মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি #দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_২৫

0
709

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২৫

” কথা দাও। কখনো কারোর বাজে মন্তব্যে ভেঙ্গে পড়বে না! তুমি জানো, আমি জানি, আল্লাহ্ জানে তুমি পবিত্র। নিষ্কলঙ্ক। শত্রুর কু ছায়া অবধি তোমায় ছুঁতে পারেনি। তবে কেন লোকেদের কথায় কান দেবে? পাছে লোকে কত কি বলে। সব শোনা তো আমাদের জন্য আবশ্যক নয়। তাহলে কেন শুনবো আমরা? ওরা দু’টো বাজে বকলে আমরা তিনটে ভালো বলবো। বুক ফুলিয়ে সত্য বলবো। কারণ আমরা জানি আমরা সঠিক। ভুল নই। তবে কেন পাছে লোকে ভয়? বি স্ট্রং। গোটা দুনিয়া ভার মে যাক। জেনে রেখো তোমার স্বামী ও পরিবার রয়েছে তোমার পাশে। উই আর অলওয়েজ উইথ ইয়্যু মাই গার্ল। ডোন্ট বি উইক। ”

স্বামীর মুখনিঃসৃত প্রতিটি অনুপ্রেরণাদায়ক শব্দমালা হৃদয় ছুঁয়ে মস্তিষ্কে গেঁথে গেল। সীমাহীন ভালোলাগায় বক্ষপিঞ্জরের অন্তরালে লুকায়িত প্রণয় উদ্যান হতে মিষ্টিমধুর গুঞ্জন ভেসে আসছে। চোখেমুখে উজ্জ্বলতা। এক বুক গর্ব জীবনসঙ্গীর জন্যে। আবেগে আপ্লুত তনুমন। কম্পিত ওষ্ঠাধর। অক্ষিকোল গড়িয়ে অশ্রু নামলো গালে। হৃদি বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ না করে স্বামীর প্রশস্ত বক্ষপটে আছড়ে পড়লো আগ্রাসী ঢেউয়ের ন্যায়। পেলব দু হাত আঁকড়ে ধরলো পিঠ। পুরোপুরি মিশে যেতে চাইছে বক্ষস্থলে। প্রবেশ করতে চাইছে একান্ত মানুষটির মনের অরণ্যে। সেথায় অসংখ্য প্রেমময় বৃক্ষরাজির ভীড়ে সাজাবে এক ছোট্ট সুখের আবাসন। ইরহামও নিজের সনে আঁকড়ে ধরলো স্ত্রীকে। উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ কপোত-কপোতী। বদ্ধ দু’জনার আঁখি পল্লব। কর্ণপাত হচ্ছে হৃদযন্ত্রের মধুরতম স্পন্দন লাব ডাব। লাব ডাব। আবেগের আতিশয্যে স্বামীর ডান কাঁধের ত্বকে ক্ষুদ্র পরশ অঙ্কন করলো হৃদি। শিউরে উঠলো ইরহাম। অনুভূতির স্ফু’লিঙ্গ জ্ব’লে উঠলো মনের অরণ্যে। লাগামছাড়া হলো সত্তা। শক্তপোক্ত দু’টো হাত অর্ধাঙ্গীকে পূর্বের চেয়ে আরো গাঢ় আলিঙ্গনে নিজের সনে আগলে নিলো। তপ্ত শ্বাস প্রশ্বাস ছুঁয়ে যাচ্ছে কাঁধের উন্মুক্ত ত্বক। বাহুডোরে আবদ্ধ মেয়েটি মৃদু শিহরিত হলো। একান্ত পুরুষ তখন মত্ত প্রেমার্দ্র পরশে। বাঁ কাঁধ হতে সরে গিয়েছে কেশগুচ্ছ। অবলীলায় সেথায় অঙ্কিত হচ্ছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরশ। ইরহামের একটি হাত ঘুরে বেড়াচ্ছে অর্ধাঙ্গীর কটিদেশ। তরঙ্গ বয়ে যাচ্ছে শিরদাঁড়া বরাবর। আবেশে নখ ডেবে গেল স্বামীর পৃষ্ঠে। গলদেশে গাঢ় স্পর্শ এঁকে একটুখানি দূরত্ব সৃষ্টি করলো ইরহাম।

শিহরিত মেয়েটির দৃষ্টি অবনত। ঘন ঘন পড়ছে শ্বাস। তপ্ত শ্বাস ফেলে হাত বাড়িয়ে দিলো মানুষটি। পরম স্নেহে দু হাতের অঞ্জলীতে ভরে নিলো স্ত্রীর সুশ্রী-মায়াবী বদন। অপলক নেত্রে তাকিয়ে রইলো। উপভোগ করে চলেছে অর্ধাঙ্গিনীর লাজে রাঙা অক্ষিপল্লবের ঝাপটানি। নাকের ডগায় এক টুকরো লালিমার ছোঁয়া। শিহরিত ওষ্ঠাধরের কম্পন। সেথায় দৃষ্টি নিবদ্ধ হতেই বিস্তীর্ণ মরুর ন্যায় খাঁ খাঁ করে উঠলো গণ্ডস্থল। বারকয়েক শুকনো ঢোক গিলে নিলো ইরহাম। তবুও অশান্ত অন্তঃস্থল। মিলছে না বিন্দুমাত্র স্বস্তি। অভেদ্য সে আকর্ষণে ব’শীভূত সত্তা। নিজেকে সামলানো বড় দুষ্কর। অত্যধিক আবেগী স্বরে ডেকে উঠলো মানুষটি,

” হৃদি! ”

কর্ণ গহ্বরে যেন এক পশলা স্বস্তি হয়ে ঝরে পড়লো শ্রাবণ ধারা। হৃদি তাকালো স্বামীর পানে। সে চাহনিতে ছিল ভরসা। এক বুক ভালোবাসা। আর নিজেকে সমর্পণ করার নৈঃশব্দ্য অনুমোদন। শব্দহীন ভাষাটুকু ঠিক উপলব্ধি করতে পারলো ইরহাম। দু গালে স্থাপিত হাত দু’টো আরেকটু গাঢ় হলো। নিজের মুখ বরাবর নৈকট্যে নিয়ে এলো মায়াময়ীর মুখখানি। লজ্জালু বদনপানে তাকিয়ে সম্মোহনী স্বরে বলে উঠলো,

” নিস্তব্ধ এ রাত। সাথে একান্ত নারীর সান্নিধ্য। হৃদয়ে জেঁকে বসেছে অপরিসীম তৃষ্ণা। তোমার প্রণয় আকণ্ঠ পান করার তৃষ্ণা। ও হৃদরাণী! দেবে কি হৃদয়ের তৃষ্ণা নিবারণের একটুখানি প্রশ্রয়? ”

কোমল মুখখানি লাজে র’ক্তিম বর্ণ ধারণ করলো। ঘন ঘন ঝাপটালো অক্ষিপল্লব। এতেই বেকাবু হলো ইরহাম। বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করে সঙ্গিনীকে কাছে টেনে এলো। কপালে ঠেকে গেল কপাল। তপ্ত শ্বাস আঁকিবুঁকি করে যাচ্ছিল মেয়েটির মুখে। বুঁজে আসছিল চক্ষু। তিরতির করে কম্পমান ওষ্ঠাধর। নিমিষেই সেথায় হালাল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করলো মানুষটি। প্রগাঢ় হলো ছোঁয়া। আবেশে সিক্ত রমণী মিশে গেল স্বামীর বক্ষস্থলে। দু হাতে আলিঙ্গনরত গলা। মধুরতম সে রজনী কাটলো বিনিদ্র। নতুন রূপে একে অপরেতে বিভোর হলো হৃ’হাম। স্বামীর প্রগাঢ় নে’শালো পরশে দিশেহারা তনুমন। এক প্রেমাসক্ত উন্মত্ত রজনী কাটালো তারা!

আপন তরিকায় চলমান সময়ের চাকা। অতিবাহিত হলো কয়েক মাস। গোয়া, ভারত…

স্বল্প আলোকিত ঘর। কৃত্রিম আলো হটিয়ে দিয়েছে আঁধারিয়া চাদর। ডিভানে বসে রুদ্রনীল। পড়নে রাতপোশাক। শক্তপোক্ত বলিষ্ঠ দেহে জড়িয়ে পোশাকটি। উন্মুক্ত বুকের উর্ধ্ব অংশ। দেখা মিলছে লোমশ বক্ষপটের। লম্বা আকৃতির চুলগুলো আজ উন্মুক্ত। মুক্ত হয়ে স্বাধীন রূপে ঘাড়ে পড়ে রয়েছে তারা। সর্বত্র নি:ষ্ঠুর বলে পরিচিত এ মানবের হাতে স্নিফটার গ্লাস। হালকা বেলুন আকৃতির গ্লাসে রয়েছে হু’ইস্কি। যার নিম্ন ভাগ সরু আকৃতির। রঙিন রূপ ধারণ করেছে গ্লাসটি। একটু একটু করে ঠোঁটের কাছে ঠেকছে গ্লাস। ক্ষুদ্র চুমুকে পান করছে হু’ইস্কি। এ মুহূর্তে নিজ বাসভবনে অবস্থান করছে রুদ্রনীল। কানে সংযুক্ত ক্ষুদ্রাকৃতির ইয়ারবাড। ইংরেজিতে কথোপকথন হচ্ছে দু’জনের। যার বঙ্গানুবাদ হলো,

” চিন্তা কিসের মিস্টার? চোখ বুঁজে আরাম করুন। নির্বিঘ্নে কাজ হয়ে যাবে। এই রুদ্রনীল আজ অবধি কোনো ডিল করেছে আর সেটা সফল হয়নি, অসম্ভব। আগামীকাল রাত বারোটা। তৈরি থাকবেন। যথাসময়ে কাঙ্ক্ষিত জিনিস পেয়ে যাবেন। ”

রুদ্রনীলের মুখনিঃসৃত প্রতিটি শব্দে আত্মবিশ্বাস। হবে না? খন্দকার রুদ্রনীল মল্লিক কোনো কর্মে সফলকাম হয়নি এমন নজির যে অত্যন্ত ক্ষীণ। বরাবরই সফলতা অর্জন করে এসেছে এই কাঠখোট্টা, নির্মম, নি-ষ্ঠুর মানুষটি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্ধকার সাম্রাজ্যে প্রতিপত্তি বিস্তার করে চলেছে। যার কুটিল বুদ্ধি ও হিং স্র শিকারি মনোভাবের জন্য শত্রু মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। শিকারকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে মা:রাটা উপভোগ করে এই রুদ্রনীল। একেবারে প্রাণ হরণের চেয়ে রয়েসয়ে যন্ত্রণা দিয়ে মৃ ত্যু উপহার দেয়ার আনন্দ ই ভিন্ন। উপভোগ্য।

ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তিটি ইংরেজিতে কিছু বললো। সংশয় প্রকাশ করলো। রুদ্রনীল গম্ভীর স্বরে তাকে আশ্বস্ত করলো,

” চিন্তা করবেন না অ্যালবার্ট। শুধু পঞ্চাশ লাখ নিয়ে হাজির থাকবেন। এক হাতে মাল নেবেন। আরেক হাতে মানি দেবেন। হিসাব বরাবর। বুঝেছেন? ”

ওপাশ হতে ইতিবাচক সাড়া মিললো। বক্র হাসলো রুদ্রনীল। আত্মবিশ্বাসী স্বরে কাট কাট ভঙ্গিতে ইংরেজিতে আওড়ালো,

” হোপফ্যুলি দেয়ার উইল বি ডিল অ্যাগেইন ইন দ্য ফিউচার।”

ইয়ারবাডে আলতো টোকা দিয়ে যোগাযোগ বিছিন্ন করলো রুদ্রনীল। অধরে লেপ্টে বর্বর হাস্য রেখা। অপেক্ষা শুধু আগামীকাল রাত বারোটার। হবে বিনিময় প্রথা। মিলবে নগদ পঞ্চাশ লাখ!

.

মধ্যাহ্ন প্রহর। ডাইনিং এরিয়ায় উপস্থিত নারী সদস্যরা। হৃদি, মালিহা ও রাজেদা খানম। যথারীতি এজাজ সাহেব ও ইরহাম নিজ নিজ কর্মস্থলে। ক্লান্তিকর বদনে দাঁড়িয়ে হৃদি। মা ও দাদির খাবার পরিবেশন করছে। সকাল থেকেই শরীরটা বড্ড দুর্বল ঠেকছে। সব কিছুতেই বিরক্তি। খাবারদাবারের গন্ধ তো সবচেয়ে নিকৃষ্ট দুর্গন্ধ মনে হচ্ছে।‌ এই যে খাবার পরিবেশন করছে। মাছের তরকারি হতে বিদঘুটে গন্ধ আসছে। বমি বমি ভাব চেপে বসেছে গলদেশে। হঠাৎ বাজেভাবে গা গুলিয়ে উঠলো। দ্রুততার সহিত টেবিলের ওপর ফিশ কারি’র বাটি রেখে একটা চেয়ার টেনে তাতে বসে পড়লো। ভেতরকার সবকিছু বুঝি এই উগড়ে দেবে। দ্রুত গতিতে গ্লাস হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পানি পান করতে লাগলো হৃদি। স্বেদজল উপস্থিত গলদেশে। ললাটে। মালিহা ও রাজেদা খানম সবটাই অবলোকন করলেন। চোখাচোখি হলো ওনাদের। উৎকণ্ঠিত ভাব আস্তে ধীরে দূরীভূত হলো। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চোখ দু’টো বলছে ‘ সুসংবাদ ‘ রয়েছে। আসলেই কি তাই? চকচক করে উঠলো আঁখি যুগল। মালিহা তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালেন। এগিয়ে গেলেন পুত্রবধূর পানে। চেয়ারে দেহ এলিয়ে দিলো হৃদি। উনি পরম মমতায় মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। কোমল স্বরে শুধোলেন,

” তুই ঠিক আছিস তো মা? ”

হৃদি চোখ তুলে তাকালো। ক্লান্ত স্বরে বললো,

” ভালো লাগছে না মা। বমি বমি ভাব হচ্ছে। ”

” কবে থেকে এমন হচ্ছে? ” কণ্ঠে প্রকাশ পাচ্ছে উৎকণ্ঠা।

” বেশ কিছুদিন ধরে। ভেবেছিলাম গ্যাস্ট্রিকের জন্য হচ্ছে। ”

রাজেদা খানম অসন্তুষ্ট বদনে বলে উঠলেন,

” ও রে ব:লদ মাইয়া! গ্যাস্টিখ (গ্যাস্ট্রিক) আর অন্য কিছুর তফাৎ বুঝোছ না? আমগোও আগে কিছু কইলি না। বৌ তুমি ডাক্তাররে ফোন করো। আইজ ই অরে লইয়া ডাক্তারের ধারে যাবা। ”

হৃদি তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো,

” দাদি শুধু শুধু ডক্টরের কাছে যাওয়া লাগবে না। আমি ঠিক আছি। লিটল উইকনেস। ইনশাআল্লাহ্ ভালো হয়ে যাবে। ”

রাজেদা খানম চোখ গরম করে তাকালেন,

” চুউপ। একটাও কথা না। বৌ..! ”

মালিহা ত্বরিত সাড়া দিলেন,

” জ্বি মা। অ্যাপয়েনমেন্ট নিয়ে নিচ্ছি। সন্ধ্যার দিকে যাবো। ”

রাজেদা খানম নাতবউ’কে উদ্দেশ্য করে বললেন,

” ভালো কইরা সব খুইলা কবি কিন্তু। জানোছ তো ডাক্তারগো ধারে কিছু লুকাইতে নাই। ”

হৃদি ইতিবাচক মাথা নাড়ল। চিকিৎসকের নাম শোনামাত্র ই ভয় জেঁকে বসেছে অন্তরে। হঠাৎ কি হলো তার? অ্যাসিডিটি থেকে বড়সড় কিছু নয় তো?

‘ ইয়া আল্লাহ্! রক্ষা করো। ‘

.

ঘড়ির কাঁটা তখন রাত আটটা বেজে পনেরো মিনিট নির্দেশ করছে। কর্মব্যস্ততার দরুণ আজ রাতে বাড়ি ফিরবে না ইরহাম। কিয়ৎক্ষণ পূর্বে মা’কে ফোন করে বিষয়টি অবগত করেছে। প্রথমে স্ত্রী’কেই ফোন করেছিল। কোনো কারণবশত হৃদি মেয়েটা ফোন ধরেনি। তাই মা’কে ফোন করে জানিয়ে দিলো। মালিহা কিছু বলতে উদ্যত হয়েও ব্যর্থ হলেন। বিচ্ছিন্ন হলো সংযোগ। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন উনি। না বলা কথাটি আর বলা হলো না।

.

মধ্যরাত। নিস্তব্ধতা বিরাজমান সর্বত্র। উঁচু পাহাড়ের কোল বেয়ে দৃশ্যমান নদী। বান্দরবানের সাঙ্গু নদী। নদীর দু পাশে যেন টহলরত পাহাড়। ভূতুড়ে নীরবতা চারিধারে। গা ছমছমে অবস্থা। নিজ ছায়া অবধি ভড়কে দেবার মতো ভ-য়ঙ্কর। নিস্তব্ধ পরিবেশে শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছাচ্ছে শুধু নদীর কলতান। ঝিঁঝিঁ পোকার কলরব। নিশাচর প্রাণীর উপস্থিতি অন্তরে দামামা বাজিয়ে চলেছে। যেদিকে দৃষ্টি যায় আঁধার ও আঁধার। কৃত্রিম আলো ব্যতীত কিচ্ছুটি দেখা সম্ভব নয়। সাঙ্গু নদী যেন এক মায়াজাল। দু হাত বাড়িয়ে ডেকে চলেছে। আহ্বান করছে নিজ গহ্বরে তলিয়ে যাওয়ার। সে কি ভয়ানক আহ্বান! কিয়ৎক্ষণ বাদে আঁধারিয়া চাদর হটিয়ে সেথায় স্বল্প আলোর দেখা মিললো। নদীর বুক চিরে এগিয়ে আসছে একটি ট্রলার। যার উপস্থিতিতে সৃষ্ট ধ্বনি প্রবেশ করছে শ্রবণেন্দ্রিয়ে। ট্রলারে উপস্থিত সাতজন। সকলের হাতে মোবাইল। মোবাইলগুলোর ফ্লাশ লাইটে স্বল্প আলোকিত পরিবেশ। নদীর পাড়ে এসে থামলো ট্রলার। ট্রলারের অগ্রভাগে দণ্ডায়মান এক মাঝবয়সী ব্যক্তি। হাতে টর্চলাইট। যার আলোয় সতর্ক চাহনিতে তাকালো আশপাশ। কোথাও কেউ নেই। আছে শুধু নিস্তব্ধতার চাদর। লোকটি পিছু ঘুরে সঙ্গীদের ইতিবাচক ইশারা করলো। একে একে সাবধানী ভঙ্গিতে ট্রলার হতে পাড়ে নেমে এলো সাতজন। নিঃশব্দ পরিবেশে তাদের পদচারণায় দাঁড়িয়ে গেল লোমকূপ। সাঙ্গু’র পাড়ে অপেক্ষারত সাতজন। তাদের দলনেতা হিসেবে উপস্থিত ‘ অ্যালবার্ট উইলিয়াম ‘ এর বিশ্বস্ত সাগরেদ বছর চল্লিশের ম্যাথিউস। ম্যাথিউস হাতঘড়িতে চোখ বুলিয়ে সময় দেখে নিলো। ঠিক পাঁচ মিনিটের অপেক্ষা শেষে সকলের শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছালো কাঙ্ক্ষিত ধ্বনি। বাঁ পাশে তাকালো তারা সাতজন।

আঁধার বিদীর্ণ করে ধেয়ে আসছে একটি ধূসর বর্ণের জিপ গ্ল্যাডিয়েটর উইলিস। সন্নিকটে এসে থামলো গ্ল্যাডিয়েটর উইলিস’টি। দ্বার উন্মুক্ত করে একে একে বেরিয়ে এলো ছয়জন। একজনের হাতে বড় আকৃতির একটি ডার্ক ব্রাউন কোকোয়া লেদার ব্রিফকেস। অতঃপর মুখোমুখি দুই পক্ষ। এসে পড়েছে সেই আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। অ্যালবার্ট এর পক্ষ হতে উপস্থিত ম্যাথিউস। আর রুদ্রনীলের পক্ষ হতে শামীম। ম্যাথিউস বললো,

” হয়া’র ইজ দ্য গুডস্? ”

শামীম হাতটা স্বল্প উঁচু করে কোকায়া লেদার দেখালো। অধরকোণ প্রসারিত হলো ম্যাথিউসের। শামীম বললো এবার,

” দেন স্টার্ট দ্য প্রসিডিউর? ”

” ইয়াহ্ শিওর। ”

শামীম ডান হাতে বাড়িয়ে দিলো ড্রা গ বহনকারী লেদার ব্রিফকেসটি। ম্যাথিউস এগিয়ে ধরলো অর্থ ভর্তি ব্যাগ। রাতের আঁধারে পঞ্চাশ লাখ টাকার ড্রা গ ডিল হচ্ছে। ম্যাথিউস ও শামীম যেই না ড্রা:গ ও অর্থ বিনিময় করতে উদ্যত হলো অমনি…

চলবে.

[ পাঠকবৃন্দ কি হলো হৃদির? কোনো আন্দাজ? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here