মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি #দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_১১

0
805

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১১

ঘরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে অভাবনীয়-অপ্রত্যাশিত দৃশ্য অবলোকন করে স্তব্ধ ইরহাম! ধড়াস ধড়াস করছে বক্ষপিঞ্জরের অন্তরালে লুকায়িত হৃদযন্ত্রটি। বেগতিক শ্বাস প্রশ্বাসের গতিবেগ। স্বেদজল গড়িয়ে পড়ছে কপালের দু’পাশ বেয়ে। এ কেমন হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতি! পদযুগল ভারসাম্য হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়বে বুঝি! বারকয়েক পলক ঝাপটালো ইরহাম। নাহ্! কল্প নয়। বাস্তব এ। হৃদরাণীর অভাবনীয় রূপের ঝলকানিতে তখন অ-গ্নিকাণ্ড হৃদয়ে! ঝ ল সে যাচ্ছে নেত্র যুগল। দাঁড়িয়ে থাকা হয়ে উঠলো দুষ্কর। চুম্বকের ন্যায় আকর্ষিত হয়ে চলেছে তনুমন। মোহমায়া জাপ্টে ধরেছে আষ্টেপৃষ্ঠে। টি-শার্ট ও ট্রাউজার পড়নে মানুষটির। আজ এ মুহূর্তে সে উপলব্ধি করতে পারলো প্রিয়তমার সিক্ত রূপের ঝলকানিতে তার সাড়ে সর্বনা’শ! বাঁ হাতে ঘরের প্রবেশদ্বার বদ্ধ করলো মানুষটি। শ্লথ পায়ে ব-শীভূতের ন্যায় এগোতে লাগলো হৃদির পানে। ততক্ষণে বরফের ন্যায় হিমায়িত হৃদি! আরশিতে নিবদ্ধ চক্ষু। স্বামীর আগমনে বিহ্বল মেয়েটি ভুলে গেল নিজেকে শাড়ির আবরণে আবৃত করতে। ভড়কানো চাহনিতে তাকিয়ে শুধু। স্বামীর প্রতিটি পদধ্বনি যেন কর্ণ গহ্বর এফোঁড় ওফোঁড় করে দিচ্ছে। অন্তরে বেজে চলেছে প্রেমের ছলাৎ ছলাৎ কলতান। ধীরলয়ে বদলে যাচ্ছে চোখের ভাষা। সম্মুখে থাকা আরশিও যেন আজ জানিয়ে দিলো সতর্কবাণী!

‘ আজ বুঝি নিস্তার নেই রে হৃদি! ‘

লাজে-সংকোচে-কিছুটা ভয়ে আনত হলো বদন। কম্পিত ডান হাতের সহায়তায় শাড়ির স্বচ্ছ আবরণে আবৃত হলো গাত্রের ঊর্ধ্বভাগ। ঠিক পেছনেই। অতি সন্নিকটে এসে দাঁড়ালো ব-শীভূত মানুষটি। দৃষ্টি নিবদ্ধ তার আরশিতে। সেথায় দৃশ্যমান প্রিয় নারীর অবয়ব। সে অবয়বে নে-শাক্ত নয়নে তাকিয়ে ইরহাম। অবাধ্য নয়ন জোড়া আরশিকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রিয় নারীর সারা অবয়বে। অত্যন্ত পাতলা আবরণীতে নিজেকে আবৃত করার বৃথা প্রয়াসে ব্যস্ত মেয়েটি। কিয়ৎক্ষণ পূর্বের সাহসিকতা এখন বাতাসে ভেসে। মনে মনে বক্র হাসলো মানুষটি। দু’জনার মধ্যে বিদ্যমান সূক্ষ্ম দূরত্বটুকুও আজ আর সহ্য হয় না। তাই এলো। আরো নিকটে এলো। সে আগমন যেন অ”গ্নির ন্যায় উত্তপ্ত! অত্যুষ্ণ। যে উত্তাপে শিউরে উঠলো কোমল কায়ার অধিকারিণী। কম্পিত চিত্তে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করলো হৃদি। কিন্তু চূড়ান্ত রূপে ব্যর্থ হলো। দু কাঁধ তখন স্বামীর আয়ত্ত্বে। সঙ্গিনীর দু কাঁধ শক্ত হাতে আঁকড়ে বাঁধা প্রদান করলো ইরহাম। মোহাচ্ছন্ন নয়ন জোড়া নিবদ্ধ হলো মেঘবরণ কেশরাশি’তে। বাঁ হাতের আলতো স্পর্শে ডান কাঁধ হতে সরে গেল কেশগুচ্ছ। ঠাঁই হলো কাঁধের বাম পাশে। আগত মুহুর্তের ভাবনায় শিরশির করে উঠলো মেয়েটির অভ্যন্তর। আলগোছে তার কাঁধ বরাবর নিম্নে ধাবিত হলো মানুষটির মুখখানা। পুরু অধর স্পর্শ করলো কাঁধের ডান পাশের কোমল ত্বক। আবেশে মুদিত হলো হৃদির আঁখি যুগল। বাঁ হাতে আঁকড়ে ধরলো পরিহিত শাড়ির একাংশ। অপরিমেয় মা-দকতায় বুঁদ হলো পুরুষালি সত্তা। শক্তপোক্ত দু হাতে অন্তর হতে গ্রহণ করলো অর্ধাঙ্গীকে। কোমল কায়া মিশে স্বামীর সনে। এলোমেলো-নে’শালো স্পর্শ সমূহ তখন পুরোদমে অনিয়ন্ত্রিত। অধরোষ্ঠ যেন বাঁধনহারা রঙতুলির ন্যায় সঙ্গিনীর কোমলতায় এঁকে চলেছে বাহারী চিত্রপট।

নিয়ন্ত্রণহারা অনুভূতিতে আবিষ্ট মানুষটি। থামতে নারাজ একবিন্দু পরিমাণ। পেশিবহুল দু হাতে পাঁজাকোলে তুলে নিলো অর্ধাঙ্গীকে। মোহাচ্ছন্ন মেয়েটির লজ্জালু মুখ লুকিয়ে স্বামীর গ্ৰীবাদেশে। দু হাতে জড়িয়ে তার গ্ৰীবা(গলা)। আসন্ন একান্ত মুহূর্তের কল্পনায় কম্পিত তনুমন। র”ক্তলাল আভা ছড়িয়ে মুখশ্রীতে। নে”শাক্ত মানুষটি চঞ্চল পায়ে এগিয়ে গেল। ঠাঁই হলো দু’জনার নরম তুলতুলে বিছানার আবরণে। স্ত্রীর সত্তায় আজ পুরোদস্তুর প্রমত্ত মানুষটি! অবিরাম আ!ফিমের ন্যায় নে-শালো স্পর্শানুভূতিতে গুটিয়ে যাচ্ছিল মেয়েটি। তাকে নিজের মতো করে আগলে নিলো অসীম নে-শায় মত্ত ইরহাম। দিবাবসুর দীপ্তিতে আজ প্রথমবারের মতো একে অপরেতে হারিয়ে দু’জন। কখনোবা স্বামী নামক মানুষটির একান্ত কিছু শব্দগুচ্ছে লাজে মিইয়ে যাচ্ছিল মেয়েটি। তবে মিললো না বিন্দুতুল্য ছাড়! আদিম উ-ন্মাদনার সুখসাগরে দু’জনে চড়ে বসলো এক ভেলায়। অতিবাহিত হলো অবর্ণনীয়-তীব্র সুখময় এক লগ্ন।

.

গোধূলি লগ্ন। পশ্চিম আকাশে তখন লালাভ-কমলা আভা ছড়িয়ে। সগৌরবে অস্ত যাচ্ছে আদিত্য। বিহঙ্গের দল ফিরছে আপন নীড়ে। ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিলো ইনায়া। ধীরপায়ে গিয়ে দাঁড়ালো জানালার পাশে। দু হাতে বিভক্ত করে সরিয়ে দিলো পর্দার আস্তরণ। একমুঠো আঁধার হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করলো ঘরে। বিষন্নতা মাখা হাসি ফুটে উঠলো অধরে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো ইনু। জীবনটা কেমন একঘেয়ে, বিষাদপূর্ণ হয়ে উঠছে। ভালো লাগছে না কিছুই। কোনোরূপ পরিবর্তন নেই। সে যে এখন বিবাহিতা, কারোর অর্ধাঙ্গী তা-ও যেন মিথ্যে মনে হয়। মনের গহীনে পর্বতসম অভিমানের স্তূপ। রাহি ভাইয়ার আদুরে খুদে বার্তা কিংবা ক্ষমা চাওয়ার প্রচেষ্টা কেন যেন ফিকে লাগে। আজকাল নিজেকে নিজেই বুঝতে পারে না মেয়েটি। সবেতে অনীহা, মন্দ লাগা অনুভূত হয়। রোবটের ন্যায় আবেগহীন লাগে নিজেকে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? আচ্ছা সে কি মানসিকভাবে বিধ্ব-স্ত হয়ে পড়ছে! অস্থিরতার শিকার! মনোবিদের শরণাপন্ন হওয়া উচিত? কে জানে কোনটা সঠিক। তার বোধহয় বায়ু পরিবর্তন করা উচিত। কিংবা নয়। আজকাল এই ঘর, চার দেয়ালের মাঝে বন্দী জীবন অসহ্যকর লাগে‌। তীব্র অসন্তুষ্টি প্রকাশ পায় মুখাবয়বে। কবে মিলবে মুক্তি? স্বপ্নের রাজকুমার কি আসবে না মুক্তির বার্তা নিয়ে! ভাবনায় মশগুল মেয়েটি টেরও পেলো না কখন তার বিষন্ন অক্ষিকোল গড়িয়ে পড়লো এক ফোঁটা মুক্তো।

.

বিভাবরীর কৃষ্ণাবরণে আবৃত বসূধা। বিমোহিত মেয়েটির দৃষ্টি নিবদ্ধ তার সুদর্শন স্বামীর পানে। আজ আরো এক ভিন্ন রূপে নিজেকে উপস্থাপন করেছে মানুষটি। পড়নে তার কৃষ্ণবর্ণ ব্লেজার। উন্মুক্ত ব্লেজারের সম্মুখ ভাগ‌। সেথা হতে দেখা মিলছে শুভ্র রঙা হেনলি স্টাইল টি-শার্ট। পায়ে সফেদ স্নিকার্স। নিঃসন্দেহে নজরকাড়া লাগছে এ ক্যাজুয়াল লুকে! কখনো তার এমন রূপের দেখা মিলবে জানা ছিল না মেয়েটির। সর্বদা একই রূপে থাকা মানুষটি এবারের সফরে ভিন্ন ভিন্ন রূপে আবির্ভূত হচ্ছে। যে রূপে ক্ষণে ক্ষণে মোহগ্ৰস্থ মেয়েটি! হারিয়ে ফেলছে নিজেকে। হৃৎযন্ত্রে ধুকপুকানি বর্ধিত হচ্ছে ক্রমবর্ধমান হারে। আজ সকালের পর থেকে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে লাজের বহর। মানুষটির চোখে চোখ মেলানো যেন এখন সবচেয়ে জটিলতম কর্ম মনে হয়। বড় দুষ্কর। লজ্জালু হেসে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো হৃদি। স্বামীর সৌজন্যমূলক ভাবে ধরে রাখা চেয়ারে বসলো। বিপরীত দিকের চেয়ারে বসলো স্নায়বিক দৌর্বল্যগ্ৰস্থ ইরহাম। দু’জনে এ মুহূর্তে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার আয়োজনে উপস্থিত। চমকপ্রদ এই নৈশভোজের আয়োজন করেছে হৃদির একমাত্র স্বামী মহাশয়। গতরাতে বুঝি এটার কথাই বলছিল! প্রথমবারের মতো কোনো রমণীর জন্য ক্যান্ডেল লাইট ডিনার আয়োজন। না চাইতেও বিচলিত এমপি সাহেব। এ আয়োজন ওর মনমতো হবে তো? নাকি কোনো খামতি রয়ে গিয়েছে! ও কি হতাশ হবে? দুশ্চিন্তায় কাতর এমপি সাহেব। কিইবা করার আছে? নারীমন বোঝা যে পৃথিবীর অন্যতম কঠিন কাজ। কবি, সাহিত্যিকদের ভাষ্যে নারী এক রহস্য। যা ভেদ করা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। ওপার বাংলায় গানও তো রয়েছে নারীমন নিয়ে,

‘ মেয়েদের মন বোঝা নয় রে নয় সোজা ‘

এলোমেলো বিভিন্ন চিন্তাভাবনা মস্তিষ্কে জেঁকে বসেছে। অস্থির অস্থির অনুভূতি হচ্ছে। ঘেমে যাচ্ছে কি ইরহাম? তন্মধ্যে হৃদি বিমোহিত চোখে অবলোকন করে চলেছে মুগ্ধকর আয়োজন!

গোলাকার টেবিল আবৃত ডিজাইনিং শুভ্র রঙা টেবিলক্লথে। টেবিলের মাঝ বরাবর অবস্থিত একটি ক্যান্ডেলাব্রা। ট্রিপল কাঠের অর্ধ-বৃত্ত নকশাযুক্ত এ ক্যান্ডেলস্টিকে বহ্নি শিখা ছড়িয়ে তিনটে মোমবাতি। পাশে একটি স্বচ্ছ কাচের গোলাকার পাত্র। জলে পূর্ণ তা। ডুবে কয়েকটি মোমবাতি। জলে তাদের প্রতিফলন এবং হলদে শিখার ঝলকানিতে সে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য! গোলাকার পাত্রে মোমবাতির পাশাপাশি বেশকিছু গোলাপের পাপড়ি, সুন্দর নুড়ি ডুবে সৌন্দর্য বর্ধন করে চলেছে। দু’জনের জন্য দু পাশে প্লেট। টেবিলে হালকাপাতলা ভোজনের ব্যবস্থা। হলদে ও লালাভের মিশ্রনে সে এক চোখ ধাঁধানো, প্রেমময় পরিবেশ! নিঃসন্দেহে এমন আয়োজনে পুলকিত হৃদি! তবে চিন্তায় ডুবে এমপি সাহেব। হৃদি বেশ কিছুক্ষণ ধরে তা লক্ষ্য করছে। কিছু আন্দাজ করতে পারলো কি!

” কি ব্যাপার ইরু সাহেব! এত সুন্দর আয়োজনে মুখ শুকনো করে বসে আছেন কেন? ফিলিং নার্ভাস? ”

জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে হৃদি। রুদ্ধকর অবস্থা মানুষটির। তপ্ত শ্বাস ফেলে মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করেই বসলো,

” ডু ইয়্যু লাইক দ্য অ্যারেজমেন্টস্? ”

মোহনীয় হাসলো হৃদি। সে ভুল নয়। আসলেই বিচলিত হয়ে আছে সাংসদ ইরহাম চৌধুরী। প্রথমবারের মতো এমন আয়োজন করেছে কিনা! তাকে প্রাণবন্ত হাসি উপহার দিলো মেয়েটি। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলতে লাগলো,

” ইরহাম! পুরোটা চমৎকার হয়েছে! আমি আপনাকে ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না এই মুহূর্তে ঠিক কি ফিল করছি। এই যে হলদে লাল আভা। ক্যান্ডেলস্টিক। এই পানিতে ভাসমান ক্যান্ডেলস্। আপনি, আমি একত্রে। এরচেয়ে সুন্দর, হৃদয়ছোঁয়া আর কি হতে পারে? জানেন এটা না আমার লাইফের ফার্স্ট ক্যান্ডেল লাইট ডিনার। তা-ও আবার একমাত্র বরের সাথে। ইটস্ অ্যান আমেজিং ফিলিং! ”

হৃদির উচ্ছ্বসিত বদনে কাঙ্ক্ষিত উত্তর খুঁজে পেল ইরহাম। মুচকি হেসে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো অর্ধাঙ্গীর পানে। এতক্ষণ দুশ্চিন্তায় ঠিকমতো লক্ষ্য করা হয়ে ওঠেনি। কৃষ্ণবর্ণ স্যাটিন সিল্ক শাড়ি পড়নে মেয়েটির। শাড়ির পাড়ে আকর্ষণীয় স্বর্ণালী রঙা কারুকার্য! থ্রি কোয়ার্টার স্লিভে আবৃত দু হাতের অনেকখানি। দীঘল কালো কেশ সুন্দরভাবে পনিটেল করে বাঁধা। মুখজুড়ে মানানসই প্রসাধনীর ছোঁয়া। অপার স্নিগ্ধতা বিরাজমান আনাচে কানাচে। কানে একজোড়া ঝুলন্ত লম্বা দুল। মায়াবিনীর মায়াজালে বিভোর হলো কাঠিন্যতার খোলসে বন্দী অন্তর! মোহিত নয়নে তাকিয়ে অর্ধাঙ্গীর পানে! চোখে চোখ পড়তেই তা উপলব্ধি করলো হৃদি। লাজুক আভা ফুটে উঠলো মুখপানে। তৃপ্তিময় হাসলো ইরহাম। মৃদু স্বরে বললো,

” লেটস্ স্টার্ট আওয়া’র ফার্স্ট ক্যান্ডেল লাইট ডিনার? ”

লাজুক কন্যা ইতিবাচক মাথা নাড়ল। হাস্যবদনে প্রিয়তমার সঙ্গে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার উপভোগে মগ্ন হলো ইরহাম। নিজেই দু’জনের প্লেটে লাইট মিল পরিবেশন করলো। হৃদি প্রসন্ন বদনে স্বামীর নয়া রূপ অবলোকন করে চলেছে। বন্দী করছে হৃদয়ের রঙিন স্মৃতির বক্সে। কোনো একদিন এক বিষন্ন প্রহরে সে বাক্স খুলে এ স্মৃতিগুলো দেখবে। স্মরণ করে পুলকিত হবে মন। কেটে যাবে বিষন্নতা। ভেবে মুচকি হাসলো হৃদি। চমকালো ভাবনায় ছেদ পড়ায়। ওর পানে চামচ বাড়িয়ে ইরহাম। ইশারায় মুখে নিতে বলছে। আবেগপ্রবণ মেয়েটির চোখে জমলো অপ্রত্যাশিত সুখময় অশ্রু। মুচকি হেসে স্বামীর হাত হতে খাবার মুখে পুরে চমৎকার এ ভোজন পর্বের সূচনা করলো। অতিবাহিত হতে লাগলো মনোরম এই মুহূর্ত। টুকটাক আলাপণ। মাঝেমধ্যে একে অপরকে খাইয়ে দেয়া। দু’জনের চোখেমুখে অবর্ণনীয় উজ্জ্বলতা। আহা! জীবনে সুখী হতে এমন ছোটখাটো টুকরো টুকরো মুহূর্তই যথেষ্ট।
.

আঁধারিয়া চাদরে মোড়ানো ধরিত্রী। আকাশের বুকে শোভা পাচ্ছে শীতাংশু। ঝিরিঝিরি হাওয়ায় শীতল তনুমন। ঝিঁঝিঁ পোকার কলতানে মুগ্ধ কর্ণদ্বয়। আশেপাশে রক্ষীর ন্যায় পাহারারত কিছু ছোট-বড় বৃক্ষ। সবুজ ঘাসের আচ্ছাদনে পাতা একটি ফ্লোর ম্যাট। তাতে পাশাপাশি শুয়ে দু’জনে। স্বামীর ছড়িয়ে রাখা পেশিবহুল ডান বাহুতে শুয়ে হৃদি। দু’জনার দৃষ্টি নিবদ্ধ শীতাংশু’র পানে। কাছাকাছি পাশাপাশি কপোত-কপোতী। সে এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ! চুপটি করে নেই হৃদি। আপন মনে প্রাণবন্ত রূপে বলে চলেছে কত কি। স্বামীর সঙ্গে বিয়ের এতগুলো মাস বাদে প্রথমবারের মতো একান্তে দিনযাপন। স্মরণীয় মুহূর্তগুলো পুরোদমে উপভোগ করে চলেছে সে। কে বলতে পারে আবার কবে মিলবে এমনতর মুহূর্ত! শৈশব হতে কৈশোর অতঃপর তারুণ্য। ছোট-বড় স্মরণীয় খুঁটিনাটি মুহূর্তগুলো জানাচ্ছে স্বামীকে। সে আজ সীমাহীন খুশি। হাস্যমুখে বলেই চলেছে। সে যেন প্রবহমান নদীর কলতান। হাওয়ার ঝাপটায় ক্রীড়ারত ঢেউয়ের মতো প্রাণবন্ত। চঞ্চল। মুগ্ধ শ্রোতার ন্যায় সব শুনে চলেছে ইরহাম। বউপাখি বলছে। চঞ্চলা পাখিটির কিচিরমিচির কলরবে বিমোহিত সে! কখনো শীতাংশু’র পানে তাকিয়ে কখনোবা তাকিয়ে স্ত্রীর মায়াবী আদলে। শুনছে সে। বলতে বলতে হৃদি এলো অপ্রত্যাশিত কাণ্ড কারখানায়। তার ক্রাশদের তালিকায়।

” জানেন আগে না আমি প্রচুর ক্রাশ খেতাম। মানে কারোর হ্যান্ডসাম লুক অ্যান্ড ড্যাশিং পার্সোনালিটি থাকলেই হয়েছে। ফিদা এই আমিটা! এই নিয়ে আফু, নাদু ওরা কত পঁচিয়েছে আমাকে। তাতে কি হয়েছে? আমি তো আমিই। উঠতে বসতে ক্রাশ খাচ্ছি। দেশি বিদেশি কেউই বাদ নেই লিস্টে। ব-হু ক্রাশ খেয়েছি জীবনে। ”

চোখেমুখে কাঠিন্যতা ভীড় করলো মানুষটির। তা লক্ষ্য বিনা আঙ্গুল গুনে ভেবে ভেবে হৃদি বলতে লাগলো,

” রণবীর সিং, রণবীর কাপুর, আরমান মালিক, ভিরাট কোহলি, দার্শান রাভাল, শারাদ মালহোত্রা, কার্তিক আরিয়ান, কারান কুন্দ্রা। আমাদের দেশে সিয়াম, জোভান, তাহসান, সাকিব আল হাসান, ইমরান, আয়মান সাদিক, ইরহাম চৌধুরী আরো অনেকেই আছে। এই মুহূর্তে ঠিক মনে পড়ছে না। অনেকদিন ধরে মনে করি না তো। নাম কেমন ভুলে ভুলে গেছি। ”

হতাশা মিশ্রিত স্বরে বলল হৃদি। যেন ভুলে গিয়ে সে মস্তবড় অপরাধ করে ফেলেছে। হঠাৎ মেয়েটির দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো স্বামীর পানে। হকচকিয়ে গেল স্বামীর চাহনিতে অপ্রত্যাশিত তীক্ষ্ণতা উপলব্ধি করে। একটু আগেই না কেমন মুগ্ধ হয়ে শুনছিল! এখন ক্ষ্যা পা ষাঁড়ের মতো লুক নিয়ে আছে কেন? গলা শুকিয়ে গেল হৃদির। আস্তে আস্তে সরতে সরতে স্বামীর পেশিবহুল বাহু হতে সরে হাতের কবজি বরাবর পৌঁছে গেল। আকস্মিক মাথা তুলে ওর দিকে ঝুঁকে গেল ইরহাম। তাতেই ফুরুৎ হৃদির প্রাণপাখিটা। ওর ভীত অভিব্যক্তি অগ্রাহ্য করে চোখে চোখ রাখলো ইরহাম। গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,

” দেশীয় ক্রাশ সিয়াম, জোভান, তাহসান, সাকিব আল হাসান, ইমরান, আয়মান সাদিক, ইরহাম চৌধুরী? ”

দ্রুততার সহিত ইতিবাচক মাথা নাড়ল হৃদি। হাঁ। ওরাই। অতঃপর হুঁশ ফিরতেই ভয়ের চোটে নেতিবাচক মাথা নাড়ল।

” না না। কেউ নেই। শুধু স্বামী আছে। ক্রাশ ম্রাশ সব বাদ। ”

গলা এত শুকিয়ে আসছে কেন? বড্ড তেষ্টা পেয়েছে। এখন রাতদুপুরে বাহিরে পানি পাবে কোথায়? কিংবা পানি খেতে যাবে কি করে? দ্যাখো। কেমন চোখের চাহনিতেই মোড়াল সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরেছে। উফ্! দমবন্ধকর অবস্থা। হঠাৎ..

চলবে.

[ বরের কাছে কখনোই ক্রাশ লিস্ট প্রকাশ করা উচিত নয়। ঠিখ আছে 😷 নাহলে এমন পরিণতি হবে। হুম। ওহ্ হাঁ। অতি শীঘ্রই সমাপ্ত হতে চলেছে অতীতের পাতা। ]

📌 আসসালামু আলাইকুম পাঠক বন্ধুরা….

লেখিকার লেখা গল্প-উপন্যাস সম্পর্কিত ছোট-বড় অনুভূতি ব্যক্তকরণ, গল্প নিয়ে আলোচনা, ভুলত্রুটি শুধরে দেয়া, রিভিউ প্রদান এবং গল্পের চরিত্র-দৃশ্য নিয়ে মতামত পেশ করতে জয়েন করুন আমাদের গল্প সংক্রান্ত গ্রুপে…

গ্রুপ লিংক 🍁

https://www.facebook.com/groups/499389245208190/?ref=share

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here