#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
একাদশ পর্ব
“বকুলের মালা শুকাবে
রেখে দেবো তার সুরভি,
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে
মুছো না গো আমারই ছবি,
তুমি ভুলো না আমারই
না….ম।
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কিবা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম।
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম।”
রান্নাঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মিষ্টি কন্ঠে একটা গান শুনলো সামিহা। দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিলো, মার কন্ঠ। সামিহা মুচকি হাসলো। রাতে খাবার রান্না করছে আর সাথে গান গাইছেন।
কিছুক্ষণ পর জাহাঙ্গীর সাহেবের কন্ঠও শুনলো।
“আরে, এটা কোনো গান না। আমি একটা গান গাই।”
সামিহা দেয়াল ঘেষে দাঁড়ায়। বাবার গান না শুনে যাওয়া যায় নাকি। মায়ের গান কতই শুনেছে, বাবা কি আর সহজে গানে টান দেয়।
জাহাঙ্গীর সাহেব একটা কা°শি দিয়ে গান শুরু করলেন,
“লাল ফিতে, সাদা মোজা, স্কু-স্কুলের এর ইউনিফর্ম
ন’টার সাইরেন সংকেত, সিলেবাসে মনোযোগ কম।
পড়া ফেলে এক ছুট-ছুটে রাস্তার মোড়ে
দেখে সাইরেন মিস করা দোকানিরা দেয় ঘড়িতে দম।
এরপর একরা°শ কালো কালো ধোঁয়া
স্কুল বাসে করে তার দ্রুত চলে যাওয়া
এরপর বি°ষ°ণ্ন দিন, বাজে না মনবীণ
অবসাদে ঘিরে থাকা সে দীর্ঘ দিন, ওহ
হাজার কবিতা, বেকার সবই তা
হাজার কবিতা, বেকার সবই তা
তার কথা কেউ বলে না
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা।”
“দ্যা°ত, কিসব গান গাও তুমি। মেয়ে শুনলে।”
নার্গিস পারভিনের কথায় সামিহা হেসে রুমে চলে গেল। এই মিষ্টি সম্পর্ক একসাথে ৩০ বছর পেরিয়ে এসেছে। উথালপাতাল ঢেউ আসলেও হাত যে একটিবারের জন্যও ছাড়েনি।
বিছানায় শুয়ে সামিহা সারাহ্-র নাম্বারে ভিডিও কল দেয়। সারাহ্ কল কেটে অডিও কল করে।
“আপু, তোমাকে দেখবো।”
সারাহ্ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“পরে দেখিস। (একটু থেমে) কি করিস এখন?”
“কিছু না।”
“পড়াশুনা নেই?”
“আছে তো। মাত্রই তো টিউশন থেকে ফিরলাম, এখনো খাইনি রাতের খাবার।”
“ঐশী।”
আহনাফের ডাক শুনে সারাহ্ বলে,
“এখন রাখছি, বাই।”
“সে তো রাখবাই, সোয়ামী ডাকতেছে।”
“চুপ।”
“রাখো।”
গাল ফুলিয়ে কথাটা বলল সামিহা। বাবার গানের কথা সারাহ্-কে বলা হলো না।
সারাহ্ ফোন রেখে রুমে গেল। আহনাফ টেবিলে বসে আছে এখনো। সেই খাতা দেখায় ব্যস্ত সে। ওকে দেখে বলল,
“এখানে এসো।”
সারাহ্ ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আহনাফ সারাহ্-র হাতটা নিজের কপালে রেখে বলে,
“চুলগুলো টে°নে দাও, ঘুমাবো।”
সারাহ্ আস্তেধীরে মাথায় হাত বুলায়। আহনাফ বিরক্তি নিয়ে বলে,
“ভালো করে টা°নো একটু।”
জোরে চুল টে°নে দিতেই “এই আস্তে” বলে আহনাফ রেগে সোজা হয়। চোখ পা°কিয়ে তাকাতেই সারাহ্ হো হো করে হেসে উঠে। আহনাফের রাগ চলে যায়। মুখটা মলিন হয়ে উঠে।
“একটা কাজও ঠিকমতো করতে পারো না।”
আহনাফের কথায় সারাহ্ হাসি থামালো। আহনাফ আবারো খাতায় নজর দেয়। সারাহ্ বলল,
“খাবেন না?”
“না।”
“আমি গুণে দিবো, এখন তো খাবেন?”
আহনাফ হাসলো। বলল,
“ঐশী, এসব গুণাগুণি আমি করতে পারি।”
“আমি খাইয়ে দিলে খাবেন?”
আহনাফ ওর দিকে তাকাতেই সারাহ্ মুখে হাত দিয়ে চলে যেতে নিলে আহনাফ ওর হাত ধরে।
“তুমি নাকি কথা কম বলো, তোমার বাবা তো এটাই বলেছিল। তো এখন এতো কথা কোথা থেকে আসছে?”
সারাহ্ চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“সরি।”
আহনাফ ওর হাত ছেড়ে দিলো।
“সরিটরিতে কাজ নাই। বৃহস্পতিবারে আমরা ঢাকা যাচ্ছি, ওখানে তোমার বাবার সাথে বোঝাপড়া হবে।”
আহনাফ আবারো খাতা দেখতে থাকে। সারাহ্ নিজেই নিজেকে বলে,
“এই লোকটা নি°র্ঘা°ত মা°রবে আমাকে। মানে যা তা একটা।”
সারাহ্ বেরিয়ে যায়। আহনাফ আপন মনে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে একসময় কলমটা রেখে পেছনে ফিরে একবার দরজার দিকে তাকায়। যতটা ম্যাচিউর মেয়েটা হওয়া উচিত ছিল তার চেয়ে একটু কম।
______________________________________
সোমবার পেরিয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল। বিকালে ঢাকায় আসবে মৃত্তিকা। ইমতিয়াজের সাথে কোনো কথা হয়নি ওর, ইমতিয়াজও কল দেয়নি।
অফিস থেকে ইমতিয়াজ আজ ছুটি নিয়েছে। বাসা গুছিয়ে ওর কাছে রাখা সেই বিড়ালকে নিয়ে হাঁটতে বের হয়।
ইমতিয়াজকে এখন আর বিড়ালটা ভয় পায় না। কোলে নিলেই গা ঘেষে শুয়ে পড়ে। ইমতিয়াজ ওর তুলতুলে দেহে হাত বুলায়। বিড়ালটা ওর গা চেটে দেয়।
“এখনো তোর একটা নাম রাখতে পারলাম না। কি নাম রাখা যায় বল তো?”
অপরদিক থেকে “মিউ” বলে একটা প্রতিক্রিয়া আসে। ইমতিয়াজ আলতো হাসে। গোরস্থানে গিয়ে তাহমিনার কবর পরিষ্কার করে৷ বিড়ালটাকে ছেড়ে দিয়েছে হাঁটাহাঁটির জন্য।
“মিনা, ওখানে দেখো আমার একাকিত্বের সঙ্গী৷ তুমি আবার ওকে দেখে হিং°সা করো না।”
কথাটা বলেই ও হাসে।
কবরের পাশে বসেই পুরো দিনটা কাটায় সে। দুপুরে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। বিড়ালের খাবার বাটিতে ঢেলে বলে,
“খেয়ে নিবি কিন্তু। আমি সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরবো।”
গতকালও অফিসে যাওয়ার সময় এভাবেই বিকালকে খাবার দিয়ে গিয়েছিল সে। বিড়ালটা একা থাকায় বড্ড অভিজ্ঞ বোধহয়। বাসায় খেলাধুলা আর খেয়েদেয়ে দিব্বি কা°টিয়ে দেয়। বাইরে যায় না, আবার রাতে ঠিকই ইমতিয়াজের গা ঘেষে শুয়ে থাকে।
ইমতিয়াজ রেডি হয়ে নেয়। তারপর বেরিয়ে পড়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। গাড়ি আগে থেকেই ভাড়া করা ছিল তাই বের হতে খুব একটা বেগ পেতে হলো না।
এয়ারপোর্টের দুই নম্বর গেট দিয়ে মৃত্তিকার বের হওয়ার কথা। কিন্তু চারটার স্থলে পাঁচটা বেজে গেছে, এখনো মৃত্তিকাকে না দেখে ইমতিয়াজ ফোন বের করে মৃত্তিকার নাম্বারে কল দেয়।
এদিকে মৃত্তিকা বাইরে এসে ইমতিয়াজকে দেখছে। লম্বা, সুঠাম দেহী পুরুষটার চেহারায় এখনো বয়সের ছাপ নেই। কালো টি শার্ট, কালো প্যান্ট আর তার সাথে কালো স্ক্যাটসে একদম কালো হীরা লাগছে। যাকে বলে ব্ল্যাক ডায়মন্ড।
ফোনের ভাইব্রেশনে মৃত্তিকা চোখ সরায়। ফোন বের করে ইমতিয়াজের নাম্বার দেখে কল কেটে দেয়। ইমতিয়াজের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“হাই।”
মিষ্টি কন্ঠে ইমতিয়াজ চমকে তাকায়। নিজের বি°ভ্রা°ন্ত চেহারা সামলে নিয়ে বলে,
“ওহ, এসে পড়েছেন?”
“জি।”
ইমতিয়াজ হাত দিয়ে ইশারা করে বলে,
“তবে যাওয়া যাক?”
মৃত্তিকা মাথা নাড়ে।
গাড়িতে বসে ইমতিয়াজ সমানে ফোন দেখছে। কোনো একটা গেম সে খুব মনোযোগ দিয়ে খেলছে। সাধারণত সে গেম খেলেনা, তবে এখন মৃত্তিকার সাথে কথা বলতে চাচ্ছেনা বলে এরকম ব্যবস্থা।
মৃত্তিকা বারবার ওর দিকে তাকাচ্ছে। কথা বলার জন্য ছটফট করছে সে, অথচ ইমতিয়াজ একটাবারের জন্য ওর দিকে তাকায় না।
মৃত্তিকা নিজে থেকেই বলে,
“কেমন আছেন?”
ইমতিয়াজ ফোনের দিকে তাকিয়ে ছোট করে জবাব দেয়,
“ভালো।”
ইমতিয়াজের আগ্রহ নেই দেখে মৃত্তিকা আবারো বলে,
“আজ অফিস নেই?”
“আমি ছুটিতে আছি।”
“ছুটির কারণ কি আমি?”
এবারে ইমতিয়াজ ওর দিকে তাকায়। মাথায় পেঁচানো স্কার্ফ পেরিয়ে সামনের কেটে রাখা লালচে সোনালী চুলগুলো মুখে এলোমেলো হয়ে পড়েছে। লম্বা ভ্রমণে ক্লা°ন্তির ছাপ স্পষ্ট। হালকা গোলাপি ঠোঁটের কোনায় ছোট একটা কা°টা দাগ, যেন কেউ অযত্নে কে°টে দিয়েছে। কপালের কোনায় ছোট একটা পো°ড়া ক্ষ°ত।
ইমতিয়াজ প্রশ্ন করে,
“এতো কাঁ°টা ছেঁ°ড়া দাগ কেন? মা°রা°মা°রি করেন নাকি?”
মৃত্তিকা হেসে দিলো। বলল,
“না, মা°রা°মা°রির কারণে এসব হয়নি।”
“তবে?”
ভ্রূ উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো ইমতিয়াজ।
মৃত্তিকা জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো, ঢাকা শহরের উঁচু উঁচু বিল্ডিং আর রাস্তার ব্যবচ্ছেদে লাগানো কয়েকটা এলোমেলো গাছ দেখতে লাগলো। সৌন্দর্যহীন এই নগরীকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে সে।
ইমতিয়াজ আবারো ফোনে মনোযোগ দিলো। মৃত্তিকা বলে,
“আমাকে নিয়ে ঢাকার মেট্রোরেলে ঘুরাতে পারবেন?”
“তানজিমকে বললেই নিয়ে যাবে। আমার প্রয়োজন নেই।”
আগ্রহহীন ভাবে জবাব দিল ইমতিয়াজ।
“কিন্তু আমার তো আপনার সাথে ঘুরতে ইচ্ছা করে।”
কথাটা বলতে চেয়েও বলা হলো না মৃত্তিকার।
মনের কথা মনে রইলো। আনমনে হাত দিলো কা°টা ঠোঁটে। যে অ°ত্যা°চা°র ওর মাম সহ্য করেছে, তার কাছে এটুকু কিছুই না।
মৃত্তিকার অন্যমনস্ক ভাবটা ইমতিয়াজ খেয়াল করেছে, কিন্তু কিছুই বলেনা।
______________________________________
আহনাফ বাসায় নেই। সারাহ্ আসরের নামাজের পর থেকেই রান্নাঘর গোছাতে ব্যস্ত। সারাদিন সময় পায় না। এখন নিজের মতো করে গুছিয়ে রাখছে সবকিছু। যা যা রান্নাঘরে দরকার তা ওখানে রাখছে আর যা যা ডাইনিং এর দরকার তা ডাইনিং এ রাখছে।
এরমধ্যে আহনাফ বাসায় এসেছে। মেইন দরজা খোলা ছিল। ডোর হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে ভিতরে এসেই দেখে ঘর এলোমেলো।
ড্রইংরুমের সোফার কভার বদলে ফেলা হয়েছে। টেবিলের উপরে ফুলদানিতে থাকা নকল ফুলগুলো বদলে সতেজ ফুল রাখা হয়েছে। ডাইনিং এখনো গোছানোর কাজ চলছে।
সারাহ্ ওকে দেখে বলল,
“এদিকে আসবেন না, আমি কাজ করছি।”
আহনাফ ঠোঁট উলটে ভ্রূ কুঁচকায়। বলে,
“এসব কাজ?”
ডাইনিং টেবিলের উপরের কাপড়টা সরাতে সরাতে সারাহ্ বলল,
“হ্যাঁ, এটা কাজ। নিজের সংসার নিজে গোছানো, কাজ নয়?”
আহনাফ থমকে যায়। সারাহ্-কে দেখে মনোযোগ দিয়ে। রাগের মাথায় বিয়ে করেছে সে, সেই রাগে প্রথমদিনই ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে।
সারাহ্ ওকে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
“কি হলো? এখনো দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”
আহনাফ মাথা নেড়ে বোঝায় কিছু না। প্লেটগুলো রাখতে রাখতে সারাহ্ বলে,
“তাহসিনা কে?”
ব°জ্র°পা°তের মতো কথাটা আছড়ে পড়ে আহনাফের কানে। সারাহ্ কাজ ফেলে এগিয়ে আসে। ভ°য়ং°কর একটা সাহস করেছে সে।
আহনাফ ওর দিকে তাকায়। সারাহ্-র চোখমুখে এখনো জানার আগ্রহ। সারাহ্ ওড়না দিয়ে নিজের হাত মুছতে মুছতে বলে,
“বলতে না চাইলে ঠিক আছে।”
সারাহ্-কে টা°ন দিয়ে চেয়ারে বসিয়ে আহনাফ শান্তভাবে বলে,
“কেন জানতে চাইছো?”
সারাহ্ উঠে যেতে নিলে আহনাফ ওর দিকে ঝুঁকে বলে,
“উত্তর দাও।”
“আপনি ওইদিন এই নাম নিয়ে চিৎ..”
আহনাফ ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ওই ঠোঁটে স্পর্শ করতেই সারাহ্ থেমে যায়, ভ°য়ে কুঁচকে যায় সে। আহনাফ বলে,
“তাহসিনা এই স্পর্শে লজ্জা পেতো।”
সারাহ্ ওকে ধা°ক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। কপাল কুঁ°চকে গলা ভারি করে বলে,
“ছি, নিজের বউয়ের কাছে এসব কি বলছেন?”
আহনাফ শার্ট ঝেরে আরেকটা চেয়ার টে°নে বসে বলল,
“বউ জানতে চাইলে আমার কি দোষ?”
“একটা ফালতু লোক আপনি। বাইরে একটা মেয়ের অসভ্যতা করেছেন, আবার ঘরে বউ নিয়ে এসেছেন। (একটু থেমে বিড়বিড় করে) না জানি মেয়েটা কেমন ছিল।”
আহনাফ কথাটা শুনেছে, এবারে সে বেশি রেগে যায়। তাহসিনাকে নিয়ে এধরনের মন্তব্য করা যে সারাহ্-র উচিত হয়নি। আহনাফ উঠে সারাহ্-র দিকে অ°গ্নি°দৃ°ষ্টি নিক্ষেপ করে সোজা বেরিয়ে যায়। সারাহ্ কিছু বলতে চেয়েও পারে না। এলোমেলো রুমটা আর গোছানো হলো না। কান্নার ভারি রেশে সে আর স্থির থাকতে পারলো না, ফ্লোরে বসে পড়লো।
______________________________________
সন্ধ্যা সাতটার দিকে তানজিমদের বাসায় আসে ইমতিয়াজ ও মৃত্তিকা। মৃত্তিকা প্রথমেই চলে যায় মমতাজ বেগমের রুমে। ইমতিয়াজ সোফায় বসে।
মমতাজ বেগমের সাথে কথা বলে মৃত্তিকা বেরিয়ে আসে। তারপর ডাইনিং-এ চেয়ার টে°নে বসে সে। লুৎফর সাহেব এসে বলেন,
“মা মিউকো, ফ্রেশ হয়ে আসো।”
মৃত্তিকা উনার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আংকেল, বসেন।”
ইমতিয়াজের পাশে তানজিম বসে ছিল। ইমতিয়াজ তানজিমের কানের কাছে গিয়ে বলে,
“তোমার আপুর কপালে কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করো তো।”
তানজিম একটু জোরে বলল,
“মিউকোপু, ইমতিয়াজ ভাইয়া জানতে চাইছে তোমার কপালে কি হইছে?”
মৃত্তিকা চমকে উঠে ইমতিয়াজের দিকে তাকালো। ইমতিয়াজ মাথা নিচু করে ফেলে। কথাটা বলার পর তানজিম বুঝতে পারলো সে ভুল কিছু বলেছে।
লুৎফর সাহেব বলল,
“হ্যাঁ তো মিউকো, কি হইছে?”
মৃত্তিকা কপালে হাত দিয়ে বলে,
“বাবা, গতকাল বাসায় এসেছিল।”
মৃত্তিকা থেমে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
“সি°গা°রে°ট লাগিয়েছে। ধ°ম°ক দেয়ায় চ°ড়ও দিয়েছে। (একটু থেমে) মামের সাথে যে আচরণটা করেছিল সেটাই আমার সাথে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।”
ইমতিয়াজ চুপ থাকে না। হঠাৎ কি°ড়মি°ড়িয়ে বলে,
“আপনি উলটো একটা চ°ড় দিতে পারেননি?”
“বাবা হয় উনি।”
কথাটা বলে মৃত্তিকা ফুঁপিয়ে উঠে। লুৎফর সাহেব সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা খুঁজছেন। কিন্তু বাবার কাছ থেকে এমন আচরণ পাওয়া মেয়েকে কি বলে সান্ত্বনা দিবেন উনি।
ইমতিয়াজ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মৃত্তিকার দিকে। মেয়েটার চোখেমুখে অসহায়ত্ব। সং°গ্রামের চিহ্ন তার মুখে, কপালে।
কিছুক্ষণ পর মৃত্তিকা থামে। বলে,
“আমার আর সহ্য হচ্ছে না আংকেল। নিজের মৃ°ত্যু কামনা করা পা°প। অথচ আমার এই পা°প করতেই মন চায়।”
সামনে থাকা জগ থেকে পানি ঢেলে মৃত্তিকা একটু পান করে। তারপর বলে,
“মাম তো আরো কষ্ট স°হ্য করেছে। বারবার মনে হয় মামের মৃ°ত্যুর জন্য ওই লোকটাই দায়ী।”
ইমতিয়াজ বড় বড় চোখে মৃত্তিকার দিকে তাকায়। উপস্থিত বাকিরাও অবাক। রিপা বেগম তো একা মা°রা যাননি, সাথে তাহমিনা আর তাহসিনাও ছিল। এই দুর্ঘটনায় অপরপাশের মাইক্রোবাসের চালকও মা°রা যায়। তবে এটা পরিকল্পিত কিভাবে হতে পারে?
ইমতিয়াজের হাত মু°ষ্টি°বদ্ধ হয়। ওই লোকটার উপর রাগ হচ্ছে। যদিও রাগের কারণ নির্ধারিত নয়, মৃত্তিকার উপর অত্যাচার নাকি তাহমিনার মৃ°ত্যুর সন্দেহ?
চলবে……