মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি #দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_২

0
699

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২

” হাই ইনু! ”

হাত নেড়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো মেয়েটি। অপ্রত্যাশিত ভাবে ভাবীকে দেখে যথেষ্ট অবাক ইনায়া! ভাবী তাকে নিতে এসেছে! একগাল হেসে এগিয়ে গেল মেয়েটা। হৃদি হাসিমুখে ওকে উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে নিলো। শুধালো,

” পরীক্ষা ভালো হয়েছে? ”

ইনায়া সরে ইতিবাচক মাথা নাড়ল,

” হাঁ ভাবী। আলহামদুলিল্লাহ্ বেশ ভালো হয়েছে। ”

” আলহামদুলিল্লাহ্! ”

হৃদি প্রসন্ন হলো। পেশ করলো এক প্রস্তাব,

” ইনু বেবি চলো। একটু ঘোরাঘুরি করে তারপর বাড়ি ফিরবো। এতদিন পড়ালেখা করে করে দুর্বল হয়ে পড়েছো। এখন একটু তরতাজা হওয়া দরকার। ”

ইনায়া হেসে আদুরে মুখ করে বললো,

” ঠিক আছে। চলো। আগে কিছু খাবো তারপর ঘুরবো। ক্ষুধার জ্বা’লায় পেটে চোঁ চোঁ করছে তো। ”

এ বিষয়টি ভুলেই গিয়েছিল। হৃদি অপ্রস্তুত হয়ে বললো,

” হাঁ হাঁ চলো। ইশ্! আমিও না। ভুলেই গিয়েছিলাম। চলো তো। আগে ভোজন এরপর অন্য কিছু। ”

ননদের হাত থেকে এক্সাম ফাইল নিলো হৃদি। দু’জনে অগ্রসর হলো রাস্তার এক পাশে অবস্থিত গাড়ির পানে।

দিবাবসুর দীপ্তিতে উজ্জ্বল বসুন্ধরা। ড্রেসিং টেবিলের সম্মুখে দাঁড়িয়ে হৃদি। হাতের নাগালে গুছিয়ে রাখছে স্বামীর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। ওর পেছনে দাঁড়িয়ে এমপি মহাশয়। চুলে চালনা করে চলেছে হেয়ারব্র্যাশ। বাহিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত সে। হৃদি পিছু ঘুরে দাঁড়ালো। স্বামীর বাড়িয়ে দেয়া হেয়ারব্র্যাশটি রেখে দিয়ে বললো,

” এই যে। আপনার সবকিছু গুছিয়ে রেখেছি। ”

ইরহাম ওর পাশ কাটিয়ে সম্মুখে গেল। প্রয়োজনীয় টুকটাক জিনিসপত্র একবার অবলোকন করে পুরে নিলো শুভ্র পাঞ্জাবির পকেটে। অতঃপর পিছু ঘুরলো। ঈষৎ রসিকতার স্বরে বললো,

” সব দিলে না যে! ”

হৃদি চমকালো! ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে বললো,

” সবই তো দিয়েছি। কিছু বাদ পড়েনি তো। ”

ইরহাম ধীরপায়ে এগিয়ে এলো। দাঁড়ালো নৈকট্যে। হৃদি অবাক! বোঝার চেষ্টা করছে হাবভাব। বক্র হেসে মানুষটি স্বল্প ঝুঁকে গেল অর্ধাঙ্গীর পানে। ফিসফিসিয়ে বললো,

” বাদ পড়েছে তো। ”

” কি? সবই তো ঠিকঠাক দিয়েছি। ” জিজ্ঞাসু নয়নে তাকিয়ে হৃদি।

” বুস্টার দাওনি। ”

হৃদি অবাক নেত্রে তাকিয়ে,

” বুস্টার! কিসের বুস্টার? আপনি কি আমার সঙ্গে রসিকতা করছেন? ”

সরু চোখে তাকিয়ে মেয়েটি। ইরহাম তা অবলোকন করে মোহনীয় হাসলো। কপালে ঠেকে গেল কপাল। মুগ্ধ নয়নে সে হাস্য আভা অতি সন্নিকটে উপভোগ করে চলেছে মেয়েটি। মানুষটি দুষ্টু স্বরে বললো,

” লম্বা সময়ের জন্য বাহিরে থাকবো। অ্যানার্জি বুস্টার দেবে না? ”

” কিসের অ্যা.. ”

অসম্পূর্ণ রয়ে গেল প্রশ্নটি। লহমায় স্বামীর সুমিষ্ট বন্দিত্বে আটক হলো হৃদি। মানুষটি শক্তপোক্ত দু হাতে নিজের সনে আগলে নিলো সঙ্গিনীকে। গাঢ় হলো আর্দ্র ছোঁয়ার রঙ-তুলি! আবেশে মুদিত হলো দু’জনার আঁখি পল্লব। কিয়ৎক্ষণ পর মিললো মুক্তি। শ্বাস প্রশ্বাসের গতিবেগ দ্রুততর। প্রিয়তমার কপোলে লেপ্টে থাকা লজ্জালু আভাটুকু বিমোহিত নয়নে উপভোগ করলো ইরহাম! তবে তা স্থায়ী হলো না। যেতে হবে এবার। অন্যথায় দেরি হয়ে যাবে। ললাটে ওষ্ঠাধর ছুঁয়ে মৃদু স্বরে বললো,

” আসছি। আসসালামু আলাইকুম। ”

লাজুক কন্যা স্বামীর পানে একঝলক তাকিয়ে ক্ষীণ স্বরে সালামের জবাব দিলো,

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। সাবধানে থাকবেন। ”

মাথা নাড়িয়ে প্রস্থান করলো ইরহাম। মনে মনে মহান রবের নিকটে স্বামীর সুস্থতা ও সফলতা প্রার্থনা করলো হৃদি।

‘ আনন্দাঙ্গন ‘ এর লিভিং রুমে বিদ্যমান গাম্ভীর্য। ইরহাম ব্যতিত সকলে বসে সোফায়। এজাজ সাহেব কিছু বলবেন। সকলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় তা শোনার জন্য। হৃদির বাম পাশে বসে ইনায়া। ইনায়া সকলের অলক্ষ্যে ফিসফিসিয়ে ভাবীকে প্রশ্ন করলো,

” ভাবী! আব্বু হঠাৎ জরুরি তলব করলো কেন? কি বলবে কিছু আন্দাজ করতে পারছো কি? ”

হৃদি ডান হাতের ইশারায় নেতিবাচক জবাব দিলো। ভাবুক হয়ে ননদ-ভাবী যুগল ভাবতে লাগলো কি বলবেন উনি। কিসের জন্য তলব? অবশেষে নীরবতা ভঙ্গ করে এজাজ সাহেব গলা খাঁকারি দিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। সবাই উৎসুক নয়নে তাকিয়ে।

” সবাইকে ডেকে পাঠিয়েছি কারণ বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। সবার জানা উচিত। ”

রাজেদা খানম চিন্তিত বদনে প্রশ্ন করে বসলেন,

” কি হইছে? কোনো সমস্যা? ”

মালিহাও চিন্তাগ্ৰস্থ হয়ে পড়লেন। কোনো সমস্যা হয়েছে কি? উনি এমন থমকে যাচ্ছেন কেন? এজাজ সাহেব মৃদু স্বরে বললেন,

” তেমন কিছু নয়। আসলে বিষয়টা ইনুকে নিয়ে। ”

নিজের নাম শুনে হকচকিয়ে গেল ইনায়া। ভীতসন্ত্রস্ত ভাব জড়িয়ে ধরলো আষ্টেপৃষ্ঠে। আব্বু এমন করে বলছে কেন? সে কি রাহি ভাইয়া বিষয়ক কিছু টের পেয়ে গেছে? নাকি রাহি ভাইয়া নিজেই বিচার দিয়েছে! বেশ ঘাবড়ে গেল কিশোরী কন্যা। হৃদি তা লক্ষ্য করে চমকালো বেশ! ইনায়া এত ভয় পাচ্ছে কেন? কি হয়েছে ওর? এনি প্রবলেম!

মালিহা কোমল কণ্ঠে স্বামীকে বললেন,

” ইনু! কি হয়েছে পুরোটা বলো। আমরা শুনছি। ”

” ইনুর জন্য খুব ভালো একটা সম্বন্ধ এসেছে। শিকদার ফ্যামিলি থেকে। ”

উপস্থিত সকলে হতবিহ্বল হলো! চক্ষু চড়কগাছ ইনুর। তার বিয়ের জন্য সম্বন্ধ এসেছে! মালিহা বিস্ময় প্রকাশ করে বলে উঠলেন,

” এসব কি বলছো? মাত্র দুই সপ্তাহ হলো ওর এইচএসসি শেষ হয়েছে। এত তাড়াতাড়ি বিয়ে! ”

এজাজ সাহেব মেয়ের পানে একপলক তাকিয়ে স্ত্রীকে বললেন,

” তুমি খুব ভালো করেই জানো এত ছোট মেয়েকে বিয়ে দেয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। আমি ওনাদের তাই বলেছি। তবে মিস্টার শিকদার খুব করে বলছেন। ইনুকে ওনাদের বেশ পছন্দ হয়েছে। আমাদের লাস্ট পার্টিতে ওকে দেখেছে। ওনারাও এত ছোট মেয়েকে দিয়ে সংসার ধর্ম করাবেন না বলছেন। আপাতত এনগেজমেন্ট কিংবা আকদ করিয়ে রাখতে চাইছেন। বছর তিন-চার পর আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে নেবেন। ”

উপস্থিত সকলেই হতবাক! এজাজ সাহেব এসব কি বলছেন! মনোবেদনায় পীড়িত কিশোরী দ্রুত পায়ে লিভিং রুম হতে প্রস্থান করলো। সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল দোতলায়। হৃদি সেদিক হতে দৃষ্টি সরিয়ে শ্বশুরকে নম্র স্বরে বললো,

” পাপা তোমাদের কথার মাঝে ইন্টারফেয়ার করার জন্য ক্ষমা চাইছি। ইনু এখনো বেশ ছোট। সবে এইচএসসি দিয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা অবধি দেয়নি। তুমি কি ওনাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেছো? ”

” আমি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। ভাবছি। দেখি কি করা যায়। ”

রাজেদা খানম কাট কাট স্বরে বললেন,

” বিয়া দেয়ার লাইগা হারা জীবন পইড়া আছে। ছুডু মাইয়া বিয়া দিওনের দরকার নাই। হ্যাগো মানা কইরা দে। ”

মালিহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। নিষ্পলক তাকিয়ে রইলেন স্বামীর পানে। বোঝার চেষ্টা করছেন কি চলছে ওনার মনে। বরাবরের মতই ব্যর্থ হলেন। চিন্তার শিকল বেঁধে ফেললো ওনায়। কি হতে চলেছে এবার?

দিন কয়েক পরের কথা। নৈশভোজ সেরে বাড়ির প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে মানুষটি। পড়নে নীলাভ টিশার্ট এবং কৃষ্ণবর্ণ ট্রাউজার। ট্রাউজারের পকেটে দু হাত গলিয়ে প্রকৃতি বিলাসে মগ্ন সে। সুঠামদেহে আঁটসাঁট টিশার্ট টি। গভীর ভাবনায় মশগুল সে। কিয়ৎক্ষণ বাদে ভাবনায় ছেদ পড়লো। পেছনে কারোর উপস্থিতি অনুধাবন করতে পারলো ইরহাম। পিছু ঘুরে তাকালো। চোখের পর্দায় দৃশ্যমান হলো বাবার অবয়ব। এজাজ সাহেব গম্ভীর মুখে বেতের সিঙ্গেল সোফায় বসলেন। পকেট হতে হাত বের করলো মানুষটি। ধীরপায়ে এগিয়ে এলো। বিপরীত দিকের সোফায় বসলো সে। বেতের তৈরি সেন্টার টেবিলের ওপর রাখা টি-পট। চায়ের কাপ। সুগার পট। সুদক্ষ হাতে টি-পট হতে চায়ের কাপে চা ঢেলে নিলো ইরহাম। দু কাপে চা ঢেলে নিলো। পূর্বের জায়গায় রেখে দিলো টি-পট। সুগার পট হতে দু’জনের পছন্দ মতো চিনি নিয়ে চায়ে মিশিয়ে নিলো। টি স্পুন রাখলো যথাস্থানে। অতঃপর বাবার পানে এককাপ চা বাড়িয়ে দিলো। এজাজ সাহেব এতক্ষণ চমকিত নেত্রে সবটা দেখছিলেন। পিতা-পুত্রের এমন মুহূর্ত এ প্রথমবার উদিত হলো বুঝি! পুত্রের হাত থেকে চায়ের কাপ নিলেন উনি। ইরহাম এককাপ চা নিয়ে আয়েশ করে বসলো। ধোঁয়া ওঠা গরম কাপে চেপে ধরল ওষ্ঠ। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো বাবার পাশে। উনিও চা পান করছেন। নীরবতা ভেদ করে ইরহাম প্রথমে কথা বললো,

” ইনুর বিয়ে দিতে চাইছো? ”

” হুঁ। ”

” শি ইজ অনলি এইটিন। ”

” এখুনি শ্বশুরবাড়ি পাঠাচ্ছি না। ”

একরোখা জবাবে অপ্রসন্ন হলো ইরহাম। গরম গরম চায়ের কাপ তখনো হাতে। গম্ভীর স্বরে বললো,

” আমি এই মূহুর্তে বোনের বিয়ে দিতে ইচ্ছুক নই। ”

এজাজ সাহেব চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,

” ভাইয়ের আগে বাবার অধিকার। ”

ইরহাম ত্যা’ছড়া হাসলো,

” হাসালে। বাবা হও! ”

চায়ে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গেলেন উনি। অসন্তুষ্ট কণ্ঠে শুধোলেন,

” কোনো সন্দেহ যে আমি তোমাদের বাবা নই? ”

” না। আসলে জন্ম দিলেই তো বাবা হওয়া যায় না। কিছু রেসপনসিবিলিটি থাকে। সেগুলো তো আর তুমি..! থাক এসব কথা। মিস্টার শিকদারকে মানা করে দিয়ো। ইনুকে ও বাড়ি দিচ্ছি না। ”

চায়ের কাপে চুমুক বসালো ইরহাম। এজাজ সাহেব তৎক্ষণাৎ অসম্মতি প্রকাশ করলেন,

” ভাবনা চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইনু ও বাড়িতে খুব ভালো থাকবে। জুনায়েদ ওয়েল এস্টাবলিসড্ ছেলে। উচ্চ শিক্ষিত। বাবার বিজনেসে জয়েন করেছে গত বছর। দেখতে শুনতে ভালো। আর কি চাই? ”

” ভালো ছেলে বলেই যে আমার বোন ভালো থাকবে এমনটা নয়। আমি চাইছি না এই মুহূর্তে বিয়েশাদী নামক কোনো ঝামেলায় ও জড়াক। এখন ভার্সিটির জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছে। সেটাই করুক। অন্য কিছু নয়।”

এজাজ সাহেব গম্ভীর স্বরে বললেন,

” তোমার কথামতো সব হবে নাকি? ”

চায়ের কাপে শেষ চুমুক বসিয়ে উঠে দাঁড়ালো ইরহাম। টিশার্ট বিন্যস্ত করতে করতে বললো,

” সময়ই বলে দেবে। আসছি। ”

এক মুহুর্তও দাঁড়ালো না ইরহাম। প্রস্থান করলো সেথা হতে। অসন্তোষ প্রকাশ পাচ্ছে এজাজ সাহেবের মুখশ্রীতে। পুত্র ওনার এমন হলো কেন!

ঘড়ির কাঁটা তখন এগারোর কাছাকাছি। গৃহকর্ম সম্পাদনের পাশাপাশি ছেলের সঙ্গে ফোনালাপে লিপ্ত পল্লবী। মোবাইল রাখা সেন্টার টেবিলের কাঁচের আবরণে। লাউডস্পিকারে দেয়া। পল্লবী ঘরদোর সাফ করার পাশাপাশি কথা বলছেন।

” হ্যা রে বাবা! ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছিস তো? দিন দিন কেমন শুকিয়ে যাচ্ছিস! ”

সশব্দে হেসে উঠলো রাহিদ।

” মা! এটা হলো গিয়ে তোমাদের মাদার সুলভ চিরপরিচিত ডায়লগ। ছেলে যদি হাতির মতো মোটা হয় তবুও মায়ের নজরে সে পাটকাঠির মতো শুকনা। ”

” যাহ্! যতসব বাজে কথা। ” মৃদু ধমকে উঠলেন উনি।

রাহিদ হাসতে লাগলো। কোনোমতে হাসি থামিয়ে শুধালো,

” পরশু নাকি আনন্দাঙ্গন যাচ্ছো? হঠাৎ? কোনো দাওয়াত আছে নাকি? ”

” ঠিক দাওয়াত না। কিন্তু বিশেষ দিন। ”

” মানে? ওদিন কারো জন্মদিন নাকি? ”

” আরে না। তেমন কিছু না। ওই ইনুকে দেখতে আসবে তো। তাই। ”

” ওহ্! ”

প্রথমে উপলব্ধি করতে না পারলেও পরক্ষণে বিষয়টি মস্তিষ্কে কড়া নাড়ল। চরম আশ্চর্যান্বিত হলো রাহিদ!

” হোয়াট! ”

” হাঁ। শিকদার ফ্যামিলি থেকে সম্বন্ধ এসেছে। ওনারা তোর বাবা, ফুফা দুজনেরই চেনাজানা। হাই স্যোসাইটি থেকে বিলং করেন। তোর.. ”

আর বলা হলো না। রাহিদ ব্যস্ত স্বরে বললো,

” মা এক ফ্রেন্ড ডাকছে। রাখছি এখন। আসসালামু আলাইকুম। ”

দ্রুততার সহিত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো রাহিদ। পল্লবী শোপিস পরিস্কার করছিলেন। চমকালেন এহন আচরণে! এটা কি হলো!

নিকষকৃষ্ণ রজনী। নিজস্ব কক্ষে বেডের হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে ইরহাম। হাতে মোবাইল। তা স্ক্রল করে চলেছে সে। হৃদি টুলে বসে ড্রেসিং টেবিলের সম্মুখে। নৈশকালীন পরিচর্যা সেরে বিছানায় এলো সে। বসলো স্বামীর পাশে। উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে বললো,

” যা হচ্ছে ঠিক হচ্ছে কি? ”

স্ত্রীর পানে তাকালো মানুষটি। নির্লিপ্ত স্বরে বললো,

” দেখতে আসলেই বিয়ে হয়ে যায় না। ”

মোবাইলে মনোনিবেশ করলো সে। হৃদি অপ্রসন্ন হলো,

” হাঁ জানি। তবুও এসবের কি দরকার ছিল? পাপাকে কত করে বললাম। সে শুনতে নারাজ। ”

” উনি শুনবেন না। যা করার করুক। আমিও তাই করবো যেমনটা বলেছি। ”

” ধ্যাৎ! শুধু শুধু মেয়েটা চিন্তায় শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। কি যে হচ্ছে! ”

বিরক্ত বোধ করছে হৃদি। এখন বিশ্রাম দরকার। পরশুর বিষয় পরশু ই দেখা যাবে নাহয়। বালিশ ঠিকঠাক করে সোজা হয়ে শুয়ে পড়লো মেয়েটা। পাশের জনকে বললো,

” আলোটা নিভিয়ে দিয়েন। ”

ইরহাম তপ্ত শ্বাস ফেলে মোবাইল রেখে দিলো। বেড সাইড টেবিলের ধারে কানেক্টেড সুইচ টিপে দিলো। নিভে গেল আলো। কক্ষ জুড়ে তখন শুধু ডিম লাইটের মৃদু মোহনীয় দ্যুতি। স্ত্রীর পাশে শয্যা গ্রহণ করলো ইরহাম। সময় এখন নিদ্রার রাজ্যে তলিয়ে যাওয়ার।

এমনিতেই পারিবারিক চিন্তায় মশগুল হৃদি। তন্মধ্যে ভার্সিটিতে ঘটে গেল এক অভাবনীয় কাণ্ড। সীমাহীন মুসিবতে ফেঁ’সে গেল মেয়েটি। এসব কি হচ্ছে!

চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here