মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি #দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_৩১

0
621

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৩১

অন্দরমহলে প্রবেশ করে থমকালো পা। বিচলিত চিত্ত। ধুকপুক ধুকপুক ধ্বনি ঝড় তুলেছে বক্ষপিঞ্জরে। অসীম ভয়ে শুকনো আঁখি যুগল দেখছে অভ্যন্তরীণ হালচাল। লিভিংরুমে কিয়ৎক্ষণ পূর্বে বয়ে গেছে ভ’য়াবহ তুফান। তার চিহ্ন যত্রতত্র স্পষ্টরূপে দৃশ্যমান। সোফাসেটের অবস্থান জায়গা হতে বেশ নড়ে গেছে। কয়েকটি দামী শোপিস, ফ্লাওয়ার ভাস মাটির বুকে যেখানে সেখানে এলিয়ে। ছোপ ছোপ লাল তরল মিশে সাদা মেঝেতে। অনেকগুলো পদচিহ্ন র-ক্তের ছাপের ওপর। অসংখ্যবার ধাওয়াধাওয়ি হয়েছিল যে আন্দাজ করা মুশকিল নয়। র-ক্তলাল ঘরের হাল। একদম হৃদয়বিদীর্ণ করা সে-ই দৃশ্যপট! এই লাল লাল ছাপগুলো মানুষটির অভ্যন্তরীণ ভয় শতগুণ বৃদ্ধি করলো। কোনো ধারালো দন্ত যেন কা’মড়ে ধরলো হৃৎপিণ্ড। পদযুগল ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। নে”শাগ্রস্তের ন্যায় এলোমেলো হাল। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা তখন পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। ইরহামের অর্থহীন চাহনি মন্থর গতিতে একবুক সাহস সঞ্চয় করে বামে তাকালো। সেথায় অনুপস্থিত আপন ও অবিচ্ছেদ্য দুই অংশ। এদিক ওদিক তাকিয়ে চলেছে ইরহাম। খুঁজে বেড়াচ্ছে তাদের। মা ও স্ত্রীকে। জড়ানো কণ্ঠস্বর হতে নিঃসৃত হলো মৃদু ডাক,

” মা! হৃদি! ”

শুনশান নীরব ঘরে সে ধ্বনি বারংবার প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো। নিজের শ্রবণপথেই যেন দমকা হাওয়ার ন্যায় আঘাত খেল ফিসফিস ধ্বনি। সদা প্রাণবন্ত বাড়িটি হঠাৎই ভূতুড়ে শুনশান কেন? কোথায় লুকিয়ে আপনজন? কেন তার ডাকে সাড়া দিচ্ছে না? কেন রোজকার মতো দরজা উন্মুক্ত করে দিলো না মা? কেন আজ স্ফীত উদরে হাত স্থাপন করে ঘরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে নেই অর্ধাঙ্গী? কোথায় হারিয়ে সকলে? যত সময় গড়িয়ে যাচ্ছিল ততই বিচলিত হয়ে পড়ছিল মানুষটি। দু চোখে তীব্র আকুলতা। তৃষ্ণার্তের ন্যায় এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিল। স্বরূপ ত্যাগ করে সহসা উচ্চ স্বরে ডেকে উঠলো ইরহাম,

” মা! ”

দেয়ালে দেয়ালে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সে আকুলিবিকুল ডাক,

” মা! মা! ”

সাড়া দিলো না মমতাময়ী মা। হাজির হলো না তার মমতার ভাণ্ডার সমেত। এসেই সেই হৃদয়কাড়া মুচকি হাসিটি উপহার দিলো না। কোথায় চুপটি করে লুকিয়ে মা! আর স্নায়ু যু-দ্ধে লড়াই করা সম্ভব হচ্ছিল না। শরীরের সর্বত্র এক তেজদীপ্ত মনোবল ছড়িয়ে পড়লো। গতিশীল হলো দুই পা। বিলম্ব না করে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বরাবর ছুটলো ইরহাম। লিভিংরুমের মাঝবরাবর পৌঁছাতেই অকস্মাৎ দু পায়ের গতিবেগ মন্থর হলো। এক দ্রুত গতিসম্পন্ন গাড়ি হঠাৎ ব্রেক কষে দাঁড়ালো যেন। মস্তিষ্কে তখন প্রবল তুলকালাম। ডান পার্শ্বে আবছা আবছা কি দেখলো সে! নজরবন্দী হলো কোন অনাহুত-অপ্রত্যাশিত দৃশ্যপট! তার চক্ষুদ্বয় যে ওই দৃশ্যাবলী দেখতে নিরুৎসুক। মস্তিষ্ক দুর্বল ওই দৃশ্য সহ্য করতে! সে পারবে না ওই ব’র্বর দৃশ্যটি দেখতে। তার হৃদয়ে প্রাণ সঞ্চার রয়েছে। পাথরের ন্যায় কঠিন নয় হৃদয়। কি করে সে তাকাবে ওইদিকে? অন্তর কি সইতে পারবে আগত দৃশ্যটি? পারবে কি করে? কিছু নি-ষ্ঠুর সত্য যে লুকিয়ে সেথায়। তবুও মানব মন তো। আস্তে ধীরে ডান পাশে ঘুরে যাচ্ছে সুঠামদেহী মানুষটি। স্মরণ করে চলেছে সারা জাহানের মালিক’কে। মিথ্যে হোক। অসত্য হোক ওই দৃশ্য। ভুল হোক এই বিপদের মুহুর্ত। পরাজিত হোক অন্যায়। কিন্তু আফশোস! নিয়তির নির্মম-নিষ্ঠুর পরিহাস। ডানে ঘুরে দাঁড়াতেই টলে উঠলো গোটা দেহটি। ছলকে উঠলো র-ক্ত কণিকা। বোধবুদ্ধিহীন মস্তিস্ক। বজ্রপাত হলো অন্তরীক্ষে। কেঁপে উঠলো দুনিয়া। শোঁ শোঁ বাতাস তীব্রতর রূপে প্রবেশ করছে অন্দরে। মানুষটির দু চোখে নেমেছে ঘন আঁধার। মা! তার মা লুটিয়ে মেঝেতে। চারিদিকে লাল র-ক্তের ঘেরাটোপ। র ক্ত আর র ক্ত! মায়ের পরিহিত লাইট পিঙ্ক শাড়িটি বেরঙ। নি-ষ্ঠুর লাল রঙে রঞ্জিত। উদরে সৃষ্ট এক খোলা গহ্বর। পরপর নয়বার এলোপাথাড়িভাবে ছু;রির ক্রু-দ্ধ আঘাত। কাতরেছে। গলাকা”টা মুরগির মতো ছটফট করেছে। নিদারুণ শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠেছে। তার দুচোখে ছিল আকুলতা। বাঁচার আকাঙ্ক্ষা। বারবার নিজেকে শেষরক্ষা করতে চেয়েছে। বাঁচাতে চেয়েছে তার হৃদি মা’কে। শত্রুকে পরাস্ত করতে চেয়েছে। এক রাজনীতিবিদ, সাংসদের তেজস্বী জননী সে। এত সহজে হার মানতে চায়নি। শেষ নিশ্বাস অবধি চলমান ছিল লড়াই। কিন্তু ভাগের নির্মম পরিহাস! শেষরক্ষা হলো না। হঠাৎই এক প্রবল কাঁপুনি। আস্তে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল নিশ্বাস। মালাকুল মউত এলো। হলো জান কবজ। বাস্তবায়িত হলো পবিত্র কুরআন মজিদের সে-ই আয়াত,

‘ হে নবী ওদের বলুন, যে মৃ-ত্যু থেকে তোমরা পালাতে চাচ্ছ, তোমাদেরকে সে মৃ-ত্যুর মুখোমুখি হতেই হবে। শেষ পর্যন্ত তোমাদেরকে হাজির করা হবে দৃশ্য ও অদৃশ্যের প:রিজ্ঞাতা আল্লাহর কাছে। জীবদ্দশায় যা করেছ, তা তোমরা তখন পুরোপুরি জানতে ও উপলব্ধি করতে পারবে।’ (সূরা জুমআ, আয়াত ৮)

ইরহাম কতটা সময় রূদ্ধশ্বাসে স্তব্ধ হয়ে ছিল জানা নেই। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে মায়ের খোলা চোখে। মা অমন চোখ মেলে তাকিয়ে কেন! সেই কখন থেকে একভাবে তাকিয়ে। কষ্ট হবে তো। চোখের পলক ফেলছে না কেন? মা! ও মা। ইরহাম কখন যে শ্লথ পায়ে মায়ের নৈকট্যে পৌঁছালো জানলো না নিজেও। ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লো দীর্ঘকায় মানুষটি। হাঁটু ঠেকলো র-ক্তলাল মেঝেতে। লাল র-ক্তে রঙিন হলো তার সাদা পাঞ্জাবি, পাজামার একাংশ। সদা শক্তপোক্ত, কঠোর বলে পরিচিত হাত দুটো অসম্ভব ভাবে কাঁপছে। পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তির ন্যায় অসাড়। নিষ্পলক তাকিয়ে মায়ের খোলা চোখে। মায়ের চোখ দু’টো না অসম্ভব সুন্দর! সাহিত্যের ভাষায় যাকে বলে ‘ হরিণীর মতো চোখ ‘। ছোটবেলায় বালক ইরু মা’কে আস্তে করে ফিসফিসিয়ে কানে কানে বললো,

‘ তোমার চোখটা না সুন্দর! আমাকে দিয়ে দেবে? আমি তোমাকে ক্যান্ডি দেবো। ‘

মা তখন নিঃশব্দে হাসতো। মায়ের হাসিটা নজরকাড়া! মা হাসলে সাথে হাসতো মায়ের দু চোখ। অপূর্ব সৌন্দর্য লুকিয়ে সে হাসিতে! আজ মায়ের সে-ই সৌন্দর্যমণ্ডিত হাসি কোথায় হারিয়ে! কেন শূন্য মায়ের চাহনি! কেন মায়ের মুখজুড়ে নেই মমতার প্রলেপ! কেন নিথর রূপে পড়ে মা!

” আসসালামু আলাইকুম মা। আমি এসে পড়েছি। তোমার ইরু। ”

আস্তে আস্তে ডেকে চলেছে ইরহাম। শূন্য দৃষ্টি স্থির মায়ের মুখপানে। গায়ে হাত দিয়ে ডাকতেও কুণ্ঠাবোধ। পাছে মায়ের ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটে। মা ঘুমোচ্ছে। আস্তে আস্তে ডাকলে ঠিক উঠে যাবে। ভয় পাইয়ে তাড়াহুড়ো করে ঘুম ভাঙ্গতে হবে না। ইরহাম শ্লথ গতিতে আরেকটু ঝুঁকে গেল মায়ের দিকে। সে-ই শৈশবের মতো আহ্লাদে কণ্ঠে মিহি স্বরে বলতে লাগলো,

” মা। খিদে পেয়েছে। ওঠো না। খাবো। ”

খিদে পেয়েছে তার। শৈশবে খেলাধূলা করে কিংবা বিদ্যালয় থেকে ফিরে মা’কে ঠিক এভাবেই স্বভাবসুলভ শান্ত স্বরে বলতো। মা কথাটি শুনতেই কেমন অস্থির পড়তো‌। তার সোনা মানিক ক্ষুধার্ত! ওকে খেতে দিতে হবে। দ্রুত হাতে খাবার রেডি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন উনি। সেসব সোনালী অতীতের দৃশ্যপট। তবে বদলে যায়নি মা। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরো যত্নশীল হয়ে পড়েছিল। ছেলেটা যে আজকাল বড় গম্ভীর হয়ে গেছে। মুখ ফুটে কিচ্ছুটি বলে না। উনি তো মা। না বলতেও সব বুঝে যান। পূরণ করার চেষ্টা করেন। তবে সেই স্নেহময়ী-বুঝদার মা কেন আজ এত্ত অবুঝ? কেন ঘুম থেকে উঠছে না? তাকাচ্ছে না ছেলের পানে! কেন? তার ইরু যে ক্ষুধার্ত-ক্লান্ত। মা নামক শান্তির স্থলে অসীম আশ্রয় প্রয়োজন। তবে কেন উঠছে না মা! কেন দিচ্ছে না তার ডাকে সাড়া! ইরহামের কম্পিত হাত আস্তে ধীরে এগিয়ে গেল। কাঁপতে কাঁপতে রাখলো মায়ের গালে। ছুঁয়ে দিলো আলতো করে। আহ্লাদী স্বরে ডেকে উঠলো,

” আমার মা! ”

আস্তে ধীরে মায়ের খোলা দু চোখ বন্ধ করে দিলো। বেশিক্ষণ হয়নি তো। বুঁজে গেল অক্ষিপুট। অবচেতন মনে একাকী বলতে লাগলো,

” তুমি একটু বিশ্রাম নেও ঠিক আছে? তোমার আদরের বৌমা নাহয় খাবার বেড়ে দেবে। ঘুমাও মা। তুমি ঘুমাও।”

মায়ের ঘামে ভেজা, যন্ত্রণা ক্লিষ্ট ললাটে চুম্বন এঁকে দিলো ইরহাম। আখেরি চুম্বন! আর কখনো ছুঁয়ে দেয়া হবে না। স্নেহশীল মায়ের স্নেহ পাওয়া হবে না। সব শেষ। ইরহাম না কেমন অদ্ভুত আচরণ করছিল। যেন সব স্বাভাবিক। ঘুমিয়ে মা। এখন হৃদিকে খুঁজতে হবে। মেয়েটা এই অবস্থায় কোথায় ঘুরঘুর করছে কে জানে। ইরহাম মায়ের মাথাটা আলতো করে নিজ কোলে তুলে নিলো। ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে চলেছে। মায়ের আরামদায়ক নিদ্রার ব্যবস্থা করেছে।

ঠিক সে মুহূর্তে হুড়মুড়িয়ে ঘরে প্রবেশ করলো রাহিদ। বেচারা ছেলেটা আহত দেহে বাইক নিয়ে একপ্রকার ঝড়ো গতিতে ছুটে এসেছে। রাস্তায় প্রচুর যানজট। ভারী বর্ষণে রাজধানীজুড়ে জমায়েত পানি। গাড়িঘোড়া জ্যামে বন্দী। কোনোমতে বাইক নিয়ে চিপা চাপা রাস্তা ডিঙিয়ে এসেছে সে‌। সে যদি ঝড়ো গতিতে এসে থাকে তবে ইরহাম ছিল আরো দ্রুত গতিসম্পন্ন। দেড় ঘন্টার রাস্তা মাত্র চল্লিশ মিনিটে পার করে এসেছে। শর্টকাট রাস্তায় কর্দমাক্ত অবস্থা। ছোট-বড় গর্ত। চলতি পথে তীব্র ঝাঁকুনি। তবুও চরম অস্বস্তি অবজ্ঞা করে ক্ষিপ্রবেগে ছুটে এসেছে মা ও স্ত্রীর বিপদের আশঙ্কায়। তবে শেষ রক্ষা কি হলো? রাহিদ এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজছে। ডাকছে ভাবী, ফুপি, ভাইকে। তবে সাড়া দিলো না একটি মানুষও। ঘরে এ কি দুর্দশা! তাদের অবর্তমানে হয়েছে টা কি? বুকের ভেতর ধরফর করছে। র:ক্তশূন্য মুখশ্রী। রাহিদ এদিক ওদিক তাকিয়ে চলেছে। হঠাৎ তার অশান্ত দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো ডানে। মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে ইরহাম। ভাইয়া হঠাৎ অদ্ভুতভাবে ওখানে কি করছে? তার সুঠামদেহ ব্যতীত দেখা যাচ্ছে না কিছুই। পরিস্থিতি সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ রাহিদ ছুটে এলো ভাইয়ার পানে। অস্থির কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে উঠলো,

” ভাইয়া তুমি এখানে কি কর… ”

আর বলা হলো না। শব্দমালা যেন একপ্রকার আ-ত্মহনন করলো কণ্ঠনালীতে। বিহ্বল নয়নে তাকিয়ে রাহিদ! কখন যে দু চোখে জমলো নোনাজল জানা নেই তার। অস্ফুট স্বরে তীব্র আর্তনাদ করে উঠলো,

” ফুপি! ”

ইরহাম তখন অনবরত ডেকে চলেছে স্ত্রীকে। বসে তার শিয়রে। উ-দ্ভ্রান্তের মতো গালে হালকা চাপড় মে রে ডেকে যাচ্ছে,

” হৃদি শুনতে পাচ্ছো? চোখ মেলে তাকাও। হৃদি! ”

.

অন্তরীক্ষে তখনও দুঃখী-বেদনাদায়ক ক্রন্দন। মাঝেমধ্যে গর্জন করে উঠছে মেঘমালা। বাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে অ্যাম্বুলেন্স। সাইরেনের সে-ই ভ”য়াল শব্দে কাঁপছে আকাশ বাতাস। বাতাসের প্রবল আধিপত্যে নৃত্যরত বৃক্ষপল্লব। আঁধারিয়া পরিবেশে শুধুমাত্র কৃত্রিম আলোর ঝলকানি। ব্যস্ত পায়ে ‘ আনন্দাঙ্গন ‘ নামক শ্ম”শানে প্রবেশ করছে পুলিশ সদস্যরা। বাড়ির সদর দরজা তখন ওনাদের দখলে। একজন নারী অফিসার মালিহার শ্বাস প্রশ্বাস নিরীক্ষা করে দেখলো। নেতিবাচক মাথা নাড়লো উচ্চপদস্থ অফিসারের পানে তাকিয়ে। ওই অফিসার ভীত নজরে তাকিয়ে এমপি সাহেবের পানে। কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই অগ্নিতেজা বি”দ্রোহ করে উঠেছিল এই চৌধুরী। অত্যন্ত ভ”য়াল সে গর্জন! কিসের ইনভেস্টিগেশন হবে? তার র-ক্তাক্ত মা ও স্ত্রীর জীবন বাঁচানো সবচেয়ে জরুরি। আগে তারা এরপর পুরো দুনিয়া। পুলিশকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে স্ত্রীর নিস্তেজ দেহটি যত্নবান হাতে কোলে তুলে নিলো ইরহাম। ভাইকে হৃদয় কাঁপানো স্বরে আদেশ প্রদান করলো তার মা’কে সহিসালামতে নিয়ে আসার। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে একপ্রকার বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে অবজ্ঞা করলো বেপরোয়া চৌধুরী।
.

আনন্দাঙ্গন প্রাঙ্গনে মাত্র এসে থামলো গাড়িটি। দ্রুত গাড়ির দরজা উন্মুক্ত করে বেরিয়ে এলেন এজাজ সাহেব। ছেলের ফোনকল পাওয়া মাত্র অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মিটিং মাঝপথে ছেড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটেছেন উনি। রাস্তায় প্রচুর যানজট। বৃষ্টিমুখর রাতে বাড়ি ফেরাটা বেশ ক্লান্তিকর ছিল। এসির নিচে বসেও ঘামে ভেজা দেহ। শুকিয়ে এতটুকু মুখখানা। হঠাৎ কি হলো! কেন তড়িঘড়ি করে পুলিশ আনার আদেশ প্রদান করলো ইরহাম? ছেলের কণ্ঠে কিছু তো একটার আভাস পেয়েছেন উনি। যা ওনাকে বিন্দুতুল্য স্বস্তি দিতে নারাজ। থেমে থেমে বুকের ভেতরটা পু’ড়ে যাচ্ছে। চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। কোথায় যেন বেজে চলেছে মূল্যবান কিছু হারানোর সুর। তবে কেন এই অযাচিত সুর! ভাবতে না ভাবতেই মিললো প্রশ্নের জবাব। স্তব্ধ এজাজ সাহেবের নয়ন জোড়া স্থির একমাত্র ছেলের পানে। বাড়ির সদর দরজা পেরিয়ে দ্রুততম পায়ে বেরিয়ে আসছে ইরহাম। কোলে হৃদির নিস্তেজ ভারী দেহখানি। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে দু’টো শরীর। তবুও থেমে নেই পদযুগল। বাবাকে মোটেও লক্ষ্য করলো না ইরহাম। ঠিক তার পাশ কাটিয়ে ছুটে গেল। ক্ষিপ্রবেগে প্রবেশ করলো অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে। এজাজ সাহেব অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকিয়ে। ইরহাম! ওর। ওর কোলে ছিল কে? ওনার পুত্রবধূ হৃদি! কি হয়েছে মেয়েটার? তন্মধ্যে বাড়ি হতে বেরিয়ে এলো রাহিদ। কোলে ফুপির নিথর দেহ। আহত হওয়া সত্ত্বেও যথাসাধ্য সর্বোচ্চ গতিতে ছুটছে রাহিদ। এ অপ্রত্যাশিত দৃশ্য অবলোকন করে বয়স্ক মানুষটির ভারসাম্য এক লহমায় হারিয়ে গেল। ঠাস করে দেহ ঠেকে গেল গাড়িতে। দু চোখে ঘোর বিস্ময়! এজাজ সাহেব একের পর এক নি”র্মম দৃশ্য সহ্য করতে পারছিলেন না। ঝাঁপসা হয়ে আসছিল চক্ষু। একপ্রকার আধবোজা চোখে দেখতে পেলেন রাহিদকে। ছেলেটা সাবধানে আলতো করে অ্যাম্বুলেন্সে শায়িত করলো ফুপি’কে। নিজে বসলো ড্রাইভারের পাশের সিটে। পেছনে আরেক গাড়িতে সিকিউরিটি গার্ডের দল। চোখের পলকে ‘ আনন্দাঙ্গন ‘ চত্বর হতে প্রস্থান করলো শুভ্র রঙা অ্যাম্বুলেন্সটি। যার উপরিভাগে জ্বলজ্বলে রঙিন বাতি। সাইরেন বাজিয়ে ছুটেছে চিকিৎসালয়ের উদ্দেশ্যে। পিছুপিছু এক গাড়ি দেহরক্ষী ও আরেক গাড়ি পুলিশ। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ধেয়ে চলেছে তিনটে গাড়ি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের দমাতে চরম ব্যর্থ।

তমসাচ্ছন্ন রজনী। বাহিরে তোলপাড় সৃষ্টি করা ঝড় থেমেছে কিয়ৎক্ষণ পূর্বে। তবে এ ঘর জুড়ে চলমান আরো বিপদজ্জনক তোলপাড়ের আগমনী সংকেত। গা হিম করা শুনশান নীরবতা। ঘন শ্বাস প্রশ্বাসের আলোড়ন। জ্ব’লছে অল্প আলোবিশিষ্ট এক দামী আকর্ষণীয় বাতি। যার নিম্নে ভয়ে তটস্থ ছয়জন। দলনেতা লোকটি সপ্তম জন। একটু বেশিই আত্মপ্রত্যয়ী। তাই তো যেখানে ভয়ে কম্পিত সব। সাহস সঞ্চয় করে সে এগিয়ে গেল অ-সুরের ধারে। আমতা আমতা করে বলবে কিছু, তৎক্ষণাৎ সবচেয়ে বিশ্বস্ত এ অনুচরের গাল বরাবর ঠাস করে আঘাত করলেন খন্দকার আজগর মল্লিক। বৃদ্ধের শক্তপোক্ত পাঁচটি আঙ্গুলের ছাপ পড়ে গেল দলনেতার গালে। অবিশ্বাস্য নয়নে তাকিয়ে সে! নেতাজী এই প্রথমবারের মতো আঘাত করলো তাকে। এ-ও দেখার ছিল! অবিশ্বাস্য! দলনেতা বিশ্বাস করতে পারছিল না। গালে হাত দিয়ে হতবুদ্ধি হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। আজগর তখন বোধবুদ্ধি হারিয়ে চেপে ধরেছে দলনেতা লোকটির শার্টের কলার। ক্রো”ধ প্রকাশ স্বরূপ করছে বিশ্রী গালাগাল। অকস্মাৎ সব ভণ্ডুল হলো। শ্রবণপথে প্রবেশ করলো রিংটোন। আলোকিত মোবাইলের স্ক্রিন। পড়ে রয়েছে গোলাকার টেবিলের কাঁচের আস্তরণে। দেখাচ্ছে সে স্ক্রিনে,

‘ রুদ্র কলিং ‘

.

” সন্ধ্যারাতে একজন এমপির বাড়িতে অনায়াসে প্রবেশ করলো হা’মলাকারীরা। আ’ক্রমণ করে পালিয়েও গেল। এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলো কিভাবে? কোথায় ছিল সিকিউরিটি গার্ড, বাড়ির অন্য সকলে? কি করে হা’মলাকারীরা এত সহজে বাড়ির ভেতরে ঢুকে কার্যসিদ্ধি করে পালিয়ে গেল? একজন এমপির বাড়িতে হা’মলা করা কি এতটাই সহজ? ”

সম্মুখে দাঁড়িয়ে ক্যামেরাম্যান। জনগণের উদ্দেশ্যে এখানকার অবস্থা তুলে ধরছে রিপোর্টার। এই মুহূর্তে শহরের অন্যতম নামকরা হাসপাতালের বাহিরে অবস্থান করছে মিডিয়া। সকলের মুখে একই সুর। একজন সাংসদের বাড়িতে কি করে এমন অবলীলায় ঘটলো অপ্রত্যাশিত হা’মলা!

চলবে.

[ গেম অন। আরম্ভ হতে চলেছে সেই ভ-য়ঙ্কর খেলা। আঘাত পাল্টা আঘাত। শেষমেষ বিজয়ী হবে কে? ন্যায় নাকি অন্যায়? কেমন লাগলো আরো একটি দুঃখ ভারাক্রান্ত পর্ব? গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। ধন্যবাদ সকলকে ধৈর্য ধরে তাহিরাহ্ এর পাশে থাকার জন্য। আসসালামু আলাইকুম। ]

♣️ পাঠক বন্ধুরা….

তাহিরাহ্ ইরাজ এর লেখা গল্প-উপন্যাস সম্পর্কিত ছোট-বড় অনুভূতি ব্যক্তকরণ, গল্প নিয়ে আলোচনা, ভুলত্রুটি শুধরে দেয়া, রিভিউ প্রদান এবং গল্পের চরিত্র-দৃশ্য নিয়ে পোস্ট করতে জয়েন করুন আমাদের গল্প সংক্রান্ত গ্রুপে।

গ্রুপ লিংক 🍁

https://www.facebook.com/groups/499389245208190/?ref=share

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here