অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী নবম পর্ব

0
262

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

নবম পর্ব

“আজ তো ক্লাস নেই?”

আফরোজার কথায় সারাহ্ মাথা নাড়িয়ে বলল,
“না।”

আফরোজা ঘড়িতে দেখে সকাল সাড়ে নয়টা। বলল,
“আহনাফ উঠেনি এখনো?”

সারাহ্ মাথানিচু করে হালকা নাড়ালো। হঠাৎ করে হয়ে যাওয়া এ বিয়েতে মত থাকলেও সংকোচ যে সহজে কাটে না। আফরোজা মুচকি হেসে কাজে মন দিলো। মূলত সে নাস্তা সাজাচ্ছে, সারাহ্ও হাতে হাতে একটু সাহায্য করার চেষ্টা করছে।

আব্বাস সাহেব ডাইনিং-এ এসে বললেন,
“আহনাফ কোথায়? খেতে ডাকো।”

আফরোজা সারাহ্কে ইশারায় আহনাফকে নিয়ে আসতে বললে সারাহ্ রুমে চলে গেল। দরজা বুজিয়ে দিয়ে আহনাফের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ডাকতে নিয়েও থেমে গেল সে। ভোরের ঘটনার কথা মনে হয়ে গলায় হাতটা চলে গেল।

একটা ঢোক গিলে ডাকলো,
“খেতে আসুন।”

আহনাফ চোখ বন্ধ করেই বলল,
“খাবার আমার কাছে আসবে না?”

“পাগল নাকি?”

বিড়বিড় করে কথাটা বলে আহনাফকে হালকা ধা°ক্কা দিয়ে বলল,
“আপু ডাকছে।”
“আমাকে পাগল লাগছে তোমার?”

আহনাফ উঠে বসে। চুল ঠিক করতে করতে বলে,
“তোমাকে আমার পাগল মনে হয়। তারচেয়েও বেশি, ভ°য়া°ব°হ রকমের পাগল।”

ওর কথা আগের মতো লাগছে না। সারাহ্ প্র°তি°বাদ না করে চলে যেতে নিলে আহনাফ বলল,
“স্বামী সেবা না করে কোথায় যাচ্ছো?”

সারাহ্ কপাল কুঁচকে তাকালো। বলল,
“কি সেবা?”
“স্বামী সেবা। এদিকে আসো।”
হাতের ইশারায় কাছে ডাকলো।

সারাহ্ কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। আহনাফ উলটো দিকে ঘুরে বসে বলল,
“কাঁধে একটু দ°লা°ই°ম°লাই করে দাও।”
“কি?”
“কানে কম শুনো?”

একটু অস্বাভাবিক লাগছে সারাহ্-র। লোকটার আচরণ এমন কেন?

সারাহ্-র দিকে ফিরে বসে বলল,
“কি? বিয়ের শখ মিটে নি।”
“শখ শখ করছেন কেন বারবার?”
জোর গলায় জবাব দিলো সারাহ্।

আহনাফ ওর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলল,
“আওয়াজ নিচে।”

উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল আহনাফ। প্রতিনিয়ত সারাহ্ অবাক হচ্ছে, লোকটাকে তো প্রথম দেখায় ভালো ভেবেছিল। মেয়েদের সম্মান করে ভেবেছিল, অথচ নিজের স্ত্রীর সাথে এমন ব্যবহার কেন?
______________________________________

সামিহা আজকে তানজিমের বাসায় যাবে। সুন্দর মতো তৈরি হয়েছে সে। সুতির নতুন থ্রিপিজটা পড়েছে। কচুপাতা রঙের থ্রিপিজের সাথে হালকা মেকআপ আর ঘন চুলের বিনুনিতে বেশ মানিয়েছে।

বাসায় আগে থেকেই অনুমতি নেয়া ছিল। জাহাঙ্গীর সাহেব অনুমতি দিয়ে দেয়ায় খুব একটা অমত করেননি নার্গিস পারভিন।

সামিহা বেরিয়ে এসে মেইন গেইটের কাছেই তানজিমের দেখা পেলো। ওকে দেখে একটু হেসে বলল,
“এমন পে°ত্নী সেজেছিস কেন রে?”
“হোপ, ভদ্রভাবে কথা বল। আমি জানি আমাকে ভালো লাগছে।”
“কচুশাকের মতো লাগছে। মন চাচ্ছে ভাজি করে খেয়ে ফেলি।”

সামিহা গাল ফুলালে তানজিম হেসে ওর হাত ধরে। একটু এগিয়ে বড়রাস্তায় গিয়ে বাসে উঠে দুজনে। মতিঝিল থেকে কাকরাইল, রাস্তাটা দূর নয় তবে জ্যাম ভালোই পড়ে।

দুজনেই পাশাপাশি সিটে বসলো।
“তানজিম।”
“হুম।”

তানজিম সামিহার দিকে তাকালো। সামিহা হেসে বলল,
“এতো সিরিয়াস চেহারা করেছিস কেন? (একটু থেমে) লাস্ট ক্লাসের থিওরিগুলো একটু বুঝিয়ে দিস।”

তানজিম ভ্রূ উঁচিয়ে সামনে তাকিয়ে বলল,
“ঠিক আছে।”

সামিহা বাইরে তাকায়। তানজিম চেয়ে রইলো ওর চেহারার দিকে। সত্যি আজ ওকে অনেক সুন্দর লাগছে। ওর গালে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছা করছে তানজিমের, কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নেয় সে। নজর ঘুরিয়েও লাভ হয় না, সেই সামিহার চোখের পাপড়ির ছন্দেই হারায় সে।
______________________________________

টেবিলে থাকা পেপারওয়েটটা ঘুরাচ্ছে ইমতিয়াজ। অফিসে কাজ থাকলেও আপাতত কাজে মন নেই ওর। মনের ভেতর তো°লপাড় শুরু হয়েছে, যেন যু°দ্ধ। কারণ বিশ্লেষণ করতে পারলো না সে।

ফোন হাতে নিয়ে গতদিনের নাম্বারটা বের করলো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সাত-পাঁচ না ভেবে ম্যাসেজ করলো, একটা ইমুজি পাঠিয়ে চেক করলো অনলাইনে আছে কিনা। তারপর কল করলো।

বেশ কয়েকবার কল করলেও রিসিভ হলো না। ইমতিয়াজ কপাল কুঁচকে একটু ভেবে আবারো কল দিলো। এবারে রিসিভ হলো, কিন্তু কেউ কথা বলছে না।

ইমতিয়াজ শান্ত গলায় সম্পূর্ণ আন্দাজে বলল,
“মৃত্তিকা?”

মৃত্তিকা একটু চুপ থেকে বলে,
“জি।”
“নাম্বার কোথায় পেয়েছেন?”
“তানজিম দিয়েছে।”

ইমতিয়াজ কোনো জবাব দিলো না। মৃত্তিকা নিজে থেকে বলল,
“আপনি কি সত্যি ভালো আছেন?”

একটু অস্বাভাবিক লাগছে ইমতিয়াজের। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
“হুম, ভালো আছি। হঠাৎ কেন কল দিয়েছেন?”
“কোনো কারণ নেই। শুধু…”

বলেই মৃত্তিকা থেমে যায়। ইমতিয়াজ বলল,
“শুধু কি?”

অপরপাশ থেকে মৃত্তিকার ভ°য়া°র্ত কন্ঠ ফেরত আসলো,
“কি করছেন এখানে? চলে যান।”
“মৃত্তিকা?”

ইমতিয়াজের ডাকের কোনো জবাব আসলো না। কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ পাওয়া গেল। ইমতিয়াজ একটু ঘা°ব°ড়ে গেল। আরো কয়েকবার ডাকলো মৃত্তিকাকে, কিন্তু এবারে আর কোনো সাড়াশব্দ পেল না। কলটা কেটে গেলে ইমতিয়াজ আবারো কল করলো এবারে রিসিভ হলো না, বরং নাম্বারটা অফলাইনে চলে গেল।
______________________________________

বাসায় এসে পৌঁছেছে সামিহা ও তানজিম। রাস্তার জ্যামের জন্য প্রায় ১২ টা বেজে গেছে। লুৎফর রহমান বাসায় নেই, শাফিন সাহেবও নেই।

দরজা খুললেন তানজিমের মামী দেলোয়ারা খাতুন। সামিহা মিষ্টি হেসে বলল,
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম।”

তানজিম ভিতরে গিয়ে সামিহাকে বলল,
“আয়, বস। উনি আমার মামী (দেলোয়ারা খাতুনকে বলল) মামানী, ও সামিহা, আমার ফ্রেন্ড।”

দেলোয়ারা খাতুন মুচকি হেসে বললেন,
“কেমন আছো?”
“ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন আন্টি?”
“আলহামদুলিল্লাহ।”

তানজিম রুমে চলে গেল। দেলোয়ারা খাতুন রান্নাঘরে গেলেন। সামিহা পুরোরুমে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। ড্রইং ও ডাইনিং এর জন্য আলাদা কোনো জায়গা নেই। ডাইনিং এর একপাশে জোড়া সোফা রাখা। ভিতরে যা আন্দাজ করলো ছোট ছোট তিনটা রুম থাকতে পারে।

তানজিম এসে বলে,
“চল, আম্মুর সাথে দেখা করবি।”
“হুম, আংকেল কোথায়?”
“দোকানে গেছে বোধহয়।”

সামিহা মাথানেড়ে উঠে তানজিমের পেছন পেছন ভিতরে গেল। মমতাজ বেগম খাটে বসে আছেন। সামিহা বলল,
“আসসালামু আলাইকুম।”

উনি তাকালেন কিন্তু জবাব দিলেন না। সামিহা গিয়ে উনার পাশে বসলো। বলল,
“আন্টি, কেমন আছেন? (একটু থেমে) আপনার ছেলেকে চলে যেতে বলুন না, আমরা একটু একা কথা বলি।”

মমতাজ বেগম ওর দিকে তাকালেন, সামিহা হেসে দিলো। ওর দুগালে হাত দিয়ে কপালে চুমো দিয়ে দিলেন। নিজের মেয়ে তাহসিনার মতোই চঞ্চল এই মেয়েটাকে তার পছন্দ হলো।

তানজিম দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। সামিহার কথায় মায়ের এইটুকু প্রতিক্রিয়াও তার সুখের কারণ।
______________________________________

বিকাল ৫ টা, সকালের খাবার খেয়েই আহনাফ বাইরে গেছে। এখনো ফেরেনি। কল করলেও রিসিভ করেনি।

বিকালে আফরোজা সারাহ্কে সাথে নিয়ে ছাদে এসেছে। সারাদিন সারাহ্কে চুপচাপ থাকতে দেখেছে ও। আফরোজা বলল,
“তুমি কি আমাকে ভ°য় পাও?”

সারাহ্ ওর দিকে তাকিয়ে জো°র°পূর্বক একটু হেসে বলল,
“না।”

আফরোজা হাসলো। বলল,
“বিয়ের প্রথম প্রথম আমারো এমন লাগতো। জুহাইবের মায়ের সাথেও কথা বলতে পারতাম না। উনি খুবই ভালো মানুষ, তবুও আমার সংকোচ কাজ করতো।”

সারাহ্ চেয়ে রইলো আফরোজার দিকে। খাঁটি বাঙালি মেয়ে কিভাবে তুরস্কে বউ হয়ে গেল ঠিক মাথায় আসছে না সারাহ্-র। তবুও প্রশ্নটা করা হলো না তার।

আফরোজা নিজে থেকেই বলল,
“মাত্র ২০ বছর বয়সেই আমি বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছিলাম। (একটু থেমে) স্কলারশিপ পেয়েছিলাম আমি, আঙ্কারা ইউনিভার্সিটিতে অনার্স করতে চান্স পেয়ে গেলাম। আম্মুর অনেক ইচ্ছা ছিল আমি যেন বাইরে পড়তে যাই।”

তারপর একটু হাসলো, সারাহ্-ও হাসলো। সারাহ্ বলে,
“আপনার আম্মু?”

আফরোজা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আম্মু অনেক আগেই চলে গেছে। তখন আহনাফের বয়স ছিল নয় বছর আর আমার এগারো। আম্মু ছোট থেকেই বলতো আমাদের দেশের বাইরে পড়তে পাঠাবে।”

আফরোজা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আহনাফ প্রতিদিন স্কুল থেকে এসেই কান্না করতো, ওর ফ্রেন্ডদের মা নিয়ে যায় ওর মা নেই কেন? আমি বলতাম ওই আকাশ যতদূর আছে, আম্মুও ততদূর তোর সাথে আছে।”

সারাহ্ও আকাশের দিকে তাকালো। বাবা-মা দুজনই ওর জীবিত আছে। অথচ জীবনে কতবার বাবা-মায়ের বি°রু°দ্ধে গিয়ে কথা বলেছে ও, না জানি কতবার বে°য়া°দবি করেছে, কষ্ট দিয়েছে। না থাকলে মূল্য বোঝা যায়, থাকলে তাহা বড়ই দায়।
______________________________________

সন্ধ্যা ৭ টায় ইমতিয়াজ অফিস থেকে বেরিয়েছে। সেই সকাল থেকে এই পর্যন্ত অনবরত মৃত্তিকার নাম্বারে কল করে যাচ্ছে অথচ রিসিভ হচ্ছে না। ইতালিয়ান নাম্বারটাও নেই ওর কাছে।

শেষমেশ কিছু একটা ভেবে তানজিমকে কল করলো। সামিহাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তানজিম সবে ফিরতি পথ ধরেছে। ফোন সাইলেন্ট অবস্থায় পকেটে পড়ে আছে। ইমতিয়াজের বারবার দেয়া কলগুলো সম্পর্কে সে পুরোপুরি অ°জ্ঞা°ত।

ইমতিয়াজ রাগে রাস্তায় পড়ে থাকা ইটের টুকরায় লা°থি দিলো। মৃত্তিকার সাথে কি হয়েছে? সকালে কে ছিল ওর বাসায়? কিছুই জানে না সে।

বাসায় চলে আসলো ইমতিয়াজ। গোসল করতে চলে গেলে মৃত্তিকার নাম্বার থেকে কল আসে। দুবার বেজে কেটে যায়।

গোসল শেষে রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে কলব্যাক করলো। একবার বাজতেই রিসিভ হলো, যেন মৃত্তিকা ফোন হাতে নিয়ে বসেছিল।

“মৃত্তিকা, কি হয়েছিল সকালে?”

ইমতিয়াজের চিন্তিত কন্ঠ আর উ°ত্তে°জ°নায় মৃত্তিকা হাসলো। বলল,
“বাবা এসেছিল।”
“বাবা?”
“হুম, মনে আছে আমার বাবাকে?”

একটু ভেবে বলল,
“বোধহয়। কি বলেছে? সারাদিনে কোথায় ছিলেন?”

মৃত্তিকা কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল,
“আমাকে নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে আপনার?”

ইমতিয়াজ ফোন রেখে দিলো। সত্যিই তো কেন এতো চিন্তা হচ্ছিল ওর। অন্য মেয়ের চিন্তা মনে আনা মানে তাহমিনার সাথে প্র°তা°র°ণা করা, এমনটাই মনে করছে সে। ওর মিনার সাথে ও প্র°তা°রণা করতে পারবে না। মৃত্তিকার নাম্বারটা ব্ল°ক°লিস্টে ফেলে দিলো। ভাববে না ও কাউকে নিয়ে, ভাবতে চায়ও না। রাগে ফোনটা ছুঁ°ড়ে ফেলতে নিয়েও ফেলে না। তার এসব রাগ যে তার মিনা পছন্দ করতো না।

হঠাৎ কল কে°টে যাওয়ায় মৃত্তিকা অবাক হলো না। ফোনটা টেবিলে রেখে আবারো কম্পিউটারে মন দিলো।

ভোরে নামাজের পর যখন ইমতিয়াজ কল দিয়েছিল তখন কথা বলতে বলতে মেইন গেইটের কাছে এসে দাঁড়িয়েছিল সে। তখন শরীফ এসে হাজির হয় ওর সামনে, আদর করে মেয়েকে ডাকলেও মৃত্তিকা রেগে যায়। লোকটাকে দেখলেই তো ওর রাগ হয়। ফুলের টব ছুঁ°ড়ে ফেলেছিল, আহত হয়েছে। যদিও এতে মৃত্তিকার ভ্রূক্ষেপ নেই।

তারপর অসাবধানতার জন্য ফোনটা হাত থেকে পড়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায়। এখন মাত্র অন করে ইমতিয়াজের এতোগুলো কল দেখে সে। ইমতিয়াজ তাকে নিয়ে ভাবছে, ইমতিয়াজের ভাবনার ছোট অংশে ওর স্থান আছে।
______________________________________

আহনাফ মাত্রই বাসায় আসলো। সারাহ্ চা বানাচ্ছে, আফরোজা পাশে দাঁড়ানো। আহনাফ এসে রান্নাঘরে উঁকি দিলো।

আফরোজা ওকে দেখে বলে,
“কিরে? কোথায় ছিলি সারা বিকাল?”
“প্রিন্টার কিনতে গিয়েছিলাম।”
“প্রিন্টার?”
“হুম, এটা সেটা প্রিন্ট করে বাইরে যেতে হয়, তাই ভাবলাম ঘরেই নিয়ে আসি।”

ধ°ম°কের সুরে বলল,
“দুপুরে খেতে আসিসনি কেন?”
“খেয়েছি আমি।”

সারাহ্ আড়চোখে একবার আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফ খেয়াল করলো সারাহ্-র দৃষ্টি, কিন্তু কিছুই বলল না। আফরোজা দুজনের দৃষ্টিই দেখেছে।

“চা নিয়ে আসো, আমি নাস্তার ব্যবস্থা করছি।”
সারাহ্ মাথা নাড়তেই আফরোজা বেরিয়ে গেল।

আহনাফ এসে সারাহ্-র পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
“সব ছেড়েছুড়ে চলে যেতে ইচ্ছা করছে না?”

সারাহ্ তাকালো ওর দিকে। একেবারে পূর্ণদৃষ্টি, চোখে চোখ রাখলো। আহনাফ একবার দরজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি বারান্দায় আছি, আমার চা ওখানে এসে দিও।”

সারাহ্ মাথা হেলিয়ে সম্মতি দিলো। আহনাফ বের হয়ে যাওয়ার সময় ফিরে দাঁড়িয়ে আঙুল উঁচিয়ে বলল,
“তুমি নিজে আসবে।”
“আচ্ছা।”

আফরোজা এসে ড্রইংরুমে সবার জন্য চা নিলো আর আহনাফের জন্য চা নিয়ে বারান্দায় গেল সারাহ্। ফ্লোরে আহনাফ বসে আছে। সারাহ্কে দেখে পাশে বসতে ইশারা করলো। সারাহ্ তাই করলো।

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আহনাফ বলল,
“সমস্তটা দিন কোথায় ছিলাম জানো?”
“প্রিন্টার..”

আহনাফের হাসিতে সারাহ্ থেমে গেল। আহনাফ বলল,
“ও তো আপুকে বলেছি। সবাই জানুক আমি ভালো আছি।”

সারাহ্ চুপ করে রইলো, কথার অর্থ গভীর যা সে বুঝলো না। আহনাফ বলল,
“আমি নিজেকে প্রকাশ করতে পারি না। অন্যরা রেগে গেলে চেঁচায়, ভা°ঙ°চু°র করে। হাসি পেলে হাসে, কান্না পেলে কাঁদে। আমি এসব পারি না। নিজেকে অস্বাভাবিক লাগে।”

সারাহ্ মনোযোগী শ্রোতা। আহনাফ চায়ের কাপে চুমুক দেয়। তারপর বলে,
“আপুর সাথে এবার বাবাও আঙ্কারা যাবে। এবারে আমাকে নিয়ে উনারা চিন্তিত থাকবে না, কারণ তুমি আছো।”
“আমি?”

আহনাফ ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
“হুম, (একটু থেমে নরম সুরে) গতরাতের বিহেভিয়ারটা অনেক খারাপ হয়েছে। এভাবে তোমাকে হে°ন°স্তা করা উচিত হয়নি। সকালে যা করেছি তাও অনুচিত ছিল। সরি ফর দ্যাট।”

সারাহ্ কি বলবে আর, এখানে কি বলার থাকতে পারে?

“সারাদিন মসজিদে ছিলাম। একাকিত্বে রবই পথ দেখান। ভেবেছি আমি এসব নিয়ে, নিজেকে যথাসম্ভব বুঝিয়েছি। (একটু থেমে) তোমার সাথে যা করেছি তারজন্য সরি, ঐশী।”

সারাহ্ অন্যদিকে তাকালো। যতটা খারাপ তাকে ভেবেছিল, ততটা খারাপ নয়। তবে ওর আচরণ যে অন্য দশটা পুরুষের থেকে আলাদা তা সারাহ্ বুঝে গেছে।

আহনাফ বলেই যাচ্ছে,
“আমি জানি না তোমাকে কতটুকু বোঝাতে পারছি। আমাকে কেন যেন কেউ বুঝে না, আমিও বোঝাতে পারি না। তবে একজন আমাকে বুঝেছিল।”

সারাহ্ ফিরে তাকাতেই আহনাফ উঠে চলে গেল। ওই একজনের ব্যাপারে জানা হলো না সারাহ্-র।

সারাহ্ উঠে রুমে এলো। আহনাফ ড্রইংরুমে চলে গিয়েছে। পড়ার টেবিলের একটা চকলেট রাখা, সাথে একটা চিরকুট।

“সরি ঐশী, এভাবে রাগ দেখানোটা আমার ভুল ছিল।”

চিরকুট পড়ে সারাহ্ নিজে নিজেই বলল,
“এ কেমন রাগ? হে আল্লাহ্, এ মানুষটাকে একটু বোধবুদ্ধি দিও।”

চলবে…..

(গতানুগতিক ধারায় যেমন ভালোবাসা হয়, এই উপন্যাসে সেরকম কিছু হবে না বুঝতেই পারছেন। তবে গতকালের পর্বটি পরবর্তী পর্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই এধরনের কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেয়া হয়েছে। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here