#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৯ ( শেষাংশ ) [ ১৮+ অ্যালার্ট ]
” কেন চলে গেলে? ”
বৃদ্ধাশ্রমের এক বৃক্ষতলে কাঠের বেঞ্চে বসে এক মাঝবয়সী নারী। হাতে একটি ফটো। ছবিতে সে, তার স্বামী এবং দুই সন্তান। এক পুত্র ও এক কন্যা। অশ্রুসজল নয়নে ফটোতে আলতো করে হাত বুলিয়ে চলেছেন উনি। স্বামী ওনায় একাকী করে দুনিয়া ত্যাগ করলো সেই কত বছর পূর্বে। আর দুই সন্তান? তারাও আজ নেই। পিতার পথ অনুসরণ করে দুনিয়া ত্যাগ করেছে। একাকী ফেলে রেখে গিয়েছে তাকে। বিশাল এ পৃথিবীতে আজ সে একা। বড় একা। চারিদিকে শুধু নিস্তব্ধতার চাদর। ধূ ধূ মরুর ন্যায় প্রাণহীন পরিবেশ। কোথাও কেউ নেই। লহমায় ওনার অশ্রুসিক্ত দু নয়ন অনুতাপের ভারে নুয়ে গেল। ঘৃণা জন্মালো নিজের প্রতি। ছিঃ! ধিক্কার নিজেকে। জন্মদাত্রী মা হিসেবে উনি ঘৃণ্য। জঘন্য! ওনার পাপের কোনো ক্ষমা হয় না। নির্মম, নি-ষ্ঠুর উনি। কেন নিজেকে এত ঘৃণা? কেন এই অনুতাপ? হবে না? মন গহ্বরে বেশি খুঁজতে হলো না। সহজেই মিললো ঘৃণা, অনুশোচনার সেই ধ্বং-সাত্মক উৎস।
নয়ন। এক মা-দকাসক্ত তরুণ। মা•দকের ভয়াল থাবায় মনুষ্যত্ব, নীতিবোধ হারিয়েছে বহু পূর্বেই। নে শা বিহীন থাকতে পারে না দু দণ্ড। বাড়িতে অষ্টাদশী ছোট বোন, অসুস্থ মা রয়েছে। তাতে কি? বেকার তরুণ দিনরাত
নে শায় বুঁদ হয়ে পড়ে থাকে। ছোট বোন পড়াশোনার পাশাপাশি বেশকিছু টিউশনি পড়ায়। অসুস্থ মা সেলাই মেশিনের জাদুতে ঘরসংসার সামলানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যায়। প্রায়শ নে•শার টাকার জন্য ঘরে অশান্তি হয়। মা ও বোনের থেকে জোরপূর্বক অর্থ ছিনিয়ে নে-শার ব্যবস্থা করে নয়ন। অসহায় মা ও বোন শত চেষ্টা করেও তাকে শুধরাতে ব্যর্থ। এভাবেই চলছিল দিন। নয়ন তখন চরমভাবে মা•দকাসক্ত। এ থেকে মুক্তির আর বুঝি কোনো উপায় নেই। এক রাতে ঝড় উঠলো। কাঁপলো আকাশ বাতাস। অভাবনীয় পৈ•শাচিকতা ঘটলো ধরনীর বুকে। ছোট্ট এক ভগ্ন ঘরে। সে রাতেও নে শা য় বেহুঁশ প্রায় নয়ন। মাঝরাত অবধি বন্ধুদের সঙ্গে দেখলো প**গ্রাফি। সীমাহীন নে শা চড়ে বসলো দেহমনে। মা•দকের নে-শার চেয়েও নারীর নে শা তাকে বেশি কুপোকাত করলো। সারা কায়ায় তখন বি”ষযন্ত্রণা। কুটকুট করে কা’মড়ে খাচ্ছে কোনো পোকা। নে-শার ঘোরে ছটফট করছে নয়ন। বরাবরের মতই ডুপ্লিকেট চাবি ব্যবহার করে বাড়িতে প্রবেশ করলো। টলে উঠছে পা। সারা কায়া। ভনভন করছে মস্তক। র-ক্তবর্ণ চক্ষুদ্বয়। হাত-পা যেন লাগামছাড়া। টলমল পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। নারীর নে-শায় বি”ধ্বস্ত অবস্থা তার। চাই। কাউকে চাই। হঠাৎ চক্ষু গেল পাশের ঘরে। ভিড়িয়ে রাখা দ্বার। অল্প ফাঁক হতে দেখা মিলছে এক নারী অবয়ব। হায় রে খোদা! মা•দক নামক বি ষা ক্ত ছোবলে আক্রান্ত ছেলেটা অন্য নারী আর নিজের মায়ের পেটের বোনের তফাৎ বুঝলো না। তার চোখে তখন নারী স-ম্ভ্রম হরণকারী অদম্য নে”শা। জাগ্রত হয়েছে ভেতরকার আদিম সত্তা। নারী তখন শুধুমাত্র ভোগ্যবস্তু। অন্য কিছু নয়। দুর্বল অথচ ছটফটে পায়ে বোনের ঘরে প্রবেশ করলো নয়ন। ঘুমিয়ে তখন অষ্টাদশী বোনটা। হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই ঘুমের মধ্যে আপন ভাইয়ের পৈ•শাচিকতার শিকার হলো মেয়েটা। রাতের আঁধারে জাগতিক হুঁশ বিহীন নয়ন। আপন বোনের ওপর জাহির করছে কাপুরুষত্ব। তমসাচ্ছন্ন রাতে নে-শার ঘোরে চিনলো না বোনকে। শুধুমাত্র ভোগ্যবস্তু হিসেবে করে গেল ভোগ। আর বোনটি! নির্মম ব•র্বরতার শিকার অপরিপক্ক মেয়েটি অনবরত নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। পারলো না এক পশুর সঙ্গে। রাতের শেষ প্রহরে আধো আলোয় সে দেখলো শোষকের মুখখানা। যন্ত্রণার চেয়েও অন্তরে আঘাত করলো অবিশ্বাস! অস্ফুট স্বরে ডেকে উঠলো,
‘ ভাইয়া! ‘
আহা! সে কি করুণ শোনালো! কিন্তু শোষক ভাইটি তখনও ব্যস্ত দুনিয়ার অন্যতম বর্বর-জঘন্য অপরাধে। শুনলো না বোনের করুণ আর্তি। রাতভর চললো নি”র্যাতন। অসুস্থ মা তখন কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ সেবন করে গভীর নিদ্রায়। সে জানলো না। পারলো না আদরের মেয়েকে বিপদ হতে রক্ষা করতে। অপরিপক্ক, অনভিজ্ঞ দেহের মেয়েটি এত পারুষ্য সইতে পারলো না। বইতে লাগলো র-ক্তের ধারা। সুবাহের প্রথম ভাগে, নিজ ভাই কর্তৃক অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে র-ক্তক্ষরণের ফলস্বরূপ মৃ•ত্যুর কোলে ঢলে পড়লো মেয়েটি। পাড়ি জমালো অনন্তকালের দেশে। সৃষ্টিকর্তার পানে। হয়তো অভিযোগ জানালো মহান রবের পানে, এমন মৃ-ত্যু না হলেও পারতো তার। এতটা পৈ•শাচিকতা, নি”র্মমতা কি খুব বেশি দরকার ছিল? হয়তো ভাইয়ের অবিশ্বাস্য মুখখানা না দেখলে একটু হলেও লাঘব হতো যন্ত্রণা। কিন্তু আপন সহোদরের মুখদর্শনে জীবনের সবচেয়ে বড় ধোঁকা, বি*ষযন্ত্রণা পেল সে। সে কি নির্মম মৃ ত্যু!
সকাল সকাল অস্বস্তির শিকার হয়ে নে শায় বুঁদ ছেলেটির ঘুম ভঙ্গ হলো। যন্ত্রণা হচ্ছে মাথায়। ভেতরটা কেমন ছটফট করছে। সব ঝাঁপসা লাগছে কেন? মাথাটা ছিঁড়ে চিঁড়ে যাচ্ছে কি! এরপরের সময়টা ছিল অসীম বেদনাদায়ক! অবিশ্বাস্য! আপন সহোদরা এবং নিজ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে একটুও বুঝতে অসুবিধা হলো না কি থেকে কি হয়েছে। বোন আর নেই! চিৎকার করে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো নয়ন। সে চিৎকারে ছুটে এলেন মা। সদ্য ঘুম থেকে উঠেছেন উনি। পুত্রের চিৎকার শুনে কন্যার ঘরে তড়িঘড়ি করে ছুটে এলেন। কি হয়েছে রে! হায় হায়! একমাত্র কন্যা তখন নিথর দেহে বিছানায় পড়ে। পুত্রের অবস্থাও দৃষ্টিকটু, বি শ্রী। ব্যতিব্যস্ত পায়ে কন্যার পানে ছুটে গেলেন মা। বসলেন শিয়রে। মৃ ত মেয়েকে বুকে জড়িয়ে এক মায়ের সে কি আর্তনাদ! চিৎকার করে কাঁদছেন তিনি। আশেপাশে বাড়িঘর তেমন একটা নেই। শুনশান এলাকা। তাই তো ঘরের কুকর্ম ঘরেই চাপা পড়লো। টের পেলো না কেউ। মা তখন ক্রন্দনে দিশেহারা। পুত্র জাপটে ধরে মায়ের দু পা। হাউমাউ করে কাঁদছে ছেলেটা। আবলতাবল বলছে কত কি! ক্ষমা চাইতে চাইতে কণ্ঠনালী আটকে আসছে। ফ্যানা বের হচ্ছে মুখ দিয়ে। সে কি অচেতন হয়ে যাচ্ছে! দু হাতে মায়ের পা জড়িয়ে ছেলেটা। একসময় মায়ের পায়ে মাথা লুটিয়ে পড়লো। অচেতন হলো নয়ন।
অতঃপর! এক দীর্ঘশ্বাসের কাহিনী! একমাত্র কন্যাকে হারিয়ে একমাত্র পুত্রকে বাঁচানোর সে কি আপ্রাণ চেষ্টা! মাতৃ হৃদয় লো’ভী হলো। হলো ব’র্বর। এক সন্তানের মায়া ত্যাগ করে আরেকজনকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল। তাই তো নি”ষ্ঠুর চিত্তে বেছে নিলো অন্যায়-জঘন্য পথ। প্রায় জনবসতিহীন এলাকা তাদের। তাই অসুবিধা হলো না। দুপুর নাগাদ তড়িঘড়ি করে কন্যাকে দেয়া হলো মাটি চাপা। হলো না কোনো জানাযা, সঠিক রূপে দাফন প্রক্রিয়া। এক স”ম্ভ্রমহারা নারী দেহ লুকায়িত হলো মাটির অতলে। সে সঙ্গে চাপা পড়লো এক ঘৃণ্য অপরাধ। সাড়ে তিন হাত মাটি অবধি কপালে জুটলো না মেয়েটির। এতটাই মূল্যহীন, হেয় সে! এরপরের সময়টা ভাবনা মতো কাটলো না। চরমভাবে মানসিক অস্থিরতা, অপরাধবোধে জর্জরিত নয়ন। মা-ও ভালো নেই। দিনদিন শরীর আরো খারাপ করছে। যত্ন নেয়ার জন্য নেই যে মা পা-গলী মেয়েটা। উৎকণ্ঠিত চিত্তে বলছে না,
‘ ও মা। ওষুধ খাইছো? ‘
‘ বেশি খারাপ লাগতাছে? ‘
‘ ঘুমাইবা না? অনেক রাত হইছে তো। ঘুমের ওষুধ খাইছো! ‘
ঘৃণা করেন এই ঘুমের ওষুধকে। কেন সেদিন এই ওষুধ সেবন করলেন। কেন ম রা ঘুম দিলেন। এ ওষুধ না খেলে বেঁচে যেতো মেয়েটা। এত ঘৃণ্য অপরাধ করতে পারতো কি নয়ন? হয়তো না। সেদিনের পর পেরিয়ে গেল কয়েক মাস। অনুশোচনায়, অপরাধবোধে পা-গলপ্রায় অবস্থা নয়নের। এলো আরেক তুফানি রাত। পা-গলের মতো হাসতে হাসতে ছটফটিয়ে স্বেচ্ছায় মৃ-ত্যুকে বরণ করে নিলো নয়ন। গণ্ডস্থলে ঢেলে দিলো এক সিসি বি ষ। ঝ ল সে গেল গণ্ডস্থল। যেন এক সিসি এ সি ড পড়েছে গলায়। গলাকাটা মুরগির ন্যায় ছটফট করতে লাগলো নয়ন। হাত ফসকে পড়ে গেল সিসি। পিঠ লেগে গেল খাটের পায়ায়। ডান হাতে খামচে ধরলো গলা। তবুও ওষ্ঠপুটে লেপ্টে খুশির ছোঁয়া। চোখে জল অধরে লেপ্টে হাসি। মুক্ত সে। চিরকালের মতো অপরাধবোধ হতে মুক্ত সে।
‘ বুইন রে! ভাই আসতাছি। ‘
এ কেমন বিরল মৃ ত্যুর স্বাদ আচ্ছাদন! ইহকাল ও পরকাল দুই শেষ করে ম র লো নয়ন। বোনের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা আর হলো না রে!
পৃথিবীর বুকে লুকায়িত থাকে কিছু রহস্য। যা ভেদ হয় না কভু। শত চেষ্টা করেও জানে না কেউ। এ তেমনই এক র”হস্যজনক ঘটনা। ছেলেমেয়ে মৃ ত। মায়ের ঠাঁই বৃদ্ধাশ্রমে। মা•দকের ভয়াবহ সংক্রমণে এক পরিবার পেল নির্মম পরিণতি। এ বাস্তবতা। নির্মম-বর্বর বাস্তবতা। পৃথিবীর বুকে এরকম অজস্র ঘরে মা•দকের কু প্রভাবে চলছে অপরাধ। ধ্বং-সলীলা। সেসবের কি নেই কোনো অন্ত? আসবে না কোনো অগ্রদূত? মাতৃভূমি হতে উৎপাটিত হবে না কি এই ধ্বং-স ধ্বং-স খেলা!
•
অপরাহ্ন প্রহর। প্রিমিয়াম ভিলা প্রাঙ্গন। ঘাসের সবুজাভ আচ্ছাদন বিছানো জমিনে। ছোট-বড় বৃক্ষরাজি দণ্ডায়মান চারিধারে। খোলা আকাশের নিচে সে এক মনোরম পরিবেশ! যেন এক টুকরো সবুজের দুনিয়ায় তাদের আগমন। শীতলতম হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে কায়া। প্রাঙ্গনের একাংশে একত্রে তিন কোণে পাতা তিনটে আকর্ষণীয় হালকা মেরুন রঙা বেঞ্চি। সে বেঞ্চিতে মুখোমুখি বসে হৃদি এবং তার এমপি সাহেব। ইরহাম মোবাইল স্ক্রল করে চলেছে। মনোযোগ নিবদ্ধ মোবাইলে। আর তার অর্ধাঙ্গী? সেলফি তোলায় ব্যস্ত সে হৃদয়ের রাণী। রঙঢঙ করে স্ন্যাপচ্যাটে বেশকিছু ফটো তুললো মেয়েটি। হঠাৎ তার দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো স্বামীতে। ত্বরিত ভাবলো কিছু। মিটিমিটি হেসে উঠে দাঁড়ালো। অগ্রসর হলো স্বামীর পানে। বসলো তার কায়া ঘেঁষে। আকস্মিক কাণ্ডে ঈষৎ চমকালো ইরহাম! কপালে ভাঁজ ফেলে তাকালো স্ত্রীর পানে।
” কি? ”
” সেলফি। ” একগাল হেসে বললো হৃদি।
” হা? ” ঠিক বোধগম্য হলো না মানুষটির।
” আরে। সেলফি। সেলফি তুলবো দু’জন মিলে। আমরা না বর বউ? ”
” বর বউ বলে সেলফি তুলতে হবে? ” প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইরহাম।
হৃদি হাসিমুখে ইতিবাচক মাথা নাড়ল,
” ইয়াহ্। তুলতেই হবে। ”
ইরহাম দৃষ্টি সরিয়ে নিজের মোবাইলে নিবদ্ধ করলো। শান্ত স্বরে বললো,
” ছবি তুলতে পছন্দ করি না। ”
তৎক্ষণাৎ আপত্তি জানালো মেয়েটি,
” ও য়ে! একদম মিথ্যে বলবেন না। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ইভেন এমপি হওয়ার খুশিতে এত এত ছবি তুলেছেন। সেসময় তো বলেননি ‘ স্যরি। আমি ছবি তুলি না। ‘ যেই বউ বললো অমনি আপত্তি? তা হবে না। তা হবে না। ঘুরুন এদিকে। দাঁত বের করে ঝাঁকানাকা একটা স্মাইল দিন। ফার্স্ট ক্লাস দেখাবে। ”
বউয়ের কথায় না হেসে পারলো না ইরহাম। মুচকি হেসে তাকালো বউয়ের পানে। একমাত্র ছোট বউ। তার এতটুকু ইচ্ছে পূরণ করা যেতেই পারে। তো মোবাইল হাতে নিয়ে স্ত্রীর কথামতো ঘুরে বসলো এমপি সাহেব। তার প্রশস্ত বক্ষপটে কোমল কায়া এলিয়ে দিলো হৃদি। শিউরে উঠলো দুজনারই হৃদয়। শুকনো ঢোক গিলে ওষ্ঠ সিক্ত করে নিলো মেয়েটি। অধরকোলে ফুটে উঠলো মিষ্টি হাসির রেখা। স্বামীকে বললো,
” স্মাইল! ”
ফ্রন্ট ক্যামেরায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে মুচকি হাসি উপহার দিলো ইরহাম। বিমোহিত রমণী ক্যামেরাবন্দী করলো দু’জনার এই হাস্যজ্জ্বল মুখশ্রী। মানুষটির চিবুক আস্তে ধীরে স্থাপিত হলো অর্ধাঙ্গীর ডান কাঁধে। দু বাহু আবদ্ধ হলো পুরুষালি হাতের মুঠোয়। কম্পন সৃষ্টি হলো মোবাইল আঁকড়ে ধরা হাতে। চক্ষু বুজে তপ্ত শ্বাস ফেললো হৃদি। মনের গহীনে এলোমেলো রূপে ডানা ঝাপটে চলেছে বাহারী প্রজাপতি। এ কেমন হৃদয় পু”ড়ানো অনুভূতি! কোনমতে নিজেকে ধাতস্থ করে আরো কয়েকটি সেলফি তুলে নিলো হৃদি। স্মরণীয় এই ভ্রমণের মনোমুগ্ধকর স্মৃতি হয়ে গেল ক্যামেরায় বন্দী। সেলফি তোলা শেষে স্বামীর বক্ষস্থলে লেপ্টে থেকেই ফটো গ্যালারিতে ছবিগুলো দেখতে লাগলো হৃদি। উচ্ছ্বাস পরিলক্ষিত হচ্ছে মুখভঙ্গিতে। তা লক্ষ্য করে প্রসন্ন হলো ইরহাম। এই স্বচ্ছ-নির্মল হাসিটুকুর জন্য সে সব করতে রাজী। সদ্য তোলা ফটো দেখা শেষে মোবাইল রাখতে যাচ্ছিল হৃদি। আকস্মিক ভ্রু কুঁচকে গেল মানুষটির। বাঁধাপ্রাপ্ত হলো হৃদি। লহমায় তার মোবাইলটি চলে গেল স্বামীর হাতে। থতমত খেল মেয়েটি। এটা কি হলো? তীক্ষ্ণ চোখে মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে ইরহাম। হৃদি উঁকিঝুঁকি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে হচ্ছেটা কি। বেশি অপেক্ষা করতে হলো না। ওর পানে মোবাইল ঘুরিয়ে ধরলো ইরহাম। গম্ভীর স্বরে শুধালো,
” এটা কি? ”
হৃদি মনোযোগ সহকারে মোবাইলের স্ক্রিনে তাকালো। থতমত খেল ওয়ালপেপার দেখে। ইশ্ রে! গেল। মানসম্মান সব গেল। ওয়ালপেপারে শোভা পাচ্ছে বছর কয়েক পূর্বে তোলা একটি ফটো। ওর সম্মানীয় স্বামী মহারাজের। কি সুন্দর ঝাঁকানাকা পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! অতটাও গম্ভীর-তেঁতো লাগছে না। ভাল্লাগছে! হৃদি বেমানান হাসি উপহার দিলো।
” ছবি। নাইস না? ”
” তোমার মোবাইলে এটা কি করছে? ” গাম্ভীর্যে ভরপুর প্রশ্ন।
হৃদি আকাশ পাতাল ভাবলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে মাথা চুলকে নিলো। অতঃপর পেশ করলো এক ডাহা মিছা কথা।
” হে হে। আমি এমপির বউ না? সবাই যাতে সহজেই বিশ্বাস করতে পারে এজন্য এই ফটো সেট করেছি। ভালো করেছি না? ”
কেমন নিষ্পাপ চাহনিতে তাকিয়ে। ইরহাম স্তব্ধ! বুঝে উঠতে পারলো না ঠিক কেমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা উচিত। এমন গাঁ-জাখুরি মিথ্যাও হতে পারে! স্বামীর চাহনি দেখে হৃদি অনুধাবন করতে পারলো মিথ্যাটা ঢোপে টেকেনি। ওরে গাঁধী! কাঠখোট্টা জবাবদিহিতা থেকে বাঁচতে চাইলে পালা। পালানো বিহীন দ্বিতীয় পথ খোলা নেই। স্বামী হতে নিরাপদ দূরত্বে বসলো মেয়েটা। চক্ষু ঘুরছে আশেপাশে। কোন পথে পালানো সহজ হতে পারে! ইয়েস। পেয়ে গেছে। ইরহাম যেই কিছু বলতে উদ্যত হলো অমনি খালাস মিসেস হৃদি শেখ! চোখের পলকে হৃদি উধাও। অবহেলিত মোবাইলটি পড়ে রইলো ইরুর হাতে। হতভম্ব সে! এটা কি হলো?
চলবে.
[ ভাগ হৃদি ভাগ! ভেগেই গেল শেষমেষ 😁. কেমন লাগলো বেদনাদায়ক পর্বটি? আশা করি নয়নের রহস্য উন্মোচন আপনাদের নিকটে পরিষ্কার হয়েছে? কে সে-ই নি”র্যাতিত অজ্ঞাত কন্যা, কে বি*ষ খেয়ে আত্মহ-ত্যা করলো? বুঝতে পেরেছেন? কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর যারা ভেবেছিলেন মেয়েটি আফরিন তাদের জন্য এক মগ সমবেদনা। 🤭 ]
🍁 গল্প সংক্রান্ত আড্ডা দেয়ার জন্য জয়েন করুন আমাদের গ্রুপে Fiction World By Taheerah তে।