#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৩০ ( শেষাংশ )
[ কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য উন্মুক্ত ]
ভিড়িয়ে রাখা দ্বার উন্মোচন করে দ্রুতগামী উল্কার বেগে অন্দরমহলে প্রবেশ করলো ইরহাম। থমকালো সম্মুখের দৃশ্যপট দেখে! দু চোখে বিস্ময়ের আস্তরণ! সে মুহূর্তে ডান পাশে এসে হাজির হলো রুস্তম।
” বস! ”
ঘোর কেটে গেল। একটুও তাকালো না রুস্তমের পানে। বরং বড় বড় কদম ফেলে সম্মুখে অগ্রসর হলো ইরহাম। বিপরীতে থাকা মানুষগুলোও তখন বিস্ময়কর চোখে তাকিয়ে! ভাইয়া এখানে! কে জানালো তাকে? সামনাসামনি এসে দাঁড়িয়েছে ইরহাম। অশান্ত কণ্ঠে শুধালো,
” তোরা ঠিক আছিস তো? ”
র-ক্তাক্ত অবস্থা। বাঁ হাতের বাহুতে সদ্য প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণের নিশানা। কপালের ডান পাশ ফুলে রয়েছে। আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় র’ক্তিম আভা দৃশ্যমান। রাহিদের বাম পাশেই দাঁড়িয়ে বিচলিত সঙ্গিনী ইনায়া। পল্লবী, রায়না ও রাজেদা খানম আরেক পাশে দাঁড়িয়ে। রাহিদ অবাকতার রেশ কাটিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো,
” ভাইয়া তোমরা এখানে? কে খবর দিলো? ইনু? আমি বলেছিলাম এটা জাস্ট একটা মাইনর অ্যা:ক্সিডেন্ট তারপরও… ”
রাহিদ তার জীবনসঙ্গিনীর পানে অসন্তুষ্ট চাহনিতে তাকিয়ে। বারবার নিষেধ করেছিল। বলেছিল ছোটখাটো দু;র্ঘটনার কথা বলে ও বাড়ির লোকেদের অহেতুক উদ্বিগ্ন করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু মেয়েটা তা শুনলে তো? ঠিক বড় ভাইকে জানিয়ে দিলো! রাহিদ যখন একাকী বকবক করে চলেছে তখন নিরূদ্ধ ইরহাম চৌধুরীর কর্ণ গহ্বর। মস্তিষ্কে চলছে ন্যানো সেকেন্ড ব্যাপী ক্যালকুলেশন। প্লাস মাইনাস প্লাস মাইনাস। শত সহস্র হিসাবের আনাগোনা। অত্যধিক ক্ষুদ্র মুহুর্তের মধ্যেই হিসাব মিলে গেল। উচ্চরবে বিদীর্ণ হলো মস্তিষ্ক। একফোঁটা শব্দ ব্যয় ব্যতীত ক্ষি প্র গতিতে পিছু ঘুরে সদর দরজা বরাবর ছুটলো ইরহাম। চোখের পলকে বেরিয়ে গেল ফ্লাট হতে। দেখাদেখি বাধ্য অনুচরের ন্যায় পিছু ছুটলো রুস্তম। সকলে আশ্চর্যান্বিত চাহনিতে তাকিয়ে! এ কি থেকে কি হলো? হাওয়ার বেগে আকস্মিক উদয়! অতঃপর প্রস্থান! কিসের সংকেত এ উদ্ভ্রান্ত প্রস্থান ও বিচলতা!
_
বদ্ধ দরজায় একাধারে আঘাত। ওপাড়ে লুকানো দুই দুর্বল হৃদয়ের অধিকারিণী ক্ষণে ক্ষণে কম্পিত। ঘর্মাক্ত দেহের করুণ দুর্দশা। হৃদি ভীতগ্ৰস্থ স্বরে কয়েকবার মা’কে জিজ্ঞেস করে ফেলেছে কে এরা। কি তাদের পরিচয়? কিন্তু জবাব দিতে ব্যর্থ মালিহা নামক নারীটি। ওনার হাতে মোবাইল। অনবরত একমাত্র পুত্রকে ফোনে সংযোগ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কখনোবা স্বামীকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কাউকে ফোনে পেলেন না। নেটওয়ার্ক প্রবলেম ওনায় বিশ্রীভাবে পরাজিত করলো। চরম ব্যর্থতায় অশ্রুসিক্ত দু নয়ন। আকুল নয়নে গর্ভবতী পুত্রবধূর পানে তাকালেন মালিহা। দুর্বল মেয়েটি তখন ওনার ডান হাতটি আঁকড়ে। মায়া মায়া ভেজা চোখে তাকিয়ে। এতক্ষণে অনুধাবন করতে পেরেছে বিপদের মাত্রা। তাই তো ভয়ে নিশ্চুপ। আঁকড়ে ধরে ভরসাযোগ্য হাতটি। ওনার ছেলের জান এই পাগলী-চঞ্চলা-সুহৃদ মেয়েটি। চৌধুরী বংশের উত্তরাধিকারদের হবু মা। তার গায়ে কি করে বিন্দুতুল্য আঁচড় লাগতে দিতে পারেন উনি? উনি যে মা। মাতৃরূপী এক সিংহী। বিপদের মুখে গর্জে উঠতে পারে যে সত্তা। হৃদির ভীত মুখপানে তাকিয়ে জোরপূর্বক হালকা হাসলেন মালিহা। ঘামে ভেজা কপালে চুমু এঁকে দিলেন। মমতাময়ী হাত বুলিয়ে দিলেন বাম গালে। মিহি স্বরে বললেন,
” আমার হৃদি মা! ভয় পাস না কেমন? আল্লাহ্’কে ডাকতে থাক মা। উনি আছেন। নিশ্চয়ই বান্দার বিপদে একমাত্র রক্ষাকারী উনি। ”
হৃদি ভেজা কণ্ঠে কিছু বলার পূর্বেই সরে গেলেন মালিহা। দৃষ্টি স্থির হলো দরজায়। অবিরাম আঘাতে আঘাতে কম্পমান দরজাটি। যেকোনো মুহূর্তে দরজার লক ভাঙ্গবে। হানা দেবে শত্রুর দল। তাদের মোকাবেলায় প্রস্তুতি যে বড় দরকার। অশ্রুসজল দু চোখ এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে লাগলো। প্রতিরক্ষার তরে প্রয়োজন অতীব ভারী কিংবা শক্তিশালী কিছু। মায়ের চাহনি ও দরজায় আঘাতের প্রবলতা। হৃদি নিজেও আত্মরক্ষার জন্য কিছু খুঁজতে লাগলো। খোঁজাখুঁজিতে লিপ্ত দু নারী। অকস্মাৎ বে-ইমানি করলো পরিস্থিতি। লক ভেঙ্গে ছিটকে পড়লো মেঝেতে। কর্ণ গহ্বরে ঝড়ো আঘাত হানলো সে শব্দ। হুড়মুড় করে ভেতরে প্রবেশ করলো সাত সাতটে দা-নব। তাদের র-ক্তচক্ষু ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক। কোথায় লুকিয়ে নরমধরম দুর্বল শিকার! অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হলো না। অকস্মাৎ দরজা নিকটস্থ দণ্ডায়মান এক দু:র্বৃত্তের মাথা বরাবর জোরালো আঘাত করলেন মালিহা। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে হাত চেপে যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠলো লোকটি। ত্বরিত পুত্রবধূর হাতটি আঁকড়ে একপ্রকার ছুটে ঘরের উন্মুক্ত দরজা পেরিয়ে বেরিয়ে গেলেন মালিহা। শত্রুরা তা টের পেতেই চরম ক্ষে-পে উঠলো। পিছু নিলো তৎক্ষণাৎ। ছয় মাসের গর্ভবতী হৃদির জন্য ছোটাছুটি করা বড় কষ্টদায়ক ছিল! উদরে চেপে বসেছে বাম হাত। যাতনায় ক্লি’ষ্ট গোটা দেহ। বিকৃত মুখশ্রী। তবুও থেমে নেই ছোটাছুটি। মায়ের সঙ্গ দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে ছুটছে মেয়েটি। অধর নড়ে রবের স্মরণে।
বদ্ধ সদর দরজা বরাবর ছুটে চলেছে দু’টো প্রাণ। বারবার পিছু ঘুরে দেখে নিচ্ছে শত্রুর অবস্থান। ক্ষি প্র গতিতে ছুটে আসছে তিনজন। একজনের হাতে বন্দী শোপিস। আকস্মিক নিশানা তাক করে ছুঁড়ে দিলো শোপিসটি। শিউরে উঠলো অন্তর। দ্রুততার সহিত মায়ের বাঁ বাহু ধাক্কা দিয়ে তাকে ওপাশে সরিয়ে দিলো হৃদি। আকস্মিক ধাক্কা খেয়ে হুড়মুড়িয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন মালিহা। হাওয়ায় দু হাত ছুঁড়ে কোনোরূপ ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হলেন। আর মেঝেতে সশব্দে আছড়ে পড়লো ভারী শোপিসটি। আরেকটু হলেই সে শোপিস আঘাত হানতো মালিহার কোমল দেহে। মাঝবয়সী নারীটি কি পারতেন তা সইতে? পারতেন না। মালিহা একনজর শত্রুর অবস্থান অবলোকন করে চঞ্চল পায়ে হৃদির পানে ছুটে এলেন। হাতটি আঁকড়ে ধরে ছুটতে লাগলেন দরজার পানে। যে করেই হোক বদ্ধ দ্বার উন্মোচন করে পালাতে হবে। দৌড়ানোর এক ফাঁকে মালিহা পিছু ঘুরে হাতে থাকা কিছুক্ষণ পূর্বে আয়ত্ত্ব করা ফ্লাওয়ার ভাসটি সর্ব নিকটে অবস্থিত শত্রুর উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দিলেন। চতুরতার সহিত নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হলো শত্রুটি। দু হাতে লুফে নিলো ফ্লাওয়ার ভাস। এবার কি হবে? মালিহা ও হৃদির পদযুগলের গতিবেগ আরো বৃদ্ধি পেল। দরজা হতে মাত্র কয়েক ইঞ্চির দূরত্ব। ঠিক সে মুহূর্তে ব্যর্থতা। পেছন হতে হৃদির উন্মুক্ত চুল মুঠোবন্দী করে টেনে ধরলো এক দু:র্বৃত্ত।
” আঃ… ”
যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠলো হৃদি। বিষাদময় মুখশ্রী। লহমায় মায়ের মমতার স্থল হতে তার ঠাঁই হলো শত্রুর নৈকট্যে। ব্যাকুল চোখে তাকিয়ে মালিহা। ওনার চোখের সামনে ধরাশায়ী গর্ভবতী পুত্রবধূ। মেয়েটার চুলের মুঠি শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরে একজন। যাতনায় চোখমুখ লাল। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে মেয়েটি। সীমাহীন যন্ত্রণা উদরে। কিক মে রে চলেছে অনাগত দু সন্তান। একত্রে তাদের উদরে আঘাত। হবু মা হৃদি এই দ্বৈত যন্ত্রণা সইতে ব্যর্থ। শরীর ভারসাম্য ছেড়ে দিচ্ছে যেন। শ্বাস প্রশ্বাসে প্রতিবন্ধকতা। দমবন্ধ হয়ে আসছে। গোটা মুখ জুড়ে কষ্টের ছাপ। চোখের সামনে এই অনাচার আর সহ্য করা গেল না। ছুটে এলো মাতৃরূপী সিংহী। শত্রুর হাতে অনবরত চ ড় মে;রে চলেছেন মালিহা। মেয়েকে ছেড়ে দিতে বলছেন। ওদের কর্মে বাঁধা প্রদান করছেন। কিন্তু শত্রুর দল তা শ্রবণ করলে তো! এক বলবান ধাক্কায় মালিহাকে দূরে সরিয়ে দিলো সে জন। আকস্মিক ধাক্কায় ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হলেন মালিহা। আছড়ে পড়লেন মেঝেতে। দু কনুই আঘাতপ্রাপ্ত হলো মেঝের সনে। যন্ত্রণায় মুখনিঃসৃত হলো আর্তনাদ। দু চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রুজল। হৃদি এই দুঃখপূর্ণ দৃশ্য অবলোকন করে মৃদু স্বরে চেঁচিয়ে উঠলো,
” মা-হ্! ”
_
রাতের রাজধানী ঢাকা। স্বাভাবিক ভাবেই রাস্তাঘাটে যানজটের আধিক্য। একটুখানি নড়তে নারাজ যানবাহন। একজায়গায় অনড় দাঁড়িয়ে। চারিধারে হচ্ছে ধূলোমাখা বাতাসের দ্রুত আবর্তন। এ যানজটপূর্ণ সড়ক অতিক্রম করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা মানে, নিজের পায়ে নিজে কু;ড়াল দিয়ে আঘাত করা। লম্বা যানজট হতে স্বল্প দূরত্বে সড়কের এক পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে গাড়িটি। চালকের আসনে বসে এক দীর্ঘকায় পুরুষ। তীক্ষ্ণ চাহনিতে যান্ত্রিক ডিভাইসে তাকিয়ে মানুষটি। মোবাইলে দেখে নিচ্ছে গুগল ম্যাপ। কম্পিত চিত্ত আর গাড়ির স্টিয়ারিং আঁকড়ে ধরা হাত। গুগল ম্যাপের খুঁটিনাটি তথ্যাদি আয়ত্ত্ব করে নিলো বুদ্ধিদীপ্ত মানুষটি। সুদক্ষ হাতে ইউ টার্ন নিচ্ছে গাড়ি। বাঁ হাতে মোবাইল। অবিরাম কল করে চলেছে বাড়িতে। মা ও স্ত্রীকে। কিন্তু বরাবরের মতই সংযোগ স্থাপন করতে ব্যর্থ। শান্ত-স্থির মুখে আজ অত্যধিক কঠোরতা। সর্বোচ্চ গতিতে শর্টকাট রূট ধরে এগিয়ে চলেছে গাড়িটি। অন্তরীক্ষে আজ ঘন মেঘের অস্তিত্ব। ক্ষণে ক্ষণে চারিধার আলোকিত হচ্ছে ব’জ্রপাতের আগুন ঝলকানিতে। শোঁ শোঁ বাতাসের অবাধ্যতা রাজত্ব করে চলেছে এলাকা জুড়ে। গগনবিদারী গর্জন করে উঠছে মেঘ। শ্রবণপথ ফেটে যাবার উপক্রম। তন্মধ্যে নির্ভীক চিত্তে ক্ষি-প্রতার সহিত ধেয়ে যাচ্ছে শুভ্র রঙা গাড়িটি। বাবাকে ইতিমধ্যে ইনফর্ম করা হয়েছে। উনিও যাচ্ছেন বাড়ি। দুর্ভাগ্যক্রমে ‘ আনন্দাঙ্গন ‘ এ পাহারারত দেহরক্ষীরা সকলে আউট অফ রিচ। কোনোমতেই যোগাযোগ করা সম্ভব হলো না। ইয়া রব! এ কোন সর্বনা’শা তুফানের আগমনী বার্তা! রক্ষা করো তুমি।
_
দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ভীতসন্ত্রস্ত দেহটি। দু চোখে প্রকট আতঙ্ক। একটুখানি ছাড় দেয়ার তীব্র আকুতি। ঘর্মাক্ত মুখে লেপ্টে মুক্ত-স্বাধীন চুল। কিয়ৎক্ষণ পূর্বে দেখানো অভাবনীয় দুঃসাহসিকতা তাকে বিন্দুতুল্য ছাড় দিলো না। মায়াদয়া দেখালো না সে দু;র্বৃত্ত। মাথাটা পুনরায় জোরালো রূপে ঠুকে দিলো দেয়ালে। ত্বরিত র-ক্তপাত ক্ষতস্থান হতে। ভনভন করে উঠলো মস্তিষ্ক। লোপ পাচ্ছে বোধবুদ্ধি। আঁধার ঘনিয়ে আসছে দু চোখের তারায়। তবুও স্বাভাবিক থাকার সে কি প্রবল চেষ্টা! আস্তে ধীরে দেয়াল ঘেঁষে ঠাস করে মেঝেতে বসে পড়লো অন্তঃসত্ত্বা হৃদি। ব্যথায় জর্জরিত গর্ভধারণকৃত দু সন্তান। আর্তনাদ করে রব’কে ডেকে উঠলো হৃদি। কপালের পাশে, হাতে পায়ে ছোট-বড় আঘাতের ছাপ। এতক্ষণ সর্বোচ্চ লড়াই করার চেষ্টা করে গিয়েছে মা ও মেয়ে। আহত সিংহীর ন্যায় ফুঁসে উঠেছে মালিহা। আঘাতে আঘাতে চুরমার করে দিয়েছে ক’জনকে। তাই তো এই আ;ক্রমণাত্মক কঠোরতা। নির্মম-বর্বরতা। র-ক্তে রঞ্জিত মালিহার মুখাবয়ব এবং দু হাত। টলে উঠছে দেহ। শক্তপোক্ত চারটে হাত আঁকড়ে ধরে দুই পাশ হতে তার দু হাত। টালমাটাল নারী শরীর ভারসাম্য হারিয়ে লুটিয়ে পড়তে চাইছে। স্বল্প ঝুঁকে নিম্নগামী। ঝিঁঝিঁ পোকার আ:ক্রমণ যেন মস্তিষ্কে। ‘ আনন্দাঙ্গন ‘ এ আজ সর্বনা”শের করাল গ্রা স। সাত নয় উপস্থিত এখন আটটি দ স্যু। কিয়ৎক্ষণ পূর্বে আগমন হয়েছে সর্বশেষ জনের। বাকিদের ন্যায় সে-ও অজানা অচেনা একজন। কে এরা? কারা পাঠিয়েছে তাদের? নেই জানা।
আহত হৃদি শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সে নভোনীল চক্ষুদ্বয় যে তাকে হারতে শেখায়নি। শিখিয়েছে শত্রুর বিপক্ষে লড়তে। মনোবল বৃদ্ধি করতে। ভেঙ্গে চুরমার নয় নতুন উদ্যমে বাঁচতে। আত্মপ্রত্যয়ী হৃদি সমস্ত যন্ত্রণাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আঁকড়ে ধরার চেষ্টায় দেয়াল। নখ যেন ডেবে যেতে চাইছে শক্তপোক্ত কঠিন দেয়ালের আস্তরণে। দু পা ভেঙ্গে আসছে। অন্তঃসত্ত্বা উদর কয়েক মণ ওজনের ভারী ঠেকছে। অভ্যন্তরে বি;দ্রোহ করছে দু সন্তান। তরল র’ক্তিম বিন্দু গড়িয়ে পড়ছে কপাল বেয়ে চিবুক। সেথা হতে গলদেশ। দু চোখ বুঁজে আসতে লড়াই করছে। তবুও নিজের বিরুদ্ধে নিজেই রুখে দাঁড়িয়েছে হৃদি। বেশ কিছুটা সময় ব্যয় করে আস্তে ধীরে উঠে দাঁড়াতে সক্ষম হলো। একটু পরপর মুখনিঃসৃত হচ্ছে আর্তনাদ। চিড়চিড় ব্যথা সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে। দু চোখ ছাপিয়ে নামছে নোনাজল। ঘাম-রক্ত-অশ্রুবিন্দুর সংমিশ্রণে ভেজা মুখশ্রী। শত্রুর দল দু চোখ জুড়িয়ে উপভোগ করে চলেছে এই দৈন্যদশা। শিকারের ছটফটানি। বাঁচার তীব্রতর আকুতিমিনতি। লহমায় তাদের অভিব্যক্তি ভ:য়াবহভাবে পরিবর্তিত হলো। কিয়ৎক্ষণ পূর্বে আগত সর্বশেষ দু:র্বৃত্ত দাঁড়িয়ে হৃদি বরাবর। স্বল্প দূরত্ব তাদের মাঝে। ক্রো-ধান্বিত চোখ স্থির পরাজিত হৃদির পানে। ডান হাতটি ডান পাশে বাড়িয়ে দিলো সে নরাধম। পাশ হতে একজন হাতের তেলোয় স্থাপন করলো একটি ট্রি-এজ ড্যাগার ( tri edge dagger). ট্রি-এজ ড্যাগার হল একটি ভ’য়ানক ছু-রি যার তিনটি কাঁটাযুক্ত কাটিং প্রান্তগুলো একটি সর্পিল-সদৃশ নকশায় বাঁকা। সে অজ্ঞাত শত্রুর হাতে প্রায় সাত ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ছু-রি। শিকারী জ্বলজ্বলে চক্ষু স্থির হৃদির স্ফীত উদর বরাবর। আর মাত্র ক্ষণিকের অপেক্ষা। পুরোদস্তুর চূর্ণ বিচূর্ণ হবে চৌধুরী।
আশপাশে সব স্থির। নিশ্চুপ। মালিহার করুণ-ভীতিকর দৃষ্টি শত্রুর হাতে আবদ্ধ ছু-রি এবং পুত্রবধূর পানে। একটু একটু করে ধেয়ে আসছে ছু-রিটি। আর মাত্র কয়েক সেকেন্ডব্যাপী দূরত্ব। লহমায় অন্ত হবে সব। প্রাণ হারাবে…! নাহ্! কোমল মাতৃহৃদয় এই নি-ষ্ঠুর পরিণতি মানতে নারাজ। ওনার দু হাত আঁকড়ে ধরা শত্রুরা এখন বিনোদন লাভে মগ্ন। তাই তো দুর্বল গ্ৰিপ। সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করলেন মালিহা। এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিলেন নিজ হাত। দুর্বল দেহে যথাসাধ্য সর্বোচ্চ গতিতে ছুটলেন পুত্রবধূর পানে। হৃদি তখন ভীতসন্ত্রস্ত নয়নে তাকিয়ে শত্রুর পানে। যেন অদৃশ্য এক ক্ষমতাবলে ব-শীভূত। একফোঁটা নড়তে ব্যর্থ। সে দেখছে। চোখের সামনে মৃ-ত্যু দেখছে। অন্তরাত্মা চিৎকার করে চলেছে। আকুতিমিনতি বাঁচার। আন্তঃযন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছে দেহ। চোখের তারায় দৃশ্যমান আপনজনেরা। তার একান্ত পুরুষ। স্লাইডের ন্যায় ঘূর্ণায়মান দৃশ্যপট। আপনজনের মুখশ্রী। আস্তে ধীরে একসময় বুঁজে গেল অক্ষিপুট। চূড়ান্তভাবে পরাস্ত হয়ে বরণ করে নিলো ম:রণকে।
‘ লা ইলাহা.. ‘
অস্ফুট স্বরে মাত্র এতটুকু পাঠ। হঠাৎই মস্তিষ্কে এক আগ্রা”সী ধাক্কা। ছলকে উঠলো অন্তঃপুর। দেহ ঘেঁষে এক কোমল সত্তার অস্তিত্ব। তৎক্ষণাৎ চক্ষু মেলে তাকালো হৃদি। বিস্মিত দু চোখ! গগনবিদারী চিৎকার করে উঠলো হৃদি,
” মা!! ”
পুত্রবধূকে সময়মতো সরাতে বিফল হলেন মালিহা। অজানা ভয়ে ব-শীভূত হয়ে কখন যে নিজেই ছু-রির আঘাতে বিহ্বল হলেন টেরও পেলেন না। ট্রি-এজ ড্যাগারের ঝাঁকড়া কাটা প্রান্তগুলি হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করলো ওনার পেটে। নিষ্ঠুর-নির্মম পন্থায় মোচড়ে চলেছে পেট গহ্বরে। শত্রুরূপী লোকটির একমাত্র নিশানা ছিল হৃদি ও তার অনাগত সন্তানেরা। তাই তো হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে ব:র্বর আঘাত করতে উদ্যত হলেন। তবে এ কি হয়ে গেল! কার পেটে বি দ্ধ হলো ছু-রি! বিস্ময়ে হতবুদ্ধি লোকটি তখনও ছু-রি মোচড়ে চলেছে পেটে। সীমাহীন যন্ত্রণা। আর্তনাদ। তবুও পুত্রবধূকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ প্রয়াস। ধাক্কা দিয়ে পেছন হতে হৃদিকে সরিয়ে দিলেন মালিহা। যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠছেন। নিজেকে বাঁচাতে আঁচড় কেটে চলেছেন শত্রুর মুখ ও গলদেশে। তাতেই হলো অবিশ্বাস্য কাণ্ড! নি”কৃষ্টতম বিপদের মূহুর্তে শত্রু রূপে এ কার উন্মোচন! মুখোশ অর্ধ অনাবৃত হলো নখের ধারালো আঁচড়ে। দৃশ্যমান মুখ।
” ভা ই য়া! ”
অতীব ক্ষীণ স্বর জোরদার ধাক্কা দিলো শ্রবণপথে। হতবিহ্বল জহির! নিজ হাতে আপন ছোট বোনকে ছু-রিকাঘাত করে বসলো সে! করে বসলো সর্বঘৃণ্য কুকর্ম! কাঁপলো গগন। কাঁদলো মেঘ। ঝমঝমিয়ে বর্ষণ ধরনীর বুকে। মৃ-ত্যুর নৈকট্যে এ কার মুখ দেখে নিলেন মালিহা! এই বেঈমান-ক্রুর মুখদর্শন বিনা অন্তত শান্তির মৃ-ত্যু হতো। এখন যে ম-রেও নেই শান্তি। শেষমেষ পিতৃতুল্য বড় ভাইয়ের হাতেই লেখা ছিল এই বিয়োগান্তক পরিণতি ! জহিরের অদ্ভুতুড়ে অবস্থা দেখে শ’ত্রুদের দলনেতা এগিয়ে এলো। কেড়ে নিলো র-ক্তমাখা ট্রি-এজ ড্যাগার। ধাক্কা দিয়ে একপাশে সরিয়ে দিলো জহিরকে। নিজেই একাধারে ছু-রিকাঘাত করতে লাগলো মালিহার পেটে। এই *** কম জ্বালাতন করেনি তাদের। এতক্ষণ বহুত জ্বালিয়েছে। এবার শোধ নেয়ার সময়। একবার দুইবার তিনবার। পরপর আটবার ছু;রি নামক সাত ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের মা র ণা স্ত্র আ-সুরিক পন্থায় গেঁথে গেল পেটের চামড়া ভেদ করে। গলগলিয়ে র-ক্তক্ষরণ হচ্ছে ক্ষত হতে। কণ্ঠনালী ছিন্নভিন্ন করে বেরিয়ে আসছে র-ক্তলাল তরল। আস্তে ধীরে অনুত্তেজক অবস্থা। স্বল্প সময়ের মধ্যেই নৃ:শংস ভাবে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো নারী দেহটি। র-ক্তলাল মেঝেতে সে এক র-ক্তাক্ত দেহ লুটিয়ে। কয়েক হাত দূরে মেঝেতে পড়ে হৃদি। যন্ত্রণায় নীল মুখাবয়ব। নিম্না-ঙ্গ গড়িয়ে তরল বইছে। ভাঙ্গা স্বরে চিৎকার করে চলেছে। অনবরত মুষ্টিবদ্ধ হাত আঘাত করে চলেছে মেঝেতে।
” মা! ও মা! ”
সে কি গগনবিদারী আর্তনাদ! চরম ব্যর্থতায় ক্লিষ্ট মেয়েটি মেঝেতে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করছে হাত। ছুটে যেতে চাইছে মায়ের পানে। মেঝেতে সরীসৃপের ন্যায় এঁকেবেঁকে যাচ্ছে হাত। আঁকড়ে ধরতে চাইছে মমতাময়ী মায়ের ভালোবাসাময় হাত। চোখের সামনে গলাকা-টা মুরগির ন্যায় ছটফট করে চলেছে মা। র-ক্তে ভেসে যাচ্ছে শুভ্র রঙা মেঝে। অতীব ক্ষীণ নড়ছে অধর। কালিমা পাঠ করলো কি? মাত্র কয়েক মিনিটের অপেক্ষা। হঠাৎই নিশ্চুপ সারা ঘর। বন্ধ সমস্ত ছটফটানি। যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট খোলা চক্ষুদ্বয় নিবদ্ধ পুত্রবধূর পানে।
” মা…! ”
সর্বোচ্চ কণ্ঠে এক চিৎকার। আর মুখ বরাবর লা থ। নিস্তেজ হয়ে পড়লো হৃদি। ততক্ষণে হুঁশ ফিরলো জহির নামক অন্তঃশত্রুর। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বোনের নিথর দেহে। ক্রু-দ্ধ এক দু;র্বৃত্ত দুর্দান্ত শিকারের আশায় ছুটে আসছে হৃদির নিষ্প্রভ দেহপানে। তখনই আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে হলো ব”জ্রপাত। শ্রবণপথে গাড়ির হর্নের তীব্র জ-খম। ত্বরিত সতর্ক হয়ে উঠলো সব।
_
ঘন অমানিশায় ছেয়ে বসুন্ধরা। ভারী বর্ষণে রাজধানীজুড়ে সাধারণ জীবনযাপনে ব্যাঘাত। আনন্দাঙ্গন চত্বরে আলোকগতিতে থামলো শুভ্র গাড়িটি। কোনোরূপ বিলম্ব ব্যতীত ভারী বর্ষণে সিক্ত হয়ে বাড়ির অন্দরে ছুটলো ইরহাম। উন্মুক্ত রয়ে গেল কার ডোর। একদিকে সহায়তার হাতছানি সমেত প্রবেশ করছে ইরহাম। অন্যদিকে বাড়ির পেছন দিক হতে পলায়ন করছে দু;র্বৃত্তরা। একজন আঁকড়ে ধরে বোধশূন্য জহিরের কালো পোশাকের কলার। টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে এই আপদটিকে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই চতুরতার সহিত পলায়ন করলো শত্রুর দল। ততক্ষণে অঘটন যা ঘটার ঘটে গিয়েছে। এ রাত চৌধুরীদের ইতিহাসে এক অনাকাঙ্ক্ষিত কল-ঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিরতরে গেঁথে রইবে। সে কি নির্মম-বর্বরতা!
চলবে.
[ জীবন মাঝেমধ্যে বড় অকল্পনীয়। ভ-য়ঙ্কর। মালিহার করুণ পরিণতি আপনাদের কতটুকু ছুঁতে পেরেছে জানিনা। তবে আমায় অশ্রুসিক্ত করেছে। আমার রচিত সকল গল্প উপন্যাসের মধ্যে মালিহা ছিল শ্রেষ্ঠ শাশুড়ি চরিত্র। তার এই হৃদয়বিদারক পরিণতি অত্যন্ত দুঃখজনক! নি”র্মম। পর্বটি লেখার সময়কাল ছিল বড় কষ্টকর। সইতে পারছিলাম না। তবে এ যে হওয়ারই ছিল। দেখা যাক এবার কাহিনী কোনদিকে মোড় নেয়। এতবড় আঘাতের বদলা কি করে নেবে ইরহাম চৌধুরী? আগামীতে চৌধুরীর কোন রূপটি দেখতে চান? বেপরোয়া-অশান্ত ইরহাম নাকি সাইলেন্ট কি-লার ইরহাম? মূল্যবান মতামত কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ! আসসালামু আলাইকুম। ]
◾ গ্রুপে আপনাদের ছোট্ট করে হলেও রিভিউয়ের অপেক্ষায় থাকবো 🖤
https://facebook.com/groups/499389245208190/