#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১৫ [ প্রাপ্তমনস্কদের জন্য ]
জনবহুল এক সড়ক। দৈনন্দিন ব্যস্ততায় মশগুল সকলে। যানবাহনের অবিরাম ধ্বনি প্রবেশ করছে শ্রবণেন্দ্রিয়ে। রাস্তার এক পাশে ফুটপাতে বসে একজন ভিখারি। উচ্চ স্বরে তালে তালে বলে চলেছে,
‘ আমার আল্লাহ্ নবীজীর নাম! আমার আল্লাহ্ নবীজীর নাম। ‘
ভিক্ষুকটি মধ্যবয়স্ক। পড়নের পোশাকের চরম দুর্দশা। ছেঁড়া ফাঁটা পোশাক। ইয়া বড় চুল। গোঁফ দাঁড়িতে আবৃত মুখের অধিকাংশ। তারস্বরে চেঁচিয়ে চলেছে লোকটি। হাত পেতে পথচারীদের নিকটে ভিক্ষা চাইছে। কেউ দু পয়সা দিচ্ছে কেউবা যাচ্ছে এড়িয়ে। ভিখারির বেশে ভিক্ষা তো চাইছে সে। তবে তার তীক্ষ্ণ চাহনি সকলের অগোচরে নিবদ্ধ এক চায়ের দোকানে। সেথায় চা পান করছে এক কৃষ্ণবর্ণ যুবক। নাম তার রুবেল। উঠতি বয়স। র”ক্ত গরম। অর্থের লোভে পড়ে প্রাপ্তবয়স্ক হবার পূর্ব হতেই বেআইনি কর্মে জড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে শহরের ছোট-বড় অ:পহরণ সংক্রান্ত কুকর্মে রুবেল এক নম্বর চয়েস। তার মতো করে নির্ভুল পদ্ধতিতে অ:পহরণ এ শহরে খুব কম লোকই পারে। তাই তো তার ওপর নজরদারি করে চলেছে ভিখারির বেশে থাকা এই বছর আটাশ এর ছেলেটা। আটাশ বছর বয়সী ‘সজল’ নামের এই ছেলেটি ছদ্মবেশ ধারণ করেছে এক মধ্যবয়স্ক ভিক্ষুকের। না সে মধ্যবয়স্ক। না সত্যিকারের ভিক্ষুক। অতীতে একসময় সে চুরিবৃত্তি, ছ্যাঁ:চড়ামি করে জীবনযাপন করেছে। বর্তমানে তার পেশা সে একজন দুর্দান্ত ইনফর্মার। বিগত চার বছর ধরে পুলিশের খোচর অর্থাৎ ইনফর্মার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও এক বিশেষ ব্যক্তির সে অন্যতম বিশ্বস্ত খোচর। সে-ই ব্যক্তির মহানুভব আচরণের জন্যই তো সে চুরির মতো অপকর্ম হতে মুক্ত হতে পেরেছে। বর্তমানে খোচর হিসেবে বেশ ভালোই দিন কাটছে তার। পুরনো কন্টাক্ট কাজে লাগিয়ে সহজেই এই গুপ্তচর কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সজল কৃতজ্ঞ ওই মহানুভব ব্যক্তি জনাব ইরহাম চৌধুরীর প্রতি। সে মানুষটি তার অমায়িক আচরণে বুঝিয়ে দিয়েছে কঠোরতা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কখনো কখনো কোমল আচরণ সর্বোত্তম।
চার বছর পূর্বে এক ব্যস্ত দুপুরে, সজল ভীড়ের সদ্ব্যবহার করে ইরহামের দলের একজনের পকেট মে রে দিচ্ছিল। কিন্তু অপ্রত্যাশিত ভাবে ধরা পড়ে যায়। জনবহুল এলাকা সেটি। রাজনৈতিক সভা চলছিল। মুহুর্তের মধ্যেই গণধোলাই খাওয়ার মতো অবস্থা। জনগণের হাতে ম:রণ আসন্ন ভেবেই নিয়েছিল সজল। তবে শেষ মুহূর্তে রক্ষা। ওপর ওয়ালা তাকে বাঁচাতে এই মহানুভব ব্যক্তিকে পাঠালো। ইরহাম এলো। লোকেদের মা”রের হাত থেকে রক্ষা করলো। তার সাথে কথা বললো একান্তে। কথায় কথায় চমৎকার ভাবে তার মনে প্রভাব ফেললো। ইরহাম নামক মানুষটির জীবনাদর্শ, অমায়িক আচরণে মুগ্ধ সে! গলে গেল একটু একটু করে। সেদিনের পর আরো দুইবার সাক্ষাৎ হয়েছিল ইরহামের সঙ্গে। ততদিনে চুরিবৃত্তি হতে বেরিয়ে এসেছে সজল। ইরহামের সৎ পরামর্শে সে আজ একজন বিশ্বস্ত খোচর। পুলিশের খোচর তো বটেই। ইরহামেরও একজন বিশ্বস্ত খোচর। সময়ে অসময়ে ঠিক কাজে লাগে। এই তো সর্বশেষ জুনায়েদ শিকদার নামক এক ক্যারেক্টার ঢিলা মাল এর বায়োডাটা বের করে ‘ভাই’কে দিলো। প্রসন্ন হলো ইরহাম ভাই। আজ আবার তার ডাক পড়েছে। ভাইয়ের কথামতো এই কি;ডন্যাপার যুবকটির ওপর শকুনের নজর নিবদ্ধ করে রেখেছে। কোনো না কোনো খবর অবশ্যই মিলবে। ইনশাআল্লাহ্।
চায়ের দোকানে চা পান করার ফাঁকে কথোপকথনে লিপ্ত নানাবিধ কুকর্মে জড়িত রুবেল। বিপরীত দিকের কাঠের বেঞ্চে বসে আরো তিনজন। তাদের সঙ্গে কথা বলছে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা নাকি? নির্ঘাত কোনো কুকর্ম করতে চলেছে। সজল তীক্ষ্ণ চাহনিতে তাকিয়ে। ওদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছে। কিছুক্ষণ পর কথাবার্তা সেরে উঠে দাঁড়ালো রুবেল। এক চ্যা-লা’কে চায়ের বিল পরিশোধ করার হুকুম দিয়ে সেথা হতে প্রস্থান করলো। দৃশ্যটি সামান্য দূরে বসে ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে সজল দেখলো। মুহুর্তের মধ্যেই কৃত্রিম চুল দাঁড়ির অন্তরালে লুকায়িত ওয়্যারলেস ব্লুটুথ ইয়ারবাড এর মাধ্যমে তার বন্ধু খোচরকে মৃদু স্বরে জানালো,
” বের হইছে। নজর রাখ। ”
.
রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে রুবেল। সিগারেটে টান দিয়ে কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া ছাড়ছে হাওয়ায়। তার দু পাশে রাস্তায় কিছু ভ্রাম্যমাণ দোকান। শাকসবজি, ঘরের টুকটাক জিনিসপত্র। এসব ভ্যানে বিক্রি হচ্ছে। তন্মধ্যে একটি ভ্যানে রয়েছে হরেক রকমের শাকসবজি। এক মহিলা ক্রেতার সঙ্গে রসালো আলাপ করে শাক বিক্রি করছে এক বিক্রেতা। যার প্রকৃত পরিচয় সে একজন খোচর বা ইনফর্মার। সজল নামক বন্ধুর কল পেয়ে সে এখন রুবেলের ওপর নজর রাখছে। বোঝার উপায় নেই সে কোনো সবজি বিক্রেতা নয় বরং একজন খোচর। কি সুন্দর করে সবজি বিক্রেতার অভিনয় করে চলেছে! শাক সবজি বিক্রি করছে। নজর রাখছে রুবেলের ওপর। কিছুক্ষণের মধ্যেই রুবেল পৌঁছে গেল নিজের বাসার সামনে। জনবহুল এলাকা এটি। গায়ে গায়ে লেগে দালান। একটি রঙচটা বাড়িতে প্রবেশ করলো রুবেল। দোতলায় সে ভাড়া থাকে। রুবেল বাড়িতে প্রবেশ করতেই সবজি বিক্রেতার ছদ্মবেশে থাকা খোচর কাউকে এই সংবাদ প্রেরণ করলো।
.
পার্টি অফিসে একজনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলাপে লিপ্ত ইরহাম। সে মুহূর্তে মোবাইলে নোটিফিকেশনের মৃদু শব্দ হলো। আলাপের ফাঁকে মোবাইল হাতে নিলো মানুষটি। স্ক্রিনে তাকাতেই খুদে বার্তা নজরে এলো। অধরে ফুটে উঠলো দুর্বোধ্য হাসির রেখা। ত্বরিত এক খুদে বার্তা প্রেরণ করে মোবাইল রেখে দিলো পাঞ্জাবির পকেটে। পূর্বের ন্যায় আলাপচারিতায় মশগুল হলো।
.
গোয়া। ভারত গোয়া উপকূলীয় অঞ্চলের মধ্যে ভারতের একটি রাজ্য যা ভারতে কোঙ্কান নামে পরিচিত। এটি উত্তর দিকে মহারাষ্ট্র এবং পূর্ব এবং দক্ষিণে কর্ণাটক দ্বারা আবদ্ধ, আরব সাগর তার পশ্চিম উপকূল গঠন করে। এটি অঞ্চল অনুসারে ভারতের ক্ষুদ্রতম রাজ্য এবং জনসংখ্যার দ্বারা চতুর্থ ক্ষুদ্রতম। রাতের গোয়া বেশ চিত্তাকর্ষক! বিনোদন ও অপরাধ প্রবণতার জন্য গোয়ার জুড়ি নেই।
গোধূলি লগ্ন। গোয়ার এক নিস্তব্ধ এলাকায় একটি পুরনো দিনের কারখানা। কারখানার অভ্যন্তর হতে বেরিয়ে আসছে বি:ভৎস আর্তনাদ। সে আর্তনাদে ছুটে পালাচ্ছে পাখপাখালি। হিমশীতল শিহরণ বয়ে যাচ্ছে শিরায় শিরায়। কেন এই হৃদয় কাঁপানো আর্তনাদ! কারখানার ভেতরে কাঠের চেয়ারে মোটা রশির বন্ধনে আবদ্ধ এক ব্যক্তি। পাশেই একটি টেবিল। টেবিলের ওপর পড়ে রয়েছে লোকটির বাম হাত। ধারালো ছুরি গেঁথে ওনার হাতের উল্টো পিঠে। হাতের মাংস-চামড়া ভেদ করে ছুরিটি প্রবেশ করেছে টেবিলের আস্তরণে। র-ক্তলাল হাতের তালু। তারচেয়েও বি;ভৎস কাণ্ড ঘটছে তার সাথে। যার যন্ত্রণায় নীল লোকটি। চিৎকার করে আকুতিমিনতি জানিয়ে চলেছে। ক্ষমা ভিক্ষা চাইছে। কেননা এক ধারালো, ভ-য়ঙ্কর কাটার মেশিন চলমান ওনার হাতের কবজি হতে তিন ইঞ্চি ওপরে। শরীর হতে হাতটি বিচ্ছিন্ন করতে লিপ্ত কাটার মেশিনটি। নিদারুণ শারীরিক যন্ত্রণায় ছটফট করে চলেছে লোকটি। আর্তনাদ করে অসহনীয় যন্ত্রণা হতে মুক্তি চাইছে। তবে মিললো না মুক্তি। যে হাত দিয়ে বে:ইমানির রাস্তা সুগম করেছে সে হাত আজ শরীর হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে চলেছে। হাউমাউ করে কাঁদছে লোকটা। শরীর হতে হাত নয় যেন তার কলিজা বিছিন্ন করা হচ্ছে। শত বিচ্ছু যেন কা”মড়ে চলেছে হাতে। চিৎকার করতে করতে গলা জড়িয়ে আসছে। তবুও মিললো না ছাড়। নির্লিপ্ত বদনে এক নকশাদার চেয়ারে বসে হিং;স্রতার অপর নাম রুদ্র। রুদ্রনীল। সবুজাভ কুর্তা পড়নে তার। সাথে জিন্স প্যান্ট। লম্বা কোঁকড়ানো চুলগুলো পেছনে বান আকারে আবদ্ধ করে রাখা। ভারতীয় রাজপুতদের ন্যায় গোঁফ। তামাটে বর্ণ দেহ তার। বছর ছত্রিশের এই মানুষটির সুঠামদেহের আনাচে কানাচে অসুরে শক্তির পরিচয়। হিং স্র তা বিরাজমান রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ধূর্ততা দু চোখ জুড়ে। শ্বাপদের ন্যায় জ্বলজ্বলে চক্ষুদ্বয় নিজ শিকারকে লহমায় ছিন্নমূল করে দিতে পারদর্শী। এ মুহূর্তে নির্বিকার অভিব্যক্তি প্রকাশ পাচ্ছে তার মুখভঙ্গিতে। সম্মুখে এক বে-ইমান আর্তনাদ করে চলেছে। তাতে কি এসে যায়? সে তো নির্লিপ্ত ভঙ্গিমায় ব্যস্ত মোবাইলে এক ইম্পর্ট্যান্ট ডিল ফাইনাল করতে।
আশি লাখ টাকার ডিল। কো”কেন এর লেনদেন। ‘নাক’ এর ইমোজি ব্যবহার করে এই লেনদেন সম্পাদন হচ্ছে। ‘নাক’ হলো অপরাধ জগতে কোকেন এর অর্থপূর্ণ গোপন প্রতীক বা সিম্বল। কিছুটা সময় অতিবাহিত হলো। ডিল ফাইনাল করে স্বমহিমায় উঠে দাঁড়ালো রুদ্রনীল। মোবাইল হাতে শ-কুনি দৃষ্টিতে তাকালো স্থানীয় বাসিন্দা ওই বে-ইমানের দিকে। উত্তপ্ত চোখের চাহনিতে ভ-স্মীভূত করে দিচ্ছে একটু একটু করে। মানুষটির হাত নিঃসৃত র’ক্তিম তরল পদার্থ তার অন্তরে স্বস্তি দিচ্ছে। আনন্দ হচ্ছে বুকে। অকস্মাৎ অভিব্যক্তি পরিবর্তিত হলো। কঠোরতা প্রকাশ পেল মুখাবয়বে। রুদ্রনীলের সঙ্গে বিশ্বাসঘা”তকতা! হাহ্! হিমশীতল কণ্ঠে কাট-কাট ভঙ্গিতে আওড়ালো তার চিরপরিচিত সতর্ক বার্তা,
” প্রথমবার ভুল করেছো। যাও। ছোট্ট একটা সুযোগ দিলাম। কিন্তু দ্বিতীয়বার সে ভুল তোমার ম-রণের কারণ হতে চলেছে। কথাটা মস্তিষ্কে গেঁথে নাও। ”
বক্র হেসে নির্দয় শিকারির ন্যায়,
” গোমেজ! গেট রেডি। ”
আহত লোকটি এতক্ষণ সীমাহীন ছটফটানি ভুলে রুদ্রনীলের পানে তাকিয়ে ছিল। আশায় ছিল একবিন্দু পরিমাণ দয়ার। ভুল সে। সম্পূর্ণ ভুল। মায়াদয়া নামক কোনো শব্দের অস্তিত্ব নেই যে রুদ্রনীলের শব্দভাণ্ডারে। আতঙ্কিত লোকটি এক লহমায় চোখের সামনে মৃ ত্যু দেখতে পেল। চিৎকার করে স্থানীয় ভাষায় বাঁচার জন্য আকুতিমিনতি করতে লাগলো। হাতটি তো বিচ্ছিন্ন হয়েই গেছে। প্রাণটিও আর থাকবে না! একপেশে হেসে অভিজাত ভঙ্গিতে পদযুগল চালিয়ে সেথা হতে প্রস্থান করলো রুদ্রনীল। বিপক্ষ দলের কাছে গোপন ইনফর্মেশন ফাঁ স করা! বিশ্বাসঘা-তকের মৃ ত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়ে গিয়েছে। দ্য গেম ইজ ওভার।
.
তমসাচ্ছন্ন ঘরে ছটফট করে চলেছে মেয়েটি। শক্ত বাঁধনে বাঁধা হাত-পা। অত্যন্ত দুর্বল শরীরে শক্তি প্রয়োগ করা যেন ছনের ঘরে বসে বিলাসীতা করার সমতুল্য। এক হাত দূরেই রাখা স্টিলের থালা। তাতে খাবার। পোড়া দু’টো রুটি ও হলদে পানি রূপে ডাল। সে খেতে অনীহা প্রকাশ করায় পূর্বের ন্যায় হাত-পা বেঁধে রেখে গিয়েছে। মেলেনি ছাড়। দুর্বল শরীরে লড়াই করার বৃথা চেষ্টারত হৃদি ডুকরে কেঁদে উঠলো। শরীরে একটুও শক্তি অবশিষ্ট নেই। চেতনা ফেরার পর বিগত চব্বিশ ঘন্টায় মাত্র একবার এই অপরাধীদের দেয়া খাবার খেয়েছিল। শুধুমাত্র বেঁচে থাকার তাগিদে। অন্যথায় এদের হারাম পয়সায় জোগাড়কৃত খাবার সে চেখেও দেখতো না। অন্ধকার ঘরে বসে সময়জ্ঞান শূন্য হৃদি। সে জানে না কতগুলো ঘন্টা, মিনিট, সেকেন্ড পেরিয়ে গেছে। কতকাল সে এখানে বন্দী। জানে শুধু সে বিপদে। ছলনা করে তাকে তুলে আনা হয়েছে। হাঁ ছলনা ই তো।
সে রাতে গাড়িতে অস্থির চিত্তে বসে ছিল হৃদি। হঠাৎই গাড়ির জানালায় কড়া নাড়লো কেউ। আতঙ্কিত মেয়েটি আরো আঁতকে উঠলো। ভয়ে পানিশূন্য অভ্যন্তর। দুরুদুরু বুকে তাকালো জানালায়। দেহরক্ষী মুরাদ দাঁড়িয়ে। ইশারায় জানালা নামাতে বললো। মহান স্রষ্টার নাম স্মরণ করে কম্পিত হাতে জানালো নামালো হৃদি। দরকারি কিছু বলবে কি? অকস্মাৎ! কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই দুর্বোধ্য হেসে জানালা হতে সামান্য ডানে সরে গেল মুরাদ। হৃদি অবাক নেত্রে তাকিয়ে! কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই জানালা বরাবর হাজির হলো এক অপরিচিত গুণ্ডা মতো দেখতে ব্যক্তি। মাত্র কয়েক সেকেন্ড। কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার পূর্বেই সে ব্যক্তি ওর মুখে ক্লোরোফর্ম স্প্রে করলো। শঙ্কিত মেয়েটি চোখের পলকে চেতনা হারালো। বুজে গেল অক্ষিপুট। ঢলে পড়লো সিটে। ততক্ষণে অচেতন সামনের সিটে বসা ড্রাইভারও। অতঃপর চারিদিকে ঘোর অন্ধকার। অচেতন মেয়েটি চেতনা ফিরতে নিজেকে খুঁজে পেল এখানে। এই অন্ধকার ঘরে। যেখানে সে একা নয়। অপরিচিত আরো আট-দশজন মেয়ে বন্দী। এরা কারা? অ-পহরণের পেছনে কি উদ্দেশ্য লুকিয়ে! কেন ছলনার আশ্রয় নিয়ে তাকে অপহ-রণ করলো! ব্যক্তিগত শত্রুতা নাকি ভিন্ন কিছু!
•
অতিবাহিত হলো আরো কয়েক ঘণ্টা। হৃদি অ”পহৃত হয়েছে উনপঞ্চাশ ঘন্টা অতিবাহিত হয়েছে। হাই প্রোফাইল কেসটি নিয়ে ব্যস্ত পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। পুরোদমে চলছে খোঁজ। হাটে বাজারে এখন চলছে রমরমা আলাপণ। এমপি পত্নীর নিন্দায় সরব চারিদিক। প্রকৃত সত্য না জেনে নিন্দা করছে তারা। হৃদি ও দেহরক্ষী মুরাদ’কে নিয়ে রসিয়ে রসিয়ে আলাপ হচ্ছে। সর্বত্র ছড়িয়ে হৃদি পালিয়েছে প্রেমিকের সঙ্গে। সাংসদ ইরহাম চৌধুরী বউকে বোধহয় সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তাই তো রাতের আঁধারে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়েছে বউ। হায় রে নিন্দনীয় গুজব!
.
দুর্বল শরীরে আঁধারিয়া ঘরে কাটছে সময়। কোথায় বন্দী, কেন বন্দী নেই জানা। শুধু মুক্তির অপেক্ষায় কাটছে দিন। কপোলের ত্বকে শুকিয়ে অশ্রু কণার ছাপ দৃশ্যমান। মহান রব, আপনজনের স্মরণে বিভোর হৃদি। ধূলোমাখা, নোংরা পোশাকে পড়ে মেঝেতে। হঠাৎ উন্মুক্ত হলো এ ঘরের বদ্ধ দ্বার। উপস্থিত সকল নারী চমকে গেল! আবার কে এলো? কি তার উদ্দেশ্য! ভয়ে কুঁকড়ে গেল সবাই। দ্রুত হলো শ্বাস প্রশ্বাসের গতিবেগ। হৃদি কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে দরজায়। আঁধার চিরে আস্তে ধীরে দৃশ্যমান হলো আগন্তুকের মুখশ্রী। চেনা মুখ দেখে হতবিহ্বল হৃদি! রূদ্ধ তার কণ্ঠস্বর। অস্ফুট স্বরে এতটুকু বলতে সক্ষম হলো শুধু,
” আ-পনি! ”
চলবে.
[ রুদ্রনীল দ্য ভ’য়ানক খলনায়ক! উপন্যাসের মূল খলচরিত্র অবশেষে ধরা দিলো। কে এলো হৃদির সম্মুখে? কোন চেনা মুখ? কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না যেন। ]
♣️ জয়েন করুন আমাদের গল্প সংক্রান্ত গ্রুপে 👇
Fiction World By Taheerah এ