মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি #দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_২৪ ( শেষাংশ )

0
697

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২৪ ( শেষাংশ )

বন্দিদশা হতে ফিরে আসার পর হৃদির জীবনটা সহজ ছিল না। প্রতিনিয়ত পাড়া প্রতিবেশী, সহপাঠী এমনকি সম্মানীয় শিক্ষকদের কটূক্তির শিকার হতে হয়েছে তাকে। মানুষগুলো কেমন অদ্ভুত চাহনিতে তাকিয়ে ওকে ক্ষতবিক্ষত করে যাচ্ছিল। আ’ক্রমণ করছিল দূষিত শব্দ বাণে। সে সময় পাশে থেকে মনোবল বৃদ্ধি করেছে পরিবার, বন্ধুবান্ধব। তার একান্ত পুরুষ। শিরায় শিরায় ছড়িয়ে দিয়েছে ইতিবাচক উদ্দীপনা। তেমনই এক স্মরণীয় প্রহর, ইরহাম ও হৃদির প্রথম বিবাহবার্ষিকী। অচেনা দু’জন হতে হৃদয়ের সিংহাসনে আধিপত্য বিস্তার। দেখতে দেখতে অতিবাহিত হলো বিবাহিত জীবনের বারো মাস। বায়ান্ন টি সপ্তাহ। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে ঘটা করে কোনো বড় আয়োজন করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলো ইরহাম। বিষয়টিতে মনোক্ষুণ্ন হলো হৃদির। এই দিনটি যে তাদের জন্য অত্যন্ত মধুময়, স্মরণীয় এক দিন। বিবাহিত জীবনের প্রথম বর্ষ অতিক্রম। দিনটিকে কেন্দ্র করে কত কি পরিকল্পনা! আকাঙ্ক্ষা। সবটা বিনা কারণে ধূলিসাৎ হবে! কোনোরূপ বিশেষ আয়োজন থাকবে না? এ কেমন কথা? লহমায় কালো মেঘে ঢাকা পড়লো সুশ্রী বদন। বিবাহবার্ষিকীর আগের রাত থেকেই অভিমানী কন্যার অভিমান পাহাড় ছুঁই ছুঁই। রাতে স্বামীর সঙ্গে ভালোমন্দ স্বাভাবিক কথা অবধি বললো না। অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুলো। কিন্তু এমপি সাহেব তা বরদাস্ত করলে তো! তার ভাষ্যমতে,

‘ যত মান অভিমান দিনের মধ্যেই মিটিয়ে নেবে। রাতটুকু একান্ত আমাদের। সেখানে বিন্দুমাত্র দূরত্ব বরদাস্ত করার মতো মহানুভব নয় এই ইরহাম। ‘

ব্যাস। স্ত্রীর অভিমান অগ্রাহ্য করে তাকে বাহুডোরে আগলে নিলো ইরহাম। ছটফট করতে লাগলো মেয়েটি। ব্যর্থ নিজেকে ছাড়াতে। শক্তপোক্ত দু’টো হাতের ঘেরাটোপে বন্দী অবস্থা। রূদ্ধ শ্বাস প্রশ্বাস। হাঁসফাঁস করে উঠলো হৃদি,

” উফ্! ছাড়ুন না। ”

ছাড়লো না ইরহাম। তবে মৃদু আলগা হলো বন্ধন। স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল হৃদি। এদিকে নি-ষ্ঠুর মানবের ন্যায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই নিদ্রায় তলিয়ে গেল ইরহাম। এমনতর রূপ সত্যিই অপ্রত্যাশিত ছিল। দুঃখে কষ্টে অশ্রুবিন্দু জমলো চোখে। আধ ঘন্টার মতো জোরপূর্বক অশ্রু বিসর্জন দিলো হৃদি। তার ইরহাম এতটা বর্বর কি করে হতে পারে! স্ত্রীর দুঃখকষ্টের বিন্দুমাত্র পরোয়া না করে এভাবে ঘুমিয়ে পড়লো! অভদ্র, নি:ষ্ঠুর, পঁচা লোক! আরো কত কি সম্বোধন! মিনিট ত্রিশেক বাদে বাম হাতের উল্টো পিঠে অক্ষিকোলে আগত বিন্দু বিন্দু নোনাজল মুছে ফেললো মেয়েটা। ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে স্বামীর বুকেই মাথা এলিয়ে দিলো। পাড়ি জমালো ঘুমের রাজ্যে। যত যাই হোক না কেন। এই পঁচা মানুষটির প্রশস্ত বক্ষপট ই তার পরম শান্তির আশ্রয়স্থল। ভরসার আচ্ছাদন।

.

দিনমণির কিরণে উজ্জ্বল ধরিত্রী। সৃষ্টিকর্তার নিয়ম মোতাবেক আগমন হলো এক নতুন দিনের। সকাল হতেই দুই পরিবারের সদস্যরা হৃদিকে বিবাহবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। কেউ সরাসরি কেউবা ফোনালাপে। মালিহা পুত্রবধূর ললাটে চুমু এঁকে দোয়া করলেন ওদের সুখী সুন্দর দাম্পত্য জীবনের জন্য। দীর্ঘায়ুর কামনা করে।

” থ্যাংকস অ্যা লট মা। ”

হৃদি আহ্লাদী হয়ে শাশুড়ি মা’কে আলিঙ্গন করলো। চুপটি করে অনুভব করতে লাগলো মাতৃ সুবাস। দিনটা নিঃসন্দেহে চমৎকার ছিল! বর নামক বর্বর লোকটি যদিওবা নিস্প্রভ আচরণ করছিল। সে তো সকাল হতেই রাজকার্য করতে বাইরে বেরিয়েছে। হৃদি একাকী ছিল। ইনুটাও নেই। নিজ সংসারে ব্যস্ত। দুপুর দু’টো নাগাদ হৃদি রওনা হলো বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে। নীতি ও নিদিশা ফোন করে যেতে বলেছে। সেখানে গিয়ে বেশ সুন্দর করে সময় কাটলো। ফারহানা ও রায়হান দম্পতি কনিষ্ঠ কন্যাকে নিউ কালেকশনের পোশাক উপহার দিলেন। বাকিরাও টুকটাক উপহার দিলো। সানন্দে তা গ্রহণ করলো হৃদি। বাবার বাড়ি দুর্দান্ত সময় কাটিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা নাগাদ ‘ আনন্দাঙ্গন ‘ ফিরে এলো। ফিরেই হলো হতবিহ্বল!

” হ্যাপি অ্যানিভার্সারি! ”

মধুরতম কলরবে মুখরিত পরিবেশ। জমকালো আয়োজনে উজ্জ্বল গোটা ঘর। লিভিং রুমে নিকটাত্মীয়দের উপস্থিতি। সমস্বরে ওকে বিবাহবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানাচ্ছে তারা। চারিধারে মনের মতো সাজসজ্জা। কৃত্রিম আলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে গাত্র। আবেগে আপ্লুত হৃদির তৃষ্ণার্ত চক্ষু জোড়া খুঁজে বেড়াচ্ছে একান্ত জনকে। এতসব আয়োজন কখন করলো তার বর্বর বরটি? কোথায় লুকিয়ে সে! ব্যর্থ হলো চক্ষুদ্বয়। খুঁজে পেল না তারে। হৃদির নিকটে এগিয়ে এলো ইনায়া, রায়না। আদুরে ভাবীকে নিয়ে দোতলায় চলে গেল। অতিবাহিত হলো কিছু মুহূর্ত। ‘ আনন্দাঙ্গন ‘ এ পৌঁছালো হৃদির পরিবার। মালিহা ও পল্লবী তাদের সাদরে অভ্যর্থনা জানালেন। হলো কুশল বিনিময়। অতঃপর এলো সে-ই কাঙ্ক্ষিত লগ্ন। সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো হৃ’হাম! সিঁড়ি বেয়ে পাশাপাশি নেমে আসছে ইরহাম ও তার হৃদরাণী। হৃদির পড়নে আজ ল্যাভেন্ডার শিমার সিল্ক জর্জেট। স্টোনস, সিকুইনস, রেশম জরি থ্রেড এমব্রয়ডারি স্ক্যালপ বর্ডারযুক্ত শাড়ির আবরণ। থ্রি কোয়ার্টার ব্লাউজটি সিল্কের কাঁচা বেগুনি রঙা। কৃষ্ণবর্ণ কেশ আবৃত ল্যাভেন্ডার রঙা হিজাবের অন্তরালে। মুখশ্রীতে কৃত্রিম প্রসাধনীর ছোঁয়া। পাশেই তার জীবনসঙ্গী ইরহাম। একান্ত মানবের পড়নে অফ হোয়াইট রঙের কুর্তা। যার ম্যান্ডারিন কলার। ফুল স্লিভ। প্রশস্ত বক্ষপটে জড়িয়ে এমব্রয়ডারিযুক্ত রৌপ্য বর্ণের হাফ স্লিভ নেহেরু জ্যাকেট। সাথে একই বর্ণের পাজামা। নভোনীল চক্ষু জোড়া আড়াল হয়েছে রিমলেস চশমায়। আপনজনদের চোখ জুড়িয়ে গেল দু’জনকে পাশাপাশি দেখে। মালিহা দূর হতে আদুরে চুমু এঁকে দিলেন। দোয়া করলেন মহান স্রষ্টার নিকটে।

হৃদি কিছু চেয়েছে এবং তা সাধ্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও পূরণ করবে না ইরহাম, এ যে অসম্ভব। তাই তো হৃদরাণীর ছোট্ট আবদারটুকু নিভৃতে পূরণ করলো। কতদিন পর একত্রিত হলো আপনজনেরা। বাহিরের লোক হাতেগোনা কয়েকজন উপস্থিত। সকলের উপস্থিতিতে আনন্দঘন মুহুর্ত অতিবাহিত হলো। অর্ধাঙ্গীর অধরকোলে লেপ্টে মোহনীয় দ্যুতি। স্বল্প দূরত্বে দাঁড়িয়ে ইরহাম। বিমোহিত নয়ন যুগল। দৃষ্টি ফেরানো যে আজ দুষ্কর। লাজুক কন্যার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি বিষয়টি। তাই তো আর’ক্ত আভা ছড়িয়ে দু গালে। ওষ্ঠপুটে লজ্জালু রেখা। সকলের অগোচরে হলো তাদের চোখে চোখে আলাপণ। চোখের চাহনিতেই অসীম মুগ্ধতা প্রকাশ করলো মানুষটি। লজ্জা মিশ্রিত হাসি উপহার দিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো হৃদি।

এ কেমন হৃদয় হরণকারী চাহনি যা ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের অলিগলি!

সর্বদা পরিকল্পনা মাফিক সবকিছু সংঘটিত হয় না। তাই তো বহিরাগত অতিথিদের যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কটূক্তির শিকার হলো হৃদি। সে-ই পুরনো আলাপচারিতা। অপ:হরণকালীন সময় নিয়ে শব্দের ভ-য়ঙ্কর কাটাছেঁড়া। নিমিষেই মুখে আঁধার ঘনিয়ে এলো। ভায়রা ভাই ফাহিমের সঙ্গে কথা বলছিল ইরহাম। কিন্তু দৃষ্টি নিবদ্ধ অর্ধাঙ্গীর পানে। ফলস্বরূপ সহজেই লক্ষ্য করলো হৃদির পরিবর্তিত মুখশ্রী। বুদ্ধিদীপ্ত মানুষটির বিষয়টি অনুধাবন করতে সময় লাগলো না। সহজেই মিলে গেল উত্তর। শক্ত হলো চোয়াল। আর বিলম্ব করলো না। পার্টি সমাপ্ত ঘোষণা করা হলো। একে একে প্রস্থান করলো অতিথিবৃন্দ। অনুরোধ করা সত্ত্বেও রইলো না রায়হান শেখ ও তার পরিবার। তারাও হাসিমুখে বিদায় নিলো। অতঃপর এক মুহুর্ত বিলম্ব না করে স্ত্রীর সন্নিকটে এলো ইরহাম। আঁকড়ে ধরলো কোমল হাতটি। চমকিত নেত্রে তাকিয়ে হৃদি! সকলের উপস্থিতিতে এসব কি করছে ইরহাম! অস্ফুট স্বরে কিছু বলার পূর্বেই শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছালো গম্ভীর স্বর,

” রুমে চলো। ”

স্ত্রীর কোমল হাতটি ধরে সকলের দৃষ্টি অবজ্ঞা করে ঘরের উদ্দেশ্যে হাঁটতে আরম্ভ করলো ইরহাম। দ্বিধাগ্রস্ত হৃদি পথ অনুসরণ করে স্বামীর সঙ্গে চলতে লাগলো। মালিহা ও পল্লবী একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন। বুঝে উঠতে পারলেন না ছেলের এমনতর আকস্মিক আচরণের মূল হেতু কি! অবুঝ রায়না ইরহাম ভাইয়ের এমন অপ্রত্যাশিত আচরণের ভিন্ন অর্থ উদঘাটন করলো। পাশে দাঁড়িয়ে ইনায়া। ফিসফিসিয়ে তার কানে কানে বললো,

” ভাবীর গর্জিয়াস লুক দেখে ভাইয়া বোধহয় আউট অফ কন্ট্রোল! এজন্যই তড়িঘড়ি করে রুমে ছুটলো। ”

রায়না হাতের তেলোয় ওষ্ঠাধর লুকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। তবে চিন্তিত ইনায়া। ওর দৃষ্টিতে বিষয়টি ভিন্ন কিছু। কিন্তু কি?

.

নিকষকৃষ্ণ রজনী। বিছানায় বসে ইরহাম, হৃদি। দু’জনের সাজসজ্জা অনেকাংশ দূরীভূত। নেহেরু জ্যাকেট , হিজাব পড়ে রয়েছে ডিভানে। মুখশ্রীতে কৃত্রিম প্রসাধনীর প্রলেপ প্রায় বিলুপ্ত। মুছে ফেলা হয়েছে। মানুষটির চশমাও অনুপস্থিত চোখে। মুখোমুখি বসে তারা দু’জন। পুরুষালি হাতে বন্দী পেলব দু’টো হাত। নয়নে মিলিত নয়ন। কোমল স্বরে বলে চলেছে ইরহাম,

” জানো আমাদের সমাজে দুই ধরনের লোক থাকে। যারা আমাদের জন্য হানিকারক। একপক্ষ থাকে তারা অতি মিষ্টিমধুর কথায় আমাদের মন কেড়ে নেয়। ভালোমন্দ সবেতে প্রশংসা। কখনো ভুলত্রুটি শুধরে দেয়ার চেষ্টা করে না। বরং তোমাকে ভুলে ভরপুর পথে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এরা কখনো আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না। এদের মধুর কথাবার্তা আসলে বি;ষের চেয়েও বেশি আ-ক্রমণাত্মক। ক্ষতিকর। বুঝতে পারছো আমি কি বলছি? ”

ইতিবাচক মাথা নাড়ল হৃদি। হ্যাঁ সে বুঝতে পারছে। আমাদের সমাজে এমন ছদ্মবেশী শত্রুর আনাগোনা অধিক। এরা আসলেই ক্ষতিকারক। এদের সঙ্গ লাভে ভালোর চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়ে থাকে। হৃদি মনোযোগ দিলো স্বামীর কথায়,

” দ্বিতীয়ত সে-ই শ্রেণীর লোক। এদের মুখনিঃসৃত প্রতিটি শব্দ বি-ষাক্ত। এরা কারোর ভালো সহ্য করতে পারে না। কারোর সফলতায় খুশি হতে পারে না। সবসময় অন্যকে আঘাত করার অজুহাত খুঁজে বেড়ায়। কটূক্তি করে বিপরীত দিকে থাকা মানুষটিকে বি;ধ্বস্ত করে তোলে। সবসময় মনে রাখবে হৃদি। জীবনে যদি সফলকাম হতে চাও, সুখী হতে চাও এই দুই শ্রেণীর লোকেদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবে। এরা বিপদজ্জনক। তোমায় এমন রূপে নিঃশেষ করে দেবে যে তুমি টেরও পাবে না কবে কখন কিভাবে তোমার অস্তিত্বটা মাটিতে মিশে গেল। ”

হৃদি মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় শ্রবণ করে চলেছে প্রতিটি শব্দ। কি দারুণ, অর্থপূর্ণ শব্দমালা! একজন মানুষকে যথার্থভাবে অনুপ্রাণিত, উদ্দীপ্ত করার জন্য কিছু শক্তিশালী শব্দ ই যথেষ্ট। একজনকে ঘোর অমানিশা হতে ছিনিয়ে আনতে পারে কিছু ইতিবাচক শব্দ। তেমনিভাবে নেতিবাচক শব্দগুচ্ছ আঁধার অতল গহ্বরে ডুবিয়ে দিতেও পারে। এখন তুমি আলোর হাতছানি আঁকড়ে বাঁচবে নাকি তলিয়ে যাবে আঁধারে, সম্পূর্ণ তোমার ওপর নির্ভর করছে‌। তোমার মানসিক শক্তির ওপর নির্ভর করছে।

” হৃদি! ”

অত্যন্ত কোমল-হৃদয়স্পর্শী সেই ডাক! উপেক্ষা করার বিন্দুতুল্য সাধ্য নেই মেয়েটির। প্রেমময় চাহনিতে তাকালো হৃদি। চোখে চোখ রাখলো। ছুঁয়ে গেল অন্তরের গহীনে। স্ত্রীর বাঁ গালে হাতটি স্থাপন করলো ইরহাম। আবেশে মুদিত হলো মেয়েটির আঁখি পল্লব। স্বামীর হাতের সঙ্গে আরেকটু গাঢ় করে মিশিয়ে নিলো গাল।

” কথা দাও। কখনো কারোর বাজে মন্তব্যে ভেঙ্গে পড়বে না! তুমি জানো, আমি জানি, আল্লাহ্ জানে তুমি পবিত্র। নিষ্কলঙ্ক। শত্রুর কু ছায়া অবধি তোমায় ছুঁতে পারেনি। তবে কেন লোকেদের কথায় কান দেবে? পাছে লোকে কত কি বলে। সব শোনা তো আমাদের জন্য আবশ্যক নয়। তাহলে কেন শুনবো আমরা? ওরা দু’টো বাজে বকলে আমরা তিনটে ভালো বলবো। বুক ফুলিয়ে সত্য বলবো। কারণ আমরা জানি আমরা সঠিক। ভুল নই। তবে কেন পাছে লোকে ভয়? বি স্ট্রং। গোটা দুনিয়া ভার মে যাক। জেনে রেখো তোমার স্বামী ও পরিবার রয়েছে তোমার পাশে। উই আর অলওয়েজ উইথ ইয়্যু মাই গার্ল। ডোন্ট বি উইক। ”

স্বামীর মুখনিঃসৃত প্রতিটি অনুপ্রেরণাদায়ক শব্দমালা হৃদয় ছুঁয়ে মস্তিষ্কে গেঁথে গেল। সীমাহীন ভালোলাগায় বক্ষপিঞ্জরের অন্তরালে লুকায়িত প্রণয় উদ্যান হতে মিষ্টিমধুর গুঞ্জন ভেসে আসছে। চোখেমুখে উজ্জ্বলতা। এক বুক গর্ব জীবনসঙ্গীর জন্যে। আবেগে আপ্লুত তনুমন। কম্পিত ওষ্ঠাধর। অক্ষিকোল গড়িয়ে অশ্রু নামলো গালে। বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ না করে স্বামীর প্রশস্ত বক্ষপটে আছড়ে পড়লো আগ্রাসী ঢেউয়ের ন্যায়। পেলব দু হাত আঁকড়ে ধরলো পিঠ। পুরোপুরি মিশে যেতে চাইছে বক্ষস্থলে। প্রবেশ করতে চাইছে স্বামীর মনের অরণ্যে। সেথায় অসংখ্য প্রেমময় বৃক্ষরাজির ভীড়ে সাজাবে এক ছোট্ট সুখের আবাসন। ইরহামও নিজের সনে আঁকড়ে ধরলো স্ত্রীকে। উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ কপোত-কপোতী। আবেগের আতিশয্যে স্বামীর কাঁধে ক্ষুদ্র পরশ অঙ্কন করলো হৃদি। শিউরে উঠলো ইরহাম। অনুভূতির স্ফু’লিঙ্গ জ্ব’লে উঠলো মনের অরণ্যে।

চলবে.

[ পাঠকবৃন্দ! প্রেমময় মুহূর্ত চাই? কমেন্ট করে জানাবেন কিন্তু। শীঘ্রই কাহিনীতে নতুন মোড় নেবে। আসতে চলেছে অভাবনীয় টুইস্ট। পাশে থাকবেন তো সকলে? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here