#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 41
🍁🍁🍁
সময় আর স্রোত চির বহমান। এরা নিজের ছন্দে চলতে থাকে। সেই সময়ের ছন্দে চলে মানবজীবনের গতি ধারা। সাজেক থেকে ফেরার আজ দুইমাস । সবাই আবারো নিজেদের ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। দিনশেষে কেউ রাতের গভীর আঁধারে নিজের ভালোবাসার মানুষটার বুকে মাথা রেখে প্রশান্তির শ্বাস ছাড়ছে কেউবা ঘন্টার পর ঘন্টা ভালোবাসার মানুষ টার সাথে ফোনালাপ করছে। কেউবা নিজের নব প্রেমের অনুভূতি কে ভালোবাসায় রূপান্তর করেছে। তবুও দিনের আলোয় আবারো শুরু হয় ব্যস্ততা। তাই বলে কারো ভালোবাসায় কোনোরূপ কমতি আসেনি।
তন্ময় : সিনহা কি করছো। তোমাকে বলেছে কেউ এতো ভারী জিনিস তুলতে।
তন্ময়ের কথায় সিনহা বিরক্তির শ্বাস ছাড়ে। এই ছেলেটার সব কিছু তে বাড়াবাড়ি। প্রেগন্যান্সির কেবল পাঁচ মাস। আর ছেলের ভাব যেনো বিকেলে ডেলিভারি হবে।
সিনহা : তন্ময় তুমি সবসময় এমন খ্যাচখ্যাচ করো কেনো।
সিনহার কথায় তন্ময় রাগী চোখে তাকায়।
তন্ময় : তো কি করবো। সোজা কথার মানুষ তুমি। বার বার নিষেধ করেছি এই সময় বেশী দৌড়ঝাঁপ করো না। সিমথি যদি জানে তার আদরের বোনকে দিয়ে কাজ করাচ্ছি তাও এই অবস্থায় তাহলে নির্ঘাত এই মেয়ে আমার গর্দান নেবে।
তন্ময়ের কথায় সিনহা খিলখিল করে হেসে উঠে।
সিনহা : সিমথি আপু তুমি ভয় পাও অনেক তাই না।
তন্ময় : জ্বি না ম্যাডাম ওকে ভয় পাই না কিন্তু ওর হাতে দাবাং মার্কা থাপ্পড় কে ভয় পায়।
তন্ময়ের কথায় সিনহা আবারো হেসে দেয়।
অনিল : ম্যাম সামনের সপ্তাহে নির্বাচন। এই এমপি এবারো এমপি পদে দাড়াচ্ছে।
অনিলের কথায় সিমথি গভীর চিন্তায় ডুব দেয়। আচমকা ঠোঁটের কোণায় বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুলে।
সিমথি : এই এমপি মহাশয়ের প্রাণভোমরা কোথায়।
সিমথির কথায় অনিল হেঁসে দেয়।
অনিল : ম্যাম এই এমপির প্রাণভোমরা সুরক্ষিত স্থানে আছে।
সিমথি : সময় মতো নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দিও। আর শুনলাম এইবার এমনপি পদে মেয়র শাহাদাত আবির দাড়াচ্ছে।
অনিল : হুমমম ম্যাম। অত্যন্ত সত্যবাদী একজন সুন্দর মানসিকতার পুরুষ।
সিমথি : তোমার কি মনে হয় এমন চার্মিং সুদর্শন যুবক কে এমপির পদ ব্যতিত এমন বুড়ো কালো ব্যবসায়ীকে মানাবে। উৎসুক জনগন এটা মানবে। এমপির পদ টা আমার দাদার ছিলো। দাদাজান মা/রা যাবা আগে উনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্লাস সহচরী নিজামুল হক কে স্থান দিয়েছিলো। শা/লা কয়েক বছর ভালোভাবে জনসেবায় নিয়োজিত থাকলে ও টাকার লোভে নিজের ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়েছে। আমার দাদাজানের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। এর শাস্তি তো পেতেই হবে আগামী এক্স এমপি মহাশয় কে।
সিমথির কথায় অনিল নিশ্চুপ। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা তারপরই দেখা যাবে সিমথির নীরবতার আড়ালে থাকা হিংস্রতা।
________________
_ ম্যাম পার্সেল আছে
মেহের : পার্সেল কিন্তু কার নামে।
_ সিমথি জাহান সিয়া।
মেহের : সিমথির নামে। আচ্ছা আমাকে দিন। আমি দিয়ে দেবো।
অতঃপর মেহের সব ফর্মালিটি পূরণ করে পার্সেল নিয়ে দরজা লাগায়।
শাওনের মা : এটা কি রে।
মেহের : মা পার্সেল।
ইশান : ওমা ভাবীপু তোমার নামেও আজকাল পার্সেল পাঠায় তোমার এক্সরা
মেহের : থা/প্প/ড় দেবো। ফাজিল
আদিবা : ধ্যাত ছোড়দা চুপ কর। ভাবীপু কার নামে গো। খুলে দেখো না কি আছে।
মেহের : সিমথির নামে।
আদির মা : সিমথির। তাহলে আর খুলিস না। হয়তো দরকারী কিছু।
ইশানের মা : রাইট টক। নট খোলাখুলি। ডটার ইন ল ইজ কামিং এংরি।
শাওনের মা : হুমম মেহের ও আসলে দিয়ে দিস।
মেহের সবার কথায় সায় দিয়ে পার্সেল নিয়ে নিজের রুমে যায়। আপাতত সন্ধ্যা ছয়টা বাজে। সাতটা থেকে বাড়িতে সবাই আসতে শুরু করবে কাজ শেষ করে।
আদিবা : ওই তিন্নি ম্যাথ টা ঠিক করে কর। ভুল হচ্ছে তো।
তিন্নি : ভুল না ধরে একটু বুঝিয়ে দাও পিপি।
ইশান : এদিকে আয় আমি বুঝিয়ে দেয়। ও তো খালি খেতে জানে।
আদিবা : ছোড়দা ভালো হবে না বলে দিলাম।
আদিবার কথায় ইশান ভেংচি কেটে তিন্নিকে নিয়ে ম্যাথ্ করাতে শুরু করে। আদিবা ফোন হাতে নিয়ে এফবিতে যায়। তখনই ম্যাসেন্জারে নোটিফিকেশনের শব্দে আদিবা ম্যাসেজে ক্লিক করে।
আমার হৃদয়ের রাণী হৃদয় হরণী। আপনি ব্যতিত আমার দিনগুলো নিকষ আধারে ঢেকে যাচ্ছে এটা কি আপনি জানেন। আপনার বাচ্চামো আপনার হাসি সবকিছু কে ভয়ানক ভাবে হারাচ্ছি। আপনার মন মাতানো হাসি আমার ঘুমের ব্যঘাত ঘটায়। আপনি আমার হৃদয় হরণের সাথে আমার ঘুমটা ও কেড়ে নিয়েছেন। এর শাস্তি স্বরূপ আপনাকে ভালোবাসার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ভালোবাসার প্রস্তাব দেবো আর আপনার শাস্তি মঞ্জুর তখনই করবো যখন আপনি আমার হাতটা শক্ত করে ধরবেন। আর আপনার ওই মিষ্টি গলায় ভালোবাসি বলবেন। খুব শীঘ্রই আমাদের সাক্ষাৎ হচ্ছে। তৈরি থাকুন আমার মনের রাণী থেকে ঘরণী হবার জন্য।
ইতি
আপনার অপেক্ষায়
সাতাশ বছর বয়সী তাগড়া যুবক
ম্যাসেজ টা পড়ে আদিবা কিছু ক্ষণ থম ধরে বসে থাকে৷ এমন বার্তা হুটহাট আসে। কিন্তু বার্তা প্রাপক কে এখনো অবধি আদিবা ধরতে পারছে না। আদিবা নিজে থেকেম্যাসেন্জারে ফোন দিলে ধরে না। ম্যাসেজ দিলে সিন করে না। কিন্তু নিজে ঠিকই ফোন ও দিতে পারবে ম্যাসেজ ও দিতে পারবে। কিন্তু গলার স্বর যেনো উপরওয়ালা উনাকে দেননি। আদিবার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কাউকে কল্পনা করলেও সেটা সিউর কিনা আদিবা জানে না। কারণ সেদিনের পর থেকে মানুষটা যে গায়েব হলো কই একবারো তো আসলো না। দেখা ও দিলো না মানুষটা একবার। কেউ কিভাবে রাতারাতি গায়েব হয়ে যায় এটা বোধহয় এই মানুষটাকে না দেখলে আদিবা জানতো না।
আচমকা মাথায় কারো বারি মারায় আদিবার ধ্যান ভাঙে। আদিবা চোখ মুখ কুচকে পেছনে তাকায়। মাথা পুরো জিম ধরে গেছে। মাথা ঝাকিয়ে আদির গায়ে জোরে কিল বসায়।
আদিবা : হা/রা/মি একটা। মারলি কেনো।
আদি : কোন ধ্যানে থাকি কখন থেকে ডাকছি তোর হুস নেই। ভাবলাম আবার দাতি লেগে গেলি নাকি তাই গাট্টা দিলাম। কিন্তু এখন দেখি হুসেই আছিস।
আদিবা : তাই বলে মারবি। এ্যাহহহহ ভাবীইই
সিমথি : জ্বি কিউটিপাই বলো।
আদিবা : তুমি এর বিচার করো একে আমি ছাঁদের উপর থেকে ধাক্কা মারবো।
সিমথি : সেটা একান্তই তোমার ইচ্ছে। তোমার মন চাইলে ছাঁদ কেনো প্লেন থেকে ধাক্কা মারো। আমার শতভাগ সহমত আছে।
আদির মা : এসেই সবগুলোর বাদরামি শুরু হয়ে গেছে। সবগুলো আজ একসাথে আসলি কিভাবে।
শাওন : জানিনা। বাড়ির সামনে আমাদের সবার দেখা হয়েছে।
আদির বাবা : বুঝলে গিন্নি
আদির মা : থাক তুমি চুপই থাকো। এই সবগুলো ফ্রেশ হয়ে আয়।
সিমথি : বাবা তুমি একটা শান্ত শিষ্ঠ মা আনতে পারলে না এমন খিটখিটে মা কোথায় পেলে।
আদির বাবা : কি আর করবো সবই কপাল। তাহলেই বুঝ বত্রিশ বছর আমি কিভাবে সংসার করলাম।
সিমথি : আই ফিল ইউর পেইন ফাদার ইন ল
সিমথির কথায় সবাই হেঁসে দেয়। আদির মা রাগী চোখে একবার নিজের পতি পরমেশ্বরের দিকে তাকায় আবার নিজের ছেলের বউয়ের দিকে তাকায়।
আদির মা : ওই সবগুলো ফ্রেশ হয়ে আয়। আর সিমথি তুই না ডাক্তার। বাইরে থেকে এসে হাত পা না ধুয়েই আড্ডা দিচ্ছিস।
সিমথি : আমি হলাম ডক্টর। এখন ডক্টর হয়ে যদি প্রেশেন্টের মতো নিয়ম মানি তাহলে তফাৎ কোথায়। আমার কাজ রোগীকে প্রেসক্রাইব করা। কিন্তু সেই প্রেসক্রাইব করা মেডিসিন আমি কেনো খাবো। আমি কি রোগী৷
শাওনের মা : এই মেয়ের যুক্তির শেষ নেই। তোর ওকালতি পড়ার দরকার ছিলো
সিমথি : ওহ বড় মা লাভ ইউ। উম্মাহহহহ। আমার ওকালতি করার দরকার ছিলো এটা সবাই বলতো। এখন তুমি ও বললে।
সিমথির কথায় সবাই আরেক দফা হেসে উঠে।
আদির মা : এই মেয়ে কে দেখতে গম্ভীর হলেও ফাজিলের নানী।
সিমথি : আহা এখনো তো তুমিই নানী হলে না আমি কিভাবে হবো। কিউটিপাই করবে নাকি বিয়ে উহুমম হুমম হুমম ( ভ্রু নাচিয়ে)
আদিবা : কাভি নেহি। এখন ও আমার ক্যারিয়ার গড়তে পারলাম না আর বিয়ে হোপসস।
ইশান : আচ্ছা ভাবীজ্বি আর ভাইজান রা, চাচাজানরা আপনারা ফ্রেশ হয়ে আসুন সবাই। মহিলা সদস্যরা ক্ষেপে যাচ্ছে।
ইশানের কথায় সিমথিরা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবারো নিচে আসে। আদির মা-চাচীরা রান্নাঘরে কাজ করছে দেখে সিমথি ও সেদিকে পা বাড়ায়।
সিমথি : ওহ মা
আদির মা : কি হয়েছে বল।
সিমথি : আজ আমি রাঁধি।
শাওনের মা : পা/গ/ল নাকি মাত্রই তো হসপিটাল থেকে আসলি আর এখন রান্নাঘরে কি করছিস। যা বসার রুমে সবাই আছে ওখানে যা।
সিমথি : কিন্তু
ইশানের মা : আরে ডটার ইন ল ইউর নামে পার্পেল কামিং
ইশানের মায়ের কথায় সিমথি ভ্রু কুঁচকায়। এই পার্পেল টা আবার কি।
সিমথি : পার্পেল কি গো ছোটমা।
শাওনের মা : আহ ছোটো থাম দিখিনি। তোর নামে কুরিয়ার থেকে পার্সেল এসেছে।
সিমথি : আমার নামে ( অবাক হয়ে)
আদির মা : দেখ কে কি পাঠালো।
সিমথি দুষ্টু হেসে বলে উঠে,,,
সিমথি : বাই এনি চান্স আমার আগের পক্ষের জামাই পাঠায়নি।
আদির মা খুন্তি হাতে নিতেই সিমথি শব্দ করে হেঁসে বসার রুমের দিকে যায়৷ কিন্তু মাথায় এখনো পার্সেলের কথাটা ঘুরপাক খাচ্ছে।
সিমথি : মেহের ভাবী আমার জন্য নাকি কি এসেছে।
মেহের : দেখেছিস আমি একদম ভুলে গেছি। দাঁড়া নিয়ে আসছি।
ইশান : তোমার নামে একটা পার্সেল এসেছে কিন্তু কে পাঠিয়েছে নাম ঠিকানা কিছুই নেই।
আদি : তোমার কোন এক্স তোমার নামে পার্সেল পাঠালো আবার৷
সিমথি : কি জানি। এতোগুলো রিলেশনে ছিলাম প্রথমটার নাম কি এটাই ভুলে গেছি।
সিমথির খোঁচা মারা কথায় আদি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি মাছি তাড়ানোর মতো ভান করে ধপ করে আদিবার পাশে বসে পড়ে। অতঃপর তিন্নিকে কোলে নিয়ে খেলতে শুরু করে।
মেহের : এই যে নে।
সিমথি চোখ তুলে পার্পেল পেপারে মুড়ানো বক্সটার দিকে তাকায়। অতঃপর পার্সেল টা হাতে নিয়ে সবার দিকে তাকায়।
আদি : কি হলো খুলছো না কেনো। চাইলে রুমে গিয়ে খুলতে পারো
সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
সিমথি : এই স্বভাব টা বদলাম আপনার।
সিমথি পার্সেল টা খুলে। পার্সেলের ভেতরের জিনিস টা দেখো কপাল কুঁচকে আসে। এটা আবার কি।
শাওন : কি হলো তোমার হাত থেমে গেলো কেনো।
সিমথি : হ হুমম।
সিমথি জিনিস টা হাতে নেয়৷ জিনিস টা দেখে সবার চোখ ছানাবড়া। একটা পেনড্রাইভ জাতীয় কিছু।
আদিবা : এটা আবার কেমন পার্সেল।
আদিবার কথায় সিমথি নিজেও কিছুটা চিন্তিত হয়। এমন পার্সেল কে করলো। প্যাকেটের কোথাও নাম ঠিকানা নেই। কে হতে পারে এই আগন্তুক।
চলবে,,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)