#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 39
🍁🍁🍁
আদির ডাক শুনে সিমথি চোখ কুঁচকে শার্টের মুঠো আরো শক্ত করে ধরে বুকে মুখ গুঁজে। আদি হালকা হেসে সিমথির এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে কান থেকে হেয়ারফোন টা খুলে টেবিলের উপর রেখে পুনরায় ডাক দেয়।
আদি : সিয়াজান ওঠো। সূর্যোদয় দেখার জন্য সবাই বসে আছে। এখন না গেলে আয়াশরা হামলা চালাবে।
সিমথি হাড়মোড়া ভেঙে আদির দিকে তাকায়। ঘুমঘুম চোখে আদির দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।
সিমথি : গুড মর্নিং জামাইজান।
আদি : হুম মর্নিং। ওঠো এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
প্রায় মিনিট বিশেক পর আদি আর সিমথি রুম থেকে বের হয়। ওদের বের হতে দেখে আয়াশ তেড়ে যায়।
আয়াশ : তোদের আরো রোমান্স বাকি ছিলো নাকি ভাই৷
আয়াশের কথায় আদি প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে ভাবলেশহীন উত্তর দেয়,,,
আদি : রোমান্স করতে দিলি কোথায়। সবগুলো মিলে রুমে হামলা দিলি।
রিক : ছ্যাঁ ছ্যাঁ ছ্যাঁ পোলাপাইন গুলা লাজহীন হইয়া যায়তাছে। বড় ছোট জ্ঞান নাই। আমি হইলে বউ নিয়া দরজা দিতাম না।
আদি : তোর রোমান্সের জন্য দরজা ওয়ালা রুম লাগে বলে তো জানতাম না। তুই তো খোলা জায়গায় ও পারিস।
আদির কথায় রিক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।
সায়ন : হয়েছে চল এবার।
আদি : আরে দাঁড়া তোর সাথে বোঝাপড়া এখনো বাকি।
সায়ন : আমি কি করলাম
আদি : লজ্জা করে না তোর বোন আর বোনের জামাইয়ের প্রাইভেসি টাইমে হামলা করিস। ছিহ সায়ন। তোর বাসরের সময় কি সিয়াজান হামলা করেছিলো তার প্রতিশোধ নিচ্ছিস।
সায়ন : থুরীই না জানতাম আমি। আর লজ্জার কি আছে। আমি কি এমন দেখেছি।
এদের কথাবার্তায় সিমথির বিরক্তি আকাশ ছুঁই ছুঁই।সিমথি এবার সবগুলোকে ধমকে উঠে।
সিমথি : ওই থামবি তোরা৷ গেলে হাঁটা লাগা নয়তো যে যার রুমে যা। সকাল সকাল ঘুম ভেঙে নাটক শুরু করেছে।
সিমথির ধমকে সবাই কিছু টা ঘাবড়ে যায়। সায়ন আমতা আমতা করে কিছু বলতে নিলে সিমথির চোখ রাঙানো দেখে থেমে যায়।
সিমথি : মেঘা মুখটা দয়া করে অফ কর। নয়তো সাজেক ভ্যালির সব মশা তোর মুখটাকে নিজেদের আশ্রয়স্থল ভেবে ঢুকে যাবে। গা/ধার দল। আমার বরের বুকে আমি ছিলাম পরপুরুষের সাথে তো আর দেখিসনি এমন রিয়েক্ট করছি আমি অন্যকারোর সাথে ছিলাম। আজব লোকজন নিয়ে ঘুরি আমি।
সিমথির কথায় মেঘা মুখ বন্ধ করে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি মিমের কোল থেকে আদ্র কে নিয়ে সামনের দিকে হাঁটা লাগায়। অগত্যা সবাই ওর পেছন পেছন হাঁটা লাগায়।
বর্তমানে সবাই পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যে সূর্য উঠবে। সবাই যে যার মতো আনন্দ করতে ব্যস্ত। কেউ সেলফি তুলছে কেউ সবকিছু ভিডিও করছে। সিমথি ফোন হাতে নিয়ে কিছুটা সাইডে যায়। একবার ওদিকটার খবর নেওয়া দরকার। যদিও অনিলের উপর আস্থা আছে সিমথির।
সিমথি : হুমম অনীল ওদিকের কি হাল
________
সিমথি : উনাকে আমি এসে দেখছি
______
সিমথি : এই এমপি বেশি বাড় বাড়ছে। সামনে নির্বাচন একে বলো নিজের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে চাইলে যেনো বেশি না উড়ে। বেশি উড়লে মুখ থুবড়ে পড়বে।
______
সিমথি : আচ্ছা বাকিটা আমি এসে সামলে নেবো। রাখছি।
সিমথি ফোন কেটে আবারো আদিবার পাশে এসে দাঁড়ায়।
আদিবা : আর কতক্ষণ বউমণি।
সিমথি : হুমম পাঁচ
তুহা : চার
মেহের : তিন
তরী : দুই
মেঘা : এক
রোজ : সিমথিপু ভাইয়া ওই দেখো
রোজের চেঁচানো তে সবাই আকাশের দিকে তাকায়। মুহুর্তে ইয়া বড় এক সূর্য নিজের কিরণ ছড়িয়ে উদিত হয়। মুহুর্তের মধ্যে সূর্যের আলোয় চারপাশটা হলদেটে আভায় পরিণত হয়। সবার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে যায়। সিমথি সবার রিয়াকশন দেখে হাসে। উত্তেজনায় আদিবা পাশের জনের হাত খামছে ধরে। আচমকা হাতে ধারালো নখের আছড়ে সূর্যের ধ্যান ভাঙে। ভ্রু কুঁচকে নিজের হাতের দিকে তাকাতেই একজোড়া মেয়েলি হাতের সন্ধান মেলে। সূর্য চোখ তুলে সামনের রমণীর দিকে তাকায়। বিস্ময়ে রমণীর মুখ কিছু টা হা হয়ে আছে। আর উত্তেজনায় বারংবার সূর্যের হাত খামছে ধরছে। সূর্যের শিড়দাঁড়া বেয়ে শীতল হাওয়া বয়ে যায়৷ প্রথম থেকে এই রমণীর উপর সূর্যের একটা টান অনুভূত হয়েছিলো। মেয়েটা ভীষণ বাচ্চা স্বভাবের। কিন্তু অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সে।
সূর্য আদিবার কানের কাছে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,,,,,
সূর্য : আমার হাত টা আপনার নখের আছড়ে ক্ষত বিক্ষত করার ফন্দি এটেছেন নাকি।
কানের সামনে আচমকা ফিচেল কন্ঠস্বর আদিবার হুশ ফিরে। ঘাড় ঘুরিয়ে সূর্যের দিকে তাকায়। আদিবার বোকার মতো তাকানো দেখে সূর্য মনে মনে হাসে।
সূর্য : তা ম্যাডাম আমার রক্ত চুষা হলে হাতটা ছাড়তে পারেন। মনে তো হচ্ছে চামড়া উঠিয়ে ফেলেছেন।
সূর্যের কথায় আদিবা সূর্যের হাতের দিকে তাকায়। অতঃপর দ্রুত নিজের হাত সরিয়ে নেয়। ইশশ হাতটা লাল হয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। লজ্জায়, অনুশোচনায় আদিবা মাথা নিচু করে নেয়।
সূর্য : সুন্দরী রমণীদের জন্য লজ্জা পাওয়া বয়কট ঘোষণা করা উচিত সরকারের। কারণ লজ্জাবতী রমণী লাজুক রাঙা মুখশ্রী তাগড়া তাগড়া যুবকের বুকে সাইক্লোন তুলতে সক্ষম।
আদিবা চমকে সূর্যের দিকে তাকায়। সূর্য হেসে অন্যপাশে গিয়ে আফিনদের সাথে দাঁড়ায়। সেখান থেকে আদিবার আশ্চর্য মুখখানি দেখে সূর্য হাসে।
আয়াশ : মেঘা বউ আমার মুখ টা অফ রাখো।
এতো সুন্দর একটা মোমেন্টে আয়াশের ফাউ প্যাচাল শুনে মেঘা বিরক্তি নিয়ে তাকায়।
মেঘা : চুপ থাকো তো। বউ বউ বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে অথচ বিয়ের খবর নেই। চি/টা/র একটা
আয়াশ : এমন ভাবে বলছো তোমাকে দুই বাচ্চার মা বানিয়ে এখন অস্বীকার করছি।
মেঘা : আয়াশ
আয়াশ : এই শুনো তোমার ওই হি/ট/লা/র বাপ কে দেখে আমার কলিজা কাঁপে।
মেঘা : ও মা তাই। তা প্রপোজ করার সময় মনে ছিলো না।
আয়াশ : উফফস ঝগড়া করো না। একটু রোমান্টিক কথা ও তো বলতে পারো।
মেঘা : আগে বিয়ে করো তারপর রোমান্টিক কথা শোনার স্বাদ জাগাও। আদি ভাইয়া আর সিমথিকে দেখেছো। এতকিছুর পরও কি সুন্দর ভালোবাসা ওদের।
মেঘার কথায় আয়াশ হেসে মেঘার মাথায় হাত বুলায়।
আয়াশ : ওদের ভালোবাসার নিদর্শন ইউনিক। প্রত্যেকের ভালোবাসার ধরণ আলাদা। কিন্তু ওদের ক্ষেত্রে আমার মনে হয় দুজন দুজনকে একই নিয়মে ভালোবাসে। সিমথির ভালোবাসা ছিলো প্রথমে প্রকাশিত আর আদির ভালোবাসা ছিলো গোপনীয়। আর যখন আদি প্রকাশ্যে ভালোবাসতে আরম্ভ করলো তখনই সিমথি নিজের ভালোবাসা গোপনে মনে কোনে জায়গা দিলো। কিন্তু এখন দেখো ওদের দেখে কেউ বলবে না ওদের মাঝে এতো গুলো দিন গেপ গিয়েছিলো।
আয়াশের কথায় মেঘা আয়াশের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে সিমথি আর আদির দিকে তাকায়। দুজন দুদিকে দাঁড়িয়ে আছে। আদির দৃষ্টি সিমথির দিকেই।
মেঘা : জানো আয়াশ আদির ভাইয়ার উপর আমার ভীষণ রাগ হতো। সিমথি আমার কাছে অনেক আপণ৷ ওর চোখের পানি আমি কখনো সহ্য করতে পারিনা। কিন্তু আদি ভাইয়াকে ভালোবাসার পর থেকে সিমথিকে প্রচুর কাঁদতে হয়েছিলো। তখন আমার ইচ্ছে করতো আদি ভাইয়াকে খু/ন করে ফেলি। এমন আগুন সুন্দরী মায়াবী একটা মেয়েকে কেউ কিভাবে দিনের পর দিন এভয়েড করতে পারে। যেখানে সব ছেলে সিমথির জন্য পাগল ছিলো সেখানে সিমথি কেবল একটা ছেলের জন্য পাগল ছিলো। তবুও কিভাবে সিমথিকে এতোটা কষ্ট দিতো ভাইয়া। ফ্রেন্ড সার্কেলের সবার মধ্যে সিমথি ছিলো হাস্যজ্জ্বল একটা মেয়ে। যে সবাই কে হাসাতো। এখন হয়তো গম্ভীর হয়ে গেছে কিন্তু আমাদের সামনে সিমথি পুরনো লুকে থাকে। হঠাৎ সিমথির এভাবে কষ্ট পাওয়াটা আমরা কেউই সহ্য করতে পারতাম না। মনে হতো আদি ভাইয়া সিমথির জীবনে না আসলেই বোধহয় ভালো হতো। কিন্তু এখন মনে হয় আদি ভাইয়া আর সিমথি একে অপরের জন্য। শত বাঁধার পরও সিমথি নিজের ভালোবাসা পেয়েছে আমরা ভীষণ খুশি হয়েছি। এই মেয়েটার কষ্ট আমরা কেউ সহ্য করতে পারিনা।
আয়াশ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এদের অতীত বিষাক্ত হলেও বর্তমান রঙিন। এই ভালোবাসার মাঝে কোনো ঝড় না আসুক এটাই সবার কাম্য।
নিজের পেছনে কারো অস্তিত্ব অনুভব করে সিমথি পেছন ফিরে তাকায়। আদিকে দেখে ভ্রু কুঁচকায়।
আদি : আচ্ছা তোকে যদি এখান থেকে ধাক্কা মারি কি হবে।
আদির কথায় সিমথি চমকায়। কিন্তু সেটা বেশীক্ষণ স্থায়ী থাকলো না। ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটিয়ে একবার পাহাড়ের নিচের দিকে তাকায়। আপাতত সিমথি পাহাড়ের কার্নিশে দাঁড়ানো। নিচে পড়লে ডাল-ভাত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ১০০ তে ৯৮।
সিমথি : ম/রে যাবো।
আদি হেসে সিমথির বাম হাত ধরে পেছনের দিকে হেলিয়ে দেয়।
সিমথি : আদি কি করছো। ( হালকা চেঁচিয়ে)
সিমথির চেঁচানো তে সবাই ওদের দিকে তাকায়। সবাই হতভম্ব।
সায়ন : এ এই আদি পরী পড়ে যাবে তো।
আদি : ফেলতেই তো চাইছি।
আদির কথায় সবাই বাকরুদ্ধ। এই ছেলের মাথা নির্ঘাত খারাপ হয়ে গেছে।
ইশান : ভাইয়া এটা কোন ধরনের ফাজলামো। পাহাড়গুলো পিচ্ছিল হালকা। যেকোনো সময় স্লিপ খাবি তোরা।
ইশানের কথায় আদি কর্ণপাত না করে সিমথিকে আরেকটু নিচে দিকে ঝুকায়। আদির দিকে তাকিয়ে সিমথি হাসে।
সিমথি : কি হলো হাত ছেড়ে দেন। ধরে রাখলেন কেনো।
আদি : তোমার ভয় করছে না।
সিমথি : না তো ( মাথা নাড়িয়ে)
আদি : যদি তোমাকে ছেড়ে দেয় সত্যি সত্যি।
সিমথি : তো এতক্ষণ কি মিথ্যে মিথ্যে অভিনয় করছিলেন। ( মুখ টিপে হেসে)
আদির হাত কাঁপছে। মৃ/ত্যু/র মুখে দাঁড়িয়ে ও সিমথির মুখে হাসি। যেখানে সিমথি জানে বাই এনি চান্স আদির হাত ফসকে গেলে মৃ/ত্যু অবধারিত। আদি চোখ জ্বালা করছে গলা শুকিয়ে আসছে। আদির অবস্থায় সিমথি শব্দ করে হেঁসে দেয়। আয়াশরা হতবাক। স্বামী-স্ত্রী দুইজনই পা/গ/ল।
আদিবা : ভাইয়া হ্যাভ ইউ গন ম্যাড। তোর হাত কাপছে ভাইয়া যে-কোনো সময় হাত ছুটে যেতে পারে। শাওন ভাইয়া ওকে আটকাও।
সিমথি : আচ্ছা আমিই হাত ছাড়িয়ে নেই কি বলেন।
আদি চমকে সিমথির দিকে তাকায়। মুহূর্তেই মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সিমথি এখনো হাসছে। কালো লং টপসের দুপাট্টা বাতাসে উড়ছে সেইসাথে চুলগুলোও উড়ছে। সূর্যের আলোয় চুলগুলো লালছে বর্ণের দেখাচ্ছে। আচমকা আদির হাত ঢিলা হতে শুরু করে। আদির চমকে সিমথির দিকে তাকায়।
সিমথি হেসে হাতের মুঠো আবারো শক্ত করে ধরে।
সিমথি : আমাকে খু/ন করতে এসে তো নিজেই খু/ন হয়ে যাচ্ছেন।
রিক : দুইটাই বড্ড উন্মাদ। আদি মার খাবি শা/লা ওকে উপরে তোল। পাহাড়ের শেষ কিনারায় মেয়েটা যেকোনো সময় পড়ে যাবে।
আচমকা আদির হাতের বাঁধন ছুটে যায়। আদি নিজেও সামনের দিকে কিছু টা ঝুঁকে যায়।
আদি : সিয়াজাননননন
আয়াশরা আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকায়। মুহুর্তের মধ্যে মেঘা, রোদেলা, তরী, রোজ শব্দ করে কেঁদে ওঠে।
চলবে,,,,
( আহা ওদের এতো ভালোবাসা সহ্য হইতাছে না। গন্ডগোল ছাড়া ভালো লাগতাছে না তাই দুইটারে আলাদা করলাম 😀😀। হ্যাপি রিডিং )