#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২৯
তমসাচ্ছন্ন রজনী। বিছানায় বসে হৃদি। উরুর ওপর মাথা রেখে শুয়ে তার একান্ত পুরুষ। হৃদি হৃদয়কাড়া এক হাসি উপহার দিয়ে বললো,
” আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো কেটেছে। বাবুর আব্বুর দিনটি কেমন কেটেছে? ”
বলতে না বলতেই ধক করে উঠলো হৃদযন্ত্রটি। মানসপটে ভেসে উঠলো টেলিভিশনের পর্দায় প্রদর্শিত সংবাদ। ইরহাম চমকালো স্ত্রীর আকস্মিক পরিবর্তন দেখে। তবে মুহুর্তের মধ্যেই বিষয়টি বোধগম্য হলো। দ্রুত উঠে বসলো মানুষটি। দু হাতে আঁকড়ে ধরলো স্ত্রীর কাঁধ। ঘুরালো নিজের পানে। অস্থির মুখপানে তাকিয়ে শান্ত কোমল স্বরে বললো,
” হৃদি! তাকাও আমার দিকে। দ্যাখো। ”
হৃদি কেমন অস্থির চিত্তে তাকালো। ভয় হচ্ছে বড়। কি যেন খামচে ধরছে হৃৎপিণ্ড। চোখে চোখ রাখলো ইরহাম। এক হাত স্থাপিত সঙ্গিনীর বাম গালে। নম্র স্বরে বললো,
” শান্ত হও। ব্রিথ। কিচ্ছু হয়নি। ওকে? ওটা সাধারণ বিক্ষোভ ছিল। ”
” ছিল না। ”
অস্ফুট স্বরে আপত্তি জানালো হৃদি। চোখের পলক ঝাপটালো মানুষটি,
” ছিল। ইটস্ নরমাল। ”
” আ আপনি ওসবের পেছনে আছেন তাই না? এ কি করে ফেললেন? খন্দকার আজগর যে এবার খুব ক্ষে-পে যাবে। ”
আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছে মেয়েটা। ভীতসন্ত্রস্ত ভাব। চোখেমুখে জমায়েত বিন্দু বিন্দু ঘাম। শ্বাস প্রশ্বাসের গতিবেগ দ্রুততর। কোনোরূপ নিজেকে সামলিয়ে স্বেচ্ছায় আরেকটু সন্নিকটে এলো। স্বামীর গালে এক হাত রেখে ভীত স্বরে জানালো নিজ অনুভূতি,
” আমার খুব ভয় করছে। কোনো বিপদ.. ”
অসম্পূর্ণ রইলো বাক্য। দূরত্ব মিটিয়ে নিলো ইরহাম। কপালে ঠেকলো কপাল। আবেশে মুদিত হলো দু জোড়া চোখ। মিহি স্বরে আশ্বস্ত করলো ইরহাম,
” ভয় পেয়ো না জান। ইনশাআল্লাহ্ সফলকাম হবে ন্যায়। ”
হৃদি ভয়ডরে বিধ্বস্ত। অস্থির অভ্যন্তর। অনিয়ন্ত্রিত শ্বাস প্রশ্বাসের গতিবেগ। আরো কিছু বলতে উদ্যত হলো। কিন্তু আদুরে ভঙ্গিতে বাঁধাপ্রাপ্ত হলো। স্বামীর দু হাতের অঞ্জলীতে ভরে মুখখানি। অধরে ছুঁয়ে গেল স্বামীর ওষ্ঠ। মাত্র কয়েক সেকেন্ডব্যাপী ছিল সে ছোঁয়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রসঙ্গ বদল করলো ইরহাম। জোরপূর্বক শব্দহীন হাসলো। দুষ্টুমি করে বললো,
” আর কতদিন আপনি আজ্ঞে চলবে বিবিজান? ”
হৃদি কপাল হতে কপাল সরিয়ে নিলো। তাকালো জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে। প্রশ্নটি ঠিক বোধগম্য হলো না তার। ইরহাম অনায়াসে তা বুঝতে পারলো। তাই আস্তে ধীরে আয়েশ করে স্ত্রীর উরুর ওপর পুনরায় মাথা এলিয়ে দিলো। বলতে লাগলো,
” আমি ব্যতীত বাড়ির সকলকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করা হয়। এমনকি আপনার শ্বশুর পাপাকেও। অথচ আমি। আপনার অধম স্বামী। আজ পর্যন্ত তুমির ‘তু’ অবধি শুনতে পেলাম না। ইজ ইট ফেয়ার? ”
এবার বিষয়টি বোধগম্য হলো। কিয়ৎক্ষণ পূর্বের ভীতি ভুলে নিঃশব্দে হেসে উঠলো মেয়েটি। পেলব আঙ্গুল ডুবিয়ে দিলো স্বামীর মসৃণ চুলে। আলতো করে আঙ্গুল চালনা করতে লাগলো কেশরাজ্যে। আরামদায়ক স্পর্শে বুঁজে আসছে আঁখিপল্লব। তবুও স্ত্রীর পানে স্থির বিমুগ্ধ চাহনি।
” ওহ্ আচ্ছা? এজন্য এমপি সাহেবের অভিযোগ রয়েছে? ”
” জ্বি রয়েছে। ছোটোখাটো নয়। বেশ বড় অভিযোগ। ক’দিন পর আমাদের বাবুসোনা আসছে। সে বিষয়টা কোন চোখে দেখবে বলো তো? ”
হেসে উঠলো হৃদি। স্বামীর ললাটে ক্ষুদ্র চুমু এঁকে দিলো।
” আচ্ছা? এখন নিজের মনোবাসনা বাবুর নামে চালিয়ে দিচ্ছেন? ”
” মোটেও না। ” সরাসরি আপত্তি পোষণ করলো এমপি সাহেব।
হৃদি সরু চোখে তাকিয়ে,
” মিথ্যা বলা পাপ। ”
” হ্যাঁ তো। আমি কখন বললাম ওটা আমার মনোবাসনা নয়? আমি চাই। বেলাশেষে যখন ক্লান্ত দেহে বাড়ি ফিরবো। তখন একগ্লাস পানি হাতে কাছে আসবে তুমি। আদুরে কণ্ঠে ‘তুমি’ বলে আমার খোঁজখবর নেবে। পোশাকআশাক এগিয়ে দেবে। দূর করবে সারাদিনের সমস্ত ক্লান্তি। চাওয়াটা কি খুব বেশিই হয়ে গেল? ”
কেমন আহ্লাদী হয়ে তাকিয়ে মানুষটি। যা কোমল হৃদয়ের অধিকারিণীর হৃদয়ে সরাসরি প্রেমাঘাত করে। বারবার। সহস্রবার। হৃদি চক্ষু ফেরাতে ব্যর্থ হলো। চুলের ভাঁজে আঙ্গুল চালনা করতে করতে মিহি স্বরে বলল,
” ইনশাআল্লাহ্ শীঘ্রই আপনার এই চাওয়াটা পূরণ হতে চলেছে। ”
” আজ এখুনি নয় কেন? ”
অবিশ্বাস্য ভাবে কেমন শিশুসুলভ আচরণ করছে কাঠখোট্টা মানুষটা। লহমায় চাহনিতে অবিশ্বাস হটে জায়গা করে নিলো মুগ্ধতা! হৃদি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে! বোঝানোর ভঙ্গিতে বললো,
” এক বছরের বেশি সময় ধরে অভ্যাস। একটু সময় লাগবে। এতটুকু সময় নিই? ”
আবদার লুকিয়ে কণ্ঠস্বরে। অগত্যা ইতিবাচক সম্মতি জানালো ইরহাম,
” ঠিক আছে। বেশি দেরি যেন না হয়। ”
হৃদি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। প্রসন্ন হলো মানুষটি। শুলো অর্ধাঙ্গীর উদর বরাবর মুখ করে। সেথায় ছোট ছোট পরশ অঙ্কন করলো। অনাগত সন্তানকে আদর করে দিলো। মিহি স্বরে স্ত্রীকে বললো,
” হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে ভালোমতো বসো। কোনো প্রবলেম হলে সাথে সাথে বলবে। ঠিক আছে? ”
” ঠিক আছে বাবা। আপনি এখন একটু বিশ্রাম নিন তো। সারাক্ষণ শুধু টইটই। শরীরটাকে একেবারে মেশিন বানিয়ে ফেলেছেন। বিরামহীন চলছে। ”
হেসে বিষয়টি এড়িয়ে গেল ইরহাম। আরাম করে শুলো। নিশ্চিত করলো স্ত্রী, অনাগত সন্তান যেন তার দ্বারা বিন্দুমাত্র আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। আস্তে ধীরে বন্ধ হলো অক্ষিপুট। ভাবনায় হাজির হলো আজকের ঘটনাবলী। আজ দিনভর যা হলো তা নিঃসন্দেহে অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। আজগর সাহেবের ক্ষমতাশালী গদি নড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। তন্মধ্যে দেশে ফিরেছে আজগর পুত্র রুদ্রনীল। শিকার ফাঁদে পা দিয়েছে। এবার যা করার শীঘ্রই করতে হবে। এমন সুযোগ দ্বিতীয়টি মিলবে না। বড় ভ-য়ঙ্কর হতে চলেছে এ লড়াই। মহান রবের অনুগ্রহ ব্যতীত সফলতা ধরাছোঁয়ার বাহিরে। ন্যায় ও অন্যায়ের লড়াই চলে আসছে সৃষ্টির আরম্ভ হতে। বরাবরই র-ক্তক্ষয়ী ছিল সে লড়াই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্যায়ের নিকট বারংবার পরাজিত হয়েছে ন্যায়। অবশেষে কোনো এক শুভ লগ্নে মহান রবের অনুগ্রহে জয়লাভ করেছে। রুদ্রনীলের পাপের সাম্রাজ্য কাল থেকে নয় বরং বহু বছর ধরে রাজত্ব করে আসছে। র ক্ত ঝড়িয়েছে অগণিত মানবদেহ হতে। নির্মম-বর্বর পন্থায় অপরাধকর্ম চালিয়ে গেছে। বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই বাপ-বেটার মধ্যে। কম তো রাজত্ব করলো না। প্রত্যেক ক্ষমতাবান বাদশাহ একসময় হারের স্বাদ পেয়েই থাকে। এবার সময় এসেছে তাদের পরাজিত করার। বাংলার মাটিকে কিয়দংশ নিষ্কলঙ্ক করার। ইনশাআল্লাহ্ সফলতা অর্জন করবে সততা-ন্যায়।
•
দিবাবসুর দীপ্তিতে উজ্জ্বল বসূধা। উত্তরার এক অভিজাত রেস্টুরেন্ট। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সেথায় আগমন এমপি সাহেবের। বসে আকর্ষণীয় সোফাসেটে। বিপরীত দিকে বসে এক চেনা পরিচিত ব্যক্তি। দু’জনের মধ্যে আলাপচারিতা চলমান।
” ওকে ফাইন। সি ইয়্যু সুন। ”
বিপরীতে বসা ব্যক্তি বললো,
” আসছি তবে। আসসালামু আলাইকুম। ”
” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ”
সালামের জবাব দিলো ইরহাম। ব্যক্তিটি সৌজন্য সাক্ষাৎ সেরে সেথা হতে বিদায় নিলো। অতঃপর সোফায় আয়েশ করে বসলো ইরহাম। বাঁ হাত উঠিয়ে রাখা। ঠেকে সোফার উর্ধ্বভাগে। ডান হাতে নড়ছে স্পুন। ক্যাপুচিনো এর কাপে স্বাধীন রূপে ঘুরে বেড়াচ্ছে স্পুন’টি। রিমলেস চশমার অন্তরালে বুদ্ধিদীপ্ত নভোনীল চক্ষুদ্বয়। আস্তে ধীরে পর্যবেক্ষণ করে বেড়াচ্ছে চারিপাশ। সব স্বাভাবিক। যেন সে অন্য সকলের মতো এসেছে সেথায়। আসলেই কি তাই? নাকি স্বেচ্ছায় শিকারকে সুযোগ প্রদান? অপেক্ষার প্রহর অতি শীঘ্রই সমাপ্ত হলো। স্লাইডিং ডোর উন্মুক্ত করে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলো সে ব্যক্তি। পড়নে আজও সাহেবি পোশাক। নীলাভ স্যুট। ম্যাচিং শ্যু। চোখে নীলাভ রঙা রে ব্যান এভিয়েটর। একদম ভদ্রলোকের অবতার। অ্যা জেন্টেলম্যান উইথ টু ক্যারেক্টারিস্টিকস্। ব্যক্তিটি রেস্টুরেন্টের প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে গোটা জায়গাটিতে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। অতঃপর তর্জনী নাড়িয়ে এক ক্ষুদ্র ইশারা পেছনে অবস্থিত অধস্তনদের উদ্দেশ্যে। ব্যাস। স্বল্প সময়ের মধ্যেই ফাঁকা হলো পুরো স্থানটি। অবস্থিত মাত্র চার পাঁচ জন কাস্টোমার এখন বাহিরে। গোটা জায়গা জুড়ে পিনপতন নীরবতা। একটি সেফটিপিন মেঝেতে পড়লেও শিউরে উঠবে শ্রবণেন্দ্রিয়। অবশেষে দুই শের এক মঞ্চে। ব্যক্তিটির চলনবলনে সম্পূর্ণ আভিজাত্যের ছাপ। শ্লথ পায়ে এগিয়ে গেল। বসলো কাঙ্ক্ষিত মানুষটির বিপরীত সোফায়।
ইরহাম বিপরীত দিকে কারোর উপস্থিতি উপলব্ধি করেও তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো না। সম্পূর্ণ মনোযোগ বাঁ হাতে থাকা স্মার্টফোনে। ডান হাতে ক্যাপুচিনো কাপ। একটু একটু করে ঠোঁটে ঠেকছে কাপ। পান করছে ক্যাপুচিনো। রুদ্রনীল পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে। আপাদমস্তক দেখে নিচ্ছে চৌধুরীকে। এই তবে সে-ই ইরহাম চৌধুরী! দ্য ফিয়ার অফ ব্লা-ডি ওল্ড ম্যান! পড়নে তো সামান্য কম দামী সাদা পাঞ্জাবি। ব্র্যান্ডেড বলে মনে হচ্ছে না। না পোশাকআশাকে রয়েছে অভিজাত ব্যক্তিত্বের ছাপ! এমন চালচুলোহীন একজন কি করে হলো সাংসদ! তাচ্ছিল্য করে হাসলো রুদ্র। রুদ্রনীল তো পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে। তীক্ষ্ণ নজরে মেপে নিচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বীকে। তবে বিপরীত দিকের প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখনো মোবাইলে মুখ গুঁজে ইরহাম। এক মিনিট, দুই মিনিট। কয়েক মিনিট অপেক্ষা করলো রুদ্র। কোনোরূপ পরিবর্তন নেই। অজানা এক ননসেন্স ফেলো( fellow ) তাকে কিনা অবজ্ঞা করছে! ভাব দেখাচ্ছে! এরূপ অভিব্যক্তি রুদ্রর দেহে বহ্নি শিখা জ্বালিয়ে দিলো। নির্লিপ্ত বদনে বসে তো সে। তবে ভেতরকার অবস্থা অবর্ণনীয়। ফুলে ফেঁপে উঠছে শিরা। এক কোপে ধর থেকে মাথা আলাদা করতে আনচান করছে দু হাত। লালাভ রঙ ছড়িয়ে পড়ছে মুখশ্রীতে। নীরবে অতিবাহিত হলো কিছু মুহূর্ত। অবশেষে মুখ খুললো রুদ্রনীল। বিদ্রুপ করে বললো,
” বিং ঠু(too) স্মার্ট ক্যান বি অ্যা লায়াব্লিটি। ”
অবশেষে দূরীভূত হলো নীরবতা। চোখ তুলে একবার তাকালো ইরহাম। রুদ্রকে দেখে নিলো। স্বভাবসুলভ গম্ভীর স্বরে বললো,
” বিং স্মার্ট ইজ নট অ্যাবাউট শোয়িং অফ, বাট অ্যাবাউট ইউজিং ইয়্যর নলেজ টু হেল্প আদার্স। ”
মুখের ওপর ঠাস-ঠাস জবাব। অন দ্য স্পট শিখিয়ে দিলো কারে কয় স্মার্ট। অপমানে গাঢ় র’ক্তিম রূপ ধারণ করলো মুখ। চক্ষু বুঁজে ঘন শ্বাস ফেললো রুদ্রনীল। তুড়ি বাজিয়ে বিপরীত দিকে বসা মানুষটির দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রয়াস চালালো,
” হেই ইয়্যু। লুক অ্যাট মি অ্যান্ড লিসেন হোয়াট আ’ম সেয়িং।”
হোয়াটস্অ্যাপে ব্যস্ত ইরহাম। ধূর্ত স্বরে বললো,
” আল্লাহ্ দু কান দিয়েছে। অল ওকে। শুনছি আমি। ইয়্যু ক্যারি অন। ”
জোরালো ভাবে টেবিল চাপড়ে দিলো রুদ্রনীল। শব্দ হলো বেশ। কেঁপে উঠলো স্বল্প দূরত্বে দণ্ডায়মান রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার। এসব কি চলছে ওনার রেস্টুরেন্টে! সাংসদ ও খ্যাতিমান ব্যবসায়ী মুখোমুখি বসে। কোথা থেকে কোথায় গড়াচ্ছে তাদের আলাপণ! বোধগম্য হলো না মাঝবয়সী ম্যানেজার সাহেবের।
” তুই কি ভেবেছিস? আমার বাপকে ফাঁ”সানো এত সোজা? ”
অভাবনীয় প্রশ্ন ছিল। অবশেষে কৃপা করে মুখ তুলে তাকালো ইরহাম। স্থির হলো দু জোড়া চোখ। উভয়ের চোখেই তেজদীপ্ত আভা। কঠোর মুখাবয়ব। হালকা হেসে ইরহাম পরিস্থিতি স্বাভাবিক করলো,
” আপনার এই অবান্তর ভ্রান্ত ধারণা কোথা থেকে জন্ম নিল জানতে পারি মিস্টার রুদ্রনীল? ”
” মানে? ” জিজ্ঞাসু নয়নে তাকিয়ে রুদ্র।
” কান টানলে মাথা আসে। বাপকে ধরলে বেটা। হোপ ইয়্যু আন্ডারস্ট্যান্ড? ”
চতুরতার হাস্য রেখা লেপ্টে চৌধুরীর অধরকোলে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো রুদ্র,
” ইয়্যু রা;সকেল! তুই আমাকে ফাঁ’সানোর প্লান করছিস? আ’ম নট অ্যাট অল সরি টু স্যে… তোর বাপ দাদা চৌদ্দ গুষ্টি চেষ্টা করলেও আমার সামান্য একটা লোম বাঁকা করতে পারবে না। আমায় ডেস্ট্রয় করা তো বহু দূর কি বাত। ”
ক্যাপুচিনোতে চুমুক দিয়ে শুধরে দিলো সাংসদ ইরহাম,
” ডোন্ট বি ওভার কনফিডেন্ট। ইটস্ ফেটাল (fatal) ফর ভিক্টোরি। ”
” বাকওয়াস মাত বোল। আমার কনফিডেন্স লেভেল কোথায় আপ ডাউন করবে সেটা তোর মতো দু পয়সার সরকারি গোলামকে বলতে হবে না। ”
শেষোক্ত কথাটায় চামড়া ঝ ল সে গেল যেন। নভোনীল চক্ষুদ্বয়ে ক্রোধের আভাস। অত্যন্ত গম্ভীর স্বরে বললো ইরহাম,
” সরকারি গোলাম হতে পেরে আমি গর্বিত। আফটার অল দেশের জন্য ভালো কিছু করছি। কাপুরুষের মতো দেশদ্রো:হীতা তো করছি না! ”
” ইয়্যু ফা** বিচ! ”
ডান হাত উঁচিয়ে সাবধান করলো ইরহাম,
” আহা। নো গালমন্দ। এটা ভদ্রলোকের জায়গা। কোনো গালির আখড়া নয়। ”
রুদ্রনীল পুনরায় কিছু বলতে উদ্যত হলো তখনই বেজে উঠলো রিংটোন। ইরহাম মোবাইল হাতে নিলো। স্ক্রিনে দেখলো রাহিদ কলিং। একবার তাকালো রুদ্রর পানে। অতঃপর কোনোরূপ সৌজন্যতা প্রদর্শন ব্যতীত কল রিসিভ করে উঠে দাঁড়ালো। কথা বলতে বলতে দাঁড়ালো এক নিরালায়। এতেই আহত সিংহের ন্যায় গর্জে উঠলো রুদ্রনীল। হাউ ডেয়ার হি! খন্দকার রুদ্রনীল মল্লিককে অ্যাটিটিউড দেখাচ্ছে! কোথাকার কোন লাটসাহেব এ! সংসদে জায়গা পেয়ে শাহেনশাহ হয়ে গেছে!
” ইয়্যু ** ম্যান। উড়ে নে। যত পারিস উড়ে নে। ডানা এই ছেঁটে দিলাম বলে। টিল দেন এনজয় দ্য ফ্রিডম। ”
চলবে.
[ সম্পূর্ণ কাল্পনিক প্রেক্ষাপটে রচিত এই উপন্যাস। আশা করি বাস্তবের সঙ্গে মিলাতে গিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না। সকলে আল্লাহ্’র রহমতে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম। ওহ্ হ্যাঁ। স্টিকার কমেন্টের জন্য 🫶 ]
♣️ পাঠক বন্ধুরা….
তাহিরাহ্ ইরাজ এর লেখা গল্প-উপন্যাস সম্পর্কিত ছোট-বড় অনুভূতি ব্যক্তকরণ, গল্প নিয়ে আলোচনা, ভুলত্রুটি শুধরে দেয়া, রিভিউ প্রদান এবং গল্পের চরিত্র-দৃশ্য নিয়ে পোস্ট করতে জয়েন করুন আমাদের গল্প সংক্রান্ত গ্রুপে।
গ্রুপ লিংক 🍁
https://www.facebook.com/groups/499389245208190/?ref=share