#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১৯ ( প্রথমাংশ ) [ প্রাপ্তমনস্কদের জন্য ]
” প এবং দ বর্ণ দিয়ে যত জায়গা আছে সব চেক করে দেখো। আ’ম ড্যাম শিওর ও কাছাকাছি ই আছে। ”
অধীনস্থ সহচরদের গুরুগম্ভীর স্বরে আদেশ প্রদান করলো ইরহাম। শেষের বাক্যটিতে কণ্ঠস্বর কেমন কোমল হয়ে উঠলো। তার হৃদি কাছেই রয়েছে। সে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে না। শীঘ্রই ফিরবে ইনশাআল্লাহ্।
মধ্যাহ্নের শেষ প্রহর। আলোকজ্জ্বল এক ঘরে উপস্থিত তারা ছয়জন। এমপি সাহেব। তার সিকিউরিটি হেড রুস্তম, বন্ধু তাঈফ এবং তিনজন দেহরক্ষী। আয়তাকার টেবিলের ওপর বিছিয়ে রাখা বড়সড় একটি মানচিত্র। দেশের মূল শহর, জেলা, উপজেলা সব রয়েছে এ মানচিত্রে। গুমোট পরিবেশ। ওরা পাঁচজন তীক্ষ্ণ চাহনি বুলিয়ে চলেছে মানচিত্রে। প ও দ বর্ণ দু’টো পাশাপাশি উপস্থিত রয়েছে এমন সকল জায়গা খুঁজে বেড়াচ্ছে। ইরহাম বলেছে যখন সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা পঁচাশি পার্সেন্ট। তারা ঝুঁকি নিতে নারাজ। সবার হাতেই ম্যাগনিফাইং গ্লাস। গ্লাসের আবরণ ভেদ করে মানচিত্রের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে চক্ষুজোড়া। প ও দ উপস্থিত এমন স্থান খুঁজে বেড়াচ্ছে মরিয়া হয়ে। ইরহাম তাদের থেকে স্বল্প দূরত্বে দাঁড়িয়ে। গম্ভীর বদনে গুরুত্বপূর্ণ ফোনালাপে লিপ্ত। পার্টির উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপণ করছে। শান্ত অথচ শীতল স্বরে জানাচ্ছে নিজস্ব মতামত। একটু পরপর অন্তরে উঁকি দিচ্ছে আশার আলো। এই বুঝি মিলবে ‘তার’ খোঁজ!
.
গোধূলি লগ্ন। দুর্বলতার দরুণ ভেঙে আসছে শরীর। প্রায় পঁয়ষট্টি ঘন্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেল। এই তমসাচ্ছন্ন ঘরে একঘেয়ে বন্দী অবস্থায় কাটছে দিন। যাচ্ছে রাত। সময়ের কোনো হুঁশজ্ঞান নেই। কখন সকাল শেষে দুপুর গড়িয়ে পড়ছে, কখন সন্ধ্যা হারিয়ে রাত। জানা নেই। শক্ত রশির বন্ধনে আবদ্ধ হাত-পা ইদানিং কেমন ভরশূণ্য অকেজো প্রায় অনুভূত হয়। ফাঁকা লাগে মস্তিষ্ক। স্নায়ু যু-দ্ধে চরমভাবে পরাজিত সৈনিক সে। অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়তে পড়তে এখন বিলুপ্ত হবার পথে। বিগত ঘন্টা, মিনিট দু চোখ ছাপিয়ে আর অশ্রু নামেনি। আর কত কাঁদবে? পরিস্থিতির ন্যায় বে-ইমানি করছে অশ্রু কণাও। অস্থিমজ্জায় এখন শুধু যন্ত্রণা। আস্তে ধীরে হারিয়ে ফেলছে মুক্তির আশা। আগামীকাল সন্ধ্যা। তাদের সমুদ্রপথে পা চা র করা হবে। কোথায়, কোন পন্থায় নিয়ে যাবে জানা নেই। হৃদি তার অন্ধকার ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে। আপনজনদের ছেড়ে তার বুঝি ঠাঁই হতে চলেছে ইউরোপের কোনো দেশে। অজানা পরিবেশে এক স্লা* হিসেবে! এক নারীর জন্য এ পরিচয় নিঃসন্দেহে অত্যন্ত অপমানজনক। বি”শ্রী তকমা। কেউ কি স্বেচ্ছায় এমন নোংরা পথে আসতে চায়? চায় না। নিজেকে বিকিয়ে অর্থ উপার্জন। এমন উপার্জন কোনো নারীর না হোক। এই অন্যায়, হারাম পন্থা ইহকাল ও পরকাল দুইই নষ্ট করে ফেলে। শেষ হয়ে যায় এক কোমলমতি প্রাণ। আমৃ-ত্যু ধুঁকে ধুঁকে ম রে তারা। চাইলেও পারে না নোংরা বেড়াজাল হতে মুক্ত হতে। আর আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ? তারা রাতের আঁধারে মজা লুটে, দিনের আলোয় অপবাদ দেয়। নোংরা নোংরা তকমা লাগিয়ে দেয় কলুষিত কোমল দেহে। সমাজের সে-ই বিদঘুটে শ্রেণীর পুরুষদের প্রতি এক বুক ঘৃণা জন্ম নিলো। চোখমুখে দৃশ্যমান সে ঘৃণার বহর।
আনমনা হৃদির ভাবনায় ছেদ পড়লো। গুনগুন করে ক্রন্দনের ধ্বনি প্রবেশ করছে শ্রবণেন্দ্রিয়ে। অন্ধকারে কাঁদছে কে? দেয়াল ঘেঁষে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বসে হৃদি। একটুখানি সোজা হয়ে বসলো। চিড়চিড় করে উঠলো দুর্বল দেহের যত্রতত্র। যাতনা সয়ে এদিক ওদিক তাকালো হৃদি। হলদে রঙা লো ভোল্টেজ বাল্বের আলোয় ডান পাশে আবছা দেখতে পেল। শঙ্কায় হাত-পা গুটিয়ে কাঁদছে একটি মেয়ে। নড়াইলের মেয়ে। বয়স কত? মাত্র উনিশ। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে এবার। ইনুর মতো। লহমায় চোখে বাষ্প জমলো। বাড়ির লোকেরা কেমন আছে? তাকে স্মরণ করছে কি? সে যদি চিরতরে ইউরোপের বুকে হারিয়ে যায় ওরা কি ভুলে যাবে তাকে? সময়ের পরিক্রমায় তাদের জীবন হতে হৃদি নামক অস্তিত্ব কি মুছে যাবে! হয়তো হাঁ। এটাই তো করুণ বাস্তবতা। হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো একসময় স্মৃতির পাতা হতেও হারিয়ে যায়। সেথায় ঠাঁই নেয় জীবিত-বর্তমান মানব অবয়ব। সে-ও বুঝি হারিয়ে যাবে। আপনজনদের জীবন হতে। তাদের স্মৃতি হতে। একান্ত মানুষটির জীবনে আসবে এক নয়া জন। কোনো রূপসী কন্যা। সকলে ভুলে যাবে তারে। হৃদিরে। বুকের বাঁ পাশে অসহনীয় যন্ত্রণা আরম্ভ হলো। অস্থির হৃদক্রিয়া। স্বেদজলে সিক্ত কায়া। অন্তঃপুরে আঘাত হানছে সুনামি। হৃদয়ের দ্বার পাখির ডানার ন্যায় ঝাপটে চলেছে। মাথাটা একসময় ঠেকে গেল দেয়ালে। র’ক্তিম দু চোখে হাহাকার। আপনজনের নিকটে ফিরে যাওয়ার আকুতি। ধীরে ধীরে বুঁজে গেল অক্ষিপুট। নিশ্চুপ হয়ে পড়ে রইলো ইরহামের হৃদরাণী!
.
ঘড়ির কাঁটা তখন সন্ধ্যা সাতটা বেজে দশ মিনিট নির্দেশ করছে। রায়না দুপুর নাগাদ ‘ আনন্দাঙ্গন ‘ গিয়েছে। আদুরে ভাবীর শোকে সে-ও আহত। ও বাড়িতে ইদানিং ঘনঘন আসা যাওয়া করছে। জহির সাহেব জোরালো ভাবে নিষেধ করেননি অবশ্য। তবে উনি যে এসব পছন্দ করছেন না ওনার হাবভাবে স্পষ্ট। পল্লবী পরিপাটি রূপে প্রস্তুত। এখন ও বাড়ি যাবেন। দশটার দিকে একেবারে ফিরবেন মেয়েকে নিয়ে। বাড়ির প্রাঙ্গনে এসে পল্লবী উপলব্ধি করলেন ভুলবশত পার্স আনেননি। অগত্যা পিছু ঘুরে বাড়ির দিকে অগ্রসর হলেন। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অজ্ঞাত এ নারী ঘুণাক্ষরেও টের পেল না কতবড় দুঃস্বপ্ন তার অপেক্ষায়।
_
” আরে গা-ধার দল। তোদের ওখানে চোট্টা** করতে রাখা হয়নি। মেয়েগুলো যেন টাটকা থাকে সে খেয়াল রাখিস। যদি একটু এদিক ওদিক হয় না? তোর লিভার-কিডনি-ফুসফুস বেঁচে হলেও টাকা উসুল করবে ওঁরা। সে-ই সঙ্গে ফ্রি ফ্রি ওপরে যাওয়ার টিকিট। মনে রাখিস। ”
ফোনের ওপাশ হতে কিছু বললো ব্যক্তিটি। যা শুনে তেঁতে উঠলেন জহির সাহেব,
” ওরে হারা*। জানিস না ওটা কার বউ? ওই ঘা-ড়ত্যাড়া ইরহাম চৌধুরীর বউ। একটু দাপাদাপি না করলে চলে? ওই মালটাকে ভালোমতো চোখে চোখে রাখবি। খবরদার চেখে দেখতে যাস না যেন। দুবাইয়ের এক শেখ ওকে কিনবে। রেট বেড়ে গেছে। দশের জায়গায় এখন আঠারো লাখ। সো, ওটাকে দেখে দেখে রাখবি। ভুলেও পালিয়ে যায় না যেন।… আরে হাঁ জানি। চিন্তা করিস না। এখন রাখছি। ওটাকে দেখে রাখিস। শুধু কাল সন্ধ্যার অপেক্ষা। হা হা হা। এরপর টাকাই টাকা। ”
লো ভে চকচক করছে আঁখি জোড়া। ভুলে গেলেন জাগতিক হুঁশ। অভ্যন্তরে কুটিলতা। আরো ঠাট্টা তামাশা করে জহির সাহেব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেন। হাস্যবদনে পিছু ঘুরে হলেন স্তব্ধ! পল্লবী হতবিহ্বল বদনে দাঁড়িয়ে! চোখেমুখে অবিশ্বাস ও ঘৃণার মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সাড়ে সর্বনা’শ হয়ে এলো! ওহ্ শিট। ত্বরিত বিছানায় মোবাইল ছুঁড়ে বউয়ের পানে অগ্রসর হলেন উনি। ভয়ে-আতঙ্কে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পিছপা হচ্ছেন পল্লবী। আঙ্গুল নাড়িয়ে অস্ফুট স্বরে নিষেধ করছেন। জহির সাহেব শুনলে তো? আচমকা স্ত্রীর হাত টেনে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলেন। চোখে চোখ রেখে যথাসম্ভব শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,
” এখানে কি করছো? ফিরে এলে যে? ”
পল্লবী ঘৃণায় হাত মুচড়ে চলেছেন। সরে যেতে চাইছেন স্বামী নামক পশুটির সান্নিধ্য হতে। এতেই তেঁতে উঠলেন জহির সাহেব। হাতের কবজি আরো শক্ত করে আঁকড়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
” সব শুনে নিয়েছিস তাই না? কলিজা অনেক বড় হয়ে গেছে? ”
এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিলেন পল্লবী। ক্রন্দনরত মুখখানি লালিমায় ছেয়ে। উনি জোরালো শব্দে জানালেন নিজস্ব ঘৃণ্য অনুভূতি,
” অমানুষ হয়ে গেছো তুমি! শেষমেষ এত নিচে নামলে? আপন ভাগ্নের বউকে অবধি ছাড়লে না? জা-নোয়ারে পরিণত হয়েছো এখন। সামান্য কয়টা টাকার লো ভে সততা, মূল্যবোধ সব বিক্রি করে ফেলেছো? ছিঃ! ”
প্রথমবারের মতো স্ত্রীর তীব্র প্রতিবাদের মুখে জহির সাহেব। অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকিয়ে উনি। আকস্মিক একপেশে হেসে করতালি দিতে দিতে বললেন,
” আরে বাহ্! আমার বিড়াল কিনা শেষমেষ আমাকেই বলে ম্যাঁও? আনবিলিভেবল! ”
পল্লবী প্রতিবাদী অবতারে রূপান্তরিত হলেন,
” হাঁ আজ বলছি। কারণ দিনেদিনে তুমি সকল অন্যায়ের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছো। সত্যি করে বলো হৃদি কোথায়? ওকে কেন লুকিয়ে রেখেছো? ”
সশব্দে হেসে উঠলেন জহির সাহেব। শার্টের হাতা গুটিয়ে কনুইয়ে তুলতে তুলতে বললেন,
” বিক্রি হয়ে গেছে তোমাদের আদরের বৌমা। দুবাইয়ের এক শেখ দরদাম করে ওকে কিনে নিয়েছে। আঠারো লাখে। জীবনে একসাথে দেখেছো কখনো? ”
চরম আশ্চর্যান্বিত পল্লবী বাকশূন্য হয়ে পড়লেন! এ কি বলছে লোকটা? হৃদি’কে তারা বিক্রি করে দিয়েছে! নাহ্। এ.. এ হতে পারে না। জহির সাহেব শার্টের দু হাতা গুটিয়ে বিজয়ীর হাসি হাসছেন। কিছু মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে রইলেন পল্লবী। অতঃপর আর সহ্য করতে পারলেন না। তেড়ে গিয়ে ডান হাতে স্বামীর কলার চেপে ধরলেন। তেজদীপ্ত চাহনিতে তাকিয়ে বললেন,
” তোমরা? তোমরা ওকে বেঁচে দিচ্ছো! ইরহাম তোমাদের কাউকে ছাড়বে না। সত্যি করে বলো হৃদি কোথায়? কোথায় ও? ”
ইরহাম তাদের ছাড়বে না? হোয়াট অ্যা জোক! অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন জহির সাহেব। এক ধাক্কায় নিজের থেকে সরিয়ে ফেললেন স্ত্রীকে। ধাক্কার ফলস্বরূপ পল্লবী কয়েক পা ছিটকে দূরে সরে গেলেন। জ’ঘন্য লোকটির স্ত্রী হিসেবে আজ এক সমুদ্র ঘৃণা-অনুশোচনা হচ্ছে। ছিঃ! জহির সাহেব বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বললেন,
” তোর ওই ইরহাম কচু করবে রে কচু। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বউ ফুরুৎ। কু** পাগল হয়ে অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু বউ আর মিলবে না। বউ তার পদ্মা পাড় হতে রাতারাতি উধাও হয়ে যাবে। কিচ্ছু করতে পারবে না ওই হারা**। ”
ভাগ্নের নামে এমন জঘন্য শব্দমালা আর সহ্য করা গেল না। দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো শরীরে। জীবনে প্রথমবারের মতো অভাবনীয় প্রতিবাদ করে বসলেন পল্লবী। ডান হাতে সপাটে চ ড় মা*রলেন স্বামীর গালে। ঘৃণা মিশ্রিত স্বরে বললেন,
” তোমার মতো অমানুষ সমাজের জন্য ক্ষতিকারক। পুলিশে দেবো তোমায়। তোমাকে তো আমি.. ”
আর বলা হলো। স্ত্রীর হাতে জীবনে প্রথমবারের মতো আঘাত। পুরুষালি সত্তা চিৎকার করে উঠলো। গরম হলো র-ক্ত। স্বল্প সময়ের মধ্যেই পা-গলাটে কুকুরের ন্যায় আঘাতে আঘাতে চুরমার করে দিলেন এক প্রতিবাদী নারীকে। র ক্তে র-ঞ্জিত হতে লাগলো শুভ্র রঙা টাইলস। এক নারীর করুণ ভ-য়ানক আর্তনাদ চাপা পড়ে গেল চার দেয়ালের মাঝে। জাগতিক হুঁশ হারিয়ে জহির তখন বে:ল্ট দিয়ে আঘাত করে চলেছেন।
অকস্মাৎ! পাপের বিনাশ যে অবধারিত। ক্ষি প্র গতিতে বাবা নামক ন*রপশুকে মায়ের কাছ থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেললো রাহিদ। মেঝেতে ছিটকে পড়ে কপালে আঘাত পেলেন জহির নামক পশুটি। আতঙ্কিত রাহিদ দু হাতে জাপটে ধরলো জন্মদাত্রী মা’কে। চিৎকার করে ডাকতে লাগলো মা’কে। র ক্তে র-ঞ্জিত মমতাময়ী মা সাড়া দিলো না। বন্ধ তার চক্ষু। ভয়ে আতঙ্কে উ:ন্মাদ হয়ে গেল রাহিদ। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে শক্তপোক্ত দু হাতে পাঁজাকোলে তুলে নিলো মা’কে। মায়ের অচেতন মুখখানি মিশে তার প্রশস্ত বুকে। দ্রুত পায়ে ঘর হতে মা’কে নিয়ে বেরিয়ে গেল রাহিদ। আর জহির? পুলিশের দুই পালোয়ান মতো অফিসার টেনেহিঁচড়ে তাকে নিয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে বিরূপ পরিস্থিতি দেখেছে পুলিশ সদস্যরা। স্ট্রং কেস তারা নিজেরাই বানিয়ে নেবে। জহির নামক প-শুর দ্য এন্ড ঘনিয়ে এলো বলে।
.
আঁধারিয়া রজনী। হাসপাতালের ওয়েটিং জোন এ বসে বাকশূন্য রাহিদ। নিঃশব্দে কপোল ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু বিন্দু। বাঁ পাশেই বসে ছোট বোন রায়না। ভাইকে জড়িয়ে সশব্দে কেঁদে চলেছে মেয়েটা। মায়ের এ কি হয়ে গেল? ভালো মানুষ দেখে গেল বাড়িতে। সে-ই মা আজ র-ক্তাক্ত অচেতন অবস্থায় সফেদ বিছানায় পড়ে। তার চিকিৎসা চলছে। বাবা নামক মানুষটি এতটা নিচ! পশু! মা’কে একটুও ছাড় দিলো না। কুকুরের মতো…! ক্রন্দন আরো বৃদ্ধি পেল। হাউমাউ করে কেঁদে চলেছে রায়না। রাহিদ কিচ্ছুটি বললো না। বাঁধাও দিলো না। পরিস্থিতি অনুধাবন করে এগিয়ে গেলেন আবেগপ্রবণ মালিহা। ওকে টেনে দাঁড় করালেন। জড়িয়ে নিলেন বুকে। মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন। ইনায়া স্বল্প দূরত্বে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। নীরবে কাঁদছে। আর কত ঝড় উঠবে তাদের জীবনে?
বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। ইরহামের নির্দেশে পুরো হসপিটাল সুরক্ষিত বলয়ে আবদ্ধ। চারিধারে সতর্ক ভঙ্গিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিরাপত্তা রক্ষীরা। ব্যস্ত ইরহাম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে হসপিটাল কতৃপক্ষের সঙ্গে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কথা বললো। মামীর জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা, সেরা চিকিৎসকের ব্যবস্থা করলো। ইরহাম চৌধুরীর মামী হয় পল্লবী। তার চিকিৎসায় একটুও হেলাফেলা বরদাস্ত করবে না সে। সর্বোৎকৃষ্ট চিকিৎসা নিশ্চিত করে তবেই শান্ত হলো। উঁহু ঠিক শান্ত নয়। এ প্রলয় সৃষ্টিকারী ঝড় ওঠার পূর্বাভাস। অত্যধিক শান্ত। নীরব। দু চোখে তখন আ-গ্নেয়গিরির উত্তাপ। দপদপ করে জ্বলছে রগ। লহমায় ধ্বং স করে দেবে সব। ছাড়বে না একটাও ন:রপশুকে।
.
রাত তখন দশটা বেজে বিশ মিনিট। পল্লবীর শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত। শরীরে অসংখ্য আ’ঘাতের চিহ্ন। আইসিইউতে রয়েছে সে। তার চিকিৎসার দায়িত্বে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এক বয়স্ক ডক্টর। সেরা চিকিৎসাসেবা প্রদান করে চলেছে।
তৃতীয়তলায় কাঁচের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ইরহাম। নভোনীল চক্ষু জোড়া তাকিয়ে বাহিরে। রাতের শহর দেখছে সে। আঁধারে চকচক করে চলেছে তার শুভ্র অবয়ব। বহিরাগত কৃত্রিম আলোকছটা আছড়ে পড়ছে সুঠামদেহে। মস্তিষ্কে এক ঝুড়ি চিন্তার আনাগোনা। মিলছে না একদণ্ড স্বস্তি। প্রহেলিকার মায়াজালে আঁটকে সমস্ত ক্লু। ধরাছোঁয়ার বাহিরে সমস্ত আশার আলো। এ কোনো দুর্ভেদ্য জালে আঁটকে পড়লো সে! যখনই একটু আশার আলো দেখছে তখনই হারিয়ে যাচ্ছে আলোর হাতছানি। নানারকম চিন্তায় জর্জরিত মানুষটি পাশে কারোর উপস্থিতি টের পেল। তাকালো ডানে। দুঃখ ভারাক্রান্ত রাহিদ দাঁড়িয়ে। চোখমুখ লাল। কিছু না বলে ওর পানে বাড়িয়ে দিলো নিজের মোবাইল। ইরহাম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে মোবাইলটি হাতে নিলো। অতিবাহিত হলো কিছু মুহূর্ত। বি:স্ফোরিত নজরে তাকিয়ে ইরহাম। ইতিবাচক মাথা নেড়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরলো রাহিদ। নোনাজলে ভিজে যাচ্ছে ইরহামের কাঁধের দিকের পাঞ্জাবি। অবিশ্বাস্য চাহনিতে মোবাইলের পানে তাকিয়ে মানুষটি। অবশেষে ধরা দিলো আলোর হাতছানি! এবার জমবে খেলা।
” আর একটু ধৈর্য ধরো হৃদরাণী। আসছে তোমার ইরহাম। ”
চলবে.
[ অবশেষে আশার আলো ধরা দিলো। উত্তেজনাময় একটি পর্ব হতে চলেছে আগামী পর্ব। কি মনে হয় বন্ধুগণ? বন্দিদশা হতে মিলবে কি মুক্তি? ইরহাম কি পারবে তার হৃদরাণীকে উদ্ধার করতে? প্রাপ্তমনস্ক রোমান্টিক-থ্রিলার ঘরানার উপন্যাস এটি। কাহিনীর স্বার্থে বেশকিছু নেতিবাচক, ঘৃণ্য দৃশ্যাবলী আসছে। তাহিরাহ্ এসবের ঘোর বিরোধী। কোনোরূপ ভাবেই নারীদের অবমাননা কিংবা কুরুচিপূর্ণ ভাষা সমর্থন করে না। কাহিনীর স্বার্থে এসবের প্রয়োগ হচ্ছে। আশা করি পাঠকবৃন্দ বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ সবাইকে পাশে থাকার জন্য। আসসালামু আলাইকুম। ]
♠️♠️ পাঠক বন্ধুরা….
লেখিকার লেখা গল্প-উপন্যাস সম্পর্কিত ছোট-বড় অনুভূতি ব্যক্তকরণ, গল্প নিয়ে আলোচনা, ভুলত্রুটি শুধরে দেয়া, রিভিউ প্রদান এবং গল্পের চরিত্র-দৃশ্য নিয়ে মতামত পেশ করতে জয়েন করুন আমাদের গল্প সংক্রান্ত গ্রুপে…
গ্রুপ লিংক 🍁
https://www.facebook.com/groups/499389245208190/?ref=share