#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১৬ [ প্রাপ্তমনস্কদের জন্য ]
” আপনি! ”
স্বল্প চেনা মানুষটি অপ্রত্যাশিত ভাবে চোখের সামনে দাঁড়িয়ে। বিস্ময়ে বাকশূন্য হৃদি! দুর্বল শরীরটা যেন বেশ কেঁপে উঠলো। ঝাপসা প্রায় দৃষ্টি। একটু একটু করে এগিয়ে আসছে মানুষটি। ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে মেয়েগুলো। একে অপরের সঙ্গে লেপ্টে সাহস সঞ্চয় করার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষটির নোংরা নজর ঘুরে বেড়াচ্ছে সুন্দরী ললনাদের কমনীয় দেহের ভাঁজে ভাঁজে। হৃদিও তন্মধ্যে একজন। ওড়নাবিহীন শরীর। হাত-পা বাঁধা। তা সত্ত্বেও জড়োসড়ো হয়ে নিজেকে ওই লোলুপ দৃষ্টি হতে আড়াল করার চেষ্টা করে চলেছে হৃদি। জুনায়েদ শিকদার তা লক্ষ্য করে হাসলো। কেমন বি শ্রী হাসি। ঘৃণায়-বিদ্বেষে মুখ কুঁচকে গেল ইরহাম পত্নীর। সন্নিকটে এলো জুনায়েদ। বসলো একটি মেয়ের শরীর ঘেঁষে। কিশোরী মেয়েটি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কেঁপে উঠলো। সিক্ত হলো নয়ন। একটুখানি সাহায্যের জন্য চোখ দু’টো এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে লাগলো। নিরূপায় বাকিরা। চোখের তারায় অসহায়ত্ব। জুনায়েদ মেয়েটির ভীত ভাব সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে হঠাৎই তার গলদেশ বরাবর নাক ডুবিয়ে দিলো। লম্বা করে নাসিকা গ্ৰন্থিতে টেনে নিলো মেয়েলি সুবাস। ভয়ে-অপমানে মেয়েটি হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো। কঠিন হলো হৃদির মুখভঙ্গি। চরিত্রহীন লোক একটা। কিশোরী মেয়েটির ভীত মুখ দেখে বেশ বিনোদন পেল জুনায়েদ। গলদেশে চুম্বন এঁকে অকস্মাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। সে হাস্যধ্বনি বদ্ধ ঘরে এক নি-ষ্ঠুর দা”নবের হুঙ্কারের ন্যায় প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো। দেয়ালে দেয়ালে আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে হাস্য ধ্বনি। ভয়ে রক্তশূন্য অবস্থা মেয়েগুলোর। ব্যতিক্রম একমাত্র এক অনন্যা। নাম যার হৃদি! জুনায়েদ তখন দাঁড়িয়ে। হেসে চলেছে মেয়েগুলোর ভীতিগ্ৰস্থ অবস্থা দেখে।
” এই তাহলে আপনার আ আসল রূপ? ”
দুর্বল স্বরে বলে উঠলো হৃদি। হাসির শব্দ থেমে গিয়েছে। কিন্তু হাস্য আভা এখনো লেপ্টে অধরে। জুনায়েদ পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ওর পানে। চকচক করে উঠলো চোখ। দুই হাত দু’দিকে প্রসারিত করে গর্বিত ভঙ্গিতে বললো,
” ইয়েস। দিস ইজ দ্য রিয়েল মি। জুনায়েদ শিকদার। ”
কুকর্ম করে গর্ব বোধ হচ্ছে! দৃষ্টি সরিয়ে নিলো হৃদি। জুনায়েদ হাঁটি হাঁটি পায়ে এগিয়ে এলো। সম্মুখে বসলো হাঁটু গেড়ে। হৃদি ঘৃণায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় যথাসম্ভব পিছিয়ে গেল ইঞ্চি খানেক। ওর দেহজ সৌন্দর্য্য নোংরা দৃষ্টিতে উপভোগ করতে করতে জুনায়েদ বললো,
” এমপির এলেম আছে বলতে হবে। কয় মাসের মধ্যেই ** বানিয়ে ছেড়েছে। ** ম্যান। ”
জঘন্যতম বাক্যে হৃদির কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। লজ্জা, অপমানে র’ক্তিম হলো মুখ। ধিক্কার জানালো অভিব্যক্তিতে। জুনায়েদ হাসলো। বক্র হাসি।
” কি বেব? মুখ কুঁচকে ফেলছো কেন? ভুল কিছু বলেছি কি? তোমার ** চেঞ্জ হয়নি বুঝি? স্বামী সোহাগ করেনি? ”
” চুপ করুন আপনি। নোংরা কথা বলে আর নিজেকে নিচে নামাবেন না। এই আপনার উচ্চ শিক্ষার পরিচয়? ”
কম্পিত কণ্ঠে জোরপূর্বক বললো হৃদি। কণ্ঠস্বর জড়িয়ে আসছে। দুর্বল শরীরে এত কথা বলা যেন দুষ্কর। বাঁধা হাত-পা দিয়ে দেহের ঊর্ধ্বভাগ আবৃত করার বৃথা চেষ্টা চালালো। জুনায়েদ শব্দ করে হেসে উঠলো।
” ইয়্যু আর সো সে** বেব! দেখলেই কেমন ** হয়। ”
নামমাত্র উচ্চ শিক্ষিত জুনায়েদের ভাষাশৈলী অত্যন্ত নোংরা। জঘন্য। যে কোনো মেয়ের জন্য অপমানজনক। লজ্জায়-ঘৃণায় হৃদির চোখে পানি জমলো। মাটির অভ্যন্তরে লুকিয়ে যেতে চাইছে তনুমন। এত জঘন্য শব্দ! ছিঃ!
” বেবস্! এখানে কেন এসেছো জানো তো? ”
হৃদি তখন আনত বদনে বসে। এই নোংরা লোকটার সঙ্গে বিন্দুমাত্র কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে জুনায়েদ একপেশে হাসলো। উঠে দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললো,
” বেবি’স। আর মাত্র দু’টো দিন। এনজয় করে নাও। এরপর তোমাদের ঠাঁই হতে চলেছে ইউরোপ। আহা! সে* সে* স্লা* ইন ইউরোপ! লা জবাব! ”
উচ্ছ্বসিত বদনে বললো জুনায়েদ। তার ইংরেজি ভাষায় বলা অনাকাঙ্ক্ষিত বাক্য হয়তো সকলে বুঝতে পারেনি। তবে হৃদি সহ যারা বুঝতে পারলো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো তাদের চোখমুখে। তাদেরকে ইউরোপে পা চা র করা হবে! নোংরা মেয়ে হিসেবে জীবন আরম্ভ হতে চলেছে। ইয়া খোদা! চোখ ফেটে পানি গড়িয়ে পড়ছে। হৃদি ভাঙা স্বরে কিছু বলতে চাইলো। তবে শুনলো না জুনায়েদ। শিষ বাজাতে বাজাতে আনন্দিত চিত্তে সেথা হতে প্রস্থান করলো। পুনরায় বদ্ধ হলো দ্বার। বন্দী হয়ে পড়ে রইলো ওরা এগারোজন। হৃদি অস্ফুট স্বরে স্বামীকে ডেকে উঠলো,
” কো থা য় আপনি ইরহাম? ”
.
নিজের ঘরে বন্দী রূপে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে রুবেল। শহরের অন্যতম কুখ্যাত অপহ:রণকারী এ মুহূর্তে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে রয়েছে। হাত-পা, মুখ, শরীরের দৃশ্যমান সকল অংশে আঘাতের চিহ্ন। পুলিশের বেদম মা র বলে কথা। জায়গায় জায়গায় ছাপ পড়ে গেছে। চাঁদবদনখানির নকশা উল্টে গেছে যেন। ব্যথায় জর্জরিত হয়ে কাতরাচ্ছে রুবেল। তবুও বিন্দুমাত্র দয়া দেখাতে নারাজ সম্মুখে কাঠের চেয়ারে বসে থাকা মানুষটি। কনুই ঠেকে চেয়ারের হাতলে। দু হাত মুঠো করে তার ওপর থুতনি স্থাপিত। সুগভীর নীলাভ গহ্বর আজ ওই দু চোখে। ভেতরকার সমস্ত অস্থিরতা লুকিয়ে সে নিরেট খোলসবন্দী। তার সমস্ত অবয়বে যন্ত্রণা, ভয়ের ছাপ। একান্ত হৃদরাণীর জন্যে। বাহ্যিক ভাবে সে এখন আপাদমস্তক রোবট। এক যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। দিনরাত এক করে নাওয়াখাওয়া ভুলে যে ব্যস্ত প্রিয় নারীর সন্ধানে। শহর ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও এখন খোঁজ চলছে। কিন্তু কোথাও কেউ নেই। নিখোঁজ তার হৃদি। আজ এক চিলতে আশার আলো দেখে এখানে উপস্থিত হয়েছে। বন্ধু তাঈফ এবং তার সাগরেদরা আচ্ছামতো খাতিরযত্ন করেছে রুবেলের। এখনো মুখে কুলুপ এঁটে রুবেল। একই সুরে গান গাইছে। সে কিছু জানে না। সে এই কি ড ন্যা পে জড়িত নয়।
বন্ধুর ভেতরকার অবস্থা অনুধাবন করে তাঈফ এগিয়ে গেল রুবেলের কাছে। হাঁটু গেড়ে বসে বাঁ হাতে ওর চুলের মুঠি শক্ত করে চেপে ধরলো। ডান হাতে চেপে চোয়াল। যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠলো রুবেল। হিসহিসিয়ে শুধালো তাঈফ,
” ভাবীকে কোথায় রেখেছিস? বল। নইলে দানা ভরে দেবো মগজে। বল হারা*। ”
রুবেল বেদনা মিশ্রিত কণ্ঠে একই কথা বললো,
” আ আমি জানি না। করিনি আমি। আ আমি.. ”
আর বলা হলো না। অকস্মাৎ এক ভয়াবহ কাণ্ড! ঝড়ের গতিতে চেয়ার ছেড়ে অতি নৈকট্যে পৌঁছালো মানুষটি। তাইফের কোমরে সংযুক্ত পি:স্তল হোলস্টার হতে পি:স্তল বেদখল হলো। রুবেলের কণ্ঠনালী বরাবর পি:স্তল গেঁথে ধরেছে ইরহাম। পি শা চ ভর করেছে বুঝি এ মানবদেহে। র-ক্তলাল দু চোখের সফেদ অংশ। ন্যায় অন্যায়ের উর্ধ্বে তার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা। প্রিয়তমার বিরহে অত্যন্ত প*রাক্রমশালী দেহায়বয়। রুবেল চোখের সামনে মৃ ত্যু দেখতে পাচ্ছে। অতি ভয়ে দু চোখ ছাপিয়ে অশ্রু নামলো। অতীব শীতল কণ্ঠে থেমে থেমে শুধালো ইরহাম,
” কাজটা কে করেছে? ”
তাঈফ স্তব্ধ বন্ধুর অপ্রত্যাশিত রূপ দেখে! অর্ধাঙ্গীর বিরহে শান্ত পুরুষটি এতখানি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে! কারোর প্রাণ নিতেও কুণ্ঠাবোধ করবে না! রুবেল শঙ্কায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
” আ। আমি নাহ্! ”
কণ্ঠনালীতে শক্ত করে গেঁথে গেল পি:স্তলের মুখ। চামড়ার আবরণ ছিঁড়ে কণ্ঠনালী ছিন্নভিন্ন করে দেবে কি! পুনরায় হিমশীতল কণ্ঠে শুধালো ইরহাম,
” কে করেছে? ”
” ন নরেন করতে পারে। দক্ষিণাঞ্চলের ন। নরেন। ”
কণ্ঠনালী ফুঁড়ে এতটুকু শব্দ বের হলো। মৃ-ত্যুভয়ে চক্ষু বুজে রুবেল। ইরহাম নভোনীল চোখে তাকালো বন্ধুর পানে। নিঃশব্দ আদেশটুকু ঠিক বুঝতে পারলো তাঈফ। বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে শান্ত করার প্রয়াস চালালো। ত্বরিত উঠে দাঁড়ালো ইরহাম। হাঁটা আরম্ভ করলো ডান দিকে। চলতি পথে পি-স্তল ছিটকে পড়লো মেঝেতে। সহসা শক্তপোক্ত এক ঘু:ষি পড়লো দেয়ালে। হাতের চামড়ায় লাল আভা ছড়িয়ে। আঁতকে উঠলো তাঈফ। ছুটে গেল বন্ধুর পানে। বন্ধুকে শান্ত করার কোনোরূপ উপায় না পেয়ে অস্থির সে। কি করে শান্ত করবে এ পা-গলটাকে! বিড়বিড়িয়ে অসহায় কণ্ঠে আওড়ালো,
” ভাবী কোথায় আপনি? এ পা”গলটার জন্য হলেও ফিরতে হবে আপনায়। ”
চলবে.
[ ব্যস্ততা এবং অমনোযোগী ভাবের জন্য এর বেশি লিখতে পারলাম না। ইনশাআল্লাহ্ আগামী পর্ব বড় লিখে পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবো। কি করে ইরহাম পাবে তার হৃদরাণীর সন্ধান? ]
📌 আসসালামু আলাইকুম পাঠকবৃন্দ। জয়েন করুন আমাদের গল্প সংক্রান্ত গ্রুপে 👇
https://facebook.com/groups/499389245208190/