#ফুলকৌড়ি
পর্ব(৯)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম
বাবার মৃত্যুর আজ পনেরো দিন পার হয়ে গেলো। কৌড়ি-ও এবাড়িতে এসেছে আজ প্রায় পনেরো দিনের মতো।নারী মানুষের জীবন কেমন অদ্ভুতময় হয়,তাই না?নির্দিষ্ট কোনো স্থানে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাদের জীবনটা স্থায়ীত্ব হয়-না।জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নির্দিষ্ট বয়সের কিছু বছর বাবার সংসারে কাটাতে হয়।তারপর ভাগ্যের পালাক্রমে শুরু হয় স্বামীর সংসার।সেই
পর-মহলটা আপন করতে করতে,সময় এসে যায় নিজের সংসারটা ছেড়ে দেওয়ার।তারপর বৃদ্ধ বয়সে কিছুদিন এই ছেলের সংসারে তো কিছুদিন ওই ছেলের সংসারে।তবে মেয়ে মানুষের জীবনটাও একটা সময় গিয়ে একটা নির্দিষ্ট স্থানে স্থায়ীত্ব হয়,সেই স্থায়ীত্বটা কবরে গিয়েই।হয়তো সবার স্থায়ী বা শেষ ঠিকনা কবর। তবে মেয়ে মানুষেরটা বিশেষ।
সেই মেয়ে মানুষ হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছে কৌড়ি।তার জীবনটা অন্য মেয়ে মানুষের থেকে আলাদা হয় কি করে!তবে মেয়ে মানুষের বিয়ের পর বাবার সংসার ছাড়তে হয়,কিন্তু তার তো সেই সময়টা আসার আগেই বাবা-র আশ্রয়টা ছাড়তে হলো।কি অদ্ভুত ভাগ্য।আর সেই ভাগ্য মেনে নেওয়া ছাড়া তার উপায়-ও নেই।নিতে হচ্ছে তাঁকে।এই পনেরো দিনে এবাড়িটার প্রতিটি মানুষের সাথে মিশে যেতে শুরু করেছে সে।মানুষগুলাও তেমন,ভিন্ন চরিত্র ভিন্ন স্বভাবের হলেও খুবই অমায়িক ব্যবহার।আর ভালো তো বটেই।হয়তো সে কারনেই বাবা হারিয়ে যাওয়ার শোকটা কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে সে।
তবে কৌড়ির আজ ভীষন মন খারাপ।এবাড়ির ছেলেমেয়ে গুলোকে রোজ স্কুল কলেজে যেতে দেখলেই তার ভীষন মন খারাপ হয়ে যায়।সে-ও তো বাড়িতে থাকলে,কলেজে যেতো।কলেজ অনিয়মিত করা,পড়াশোনায় হেলা করা।কৌড়ির বাবার মোটেও পছন্দ ছিলোনা।আর সেই হিসাবে কৌড়ি নিজেও কলেজ অনিয়মিত বা পড়াশোনায় হেলা করতো না।কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে আজ করতে হচ্ছে।এইস এস সি
পরিক্ষার তিনমাস বাকী থেকে, আর-ও পনেরোটা দিন কেটে গেলো।বাকী আছে মাত্র আড়াইটা মাস।অথচ সে পড়ালেখা থেকে দূরে।আদৌও তার আর পরিক্ষাটা দেওয়া হবে কি-না কে জানে!তবে বাবার সাথে সাথে তার ও যে স্বপ্ন ছিলো, সে ডাক্তার হবে।তবে?মন খারাপটা আর-ও তীব্র রূপ নিলো।সারাদিন সেই মন খারাপেই কেটে গেলো তার।মৌনতা আর মান্যতা সেটা বুঝতে বিভিন্ন প্রশ্ন করেও উত্তর মেলেনি।কৌড়ির মুখ থেকে মন খারাপের কথাটা কিছুতেই বের করতে পারি নি।না পেরে মান্যতা,মাকে গিয়ে কৌড়ির কথা বিবরণ দিয়ে ডেকে আনলো।নীহারিকা বেগম এসে ভালোমন্দ কথা বলতে থাকলেন।কৌড়ির ভিতরে কি চলছে সেটা জানার জন্য তাকে সহজ করতে লাগলেন।মা বাবা মরা মেয়ে,ভালোমন্দ বলতে,উনারাইতো এখন সব।তাছাড়া কৌড়িকে দেখে তিনি প্রথমদিনই বুঝতে পেরেছিলেন,মেয়েটা চাপা স্বভাবের।অতি প্রয়োজন ছাড়া কখনো নিজের সুবিধা অসুবিধার কথা কাওকে জানাবে না।
‘কৌড়ি,আমার মনেহচ্ছে তোমার মন খারাপ।কি হয়েছে মা?
নীহারিকা বেগমের অমায়িক আচারনে কৌড়ি নিজের ভিতরের কথাগুলো আর চাপিয়ে রাখতে পারলো না।
চাপা স্বভাবটা সরে গিয়ে,মন গলে গেলো।আবেগপ্রবণ হয়ে বলে ফেললো।
‘আন্টি, আমি পরিক্ষা দিতে চাই।
আশ্চর্য হয়ে নীহারিকা বেগম বললেন।–দেবে।এটাতে বাঁধা কে দিচ্ছে।আর অবশ্যই তুমি পরিক্ষা দেবে।এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
‘আমার পরিক্ষার আর কিছুদিন বাকি আছে আন্টি।কলেজে যাওয়া দরকার।আর কলেজ না গেলেও পড়টা তো খুবই দরকার।কিন্তু আমার তো বইখাতা বলতে আপাতত কিছুই নেই।কিভাবে পড়বো আমি?
বইখাতা কিছুই নেই,এই কথাগুলো বলতে হবে বিধায় লজ্জা পাচ্ছিলো কৌড়ি।মান্যতা মৌনতাকেও বলতে পারিনি ।এবাড়ির মানুষগুলো তাকে খেতে পরতে দিচ্ছে এটাই তো অনেক।তার উপর নিজের জন্য নিজ থেকে কিছু চাওয়া সত্যিই কৌড়ির জন্য লজ্জাকর।তাই-তো বিষয়টা নিয়ে গুমরে মরলেও কাওকে বলতে পারছিলো না।তবে নীহারিকা বেগমের কোমল আচারনের জন্য বলতে হলো তাকে।আর না বলেও উপায়!পড়াশোনাটা ছাড়া জীবনে আর কি হারাতে বাকী আছে তার।সেই পড়াশোনাটার জন্য নাহয় একটু চেষ্টা করল।নীহারিকা বেগম নিস্প্রভ নজরে কিছুসময় কৌড়ির দিকে তাকিয়ে থেকে তার সংকোচটা বুঝতে চেষ্টা করলেন।হঠাৎ নিভানের এবাড়িতে কাটানো ছোটো-বেলার কথা মনে পড়ে গেলো।উনার নিভানটাও এমন ছিলো।প্রয়োজনেও জিনিস চাইতোনা।বুঝতে পারতো সংসারটা মায়ের হলেও,সেই সংসারের আপনজন সে নয়।এতো বুঝদার ছিলো ছেলেটা।কখনো তাকে নিয়ে অহেতুক কটু কথা শুনতে হয়নি,পড়তে হয়নি কখনো কোনো দ্বিধা লজ্জায়।দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নীহারিকা বেগম।এই মেয়েটাও সেই একই স্বভাবের বলে মনে হলো উনার।মৃদু হাসলেন।কৌড়ির মাথায় গালে নরম স্পর্শে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন।
‘এজন্য মন খারাপ?এটা কোনো বিষয় হলো,মন খারাপ করার জন্য?পাগল মেয়ে। আজতো আর সময় হবেনা, কাল কাওকে দিয়ে তোমার বই আনিয়ে নেবো।আর কলেজে যাওয়ার ব্যবস্থাটা দেখি কি করা যায়।এবিষয়ে তোমার আঙ্কেল ভালো বুঝবেন।আমি উনার সাথে জরুরি কথা বলছি।আর মন খারাপ করে থেকো-না, ঠিক আছে?
কৃতজ্ঞতায় মন ভরে গেলো কৌড়ির।নীহারিকা বেগমের কথায় মুখে কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেললো।ফের মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।
‘এরকম ছোটো খাটো বিষয়ে কখনো মন খারাপ করবে না।মনে প্রবল আস্থা রাখবে,মন খারাপ করে সেই আস্থা নষ্ট করে ফেলবেনা।তাহলে শত চেষ্টা সব বিফলে যাবে।
মাথা উঁচু করে নিলো কৌড়ি।কৃতজ্ঞতায় ভরা জ্বলজ্বলে চোখদুটো নীহারিকা বেগমের মুখের দিকে নিষ্পলক দিয়ে বললো।–আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আন্টি।
‘ধন্যবাদ দেওয়ার মতো কিচ্ছু করিনি।আর না এটা ধন্যবাদ দেওয়ার মতো বিষয়।এটা তোমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়,তোমার প্রাপ্য।যেটা আমাদের গুরুজন হিসাবে গুছিয়ে দেওয়া দায়িত্ব।আর মা হিসাবে সেই দায়িত্বটা পালন করছি বা করতে চাইছি আমি।
আচমকা নীহারিকা বেগমকে জড়িয়ে ধরলো কৌড়ি।মায়ের আদর তার কখনো ভাগ্যে জুটিনি।তিন তিনজন চাচী থাকতেও সেই অভাবটা থেকে গেছে তার।তবে মেজো চাচী কিছুটা মমতা দেখাতে চাইলেও,উনার ওই কুকুর ছেলেটার জন্য কাছে টানতে পারতেন না।বলতেন, –তোর চাচা মানুষ না।আর তার মতো হয়েছে আমার পেটের ছেলে।দেখিসনা,কি অমানুষ হয়েছে।সারাদিন মদ গাঁজা নিয়ে পড়ে আছে।মন মেজাজ হয়ে থাকে কুকুরের মতো।আর সেরকমই ব্যবহার করে মা বোনের সাথে।আর তাতে আবার তোকে বউ বানানোর জন্য উৎ পেতে বসে আছে।তুই আমার কাছে আসলে সুযোগ পাবে বেশি।তাই আমার কাছে আসবিনা।এবাড়িতে ঢুকবিনা সহজে।আমি চাইনা আমার মতো তোর কপালটা পুড়ুক।নিজের সন্তান হয়েও বলতে বাধ্য হচ্ছি,ওই জানোয়রটা ভুলেও তোর মতো ফুলকে কখনো না ছুঁতে পারুক।তাই এটা তোর চাচীর পক্ষথেকে দূরে থেকেও আগলে রাখা।চাচীযে মা মরা তোকে খুব আদর দিতে চায়,ভালোবাসতে চায়।তবে পারেনা।তাই চাচীর জন্য কখনো মনে দোষ পুষে রাখিস না।অন্য চাচিদের মতো মনে করে ভুল বুঝে থাকিস না।
তবে সত্যি বলতে দূরে থেকেও এটুকু আগলে রেখেছিল চাচি তাকে।তবে সেই ছোট্টোটা থেকে মায়ের অপূর্ণ মমতা ভালোবাসাটা পেয়েছিলো,দাদির কাছথেকে।বৃদ্ধা মানুষ নিজের যথাসাধ্য দিয়ে চেষ্টা করে যেতেন, তার মায়ের অভাবটা পূর্ণ করার।আজ সেই দাদিআপা থেকেও দূরে।নীহারিকা বেগমের মমতা সেই মৃতু মা’কে মনে করিয়ে দিলো।কেমন হতো সেই মমমতাময়ী মায়ের স্পর্শ ভালোবাসা,শাসন-বারন জানা নেই কৌড়ির।তবে যে দাদিআপার থেকে কিছুটা হলেও অনুভব করেছিলো সেই মমতা ভালোবাসা।তা নীহারিকা বেগমের কথায় ব্যবহার নিজের জন্য অনুভাবিত হতেই,প্রকাশ পেতেই আবেগপ্রবণ হলো কৌড়ি।নীহারিকা বেগমও তিন সন্তানের মা। সন্তানের দরদ তিনি বোঝেন।তাই পরম মমতায় কৌড়িকে আগলে নিলেন নিজের বুকে।মাথায় চুমু দিয়ে বললেন।
‘নিজেকে সহজ কর মা।অন্য কাওকে বলতে না পারিস, নিজের প্রয়োজনীয়তা অপ্রয়োজনীতা যা মন চাই এই বড়মাকে অন্তত বলার চেষ্টা করিস,বলিস।মান্যতা আমার নিজের পেটের মেয়ে হলেও,মৌনতাকে আমি মান্যতার থেকে তিল পরিমান কম ভালোবাসিনা।তুইও আমার মান্যতা মৌনতার মতো আরেক মেয়ে।ওদের মতোই মায়ের কাছে আবদার করিস।মা যথাসাধ্য চেষ্টা করবে তোদের আবদার পূরণ করতে, ভালো রাখতে।শুনছিস আমি কি বলছি।বলবি তো?
নিঃশব্দে কেঁদে চললো কৌড়ি। মুখে কিছু বললো-না। শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানালো।সেটা বুঝে মৃদু হেসে কৌড়ির মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে নীহারিকা বেগম ফের বললেন—আর আজ থেকে ওসব আন্টি সান্টি বলবি না।হয়তো মান্যতার মতো মা বলে ডাকবি নয়তো মৌনতার মতো বড়মা বলে।কেমন?ডাকবি তো?
একটু সময় নিয়ে ফের মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো কৌড়ি।সেটা বুঝে আর কথা বাড়ালেন না নীহারিকা বেগম।মেয়েটা এখন তো সম্মতি জানিয়েছে ঠিকই তবে নিজের অপ্রয়োজনীয় তো দূর,প্রয়োজনীয়টা পর্যন্ত বলবে কি উনার সন্ধান। এরকম স্বভাবের একজনকে যে পেলেপুষে বড়ো করেছেন তিনি।তাই এসব স্বভাবের মানুষ সম্পর্কে বেশ আবগত উনি।
★
এবাড়িতে সবার সাথে মোটামুটি কৌড়ির সখ্যতা গড়ে উঠলেও,সখ্যতা সেভাবে গড়ে উঠেনি দীবার সাথে।মেয়েটার হাবভাব বুঝে পায়না কৌড়ি।এবাড়িতে আসা এই পর্যন্ত কখনো তারসাথে সেভাবে কথা বলেনি।বলিনি বললেই চলে।অথচ কি অদ্ভুত নজরে মাঝেমধ্যে তারদিকে তাকিয়ে থাকে।নিজেরই কেমন এলেবেলে লাগে কৌড়ির।মনেহয়,গ্রামের অদ্ভুত মেয়ে সে।তাদের মতো স্মার্ট চালচলন নয় বলে কি এভাবে তাকিয়ে থাকে?নাকি অন্যকিছু?সেদিন কাশফুল বাগানে ঘুরতে গেলো,সারাটা সময় একসাথে কাটালো অথচ একটা শব্দও তার হয়ে ব্যয় করলোনা।তবে সেই অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে ভুল করেনি।তাকে ওই অদ্ভুত দৃষ্টিতে কি দেখে বুঝে আসেনা কৌড়ির।কি যে অস্বস্তি অনুভব হয় তখন।কি করে বোঝাই ওই মেয়েটাকে।এইযে খাওয়া বাদ দিয়ে তারদিকে সেই তীক্ষ্ণ অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,যারজন্য ঠিকঠাক ভাবে খেতে পারছেনা কৌড়ি।কেউ এভাবে তাকিয়ে থাকলে খাওয়া যায়।তবে সকালের এই সময়টাতে তো মেয়েটা খেতে আসেনা।আজ পনেরো দিনেও বেশি,কখনো দেখিনি কৌড়ি।তবে আজ কেনো?
‘কিরে খাবার সামনে রেখে এভাবে বসে আছিস কেনো?
খেয়ে নে?
নীহারিকা বেগমের কথায় খাবারে মনোযোগ দিলো দীবা।তবে খাবার গলা দিয়ে নামতে চাইলো-না তার।কি এক যন্ত্রণার মধ্যে আছে সে।সেই যন্ত্রণার সাথে সাথে দ্বিধায়ও আছে।যন্ত্রনাটা হলো,অসুস্থ একটা বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছেন না সে।আর দ্বিধা হলো সেই সম্পর্ক থেকে নিজেকে মুক্ত করার পর,যাকে সে মনে-প্রাণে চাইছে তাকে সে পাবে তো?হয়তো বা।যারজন্য সিয়ামের সাথে সম্পর্কটায় তার ইতি টানতে হবে তাড়াতাড়ি না-হলে বিয়ে হয়েছে অথচ শ্বশুর বাড়িতে না থেকে বাপের বাড়িতে পড়ে আছে।আশেপাশে পরিচিত কতো মানুষের কতো কথা শুনতে হচ্ছে রোজ তাকে।তাদেরকে তো আর খুলে বলা যায়না সে কি পরিস্থিতির মধ্যে আছে।যারা অন্যের পরিবার সংসার নিয়ে সমোলচনা করে তারা-তো আর জানেনা,সেই পরিবারের সেই সংসারের ভিতরের খবর।তারা শুধু জানে মেয়েটার একটা ভালো বিত্তশালী ফ্যামিলিতে বিয়ে হয়েছিল,ছেলেটাও তো দেখতেশুনতে ভালো। তবে মেয়েটা কেনো বাপের সারক্ষন বাড়িতে পড়ে থাকে?
‘মা কবে আসবে বলেছে নাকি?সেদিন আমার সাথে একবার কথা হলো,সেভাবে তো কিছুই বললো না।
নীহারিকা বেগমের প্রশ্ন মুখ তুলে চাইলো দীবা।বললো- দুই একদিনের মধ্যে আসবে বললো।
‘বাড়িটা একটু শান্ত পরিবেশে আছে সেটা বুঝি ভালো লাগছেনা তোমার?ডেকে ডেকে ঝড় তুফান নিয়ে আসছো কেনো?
মা’কে উদ্দেশ্যে কথাটা বলেই কৌড়ির পাশাপাশি চেয়ারটায় বসে পড়লো ইভান।মায়ের চোখ রাঙানোকে সম্পূর্ণ ইগ্নোর করে বললো।-তোমার বেকার ছেলেটাকে একমুঠো খাবার দাও।
‘তুই কাকাে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললি?নিশ্চয় মা-কে?
দীবা কথাটা বলতেই চমৎকার হেসে দিলো ইভান।মুখে হাসি রেখেই পুরো ৩৬০ডিগ্রী এঙ্গেলো কথা ঘুরিয়ে বললো।—বাবা আর চাচ্চু,তোমাকে ড্রয়িংরুমে ডাকছেন।আামকে বললেন তোমার খাওয়া হলে ডেকে দিতে।ওবাড়ি থেকে সিয়াম ভাইয়ার বাবা মা নাকি ফোন দিয়েছেন।
দীবার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল।একপলক উপস্থিত সবার মুখের থেকে চোখ ঘুরিয়ে এনে, উঠে পড়ল সে।আপতত তার খাওয়া আর গলা দিয়ে নামবেনা।হাত ধুয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে পা বাড়ালো সে।সেদিকে তাকিয়ে নীহারিকা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইভানকে উদ্দেশ্য করে বিরক্ত হয়ে বললেন।—কথাটা মেয়েটার খাওয়া শেষ হলে বলা যেতোনা।এতোবড় ছেলে হয়ে গেছিস,এখনো বুঝে শুনে কথা বলতে শিখলি না।মেয়েটা অর্ধেক খাওয়া ছেড়ে উঠে গেলো।
‘বুঝেশুনেই তো বললাম।আর যার মেয়ের এই অবস্থা, তিনি মেয়ের চিন্তা না করে জমিজায়গার হিসাব নিয়ে সেই না সংসার করা শ্বশুর বাড়িতে পড়ে আছেন।আর তুমি মরে যাচ্ছো,তার মেয়ের চিন্তায়।
ছেলের সাথে তর্কে গেলেন না নীহারিকা বেগম।এই ছেলের সাথে যতো তর্ক যাবেন।উল্টোপাল্টা কথা ছাড়া এই ছেলের মুখ থেকে একটা কথাও বের হবেনা।মা চুপ হয়ে যাওয়ায় ইভানও আর কথা বাড়ালোনা।তবে সে যে চুপচাপ থাকার ছেলে নয়।পাশে থাকা কৌড়ির দিকে নজর দিলো।মেয়েটা সংকোচ নিয়ে বসে প্লেটের খাবার নেড়ে যাচ্ছে শুধু।গালে তুলছে কম। কি কারনে বুঝতে অসুবিধা হলো না ইভানের।তড়িৎ উঠে কৌড়ির অপর পাশের সামনাসামনি চেয়ারে গিয়ে বসলো সে।ফের কালকের মতো টেবিলে কনুই ঠেকিয়ে দু’হাত দুগালে চেপে কৌড়িকে উদ্দেশ্য করে বললো।
‘কি ব্যাপার ফুলকৌড়ি আশেপাশে তো কোথাও দাদাভাইকে দেখছিনা,তবে কেনোএতো ভয়ে ভয়ে সংকোচে খাবার খাচ্ছো? তবে তুমি মোটেও চিন্তা করো না,দাদাভাই নিচে নামলো বলে কথা ।তাই বলছি বিষম লাগার আগেই খাবারটা খেয়ে নাও।নাহলে আজকের বিষম লাগাটা কিন্তু তুমি কিছুতেই হজম করতে পারবে না।
বাবা সহজে নিজের অসুস্থতার কারনে রুমের বাহিরে খুব একটা আসেন না।প্রয়োজন ছাড়া।তবে আজ এসেছে।ইভান,ড্রয়িংরুমে দেখে এসেছে বাবা আর চাচ্চু কি বিষয় নিয়ে আলাপআলোচনা করছে।সেখানে ইতিমধ্যে স্বয়ং ঝামেলাকে-ও পাঠিয়ে দিয়েছে ইভান।এখন দাদাভাই নিচে নামবে।আর বাবা সেই ঝামেলার সমাধান সরূপ দাদাভাইয়ের কাছে পরামর্শ চাইবে।আর দাদাভাই তার ওই জলদগম্ভীর গলা দিয়ে পরামর্শ সরূপ কি বানী ছাড়তে পারে,এটা এখানে বসে মুখস্থ বলে দিতে পারে ইভান।আর সামনে বসা এই ভীতু মেয়ে যদি সেই গলার স্বরের কথাগুলো শোনে।তাহলে বিষম কনফার্ম হতে সময় লাগবেনা।কৌড়ির বোকা চাহুনীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে খাবারের প্লেটের দিকে ইশারা করলো ইভান।ফের মুখে বললো।
‘বসে আছো কেনো,জলদি খেয়ে নাও।
অসহায় নজরটা প্লেটে দিকে দিলো কৌড়ি।আজ পনেরো দিনে এই ছেলেটাকে সে খুব ভালোকরে চিনে ফেলেছে।কারও একটা দূর্বল পয়েন্ট পেলেই হয়,সেটা নিয়ে তাকে সামনে পেলেই শুরু হয়ে যাবে তাকে ক্ষপানো।এরজন্য এতো বড় ছেলে বড়মার কাছে বকা কম খায়না।তবুও ইতোড়ের মতো পিছনে লেগে থাকবে।এমন একটা ভাব,কে কি বললো বা বলছে এরা থোড়াই না তার যায় আসে।তবে ইভানের কথা সত্যিয়িত করে ড্রয়িং রুম থেকে গম্ভীর গলার স্বরটা আসতেই খাওয়া থেমে গেলো কৌড়ির।ইভানের মুখের দিকে চকিতে তাকাতেই দেখলো,মনোযোগ দিয়ে ভদ্রসভ্য ছেলের মতো খাচ্ছে।অথচ কৌড়ির তাকানোটা মাথা নিচু রেখেই বেশ বুঝতে পারলো ইভান।উপহাসের স্বরে বললো।
‘বলেছিলাম শোনোনি,এখন বিষম লাগার ভয়ে না খেয়ে বসে থাকো।
★
সকালে অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়েই নজরে পড়লো সোফায় বসা জাহিদ সাহেবকে।পাশাপাশি সিঙ্গেল সোফায় বসে আছেন, শাহেদ সাহেব।বিগত পনেরো দিনের বিজনেস ট্যুর সেরে গতকাল রাতে বাড়ি ফিরেছেন তিনি।আর তাদের মধ্যেমনি হয়ে মাথা নিচুকরে বসে আছে দীবা।নিভানের তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক আর বুদ্ধিদীপ্ত নজর মূহুর্তেই বুঝে নিতে পারলো,এখানে কি আলাপআলোচনা চলছে।সেদিকে মোটেই গুরুত্ব দিলো না নিভান।ধাপেধাপে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো সে।বড়বড় পা ফেলে ড্রয়িংরুম পার হতেই জাহিদ সাহেব ডাকলেন তাকে।
‘নিভান।তোমার সাথে জরুরি একটা বিষয় নিয়ে কথা বলার ছিলো।
জরুরি বিষয়টা কি?জানা সত্ত্বেও ডাক উপেক্ষা করলো না নিভান।পিছে ফিরে সরাসরি জাহিদ সাহেবের মুখের দিকে তাকালো।বুঝতে পারা সত্ত্বেও গম্ভীর কন্ঠে বললো।
‘বলুন।
জাহিদ সাহেব এবং শাহেদ সাহেব দু’জনের মুখ গম্ভীর। তবে দীবার আশাবাদী মুখটা উৎসাহিত হয়ে আছে,নিভানের মুখপানে চেয়ে।সেদিকে নিজের নজর ভুলেও ফেললোনা নিভান।নিজের দৃঢ় নজর শুধু স্থির রাখলো জাহিদ সাহেবের মুখপানে। জাহিদ সাহেব বললেন।
‘সিয়ামের বাবা মা ফোন দিয়েছিলেন,উনারা দীবাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন।কিন্তু আমার মনে-হচ্ছে, এতো কিছু হওয়ার পর সেখানে মেয়েটার না যাওয়াই উচিত।আর দীবাও চাইছেনা,সিয়ামের সাথে সম্পর্ক রাখতে। ওদিকে উনারাও অনুনয়বিনয় করছেন।ছেলে মানুষ ভুল করে ফেলেছে,তাই বলে সম্পর্কচ্ছেদ করার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।বিভিন্ন কথা অনুনয়-বিনয় করে বলছেন।উনাদের অনুনয়-বিনয় শুনে তোমার ছোটো চাচ্চুও বলছিলেন সবাই মিলে একজায়গায় বসে উভয়পক্ষের কথা দ্বারা একটা সিদ্ধান্ত নিতে, সমাধান বের করতে।কি করা যায় বলো তো?
‘এখানে আমি কি বলতে পারি?আমি মনে করছিনা,ওর বিষয়ে আমার সিদ্ধান্ত জানানোটা যথাযথ।সেটা আমি আগেও মনে করেনি,এখনো-ও মনে করছি-না।আর দ্বিতীয়ত ও একটা অ্যাডাল্ট মেয়ে।বিয়ের মতামতটা ও নিজেই নিয়েছিলো,আপনারা সেই মতামতের গুরুত্ব দিয়েছিলেন।এখন সেই সম্পর্কে ও সুখে নেই,ভালো নেই বা সেই সম্পর্কটা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেনা।সেটারও যথাযথ কারন দিয়ে ওকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন।ও যথেষ্ঠ বুদ্ধিমতি একটা মেয়ে এবং অ্যাডাল্ট পারসন।তাই ওর সিদ্ধান্তটা আপতত ওকেই নিতে দিন।তবে বুঝে এবং অন্যের দোষ ত্রুটিগুলোর সাথে সাথে নিজের দোষত্রুটি গুলোও খুঁজে।সেখানে ও থাকতে চায় নাকি না।আর
এখানে আমার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করার মতো প্রয়োজন বা গুরুত্ব কোনোটাই আমি দেখছিনা।
দৃঢ়কণ্ঠে কথাগুলো বলে একটু থামলো নিভান।তবে নজরের নড়চড় হলোনা।জাহিদ সাহেবের ভাবান্তর মুখের দিকে চেয়ে ফের বললো–আর একান্ত আপনারা ওর গার্ডিয়ান হয়ে যদি ভালোমন্দ মতামত গ্রহন করতে চান,তবে ওর কাছে জিজ্ঞেস করে নিন।সেই সিদ্ধান্ত ও খুশি মনে মেনে নেবে কি-না?যদি নেয়,তবে ছোটো চাচ্চুর পরামর্শ অনুযায়ী দুই পরিবার একসাথে হয়ে,দুজনের ভালোমন্দ কথা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন।এখানে আমার সিদ্ধান্তের একান্ত প্রয়োজনীতা নেই।জীবন-টা ওদের তাই সামনের পথটাও ওদেরকেই বেছে নিতে বলুন।
বড়বড় পা ফেলে চলে গেলো নিভান।সেদিকে ভারাক্রান্ত নজরে তাকিয়ে রইলো দীবা।নিভান এতোটা অবজ্ঞা করে তাকে।অথচ আগেও তারসাথে কম কথা হলেও এতোটা অবজ্ঞা করে কথা বলতোনা সে।নিভান বরাবরই প্রয়োজন ছাড়া কম কথা বলে,তাই বলে এতো রুক্ষ ভাষা!কতো সাবলীলভাবে কথাগুলো বলে গেলো সে।তারদিকে একবারও ফিরে চেয়ে দেখারও প্রয়োজন মনে করলোনা।তবে কি সত্যিই নিভানের ফেলে দেওয়া থুথু হয়ে গেলো।যার দিকে দ্বিতীয়বার চর ফিরে তাকাতে চায়না নিভান।অথচ সেই নিভানকে নিয়েই তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্য ঝগড়ার উৎপত্তি শুরু হয়।যদিও দোষ নিভানের নয়,তার জাগ্রত হওয়া ভুল সময়ের অনুভূতির।
★
একটা বিজনেস কন্ট্রাক্ট সাইন করার জন্য জাহিদ সাহেবের সিগনেচার দরকার।কারন জে এইস জে এর চেয়ারম্যান এখনো উনি।যদি-ও কোম্পানির নির্দেশনায় পরিচালনায় নিভানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয়।তবুও যেকোনো কোম্পানির সাথে কন্ট্রাক্ট সাইন করার আগে ডিলকৃত কোম্পানি সম্পর্কে উনাকে বিস্তারিত জানানো এবং কন্ট্রাক্ট সাইন করার জন্য অনুমতি নেওয়া প্রযোজ্য মনেহয় নিভানের।এবারও তাই করা হলো।তবে ডিল-কৃত কোম্পানি জাহিদ সাহেবের পুরানো।উনারা জাহিদ সাহেবের সাথে আগেও ব্যবসায় লেনাদেনা করেছেন।তখন জাহিদ সাহেবের ব্যবসার নীতি,উনার সদাচরণ বেশ ভালো লেগেছিলো।উনি অসুস্থ শুনে তাই সরাসরি উনার সঙ্গে একবার দেখা করতে চান।এবং কথাও বলতে চান।বিকালের সময়টাতে উনাদের,বাড়িতে আসার ইনভাইটেশন দিলো নিভান।সেটা বাড়িতে জানিয়েও দিলো।বিকাল গড়াতেই হাজির হলেন উনারা।
উনাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হলো বাড়ির অন্দরে নয়,বিভিন্ন ফুলে আচ্ছাদিত সাজোনো গার্ডেন এরিয়াতে।গোল চেয়ার টেবিলে বসার আয়োজন হলো।চা নাস্তা সহ বিভিন্ন খাবারে টেবিল ভরে উঠলো।মুখোমুখি বসে দু’পক্ষ কথাতে মশগুল।কোম্পানির বিভিন্ন কার্যক্রম এবং নিজদের ব্যাক্তিগত কথাও চললো সেখানে।তবে চারজন ব্যাক্তির মধ্যে, একজনের মুগ্ধ নজর গার্ডেন এরিয়ার অপরপাশে।যেখানে দুটো মেয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।তারমধ্য কালো সাধারণ একটা প্লাজু পরা সাথে কালো মিশালে সাধারণ চেইকের জামার সঙ্গে সুন্দর করে গায়ে মাথায় কালো উড়না জড়ানো মেয়েটার সৌন্দর্যে বিভোর হলো সে।বিকালের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য জেনো ফিকে পড়েছে মেয়েটার ওই সৌন্দর্যে।কালো ড্রেসআপে গোলগাল ফর্সা মুখটা নজর কেড়েছে বেশি।সাথে মেয়েটার মাথার ওড়না ভেদ করে কোমর ছাড়া হাঁটু ছুঁইছুঁই চুলগুলো।এই অধুনিক শহরের মেয়েদের কৃত্রিম সজ্জা চেহারা দেখতে দেখতে হঠাৎই এরকম সাদামাটা সৌন্দর্য দেখে নজর মুগ্ধ হতে বাধ্য হলো ছেলেটা।
তীক্ষ্ণ নজরে নিজের মুখোমুখি বসা ছেলেটাকে লক্ষ্য করলো নিভান।ছেলেটার মুগ্ধ নিষ্পলক নজরও তার এড়ালোনা।ছেলেটা,তাদের কোম্পানির সাথে ডিলকৃত কোম্পানির কর্ণধার নওশাদ চৌধুরীর ছেলে বিহান চৌধুরী।তবে ছেলেটা তার পিছনে এরকম নিস্পলক নজরে তাকিয়ে কি দেখছে?ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে ফিরতেই, নিজেও কয়েক সেকেন্ড সেদিকে তাকিয়ে পুনরায় সোজা নজর ফেললো বিহানের সুদর্শন মুখের দিকে।গলা জোরেশোরে ঝাড়লো নিভান।গলার স্বরের তীক্ষ্ণতায় হুঁশ ফিরলো বিহানের।মনেমনে লজ্জিত হয়ে নড়েচড়ে বসলো সে।তবে চেহারায় সেটা প্রকাশ পেতে দিলোনা।তবে নিভানের তীক্ষ্ণ নজর সেটা ঠিকই অনুধাবন করলো।পায়ের উপর পা তুলে,চেয়ারে গা ছেড়ে দিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে বসার ভঙ্গিমা চেঞ্জ করে সামনে বসা মানুষটার দিকে ঝুঁকে বসলো সে।গম্ভীর কন্ঠের তীক্ষ্ণতা বজায় রেখেই বললো।
‘ব্যাবসার নীতি কি জানেন?সততা।আর সততার নীতি কি জানেন?চরিত্র।আর চরিত্রের নীতি হলো ব্যক্তিত্ব।আর একজন পুরুষ মানুষের ব্যক্তিত্ব ঠিক না থাকলে তাকে সুপুরুষ বলা যায়না।আর একজন ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ না ব্যবসায়ের কর্ণধার হতে পারে।আর না সেই পুরুষটা কোনো স্পেশাল নারীর কাম্য।
লজ্জায় কান মাথা গরম হয়ে উঠলো বিহানের।মুখের বহির্ভাগ ধারন করলো রক্তিম। সামনে বসা অতি চতুর লোকটা যে তাঁকে বেশ লক্ষ্য করেছে বুঝতে পারলো বিহান।যদিও অল্প বয়সে নিজের তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা আর চতুরতা দিয়ে বাবার ব্যবসায় বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে লোকটা,এটা জানা সত্ত্বেও তারই সামনে বসে লজ্জাজনক কাজটা করে ফেললো কিকরে বুঝতে পারলোনা বিহান।তবে সত্যি বলতে মেয়েটার সাদামাটা সৌন্দর্য তাকে বিমোহিত করেছে।বিধায় কার সামনে বসে আছে অনুধাবনে ছিলোনা।ফের নিভানের তীক্ষ্ণ বাক্যে, বিহানের মুখাবয়ব কঠিন হয়ে এলো।
‘আমার বাড়ির প্রতিটি নারীই স্পেশাল।আমরা আশা রাখি,এবাড়িতে যত অপরিচিত ব্যক্তি প্রবেশ করবে আমাদের বাড়ির নারীদের নজরে পড়তেই তারা নজর নিচু করে নেবে।আমরা বরাবরই এমনই মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরী করি,করে আসছি।ব্যবসায়ী ক্ষেত্রেও এই নীতি শিরোধার্য মানা হয়।সো বি কেয়ারফুল মিস্টার বিহান।যেদিকে ভুলে নজর দিয়ে ফেলেছেন, সেদিকে জেনো আর ভুলে-ও নজর না যায়।মনের ভুলে-ও না।
চলবে…
গল্প কবো দিবো?এই প্রশ্নটা আমাকে কেউ করবেননা। কারণ আমি কখনো কথা দিয়ে কথা রাখতে পারিনা।স্যরি সবাই। আর যারা বলছেন গল্পে আবোলতাবোল অংশ বেশি।তাদের বলছি আমি শুধু একজন নায়ক আর নায়িকাকে নিয়ে গল্প লিখছিনা।একটা গল্পে পার্শ্ববর্তী চরিত্রগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।