার। সাহেবের আদেশ। শাড়ি বিহীন অন্য কিছু চলবে না এখানে। কিইবা করার? স্বামীর আদেশ বলে কথা। দু’টো সালোয়ার স্যুট এবং চারটি শাড়ি এনেছে। যেটা ইচ্ছে পড়বে। আজ এ মুহূর্তে সে দ্বিধায় ভুগছে। ভুগবে না? সে তো এমনি এমনি শাড়ি পড়ছে না। স্বামী মশাইকে জোরসে ঝটকা দিতে শাড়ি পড়বে। মশাই এখানে আসার পরিকল্পনা থেকে আরম্ভ করে আসার পর শুধু ঝটকা ই দিয়ে যাচ্ছে। কাল রাতে অবধি দিলো। কি নাকি চমক রয়েছে। সে যাই হোক। কোনো ক্ষেত্রেই পিছিয়ে নেই আজকের নারী। হৃদিও দেখিয়ে দেবে ঝটকা কারে কয়। পছন্দ মতো একটি শাড়ি হাতে নিলো মেয়েটা। ট্রান্সপারেন্ট শাড়ি এটি। বেশ পাতলা আবরণ। হাতের তেলোয় শাড়িটি নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেল হৃদি। এটা পড়লে কি সব দৃশ্যমান হবে? হুঁ? ভাবুক মেয়েটা শাড়ি নিয়ে ভাবতে ভাবতে দাঁড়ালো আরশির সম্মুখে। বুকের ওপর শাড়ি মেলে ধরলো। উঁহু ঠিকঠাক ই তো লাগছে। অতটাও পাতলা নয়। বোকাটা বুঝলোই না পোশাকের ওপর শাড়ি মেলে এর আবরণ পরীক্ষা করা বোকামি ছাড়া অন্য কিছু নয়। যাই হোক। র-ক্তলাল এই ট্রান্সপারেন্ট শাড়িটি বাছাই করলো হৃদি। আজ এই ট্রান্সপারেন্টে ই ফেঁ-সে যাবে এমপি মশাই। দেখবে, জ্ব’লবে কিন্তু হাতের নাগালে মিলবে না।
হৃদি ভোলেনি গতবারের কথা। এমনই এক শাড়িতে নিজেকে উপস্থাপন করেছিল সে। তাতেই মোহাচ্ছন্ন হয়েছিল ইরহাম। অতিক্রম করেছিল সংযমের সীমারেখা। প্রথমবারের মতন গভীর উ-ন্মাদনায় মেতে উঠেছিল তারা। ভুলে গিয়েছিল জাগতিক সকল হুঁশ। মেতেছিল একে অপরেতে। আকস্মিক বাঁধা। রাতের আঁধারে ফোন কল এলো। বাড়ি ফেরার পথে বাইক দু”র্ঘটনার শিকার হয়েছে সাহিল। অমায়িক ও পথপ্রদর্শক ‘ ভাই ‘ হিসেবে রাতের আঁধারে ছুটে গিয়েছিল ইরহাম। সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলো। মানুষটি বাড়ি ফিরলো প্রায় শেষ রাতের দিকে। সে রাতের উ-ন্মাদনা অপ্রত্যাশিত ভাবে সাহিলের জন্য ভণ্ডুল হয়েছিল। অতঃপর পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় এমনতর অত্যন্ত মধুর রজনী আর মেলেনি। এখন তো সকাল। ফিরবে কি সে-ই মধুর লগন! ইশ্! কিসব ভাবছে সে! কোনো মা-দকতার সৃষ্টি নয় বরং এমপি সাহেবকে একটু শায়েস্তা করতে ইচ্ছুক সে। তাই তো এমনতর আয়োজন। মিটিমিটি হেসে শাড়ি ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিয়ে হৃদি অগ্রসর হলো ওয়াশরুমে।
_
সমতল আরশির সম্মুখে দাঁড়িয়ে সদ্য স্নাতা হৃদি। ভেজা চুল গড়িয়ে টুপ টুপ করে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা জল। ভিজে যাচ্ছে ব্লাউজের পেছনাংশ। সেথায় ভ্রুক্ষেপ নেই মেয়েটির। সে তো ব্যস্ত শাড়ি সামাল দিতে। শাড়ির আঁচল লুটোপুটি খাচ্ছে মেঝেতে। আরেক অংশ হাতের মুঠোয়। পাতলা শাড়িটি সামাল দিতে কেমন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তালবেতাল হয়ে যাচ্ছে কেন? বিরক্তিকর ধ্বনি মুখনিঃসৃত হলো। ভ্রু কুঁচকে শাড়ি গুঁজে নিতে মগ্ন মেয়েটি। তেমনই এক ব্যস্ত মুহূর্তে ঘরের ভিড়িয়ে রাখা দ্বার উন্মোচন করে ভেতরে প্রবেশ করলো ইরহাম। এ ভিলায় দু’টো রুম পাশাপাশি। ওদের বুকিং করা। তাই ভিড়িয়ে রাখা ছিল দ্বার। ভাবেনি স্বামী মহাশয় এমন বিব্রতকর মুহূর্তে ফিরে আসবে।
নিম্ন অধর কা’মড়ে শাড়িটি উদর বরাবর গুঁজে নিলো হৃদি। সমতল-স্বচ্ছ আরশিতে দৃশ্যমান তার শাড়ি বিহীন ঊর্ধ্বাঙ্গ। ঘরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে এমন অভাবনীয়-অপ্রত্যাশিত দৃশ্য অবলোকন করে স্তব্ধ ইরহাম! ধড়াস ধড়াস করছে বক্ষপিঞ্জরের অন্তরালে লুকায়িত হৃদযন্ত্রটি। বেগতিক শ্বাস প্রশ্বাসের গতিবেগ। স্বেদজল গড়িয়ে পড়ছে কপালের দু’পাশ বেয়ে। এ কেমন হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতি! পদযুগল ভারসাম্য হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়বে বুঝি! বারকয়েক পলক ঝাপটালো ইরহাম। নাহ্! কল্প নয়। বাস্তব এ। হৃদরাণীর আবেদনময়ী রূপে তখন অ-গ্নিকাণ্ড হৃদয়ে! ঝ ল সে যাচ্ছে নেত্র যুগল। দাঁড়িয়ে থাকা হয়ে উঠলো দুষ্কর। চুম্বকের ন্যায় আকর্ষিত হয়ে চলেছে তনুমন। মোহমায়া জাপ্টে ধরেছে আষ্টেপৃষ্ঠে। টি-শার্ট ও ট্রাউজার পড়নে মানুষটির। আজ এ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করতে পারলো সঙ্গিনীর সিক্ত রূপ তার নিকট আ”সক্তির ন্যায়! এমনতর রূপ অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয় তার পক্ষে। শ্লথ পায়ে ব-শীভূত হয়ে ইরহাম এগোতে লাগলো হৃদির পানে। ততক্ষণে বরফের ন্যায় হিমায়িত হৃদি! আরশিতে নিবদ্ধ চক্ষু। স্বামীর আগমনে বিহ্বল মেয়েটি ভুলে গেল নিজেকে শাড়ির আবরণে আবৃত করতে। ভড়কানো চাহনিতে তাকিয়ে শুধু।
চলবে.
[ ফায়ার সার্ভিস! জাল্ল্দ হি আ যাইয়ে 🔥
আসসালামু আলাইকুম পাঠকবৃন্দ। গত পর্বে নয়ন ও তার বোনের মৃ-ত্যু রহস্য অনেকেই বুঝতে পারেননি। নয়নের বোন হলো সেই মেয়েটি প্রথম পরিচ্ছেদের পনেরোতম পর্বে যার ওপর নি*র্যাতনের বর্ণনা দেয়া হয়েছিল। আর প্রথম পরিচ্ছেদের শেষ পর্বে নয়নের মৃ-ত্যু। দু’টো ঘটনাই রহস্যজনক ছিল। গত পর্বে সে-ই রহস্য উন্মোচন করা হলো। মাঝবয়সী নারীটি ছিলেন ওদের জন্মদাত্রী মা। যার বর্তমান ঠাঁই বৃদ্ধাশ্রমে। মা*দকের অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব দেখাতে এই নি’র্মম দৃশ্য। যারা এখনো বুঝতে পারেননি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি। এই উপন্যাসের মূল থিম হলো মা*দক ভার্সেস ইরহাম এবং তার হৃদরাণী! তাই মা;দকদ্রব্য বিষয়ক খুঁটিনাটি বাহিরের দৃশ্য এবং রহস্য থাকবে। আশা করি কনফিউশন ক্লিয়ার হয়েছে? ধন্যবাদ সবাইকে পাশে থাকার জন্য। ]