অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী দশম পর্ব

0
267

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

দশম পর্ব

ফজরের নামাজের পর গো°র°স্থানে এসেছে ইমতিয়াজ। ভোরের আলো পুরোপুরি ফুটেনি। গো°র°স্থান জুড়ে নিরবতা। এতো এতো মানুষ এখানে আছে অথচ ইমতিয়াজ ছাড়া আর কেউ নিশ্বাস নিচ্ছে না, কথা বলছে না।

তাহমিনার কবরের পাশে নিরবে বসে আছে সে। মনে তার একটাই কথা,
“আমাকে ক্ষমা করো মিনা, এ মনে তুমি ছাড়া আর কাউকে স্থান দেয়া ভুল। অপরাধ আমার। ক্ষমা করো তোমার সৌরভকে।”

কবরের মাটির উপর হাত বুলায়। চোখের জল গাল বেয়ে গড়িয়ে মাটিতে পড়ে। ইমতিয়াজ চোখ মুছে না।

“কার কবর?”

নিরবতা ছি°ন্ন করে কারো কন্ঠ কানে আসলে ইমতিয়াজ চমকে উঠলো। চোখ মুছে নাক টেনে পাশে তাকিয়ে দেখে একজন মধ্যবয়স্ক নারী দাঁড়িয়ে আছে।

ইমতিয়াজ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমার স্ত্রীর।”

মহিলাটি একটু হাসলেন। কয়েকটা কবর পড়ে গিয়ে একটা কবরের পাশে গিয়ে বললেন,
“এটা আমার মেয়ের কবর। একদিন সকালে উঠে দেখি আমার মেয়ে নেই। রাতে ঘুমের মধ্যেই চিরকালের ঘুমে চলে গেছে সে।”

ইমতিয়াজ চেয়ে রইলো মহিলাটির দিকে। একফোঁটা পানি নেই মহিলাটির চোখে, কেমন যেন শান্ত শীতল দৃষ্টি। মহিলাটি আবার বলল,
“পাশেরটা আমার ছেলে আর তার পাশেরটা আমার স্বামীর কবর। ওইযে বেলী গাছটা দেখছেন, আমি লাগিয়েছিলাম।”

মহিলাটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আমার সাহেব অসাধারণ মানুষ ছিলেন। খুব ভালোবাসতেন। জানো আমার ছেলে মেয়েরা বেঁচে থাকলে তোমার মতোই হতো।”

ইমতিয়াজ চেয়ে রইলো অপলক। এ মহিলা জীবনে কত কষ্ট পেয়েছে। কষ্ট জমে জমে শক্ত পাথর হয়ে গেছে। এই শক্ত মানুষটাকে এখন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কোনো সৃষ্টির পক্ষে ভা°ঙা সম্ভব নয়।
______________________________________

সকাল সাড়ে সাতটা বেজে গেছে। নাস্তা সেরে এসে দ্রুত তৈরি হচ্ছে আহনাফ। সারাহ্ রুমে আসলে আহনাফ বলল,
“কলেজে যাবে?”

সারাহ্ ওড়না আটকাতে আটকাতে বলল,
“জব ছেড়ে দিতে বলছেন?”

আহনাফ হাসলো।
“না, সেসব বলছি না। যাবে কিনা জিজ্ঞাসা করছি।”
“হুম।”

আহনাফ আয়নার সামনে থেকে সরে ওকে জায়গা দিলো। সারাহ্ হিজাবটা বাঁধতে বাঁধতে আয়নায় আহনাফকে দেখছে।

কাল সন্ধ্যা থেকে হঠাৎ করেই তার আচরণ বদলে গেল। প্রথমদিনের সেই রূ°ঢ় ভাষা আর অগোছালো আচরণটা নেই। যেন সে নিজের সৌন্দর্য বজায় রাখছে।

“একটা কথা বলি?”

সারাহ্-র কথায় আহনাফ ব্যাগ গুছাতে গুছাতে বলল,
“বলো।”
“সেদিন ওই ছাত্রীকে তো কিছু বললেন না, প্রেম প্রস্তাব দিলো কোনো প্র°তি°বাদ করলেন না। অথচ আমার সাথে..”

আহনাফ ওর দিকে এগিয়ে আসতেই থেমে গেল। আহনাফ বলল,
“হুম, তারপর?”
“ওই..”

সারাহ্ থেমে যায়। সারাহ্ নিজের গলায় হাত দিতেই আহনাফ হেসে ড্রেসিংটেবিল উপর থেকে ফোনটা নিয়ে সরে এসে বলল,
“মেয়েটা ছোট মানুষ, আবেগের বয়সে ঘুরছে, চোখে লাল চশমা। জীবন নিয়ে ধারণা হয়নি তাই বলিনি কিছু।”

ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,
“তুমি তো যথেষ্ট এ°ডা°ল্ট প্লাস ম্যাচিউর। (একটু থেমে) জলদি এসো।”
“হুম।”
বলে সারাহ্ মাথাটা আলতো নাড়ালো।

আহনাফ বেরিয়ে যাওয়ার সময় আফরোজা বলে উঠে,
“বিয়ের একদিন পেরোতে না পেরোতেই কলেজে যাচ্ছিস, মেয়েটাকে নিয়ে একটু ঘুরতে তো যেতে পারিস।”

জুহাইব ওকে সমর্থন করে বলল,
“ঠিক তো আহনাফ, এসব ঠিক নয়।”

সারাহ্ বেরিয়ে আসলো, জাবেরের গাল টে°নে আদর করছে সে। আহনাফ সারাহ্কে বলল,
“ঐশী, বউয়ের হ্যাঁ তে হ্যাঁ বললে বউ কি খুব খুশি হয়?”

সারাহ্ মুখ টি°পে হাসলো। আহনাফ আবারো বলে,
“তবে ঐশীর কথায়ই আমি কলেজে যাচ্ছি, বউ বলে কথা।”

সারাহ্-র হাত ধরে আহনাফ বেরিয়ে এলো। সারাহ্ চেয়ে আছে ওর দিকে। অবলীলায় বউ বলে চলে আসলো। বাসার বাইরে এসে হাত ছেড়ে দিলো আহনাফ।

একটা অটোতে উঠলো ওরা। সারাহ্ আহনাফের ব্যাগটার দিকে ইশারা করে বলল,
“এটাতে কি আছে?”
“ল্যাপটপ আর প্রশ্ন। আজকে পরীক্ষার প্রশ্ন জমা দিতে হবে।”
“ওহ, সিনিয়র টিচারদের কত কি দিতে হয়?”

আহনাফ মুখ বাঁকিয়ে হাসলো। সিটে হেলান দিয়ে বলল,
“ভাবছি একটা গাড়ি কিনবো, শেয়ার নিবে?”
“মানে?”

আহনাফ বুঝিয়ে বলল
“দেখো ফিফটি ফিফটি ভাগ। আমি হাফ টাকা দিবো আর তুমি হাফ। ব্যস, দুজনেই চড়তে পারবো৷”

সারাহ্ মাথা নাড়িয়ে বলল,
“আইডিয়া ভালো, বাট এতো টাকা তো আমার এখন নেই।”
“ধীরে ধীরে দিও।”
“ওকে।”

দুজনে আর কোনো কথা বলল না। কলেজে পৌঁছে দুজনে দুই রাস্তায় চলে গেল। আহনাফ বারান্দায় দাঁড়িয়ে একবার তাকালো সারাহ্-র দিকে। সারাহ্ ততক্ষণে টিচার্স রুমে চলে গেছে।
______________________________________

“ভালোবাসবো তোকে।”

এমন একটা চিরকুট পেয়ে বি°র°ক্ত হয়ে আছে সামিহা। একটা দুইটা না পর পর চারটা। ওকে নিশানা করে কেউ ছুঁ°ড়ে মে°রে°ছে।

তানজিম এসে বসতেই তানজিমকে কাগজগুলো দেখালো সামিহা। তানজিম দেখে বলল,
“ছি, ছি, সামি। তোকে আমি ভালো ফ্রেন্ড ছাড়া আর কিছু ভাবি না।”

সামিহা এমনিতেই রেগে ছিল তানজিমের কথায় আরো রেগে বলে,
“থা°প°ড়াবো তোকে। এগুলো আমাকে কে যেন দিয়েছে।”

তানজিম হো হো করে হেসে উঠে। উঠে দাঁড়িয়ে চেঁ°চিয়ে চেঁ°চিয়ে বলে,
“আমাদের মিস সামিহাকে কেউ প্রেমপত্র দিয়েছে। তোরা কে দেখবি রে, দেখতে আয়।”

চার-পাঁচ জন ছেলে-মেয়ে ঠিকই আসলো। সামিহা মুখের উপর হাত দিয়ে তানজিমকে বলল,
“থাম তুই, তানজিম।”

সবাই একে একে এসে বেশ জোরে জোরে চিঠিগুলো পড়তে থাকে। সামিহা রেগে উঠে বেরিয়ে যায়। তানজিম ওকে ডেকে বলে,
“সামি, দাঁড়া।”

সামিহার পেছন পেছন তানজিমও বেরিয়ে এলো। সামিহা দৌড়ে চলে যেতে নিলে তানজিম ওর হাত টে°নে বলল,
“থাম না, হইছে অনেক। যে দিছে, দিছে। সামনে এসে বলার সাহস নেই তো এমনই করবে। ক্লাসে আয়।”

সামিহা আঙুল তুলে বলল,
“হাসবি আর আমাকে নিয়ে?”
“হাসবো না, সত্যি।”

সামিহা একটু সরে এসে বলে,
“কান ধরে তিন সত্যি বল।”

তানজিম ওর কথা মতো কান ধরে তিন সত্যি বলল। পাশ থেকে যাওয়া দুইজন জুনিয়র মেয়ে ওকে দেখে হেসে দিলো।

সামিহা ওদেরকে ধ°ম°কে বলল,
“ওই ফার্স্টিয়ার, মা°ই°র খাবি।”

মেয়েগুলো চলে যেতেই তানজিমের একহাত জড়িয়ে ধরে ক্লাসে গেল সামিহা। ভালোবাসি যে যতই বলুক, সামিহার ভরসার জায়গা তো এই একটাই।
______________________________________

এক সপ্তাহ পর,
গতকালই আফরোজা, জুহাইবের সাথে আব্বাস সাহেব বাংলাদেশে ছেড়েছেন। আজকে পুরো বাসা ফাঁকা লাগছে সারাহ্-র কাছে। কেমন যেন নি°স্ত°ব্ধ।

মাত্রই কলেজ থেকে বাসায় ফিরেছে, এসেই রান্নাঘরে গেল সারাহ্। খাবার গরম করতে দিয়ে ফ্রেশ হতে গেল। ফিরে এসেই অবাক, আহনাফ ইতোমধ্যে খাবারের টেবিল সাজিয়ে ফেলেছে।

সারাহ্-কে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল,
“খেতে বসো।”

সারাহ্ মাথা নেড়ে টেবিলে বসতে বসতে বলল,
“ম্যাডামরা সবাই বিয়ের ব্যাপারে জেনে গেছে।”

আহনাফের তেমন একটা হেলদুল হলো না। সে নিজের মতো খাবার নিতে নিতে বলল,
“না জানার কথা?”
“সেটা বলছি না, উনারা ভাবছেন (একটু থেমে) লাভ ম্যারেজ।”

আহনাফ মুখের খাবারটুকু গিলে বলল,
“ঐশী, জানো তো এখন ভাইবোন রাস্তায় হাতধরে হাঁটলেও মানুষ ভাবে ওরা প্রেম করছে। মামা অথবা চাচা, আই মিন কোনো মাহরামকে নিয়ে হাঁটলেও, যদি উনার বয়স একটু কম হয় তখনও ভাবে প্রেমিক যুগল। (একটু থেমে) সেখানে আমাদের নিয়ে এসব ভাবাটা অস্বাভাবিক নয়।”

সারাহ্ চুপ করে খেতে লাগলো। আহনাফের কথা যুক্তিযুক্ত। দেশের পরিস্থিতি এমন একটা জায়গায় চলে এসেছে যে এসব ভাবনা সহজেই মানুষের মনে বাসা বাঁধে।

খাওয়া শেষে দুজনে মিলে টেবিল গুছিয়ে ফেলে। তারপর আহনাফ চলে গেল পড়ার টেবিলে। অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার খাতা চেক করছে। সারাহ্ এখন একা একা অনুভব করছে।

কি করবে ভেবে না পেয়ে ড্রইংরুমে বসে ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে স্ক্রল করতে থাকে। আহনাফ এসে কয়েকটা খাতা ওর সামনে দিয়ে বলে,
“নাম্বার গুণে আমাকে একটু হেল্প করো।”

সারাহ্ সোফায় আরাম করে বসে বলে,
“আমি কেন? আপনার খাতা, আপনি দেখেন। দায়িত্বটা আপনার। এতো কেয়ারলেস কেন?”

আহনাফ ওর দিয়ে ঝুঁ°কে সোফায় হাত দিয়ে বলল,
“যা বলেছি তাই করো। শুধু শুধু রাগাবে না আমাকে। আমার রাগ যে ভালো না তা তুমি জানো।”

সারাহ্ চোখ বড় বড় করে বলে,
“করবো না একবারও বলেছি নাকি? সরুন, গুণে দিচ্ছি।”

আহনাফ রুমে চলে আসলো। খাতা দেখতে বসে সারাহ্-র চেহারাটা মনে করে হাসতে থাকলো। মেয়েটা যে ওকে প্রচন্ড ভয় পায়।

হঠাৎ ওর মুখের হাসিটা উবে গেল। ওর রাগে তাহসিনা কি করতো। তাহসিনার হাসিতেই যে ওর রাগটা শেষ হয়ে যেত। তাহসিনা ওর গাল টেনে দিয়ে মুখটা হাসি হাসি করে দিতো। ওর যে অনুভূতি কেউ বুঝে না সেটা তাহসিনা বুঝতো।

আহনাফ কলম ছুঁ°ড়ে ফেলে চেঁ°চিয়ে উঠে,
“তাহসিনা।”

সারাহ্ চমকে উঠে। মাত্রই সে একটা অচেনা নাম শুনেছি। তড়িঘড়ি করে উঠে রুমে গেল।

আহনাফ সারাহ্-র দিকে একটু তাকিয়ে টেবিলে মাথানিচু করে বসে পড়ে। সারাহ্ এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায়না। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে।

আহনাফ জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। বেশ কিছু সময় পর সারাহ্ এগিয়ে যায়। কলমগুলো তুলে টেবিলে রাখে। আহনাফ মাথা তুলে ওর দিকে তাকায়।

সারাহ্ খাতাগুলো গুছিয়ে রেখে বলে,
“এসব পরে দেখবেন, এখন একটু বিশ্রাম নিন।”

আহনাফের হাত ধরে ওকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে,
“শুয়ে পড়ুন।”

সারাহ্ চলে আসতে নিলে আহনাফ ডাকলো,
“ঐশী।”
“জি।”
সারাহ্ ফিরে তাকায়।

আহনাফ আর কিছু না বলে শুয়ে পড়লো৷ সারাহ্ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রুমের বাইরে চলে আসে। ওর জানা হলো না তাহসিনাকে নিয়ে, তবে নিজের স্বামীর মুখে অন্য মেয়ের নাম শোনাটা সত্যিই কষ্টের। ড্রইংরুমে গিয়ে আবারো আগের জায়গায় বসে পড়লো সে।
______________________________________

টিকেট কিনে বাসায় এসেছে মৃত্তিকা। চাকরি ছেড়ে দিয়েছে, বাসাটাও ভাড়া দিয়ে দিয়েছে। এখন শুধু দেশে ফেরার পালা। মামের স্মৃতি নিয়ে দেশে যাবে। এমনভাবে যেতে হবে যেন তার বাবা টের না পায়। এই লোকের হাত থেকে নি°স্তা°র চায় সে।

ডি°ভো°র্সের সময় সবচেয়ে বেশি ঝা°মেলা হয়েছিল ওকে নিয়েই। ওর বাবা চেয়েছিল ওকে নিজের কাছে রাখতে, রিপা বেগম চাননি। জোর করে নিয়ে এসেছিলেন মেয়েকে। পরে আদালতও একই আদেশ দিলে রাগে রিপা বেগমকে চ°ড় দিয়েছিল এই লোকটা।

ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে মৃত্তিকা তানজিমকে কল করে। কয়েকবার কল বাজলেও রিসিভ হয় না। তারপর সে কল দেয় লুৎফর রহমানকে।

রিসিভ হলো,
“আসসালামু আলাইকুম, আংকেল।”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কেমন আছো মা?”
“ভালো আছি, আংকেল। আসলে আংকেল (একটু থেমে) আমি দেশে আসবো। এই দুইদিন পরেই মানে মঙ্গলবার ফ্লাইট।”

লুৎফর সাহেব খুশি হলেন। বললেন,
“খুব ভালো তো। ইমতিয়াজকে বলে দিবো ও তোমাকে এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে আসবে।”

মৃত্তিকার হাসিমুখটা চুপসে যায়। একটা ঢোক গিলে বলল,
“আংকেল, উনাকে শুধু শুধু ব্যস্ত করবেন কেন? আপনি যদি আসতেন?”

মৃত্তিকা একটু ইতস্তত বোধ করছে। লুৎফর সাহেব বললেন,
“তোমার বড়মণির সেশন আছে ওই, তাই আমি তো হাসপাতালে থাকবো মা। ইমতিয়াজ যাবে কিনা আমি জিজ্ঞাসা করে জানাচ্ছি তোমাকে।”

মৃত্তিকা আর অমত করলো না। বড়দের মুখে মুখে এতো তর্ক সে করতে পারে না। উনারা ইমতিয়াজকে ভরসা করেন, করাটা স্বাভাবিক। সে ভরসার যোগ্য, কিন্তু মৃত্তিকা যে অন্য কোথাও আটকে যাচ্ছে বারবার।

মৃত্তিকা একটা ঢোক গিলে বলল,
“আংকেল আপনার কি কিছু সময় হবে? (একটু থেমে) কিছু কথা বলতাম।”
“বলো, মা।”

মৃত্তিকা একটু একটু করে ওর বাবার আচরণের পুরোটার জানালো লুৎফর রহমানকে। ওর বাবা ইতালি এসেছে, ওকে কি কি বলেছে এবং কিভাবে বি°র°ক্ত করেছে সব জানায় ও। কথা বলতে বলতে কান্না করে দেয়।
______________________________________

ইমতিয়াজ নতুন বাসায় চলে এসেছে পরশু। এবারে দুইরুম আর ডাইনিং এর বাসা নিয়েছে। একটা রুম সাবলেট দেয়ার চিন্তাভাবনা আছে।

ঘড়িতে সন্ধ্যা ৭ টা, অফিস থেকে ফিরেই বাসা পরিষ্কার করছে সে। এমনসময় মিউ মিউ শব্দ শুনে তা অনুসরণ করে খাটের নিচে এক বিড়াল খুঁজে পায়। বিড়ালটাকে বের করে এনে দেখে পায়ে ক্ষ°ত।

“দেখে তো হাঁটবি নাকি?”

মায়া হলো তার, বিড়ালটাকে নিয়ে ছুটলো ভে°টের কাছে। পায়ে পরীক্ষা করে ওষুধ নিয়ে আসলো।

বাসায় এসে একটা ঝুড়িতে বিড়ালটার থাকার ব্যবস্থা করলো। ফ্রিজ থেকে মাছ নামিয়ে নিয়ে সিদ্ধ দিয়ে আসলো। বিড়ালটা এখনো ওকে একটু ভ°য় করছে বোধহয়।

ইমতিয়াজ পুরোনো কাঁথা দিয়ে গরম জায়গা বানাচ্ছে। এমনসময় ফোন বেজে উঠলো। তানজিমের নাম্বার দেখে রিসিভ করলো।

“হ্যাঁ, তানজিম।”
“ভাইয়া, একটা সমস্যা হয়েছে।”

সমস্যার কথায় ইমতিয়াজ ভয় পেল। বলল,
“কি সমস্যা? মা ঠিক আছে?”

ইমতিয়াজের উ°ত্তে°জনায় তানজিম শান্তভাবে বলল,
“আম্মু, ঠিক আছে। সমস্যাটা মিউকো আপুর।”

ইমতিয়াজের কপাল কুঁচকে গেল। মিউকো মানে মৃত্তিকার সমস্যার সমাধান ওর কাছে কিভাবে থাকবে?

তবুও বলল,
“কি হয়েছে?”
“আপু কল দিয়েছিল, উনার বাবা ইতালিতে গেছে। সেটা নিয়েই বাবার সাথে কান্নাকাটি করলো।”
“এখন আমি কি করতে পারি?”
“আপু মঙ্গলবার দেশে আসবে, তোমাকে শুধু এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে আসতে হবে।”

তানজিমের কাছ থেকে ফোনটা নিলো লুৎফর সাহেব। বলল,
“ইমতিয়াজ বাবা, মেয়েটা তো অনেকদিন হলো দেশে আসে না। তাই চিনে না রাস্তাঘাট। আমিও তো সেদিন তোমার মাকে…”

উনার কথার মাঝেই ইমতিয়াজ জবাব দিলো,
“ঠিক আছে। কয়টায় আসবে জানালেই হবে।”

ইমতিয়াজ ফোন রাখলো। তানজিমের নাম্বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটা ম্যাসেজ এসেছে। ম্যাসেজে খুলে দেখলো মৃত্তিকার নাম্বার পাঠিয়েছে। সাথে লেখা,
“ভাইয়া এটা আপুর নাম্বার, আপনি নক দিলেই টাইম জানিয়ে দিবে।”

রিপ্লাই না দিয়ে ফোন রেখে ইমতিয়াজ নিজের কাজে মন দিলো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here